উহুদ যুদ্ধের ঘটনা এবং মহান আল্লাহর বাণী

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা এবং মহান আল্লাহর বাণী

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা এবং মহান আল্লাহর বাণী >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (১৭-২৮)=১৩টি

৬৪/১৭. অধ্যায়ঃ উহূদ যুদ্ধ
৬৪/১৮. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/১৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬৪/২০. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/২১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ
৬৪/২২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই
৬৪/২৩. অধ্যায়ঃ উম্মু সালীত্বের [২৮] মর্যাদা সম্পর্কিত আলোচনা
৬৪/২৪. অধ্যায়ঃ হামযাহ ২৯-এর শাহাদাত
৬৪/২৫. অধ্যায়ঃ উহূদের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর আঘাতপ্রাপ্ত [৩১] হওয়ার ঘটনা
৬৪/২৬. অধ্যায়ঃ “যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।”
৬৪/২৭. অধ্যায়ঃ যে সব মুসলিম উহূদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন
৬৪/২৮. অধ্যায়ঃ উহূদ (পাহাড়) আমাদেরকে ভালবাসে

৬৪/১৭. অধ্যায়ঃ উহুদ যুদ্ধ

মহান আল্লাহর বাণীঃ “[হে রাসুল (সাঃআঃ)!] আর স্মরণ কর, যখন তুমি পরিজনদের নিকট হইতে ভোরবেলায় বের হয়ে মুমিনদের যুদ্ধের জন্য ঘাঁটিতে বিন্যস্ত করছিলেন, আর আল্লাহ তাআলা তো সব শোনেন, সব জানেন”- (সুরা আলে ইমরান ৩:১২১)। আল্লাহর বাণীঃ আর তোমরা সাহস হারিয়ো না এবং দুঃখও কর না, তোমরাই পরিণামে বিজয়ী হইবে, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও। আর যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে তবে অনুরূপ আঘাত তো তাদেরও লেগেছিল। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মাঝে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত করি। যাতে আল্লাহ জানতে পারেন কারা ঈমান এনেছে এবং যাতে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কতক শাহিদরূপে গ্রহণ করিতে পারেন। আল্লাহ যালিমদের ভালবাসেন না। এবং যাতে আল্লাহ নির্মল করিতে পারেন মুমিনদের আর নিপাত করিতে পারেন কাফিরদের। তোমরা কি ধারণা কর যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, অথচ এখনও আল্লাহ প্রকাশ করেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল? আর তোমরা তো মরণ কামনা করিতে মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্বেই। এখন তো তোমরা তা স্বচক্ষে দেখিতে পাচ্ছ”- (সুরা আলে- ইমরান ৩:১৩৯-১৪৩)। মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর আল্লাহ তাহাঁর প্রতিশ্রুতি তোমাদের সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন যখন তোমরা কাফিরদের খতম করেছিলে তাহাঁরই আদেশে। তারপর তোমরা সাহস হারিয়ে ফেললে এবং পরস্পর মতবিরোধ করলে নির্দেশ পালনে, আর যা তোমরা ভালবাস তা তোমাদের দেখবার পরও তোমরা অবাধ্য হলে। তোমাদের মাঝে কতক এরূপ আছে যারা কামনা করেছিল দুনিয়া এবং কতক কামনা করেছিল আখিরাত। তারপর পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদের থেকে তোমাদের ফিরিয়ে দিলেন। বস্তুতঃ তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছে। আর আল্লাহ তো মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল”- (সুরা আলে ইমরান ৩:১৫২)। মহান আল্লাহর বাণীঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না। বরং তারা তাদের রবে কাছে আছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত”- (সুরা আলে ইমরান ৩:১৬৯)

৪০৪১

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উহূদের দিন [২২] বলেছেন, এই তো জিবরীল, তার ঘোড়ার মস্তকে হাত রেখে আছেন; তার পরিধানে আছে যুদ্ধাস্ত্র।

[৩৯৯৫] (আ.প্র. ৩৭৩৯, ই.ফা. ৩৭৪৩)

[২২] ইবনু হাজার আসকালানী অত্র হাদীসের ব্যাপারে স্বীয় ফতহুল বারীতে লিখেছেনঃ

৪০৪২

উকবাহ ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আট বছর পর নাবী (সাঃআঃ) উহূদের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে) এমনভাবে দুআ করিলেন যেমন কোন বিদায় গ্রহণকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দুআ করেন। তারপর তিনি (ফিরে এসে) মিম্বারে উঠে বলিলেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমি তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর (কাউসার) হাউযের ধারে তোমাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটবে। আমার এ স্থান থেকেই আমি হাউয দেখিতে পাচ্ছি। তোমরা শিরকে জড়িয়ে যাবে আমি এ ভয় করি না। তবে আমার আশঙ্কা হয় যে, তোমরা দুনিয়ায় সুখ-শান্তি লাভে প্রতিযোগিতা করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমর এ দর্শনই ছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে শেষবারের মতো দর্শন।

(১৩৪৪, ৩৫৯৬, ৪০৮৫, ৬৪২৬, ৬৫৯০) [মুসলিম ৪৩/৯, হাদীস ২২৯৬, আহমদ ১৭৩৪৯] (আ.প্র. ৩৭৪০, ই.ফা. ৩৭৪৪)

আবুল ওয়াক্ত ও আসীলির বর্ণনাতে সেখানে উকবাহ বিন আমিরের পূর্বে ইবনু আব্বাস হইতে বর্ণিত হয়েছে, নাবী (সাঃআঃ) উহূদের যুদ্ধে বলেছিলেনঃ সেহেতু তার মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উক্ত কথাটি বাদরের দিন বলেছিলেন। এই তো জিবরীল, তার ঘোড়ার মস্তকে হাত রেখে আছেন।………. হাদীসের শেষ পর্যন্ত। হাদীসটিতে দুটি কারনে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথমতঃ হাদীসটি সনদ ও মতন সহ অধ্যায়ে অতিবাহিত হয়েছে। ফলে এখানে আবু যর ও বুখারীর অন্য কোন গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারীদের কেউই এটি বর্ণনা করেননি। ইমাম ইসমাঈলী ও আবু নাঈম কেউ এটিকে বর্ণনা করেননি। দ্বিতীয়তঃ এটি প্রসিদ্ধ যে, অত্র হাদীসের মতনে বাদর যুদ্ধের বর্ণনাটিই অধিক পরিচিত, উহূদ যুদ্ধ নয়। আল্লাহ সাহায্যকারী।

৪০৪৩

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধের দিন আমরা মুখোমুখি অবতীর্ণ হলে নাবী (সাঃআঃ) আবদুল্লাহ [ইবনু যুবায়র (রাদি.)]-কে তীরন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্দিষ্ট এক স্থানে) মোতায়েন করিলেন এবং বলিলেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে নড়বে না। আর যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর বিজয় লাভ করেছে, তবুও তোমরা এই স্থান ত্যাগ করে আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে না। এরপর আমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলে তারা পালাতে আরম্ভ করিল। এমনকি আমরা দেখিতে যে, মহিলারা দ্রুত দৌড়ে পর্বতে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা পায়ের গোছা থেকে কাপড় টেনে তুলেছে, ফলে পায়ের অলঙ্কারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজরা) বলিতে লাগলেন, গানীমাত-গানীমাত! তখন আবদুল্লাহ (রাদি.) বলিলেন, তোমরা যাতে এ স্থান ত্যাগ না কর এ ব্যাপার নাবী (সাঃআঃ) আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা অগ্রাহ্য করিল। যখন তারা অগ্রাহ্য করিল, তখন তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হলো এবং তাদের সত্তর জন শাহীদ হলেন। আবু সুফইয়ান একটি উঁচু স্থানে উঠে বলিল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মাদ জীবিত আছে কি? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিও না। সে আবার বলিল, কাওমের মধ্যে ইবনু আবু কুহাফা জীবিত আছে কি? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে আবার বলিল, কাওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব বেঁচে আছে কি? তারপর সে বলিল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। এ সময় উমার (রাদি.) নিজেকে সামলাতে না পেরে বলিলেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে অপমানিত করিবে আল্লাহ তা বাকী রেখেছেন। আবু সুফইয়ান বলিল, হুবালের জয়। তখন নাবী (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে বলিলেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বলিলেন, আমরা কী বলব? তিনি বলিলেন, তোমরা বল, আল্লাহর সমুন্নত ও মহান। আবু সুফইয়ান বলিল, আমাদের উযযা আছে, তোমাদের উযযা নেই। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বলিলেন, আমরা কী জবাব দেব? তিনি বলিলেন, বল-আল্লাহর আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোন অভিভাবক নেই। শেষে আবু সুফইয়ান বলিল, আজ বদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন। যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মতো (অর্থাৎ একবার এ হাতে আরেবকার ও হাতে) তোমরা নাক-কান কাতা কিছু লাশ দেখিতে পাবে। আমি এরূপ করিতে নির্দেশ দেইনি। অবশ্য তাতে আমি নাখোশও নই।

[৩০৩৯] (আ.প্র. ৩৭৪১, ই.ফা. ৩৭৪৫)

৪০৪৪

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের যুদ্ধের দিন কতক সাহাবী সকাল বেলা মদ পান করেছিলেন। [২৩] অতঃপর তারা শাহাদাত লাভ করেন।

[২৮১৫] (আ.প্র. ৩৭৪২, ই.ফা. নেই)

[২৩] তখন পর্যন্ত মদ পান করা হারাম হয়নি।

৪০৪৫

সাদ ইবনু ইবরাহীমের পিতা ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাদি.)-এর নিকট কিছু খানা আনা হল। তিনি তখন সায়েম ছিলেন। তিনি বলিলেন, মুসআব ইবনু উমায়র (রাদি.) ছিলেন আমার চেয়েও উত্তম ব্যক্তি। তিনি শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। তাকে এমন একটি চাদরে কাফন দেয়া হয়েছিল যে, তা দিয়ে মাথা ধাক্লে পা বের হয়ে যেত, আর পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, হামযাহ (রাদি.) আমার চেয়েও উত্তম লোক ছিলেন। তিনি শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। এরপর দুনিয়ার আমাদেরকে অনেক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া হয়েছে অথবা বলেছেন যথেষ্ট পরিমাণে দুনিয়ার ধন-মাল দেয়া হয়েছে। আমার ভয় হচ্ছে হয়তো আমাদের নেকীর বদলা এখানেই দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এরপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি খাদ্য পরিহার করিলেন।

[১২৭৪] (আ.প্র. ৩৭৪৩, ই.ফা. ৩৭৪৬)

৪০৪৬

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি উহূদের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমি যদি শাহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় থাকব বলে আপনি মনে করেন? তিনি বলিলেন, জান্নাতে। তখন ঐ ব্যক্তি হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেললেন, এরপর তিনি লড়াই করিলেন, এমনকি শাহীদ হয়ে গেলেন।

[মুসলিম ৩৩/৪১, হাদীস ১৮৯৯, আহমদ ১৪৩১৮] (আ.প্র. ৩৭৪৪, ই.ফা. ৩৭৪৭)

৪০৪৭

খাব্বাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম। ফলে আল্লাহর কাছে আমাদের পুরস্কার লিখিত হয়ে গেছে। আমাদের কতক দুনিয়াতে কোন পুরস্কার ভোগ না করেই অতীত হয়ে গেছেন এবং চলে গেছেন। মাসআব ইবনু উমায়র (রাদি.) তাদের একজন। তিনি উহূদের যুদ্ধে শাহাদাত লাভ করেন। তিনি একটি পাড় বিশিষ্ট পশমী বস্ত্র ব্যতীত আর কিছু রেখে যাননি। এ দিয়ে আমরা তার মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ কাপড় দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর দাও ইযখির অথবা তিনি বলিলেন, ইযখির দ্বারা তার পা ঢেকে দাও। আমাদের কতক এমনও আছেন, যাদের ফল পেকেছে এবং তিনি এখন তা সংগ্রহ করছেন।

[১২৭৬] (আ.প্র. ৩৭৪৫, ই.ফা. ৩৭৪৮)

৪০৪৮

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, তার চাচা [আনাস ইবনু নযর (রাদি.)] বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি [আনাস ইবনু নযর (রাদি.)] বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সর্বপ্রথম যুদ্ধে তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করিতে পারিনি। যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে কোন যুদ্ধে শারীক করেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখবেন, আমি কত প্রাণপণে লড়াই করি। এরপর তিনি উহূদ যুদ্ধের দিন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পর লোকেরা পরাজিত হলে তিনি বলেন, হে আল্লাহর! এ সব লোক অর্থাৎ মুসলিমগণ যা করিলেন, আমি এর জন্য আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং মুশরিকগণ যা করিল তা থেকে আমি আমার সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। এরপর তিনি তলোয়ার নিয়ে এগিয়ে গেলেন। এ সময় সাদ ইবনু মুআয (রাদি.)-এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হল, তিনি বলিলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ হে সাদ? আমি উহূদের অপর প্রান্ত হইতে জান্নাতের খোশবু পাচ্ছি। এরপর তিনি যুদ্ধ করে শাহাদাত লাভ করিলেন। তাকে চেনা যাচ্ছিল না। অবশেষে তার বোন তার শরীরের একটি তিল অথবা আঙ্গুলের মাথা দেখে তাকে চিনলেন। তার শরীরে আশিটিরও বেশী বর্শা, তরবারি ও তীরের আঘাত ছিল।

[২৮০৫] (আ.প্র. ৩৭৪৬, ই.ফা. ৩৭৪৯)

৪০৪৯

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা কুরআন মাজীদকে গ্রন্থের আকারে লিপিবদ্ধ করার সময় সুরা আহযাবের একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলি, যা আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে পাঠ করিতে শুনতাম। তাই আমরা উক্ত আয়াতটি খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে তা পেলাম খুযায়মা ইবনু সাবিত আনসারী (রাদি.)-এর কাছে। আয়াতটি হলঃ “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে”- [২৪] সুরা আল আহযাব ৩৩:২৩)। এরপর এ আয়াতটিকে আমরা কুরআন মাজীদের ঐ সুরাতে যুক্ত করে নিলাম।

[২৮০৭] (আ.প্র. ৩৭৪৭, ই.ফা. ৩৭৫০)

[২৪] আনাস ইবনু নযর বাদর যুদ্ধে অংশ নিতে না পারায় অনেক অনুতপ্ত হয়েছিলেন। কারণ এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমদের অর্জন যেমন ছিল বিরাট সফলতার তেমনি অংশগ্রহণকারীদের মর্যাদা ছিল অপরিসীম। তাই তিনি সংকল্প করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে কাফিরদের সঙ্গে কোন যুদ্ধ সংগঠিত হলে জান বাজী রেখে লড়াই করবেন, উহূদের যুদ্ধে তিনি তার ইচ্ছা পূর্ণ করেন এবং তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দেন। অতঃপর সে যুদ্ধেই তিনি শাহাদাতের স্বর্গীয় সুধা পানে ধন্য হন।

৪০৫০

যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের উদ্দেশে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বের হলে যারা তাহাঁর সঙ্গে বের হয়েছিল, তাদের কিছু সংখ্যক লোক ফিরে এলো। নাবী সাঃআঃ-এর সহাবীগণ তাদের ব্যাপারে দুদলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর বলিলেন, আমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। অপর দল বলিলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না। এ সময় অবতীর্ণ হয় আয়াতটি-

فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِيْنَ فِئَتَيْنِ وَاللهُ أَرْكَسَهُمْ بِمَا كَسَبُوْا

তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দুদল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের কৃতকর্মের দরুন- (সুরা আন নিসা ৪/৮৮)। এরপর নাবী সাঃআঃ বলিলেন, এটা পবিত্র স্থান। আগুন যেমন রুপার ময়লা দূরে করে, তেমনি মদিনা্ও গুনাহকে দূর করে দেয়।

[১৮৮৪] (আঃপ্রঃ ৩৭৪৮, ইঃফাঃ ৩৭৫১)

৬৪/১৮. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

যখন তোমাদের মধ্যে দুদলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল এবং আল্লাহ উভয়ের সহায়ক ছিলেন। আল্লাহর প্রতিই যেন মুমিনগণ নির্ভর করে। (সুরা আলু ইমরান ৩/১২২)

৪০৫১

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلَا যখন তোমাদের মধ্যে দুদলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে তথা বনূ সালিমাহ এবং বনু হারিসাহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি অবতীর্ণ না হোক তা আমি চাইনি। কেননা এ আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ উভয় দলেরই সাহায্যকারী।

[৪৫৫৮; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাদীস ২৫০৫] (আঃপ্রঃ ৩৭৪৯, ইঃফাঃ ৩৭৫২)

৪০৫২

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে জাবির! তুমি বিয়ে করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, কেমন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না, বরং অকুমারী। তিনি বলিলেন, কোন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সঙ্গে আমোদ-ফূর্তি করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমার আব্বা উহূদের যুদ্ধে শাহাদাত লাভ করিয়াছেন। রেখে গেছেন নয়টি মেয়ে। এখন আমার নয় বোন। এ কারণে আমি তাদের সঙ্গে তাদেরই মতো একজন আনাড়ি মেয়েকে এনে একত্রিত করা পছন্দ করিনি। বরং এমন একটি মহিলাকে (পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়ে দিতে পারবে এবং তাদের দেখাশোনা করিতে পারবে। তিনি বলিলেন, ঠিক করেছ।

[৪৪৩] (আ.প্র. ৩৭৫০, ই.ফা. ৩৭৫৩)

৪০৫৩

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উহূদের দিন তার পিতা ছয়টি মেয়ে ও কিছু ঋণ তার উপর রেখে শাহাদাত লাভ করেন। এরপর যখন খেজুর কাটার সময় এল (তিনি বলেন) তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বললাম, আপনি জানেন যে, আমার পিতা উহূদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এবং বিশাল ঋণ ভার রেখে গেছেন। এখন আমি চাই, ঋণদাতাগণ আপনাকে দেখুক। তখন তিনি বলিলেন, তুমি যাও এবং বাগানের এক কোণে সব খেজুর কেটে জমা কর। [জাবির (রাদি.) বলেন] আমি তাই করলাম। এরপর নাবী (সাঃআঃ)-কে ডেকে আনলাম। যখন তারা নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখলেন, সে সময় তারা আমার উপর আরো রাগান্বিত হলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাদের আচরণ দেখে বাগানের বড় গাদাটির চারপার্শ্বে তিনবার ঘুরে এসে এর উপর বসে বলিলেন, তোমার ঋণদাতাদেরকে ডাক। তিনি তাদেরকে মেপে মেপে দিতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ তাআলা আমার পিতার আমানাত আদায় করে দিলেন। আমিও চাচ্ছিলাম যে, একটি খেজুর নিয়ে আমি আমার বোনদের নিকট না যেতে পারলেও আল্লাহ তাআলা যেন আমার পিতার আমানত আদায় করে দেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা খেজুরের সবকটি গাদাই অবশিষ্ট রাখলেন। এমনকি আমি দেখলাম যে, নাবী (সাঃআঃ) যে গাদায় উপবিষ্ট ছিলেন তার থেকে যেন একটি খেজুরও কমেনি।

[২১২৭] (আ.প্র. ৩৭৫১, ই.ফা. ৩৭৫৩)

৪০৫৪

সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আমি আরো দু ব্যক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পক্ষে তুমুল যুদ্ধ করছে। আমি তাদেরকে আগেও দেখিনি আর পরেও দেখিনি।

[৫৮২৬; মুসলিম ৪৩/১০, হাদীস ২৩০৬] (আ.প্র. ৩৭৫২, ই.ফা. ৩৭৫৪)

৪০৫৫

সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের দিন নাবী (সাঃআঃ) আমার জন্য তাহাঁর তীরাধার খুলে দিয়ে বলিলেন, তোমার জন্য আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক; তুমি তীর চালাতে থাক।

[৩৭২৫] (আ.প্র. ৩৭৫৩, ই.ফা. ৩৭৫৬)

৪০৫৬

সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের দিন নাবী (সাঃআঃ) আমার উদ্দেশ্যে তাহাঁর পিতা-মাতাকে এক সঙ্গে উল্লেখ করিয়াছেন।

[৩৭২৫] (আ.প্র. ৩৭৫৪, ই.ফা. ৩৭৫৭)

৪০৫৭

সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উহূদের দিন আমার জন্য তাহাঁর পিতা-মাতা উভয়কে একসঙ্গে উল্লেখ করিয়াছেন। এ কথা বলে তিনি বোঝাতে চান যে, তিনি লড়াই করছিলেন এমন সময় নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বলেছেন, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক।

[৩৭২৫] (আ.প্র. ৩৭৫৫ ই.ফা. ৩৭৫৮)

৪০৫৮

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ (রাদি.) ব্যতীত অন্য কারো জন্য নাবী (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর পিতা-মাতার নাম একত্রে উল্লেখ করিতে আমি শুনিনি।

[২৯০৫] (আ.প্র. ৩৭৫৬, ই.ফা. ৩৭৫৯)

৪০৫৯

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনু মালিক (রাদি.) ব্যতীত অন্য কারো জন্য নাবী (সাঃআঃ)-কে তাহাঁর পিতা-মাতার নাম একত্রে উল্লেখ করিতে আমি শুনিনি। উহূদ যুদ্ধের দিন আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, তুমি তীর চালিয়ে যাও, আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক। [২৫]

[২৯০৫] (আ.প্র. ৩৭৫৭, ই.ফা. ৩৭৬০)

[২৫] এটি একটি আরবীয় বাকরীতি। কারো প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের উদ্দেশ্যে এ ধরনের বাকধারা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪০৬০

আবু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে দিনগুলোতে নাবী (সাঃআঃ) যুদ্ধ করিয়াছেন তার কোন এক সময়ে ত্বলহা এবং সাদ (রাদি.) ব্যতীত অন্য কেউ নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন না। হাদীসটি আবু উসমান (রাদি.) তাদের উভয়ের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করিয়াছেন।

[৩৭২২, ৩৭২৩] (আঃপ্রঃ ৩৭৫৮, ইঃফাঃ ৩৭৬১)

৪০৬১

আবু উসমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে দিনগুলোতে নাবী (সাঃআঃ) যুদ্ধ করিয়াছেন তার কোন এক সময়ে ত্বলহা এবং সাদ (রাদি.) ব্যতীত অন্য কেউ নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন না। হাদীসটি আবু উসমান (রাদি.) তাদের উভয়ের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করিয়াছেন।

[৩৭২২, ৩৭২৩] (আঃপ্রঃ ৩৭৫৮, ইঃফাঃ ৩৭৬১)

হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়

৪০৬২

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু আউফ, ত্বলহা ইবনু উবাইদুল্লাহ, মিকদাদ এবং সাদ (রাদি.)-এর সাহচর্য পেয়েছি। তাদের কাউকে নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিনি, তবে কেবল ত্বলহা (রাদি.)-কে উহূদ যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি।

[২৮০৫] (আ.প্র. ৩৭৫৯, ই.ফা. ৩৭৬২)

৪০৬৩

ক্বায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ত্বলহা (রাদি.)-এর হাত অবশ দেখেছি। উহূদের দিন তিনি এ হাত নাবী (সাঃআঃ)-এর প্রতিরক্ষায় লাগিয়েছিলেন।

[৩৭২৪] (আ.প্র. ৩৭৬০, ই.ফা. ৩৭৬৩)

৪০৬৪

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদের দিন লোকেরা নাবী (সাঃআঃ)-কে ছেড়ে যেতে লাগলেও আবু ত্বলহা (রাদি.) ঢাল হাতে নিয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখলেন। আবু ত্বলহা (রাদি.), ধনুক খুব জোরে টেনে তীর ছুঁড়লেন। সেদিন তিনি দুটি অথবা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে ছিলেন। সেদিন যে কেউ তীরাধার নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তাকেই তিনি বলেছেন, তীরগুলো খুলে আবু ত্বলহার জন্য রেখে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাথা উঁচু করে যেমনই শত্রুদের প্রতি তাকাতেন, তখনই আবু ত্বলহা (রাদি.) বলিতেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। তাদের নিক্ষিপ্ত তীরের কোনটি আপনার শরীরে লেগে যেতে পারে। আপনার বক্ষের পরিবর্তে আছে আমার বক্ষ। [আনাস (রাদি.) বলেন] সেদিন আমি আয়েশা বিনত আবু বাকর এবং উম্মু সুলায়ম (রাদি.)কে দেখেছি, তাঁরা দুজনেই পায়ের কাপড় গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আমি তাঁদের পায়ের তলা দেখিতে পেয়েছি। তারা মশক ভর্তি করে পিঠে পানি বয়ে আনতেন এবং (আহত) লোকেদের মুখে ঢেলে দিতেন। আবার ফিরে যেতেন এবং মশক ভর্তি পানি এনে লোকেদের মুখে ঢেলে দিতেন। সেদিন আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর হাত থেকে দুবার কিংবা তিনবার তরবারিটি পড়ে গিয়েছিল।

[২৮৮০] (আ.প্র. ৩৭৬১, ই.ফা. ৩৭৬৪)

৪০৬৫

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহূদ যুদ্ধে মুশরিকরা যখন পরাস্ত হল তখন অভিশপ্ত ইবলিস চীৎকার করে বলিল, হে আল্লাহর বান্দারা! তোমাদের পেছনে আরেকটি দল আসছে। তখন অগ্রসেনারা পেছনে ফিরলে তাদের ও পশ্চাদভাগের মধ্যে পরস্পর সংঘর্ষ হল। হুযাইফাহ (রাদি.) দেখিতে পেলেন যে, তাহাঁর পিতা ইয়ামন (রাদি.)-এর সম্মুখীন। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর বান্দারা! (ইনি তো) আমার পিতা। বর্ণনাকারী (আয়েশাহ) বলেন, আল্লাহর কসম! এতে তাঁরা তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হল না। তখন হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিন। (বর্ণনাকারী) উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর সঙ্গে মিলনের পূর্ব পর্যন্ত হুযাইফাহ (রাদি.)-এর মনে এ ঘটনার অনুতাপ বাকী ছিল।

ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ بَصُرْتُ শব্দটি بَصِيْرَةِ শব্দ থেকে উৎপন্ন যার অর্থ হল কোন কিছু জানা। যেমন বলা হয় بَصِيْرَةِ فِي الْأَمْرِ আবার أَبْصَرْتُ শব্দটির অর্থ হল চোখ দিয়ে দেখা। কেউ কেউ আবার بَصُرْتُ ও أَبْصَرْتُ শব্দদ্বয়কে সমার্থক বলে উল্লেখ করিয়াছেন।

[৩২৯০] (আঃপ্রঃ ৩৭৬২, ইঃফাঃ ৩৭৬৫)

৬৪/১৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ

যেদিন উভয় দল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল, সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, তারা তো ছিল এমন, যাদের শয়তান পদঙ্খলন ঘটিয়েছিল তাদের কৃতকর্মের দরুন। অবশ্য আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম সহনশীল। (আলু ইমরান ৩/১৫৫)

৪০৬৬

উসমান ইবনু মাওহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জ পালনের উদ্দেশে এক ব্যক্তি বাইতুল্লাহ্য় এসে সেখানে একদল লোককে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করিলেন, এ উপবিস্ট লোকগুলো কে? তারা বলিলেন, এরা হচ্ছেন কুরাইশ গোত্রের লোক। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, এ বৃদ্ধ লোকটি কে? তারা বলিলেন, ইনি হচ্ছেন ইবনু উমার (রাদি.)। তখন লোকটি তাহাঁর কাছে গিয়ে বলিলেন, আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব, আপনি আমাকে বলে দিবেন কি? এরপর লোকটি বলিলেন, আমি আপনাকে এই ঘরের সম্মানের কসম দিয়ে বলছি, উহূদের দিন উসমান ইবনু আফফান (রাদি.) পালিয়েছিলেন, এ কথা আপনি কি জানেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। লোকটি আবার বলিলেন, তিনি বায়আতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন- এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললে্ন হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করিল। তখন ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, এসো, এখন আমি তোমাকে সব ব্যাপারে জানিয়ে দেই এবং তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুলে বলি। (১) উহূদের দিন তাহাঁর পালানোর ব্যাপার সম্বন্ধে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (২) বদর থেকে তাহাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কন্যা (রুকাইয়া) তাহাঁর স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন অসুস্থ। তাই তাঁকে নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের মতোই তুমি সাওয়াব পাবে এবং গানীমাতের অংশ পাবে। (৩) বায়আতে রিদওয়ান থেকে তাহাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মাক্কাহ উপত্যকায় উসমান ইবনু আফফান (রাদি.) থেকে অধিক মর্যাদাবান কোন ব্যক্তি থাকলে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে তাহাঁর স্থলে মক্কা পাঠাতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এ জন্য উসমান (রাদি.)-কে পাঠালেন। উসমান (রাদি.)-এর মক্কা গমনের পরই বাইআতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল। তাই নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর ডান হাতখানা অপর হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এটাই উসমানের হাত। [২৬] এরপর তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু উমার) বলিলেন, এই হল উসমান (রাদি.)-এর অনুপস্থিতির কারণ। এখন তুমি এ কথাগুলো তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।

[৩১৩০] (আ.প্র. ৩৭৬৩, ই.ফা. ৩৭৬৬)

[২৬] হিজরী ৬ সনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ১৪০০ সাহাবীসহ উমরাহর জন্য মাক্কাহ আসলে হুদাইবিয়া নামক স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষা করিতে থাকেন। এরই মাঝে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, উসমান (রাদি.)-কে মাক্কাহ্তে হত্যা করা হয়েছে। অন্যায় হত্যার প্রতিশোধ স্পৃহা চরমে উঠলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি বাবলা বৃক্ষের নিচে সকল সাহাবীদের নিকট হইতে প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য বাইআত গ্রহণ করেন। এ বাইআতকেই বাইআতে রিযওয়ান বলা হয়। নাবী (সাঃআঃ) উসমান (রাদি.)-এর মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না আর তাকে এ বাইআতের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা পছন্দ করিলেন না। তাই তিনি উসমানের পক্ষ হইতে স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বাইআত নিয়ে বলিলেন, এটিই উসমানের হাত।

৬৪/২০. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

“স্মরণ কর, যখন তোমরা উপরের দিকে পালাচ্ছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো প্রতি তাকাচ্ছিলে না, অথচ রাসুল পেছন দিক থেকে তোমাদের ডাকছিল। ফলে তিনি তোমাদের দিলেন দুঃখের উপর দুঃখ, যাতে তোমরা দুঃখ না কর যা তোমরা হারিয়েছ তার জন্য, আর না সে বিপদের জন্য যা তোমাদের উপর আপতিত হয়েছে। আর আল্লাহ পূর্ণ অবহিত সে বিষয়ে যা তোমরা কর।” (সুরা আলূ ইমরান ৩/১৫৩)

৪০৬৭

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) উহূদের দিন আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাদি.)-কে পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু তারা পরাস্ত হয়ে (মাদীনাহর পানে) ছুটে গিয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে, রাসুল (সাঃআঃ)-এর তাদেরকে পেছন থেকে ডাক দেয়া।

[৩০৩৯] (আ.প্র. ৩৭৬৪, ই.ফা. ৩৭৬৭)

৬৪/২১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ

তারপর তিনি তোমাদের উপর দুঃখের পর প্রশান্তি অবতীর্ণ করিলেন তন্দ্রারুপে, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। আর একদল ছিল যাদের বিব্রত করে রেখেছিল তাদের প্রাণের চিন্তা, তারা আল্লাহর প্রতি জাহিলী যুগের ধারণার মত অবাস্তব ধারণা করেছিল। তারা বলছিলঃ এ ব্যাপারে আমাদের হাতে কি কিছু করার নেই? বলুনঃ নিশ্চয় যাবতীয় বিষয় একমাত্র আল্লাহরই হাতে। তারা নিজেদের মনে গোপন রাখে যা আপনার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলেঃ যদি আমাদের হাতে এ ব্যাপারে কিছু করার থাকত তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। বলুনঃ যদি তোমরা নিজেদের ঘরেও থাকতে, তবুও যাদের নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল তারা বেরিয়ে পড়ত নিজেদের মৃত্যুর স্থানের দিকে। এসব এজন্য যে, আল্লাহ তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করবেন এবং তোমাদের অন্তরে যা আছে তা নির্মল করবেন। মনের গোপন বিষয় আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। (সুরা আলু ইমরান ৩/১৫৪)

৪০৬৮

বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

খলীফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট …… আবু ত্বলহা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, উহূদ যুদ্ধের দিন যারা তন্দ্রায় আচ্ছন্ন [১] হয়েছিলেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম একজন। এমনকি আমার তলোয়ারটি আমার হাত থেকে কয়েক দফা পড়েও গিয়েছিল। তলোয়ারটি পড়ে যেত, আমি তা তুলে নিতাম, আবার পড়ে যেত, আমি আবার তা তুলে নিতাম।

[৪৫৬২] (আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ, ইঃফাঃ অনুচ্ছেদ)

[১] উহূদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলিম সৈনিকদের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়াটা ছিল এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। আবু তালহা (রাদি.)-ও তাদের মধ্য হইতে একজন ছিলেন যিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিয়াছেন।

৬৪/২২. অধ্যায়ঃ পরিচ্ছেদ নেই

“আপনার কিছু করণীয় নেই এ ব্যাপারে যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন অথবা শাস্তি দেবেন। কারণ তারা তো যালিম।” (সুরা আলূ ইমরান ৩/১২৮)

হুমায়দ এবং সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, উহূদের দিন নাবী (সাঃআঃ) আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি বলিলেন, যারা তাদের নাবীকে আঘাত করে তারা কী করে সফল হইবে। এ কথার প্রেক্ষাপটেই অবতীর্ণ হয়-

৪০৬৯

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ফাজরের সলাতের শেষ রাকআতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ বলার পর বলিতে শুনেছেন, হে আল্লাহ! আপনি অমুক, অমুক এবং অমুকের উপর লানাত বর্ষণ করুন। তখন আল্লাহ অবতীর্ণ করিলেন, তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম।

[৪০৭০, ৪৫৫৯, ৭৩৪৬] (আ.প্র. ৩৭৬৫, ই.ফা. ৩৭৬৮)

৪০৭০

সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া, সুহায়ল ইবনু আমর এবং হারিস ইবনু হিশামের জন্য বদদুআ করিতেন। এ ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে- “তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হইবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করনীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম।”

[৪০৬৯] (আ.প্র. ৩৭৬৫, ই.ফা. ৩৭৬৮)

৬৪/২৩. অধ্যায়ঃ উম্মু সালীত্বের [২৮] মর্যাদা সম্পর্কিত আলোচনা

[২৮] সালীত্বের পিতা হিজরাতের পূর্বে মারা গেলে সালীত্বের মা অর্থাৎ উম্মু সালীত্ব মালিক ইবনু সিনানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাহাঁর গর্ভেই বিখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) জন্মলাভ করেন।

৪০৭১

সালাবাহ ইবনু আবু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) কতকগুলো চাদর মাদীনাহবাসী মহিলাদের মধ্যে বন্টন করিলেন। পরে একটি সুন্দর চাদর বাকী থেকে গেল। তার নিকট উপস্থিত লোকদের একজন বলে উঠলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ চাদরখানা আপনার স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নাতনি আলী (রাদি.)-এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাদি.)-কে দিয়ে দিন। উমার (রাদি.) বলিলেন, উম্মু সালীত্ব (রাদি.)তার চেয়েও অধিক হাকদার। উম্মু সালীত্ব (রাদি.)আনসারী মহিলা। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করিয়াছেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, উহূদের দিন এ মহিলা আমাদের জন্য মশ্ক ভরে পানি এনেছিলেন।

[২৮৮১] (আ.প্র. ৩৭৬৬, ই.ফা. ৩৭৬৯)

৬৪/২৪. অধ্যায়ঃ হামযাহ [২৯] (রাদি.)-এর শাহাদাত

[২৯] আমীর হামযাহ (রাদি.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর প্রাণপ্রিয় চাচা যিনি ছায়ার মত আল্লাহর রাসুলকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আবু সূফইয়ান (রাদি.)-এর স্ত্রী হিনদা (রাদি.) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে ওয়াহশী নামক গোলামকে দিয়ে তীরবিদ্ধ করে হামযাহ (রাদি.)-কে শহীদ করেন।

৪০৭২

জাফার ইবনু আমর ইবনু উমাইয়া যামরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সঙ্গে ভ্রমণে বের হলাম। আমার যখন হিমস-এ পৌছালাম তখন উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলিলেন, ওয়াহ্শীর কাছে হামযাহ (রাদি.)-এর শাহাদাত অর্জনের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে চাও কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। ওয়াহশী তখন হিমসে বসবাস করছিলেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকেদেরকে) জিজ্ঞেস করলাম। আমাদেরকে বলা হল, ঐ তো তিনি তার প্রাসাদের ছায়ায় (বসে আছেন) যেন পশমহীন মশক। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে সামান্য কিছু দূরে থাকলাম এবং তাকে সালাম করলাম। তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন। জাফার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, তখন উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এমনভাবে পাগড়ি পরিহিত ছিলেন যে, ওয়াহ্শী তার দু চোখ এবং দু পা ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পাচ্ছিলেন না। এ অবস্থায় উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওয়াহ্শীকে বলিলেন, হে ওয়াহ্শী! আপনি আমাকে চিনেন কি? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তখন তাহাঁর দিকে তাকালেন, অতঃপর বলিলেন, না, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে এটুকু জানি যে, আদী ইবনু খিয়ার উম্মু কিতাল বিনতু আবুল ঈস নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মাক্কার তার একটি সন্তান জন্মিলে আমি তার ধাত্রী খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সঙ্গে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে বাচ্চার পা দুটির মতো আপনার পা দুটি দেখিতে পাচ্ছি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার মুখের আবরণ সরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হামযাহ (রাদি.)-এর শাহাদাত সম্পর্কে আমাদেরকে বলবেন কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বদর যুদ্ধে হামযাহ (রাদি.) তুআইমা ইবনু আদী ইবনু খিয়ারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব জুবায়র ইবনু মুতঈম আমাকে বলিলেন, তুমি যদি আমার চাচার বদলা হিসেবে হামযাকে হত্যা করিতে পার তাহলে তুমি মুক্ত। রাবী বলেন, যে বছর উহূদ পর্বত সংলগ্ন আইনাইন পর্বতের উপত্যকায় যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সবার সঙ্গে বেরিয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলে সারিবদ্ধ হলে সিবা নামক এক ব্যক্তি ময়দানে এসে বলিল, দ্বন্দ্ব যুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত আছ কি? ওয়াহ্শী বলেন, তখন হামযাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাদি.) তার সামনে গিয়ে বলিলেন, ওহে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মু আনমারের পোলা সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সঙ্গে দুশমনী করছ? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করিলেন, যার ফলে সে বিগত দিনের মতো গত হয়ে গেল। ওয়াহ্শী বলেন, আমি হামযাহ (রাদি.)-কে কতল করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন করে ওত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন আমি আমার বর্শা এমন জোরে নিক্ষেপ করলাম যে, তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহ্শী বলেন, এটাই হল তাহাঁর শাহাদাতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সঙ্গে ফিরে এসে মাক্কার অবস্থান করিতে লাগলাম। এরপর মাক্কার ইসলাম প্রসারিত হলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসীগণ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতদের প্রতি উত্তেজিত হন না। তাই আমি তাদের সঙ্গে রওয়ানা হলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বলিলেন, তুমিই কি ওয়াহ্শী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তুমিই কি হামযাকে কতল করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌছেছে ব্যাপার তাই। তিনি বলিলেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? ওয়াহ্শী বলেন, তখন আমি চলে আসলাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ইন্তিকালের পর মুসাইলামাতুল কাযযাব [৩০] আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসাইলামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযাহ (রাদি.)-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহ্শী বলেন, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের মত উস্কখুষ্ক চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভগ্ন দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম এবং তার বুকের উপর এমনভাবে বসিয়ে দিলাম যে, তা তার দু কাঁধের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে গেল। এরপর আনসারী এর সাহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তলোয়ার দিয়ে তার মাথার খুলিতে প্রচণ্ড আঘাত করিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনু ফাযল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করিয়াছেন যে, সুলাইমান ইবনু ইয়াসির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেন যে, ঘরের ছাদে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়, আমীরুল মুমিনীন (মুসাইলামাহ)-কে এক কৃষ্ণকায় গোলাম হত্যা করিল।

(আ.প্র. ৩৭৬৭, ই.ফা. ৩৭৭০)

[৩০] রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ইন্তিকালের পর কতিপয় লোক নবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করেছিল যাদের মধ্যে মুসাইলামাহ কাযযাব ছিল অন্যতম। আবু বাকর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং এই যুদ্ধেই ওয়াহ্শী মুসাইলামাহ্কে হত্যা করেন এবং হামযাহ (রাদি.)-কে হত্যার কাফফারা আদায় করেন।

৬৪/২৫. অধ্যায়ঃ উহূদের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর আঘাতপ্রাপ্ত [৩১] হওয়ার ঘটনা

[৩১] উহূদের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তরবারির দ্বারা সত্তরটিরও বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন কিন্তু মহান আল্লাহর খাস রহমাতে তিনি বেঁচে যান। এটি শক্তিশালী মুরসাল সুত্রে বর্ণিত হয়েছে। (ফতহুল বারী ৪০৭৩ নং হাদীসের টীকা দ্রষ্টব্য)

৪০৭৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর দন্তের প্রতি ইশারা করে বলছেন, যে সম্প্রদায় তাদের নাবীর সঙ্গে এরূপ আচরণ করেছে তাদের প্রতি আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ এবং যে ব্যক্তিকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আল্লাহর পথে হত্যা করেছে তার প্রতিও আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়ানক।

(আ.প্র. ৩৭৬৮, ই.ফা. ৩৭৭১)

৪০৭৪

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তিকে নাবী (সাঃআঃ) আল্লাহর পথে হত্যা করেছে, তার জন্য আল্লাহর গযব ভয়াবহ। আর যে সম্প্রদায় আল্লাহর নাবীর চেহারাকে রক্তাক্ত করেছে তাদের প্রতিও আল্লাহর গযব ভয়াবহ।

[৪০৭৬; মুসলিম ৩২/৩৮, হাদীস ১৭৯৩, আহমাদ ৮২২১] (আ.প্র. ৩৭৬৯, ই.ফা. ৩৭৭২)

৪০৭৫

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি ভালভাবেই জানি কে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জখম ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং কে পানি ঢালছিলেন আর কী দিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কন্যা ফাতিমাহ (রাদি.)তা ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং আলী (রাদি.) ঢালে করে পানি এনে ঢালছিলেন। ফাতিমাহ (রাদি.)যখন দেখলেন যে, পানি রক্ত পড়া বন্ধ না করে কেবল তা বৃদ্ধি করছে, তখন তিনি এক টুকরা চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে লাগিয়ে দিলেন। তখন রক্ত বন্ধ হয়ে গেল। সেদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ডান দিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে [৩২] গিয়েছিল, চেহারা জখম হয়েছিল এবং লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে মস্তকে বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

[২৪৩] (আ.প্র. ৩৭৭০, ই.ফা. ৩৭৭৩)

[৩২] যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে আঘাত করে তাহাঁর দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছিল তার নাম হচ্ছে উতবা ইবনু আবু ওয়াককাস। সে নাবী (সাঃআঃ)-এর নীচের ঠোঁটও রক্তাক্ত করেছিল।

৪০৭৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ ঐ ব্যক্তির জন্য, যাকে নাবী (সাঃআঃ) হত্যা করিয়াছেন [৩৩] এবং আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ ঐ ব্যক্তির জন্যও যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চেহারাকে রক্তাক্ত করেছে।

[৪০৭৪] (আ.প্র. ৩৭৭১, ই.ফা. ৩৭৭৪)

[৩৩] উবাই ইবনু খালাফ জাহমীকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উহূদ যুদ্ধে নিজ হাতে হত্যা করেছিলেন।

৬৪/২৬. অধ্যায়ঃ “যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।”

৪০৭৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি উরওয়াহ (রাদি.)-কে বলিলেন, হে ভাগ্নে জান? “জখম হওয়ার পর যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা সৎকাজ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আছে বিরাট পুরস্কার।” (এ আয়াতটিতে যাদের কথা বলা হয়েছে) তাদের মধ্যে তোমার পিতা যুবায়র (রাদি.) এবং আবু বকর (রাদি.)-ও ছিলেন। উহূদের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বহু দুঃখ কষ্ঠে আপতিত হয়েছিলেন। মুশরিকগন চলে গেলে তিনি আশঙ্কা করিলেন যে, তারা আবারও ফিরে আসতে পারে। তিনি বলিলেন, কে এদের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য প্রস্তুত আছে। এতে সত্তরজন সাহাবী সাড়া দিয়ে প্রস্তুত হলেন। উরওয়াহ (রাদি.) বলেন, তাদের মধ্যে আবু বকর ও যুবায়র (রাদি.) ও ছিলেন। [৩৪]

(আ.প্র. ৩৭৭২, ই.ফা. ৩৭৭৫)

[৩৪] উহূদ যুদ্ধে মুসলিমদের আনুগত্যহীনতা ও শৃংখলা ভঙ্গের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। এমন এক পর্যায় এসেছিল যে, মুশরিকরা মুসলিমদেরকে ধ্বংস করার সুযোগ পেয়েছিল যা মুশরিকরা কয়েক মনযিল দুরে গিয়ে বুঝতে পারল। পরে তারা এক স্থানে একত্রিত হয়ে পুনরায় মাদীনাহ আক্রমনের পরিকল্পনা করে যদিও তারা পরে তা বাস্তবায়িত করেনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এমন আক্রমনের আশংকা করলে উহূদ যুদ্ধের পরদিন সকাল বেলায়ই মুসলিমদেরকে ডেকে কাফিরদের পিছু ধাওয়া করার আহ্বান জানান। অবস্থা ছিল ও অত্যন্ত ভয়াবহ ও সংকটাপন্ন তথাপিও সত্যিকারের মুসলিমগন আল্লাহর রসূলের এ ডাকে সাড়া দিলেন এবং মাদীনাহ থেকে দশ কিলোমিটার দূরে হামরাউল আসাদ পর্যন্ত পৌছেন। অত্র হাদীসে সে ঘটনারই বর্ণনা এসেছে।

৬৪/২৭. অধ্যায়ঃ যে সব মুসলিম উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন

হামযাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিব, (হুযাইফাহ্র পিতা) ইয়ামান, আনাস ইবনু নাসর এবং মুসআব ইবনু উমায়র (রাদি.)।

৪০৭৮

ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আরবের কোন মানবগোষ্ঠীই আনসারদের তুলনায় অধিক সংখ্যায় শাহীদ এবং অধিক মর্যাদার অধিকারী হইবে বলে আমরা জানি না।

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) আমাকে বলেছেন, উহূদের দিন তাদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন, বিরে মাউনার দিন সত্তর জন শহীদ হয়েছেন এবং ইয়ামামার যুদ্ধের দিন সত্তর জন শহীদ হয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন যে, বিরে মাউনা ঘটেছিল রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশায় এবং ইয়ামামার যুদ্ধ হয়েছিল মুসাইলামাতুল কাযযাবের বিরুদ্ধে আবু বকর (রাদি.)-এর খিলাফতকালে।

(আ.প্র. ৩৭৭৩, ই.ফা. ৩৭৭৬)

৪০৭৯

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উহূদ যুদ্ধের শাহীদগণের দুজনকে একই কাপড়ে দাফন করেছিলেন। জড়ানোর পর জিজ্ঞেস করিতেন, এদের মধ্যে কে অধিক কুরআন জানে, যখন কোন একজনের প্রতি ইশারা করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলিতেন, ক্বিয়ামাতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষী হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযাও পড়ানো হয়নি এবং তাদেরকে গোসলও দেয়া হয়নি।

[১৩৪৩] (আ.প্র. ৩৭৭৪, ই.ফা. ৩৭৭৭)

৪০৮০

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহীদ হলে আমি কাঁদতে লাগলাম এবং তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগন আমাকে নিষেধ করছিলেন। তবে নাবী (সাঃআঃ) নিষেধ করেননি। নাবী (সাঃআঃ) (আবদুল্লাহর ফুফুকে বলিলেন) তোমরা তার জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত মালায়িকাহ তাদের ডানা দিয়ে তার উপর ছায়া করে রেখেছিল।

[১২৪৪] (আ.প্র. ৩৭৭৪. ই.ফা. ৩৭৭৭)

৪০৮১

আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একটি তরবারি আন্দোলিত করলাম, অমনি এর মধ্যস্থলে ভেঙ্গে গেল। (বুঝলাম) এটা হল উহূদ যুদ্ধে মুমিনদের উপর আপতিত বিপদেরই স্বপ্ন রূপ। এরপর ওটিকে আবার আন্দোলিত করলাম। এতে ওটা আগের চেয়েও সুন্দর হয়ে গেল। এটা হল যে, বিজয় আল্লাহ এনে দিয়েছিলেন এবং মুমিনদের একতাবদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নে আমি একটি গরুও দেখেছিলাম। উহূদ যুদ্ধে মুমিনদের শাহাদাত লাভ হচ্চে এর ব্যাখ্যা। আল্লাহর সকল কাজ কল্যাণময়।

[৩৬২২] (আ.প্র. ৩৭৭৫, ই.ফা. ৩৭৭৮)

৪০৮২

খাব্বাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম। এতে আমরা চেয়েছি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদান নির্ধারিত হয়ে গেছে। আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ গত হয়েছেন বা চলে গেছেন। অথচ প্রতিদান তিনি কিছুই ভোগ করিতে পারেননি। মুসআব ইবনু উমায়র (রাদি.) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। উহূদের দিন তিনি পা দুখানা বেরিয়ে যেত এবং পা দুখানা আবৃত করলে মাথা বেরিয়ে যেত। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে বলিলেন, ওটা দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং উভয় পা ইযখির দ্বারা আবৃত করে দাও। অথবা বলিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ), তাহাঁর উভয় পায়ের উপর ইযখির দিয়ে দাও। আর আমাদের মধ্যে কেউ এমনও আছেন, যার ফল ভালভাবে পেকেছে, আর তা তিনি ভোগ করছেন।

[১২৭৬] (আ.প্র. ৩৭৭৬, ই, ফা. ৩৭৭৯)

৬৪/২৮. অধ্যায়ঃ উহুদ (পাহাড়) আমাদেরকে ভালবাসে

আব্বাস ইবনু সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুমায়দ (রাদি.)এর বাচনিক নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

৪০৮৩

ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.) এর নিকট থেকে শুনিয়াছি যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এ (উহূদ) পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে আর আমরাও একে ভালবাসি।

{৩৭১} (আ.প্র. ৩৭৭৭, ই.ফা. ৩৭৮০)

৪০৮৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উহূদ পর্বত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বলিলেন, এ পর্বত আমাদেরকে ভালবাসে এবং আমরাও একে ভালবাসি। হে আল্লাহ ইবরাহীম (আ. ) মাক্কাহ্কে হারাম হিসেবে ঘোষনা করেছিলেন এবং আমি দুটি কঙ্করময় স্থানের মধ্যবর্তী জায়গাকে (মাদীনাহ্কে) হারাম হিসেবে ঘোষনা করছি।

[৩৭১] (আ.প্র. ৩৭৭৮, ই.ফা. ৩৭৮১)

৪০৮৫

উকবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী (সাঃআঃ) বের হলেন, এবং উহূদের শাহীদগণের জন্য জানাযার সালাতের মতো সালাত আদায় করিলেন। এরপর মিম্বরের দিকে ফিরে এসে বলিলেন, আমি তোমাদের অগ্রগামী ব্যক্তি এবং আমি তোমাদের সাক্ষ্যদাতা। আমি এ মূহূর্তে আমার হাউয (কাউসার) দেখিতে পাচ্ছি। আমাকে পৃথিবীর ধনভান্ডারের চাবি দেয়া হয়েছে অথবা বলিলেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ), আমাকে পৃথিবীর চাবি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার ইন্তিকালের পর তোমরা র্শিকে লিপ্ত হইবে-তোমাদের ব্যাপারে আমার এ ধরনের আশঙ্কা নেই। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করি যে, তোমরা পৃথিবীতে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হইবে।

[১৩৪৪] (আ.প্র. ৩৭৭৯, ই.ফা. ৩৭৮২)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply