যায়দ ইবনু হারিসাহ (রা) এর অভিযান ও উমরাহ কাযার বর্ণনা
যায়দ ইবনু হারিসাহ (রা) এর অভিযান ও উমরাহ কাযার বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ (৪৩-৪৪) =২টি
৬৪/৪৩. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.)-এর অভিযান
৬৪/৪৪. অধ্যায়ঃ উমরাহ কাযার বর্ণনা
৬৪/৪৩. অধ্যায়ঃ যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.)-এর অভিযান
৪২৫০
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উসামাহ (ইবনু যায়দ) (রাদি.)-কে একটি বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। লোকজন তাহাঁর অধিনায়ক নিযুক্তির সমালোচনা করলে তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, আজ তোমরা তার অধিনায়ক নিযুক্তির সমালোচনা করছ, এর পূর্বেও তোমরা তার পিতার অধিনায়ক নিযুক্তিতে সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম! সে (উসামার পিতা) ছিল অধিনায়ক হওয়ার জন্য যথোপযুক্ত এবং আমার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। তার মৃত্যুর পর এ হচ্ছে আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। [৩৭৩০] (আ.প্র. ৩৯১৯, ই.ফা. ৩৯২৩)
৬৪/৪৪. অধ্যায়ঃ উমরাহ কাযার বর্ণনা
আনাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে তা বর্ণনা করিয়াছেন।
৪২৫১
বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যিলকাদা মাসে উমরাহ আদায়ের উদ্দ্যেশে রওয়ানা করেন। মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানাল। অবশেষে তাদের সঙ্গে চুক্তি হল যে, (আগামী বছর উমরাহ পালন হেতু) তিনি তিনদিন মক্কায় অবস্থান করবেন। মুসলিমগণ সন্ধিপত্র লেখার সময় এভাবে লিখেছিলেন, আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ আমাদের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন করিয়াছেন। ফলে তারা (মক্কার কুরাইশরা) বলিল, আমরা তো এ কথা স্বীকার করিনি। যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রাসুল বলেই জানতাম তা হলে মাক্কাহ প্রবেশে মোটেই বাধা দিতাম না। বরং আপনি তো মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ। তখন তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল এবং মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ। তারপর তিনি আলী (রাদি.)-কে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ শব্দটি মুছে ফেল। আলী (রাদি.) উত্তর করিলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো এ কথা মুছতে পারব না। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন চুক্তিপত্রটি হাতে নিলেন। তিনি লিখতে জানতেন না, তবুও তিনি লিখে দিলেন [৫৯] যে, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ এ চুক্তিপত্র সম্পাদন করিলেন যে, তিনি কোষবদ্ধ তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কাবাসীদের কেউ তাহাঁর সঙ্গে যেতে চাইলেও তিনি তাকে বের করে নিয়ে যাবেন না। তাহাঁর সাথীদের কেউ মক্কায় থেকে যেতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দিবেন না। (পরবর্তী বছর) যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মক্কায় প্রবেশ করিলেন এবং নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হল তখন মুশরিকরা আলীর কাছে এসে বলিল, আপনার সাথী [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)]-কে বলুন যে, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। তাই তিনি যেন আমাদের নিকট থেকে চলে যান। নাবী (সাঃআঃ) সে মতে বেরিয়ে আসলেন। এ সময় হামযাহ (রাদি.)-এর কন্যা চাচা চাচা বলে ডাকতে ডাকতে তাহাঁর পেছনে ছুটল। আলী (রাদি.) তার হাত ধরে তুলে নিয়ে ফাতেমাহ (রাদি.)-কে দিয়ে বলিলেন, তোমার চাচার কন্যাকে নাও। ফাতেমাহ (রাদি.) বাচ্চাটিকে উঠিয়ে নিলেন। (মদিনায় পৌঁছলে) বাচ্চাটি নিয়ে আলী, যায়দ (ইবনু হারিসাহ) ও জাফার [ইবনু আবু ত্বলিব (রাদি.)]-এর মধ্যে ঝগড়া বেধে গেল। আলী (রাদি.) বলিলেন, আমি তাকে তুলে নিয়েছি আর সে আমার চাচার মেয়ে! জাফর বলিলেন, সে আমার চাচার মেয়ে আর তার খালা হল আমার স্ত্রী। যায়দ [ইবনু হারিসা (রাদি.)] বলিলেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। তখন নাবী (সাঃআঃ) মেয়েটিকে তার খালার জন্য ফায়সালা দিয়ে বলিলেন খালা তো মায়ের মর্যাদার। এরপর তিনি আলীকে বলিলেন, তুমি আমার এবং আমি তোমার। জাফর (রাদি.)-কে বলিলেন, তুমি আকৃতি-প্রকৃতিতে আমার মতো। আর যায়িদ (রাদি.)-কে বলিলেন, তুমি আমাদের ভাই ও আযাদকৃত গোলাম। আলী (রাদি.) [নাবী (সাঃআঃ)-কে] বলিলেন, আপনি হামযাহর মেয়েটিকে বিয়ে করছেন না কেন? তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, সে আমার দুধ ভাই-এর মেয়ে [৬০]। [১৭৮১] (আ.প্র. ৩৯২০, ই.ফা. ৩৯২৪)
৫৯] হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রে যখন লেখা হলো “আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং কুরায়শদের মধ্যে এই সন্ধি” তক্ষনি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন সুহায়ল বলে উঠলঃ থামো, থামো, মুহাম্মদ যে আল্লাহর রাসুল, এ কথা যদি আমরা মেনেই নিবো তাহলে আর যুদ্ধ বিগ্রহ কিসের জন্য। ও কথা লিখতে পারবে না। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ কথাটি কেটে দিয়ে শুধু লিখোঃ “আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ” মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন হেসে বলিলেন, “বেশ তাই হইবে। আমি যে আবদুল্লাহর পুত্র এ কথাও তো মিথ্যা নয়। আলী (রাদি.) রাসুলুল্লাহ শব্দটি কাটতে অস্বীকার করলে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই তা মিটিয়ে দিলেন।
এই সুহায়লই যিনি এই পবিত্র নামের সাথে রাসুলুল্লাহ লিখার বিরোধিতা করেছিলেন, কয়েক বছর পরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুসলিম হয়ে যান। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকালের পর মাক্কাহ মুআযযামাহয় তিনি ইসলামের সত্যতার উপর এমন এক হৃদয়গ্রাহী ভাষণ প্রদান করেন যা হাজার হাজার মুসলিমের জন্য ঈমানের দৃঢ়তা ও নবায়নের কারণ হয়েছিল।
[৬০] রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও হামযাহ (রাদি.) একই সাথে এক মহিলার দুধ পান করেছিলেন। সেই বিচারে তারা পরস্পরের দুধ-ভাই। ইসলামে যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম তার মধ্যে শর্ত সাপেক্ষে বুকের দুধ পানের কারণও অন্তর্ভুক্ত।
৪২৫২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমরাহ পালনের উদ্দ্যেশে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রওয়ানা করলে কুরাইশী কাফিররা তাহাঁর এবং বাইতুল্লাহর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। কাজেই তিনি হুদাইবিয়াহ নামক স্থানেই কুরবানীর জন্তু যবহ করিলেন এবং মাথা মুণ্ডন করিলেন আর তিনি তাদের সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি সম্পাদন করিলেন যে, আগামী বছর তিনি উমরাহ পালনের জন্য আসবেন কিন্তু তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র সঙ্গে আনবেন না এবং মক্কাবাসীরা যে কদিন ইচ্ছা করিবে তার অধিক তিনি সেখানে অবস্থান করবেন না। সে মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) পরবর্তী বছর উমরাহ পালন করিলেন এবং সম্পাদিত চুক্তিনামা অনুসারে মক্কায় প্রবেশ করিলেন। তারপর তিনদিন অবস্থান করলে মক্কাবাসীরা তাঁকে চলে যেতে বলিল। তাই তিনি চলে গেলেন। [২৭০১] (আ.প্র. ৩৯২১, ই.ফা. ৩৯২৫)
৪২৫৩
মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) মাসজিদে নাববীতে প্রবেশ করেই দেখলাম আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) আয়েশাহ (রাদি.)-এর হুজরার পাশেই বসে আছেন। উরওয়াহ (রাদি.) তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, নাবী (সাঃআঃ) কটি উমরাহ আদায় করেছিলেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, চারটি। এ সময় আমরা (ঘরের ভিতরে) আয়েশাহ (রাদি.)-এর মিসওয়াক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। [১৭৭৫] (আ.প্র. ৩৯২২, ই.ফা. ৩৯২৬)
৪২৫৪
উরওয়াহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
হে উম্মুল মুমিনীন! আবু আবদুর রহমান [ইবনু উমার (রাদি.)] কী বলেছেন, তা আপনি শুনেছেন কি যে, নাবী (সাঃআঃ) চারটি উমরাহ করিয়াছেন? আয়েশাহ (রাদি.) উত্তর দিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) এমন কোন উমরাহ করেননি যাতে তিনি (ইবনু উমার) তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন না। তবে তিনি রাজাব মাসে কখনো উমরাহ আদায় করেননি। [১৭৭৬] (আ.প্র. ৩৯২২, ই.ফা. ৩৯২৬)
৪২৫৫
ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন উমরাহতুল কাযা আদায় করছিলেন তখন আমরা তাঁকে মুশরিক ও তাদের যুবকদের থেকে আড়াল করে রেখেছিলাম যাতে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে কোন প্রকার কষ্ট দিতে না পারে। [১৬০০] (আ.প্র. ৩৯২৩, ই.ফা. ৩৯২৭)
৪২৫৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং তাহাঁর সাহাবীগণ (উমরাহতুল কাযা আদায়ের জন্য) আগমন করলে মুশরিকরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করিতে লাগল যে, তোমাদের সামনে একদল লোক আসছে, ইয়াসরিবের জ্বর [৬১] যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে। এজন্য নাবী (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে প্রথম চক্করে হেলে দুলে চলার জন্য এবং দু রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিক গতিতে চলতে নির্দেশ দেন। অবশ্য তিনি তাঁদেরকে সবকটি চক্করেই হেলে দুলে চলার আদেশ করিতেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি তাহাঁর অনুভূতিই কেবল তাঁকে এ হুকুম দেয়া থেকে বিরত রেখেছিল। [১৬০২]
অন্য এক সানাদে ইবনু সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আইয়ুব ও সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, (সন্ধি সম্পাদনের মাধ্যমে) নিরাপত্তা প্রাপ্ত বছরে যখন নাবী (সাঃআঃ) (মক্কায়) আগমন করিলেন তখন বলিলেন, তোমরা মুশরিকদেরকে তোমাদের শক্তিমত্তা দেখানোর জন্য হেলে দুলে তাওয়াফ করো। এ সময় মুশরিকরা কুআয়কিআন পর্বতের দিক থেকে মুসলিমদেরকে দেখছিল। (আ.প্র. ৩৯২৪, ই.ফা. ৩৯২৮)
[৬১] মাদীনাহকেই ইয়াসরিব বলা হতো। মুশরিকরা মনে করেছিল মাদীনার জ্বরে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই মুসলিমদের দুর্বল বা হীনবল হয়ে না পড়াটা প্রকাশের জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে বীরত্ব সহকারে তাওয়াফ করার নির্দেশ দেন। একেই রামল বলা হয়।
৪২৫৭
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বাইতুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়া-এর মধ্যখানে এ জন্যই সায়ী করেছিলেন, যেন মুশরিকদেরকে তাহাঁর শৌর্য-বীর্য দেখাতে পারেন। [১৬৪৯] (আ.প্র. ৩৯২৫, ই.ফা. ৩৯২৯)
৪২৫৮
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইহরাম অবস্থায় মাইমূনাহ (রাদি.)-কে বিয়ে করিয়াছেন এবং (ইহরাম খোলার পরে) হালাল অবস্থায় তিনি তাহাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করিয়াছেন। মাইমূনাহ (রাদি.) (মক্কার নিকটেই) সারিফ নামক স্থানে ইন্তিকাল করিয়াছেন। [১৮৩৭] (আ.প্র. ৩৯২৬, ই.ফা. ৩৯৩০)
৪২৫৯
ইবনু আববাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
[ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] অপর একটি সানাদে ইবনু ইসহাক-ইবনু আবু নাজীহ ও আবান ইবনু সালিহ-আত্বা ও মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ইবনু আববাস (রাদি.) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী সাঃআঃ উমরাহ্তুল কাযা আদায়ের সফরে মায়মূনাহ (রাদি.)-কে বিয়ে করেছিলেন। [১৮৩৭] (আঃপ্রঃ ৩৯২৬, ইঃফাঃ ৩৯৩০)
Leave a Reply