উলামা বয়স্ক ও সম্মানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করা -রিয়াদুস সালেহীন
উলামা বয়স্ক ও সম্মানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করা -রিয়াদুস সালেহীন >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
পরিচ্ছেদ – ৪৪ : উলামা, বয়স্ক ও সম্মানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করা, তাঁদেরকে অন্যান্যদের উপর প্রাধান্য দেওয়া, তাঁদের উচ্চ আসন দেওয়া এবং তাঁদের মর্যাদা প্রকাশ করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ﴾ [الزمر: ٩]
অর্থাৎ “বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা যুমার ৯ আয়াত]
1/352. وَعَن أَبي مَسعُودٍ عُقبَةَ بنِ عَمرٍو البَدرِي الأَنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَؤُمُّ القَوْمَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ الله، فَإنْ كَانُوا في القِراءَةِ سَوَاءً، فأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإنْ كَانُوا في السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ كَانُوا في الهِجْرَةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِنّاً، وَلاَ يَؤُمّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ في سُلْطَانِهِ، وَلاَ يَقْعُدْ في بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إلاَّ بِإذْنهِ». رواه مسلم
وفي رواية لَهُ: «فَأقْدَمُهُمْ سِلْماً» بَدَلَ «سِنّاً» أيْ إسْلاماً .
وفي رواية: «يَؤُمُّ القَومَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ، وَأقْدَمُهُمْ قِراءةً، فَإنْ كَانَتْ قِرَاءتُهُمْ سَوَاءً فَيَؤُمُّهُمْ أقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ كَانُوا في الهِجْرَةِ سَواء، فَليَؤُمُّهُمْ أكْبَرُهُمْ سِنّاً».
১/৩৫২। আবূ মাসঊদ উক্ববাহ ইবনি ‘আমর বাদরী আনসারী রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘জামাআতের ইমামতি ঐ ব্যক্তি করিবে, যে তাহাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কুরআন পড়তে জানে। যদি তারা পড়াতে সমান হয়, তাহলে তাহাদের মধ্যে যে সুন্নাহ [হাদীস] বেশী জানে সে [ইমামতি করিবে]। অতঃপর তারা যদি সুন্নাহতে সমান হয়, তাহলে তাহাদের মধ্যে সর্বাগ্রে হিজরতকারী। যদি হিজরতে সমান হয়, তাহলে তাহাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ [ইমামতি করিবে]। আর কোনো ব্যক্তি যেন কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বস্থলে ইমামতি না করে এবং গৃহে তার বিশেষ আসনে তার বিনা অনুমতিতে না বসে।’’ [মুসলিম] [1]
অন্য এক বর্ণনায় ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’র পরিবর্তে ‘সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী’ শব্দ রয়েছে।
আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘জামাআতের ইমামতি করিবে, যে তাহাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে, যার ক্বিরাআত বেশী ভালো, অতঃপর ক্বিরাআতে সবাই সমান হলে সে ইমামতি করিবে, যে তাহাদের মধ্যে আগে হিজরত করেছে। হিজরতে সবাই সমান হলে সে ইমামতি করিবে, যে তাহাদের মধ্যে বয়সে বড়।’’
2/353. وَعَنهُ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا في الصَّلاةِ، وَيَقُولُ: «اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا، فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ، لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
২/৩৫৩। উক্ত সাহাবী রাঃআঃ থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ নামায শুরু করার সময় আমাদের [বাজুর উপরি অংশে] কাঁধ ছুঁয়ে বলিতেন, ‘‘তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং বিভিন্নরূপে দাঁড়ায়ো না, [নতুবা] তোমাদের অন্তরসমূহ বিভিন্ন হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে [প্রথম কাতারে আমার পশ্চাতে] থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাহাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাহাদের যারা নিকটবর্তী তারা।’’[মুসলিম] [2]
3/354. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ»ثَلاثاً: «وَإيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأسْوَاق». رواه مسلم
৩/৩৫৪। আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারা যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়। অতঃপর যারা [উভয় ব্যাপারে] তাহাদের নিকটবর্তী।’’ এরূপ তিনি তিন বার বলিলেন। [অতঃপর তিনি বলিলেন,] ‘‘আর তোমরা [মসজিদে] বাজারের ন্যায় হৈচৈ করা হতে দূরে থাকো।’’ [মুসলিম] [3]
4/355. وَعَن أَبي يَحيَى، وَقِيلَ : أَبي مُحَمَّدٍ سَهلِ بنِ أَبي حَثْمَةَ الأنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : انطَلَقَ عَبدُ اللهِ ابنُ سهْلٍ وَمُحَيِّصَةُ بنُ مَسْعُودٍ إِلَى خَيْبَرَ وَهِيَ يَومَئذٍ صُلْحٌ، فَتَفَرَّقَا، فَأتَى مُحَيِّصَةُ إِلَى عبدِ اللهِ بنِ سَهلٍ وَهُوَ يَتشَحَّطُ في دَمِهِ قَتِيلاً، فَدَفَنَهُ، ثُمَّ قَدِمَ المَدِينَةَ فَانْطَلَقَ عَبدُ الرَّحمَانِ بنُ سَهلٍ وَمُحَيِّصَةُ وحُوَيِّصَةُ ابْنَا مَسْعُودٍ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، فَذَهَبَ عَبدُ الرَّحمَانِ يَتَكَلَّمُ، فَقَالَ: «كَبِّرْ كَبِّرْ»وَهُوَ أحْدَثُ القَوم، فَسَكَتَ، فَتَكَلَّمَا، فَقَالَ: «أتَحْلِفُونَ وتَسْتَحِقُّونَ قَاتِلَكُمْ ؟»وذكر تمام الحديث . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৫৫। আবূ ইয়াহয়্যা মতান্তরে আবূ মুহাম্মাদ সাহ্ল ইবনি আবূ হাসমা আনসারী রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি সাহ্ল এবং মুহাইয়িস্বাহ ইবনি মাসঊদ রাঃআঃ খায়বার রওয়ানা হলেন। সে সময় [সেখানকার ইয়াহুদী এবং মুসলিমের মধ্যে] সন্ধি ছিল। [খায়বার পৌঁছে স্ব স্ব প্রয়োজনে] তাঁরা পরস্পর পৃথক হয়ে গেলেন। অতঃপর মুহাইয়িস্বাহ আব্দুল্লাহ ইবনি সাহলের নিকট এলেন, যখন তিনি আহত হয়ে রক্তাক্ত দেহে তড়পাচ্ছিলেন। সুতরাং মুহাইয়িস্বাহ তাঁকে [তাহাঁর মৃত্যুর পর] সেখানেই সমাধিস্থ করিলেন। তারপর তিনি মদীনা এলেন। [মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মৃতের ভাই] আব্দুর রহমান ইবনি সাহ্ল এবং মাসউদের দুই ছেলে মুহাইয়িস্বাহ ও হুওয়াইয়িস্বাহ নবী সাঃআঃ-এর নিকট গেলেন। আব্দুর রহমান কথা বলিতে গেলেন। তা দেখে নবী সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলিতে দাও, বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলিতে দাও।’’ আর ওঁদের মধ্যে আব্দুর রহমান বয়সে ছোট ছিলেন। ফলে তিনি চুপ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা দু’জন কথা বলিলেন। [সব ঘটনা শোনার পর] নবী সাঃআঃ বলিলেন, ‘‘তোমরা কি কসম খাচ্ছ এবং [নিজ ভাইয়ের] হত্যাকারী থেকে অধিকার চাচ্ছ?’’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করিলেন। [বুখারী ও মুসলিম] [4]
5/356. وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أُحُد يَعْنِي في القَبْرِ، ثُمَّ يَقُولُ: «أيُّهُمَا أكْثَرُ أخذاً للقُرآنِ ؟»فَإذَا أُشيرَ لَهُ إِلَى أحَدِهِمَا قَدَّمَهُ في اللَّحْدِ . رواه البخاري
৫/৩৫৬। জাবের রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাঃআঃ উহুদের শহীদগণের দু’জনকে একটি কবরে একত্র করে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘এদের মধ্যে কুরআন হিফ্য কার বেশী আছে?’’ সুতরাং দু’জনের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে প্রথমে তাঁকে বগলী কবরে রাখছিলেন। [বুখারী] [5]
6/357. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «أرَانِي فِي المَنَامِ أتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ، فَجَاءَنِي رَجُلاَنِ، أحَدُهُما أَكبَرُ مِنَ الآخَرِ، فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الأصْغَرَ، فَقِيلَ لِي : كَبِّرْ، فَدَفَعْتهُ إِلَى الأكْبَرِ مِنْهُمَا». رواه مسلم مسنداً والبخاري تعليقاً.
৬/৩৫৭। ইবনি উমার রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি নিজেকে স্বপ্নে দাঁতন করিতে দেখলাম। অতঃপর দু’জন লোক এল, একজন অপরজনের চেয়ে বড় ছিল। আমি ছোটজনকে দাঁতনটি দিলাম, তারপর আমাকে বলা হল, ‘বড়জনকে দাও।’ সুতরাং আমি তাহাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটিকে [দাঁতন] দিলাম।’’ [মুসলিম, বুখারী ছিন্ন সনদে] [6]
7/358. وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ مِنْ إجْلالِ اللهِ تَعَالَى : إكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ المُسْلِمِ، وَحَامِلِ القُرآنِ غَيْرِ الغَالِي فِيهِ، وَالجَافِي عَنْهُ، وَإكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِط». حديث حسن رواه أَبُو داود
৭/৩৫৮। আবূ মূসা রাঃআঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘পাকা চুলওয়ালা বয়স্ক মুসলিমের, কুরআন বাহক [হাফেয ও আলেম]-এর যে কুরআনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞাকারী নয় এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সম্মান করা এক প্রকার আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা।’’[আবূ দাউদ] [7]
8/359. وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ غِيرنَا، وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبيرِنَا».حديث صحيح رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح».وَفي رِوَايَةِ أبي دَاوُد: «حَقَّ كَبيرِنَا».
৮/৩৫৯। ‘আমর ইবনি শুআইব রাঃআঃ তাহাঁর পিতা থেকে এবং তিনি [শুআইব] তাহাঁর [আমরের] দাদা [আব্দুল্লাহর ইবনি আমর] রাঃআঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান জানে না।’’ [সহীহ হাদীস, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ] আবূ দাঊদের এক বর্ণনায় আছেঃ ‘‘আমাদের বড়দের অধিকার জানে না।’’ [8]
9/360. وَعَنْ مَيْمُوْنَ بْنِ أَبِيْ شَبِيْبٍ رَحِمَهُ اللهُ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا مَرَّ بِهَا سَائِلٌ، فَأَعْطَتْهُ كِسْرَةً، وَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ عَلَيْهِ ثِيَابٌ وهَيْئَةٌ، فَأَقْعَدََتْهُ، فَأَكَلَ فَقِيْلَ لَهَا فِيْ ذٰلِكَ ؟ فَقَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: « أَنْزِلُوْا النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ»رواه أبو داود . لٰكِنْ قَالَ : مَيْمُوْنُ لَمْ يُدْرِكْ عَائِشَةَ .
وَقَدْ ذَكَرَهُ مُسْلِمٌ فِيْ أَوَّلِ صَحِيْحِهِ تَعْلِيْقاً فَقَالَ : وَذُكَرَ عَنْ عائِشَةَ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ نُنْزِلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ، وَذَكَرَهُ الْحَاكِمُ أَبُوْ عَبْدِ اللهِ فِيْ كِتابِهِ: «مَعْرْفَةُ عُلُوْمِ الْحَدِيْثِ»وقال : هو حديثٌ صحيح .
৯/৩৬০। মাইমুন ইবনু আবি শাবীব রাহিমাহুল্লাহু হইতে বর্ণিত, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সামনে দিয়ে একজন ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি প্রদান করিলেন। আবার তার সম্মুখ দিয়ে সজ্জিত পোশাকে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাকে তিনি বসালেন এবং খাবার খাওয়ালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন : “মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।” হাদীসটি ইমাম আবূ দাউদ উদ্ধৃত করিয়াছেন। কিন্তু বলেছেন, আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সঙ্গে মাইমুনের সাক্ষাৎ হয়নি। ইমাম মুসলিম তার সহীহ হাদীস গ্রন্থে এটাকে মু‘আল্লাক হাদীস হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, ‘আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ ‘‘আমাদেরকে আদেশ করিয়াছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে’’। এ হাদীসটি ইমাম হাকিম আবূ ‘আবদুল্লাহ [রাহ:] তার ‘‘মারিফাতু উলুমিল হাদীস’’ গ্রন্থে বর্ণনা করিয়াছেন এবং বলেছেন এটি সহীহ হাদীস।[9]
10/361. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ، فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أخِيهِ الحُرِّ بنِ قَيسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمَرُ رضي الله عنه، وَكَانَ القُرَّاءُ أصْحَابَ مَجْلِس عُمَرَ رضي الله عنه وَمُشاوَرَتِهِ كُهُولاً كانُوا أَوْ شُبَّاناً، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لابْنِ أخيهِ : يَا ابْنَ أخِي، لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأمِيرِ فَاسْتَأذِنْ لِي عَلَيهِ، فاسْتَأذَن فَأذِنَ لَهُ عُمَرُ. فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: هِي يَا ابنَ الخَطَّابِ، فَواللهِ مَا تُعْطِينَا الْجَزْلَ وَلا تَحْكُمُ فِينَا بالعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ رضي الله عنه حَتَّى هَمَّ أنْ يُوقِعَ بِهِ. فَقَالَ لَهُ الحُرُّ : يَا أميرَ المُؤْمِنينَ، إنَّ الله تَعَالَى قَالَ لِنَبيِّهِ ﷺ: ﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩] وَإنَّ هَذَا مِنَ الجَاهِلِينَ، واللهِ مَا جَاوَزَهاَ عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا، وكَانَ وَقَّافاً عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى . رواه البخاري
১০/৩৬১। ইবনি আব্বাস বর্ণনা করেন যে, উয়াইনাহ ইবনি হিস্বন এলেন এবং তাহাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনি কাইসের কাছে অবস্থান করিলেন। এই [হুর্র] উমার রাঃআঃ-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাহাঁর নিকটে রাখতেন। আর কুরআন-বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার রাঃআঃ–এর সভাষদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাহাঁর ভাতিজাকে বলিলেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করিলেন, তখন উমার [রাঃআঃ]কে বলিলেন, ‘হে ইবনি খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করেন না!’ [এ কথা শুনে] উমার রাঃআঃ রেগে গেলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বলিলেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাহাঁর নবীকে বলেন, ‘‘তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।’’ [সূরা আল আ’রাফ ১৯৮ আয়াত] আর এ এক মূর্খ।’ আল্লাহর কসম! যখন তিনি [হুর্র] এই আয়াত পাঠ করিলেন, তখন উমার রাঃআঃ একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে [অর্থাৎ তাহাঁর নির্দেশ শুনে] থেমে যেতেন।[বুখারী] [10]
11/362. وَعَن أَبي سَعِيدٍ سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ رضي الله عنه، قَالَ : لَقَد كُنتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ غُلاماً، فَكُنْتُ أحْفَظُ عَنْهُ، فَمَا يَمْنَعُنِي مِنَ القَوْلِ إلاَّ أنَّ هَاهُنَا رِجَالاً هُمْ أسَنُّ مِنِّي . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/৩৬২। আবূ সাঈদ সামুরাহ ইবনি জুনদুব রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর যুগে কিশোর ছিলাম। আমি তাহাঁর কথাগুলি মুখস্থ করে নিতাম। কিন্তু আমাকে বর্ণনা করিতে একটাই জিনিস বাধা সৃষ্টি করত যে, সেখানে আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ উপস্থিত থাকত।’ [বুখারী ও মুসলিম] [11]
12/363. وعن أَنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله ﷺ: «ما أَكْرَم شَابٌّ شَيْخاً لِسِنِّهِ إِلاَّ قَيَّضَ اللهِ لَهُ مَنْ يُكْرِمُهُ عِنْد سِنِّه»رواه الترمذي وقال حديث غريب .
১২/৩৬৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, “যদি কোনো বৃদ্ধ লোককে কোনো যুবক তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান দেখায়, তবে তার বৃদ্ধাবস্থায় আল্লাহ এমন লোককে নির্ধারণ করে দিবেন, যে তাকে সম্মান দেখাবে।” তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।[12]
[1] মুসলিম ৬৭৩, তিরমিযী ২৩৫, নাসায়ী ৭৮০, আবূ দাউদ ৫৮২, ইবনু মাজাহ ৯৮০, আহমাদ ১৬৬১৫, ১৬৬৪৩, ২১৮৩৫
[2] মুসলিম ৪৩২, নাসায়ী ৮০৭, ৮১২, আবূ দাউদ ৬৭৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৬, আহমাদ ১৬৬৫৩, দারেমী ১২৬৬
[3] মুসলিম ৪৩২, তিরমিযী ২২৮, আবূ দাউদ ৬৭৪, আহমাদ ৪৩৬০, দারেমী ১২৬৭
[4] সহীহুল বুখারী ৩১৭৩, ২৭০২, ৬১৪২, ৬৮৯৮, ৭১৯২, মুসলিম ১৬৬৯, তিরমিযী ১৪২২, নাসায়ী ৪৭১৩, ৪৭১৪, ৪৭১৫, ৪৭১৬, আবূ দাউদ ৪৫২০, ৪৫২১, ৪৫২৩, ইবনু মাজাহ ২৬৭৭
[5] সহীহুল বুখারী ১৩৪৩, ১৩৪৫, ১৩৪৬, ১৩৪৮, ১৩৫১, ১৩৫২, ১৩৫৩, ৪০৮০, তিরমিযী ১০৩৬, নাসায়ী ১৯৫৫, ২০২১, আবূ দাউদ ৩১৩৮, ইবনু মাজাহ ১৫১৪, আহমাদ ১৩৭৭৭
[6] মুসলিম ২২৭১, ৩০০৩
[7] আবূ দাউদ ৪৮৪৩
[8] তিরমিযযী ১৯২০, আহমাদ ৬৬৯৪, ৬৮৯৬, ৭০৩৩
[9] আমি [আলবানী] বলছিঃ হাকিম আবূ আব্দিল্লাহ্ তার ‘‘মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীস’’ গ্রন্থে যে, বলেছেন : হাদীসটি সহীহ্। কিন্তু তিনি যেরূপ বলেছেন আসলে হাদীসটি সেরূপ নয়, এর সনদে বিচ্ছিন্নতা থাকার কারণে। যেমনটি আমি ‘‘আলমিশকাত’’ গ্রন্থে [তাহ্ক্বীক সানীতে – ৪৯৮৯] আলোচনা করেছি। আবূ দাঊদ [নিজেই] বলেনঃ বর্ণনাকারী মাইমূন আয়েশাকে পাননি। আরও দেখুনঃ সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১৮৯৪নং]
[10] সহীহুল বুখারী ৪৬৪২, ৭২৮৬
[11] সহীহুল বুখারী ৩৩২, মুসলিম ৯৬৪, তিরমিযী ১০৩৫, নাসায়ী ১৯৭৬, ১৯৭৯, আবূ দাউদ ৩১৯৫, ইবনু মাজাহ ১৪৯৩, আহমাদ ১৯৬৪৯, ১৯৭০১
[12] আমি [আলবানী] বলছিঃ আমি হাদীসটি সম্পর্কে ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থের [৩০৪] নং হাদীসে আলোচনা করেছি এবং এর দু’টি সমস্যা উল্লেখ করেছি। [ওকাইলী ইয়াযীদ ইবনু বায়ান সম্পর্কে বলেনঃ তার মুতাবা‘য়াত করা হয়নি। আর হাদীসটি একমাত্র তার মাধ্যমেই চেনা যায়। দারাকুতনী বলেনঃ তিনি দুর্বল। আর ইমাম বুখারী বলেনঃ তার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। ইবনু আদী বলেনঃ এটি মুনকার হাদীস। আর তার শাইখ আবুর রিহাল সম্পর্কে ইবনু আদী বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন, মুনকারুল হাদীস। ইমাম বুখারী বলেনঃ তার নিকট আজব আজব বর্ণনা রয়েছে। দেখুন উক্ত [৩০৪] নম্বর হাদীসে]।
Leave a Reply