উমরাহ , বিদায়ী তাওয়াফ ও মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ
উমরাহ , বিদায়ী তাওয়াফ ও মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১১, অনুচ্ছেদঃ ৮১-৮৯=৯টি
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ উমরাহ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ যদি কোন মহিলা উমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধার পর ঋতুবতী হয় এবং এমতাবস্থায় হাজ্জের সময় উপস্থিত হওয়ায় সে উমরাহ্র ইহরাম ছেড়ে হাজ্জের ইহরাম বাঁধে, তাহলে তাহাকে তার উমরাহ ক্বাযা করিতে হইবে কিনা?
অনুচ্ছেদ-৮৩ঃ উমরাহ আদায়ের পর সেখানে অবস্থান
অনুচ্ছেদ-৮৪ঃ হাজ্জে তাওয়াফে ইফাদা [যিয়ারাত]
অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ শেষ তাওয়াফ
অনুচ্ছেদ-৮৬ঃ তাওয়াফে যিয়ারাতের পর ঋতুবতী মহিলার মাক্কাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করা
অনুচ্ছেদ-৮৭ঃ বিদায়ী তাওয়াফ
অনুচ্ছেদ–৮৮ঃ মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–৮৯ঃ যদি কেউ হাজ্জের কোন কাজ আগে-পরে করে
অনুচ্ছেদ-৮১ঃ উমরাহ সম্পর্কে
১৯৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ্র শপথ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আয়িশাহ [রাদি.]-কে যিলহাজ্জ মাসে উমরাহ করিয়েছেন এজন্যই যে, যাতে মুশরিকদের কাজের বিরোধীতা হয়। কেননা কুরাইশদের এ গোত্র এবং তাহাদের অনুসারীরা বলতো ঃ উটের পিঠের ঘা শুকিয়ে পশম গজালে এবং সফর মাস এলে উমরাহ করিতে ইচ্ছুকদের উমরাহ করা বৈধ। মুশরিকরা যিলহাজ্জ এবং মুহা্ররম মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত উমরাহ করা হারাম মনে করতো। {১৯৮৬}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৮৭. আবু বাক্র ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ানের যে দূতকে উম্মু মাক্বিলের নিকট প্রেরণ করা হয়, তিনি আমাকে জানিয়েছেন, উম্মু মাক্বিল [রাদি.] বলিয়াছেন, আবু মাক্বিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাজ্জ গমনের ইচ্ছা করেছিলেন। তিনি ঘরে এলে উম্মু মাক্বিল [রাদি.] বলিলেন, আমি আবগত হয়েছি, আমার উপরও হাজ্জ ফরয হয়েছে সুতরাং তারা [স্বামী-স্ত্রী] উভয়ে পদব্রজে রাসূলল্লাহর [সাঃআঃ] নিকট উপস্থিত হলেন। উম্মু মাক্বিল বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর হাজ্জ ফরয হয়েছে। আর আবু মাক্বিলের নিকট একটি উষ্ট্রী আছে। আবু মাক্বিল [রাদি.] বলিলেন, সে সত্যই বলেছে, কিন্তু আমি তো সেটি আল্লাহর পথে যুদ্ধের কাজে সদাক্বাহ করেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি এটা তাহাকে দিয়ে দাও, সে হাজ্জ করে আসুক। কেননা এটাও আল্লাহর পথ। নির্দেশ মোতাবেক তিনি উষ্ট্রীটি তাহাকে দিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো বৃদ্ধ মহিলা এবং অসুস্থ। সুতরাং এমন কোনো কাজ আছে কি যা আমার হাজ্জের বিকল্প হইবে? তিনি বলিলেনঃ রমাযান মাসে উমরাহ তোমার হাজ্জের জন্য যথেষ্ট। {১৯৮৭}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৯৮৮. আবু বাক্র ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মারওয়ানের যে দূতকে উম্মু মাক্বিলের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিলো, তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, উম্মু মাক্বিল [রাদি.] বলিয়াছেনঃ আবু মাক্বিল রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে হাজ্জ করার ইচ্ছা করেছিলেন। তিনি ঘরে এলে উম্মু মাক্বিল [রাদি.] বলেন, আমার উপরও যে হাজ্জ ফরয হয়েছে তা আমি অবগত হয়েছি। কাজেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পায়ে হেঁটে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে গেলেন। উম্মু মাক্বিল [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর হাজ্জ ফরয হয়েছে। আর আবু মাক্বিলের নিকট [বাহন উপযোগী] একটি উষ্ট্রী আছে। আবু মাক্বিল [রাদি.] বলিলেন, সে সত্য বলেছে, কিন্তু আমি তো সেটি আল্লাহর পথে যুদ্ধের কাজে সদাক্বাহ করে দিয়েছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি ওটা [উষ্ট্রীটি] একে দাও, সে হাজ্জ করে আসুক। কারণ এটাও তো আল্লাহর পথ। ফলে তিনি তাহাকে তা দিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা এবং অসুস্থ। কাজেই এমন কোন আমল আছে কি যা করলে আমার হাজ্জের পরিবর্তে যথেষ্ট হইবে? তিনি বলিলেনঃ রমাযানের একটি উমরাহ তোমার হাজ্জের জন্য যথেষ্ট হইবে। {১৯৮৮}
সহিহ, তবে মহিলার এ কথাটি বাদে ঃ আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা …।” উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৮৯. উম্মু মাক্বিল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন বিদায় হাজ্জ গমন করেন তখন আমাদের একটি মাত্র উট ছিলো, সেটাও আবু মাক্বিল [রাদি.] আল্লাহর পথে [জিহাদে] সদাক্বাহ করেছেন। এদিকে আমরা অসুস্থ হলাম এবং আবু মাক্বিলও মৃত্যুবরণ করিলেন। আর নাবী [সাঃআঃ] [হাজ্জে] চলে গেলেন। তিনি হাজ্জ সম্পন্ন করার পর আমি তাহাঁর কাছে আসলে তিনি বলিলেনঃ হে উম্মু মাক্বিল! আমাদের সাথে যেতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তিনি বলিলেন, আমরা তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু আবু মাক্বিল মারা গেলেন। আমাদের যে উটটি ছিলো, যা দ্বারা আমি হাজ্জ সম্পন্ন করিতে চেয়েছিলাম, সেটাকেও আবু মাক্বিল আল্লাহর পথে দান করার ওয়াসিয়্যাত করেছেন। তিনি বলিলেন, তুমি সেটা নিয়েই বের হলে না কেন? কারণ হাজ্জ করাও আল্লাহর পথের সদৃশ! তুমি যখন আমাদের সাথে এ হাজ্জ করিতে পারলে না সুতরাং রমযান মাসে উমরাহ আদায় করো। কেননা এ সময়ের উমরাহ হাজ্জের সমতুল্য। এরপর থেকে উম্মু মাক্বিল প্রায়ই বলিতেন, হাজ্জ হাজ্জই এবং উমরাহ উমরাহই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একথা কেবল আমার জন্যই বলিয়াছেন নাকি সবার জন্য তা আমি অবহিত নই। {১৯৮৯}
সহিহ, তার এ কথাটি বাদে ঃ “তিনি প্রায়ই বলিতেন …।” উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাজ্জের ইচ্ছা করিলেন। তখন জনৈক মহিলা [উম্মু মাক্বিল] তার স্বামীকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমার হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বলিলেন, তোমাকে হাজ্জে পাঠাবার মতো [বাহন] ব্যবস্থা আমার কাছে নেই। তিনি [উম্মু মাক্বিল] বলিলেন, অমুক উটটি দ্বারা আমাকে হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করুন। তিনি বলিলেন, তাতো মহান শক্তিমান আল্লাহ পথে [জিহাদের জন্য] আবদ্ধ। অতঃপর তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন, আমার স্ত্রী আপনাকে সালাম জানিয়েছে এবং আপনার উপর আল্লাহর রহমাত কামনা করেছে। সে আপনার সাথে হাজ্জে যেতে আমার কাছে অনুমতি চেয়ে বলেছে, আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিন। আমি বলেছি, আমার কাছে তোমাকে হাজ্জে পাঠানোর কোন ব্যবস্থা নেই। সে বললো, অমুক উট দ্বারা আমাকে হাজ্জে গমনের সুযোগ দিন। আমি বলিলাম, সেটি তো মহান শক্তিমান আল্লাহর পথে [জিহাদের জন্য] আবদ্ধ। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি তাহাকে সেটির দ্বারা হাজ্জে গমনের ব্যবস্থা করে দিলে তাও আল্লাহর পথেই হতো। সে আমাকে আপনার কাছে জিজ্ঞেস করিতে বলেছে, আপনার সাথে হাজ্জ করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়ার মত কোন কাজ আছে কিনা? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তাহাকে আমার সালাম জানাবে, তার উপর আল্লাহর রহমাত ও বরকত বর্ষিত হোক। তাহাকে এ সংবাদও দিবে, রমযান মাসে উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ করার সমুতুল্য। {১৯৯০}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৯৯১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুইবার উমরাহ করছেন। একটি যিলক্বাদ মাসে এবং অপরটি শাওয়াল মাসে। {১৯৯১}
সহিহ ঃ কিন্তু তার কথা ঃ শাওয়াল অর্থাৎ প্রথমটি। অন্যতায় সেটিও যিলক্বাদ মাসে। উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৯২. মুজাহিদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কতবার উমরাহ করেছেন? তিনি বলিলেন, দুইবার। আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন, ইবনি উমার [রাদি.] অবগত আছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হাজ্জের সাথে যে উমরাহ করেছেন সেটা ছাড়াও তিনবার উমরাহ করেছেন।
{১৯৯২} বায়হাক্বী। উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৯৯৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চারবার উমরাহ করেছেন। প্রথমবার হুদায়বিয়ার সময়, দ্বিতীয় উমরাহ এর পরবর্তী বছর, যেটির উপর তাহাদের সাথে সন্ধি হয়েছিল। তৃতীয় উমরাহ আল-জিইররানা হইতে এবং চতুর্থ উমরাহ তার হাজ্জের সাথে। {১৯৩৩}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৯৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মোট চারবার উমরাহ করেছেন। বিদায় হাজ্জের সাথে উমরাহ ছাড়া অবশিষ্ট উমরাহগুলো তিনি যিলক্বাদ মাসে আদায় করেছেন। {১৯৯৪}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮২ঃ যদি কোন মহিলা উমরাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধার পর ঋতুবতী হয় এবং এমতাবস্থায় হাজ্জের সময় উপস্থিত হওয়ায় সে উমরাহ্র ইহরাম ছেড়ে হাজ্জের ইহরাম বাঁধে, তাহলে তাহাকে তার উমরাহ ক্বাযা করিতে হইবে কিনা?
১৯৯৫. হাফসাহ বিনতু আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবদুর রহমানকে বলেনঃ হে আবদুর রহমান! তোমার বোন আয়িশাকে তোমার সওয়াবীর পেছনে বসিয়ে নাও এবং আত-তানঈম থেকে তাহাকে উমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধাও। আর তুমি তাহাকে নিয়ে সেখানকার উঁচু টিলা থেকে নেমে সমতল ভূমিতে এলেই সে ইহরাম বাঁধবে, কারণ তা উমরাহ কবুল হওয়ার স্থান। {১৯৯৫}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৯৬. মুহাররিশ আল-কাবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন নাবী [সাঃআঃ] আল-জিইররানাহ স্থানে পৌঁছে সেখানকার মাসজিদে গিয়ে তথায় আল্লাহ যতটুকু চাইলেন তিনি [রুকু] সলাত আদায় করিলেন, অতঃপর ইহরাম বাঁধলেন। তারপর সওয়ারীতে চড়ে বাতনে সারিফ ভূমিতে এসে মাদীনাহগামী পথে উপনীত হলেন এবং রাত যাপনকারীর মতই তিনি মক্কায় ভোর পর্যন্ত অবস্থান করিলেন। {১৯৯৬}
সহিহ, মাসজিদে রুকু কথাটি বাদে। কেননা তা মুনকার। উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮৩ঃ উমরাহ আদায়ের পর সেখানে অবস্থান
১৯৯৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্বাযা উমরাহ আদায়ের পর মক্কায় তিন দিন অবস্থান করেছেন। {১৯৯৭}
উমরাহ – এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮৪ঃ হাজ্জে তাওয়াফে ইফাদা [যিয়ারাত]
১৯৯৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন মক্কায় এসে তাওয়াফে যিয়ারত সমাপ্ত করে পুনরায় মিনায় ফিরে এসে সেখানে যুহরের সলাত আদায় করেন। {১৯৯৮}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৯৯৯.উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে আমার পালার রাতটি ছিলো কুরবানীর দিন সন্ধ্যায়। সুতরাং সেদিন তিনি আমার কাছে ছিলেন। এ সময় ওয়াহব ইবনি যামআহ এবং তার সাথে আবু উমায়্যাহ পরিবারের জনৈক ব্যক্তি উভয়েই জামা পরিহিত অবস্থায় আমার নিকট প্রবেশ করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াহবকে জিজ্ঞেস করিলেন ঃ হে আবু আবদুল্লাহ! তুমি কি তাওয়াফে ইফাদা সম্পন্ন করেছো? সে বললো, না, আল্লাহর শপথ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি তোমার জামা খুলে ফেলো। উম্মু সালামাহ [রাদি.] বলেন, তিনি মাথার দিক থেকে তা খুললেন এবং তার সাথীও মাথার দিক থেকে তার জামা খুললো। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ করার কারণ কি? তিনি বলিলেনঃ আজকের দিনে তোমাদের জন্য বিধান শিথিল হয়েছে। তোমরা যখন জামারায় কংকর মেরে, কুরবানী সম্পন্ন করে চুল মুড়াবে, তখন একমাত্র স্ত্রীসহবাস ছাড়া এ পর্যন্ত ইহরামের কারণে যা কিছু তোমাদের জন্য হারাম ছিল তা হালাল হইবে। আর যদি আজকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের আগে রাত হয়ে যায় তাহলে তাওয়াফ করা পর্যন্ত তোমরা অনুরূপভাবে ইহরাম অবস্থায় থেকে যাবে, যেভাবে ছিলে জামরায় কংকর মারার আগে। {১৯৯৯}
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
২০০০. আয়িশাহ ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন তাওয়াফকে রাত পর্যন্ত বিলম্বিত করেছেন। {২০০০}
দুর্বল ঃ যয়ীফ ইবনি মাজাহ [৬৫৪], মিশকাত [২৬৭২], ইরওয়া [১০৭০], যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [১৫৯/৯২৯] এ শব্দে ঃ “তাওয়াফে যিয়ারাহ।” {২০০০} তিরমিজি, ইবনি মাজাহ। ঈমাম তিরমিজি বলেনঃ এই হাদিসটি হাসান সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২০০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] তাওয়াফে যিয়ারাতের সাত চক্করের একটিতেও রমল করেননি। {২০০১}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ শেষ তাওয়াফ
২০০২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা তাওয়াফে যিয়ারাত সম্পন্ন করে মাক্কাহর চতুর্দিক দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] ঘোষণা করিলেন ঃ তোমাদের কেউ যেন শেষ বারের মত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করে চলে না যায়। {২০০২}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮৬ঃ তাওয়াফে যিয়ারাতের পর ঋতুবতী মহিলার মাক্কাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করা
২০০৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হুয়াই এর কন্যা সাফিয়্যাহ্র [রাদি.] কথা উল্লেখ করেন। তখন বলা হলো, সে ঋতুবর্তী। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ সম্ভবত সে আমাদের যাত্রা বিলম্বিত করিবে। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তো তাওয়াফে ইফাদা করেছেন। এবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তাহলে সমস্যা নাই। {২০০৩}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০০৪. আল-হারিস ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আওস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমি উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট এসে জনৈক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি যে, সে কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পর ঋতুবর্তী হয়েছে। উমার [রাদি.] বলিলেন, তার সর্বশেষ কাজ হওয়া চাই বায়তুল্লাহ তাওয়াফ। বর্ণনাকারী [ওয়ালীদ] বলেন, তখন আল-হারিস [রাদি.] উমার [রাদি.]-কে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-ও আমাকে এরূপ ফাতাওয়াহ দিয়েছেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, তোমার ব্যবহারে আমি দুঃখ পেলাম। তুমি আমাকে [না জানার ভান করে] এমন কথা জিজ্ঞেস করেছো যা তুমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে আগেই জিজ্ঞেস করে জ্ঞাত আছো। যাতে আমি তার বিপরীত কিছু বলি।
সহিহ, কিন্তু এটি মানসুখ পূর্বের [২০০৩] হাদিস দ্বারা। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ-৮৭ঃ বিদায়ী তাওয়াফ
২০০৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আত-তানঈম হইতে উমারাহ্র জন্য ইহরাম বাঁধলাম। এরপর মাক্কাহয় প্রবেশ করে উমরাহ সম্পন্ন করলাম। এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল-আব্তাহ নামক স্থানে আমার অপেক্ষায় থাকলেন। পরে তিনি লোকদেরকে [মাদীনাহইতে] যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কায় এসে বায়তুল্লাহ [বিদায়ী] তাওয়াফ করে রওয়ানা হলেন। {২০০৫}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০০৬. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] সাথে সর্বশেষ কাফেলায় [যিলহাজ্জের তের তারিখে] মাক্কাহ হইতে মাদীনাহর পথে রওয়ানা হই। তিনি মুহাসসাব উপত্যকায় নামলেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি বাশ্শার এ হাদিসে তাহাকে আত-তানঈম প্রেরণের ঘটনা উল্লেখ করেননি। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, আমি উমরাহ [সম্পন্ন করে] শেষ রাতে তাহাঁর কাছে আসি। তখন তিনি তাহাঁর সাহবীদেরকে রওয়ানা হবার ঘোষণা দিলেন এবং তিনি নিজেও রওয়ানা হলেন। আর তিনি ফাজ্রের সলাতের পূর্বে যাত্রাকালে বায়তুল্লাহ গিয়ে বিদায়ী তওয়াফ করার পর মাদীনাহর দিকে যাত্রা করিলেন। {২০০৬}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০০৭. আবদুর রহমান ইবনি ত্বারিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার মাতা হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দ্বারে ইয়ালার নিকটস্থ স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে বায়তুল্লাহকে সম্মুখে রেখে দুআ করেছেন। উবাইদুল্লাহ স্থানটির নাম ভুলে গেছেন। {২০০৭}
{২০০৭} নাসায়ী, আহমাদ। সনদের আবদুর রহমান বিন ত্বারিক ও তার মা সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৮৮ঃ মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ সম্পর্কে
২০০৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুহাস্সাবে অবতরণ করেছেন, যেন মাদীনাহ অভিমূখে রওয়ানা হওয়া সহজতর হয়। তবে সেখানে অবতরণ করা সুন্নাত নয়। {২০০৮}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০০৯. সুলাইমান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু রাফি [রাদি.] বলিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে মুহাস্সাব উপত্যকায় অবতরণ করিতে আদেশ করেননি। তবে আমি সেখানে তাহাঁর জন্য তাঁবু স্থাপন করেছি। তাই তিনি সেখানে অবতরণ করেছেন। মুসাদ্দাদ বলেন, আবু রাফি [রাদি.] রাসূলুল্লাহ্র [সাঃআঃ] মালপত্র দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। {২০০৯}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০১০. উসামহ ইবনি যায়িদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আগামী কাল সকালে কোথায় অবরতণ করবেন? তিনি বলিলেনঃ আক্বীল কি আমাদের জন্য কোন বাড়ী রেখেছে? এরপর বলিলেনঃ আগামী কাল আমরা বনী কিনানার খাইফে [মুহাস্সাবে] অবতরণ করবো, যেখানে কুরাইশরা কুফরীর শপথ করেছিলো। অর্থাৎ বনী কিনানার লোকেরা কুরাইশদের সাথে এই মর্মে শপথ করেছিলো যে, বনী হাশিমের সাথে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবে না, তাহাদেরকে কোনো ধরনের আশ্রয় দিবে না এবং তাহাদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করিবে না। ঈমাম যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, খায়ফ শব্দের অর্থ উপত্যকা। {২০১০}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০১১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা করিলেন, তখন বলিলেনঃ আমরা আগামী কাল অবতরণ করবো। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বের হাদিসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি হাদিসের প্রথমাংশ বর্ণনা করেননি এবং এটাও উল্লেখ করেননি যে, খাইফ অর্থ উপত্যকা। {২০১১}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০১২, নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি উমার [রাদি.] বাত্হাতে [মুহাস্সাবে] সামান্য নিদ্রা যেতেন এবং পরে মক্কায় প্রবেশ করিতেন। তিনি বলিতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপই করিতেন। {২০১২}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০১৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বাতহায় যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশার সলাত আদায় করে সামান্য ঘুমাতেন, তারপর মক্কায় প্রবেশ করেন। নাফি বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-ও অনুরূপ করিতেন। {২০১৩}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৮৯ঃ যদি কেউ হাজ্জের কোন কাজ আগে-পরে করে
২০১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
বিদায় হাজ্জের সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনায় অবস্থান করিলেন। সেখানে লোকেরা তাঁকে প্রশ্ন করিতে থাকলো। এক ব্যক্তি এসে বললো, আমার জানা ছিলো না, তাই আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামিয়েছি। তিনি বলিলেনঃ এখন যাবাহ করো, কোন ক্ষতি নেই। আরেক ব্যক্তি এসে বললো, আমি জানতাম না, তাই কংকর নিক্ষেপের পূর্বেই কুরবানী করেছি। তিনি বলিলেনঃ এখন কংকর মেরে আসো, এতে কোন অসুবিধা নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এ দিন তাঁকে আগে-পিছে করা যে কাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি জবাবে বলিয়াছেনঃ এখন করে নাও কোন দোষ নেই। {২০১৪}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০১৫. উসামাহ ইবনি শারীক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে হাজ্জে গেলাম। এ সময় লোকেরা এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাওয়াফ করার পূর্বেই সাঈ করেছি কিংবা কেউ এসে বললো, আমি কিছু কাজ আগে-পরে করে ফেলেছি। জবাবে তিনি বলিতে থাকলেন ঃ যাও কোন অসুবিধা নেই, কোন দোষ নেই। তবে কেউ যদি অন্যায়ভাবে কোন মুসলিমের ইজ্জত সম্মান নষ্ট করে, তার সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ সে পাপে লিপ্ত হয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে। {২০১৫}
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply