বোখারী শরীফ ডাউনলোড অধ্যায় – ওজু এর বর্ণনা
বোখারী শরীফ ডাউনলোড অধ্যায় – ওজু এর বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৪, ওজু, অধ্যায়ঃ (১-৪৬)=৪৬টি
অধ্যায়ঃ ৪/১. উযূর বর্ণনা।
অধ্যায়ঃ ৪/৩. উযূর ফাযীলাত এবং উযূর প্রভাবে যাদের উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উজ্জ্বল হইবে।
অধ্যায়ঃ ৪/৪. নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহের কারণে উযু করিতে হয় না।
অধ্যায়ঃ ৪/৫. হালকাভাবে উযূ করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৬. পূর্ণরূপে উযূ করা ।
অধ্যায়ঃ ৪/৭. এক আজলা পানি দিয়ে দু হাতে মুখমন্ডল ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৮. সর্বাবস্থায়, এমনকি সহবাসের সময়েও বিসমিল্লাহ্ বলা।
অধ্যায়ঃ ৪/৯. পায়খানায় যাওয়ার সময় কী বলিতে হয়?
অধ্যায়ঃ ৪/১০. পায়খানার নিকট পানি রাখা।
অধ্যায়ঃ ৪/১১. পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলামুখী হইবে না, তবে দেয়াল অথবা কোন আড় থাকলে ভিন্ন কথা।
অধ্যায়ঃ ৪/১২. যে ব্যক্তি দু ইটের উপর বসে মলমূত্র ত্যাগ করিল।
অধ্যায়ঃ ৪/১৩. পেশাব পায়খানার জন্য নারীদের বাইরে যাওয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/১৩. পেশাব পায়খানার জন্য নারীদের বাইরে যাওয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/১৪. গৃহের মধ্যে পেশাব পায়খানা করা।
অধ্যায়ঃ ৪/১৫. পানি দ্বারা শৌচ কাজ করা।
অধ্যায়ঃ ৪/১৬. পবিত্রতা অর্জনের জন্য কারো সঙ্গে পানি নিয়ে যাওয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/১৭. ইস্তিন্জার জন্য পানির সাথে (লৌহ ফলকযুক্ত) লাঠি নিয়ে যাওয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/১৮. ডান হাতে শৌচকার্য করা নিষেধ।
অধ্যায়ঃ ৪/১৯. প্রস্রাব করার সময় ডান হাতে পুরুষাঙ্গ ধরবে না।
অধ্যায়ঃ ৪/২০. পাথর দিয়ে ইস্তিন্জা করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২১. গোবর দ্বারা শৌচকার্য না করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২২. উযূর মধ্যে একবার করে ধৌত করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২৩. উযূতে দুবার করে ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/২৪. উযূতে তিনবার করে ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/২৪. উযূতে তিনবার করে ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/২৫. উযূতে নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২৬. (শৌচকার্যের জন্য) বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২৭. দুপা ধৌত করা এবং তা মাসহ্ না করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২৮. উযূর সময় কুলি করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২৯. গোড়ালি ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৩০. জুতা পরা অবস্থায় উভয় পা ধুতে হইবে জুতার উপর মাসহ করা যাবে না।
অধ্যায়ঃ ৪/৩১. উযূ এবং গোসল ডান দিক থেকে শুরু করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৩২. সলাতের সময় হলে উযূর পানি অনুসন্ধান করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৩. যে পানি দিয়ে মানুষের চুল ধোয়া হয়।
অধ্যায়ঃ কুকুর যদি পাত্র হতে পানি পান করে।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৪. সামনের এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত হওয়া ব্যতীত অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৫. নিজের সাথীকে উযূ করিয়ে দেয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৬. বিনা উযূতে কুরআন প্রভৃতি পাঠ।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৭. অজ্ঞান না হলে উযূ না করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৮. পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৯. উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৪০. উযূর অবশিষ্ট পানি ব্যবহার।
অধ্যায়ঃ ৪/৪১. এক আজলা পানি দিয়ে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৪২. একবার মাথা মাসেহ করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৩. স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে উযূ করা এবং স্ত্রীর উযূর অবশিষ্ট পানি (ব্যবহার করা)।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৪. অজ্ঞান লোকের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূর পানি ছিঁটিয়ে দেয়া।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৫. গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে উযূ-গোসল করা।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৬. গামলা হতে উযূ করা।
অধ্যায়ঃ ৪/২. পবিত্রতা ব্যতীত সলাত কবূল হইবে না।
৪/১. উযূর বর্ণনা।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ (ওহে যারা ঈমান এনেছ!) তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন ধৌত করে নিবে নিজেদের মুখমন্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত আর মাসেহ করে নিবে নিজেদের মস্তক এবং ধৌত করে নিবে নিজেদের পা গ্রন্থি পর্যন্ত। (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৬)
আবূ আবদুল্লাহ্ বুখারী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উযূর ফরজ হল এক-একবার করে ধোয়া। তিনি দু-দুবার করে এবং তিন-তিনবার করেও উযূ করিয়াছেন, কিন্তু তিনবারের অধিক ধৌত করেন নি। পানির অপচয় করা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আমালের সীমা অতিক্রম করাকে উলামায়ে কিরাম মাকরূহ বলেছেন।
১৩৫. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির হাদাস হয় তার সালাত কবূল হইবে না, যতক্ষণ না সে উযূ করে। হাযরা-মাওতের জনৈক ব্যক্তি বলিল, হে আবূ হুরাইরাহ! হাদাস কী? হাদাস কী? তিনি বলিলেন, নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু বের হওয়া। (৬৯৫৪; মুসলিম ২/২, হাঃ ২২৫, আহমাদ ৮০৮৪) (আঃপ্রঃ ১৩২, ইঃফাঃ ১৩৭)
অধ্যায়ঃ ৪/৩. উযূর ফাযীলাত এবং উযূর প্রভাবে যাদের উযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উজ্জ্বল হইবে।
১৩৬. নুআয়ম মুজমির (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি উযূ করে বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহবান করা হইবে যে, উযূর প্রভাবে তাহাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল উজ্জ্বল থাকিবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে। (মুসলিম ২/১২, হাঃ ২৪৬, আহমাদ ৯২০৬) (আঃপ্রঃ ১৩৩, ইঃফাঃ ১৩৮)
অধ্যায়ঃ ৪/৪. নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহের কারণে উযু করিতে হয় না।
১৩৭. আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ)-এর চাচা হইতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হল যে, তার মনে হয়েছিল যেন সালাতের মধ্যে কিছু হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেনঃ সে যেন ফিরে না যায়, যতক্ষণ না শব্দ শোনে বা দুর্গন্ধ পায়। (১৭৭, ২০৫৬; মুসলিম ৩/২৬, হাঃ ৩৬১) (আঃপ্রঃ ১৩৪, ইঃফাঃ ১৩৯)
অধ্যায়ঃ ৪/৫. হালকাভাবে উযূ করা।
১৩৮. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়েছিলেন, এমনকি তাহাঁর নিঃশ্বাসের শব্দ হতে লাগল। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করিলেন। সুফ্ইয়ান (রহঃ) আবার কখনো বলেছেন, তিনি শুয়ে পড়লেন, এমনকি নাক ডাকার আওয়ায হতে লাগল। অতঃপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিলেন। অন্য সূত্রে সুফইয়ান (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি এক রাতে আমার খালা মাইমূনাহ (রহঃ)-এর নিকট রাত কাটালাম। রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠলেন এবং রাতের কিছু অংশ চলে যাবার পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঝুলন্ত মশক হতে হালকা ধরনের উযূ করিলেন। রাবী আমর (রহঃ) বলেন যে, হালকাভাবে ধুলেন, পানি কম ব্যবহার করিলেন এবং সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেন, তখন তিনি যেভাবে উযূ করিয়াছেন আমিও সেভাবে উযূ করলাম এবং এসে তাহাঁর বাঁয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সুফইয়ান (রহঃ) কখনো কখনো يسار (বাম) শব্দের স্থলে شمال বলিতেন। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ধরে তাহাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। অতঃপর আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর কাত হলেন আর ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি তাহাঁর নাক ডাকালেন। অতঃপর মুয়াযযিন এসে তাঁকে সালাতের কথা জানিয়ে দিলেন। তিনি তার সঙ্গে সালাতের জন্য চললেন এবং সালাত আদায় করিলেন, কিন্তু উযূ করিলেন না। আমরা আমর (রহঃ)-কে বললামঃ লোকে বলে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চোখ ঘুমায় কিন্তু তাহাঁর অন্তর ঘুমায় না। তখন আমর (রহঃ) বলিলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, নাবীগণের স্বপ্ন ওয়াহী। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করিলেন। إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে কুরবানী করছি- (সূরাহ্ আস্ সাফ্ফাত ৩৭/১০২)। (১১৭ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৩৫, ইঃফাঃ ১৪০)
অধ্যায়ঃ ৪/৬. পূর্ণরূপে উযূ করা ।
ইবনু উমার (রাঃআঃ) বলেন, ভালভাবে পরিষ্কার করাই হল পূর্ণরূপে উযূ করা।
১৩৯. উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দান হতে রওনা হলেন এবং উপত্যকায় পৌঁছে নেমে তিনি পেশাব করিলেন। অতঃপর উযূ করিলেন কিন্তু উত্তমরূপে উযূ করিলেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সালাত আদায় করবেন কি? তিনি বললেনঃ সালাতের স্থান তোমার সামনে। অতঃপর তিনি আবার সওয়ার হলেন। অতঃপর মুযদালিফায় এসে সওয়ারী থেকে নেমে উযূ করিলেন। এবার পূর্ণরূপে উযূ করিলেন। তখন সালাতের জন্য ইক্বামাত দেওয়া হল। তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর সকলে তাহাদের অবতরণস্থলে নিজ নিজ উট বসিয়ে দিল। পুনরায় ইশার ইক্বামাত দেয়া হল। অতঃপর তিনি ঈশার সালাত আদায় করিলেন এবং উভয় সালাতের মধ্যে অন্য কোন সালাত আদায় করিলেন না। (১৮১, ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৬৭২; মুসলিম ১৫/৪৫, হাঃ ১২৮০, আহমাদ ২১৮০১, ২১৮০৮, ২১৮৯০) (আঃপ্রঃ ১৩৬, ইঃফাঃ ১৪১)
অধ্যায়ঃ ৪/৭. এক আজলা পানি দিয়ে দু হাতে মুখমন্ডল ধোয়া।
১৪০. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি উয়ু করিলেন এবং তাহাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে অনুরূপ করিলেন অর্থাৎ আরেক হাতের সাথে মিলিয়ে মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে ডান হাত ধুলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে তাহাঁর বাঁ হাত ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসহ করিলেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ঢেলে দিয়ে তা ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর আর এক আজলা পানি নিয়ে তা দিয়ে বাম পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবে উযূ করিতে দেখেছি। (আঃপ্রঃ ১৩৭, ইঃফাঃ ১৪২)
অধ্যায়ঃ ৪/৮. সর্বাবস্থায়, এমনকি সহবাসের সময়েও বিসমিল্লাহ্ বলা।
১৪১. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে, আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। আল্লাহ্! তুমি আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং যা আমাদেরকে দান করিবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ)- অতঃপর (এ মিলনের দ্বারা) তাহাদের কিসমতে কোন সন্তান থাকলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। (৩২৭১, ৩২৮৩, ৫১৬৫, ৬৩৮৮, ৭৩৯৬; মুসলিম ত্বলাক অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৭ হাঃ ১৪৩৪, আহমাদ ১৯০৮) (আঃপ্রঃ ১৩৮, ইঃফাঃ ১৪৩)
অধ্যায়ঃ ৪/৯. পায়খানায় যাওয়ার সময় কী বলিতে হয়?
১৪২. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে যেতেন তখন বলিতেন, হে আল্লাহ্! আমি মন্দ কাজ ও শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। ইবনু আরআরা (রহঃ) শুবাহ (রহঃ) সূত্রেও অনুরূপ বর্ণনা করেন। গুনদার (রহঃ) শুবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, إِذَا أَتَى الْخَلاَءَ (যখন শৌচাগারে যেতেন)। মূসা (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, إِذَا دَخَلَ (যখন প্রবেশ করিতেন)। সাঈদ ইবনু যায়দ (রহঃ) আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন প্রবেশ করার ইচ্ছা করিতেন। (৬৩২২; মুসলিম ৩/৪২, হাঃ ৩৭৫, আহমাদ ১১৯৪৭, ১১৯৮৩) (আঃপ্রঃ ১৩৯, ইঃফাঃ ১৪৪)
অধ্যায়ঃ ৪/১০. পায়খানার নিকট পানি রাখা।
১৪৩. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলেন, তখন আমি তাহাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কে রেখেছে? তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্! তুমি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান কর। (৭৫; মুসলিম ৪৪/৩০, হাঃ ২৪৭৭, আহমাদ ২৩৯৭, ২৮৮১, ৩০২৩) (আঃপ্রঃ ১৪০, ইঃফাঃ ১৪৫)
অধ্যায়ঃ ৪/১১. পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলামুখী হইবে না, তবে দেয়াল অথবা কোন আড় থাকলে ভিন্ন কথা।
১৪৪. আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন শৌচাগারে যায়, তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ না করে এবং তার দিকে পিঠও না করে, বরং তোমরা পূর্ব দিক এবং পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে (এই নির্দেশ মাদ্বীনার বাসিন্দাদের জন্য)।* (৩৯৪; মুসলিম ২/১৭, হাঃ ২৬৪, আহমাদ ২৩৫৮৩, ২৩৫৯৫) (আঃপ্রঃ ১৪১, ইঃফাঃ ১৪৬)
* যাদের ক্বিবলা উত্তর বা দক্ষিণে হইবে তাহাদের জন্য এই হুকুম। আর যাদের ক্বিবলা পূর্ব বা পশ্চিমে তারা উত্তর বা দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসবে।
অধ্যায়ঃ ৪/১২. যে ব্যক্তি দু ইটের উপর বসে মলমূত্র ত্যাগ করিল।
১৪৫. আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকে বলে পেশাব পায়খানা করার সময় ক্বিবলাহর দিকে এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে বসবে না। আবদুল্লাহ্ ইব্ন উমার (রাঃআঃ) বলেন, আমি একদা আমাদের ঘরের ছাদে উঠলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে দুটি ইটের উপর স্বীয় প্রয়োজনে বসেছেন। তিনি (ওয়াসী (রহঃ)-কে) বলিলেন, তুমি বোধ হয় তাহাদের মধ্যে শামিল, যারা পাছায় ভর দিয়ে সালাত আদায় করে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি জানি না। মালিক (রহঃ) বলেন, (এর অর্থ হলো) যারা সালাত আদায় করে এবং মাটি থেকে পাছা না উঠিয়ে সাজদাহ দেয়। (১৪৮,১৪৯,৩১০২ ; মুসলিম ২/১৭, হাঃ ২৬৬, আহমাদ ৪৮১২, ৪৯৯১) (আঃপ্রঃ ১৪২ হাদিসের শেষাংশ নেই, ইঃফাঃ ১৪৭)
অধ্যায়ঃ ৪/১৩. পেশাব পায়খানার জন্য নারীদের বাইরে যাওয়া।
১৪৬. আয়িশাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণ রাতের বেলায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে খোলা ময়দানে যেতেন। আর উমার (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতেন, আপনার স্ত্রীগণকে পর্দায় রাখুন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী সওদাহ বিন্তু যামআহ (রাঃআঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী। উমার (রাঃআঃ) তাঁকে ডেকে বলিলেন, হে সওদা! আমি কিন্তু তোমাকে চিনে ফেলেছি। যেন পর্দার হুকুম অবতীর্ণ হয় সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা পর্দার হুকুম অবতীর্ণ করেন। (১৪৭, ৪৭৯৫, ৫২৩৭, ৬২৪০ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৪৩, ইঃফাঃ ১৪৮)
অধ্যায়ঃ ৪/১৩. পেশাব পায়খানার জন্য নারীদের বাইরে যাওয়া।
১৪৭. আয়িশাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের প্রয়োজনের জন্য বের হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে। হিশাম (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ পেশাব পায়খানার জন্য। (১৪৬) (আঃপ্রঃ ১৪৪, ইঃফাঃ ১৪৯)
অধ্যায়ঃ ৪/১৪. গৃহের মধ্যে পেশাব পায়খানা করা।
১৪৮. আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার বিশেষ এক প্রয়োজনে হাফসাহ (রাঃআঃ)-এর ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে শাম-এর দিকে মুখ করে তাহাঁর প্রয়োজনে বসেছেন। (১৪৫) (আঃপ্রঃ ১৪৫, ইঃফাঃ ১৫০)
১৪৯. আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি আমাদের ঘরের উপর উঠে দেখলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি ইটের উপর বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বসেছেন। (১৪৫) (আঃপ্রঃ ১৪৬, ইঃফাঃ ১৫১)
অধ্যায়ঃ ৪/১৫. পানি দ্বারা শৌচ কাজ করা।
১৫০. আনাস ইবনু মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হতেন তখন আমি ও অপর একটি ছেলে পানির পাত্র নিয়ে আসতাম। অর্থাৎ তিনি তা দিয়ে শৌচকার্য সারতেন। (১৫১, ১৫২, ২১৭, ৫০০; মুসলিম ২/২১, হাঃ ২৭০, আহমাদ ১৩৭১৯, ১৩১০৮) (আঃপ্রঃ ১৪৭, ইঃফাঃ ১৫২)
অধ্যায়ঃ ৪/১৬. পবিত্রতা অর্জনের জন্য কারো সঙ্গে পানি নিয়ে যাওয়া।
আবুদ-দারদা (রাঃআঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কি জুতা, পানি ও বালিশ বহনকারী ব্যক্তিটি (আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ)) নেই?
১৫১. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হতেন তখন আমি এবং আমাদের অন্য একটি ছেলে তাহাঁর পিছনে পানির পাত্র নিয়ে যেতাম। (১৫০) (আঃপ্রঃ ১৪৮, ইঃফাঃ ১৫৩)
অধ্যায়ঃ ৪/১৭. ইস্তিন্জার জন্য পানির সাথে (লৌহ ফলকযুক্ত) লাঠি নিয়ে যাওয়া।
১৫২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় যেতেন তখন আমি এবং একটি ছেলে পানির পাত্র এবং আনাযা নিয়ে যেতাম। তিনি পানি দ্বারা শৌচকার্য করিতেন। (১৫০) (আঃপ্রঃ ১৪৯)
নাযর (রহঃ) ও শাযান (রহঃ) শুবাহ (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। হাদীসে বর্ণিত আনাযা শব্দের অর্থ এমন লাঠি যার মাথায় লোহা লাগানো থাকে। (ইঃফাঃ ১৫৪)
অধ্যায়ঃ ৪/১৮. ডান হাতে শৌচকার্য করা নিষেধ।
১৫৩. আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরুষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দিয়ে যেন শৌচকার্য না করে। (১৫৪, ৫৬৩০; মুসলিম ২/১৮, হাঃ ২৬৭, আহমাদ ২২৬২৮) (আঃপ্রঃ ১৫০, ইঃফাঃ ১৫৫)
অধ্যায়ঃ ৪/১৯. প্রস্রাব করার সময় ডান হাতে পুরুষাঙ্গ ধরবে না।
১৫৪. আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন পেশাব করে তখন সে যেন কখনো ডান হাত দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ না ধরে এবং ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পান করার সময় যেন পাত্রের মধ্যে শ্বাস না ছাড়ে। (১৫৩) (আঃপ্রঃ ১৫১, ইঃফাঃ ১৫৬)
অধ্যায়ঃ ৪/২০. পাথর দিয়ে ইস্তিন্জা করা।
১৫৫. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হলে আমি তাহাঁর অনুসরণ করলাম। আর তিনি এদিক-ওদিক চাইতেন না। যখন আমি তাহাঁর নিকটবর্তী হলাম তখন তিনি আমাকে বললেনঃ আমাকে কিছু পাথর কুড়িয়ে দাও, আমি তা দিয়ে শৌচকার্য সারব (বর্ণনাকারী বলেন), বা এ ধরনের কোন কথা বলিলেন, আর আমার জন্য হাড্ডি বা গোবর আনবে না। তখন আমি আমার কাপড়ের কোচায় করে কয়েকটি পাথর এনে তাহাঁর পাশে রেখে আমি তাহাঁর নিকট হতে সরে গেলাম। তিনি প্রয়োজন মিটিয়ে সেগুলো কাজে লাগালেন। (৩৮৬০ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৫২, ইঃফাঃ ১৫৭)
অধ্যায়ঃ ৪/২১. গোবর দ্বারা শৌচকার্য না করা।
১৫৬. আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা শৌচ কাজে যাবার সময় তিনটি পাথর কুড়িয়ে দিতে আমাকে নির্দেশ করিলেন। তখন আমি দুটি পাথর পেলাম এবং আরেকটি খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। তাই একখন্ড শুকনো গোবর নিয়ে তাহাঁর নিকট গেলাম। তিনি পাথর দুটি নিলেন এবং গোবর খন্ড ফেলে দিয়ে বলিলেন, এটা নোংরা। (আঃপ্রঃ ১৫৩)
ইব্রাহীম ইবনু ইউসুফ (রহঃ), তার পিতা, আবূ ইসহাক (রহঃ), আবদুর রহমান (রহঃ)-এর সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেন। (ইঃফাঃ ১৫৮)
অধ্যায়ঃ ৪/২২. উযূর মধ্যে একবার করে ধৌত করা।
১৫৭. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক উযূতে একবার করে ধুয়েছেন। (আঃপ্রঃ ১৫৪, ইঃফাঃ ১৫৯)
অধ্যায়ঃ ৪/২৩. উযূতে দুবার করে ধোয়া।
১৫৮. আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূতে দুবার করে ধুয়েছেন। (আঃপ্রঃ ১৫৫, ইঃফাঃ ১৬০)
অধ্যায়ঃ ৪/২৪. উযূতে তিনবার করে ধোয়া।
১৫৯. হুমরান (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃআঃ)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করিলেন। তারপর তাহাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধুয়ে এবং দুহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করিলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। পরে বলিলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম উযূ করিবে, অতঃপর দুরাকআত সালাত আদায় করিবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করিবে না, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হইবে। (১৬০, ১৬৪, ১৯৩৪, ৬৪৩৩; মুসলিম ২/৩, হাঃ ২২৬, আহমাদ ৪৯৩, ৫১৩) (আঃপ্রঃ ১৫৬, ইঃফাঃ ১৬১)
অধ্যায়ঃ ৪/২৪. উযূতে তিনবার করে ধোয়া।
১৬০. ইবনু শিহাব (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উরওয়াহ হুমরান থেকে বর্ণনা করেন, উসমান (রাঃআঃ) উযূ করে বলিলেন, আমি তোমাদের নিকট একটি হাদিস পেশ করব। যদি একটি আয়াতে কারীমা না হত, তবে আমি তোমাদের নিকট এ হাদিস বলতাম না। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, যে কোন ব্যক্তি সুন্দর করে উযূ করিবে এবং সালাত আদায় করিবে, পরবর্তী সালাত আদায় করা পর্যন্ত তার মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে। উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, সে আয়াতটি হলঃ আমি যে সব স্পষ্ট নিদর্শন অবতীর্ণ করেছি তা যারা গোপন করে….। (সূরাহ্ বাক্বারাহঃ ১৫৯) (১৫৯; মুসলিম ২/৪, হাঃ ২২৭) (আঃপ্রঃ ১৫৬ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১৬১ শেষাংশ)
অধ্যায়ঃ ৪/২৫. উযূতে নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।
উসমান (রাঃআঃ), আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) ও ইবনু আববাস (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ কথা বর্ণনা করিয়াছেন।
১৬১. আবূ ইদরিস (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। (১৬২; মুসলিম ২/৮, হাঃ ২৩৭, আহমাদ ১০৭২৩) (আঃপ্রঃ ১৫৭, ইঃফাঃ ১৬২)
অধ্যায়ঃ ৪/২৬. (শৌচকার্যের জন্য) বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা।
১৬২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উযূ করে তখন সে যেন তার নাকে পানি দিয়ে ঝাড়ে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যায় ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন উযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়; কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে। (১৬১) (আঃপ্রঃ ১৫৮, ইঃফাঃ ১৬৩)
অধ্যায়ঃ ৪/২৭. দুপা ধৌত করা এবং তা মাসহ্ না করা।
১৬৩. আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন, অতঃপর তিনি আমাদের নিকট পৌঁছে গেলেন। তখন আমরা আসরের সালাত শুরু করিতে দেরী করে ফেলেছিলাম। তাই আমরা উযূ করছিলাম এবং (তাড়াতাড়ির কারণে) আমাদের পা মাসেহ করার মতো হালকাভাবে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চৈস্বঃরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে। দুবার অথবা তিনবার তিনি এ কথার পুনরাবৃত্তি করিলেন। (৬০) (আঃপ্রঃ ১৫৯, ইঃফাঃ ১৬৪)
অধ্যায়ঃ ৪/২৮. উযূর সময় কুলি করা।
১৬৪. উসমান ইবনু আফফান (রাঃআঃ)-এর মুক্ত করা দাস হুমরান (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি উসমান (রাঃআঃ)-কে উযূর পানি আনাতে দেখলেন। অতঃপর তিনি সে পাত্র হতে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুলেন। অতঃপর তাহাঁর ডান হাত পানিতে ঢুকালেন। অতঃপর কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর তাহাঁর মুখমন্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, অতঃপর মাথা মাসেহ করিলেন। অতঃপর উভয় পা তিনবার ধোয়ার পর বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করিতে দেখেছি এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করে দুরাকআত সালাত আদায় করিবে এবং তার মধ্যে অন্য কোন চিন্তা মনে আনবে না, আল্লাহ্ তাআলা তার পূর্বকৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (১৫৯) (আঃপ্রঃ ১৬০, ইঃফাঃ ১৬৫)
অধ্যায়ঃ ৪/২৯. গোড়ালি ধোয়া।
১৬৫. মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। লোকেরা সে সময় পাত্র থেকে উযূ করছিল। তখন তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা উত্তমরূপে উযূ কর। কারণ আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর জন্য জাহান্নামের আযাব রয়েছে। (মুসলিম ২/৯, হাঃ ২৪২, আহমাদ ৯২৭৬) (আঃপ্রঃ ১৬১, ইঃফাঃ ১৬৬)
অধ্যায়ঃ ৪/৩০. জুতা পরা অবস্থায় উভয় পা ধুতে হইবে জুতার উপর মাসহ করা যাবে না।
১৬৬. উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ)-কে বলিলেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি আপনাকে এমন চারটি কাজ করিতে দেখি, যা আপনার অন্য কোন সাথীকে দেখি না। তিনি বলিলেন, ইবনু জুরায়জ, সেগুলো কী? তিনি বলিলেন, আমি দেখি, (১) আপনি ত্বওয়াফ করার সময় দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত অন্য রুকন স্পর্শ করেন না। (২) আপনি সিবতী (পশমবিহীন) জুতা পরিধান করেন; (৩) আপনি (কাপড়ে) হলুদ রং ব্যবহার করেন এবং (৪) আপনি যখন মক্কা্য় থাকেন লোকে চাঁদ দেখে ইহরাম বাঁধে; কিন্তু আপনি তারবিয়ার দিন (৮ই যিলহজ্জ) না এলে ইহরাম বাঁধেন না। আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) বললেনঃ রুকনের কথা যা বলেছ, তা এজন্য করি যে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ইয়ামানী রুকনদ্বয় ব্যতীত আর কোনটি স্পর্শ করিতে দেখিনি। আর সিবতী জুতা, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সিবতী জুতা পরতে এবং তা পরিহিত অবস্থায় উযূ করিতে দেখেছি, তাই আমি তা পরতে ভালবাসি। আর হলুদ রং, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা দিয়ে কাপড় রঙিন করিতে দেখেছি, তাই আমিও তা দিয়ে রঙিন করিতে ভালবাসি। আর ইহরাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে তাহাঁর সওয়ারী রওনা না হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁকে ইহরাম বাঁধতে দেখিনি। (১৫১৪, ১৫৫২, ১৬০৯, ২৮৬৫, ৫৮৫১; মুসলিম ১৫/৫, হাঃ ১১৮৭) (আঃপ্রঃ ১৬২, ইঃফাঃ ১৬৭)
অধ্যায়ঃ ৪/৩১. উযূ এবং গোসল ডান দিক থেকে শুরু করা।
১৬৭. উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর মেয়ে (যায়নাব (রাঃআঃ))-কে গোসল করানোর সময় তাঁদের বলেছিলেনঃ তোমরা তার ডান দিক হতে এবং উযূর অঙ্গ হতে আরম্ভ কর। (১২৫৩ হতে ১২৬৩ পর্যন্ত) (আঃপ্রঃ ১৬৩, ইঃফাঃ ১৬৮)
১৬৮. আয়িশাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতা পরা, চুল অাঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক হতে আরম্ভ করিতে পছন্দ করিতেন। (৪২৬, ৫৩৮০, ৫৮৫৪, ৫৯২৬; মুসলিম ১৫/৫, হাঃ ১১৮৭) (আঃপ্রঃ ১৬৪, ইঃফাঃ ১৬৯)
অধ্যায়ঃ ৪/৩২. সলাতের সময় হলে উযূর পানি অনুসন্ধান করা।
আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলেনঃ একবার ফজরের সময় হল, তখন পানি অনুসন্ধান করা হল; কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না। তখন তায়াম্মুম (এর আয়াত) অবতীর্ণ হল।
১৬৯. আনাস ইবনু মালিক (রা.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি খুঁজতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু পানি আনা হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে তাহাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করিতে বলিলেন। আনাস (রাঃআঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাহাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উপচে পড়ছে। এমনকি তাহাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তার দ্বারা উযূ করিল। (১৯৫, ২০০, ৩৫৭২ হতে ৩৫৭৫ পর্যন্ত; মুসলিম ৪৩/৩, হাঃ ২২৭৯, আহমাদ ১২৪৯৯) (আঃপ্রঃ ১৬৫, ইঃফাঃ ১৭০)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৩. যে পানি দিয়ে মানুষের চুল ধোয়া হয়।
আত্বা (রহঃ) চুল দিয়ে সুতা এবং রশি প্রস্তুত করায় দোষের কিছু মনে করিতেন না। কুকুরের ঝুঠা এবং মসজিদের ভিতর দিয়ে কুকুরের যাতায়াত সম্পর্কে যূহরী (রহঃ) বলেন, কুকুর যখন কোন পানির পাত্রে মুখ দেয় এবং উযূ করার জন্য সে পানি ব্যতীত অন্য কোন পানি না থাকে, তবে তা দিয়েই উযূ করিবে। সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, হুবহু এ মাসআলাটি বিধৃত হয়েছে আল্লাহ্ তাআলার এ বাণীতেঃ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا তারপর তোমরা যদি পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর। আর এ তো পানিই। কিন্তু অন্তরে যেহেতু কিছু সন্দেহ রয়েছে তাই তা দিয়ে উযূ করিবে, পরে তায়াম্মুমও করিবে।
১৭০. ইবনু সীরীন (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবীদাহকে বললাম, আমাদের নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল রয়েছে যা আমরা আনাস (রাঃআঃ)-এর নিকট হতে কিংবা আনাস (রাঃআঃ)-এর পরিবারের নিকট হতে পেয়েছি। তিনি বলিলেন, তাহাঁর একটি চুল আমার নিকট থাকাটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা অর্জনের চেয়ে অধিক পছন্দের। (১৭১ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৬৬, ইঃফাঃ ১৭১)
১৭১. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর মাথা মুন্ডন করলে আবূ তলহা (রাঃআঃ)-ই প্রথমে তাহাঁর চুল সংগ্রহ করেন। (১৭০; মুসলিম ১৫/৫৬, হাঃ ১৩০৫, আহমাদ ১২০৯৩) (আঃপ্রঃ ১৬৭, ইঃফাঃ ১৭২)
অধ্যায়ঃ কুকুর যদি পাত্র হতে পানি পান করে।
১৭২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কারো পাত্রে যদি কুকুর পান করে তবে তা যেন সাতবার ধুয়ে নেয়। (মুসলিম ২/২৭, হাঃ ২৭৯, আহমাদ ৭৩৫০, ৭৩৫১,৭৪৫১) (আঃপ্রঃ ১৬৮, ইঃফাঃ ১৭৩)
অধ্যায়ঃ কুকুর যদি পাত্র হতে পানি পান করে।
১৭৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (পূর্ব যুগে) জনৈক ব্যক্তি একটি কুকুরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ভিজা মাটি চাটতে দেখিতে পেয়ে তার মোজা নিল এবং কুকুরটির জন্য কুয়া হতে পানি এনে দিতে লাগল যতক্ষণ না সে ওর তৃষ্ণা মিটাল। আল্লাহ্ এর বিনিময় দিলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। (২৩৬৩, ২৪৬৬, ৬০০৯ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৬৯, ইঃফাঃ ১৭৪)
১৭৪. আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় কুকুর মসজিদের ভিতর দিয়ে আসা-যাওয়া করত অথচ এজন্য তাঁরা কোথাও পানি ছিটিয়ে দিতেন না। (আঃপ্রঃ ১৬৯ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১৭৪ শেষাংশ)
১৭৫. আদী ইবনু হাতিম (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর সম্পর্কে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ তুমি যখন তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর শিকার ধরতে ছেড়ে দাও, তখন সে হত্যা করলে তা তুমি খেতে পার। আর সে তার অংশবিশেষ খেয়ে ফেললে তুমি তা খাবে না। কারণ সে তা নিজের জন্যই শিকার করেছে। আমি বললামঃ কখনো কখনো আমি আমার কুকুর (শিকারে) পাঠিয়ে দেই, অতঃপর তার সঙ্গে অন্য এক কুকুরও দেখিতে পাই (এমতাবস্থায় শিকারকৃত প্রাণীর কী হুকুম)? তিনি বললেনঃ তবে খেও না। কারণ তুমি বিসমিল্লাহ্ বলেছ কেবল তোমার কুকুরের বেলায়, অন্য কুকুরের বেলায় বিসমিল্লাহ্ বলনি। (২০৫৪, ৫৪৭৫, ৫৪৭৬, ৫৪৭৭, ৫৪৮৩ হতে ৫৪৮৭,৭৩৯৭ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৭০, ইঃফাঃ ১৭৫)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৪. সামনের এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত হওয়া ব্যতীত অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না।
আল্লাহ্ তাআলার এ বাণীর কারণেঃ অথবা তোমাদের কেউ শৌচাগার হতে আসে। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৩)
আত্বা (রহঃ) বলেন, যার পেছনের রাস্তা দিয়ে পোকা বের হয় অথবা যার পুরুষাঙ্গ দিয়ে উকুনের ন্যায় কিছু বের হয়, তার পুনরায় উযূ করিতে হইবে।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) বলেন, কেউ সালাত অস্থায় হেসে ফেললে পুনরায় শুধুমাত্র সালাতই আদায় করিবে, পুনঃ উযূ করিবে না। হাসান (রাঃআঃ) বলেন, কেউ যদি চুল অথবা নখ কাটে অথবা তার মোজা খুলে ফেলে তবে তার পুনরায় উযূ করিতে হইবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) বলেন, হাদাস ব্যতীত অন্য কিছুতে উযূর প্রয়োজন নেই। জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতুর রিকা-এর যুদ্ধে ছিলেন। সেখানে জনৈক ব্যক্তি তীরবিদ্ধ হলেন এবং ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল, কিন্তু তিনি (সে অবস্থায়ই) রুকূ করিলেন, সাজদাহ করিলেন এবং সালাত আদায় করিতে থাকলেন। হাসান (রহঃ) বলেন, মুসলিমগণ সব সময়ই তাহাদের যখম অবস্থায় সালাত আদায় করিতেন এবং তাঊস (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ), আত্বা (রহঃ) ও হিজাযবাসীগণ বলেন, রক্তক্ষরণে উযূ করিতে হয় না। ইবনু উমার (রাঃআঃ) একদা একটি ছোট ফোঁড়া টিপ দিলেন, তা থেকে রক্ত বের হল, কিন্তু তিনি উযূ করিলেন না। ইবনু আবূ আওফা (রাঃআঃ) রক্ত মিশ্রিত থুথু ফেললেন কিন্তু তিনি সালাত আদায় করিতে থাকলেন। ইবনু উমার (রাঃআঃ) ও হাসান (রহঃ) বলেন, কেউ শিঙ্গা লাগালে কেবল তার শিঙ্গা লাগানো স্থানই ধুয়ে ফেলা দরকার।
১৭৬. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা যে সময়টা মসজিদে সালাতের অপেক্ষায় থাকে, তার সে পুরো সময়টাই সালাতের মধ্যে গণ্য হয় যতক্ষণ না সে হাদাস করে। জনৈক অনারব বলিল, হে আবূ হুরাইরাহ! হাদাস কী? তিনি বলিলেন, শব্দ করে বায়ু বের হওয়া। (৪৪৫, ৪৭৭, ৬৪৭, ৬৪৮, ৬৫৯, ২১১৯, ৩২২৯, ৪৭১৭ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৭১, ইঃফাঃ ১৭৬)
১৭৭. আববাস ইবনু তামীম (রহঃ), তাহাঁর চাচার সূত্রে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (কোন মুসল্লী) সালাত থেকে সরে থাকিবে না যতক্ষণ না সে শব্দ শুনতে পায় কিংবা গন্ধ পায়। (১৩৭) (আঃপ্রঃ ১৭২, ইঃফাঃ ১৭৭)
১৭৮. মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আলী (রাঃআঃ) বলেছেন, আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হতো। কিন্তু আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে লজ্জাবোধ করছিলাম। তাই আমি মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃআঃ)-কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলেনঃ এতে শুধু উযূ করিতে হয়। হাদিসটি শুবাহ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। (১৩২) (আঃপ্রঃ ১৭৩, ইঃফাঃ ১৭৮)
১৭৯. যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কেউ যদি স্ত্রী সহবাস করে, কিন্তু মনী (বীর্য) বের না হয় (তবে তার হুকুম কী)? উসমান (রাঃআঃ) বললেনঃ সে সালাতের ন্যায় উযূ করে নেবে এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। উসমান (রাঃআঃ) বলেন, আমি এ কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনিয়াছি। (যায়দ বলেন) তারপর আমি এ সম্পর্কে আলী (রাঃআঃ), যুবায়র (রাঃআঃ), তালহা (রাঃআঃ) ও উবাই ইবনু কাব (রাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছি। তাঁরা আমাকে এ নির্দেশই দিয়েছেন।(১) (২৯২; মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৭, আহমাদ ৪৫৮) (আঃপ্রঃ ১৭৪, ইঃফাঃ ১৭৯)
* হাদিসগুলোর হুকুম মানসুখ হয়ে গেছে। ইসলামিক প্রাথমিক যুগে তা বৈধ ছিল। পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ সামান্যও যদি স্ত্রীর যোনীতে প্রবেশ করে তাহলে বীর্যপাত হোক না হোক গোসল ফরয হয়ে যায়।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৪. সামনের এবং পেছনের রাস্তা দিয়ে কিছু নির্গত হওয়া ব্যতীত অন্য কারণে যিনি উযূর প্রয়োজন মনে করেন না।
১৮০. আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীর নিকট লোক পাঠালেন। তিনি আসলেন। তখন তাহাঁর মাথা থেকে পানির ফোঁটা ঝরছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়া করিতে বাধ্য করেছি। তিনি বলিলেন, জী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন তাড়াহুড়ার কারণে মনী বের না হইবে (অথবা বলিলেন), মনীর অভাবজনিত কারণে তা বের না হইবে তখন উযূ করে নিবে। ওয়াহ্ব (রহঃ) শুবাহ (রহঃ) সুত্রে এ রকমই বর্ণনা করেন। তিনি (শুবাহ (রহঃ)) বলেন, আবূ আবদুল্লাহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ গুনদার (রহঃ) ও ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) শুবাহ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনায় উযূর কথা উল্লেখ করেননি।* (মুসলিম ৩/২১, হাঃ ৩৪৫, আহমাদ ১১১৬২, ১১২০৭) (আঃপ্রঃ ১৭৫, ইঃফাঃ ১৮০)
হাদিস দেখানো হচ্ছে (161) থেকে (180) পর্যন্ত এবং সর্বমোট (7563) টি হাদিস পাওয়া গেছে।
অধ্যায়ঃ ৪/৩৫. নিজের সাথীকে উযূ করিয়ে দেয়া।
১৮১. উসামা ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আরাফাহ হতে ফিরছিলেন, তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে গিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলেন। উসামা (রাঃআঃ) বলেন, পরে আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম আর তিনি উযূ করছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি সালাত আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ সালাতের স্থান তোমার সম্মুখে (অর্থাৎ মুযদালিফায়)। (১৩৯) (আঃপ্রঃ ১৭৬, ইঃফাঃ ১৮১)
১৮২. মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলেন। এক সময় তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেন। (প্রয়োজন সেরে আসার পর) মুগীরাহ তাঁকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং তিনি উযূ করছিলেন। তিনি তাহাঁর মুখমন্ডল এবং দুহাত ধুলেন এবং তাহাঁর মাথা মাসেহ করিলেন ও উভয় মোজার উপর মাসেহ করিলেন। (২০৩, ২০৬, ৩৬৩, ৩৮৮, ২৯১৮, ৪৪২১, ৫৭৯৮, ৫৭৯৯; মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭৪, আহমাদ ১৮১৮৪) (আঃপ্রঃ ১৭৭, ইঃফাঃ ১৮২)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৬. বিনা উযূতে কুরআন প্রভৃতি পাঠ।
ইবরাহীম (রহঃ) বর্ণনা করেনঃ বিনা উযূতে গোসলখানায় (কুরআন) পাঠ এবং পত্র লেখায় কোন দোষ নেই। হাম্মাদ (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, গোসলখানার লোকদের পরনে লুঙ্গি থাকলে সালাম দিও নইলে সালাম দিও না।
১৮৩. আবদুল্লাহ্ ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃআঃ)-এর ঘরে রাত কাটান। তিনি ছিলেন ইবনু আববাস (রাঃআঃ)-এর খালা। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি বিছানার প্রশস্ত দিকে শুলাম এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও তাহাঁর স্ত্রী বিছানার লম্বা দিকে শুলেন; আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনিভাবে রাত যখন অর্ধেক হয়ে গেল তার কিছু পূর্বে কিংবা কিছু পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগলেন। তিনি বসে হাত দিয়ে তাহাঁর মুখমন্ডল থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন। অতঃপর সূরাহ্ আলু-ইমরানের শেষ দশটি আয়াত তিলাওয়াত করিলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে একটি ঝুলন্ত মশক হতে সুন্দরভাবে উযূ করিলেন। অতঃপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেন, আমিও উঠে তিনি যেরূপ করিয়াছেন তদ্রুপ করলাম। তারপর গিয়ে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তিনি তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে একটু নাড়া দিয়ে ডান পাশে এনে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর দুরাকআত, তারপর বিতর আদায় করিলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তাহাঁর নিকট মুয়ায্যিন এলে তিনি দাঁড়িয়ে হাল্কাভাবে দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। তারপর বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করিলেন। (১১৭; মুসলিম ৬/২৬, হাঃ ৭৬৩) (আঃপ্রঃ ১৭৮, ইঃফাঃ ১৮৩)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৭. অজ্ঞান না হলে উযূ না করা।
১৮৪. আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন সূর্যে গ্রহণ লেগেছিল। দেখলাম সব মানুষ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছে এবং আয়িশাহ (রাঃআঃ)-ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছেন। আমি বললাম, লোকদের কী হয়েছে? তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলিলেন সুবহানাল্লাহ্! আমি বললাম, এটা কি কোন আলামত? তিনি ইঙ্গিত করে বললেনঃ হাঁ। অতঃপর আমিও সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলো এবং আমি আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুসল্লীদের দিকে) ফিরে আল্লাহর হাম্দ ও সানা বর্ণনা করে বললেনঃ যেসব জিনিস আমি ইতোপূর্বে দেখিনি সেসব আমার এ স্থানে আমি দেখিতে পেয়েছি, এমনকি জান্নাত এবং জাহান্নামও। আর আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা করা হইবে দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় অথবা তার কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেনঃ আসমা (রাঃআঃ) কোনটি বলেছিলেন, আমি জানি না। তোমাদের প্রত্যেকের নিকট (মালাইকাহ) উপস্থিত হইবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করা হইবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান?-তারপর মুমিন, বা মুকিন ব্যক্তি বলবে- আসমা মুমিন বলেছিলেন না মুকিন তা আমি জানি না- ইনি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের নিকট মুজিযা ও হিদায়াত নিয়ে আগমন করেছিলেন। আমরা তাহাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছি, তাহাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাহাঁর ইত্তিবা করেছি। তারপর তাকে বলা হইবে, নিশ্চিন্তে ঘুমাও। আমরা জানলাম যে, তুমি মুমিন ছিলে। আর মুনাফিক বা মুরতাব বলবে- আমি জানি না আসমা এর কোনটি বলেছিলেন- লোকজনকে এর সম্পর্কে কিছু একটা বলিতে শুনিয়াছি আর আমিও তা-ই বলেছি। (৮৬) (আঃপ্রঃ ১৭৯, ইঃফাঃ ১৮৪)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৮. পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।
আল্লাহ তাআলার এ বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে আর তোমাদের মাথা মাসেহ কর। (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৬)
وَقَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَرْأَةُ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ تَمْسَحُ عَلَى رَأْسِهَا وَسُئِلَ مَالِكٌ أَيُجْزِئُ أَنْ يَمْسَحَ بَعْضَ الرَّأْسِ فَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ.
ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, নারী পুরুষের মধ্যে মাথা মাসেহ করার ব্যাপারে ভেদাভেদ নেই। ইমাম মালিক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মাথার কিছু অংশ মাসেহ করা কি যথেষ্ট হইবে? তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ)-এর হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করিলেন।
১৮৫. ইয়াহ্ইয়া আল-মাযিনী (রহঃ) হইতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ)-কে (তিনি আমর ইবনু ইয়াহইয়ার দাদা) জিজ্ঞেস করলঃ আপনি কি আমাদেরকে দেখাতে পারেন, কীভাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ করিতেন? আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ। অতঃপর তিনি পানি আনালেন। হাতের উপর সে পানি ঢেলে দুবার তাহাঁর হাত ধুলেন। তারপর কুলি করিলেন এবং তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর চেহারা তিনবার ধুলেন। তারপর দুহাত কনুই পর্যন্ত দুবার করে ধুলেন। তারপর দুহাত দিয়ে মাথা মাসেহ করিলেন। অর্থাৎ হাতদুটি সামনে এবং পেছনে নিলেন। মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে শুরু করে উভয় হাত পেছনের চুলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিলেন। তারপর আবার যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, সেখানেই ফিরিয়ে আনলেন। তারপর দুপা ধুলেন। (১৮৬, ১৯১, ১৯২, ১৯৭, ১৯৯; মুসলিম ২/৭, হাঃ ২৩৫, আহমাদ ১৬৪৪৫) (আঃপ্রঃ ১৮০, ইঃফাঃ ১৮৫)
অধ্যায়ঃ ৪/৩৯. উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া।
১৮৬. আমর ইবনু আবূ হাসান (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এক পাত্র পানি আনলেন এবং তাঁদের (দেখাবার) জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মত উযূ করিলেন। তিনি পাত্র থেকে দুহাতে পানি ঢাললেন। তা দিয়ে হাত দুটি তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন খাবল পানি নিয়ে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার তাহাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দুই হাত কনুই পর্যন্ত দুবার ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে একবার মাত্র মাথা মাসেহ করিলেন। তারপর দু পা টাখনু পর্যন্ত ধুলেন। (১৮৫) (আঃপ্রঃ ১৮১, ইঃফাঃ ১৮৬)
অধ্যায়ঃ ৪/৪০. উযূর অবশিষ্ট পানি ব্যবহার।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃআঃ) তাহাঁর পরিবারকে মিসওয়াক ধোয়া অবশিষ্ট পানি দিয়ে উযূ করিতে নির্দেশ দেন।
১৮৭. আবূ জুহাইফাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা দুপুর বেলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন। তাঁকে উযূর পানি এনে দেয়া হলে তিনি উযূ করিলেন। লোকে তার উযুর ব্যবহৃত পানি নিয়ে গায়ে মাখতে লাগল। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের দুরাকআত এবং আসরের দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। আর তাহাঁর সামনে ছিল একটি লাঠি। (৩৭৬, ৪৯৫, ৪৯৯, ৫০১, ৬৩৩, ৬৩৪, ৩৫৫৩, ৩৫৬৬, ৫৭৮৬, ৫৮৫৯) (আঃপ্রঃ ১৮২, ইঃফাঃ ১৮৭)
১৮৮. আবূ মূসা (রাঃআঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনালেন যাতে পানি ছিল। অতঃপর তিনি তার মধ্যে উভয় হাত ও মুখমন্ডল ধুলেন এবং তার দ্বারা কুলি করিলেন। অতঃপর তাহাদের দুজন (আবূ মূসা (রাঃআঃ) ও বিলাল (রাঃআঃ))-কে বললেনঃ তোমরা এ থেকে পান কর এবং তোমাদের মুখমন্ডলে ও বুকে ঢাল। (১৯৬, ৪৩২৮; মুসলিম ৪/৪৭, হাঃ ৫০৩, আহমাদ ১৮৭৬৯, ১৮৭৮২) (আঃপ্রঃ ১৮২ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১৮৭ শেষাংশ)
১৮৯. মাহমূদ ইবনুর-রবী হইতে বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি সে ব্যক্তি, যার মুখমন্ডলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের কুয়া হতে পানি নিয়ে কুলির পানি দিয়েছিলেন। তিনি তখন বালক ছিলেন। উরওয়া (রহঃ) মিসওয়ার (রহঃ) প্রমুখের নিকট হতে হাদিস বর্ণনা করেন। এ উভয় বর্ণনা একটি অন্যটির সত্যায়ন স্বরূপ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উযূ করিতেন তখন তাহাঁর ব্যবহৃত পানির উপর তাঁরা (সহাবায়ে কিরাম) যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। (১৯৬, ৪৩২৮ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৮৩ কিন্তু প্রথমাংশ নেই, ইঃফাঃ ১৮৮)
১৯০. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃআঃ) বলেনঃ আমার খালা আমাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগিনা অসুস্থ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং বরকতের দুআ করিলেন। অতঃপর উযূ করিলেন। আমি তাহাঁর উযুর (অবশিষ্ট) পানি পান করলাম। তারপর তাহাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। তখন আমি তাহাঁর উভয় কাঁধের মধ্যস্থলে নুবূওয়াতের মোহর দেখিতে পেলাম। তা ছিল পর্দার ঘুণ্টির মত। (৩৫৪০, ৩৫৪১, ৫৬৭০, ৬৩৫২; মুসলিম ৪৩/৩০, হাঃ ২৩৪৫) (আঃপ্রঃ ১৮৪, ইঃফাঃ ১৮৯)
অধ্যায়ঃ ৪/৪১. এক আজলা পানি দিয়ে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া।
১৯১. আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। একদা তিনি পাত্র হতে দুহাতে পানি ঢেলে দুহাত ধৌত করিলেন। অতঃপর এক খাবল পানি দিয়ে (মুখ) ধুলেন বা কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করিলেন। তারপর দু হাত কনুই পর্যন্ত দু-দুবার ধুলেন এবং মাথার সামনের অংশ এবং পেছনের অংশ মাসেহ করিলেন। আর টাখনু পর্যন্ত দু পা ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ এরূপ ছিল। (১৮৫) (আঃপ্রঃ ১৮৫, ইঃফাঃ ১৯০)
অধ্যায়ঃ ৪/৪২. একবার মাথা মাসেহ করা।
১৯২. ইয়াহইয়া (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা আমর ইবনু আবূ হাসান (রাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করিলেন। অতঃপর তিনি পানির একটি পাত্র এনে তাঁদের উযূ করে দেখালেন। তিনি পাত্রটি কাত করে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তিনবার তা ধুয়ে ফেলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকালেন এবং তিন খাবল পানি দিয়ে তিনবার করে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিয়ে তা ঝাড়লেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দু-দুবার ধুলেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তাহাঁর মাথা হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে মাসেহ করিলেন। তারপর আবার পাত্রের মধ্যে তাহাঁর হাত ঢুকিয়ে দুই পা ধুলেন।* (আঃপ্রঃ ১৮৬, ইঃফাঃ ১৯১)
উহায়ব (রহঃ) সূত্রে মূসা (রহঃ) বর্ণনা করেন, মাথা একবার মাসেহ করেন। (১৮৫) (ইঃফাঃ ১৯২)
* ঘাড় মাসেহ করা বিদআত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ঘাড় মাস্হ প্রমাণিত নয়। সহীহ্ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নাবাবী (রহঃ) একে বিদআত বলেছেন।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৩. স্বীয় স্ত্রীর সঙ্গে উযূ করা এবং স্ত্রীর উযূর অবশিষ্ট পানি (ব্যবহার করা)।
উমার (রাঃআঃ) গরম পানি দিয়ে এবং নাসারা মহিলার ঘরের পানি দিয়ে উযূ করেন।
১৯৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল -এর সময় পুরুষ এবং মহিলা একত্রে (এক পাত্র হতে) উযূ করিতেন। (আঃপ্রঃ ১৮৭, ইঃফাঃ ১৯৩)
অধ্যায়ঃ ৪/৪৪. অজ্ঞান লোকের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূর পানি ছিঁটিয়ে দেয়া।
১৯৪. জাবির (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ-খবর নিতে এলেন। আমি তখন এতই অসুস্থ ছিলাম যে আমার জ্ঞান ছিল না। তারপর তিনি উযূ করিলেন এবং তাহাঁর উযূর পানি আমার উপর ছিঁটিয়ে দিলেন। তখন আমার জ্ঞান ফিরে এল। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! (আমার) মীরাস কে পাবে? আমার একমাত্র ওয়ারিস হল কালালাহ*। তখন ফারায়েযের আয়াত অবতীর্ণ হল। (৪৫৭৭, ৫৬৫১, ৫৬৬৪, ৫৬৭৬, ৫৭২৩, ৬৭২৩, ৬৭৪৩, ৭৩০৯ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৮৮, ইঃফাঃ ১৯৪)
*কালালাহঃ যার ছেলেমেয়ে ও পিতা নেই তার উত্তরাধিকারীকে কালালাহ বলা হয়।
অধ্যায়ঃ ৪/৪৫. গামলা, কাঠ ও পাথরের পাত্রে উযূ-গোসল করা।
১৯৫. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ি নিকটে ছিল তাঁরা (উযূ করার জন্য) বাড়ি চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যবস্থা ছিল না)। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাহাঁর উভয় হাত মেলে দেয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ করিলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি বললেনঃ আশিজন বা তারও কিছু অধিক। (১৬৯) (আঃপ্রঃ ১৮৯, ইঃফাঃ ১৯৫)
১৯৬. আবূ মূসা (রাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানি ভর্তি পাত্র আনালেন। তাতে তাহাঁর উভয় হাত ও মুখমন্ডল ধুলেন এবং কুলি করিলেন। (আঃপ্রঃ ১৯০)
১৯৭. আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ) বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ি এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলে তা দিয়ে তিনি উযূ করিলেন। তাহাঁর মুখমন্ডল তিনবার ও উভয় হাত দু-দুবার করে ধুলেন এবং তাহাঁর হাত সামনে ও পেছনে এনে মাথা মাসেহ করিলেন আর উভয় পা ধুলেন। (১৮৫) (আঃপ্রঃ ১৯১, ইঃফাঃ ১৯৬)
১৯৮. আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অসুস্থতা বেড়ে গেলে তিনি আমার ঘরে শুশ্রূষার জন্য তাহাঁর স্ত্রীদের নিকট অনুমতি চাইলে তাঁরা অনুমতি দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার ঘরে আসার জন্য) দু ব্যক্তির উপর ভর করে বের হলেন। আর তাহাঁর পা দুখানি তখন মাটিতে চিহ্ন রেখে যাচ্ছিল। তিনি আববাস (রাঃআঃ) ও অন্য এক ব্যক্তির মাঝখানে ছিলেন। উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ্ ইবনু আববাস (রাঃআঃ)-কে এ কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ সে অন্য ব্যক্তিটি কে তা কি তুমি জান? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তিনি হলেন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃআঃ)। আয়িশাহ (রাঃআঃ) বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর ঘরে আসলে অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পেল। তিনি বললেনঃ তোমরা আমার উপর মুখের বাঁধন খোলা হয়নি এমন সাতটি মশকের পানি ঢেলে দাও, তাহলে হয়ত আমি মানুষকে কিছু উপদেশ দিতে পারব। তাঁকে তাহাঁর স্ত্রী হাফসাহ (রাঃআঃ)-এর একটি বড় পাত্রে বসিয়ে দেয়া হল। অতঃপর আমরা তাহাঁর উপর সেই সাত মশক পানি ঢালতে লাগলাম। এভাবে ঢালার পর এক সময় তিনি আমাদের প্রতি ইঙ্গিত করিলেন, (এখন থাম) তোমরা তোমাদের কাজ করেছ। অতঃপর তিনি বের হয়ে জনসম্মুক্ষে গেলেন। (৬৬৪, ৬৬৫, ৬৭৯, ৬৮৩, ৬৮৭, ৭১২, ৭১৩, ৭১৬, ২৫৮৮, ৩০৯৯, ৩৩৮৪, ৪৪৪২, ৪৪৪৫, ৫৭১৪, ৭৩০৩ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১৯২, ইঃফাঃ ১৯৮)
অধ্যায়ঃ ৪/৪৬. গামলা হতে উযূ করা।
১৯৯. ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেনঃ আমার চাচা উযূর পানি অধিক খরচ করিতেন। একদা তিনি আব্দুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃআঃ)-কে বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে উযূ করিতেন আপনি কি তা দেখেছেন? তিনি এক গামলা পানি আনালেন। সেটি উভয় হাতে কাত করে (তা থেকে পানি ঢেলে) হাত দুটি তিনবার ধুলেন, অতঃপর তার হাত গামলায় ঢুকালেন। অতঃপর এক খাবল (করে) পানি দিয়ে তিনবার কুলি করিলেন এবং নাক ঝাড়লেন। তারপর পানিতে তাহাঁর হাত ঢুকালেন। উভয় হাতে এক খাবল (করে) পানি নিয়ে মুখমন্ডল তিনবার ধুলেন। অতঃপর উভয় হাত কনুই পর্যন্ত দুবার করে ধুলেন। অতঃপর উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার সামনে এবং পেছনে মাসেহ করিলেন এবং দু পা ধুলেন। তারপর বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবেই উযূ করিতে দেখেছি। (১৮৫) (আঃপ্রঃ ১৯৩, ইঃফাঃ ১৯৯)
২০০. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একপাত্র পানি চাইলে একটি বড় পাত্র তাহাঁর নিকট আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে তাহাঁর আঙ্গুল রাখলেন। আনাস (রাঃআঃ) বলেনঃ আমি পানির দিকে তাকাতে লাগলাম। তাহাঁর আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে পানি উপচে পড়তে লাগল। আনাস (রাঃআঃ) বলেনঃ যারা উযূ করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাহাদের সংখ্যা ছিল সত্তর হতে আশি জনের মত। (১৬৯) (আঃপ্রঃ ১৯৪, ইঃফাঃ ২০০)
Leave a Reply