উমরাহ করার নিয়ম এবং তার ফযীলত বিষয়ক হাদীস

উমরাহ করার নিয়ম এবং তার ফযীলত বিষয়ক হাদীস

উমরাহ করার নিয়ম এবং তার ফযীলত বিষয়ক হাদীস >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৬, উমরাহ , অধ্যায়ঃ (১-২০)=২০টি

২৬/১. অধ্যায়ঃ উমরা (আদায়) ওয়াজিব হওয়া এবং তার ফযীলত।
২৬/২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি হজ্জ আদায়ের পূর্বে উমরা সম্পাদন করিল।
২৬/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কতবার উমরা করিয়াছেন?
২৬/৪. অধ্যায়ঃ রমযান মাসে উমরা আদায় করা।
২৬/৫. অধ্যায়ঃ মুহাসসাবের রাত্রিতে ও অন্য সময়ে উমরা আদায় করা।
২৬/৬. অধ্যায়ঃ তানঈম হইতে উমরা করা।
২৬/৭. অধ্যায়ঃ হজ্জের পর কুরবানী ব্যতীত উমরা আদায় করা।
২৬/৮. অধ্যায়ঃ কষ্ট অনুপাতে উমরার আজর (নেকী)।
২৬/৯. অধ্যায়ঃ উমরা আদায়কারী উমরার তাওয়াফ করেই রওয়ানা হলে, তা কি তার জন্য বিদায়ী তাওয়াফের বদলে যথেষ্ট হইবে?
২৬/১০. অধ্যায়ঃ হজ্জে যে সকল কাজ করিতে হয় উমরাতেও তাই করিবে।
২৬/১১. অধ্যায়ঃ উমরা আদায়কারী কখন হালাল হইবে (ইহরাম খুলবে)?
২৬/১২. অধ্যায়ঃ হজ্জ, উমরা ও যুদ্ধ হইতে ফিরার পরে কি বলবে?
২৬/১৩. অধ্যায়ঃ আগমনকারী হাজীদেরকে স্বাগত জানানো এবং এমতাবস্থায় এক সওয়ারীতে তিন জন আরোহণ করা।
২৬/১৪. অধ্যায়ঃসকাল বেলা বাড়িতে আগমন।
২৬/১৫. অধ্যায়ঃ বিকালে বা সন্ধ্যাকালে বাড়িতে প্রবেশ করা।
২৬/১৬. অধ্যায়ঃ শহরে পৌঁছে রাত্রিকালে পরিজনের নিকটে প্রবেশ করিবে না।
২৬/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মদীনায় (নিজস্ব শহর) পৌঁছে তার উটনী (সাওয়ারী) দ্রুত চালায়।
২৬/১৮. অধ্যায়ঃcমহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা গৃহসমূহে তার দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ কর। (আল-বাকারা ২ : ১৮৯)
২৬/১৯. অধ্যায়ঃসফর আযাবের একটি অংশ বিশেষ।
২৬/২০. অধ্যায়ঃ মুসাফিরের সফর যদি অসহনীয় হয়ে পড়ে সে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসবে।

২৬/১. অধ্যায়ঃ উমরা (আদায়) ওয়াজিব হওয়া এবং তার ফযীলত।

ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, প্রত্যেকের জন্য হজ্জ ও উমরা অবশ্য পালনীয়। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, কুরআনুল কারীমে হজ্জের সাথেই উমরার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর বাণীঃ “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ্জ ও উমরা পূর্ণভাবে আদায় কর”। (আল-বাকারা : ১৯৬)

১৭৭৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এক উমরার পর আর এক উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো হজ্জে মাবরূরের প্রতিদান।

২৬/২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি হজ্জ আদায়ের পূর্বে উমরা সম্পাদন করিল।

১৭৭৪. ইকরিমা ইবনু খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইবনু উমর (রাদি.) -কে হজ্জের আগে উমরা আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলিলেন, এতে কোন দোষ নেই। ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) হজ্জের আগে উমরা আদায় করিয়াছেন। ইবরাহীম ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, ইকরিমা ইবনু খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনূরূপ।

২৬/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কতবার উমরা করিয়াছেন?

১৭৭৫. মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মসজিদে প্রবেশ করে দেখিতে পেলাম, “আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) -এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতোমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সলাতুয্‌যোহা আদায় করিতে লাগল। আমরা তাঁকে এদের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, এটা বিদআত। এরপর উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাঁকে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) কতবার উমরা আদায় করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, চারবার। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আমরা তাহাঁর কথা রদ করা পছন্দ করলাম না।

১৭৭৬.Read previous Hadith. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

আমরা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) -এর হুজরার ভিতর হইতে তাহাঁর মিসওয়াক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন উরওয়া (রাদি.) বলিলেন, হে আম্মাজান, হে উম্মুল মুমিনীন! আবু আবদূর রহমান কী বলছেন, আপনি কি শুনেননি? আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তিনি কী বলছেন? উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, তিনি বলছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) চারবার উমরা আদায় করিয়াছেন। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, আবু আবদূর রহমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এমন কোন উমরা আদায় করেননি যে, তিনি তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেন নি।

১৭৭৭. উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি।

১৭৭৮.কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কতবার উমরা আদায় করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার উমরা যুল-কাদা মাসে যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করিতে বাধা দিয়েছিল। পরবর্তী বছরের যুল-কাদা মাসের উমরা, যখন মুশরিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, জিরানার উমরা, যেখানে নাবী (সাঃআঃ) গনীমতের মাল, সম্ভবতঃ হুনায়নের যুদ্ধে বন্টন করেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কতবার হজ্জ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, একবার।

১৭৭৯. কাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) একবার উমরা করিয়াছেন যখন তাঁকে মুশরিকরা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী বছর ছিল হুদাইবিয়ার (চুক্তি অনুযায়ী) উমরা, (তৃতীয়) উমরা (জিরানা) যুল-কাদা মাসে আর হজ্জের মাসে অপর একটি উমরা করিয়াছেন।

১৭৮০. হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) চারটি উমরা করিয়াছেন। তন্মধ্যে হজ্জের মাসে যে উমরা করিয়াছেন তা ছাড়া বাকী সব উমরাই যুল-কাদা মাসে করিয়াছেন। অর্থাৎ হুদাইবিয়ার উমরা, পরবর্তী বছরের উমরা, জিরানার উমরা, যেখানে তিনি হুনাইনের মালে গনীমত বণ্টন করেছিলেন এবং হজ্জের মাসে আদায়কৃত উমরা।

১৭৮১. আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাসরূক, আত্বা এবং মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -কে জিজ্ঞেস করলাম, তাঁরা বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুল-কাদা মাসে হজ্জের আগে উমরা করিয়াছেন। রাবী বলেন, আমি বারা ইবনু আযিব (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হজ্জ করার আগে দুবার যুল-কাদা মাসে উমরা করিয়াছেন।

২৬/৪. অধ্যায়ঃ রমযান মাসে উমরা আদায় করা।

১৭৮২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সঙ্গে হজ্জ করিতে তোমার বাধা কিসের? ইবনু আব্বাস (রাদি.) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলিল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে চলে গেছেন। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আচ্ছা, রমাযান এলে তখন উমরা করে নিও। কেননা, রমযানের একটি উমরা একটি হজ্জের সমতুল্য। অথবা এরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।

১৭৮৩.আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

২৬/৫. অধ্যায়ঃ মুহাসসাবের রাত্রিতে ও অন্য সময়ে উমরা আদায় করা।

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম যখন যুলহজ্জ আগত প্রায়। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে হজ্জের ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি উমরার ইহরাম বাঁধতাম। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন, আবার কেউ হজ্জের। যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের একজন। আরাফার দিন এল, তখন আমি ঋতুবতী ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট তা জানালাম। তিনি বললেনঃ উমরা ছেড়ে দাও এবং মাথার বেণী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। অতঃপর হজ্জের ইহরাম বাঁধ। যখন মুহাসসাবের রাত হল, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার সঙ্গে (আমার ভাই) আবদুর রহমানকে তানঈমে পাঠালেন এবং আমি ছেড়ে দেয়া উমরার স্থলে নতুনভাবে উমরার ইহরাম বাঁধলাম।

২৬/৬. অধ্যায়ঃ তানঈম হইতে উমরা করা।

১৭৮৪.আবদুর রহমান ইবনু আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে তাহাঁর সওয়ারীর পিঠে আয়েশা (রাদি.)-কে বসিয়ে তানঈম হইতে উমরা করানোর নির্দেশ দেন। রাবী সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একদা বলেন, এ হাদীস আমি আমরের কাছে বহুবার শুনিয়াছি।

১৭৮৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) ও তালহা (রাদি.) ব্যতীত কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিলনা। আর আলী (রাদি.) ইয়ামান হইতে এলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যে বিষয়ে ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও তার ইহরাম বাঁধলাম। নাবী (সাঃআঃ) এ ইহরামকে উমরায় পরিণত করিতে এবং তাওয়াফ করে এরপরে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার রয়েছে (তারা হালাল হইবে না)। তাঁরা বলিলেন, আমরা মিনার দিকে রওয়ানা হবো এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকটে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ যদি আমি এ ব্যাপার পূর্বে জানতাম, যা পরে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে আনতাম না। আর যদি কুরবানীর পশু আমার সাথে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। আর আয়েশা (রাদি.) -এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ব্যতীত হজ্জের সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করিলেন, তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনারা তো হজ্জ এবং উমরা ইভয়টি পালন করে ফিরছেন, আমি কি শুধু হজ্জ করেই ফিরব? তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবদুর রহমান ইবনু আবু বকর (রাদি.) -কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তানঈম যেতে। অতঃপর যুলহজ্জ মাসেই হজ্জ আদায়ের পর আয়েশা (রাদি.) উমরা আদায় করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) যখন জামরাতুল আকাবায় কঙ্কর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশুম (রাদি.) -এর নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ হজ্জের মাসে উমরা আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ না, এতো চিরদিনের (সকলের) জন্য।

২৬/৭. অধ্যায়ঃ হজ্জের পর কুরবানী ব্যতীত উমরা আদায় করা।

১৭৮৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন যুলহজ্জ মাস আগত প্রায়, তখন আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ যে ব্যক্তি উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই উমরার ইহরাম বাঁধতাম। তাই তাঁদের কেউ উমরার ইহরাম বাঁধলেন আর কেউ হজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন। এরপর মক্কা পৌঁছার আগেই আমার ঋতু দেখা দিল। আরাফার দিবস চলে এল, আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমার এ অসুবিধার কথা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকত বললাম। তিনি বললেনঃ উমরা ছেড়ে দাও। আর বেণী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। অতঃপর হজ্জের ইহরাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। মুহাস্‌সাবের রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার সাথে আবদুর রহমানকে তানঈম পাঠালেন। (রাবী বলেন) আবদুর রহমান (রাদি.) তাঁকে সাওয়ারীতে নিজের পিছনে বসিয়ে নিলেন। অতঃপর আয়েশা (রাদি.) আগের উমরার স্থলে নতুন উমরার ইহরাম বাঁধলেন। এমনিভাবেই আল্লাহ তাআলা তাহাঁর হজ্জ এবং উমরা উভয়টিই পুরা করালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর কোন ক্ষেত্রেই (দম হিসেবে) কুরবানী বা সদাকাহ দিতে কিংবা সিয়াম পালন করিতে হয়নি।

২৬/৮. অধ্যায়ঃ কষ্ট অনুপাতে উমরার আজর (নেকী)।

১৭৮৭. আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সাহাবীগণ ফিরছেন দুটি নুসূক (অর্থাৎ হজ্জ এবং উমরাহ) পালন করে আর আমি ফিরছি একটি নুসূক (শুধু হজ্জ) আদায় করে। তাঁকে বলা হল, অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হইবে তখন তানঈমে গিয়ে ইহরাম বাঁধবে এরপর অমুক স্থানে আমাদের কাছে আসবে। এ উমরা (এর সওয়াব) হইবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুপাতে।

২৬/৯. অধ্যায়ঃ উমরা আদায়কারী উমরার তাওয়াফ করেই রওয়ানা হলে, তা কি তার জন্য বিদায়ী তাওয়াফের বদলে যথেষ্ট হইবে?

১৭৮৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে হজ্জের ইহরাম বেঁধে বের হলাম, হজ্জের মাসে এবং হজ্জের কার্যাদি পালনের উদ্দেশ্যে। যখন সারিফ নামক স্থানে অবতরণ করলাম, তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবাগণকে বললেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই এবং সে এই ইহরামকে উমরায় পরিণত করিতে চায়, সে যেন তা করে নেয় (অর্থাৎ উমরা করে হালাল হয়)। আর যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার আছে সে এরূপ করিবে না (অর্থাৎ হালাল হইতে পারবে না)। নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর কয়েকজন সমর্থ সাহাবীর নিকট কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাঁদের হজ্জ উমরায় পরিণত হল না। [আয়েশা (রাদি.) বলিলেন] আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট এসে বললেনঃ তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? আমি বললাম, আপনি আপনার সাহাবীগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনিয়াছি। আমি তো উমরা হইতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার কী অবস্থা? আমি বললাম, আমি তো সালাত আদায় করছি না (ঋতুবতী অবস্থায়)। তিনি বললেনঃ এতে তোমার ক্ষতি হইবে না। তুমি তো আদম কন্যাদেরই একজন। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যেও তা লিখিত হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার হজ্জ আদায় কর। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে উমরাও দান করবেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি এ অবস্থায়ই থেকে গেলাম এবং পরে মিনা হইতে প্রত্যাবর্তন করে মুহাস্‌সাবে অবতরণ করলাম। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রহমান [আয়েশা (রাদি.) -এর সহোদর ভাই] (রাদি.) -কে ডেকে বললেনঃ তুমি তোমার বোনকে হারামের বাইরে নিয়ে যাও। সেখান হইতে যেন সে উমরার ইহরাম বাঁধে। অতঃপর তোমরা তাওয়াফ করে নিবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আমরা মধ্যরাতে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি তাওয়াফ সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। এ সময় তিনি সাহাবীগণকে রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। তাই লোকজন এবং যাঁরা ফজরের পূর্বে তাওয়াফ করেছিলেন তাঁরা রওয়ানা হলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) মাদীনাহ অভিমুখে রওয়ানা হলেন।

২৬/১০. অধ্যায়ঃ হজ্জে যে সকল কাজ করিতে হয় উমরাতেও তাই করিবে।

১৭৮৯. ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিরানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিলেন, আপনি উমরাতে আমাকে কী কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হলদে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তাআলা নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর ওয়াহী নাযিল করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) -কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উমর (রাদি.) -কে বললাম, আল্লাহ তাহাঁর নাবীর প্রতি ওয়াহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখিতে চাই। উমর (রাদি.) বলিলেন, এসো, আল্লাহ নাবী (সাঃআঃ) -এর প্রতি ওয়াহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখিতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। অতঃপর উমর (রাদি.) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাহাঁর দিকে নজর করলাম। নাবী (সাঃআঃ) আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নাবী (সাঃআঃ) হইতে দূরীভূত হলে তিনি বললেনঃ উমরা সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার হইতে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালূকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রঙ পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হজ্জে যা করেছ উমরাতে তুমি তা-ই করিবে।

১৭৯০. উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একদা নাবী (সাঃআঃ) -এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.)-কে বললাম, আল্লাহর বাণীঃ “সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হজ্জ কিংবা উমরা সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করিতে চায়, তার কোন গুনাহ নেই”- (আল-বাকারা : ১৫৮)। তাই সাফা-মারওয়াহর সায়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। আয়েশা (রাদি.) বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হতঃ “সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হজ্জ কিংবা উমরা সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করে, তার কোন পাপ নেই”- (আল-বাকারা : ১৫৮)। অর্থাৎ এ দুটির মাঝে তাওয়াফ করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহরাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সামনে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়াহ তাওয়াফ করিতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হজ্জ কিংবা উমরা করিতে চায় তার জন্য এ দুটির মধ্যে সায়ী করায় কোন গুনাহ নেই। সুফয়ান ও আবু মুআবিয়া (রাদি.) হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সাফা-মারওয়াহর মাঝে তাওয়াফ না করলে আল্লাহ কারো হজ্জ এবং উমরাকে পূর্ণ করেন না।

২৬/১১. অধ্যায়ঃ উমরা আদায়কারী কখন হালাল হইবে (ইহরাম খুলবে)?

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর সাহাবীগণকে তাদের হজ্জকে উমরায় রূপান্তরিত করার পর তাওয়াফ করে চুল ছেঁটে হালাল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন

১৭৯১. আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উমরা করিলেন, আমরাও তাহাঁর সঙ্গে উমরা করলাম। তিনি মক্কায় প্রবেশ করে তাওয়াফ করিলেন, আমরাও তাহাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। এরপর তিনি সাফা-মারওয়ায় সায়ী করিলেন, আমরাও তাহাঁর সঙ্গে সায়ী করলাম। আর আমরা তাঁকে মক্কাবাসীদের হইতে লুকিয়ে রাখছিলাম যাতে কোন মুশরিক তাহাঁর প্রতি কোন কিছু নিক্ষেপ করিতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এক সাথী তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কি কাবা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, না।

১৭৯২. Read previous Hadith.বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

প্রশ্নকারী তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খাদীজা (রাদি.) সম্বন্ধে কী বলেছেন? তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ খাদীজাকে বেহেশতের মাঝে মতি দিয়ে তৈরী এমন একটি ঘরের সুসংবাদ দাও যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন প্রকার কষ্ট ক্লেশও থাকবে না।

১৭৯৩. আমর ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমরার মাঝে বাইতুল্লাহর তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়াহর তাওয়াফ না করে যে স্ত্রীর নিকট গমন করে, এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা ইবনু উমর (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) (মক্কায়) এসে বায়তুল্লাহর সাতবার তাওয়াফ করে মাকামে ইবরাহীমের পাশে দুরাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন। এরপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করিয়াছেন। “আর তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ তো রয়েছে আল্লাহর রাসূলের মাঝেই”- (আল-আহযাব : ২১)।

১৭৯৪.Read previous Hadith. আমর ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(রাবী) আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) -কেও আমরা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ তার স্ত্রীর নিকট কিছুতেই যাবে না।

১৭৯৫. আবু মূসা আল-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কার বাতহায় অবতরণ করলে আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি হজ্জ করেছ? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী (সাঃআঃ) -এর ইহরামের মত আমিও ইহরামের তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভাল করেছ। এখন বাইতুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়াহর সায়ী করে হালাল হয়ে যাও। অতঃপর আমি বাইতুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়াহর সায়ী করে কায়স গোত্রের এক মহিলার কাছে গেলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম এবং উমর (রাদি.) -এর খিলাফত পর্যন্ত আমি এভাবেই ফাতাওয়া দিতে থাকি। উমর (রাদি.) বলিলেন, যদি আমরা আল্লাহর কিতাব গ্রহণ করি সেটা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণী গ্রহণ করি তাহলে নাবী (সাঃআঃ) কুরবানীর পশু তার স্থানে পৌঁছার (যবহ করার) পূর্ব পর্যন্ত হালাল হননি।

১৭৯৬. আবুল আসওয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) -এর কন্যা আসমা (রাদি.) -এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ (রাদি.) তাহাঁর নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, যখনই আসমা (রাদি.) হাজ্জূন এলাকা দিয়ে গমন করিতেন তখনই তাঁকে বলিতে শুনেছেন আল্লাহ তাহাঁর রসূলের প্রতি রহমত নাযিল করুন, এ স্থানে আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে অবতরণ করেছিলাম। তখন আমাদের বোঝা ছিল খুব অল্প, যানবাহন ছিল একেবারে নগণ্য এবং সম্বল ছিল খুবই কম। আমি, আমার বোন আয়েশা (রাদি.), যুবাইর (রাদি.) এবং অমুক অমুক উমরা আদায় করলাম। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে আমরা সকলেই হালাল হয়ে গেলাম এবং সন্ধ্যাকালে হজ্জের ইহরাম বাঁধলাম।

২৬/১২. অধ্যায়ঃ হজ্জ, উমরা ও যুদ্ধ হইতে ফিরার পরে কি বলবে?

১৭৯৭.আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখনই কোন যুদ্ধ, বা হজ্জ অথবা উমরা হইতে প্রত্যাবর্তন করিতেন তখন তিনি প্রত্যেক উঁচু ভূমিতে তিনবার আল্লাহু আকবার বলিতেন এবং পরে বলিতেনঃ

অর্থাৎ “আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন শরীক নেই। সর্বময় ক্ষমতা এবং সকল প্রশংসা কেবল তাহাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাহকারী, ইবাদতকারী, আমাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সাজদাহকারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাহাঁর ওয়াদা পূর্ণ করিয়াছেন, স্বীয় বান্দাকে সাহায্য করিয়াছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রুদলকে পরাজিত করিয়াছেন”।

২৬/১৩. অধ্যায়ঃ আগমনকারী হাজীদেরকে স্বাগত জানানো এবং এমতাবস্থায় এক সওয়ারীতে তিন জন আরোহণ করা।

১৭৯৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কায় এলে আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে স্বাগত জানায়। তিনি একজনকে তাহাঁর সাওয়ারীর সামনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন।

২৬/১৪. অধ্যায়ঃসকাল বেলা বাড়িতে আগমন।

১৭৯৯. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মসজিদে শাজারাতে সালাত আদায় করিতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত আদায় করিতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করিতেন।

২৬/১৫. অধ্যায়ঃ বিকালে বা সন্ধ্যাকালে বাড়িতে প্রবেশ করা।

১৮০০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাত্রে কখনো পরিবারের নিকট প্রবেশ করিতেন না। তিনি প্রভাতে কিংবা বৈকালে ছাড়া পরিবারের নিকট প্রবেশ করিতেন না।

২৬/১৬. অধ্যায়ঃ শহরে পৌঁছে রাত্রিকালে পরিজনের নিকটে প্রবেশ করিবে না।

১৮০১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

২৬/১৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মদীনায় (নিজস্ব শহর) পৌঁছে তার উটনী (সাওয়ারী) দ্রুত চালায়।

১৮০২. হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আনাস (রাদি.) -কে বলিতে শুনেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সফর হইতে ফিরে যখন মাদীনাহর উঁচু রাস্তাগুলো দেখিতেন তখন তিনি তাহাঁর উটনী দ্রুতগতিতে চালাতেন আর বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন।

১৮০২/১. অপর একটি বর্ণনায় হুমাইদ আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, (উঁচু রাস্তা) -এর পরিবর্তে (দেয়ালগুলো) শব্দ বলেছেন। হারিস ইবনু উমাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইসমাঈল(রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। (১৮৮৬)

(আ.প্র. ১৬৭৩, ই.ফা. ১৬৮২)

২৬/১৮. অধ্যায়ঃcমহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা গৃহসমূহে তার দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ কর। (আল-বাকারা ২ : ১৮৯)

১৮০৩. আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বারা (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হজ্জ করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতেন। এক আনছার ফিরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে লজ্জা দেয়া হয়। তখনই নাযিল হয় :

‏وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا

“পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর”-

(আল-বাকারা : ১৮৯)।

২৬/১৯. অধ্যায়ঃdসফর আযাবের একটি অংশ বিশেষ।

১৮০৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেন, সফর আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় ব্যঘাত ঘটায়। কাজেই সকলেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবিলম্বে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়।

২৬/২০. অধ্যায়ঃ মুসাফিরের সফর যদি অসহনীয় হয়ে পড়ে সে দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসবে।

১৮০৫. আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কার রাস্তায় আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) -এর সাথে ছিলাম। সাফিয়্যা বিনতু আবু উবায়দ (রাদি.) -এর মারাত্নক অসুস্থ হওয়ার খবর তাহাঁর নিকট পৌঁছল। তখন তিনি গতি বৃদ্ধি করিলেন। (পশ্চিম আকাশের) লালিমা চলে যাবার পর সাওয়ারী হইতে অবতরণ করে মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেন। অতঃপর বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখেছি, সফরে তাড়াতাড়ি চলার দরকার হলে তিনি মাগরিবকে দেরি করে মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করিতেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply