হাসি, ধৈর্যধারণ, তিরস্কার, ক্রোধ, লজ্জাশীলতা, শিষ্টাচার, উত্তম চরিত্র প্রসঙ্গে
হাসি, ধৈর্যধারণ, তিরস্কার, ক্রোধ, লজ্জাশীলতা, শিষ্টাচার, উত্তম চরিত্র প্রসঙ্গে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
৭৮/৬৪. অধ্যায়ঃ আপন লোকের সাথে প্রতিদিন দেখা করিবে অথবা সকাল-বিকাল।
৭৮/৬৫. অধ্যায়ঃ দেখা-সাক্ষাৎ এবং কোন লোকদের সাথে দেখা করিতে গিয়ে, তাদের সেখানে খাদ্য খাওয়া।
৭৬/৬৬. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দল উপলক্ষে সুন্দর পোষাক পরা।
৭৮/৬৭. অধ্যায়ঃ ভ্রাতৃত্বের ও প্রতিশ্রুতির বন্ধন স্থাপন।
৭৮/৬৮. অধ্যায়ঃ মুচ্কি হাসি ও হাসি প্রসঙ্গে
৭৮/৬৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের অন্তর্ভূক্ত হও”।– (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১১৯)। মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে।
৭৮/৭০. অধ্যায়ঃ উত্তম চরিত্র।
৭৮/৭১. অধ্যায়ঃ ধৈর্যধারণ ও কষ্ট দেয়া। আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেয়া হইবে। (সুরা আয্-যুমার ৩৯/১০)
৭৮/৭২. অধ্যায়ঃ কারো মুখোমুখী তিরস্কার না করা প্রসঙ্গে।
৭৮/৭৩. অধ্যায়ঃ কেউ তার মুসলিম ভাইকে অকারণে কাফির বললে সে নিজেই তা যা সে বলেছে।
৭৮/৭৪. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কাউকে না জেনে কিংবা নিজ ধারণা অনুযায়ী (কাফির বা মুনাফিক) সম্বোধন করে, তাকে কাফির বলা যাবে না।
৭৮/৭৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বিধি-নিষেধের ব্যাপারে রাগ করা ও কঠোরতা অবলম্বন করা জায়িয।
৭৮/৭৬. অধ্যায়ঃ ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকা।
৭৮/৭৭. অধ্যায়ঃ লজ্জাশীলতা
৭৮/৭৮. অধ্যায়ঃ তোমার যদি লজ্জা না থাকে, তাহলে তুমি যা ইচ্ছে কর।
৭৮/৭৯. অধ্যায়ঃ দ্বীনের জ্ঞানার্জন করার জন্য সত্য বলিতে কোন লজ্জা নেই।
৭৮/৮০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বানীঃ তোমরা নম্র হও, কঠোর হয়ো না।
৭৮/৮১. অধ্যায়ঃ মানুষের সাথে হাসিমুখে মেলামেশা করা।
৭৮/৮২. অধ্যায়ঃ মানুষের সঙ্গে শিষ্টাচার করা।
৭৮/৮৩ অধ্যায়ঃ মুমিন এক গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না।
৭৮/৬৪. অধ্যায়ঃ আপন লোকের সাথে প্রতিদিন দেখা করিবে অথবা সকাল-বিকাল।
৬০৭৯
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমার জ্ঞান হবার পর থেকেই আমি আমার বাবা-মাকে ইসলামের অন্তর্ভুক্তই পেয়েছি। আমাদের উপর এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দুপ্রান্তে সকালে ও বিকালে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আসতেন না। একদিন দুপুর বেলা আমরা আবু বকর (রাদি.) -এর কক্ষে উপবিষ্ট ছিলাম। একজন বলে উঠলেনঃ এই যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)! তিনি এমন সময় এসেছেন, যে সময় তিনি আমাদের এখানে আসেন না। আবু বকর (রাদি.) বললেনঃ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই তাকেঁ এ মুহূর্তে নিয়ে এসেছে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমাকে (মক্কা থেকে) বহির্গমনের আদেশ দেয়া হয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৭)
৭৮/৬৫. অধ্যায়ঃ দেখা-সাক্ষাৎ এবং কোন লোকদের সাথে দেখা করিতে গিয়ে, তাদের সেখানে খাদ্য খাওয়া।
সালমান (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -এর যামানায় আবুদ দারদা (রাদি.) -এর সাথে দেখা করিতে যান এবং সেখানে খাবার খান।
৬০৮০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) এক আনসার পরিবারের সাথে দেখা করিতে গেলেন, অতঃপর তিনি তাদের সেখানে খাবার খেলেন। যখন তিনি বেরিয়ে আসার ইচ্ছে করিলেন, তখন ঘরের এক স্থানে (সলাতের জন্য) বিছানা পাতার আদেশ দিলেন। তখন তাহাঁর জন্য পানি ছিটিয়ে একটা চাটাই বিছিয়ে দেয়া হল। তিনি সেটির উপর সলাত আদায় করিলেন এবং তাদের জন্য দুআ করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৮)
৭৬/৬৬. অধ্যায়ঃ প্রতিনিধি দল উপলক্ষে সুন্দর পোষাক পরা।
৬০৮১
ইয়াহইয়া ইবনু আবু ইসহাক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, সালিত ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইস্তাবরাক কী? আমি বললাম, তা মোটা ও সুন্দর রেশমী কাপড়। তিনি বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমারকে বলিতে শুনিয়াছি যে, উমার (রাদি.) এক লোকের গায়ে একজোড়া মোটা রেশমী কাপড় দেখলেন। তখন তিনি সেটা নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমাতে এসে বলিলেন হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি কিনে নিন। যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধি দল আসবে, তখন আপনি এটি পরবেন। তিনি বললেনঃ রেশমী কাপড় কেবল ঐ লোকই পরবে, যার (আখিরাতে) কোন অংশ নেই। এরপর বেশ কিছুদিন পার হবার পর নাবী (সাঃআঃ) উমার (রাদি.) -এর নিকট এরূপ একজোড়া কাপড় পাঠালেন। তখন তিনি সেটি নিয়ে নাবী (সাঃআঃ) -এর খিদমতে এসে বললেনঃ আপনি এটা আমার নিকট পাঠালেন, অথচ নিজেই এ জাতীয় কাপড় সম্পর্কে যা বলার তা বলেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো এটা একমাত্র এ জন্য তোমার নিকট পাঠিয়েছি, যেন তুমি এর বদলে কোন মাল সংগ্রহ করিতে পার।
এ হাদীসের কারণে ইবনু উমার কারুকার্য খচিত কাপড় পরতে অপছন্দ করিতেন। আঃপ্রঃ- ৫৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৩৯)
এ হাদীসের কারণে ইবনু উমার (র.) কারুকার্য খচিত কাপড় পড়তে অপছন্দ করিতেন।
৭৮/৬৭. অধ্যায়ঃ ভ্রাতৃত্বের ও প্রতিশ্রুতির বন্ধন স্থাপন।
আবু জুহাইফাহ (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালমান ও আবু দারদা-এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) বলেনঃ আমরা মাদীনাহয় আসলে নাবী (সাঃআঃ) আমার ও সাদ ইবনু রাবী -এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন।
৬০৮২
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) আমাদের নিকট আসলে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর ও সাদ ইবনু রাবী -এর মধ্যে ভ্রাতৃ বন্ধন জুড়ে দেন। তারপর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর বিয়ের পর তাঁকে বললেনঃ তুমি ওয়ালিমা করো, কমপক্ষে একটি ছাগল দিয়ে হলেও।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪০)
৬০৮৩
আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) -কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি জানেন কি নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ইসলামে প্রতিশ্রুতি নেই? তিনি বললেনঃ নাবী (সাঃআঃ) তো আমার ঘরেই কুরায়শ আর আনসারদের মাঝে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির বন্ধন জুড়ে দেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪১)
৭৮/৬৮. অধ্যায়ঃ মুচ্কি হাসি ও হাসি প্রসঙ্গে
ফাতিমাহ (রাদি.) বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) আমাকে সংগোপনে একটি কথা বলিলেন, আমি হাসলাম। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ হাসানো ও কাঁদানোর একমাত্র মালিক।
৬০৮৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রিফাআ কুরাযী (রাদি.) তার স্ত্রীকে ত্বলাক দেন এবং অকাট্য ত্বলাক দেন। এরপর আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র তাকে বিয়ে করেন। পরে তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি রিফাআর কাছে ছিলেন এবং রিফাআ তাকে শেষ তিন ত্বলাক দেন এবং তাঁকে আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র বিয়ে করেন। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! এর কাছে তো কেবল এই কাপড়ের মত আছে। (এ কথা বলে) তিনি তার ওড়নার আঁচল ধরে উঠালেন। রাবী বলেনঃ তখন আবু বকর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন এবং সাঈদ ইবনু আসও ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি লাভের জন্য হুজরার দরজার কাছে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন সাদ (রাদি.) আবু বকর (রাদি.) -কে উচ্চৈঃস্বরে ডেকে বললেনঃ হে আবু বাক্র! আপনি এই স্ত্রী লোকটিকে কেন ধমক দিচ্ছেন না, যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সামনে (প্রকাশ্যে) এসব কথাবার্তা বলছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কেবল মুচকি হাসছিলেন। তারপর রসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ সম্ভবতঃ তুমি আবার রিফাআ (রাদি.) -এর নিকট ফিরে যেতে চাও। তা হইবে না। যতক্ষণ না তুমি তার এবং সে তোমার মিলনের আস্বাদ গ্রহন করিবে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪২)
৬০৮৫
ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –এর নিকট (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তখন তাহাঁর নিকট কুরাইশের কয়েকজন মহিলা প্রশ্নাদি করছিলেন এবং তাদের আওয়াজ তাহাঁর আওয়াজের চেয়ে উচ্চ ছিল। যখন উমার (রাদি.) অনুমিত চাইলেন, তখন তাঁরা জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে অনুমতি দেয়ার পর যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করিলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) হাসছিলেন। উমার (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে হাসি মুখে রাখুন; হে আল্লাহর রাসুল! তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমার নিকট যে সব মহিলা ছিলেন, তাদের প্রতি আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে, তাঁরা তোমার আওয়াজ শোনা মাত্রই জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। উমার (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! এদের ভয় করার ব্যাপারে আপনার হকই বেশি। এরপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে নিজের জানের দুশমনরা! তোমরা কি আমাকে ভয় কর, আর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে ভয় কর না? তাঁরা জবাব দিলেনঃ আপনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে অনেক অধিক শক্ত ও কঠোর লোক। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হে ইবনু খাত্তাব! সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন, যখনই শয়তান পথ চলতে চলতে তোমার সামনে আসে, তখনই সে তোমার রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য রাস্তা ধরে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৩)
৬০৮৬
কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তায়েফে (অবরোধ করে) ছিলেন, তখন একদিন তিনি বললেনঃ ইনশাআল্লাহ আগামীকাল আমরা ফিরে যাব। নাবী (সাঃআঃ) -এর কয়েকজন সহাবী বললেনঃ আমরা তায়েফ জয় না করা পর্যন্ত এ স্থান ত্যাগ করবো না। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তবে সকাল হলেই তোমরা যুদ্ধে নেমে পড়বে। রাবী বলেনঃ তাঁরা ভোর থেকেই তাদের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ শুরু করিলেন। এতে তাদের বহুলোক আহত হয়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাবো এবং তাঁরা সবাই নিশ্চুপ থাকলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হেসে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৪)
৬০৮৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললঃ আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আমি রমাযানে (দিনে) আমার স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ তুমি একটি গোলাম আযাদ করে দাও। সে বললঃ আমার গোলাম নেই। তিনি বললেনঃ তাহলে এক নাগাড়ে দুমাস সিয়াম পালন কর। সে বললঃ এতেও আমি অপারগ। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তবে ষাটজন মিস্কীনকে খাদ্য দাও। সে বললঃ তারও ব্যবস্থা নাই। তখন এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? এইটি নিয়ে সদাকাহ করে দাও। লোকটা বললঃ আমার চেয়েও অধিক অভাবগ্রস্ত আবার কে? আল্লাহর কসম! মাদীনাহর দুপ্রান্তের মাঝে এমন কোন পরিবার নেই, যে আমাদের থেকে অধিক অভাবগ্রস্ত। তখন নাবী (সাঃআঃ) এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তাহাঁর চোয়ালের দাঁতগুলো প্রকাশ পেল এবং তিনি বললেনঃ তাহলে এখন এটা তোমরাই খাও।(আঃপ্রঃ- ৫৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৫)
৬০৮৮
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তখন তাহাঁর গায়ে একখানা গাঢ় পাড়যুক্ত নাজরানী চাদর ছিল। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে চাদরখানা ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাঁধের উপর তাকিয়ে দেখলাম যে, জোরে চাদরখানা টানার কারণে তাহাঁর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈন বললঃ হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে আল্লাহর দেয়া যে সম্পদ আছে, তাত্থেকে আমাকে দেয়ার আদেশ কর। তখন নাবী (সাঃআঃ) তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন এবং তাকে কিছু দান করার আদেশ করিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৬)
৬০৮৯
জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে নাবী (সাঃআঃ) আমাকে তাহাঁর কাছে যেতে বাধা দেননি। তিনি আমাকে দেখলেই আমার সামনে মুচকি হাসতেন।
৬০৯০
জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদিন আমি অভিযোগ করে বললামঃ আমি ঘোড়ার পিঠে চেপে বসে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত রেখে দুআ করিলেন। হে আল্লাহ! তাকে দৃঢ়চিত্ত করুন এবং তাকে সঠিক পথের সন্ধানদাতা ও সৎপথপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৭)
৬০৯১
যাইনাব ইবনু উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যাইনাব ইবনু উম্মু সালামাহ (রাদি.) বর্ণিত যে, একবার উম্মু সুলায়ম (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো সত্য কথা বলিতে লজ্জা করেন না। মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে তাদেরও কি গোসল করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ হাঁ। যদি সে পানি (বীর্য) দেখিতে পায়। তখন উম্মু সালামাহ (রাদি.) হেসে দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেনঃ মেয়ে লোকেরও কি স্বপ্নদোষ হয়? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তা না হলে সন্তানের সঙ্গে সাদৃশ্য হয় কীভাবে?(আঃপ্রঃ- ৫৬৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৮)
৬০৯২
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে এমনভাবে হাঁ করে দেখিনি যে, তাহাঁর আলা জিহ্বা দেখা যেত। তিনি কেবল মুচকি হাসতেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৪৯)
৬০৯৩
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট জুমাআহর দিন মদিনায় এল, যখন তিনি খুতবাহ দিচ্ছিলেন। সে বললঃ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে, আপনি বৃষ্টির জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট দুআ করুন। তখন তিনি আকাশের দিকে তাকালেন তখন আমরা আকাশে কোন মেঘ দেখলাম না। তখন তিনি বৃষ্টির জন্য দুআ করিলেন। এ সময় মেঘ এসে মিলিত হইতে লাগলো। তারপর এমন বৃষ্টি হলো যে, মাদীনাহর খাল-নালাগুলো প্রবাহিত হইতে লাগল এবং ক্রমাগত পরবর্তী জুমুআহ পর্যন্ত বৃষ্টি হইতে থাকল, মাঝে আর বিরতি হয়নি। পরবর্তী জুমুআহয় যখন নাবী (সাঃআঃ) খুতবাহ দিচ্ছিলেন, তখন ঐ ব্যক্তি অথবা অন্য এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, আমরা তো ডুবে গেছি। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট দুআ করুন, যেন তিনি আমাদের উপর থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন তিনি হেসে দিলেন এবং দুবার অথবা তিনবার দুআ করিলেন। হে আল্লাহ! (বৃষ্টি) আশে-পাশে নিয়ে যান, আমাদের উপর নয়। তখন মেঘপুঞ্জ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে মাদীনাহর আশে-পাশে বর্ষণ করিতে লাগল। আমাদের উপর আর বর্ষিত হলো না। এতে আল্লাহ তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ) -এর কারামাত ও তাহাঁর দুআ কবূল হবার দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫০)
৭৮/৬৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থীদের অন্তর্ভূক্ত হও”।– (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১১৯)। মিথ্যা কথা বলা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে।
৬০৯৪
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর কায়িম থেকে অবশেষে সিদ্দীক -এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলিতে বলিতে অবশেষে আল্লাহর কাছে মহামিথ্যাচারী প্রতিপন্ন হয়ে যায়।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫১)
৬০৯৫
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা করে, তখন তা ভঙ্গ করে, আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তাতে খিয়ানাত করে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫২)
৬০৯৬
সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি আজ রাতে (স্বপ্নে), দুজন লোককে দেখলাম। তাঁরা বললঃ আপনি যে লোকটির গাল চিরে ফেলতে দেখলেন, সে বড়ই মিথ্যাচারী, সে এমন মিথ্যা বলত যে, দুনিয়ার সর্বত্র তা ছড়িয়ে দিত। ফলে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে এ রকম ব্যবহার চলতে থাকবে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৩)
৭৮/৭০. অধ্যায়ঃ উত্তম চরিত্র।
৬০৯৭
হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, মানুষের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে চাল-চলনে, নীতিতে ও চরিত্রে, যার সবচেয়ে অধিক মিল ছিল, তিনি হলেন ইবনু উম্মু আবদ। যখন তিনি নিজ ঘর থেকে বের হন, তখন থেকে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত এ মিল দেখা যায়। তবে তিনি একা নিজ গৃহে কেমন ব্যবহার করেন, তা আমরা জানি না।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৪)
৬০৯৮
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ উত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সবচেয়ে উত্তম পথ প্রদর্শন হলো, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -এর পথ প্রদর্শন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৫)
৭৮/৭১. অধ্যায়ঃ ধৈর্যধারণ ও কষ্ট দেয়া। আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেয়া হইবে। (সুরা আয্-যুমার ৩৯/১০)
৬০৯৯
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কষ্টদায়ক কথা শোনার পর আল্লাহ তাআলার চেয়ে বেশি ধৈর্যধারণকারী কেউ বা কোন কিছুই নেই। লোকেরা তাহাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করে, এরপরেও তিনি তাদের বিপদ মুক্ত রাখেন এবং রিয্ক দান করেন। [৭৩৭৮; মুসলিম ৫০/৯, হাদীস ২৮০৪, আহমাদ ১৯৫৪৪] আঃপ্রঃ- ৫৬৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৬)
৬১০০
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা নাবী (সাঃআঃ) গানীমাতের মাল বণ্টন করিলেন। তখন এক আনসারী ব্যক্তি বললঃ আল্লাহর কসম! এ বণ্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। তখন আমি বললামঃ জেনে রেখো, আমি নিশ্চয়ই নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে এ কথা বলব। সুতরাং আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্যে ছিলেন। এজন্য তাহাঁর কাছে কথাটা চুপে চুপে বললাম। এ কথাটি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে খুবই কষ্টদায়ক ঠেকল, তাহাঁর চেহারার রং বদলে গেল এবং তিনি এতই রাগান্বিত হলেন যে, আমি ভাবলাম, হায়! যদি আমি তাহাঁর কাছে এ খবর না দিতাম, তবে কতই না ভাল হত! এরপর তিনি বললেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্যধারণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৭)
৭৮/৭২. অধ্যায়ঃ কারো মুখোমুখী তিরস্কার না করা প্রসঙ্গে।
৬১০১
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা (রাদি.) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী (সাঃআঃ) নিজে কোন কাজ করিলেন এবং অন্যদের সেটা করার অনুমতি দিলেন। তা সত্ত্বেও একদল লোক তাত্থেকে বিরত রইল। এ সংবাদ নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে পৌঁছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসার পর বললেনঃ কিছু লোকের কী হয়েছে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর সম্পর্কে তাদের থেকে বেশি জানি এবং আমি তাদের চেয়ে অনেক অধিক তাঁকে ভয় করি। [৭৩০১; মুসলিম ৪৩/৩৫, হাদীস ২৩৫৬, আহমাদ ২৫৫৩৮] আঃপ্রঃ- ৫৬৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৮)
৬১০২
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ পর্দার অন্তরালের কুমারীদের চেয়েও নাবী (সাঃআঃ) অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি তাহাঁর কাছে অপছন্দনীয় কিছু দেখিতেন, তখন আমরা তাহাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম।(আঃপ্রঃ- ৫৬৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৯)
৭৮/৭৩. অধ্যায়ঃ কেউ তার মুসলিম ভাইকে অকারণে কাফির বললে সে নিজেই তা যা সে বলেছে।
৬১০৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে হে কাফির বলে ডাকে, তখন তা তাদের দুজনের কোন একজনের উপর বর্তায়।(আঃপ্রঃ- ৫৬৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬০)
৬১০৪
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ তার ভাইকে কাফির বললে, তাদের দুজনের একজনের উপর তা বর্তাবে।[মুসলিম১/২৬, হাদীস ৬০, আহমাদ ৫২৫৯] আঃপ্রঃ- ৫৬৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬১)
৬১০৫
সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের মিথ্যা শপথ করে, সে যা বলে তা-ই হইবে। আর যে বস্তু দিয়ে কেউ আত্মহত্যা করিবে, জাহান্নামের আগুনে তাকে সেই বন্তু দিয়েই শাস্তি দেয়া হইবে। ঈমানদারকে লানাত করা, তাকে হত্যা করার সমতুল্য। আর কেউ কোন ঈমানদারকে কুফ্রীর অপবাদ দিলে, তাও তাকে হত্যা করার সমতুল্য হইবে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬২)
৭৮/৭৪. অধ্যায়ঃ কেউ যদি কাউকে না জেনে কিংবা নিজ ধারণা অনুযায়ী (কাফির বা মুনাফিক) সম্বোধন করে, তাকে কাফির বলা যাবে না।
উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হাতিব ইবনু বাল্তাআ (রাদি.) -কে বলেছিলেন, ইনি মুনাফিক। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তা তুমি কী করে জানলে? অথচ আল্লাহ বাদর যুদ্ধে যোগদানকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিলাম।
৬১০৬
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুআয ইবনু জাবাল নাবী সাঃআঃ -এর সাথে সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর আবার তিনি নিজ কাওমের নিকট এসে তাদের নিয়ে সালাত আদায় করিতেন। একবার তিনি তাদের নিয়ে সালাতে সুরা আল-বাক্বারাহ পড়লেন। তখন এক ব্যক্তি সালাত সংক্ষেপ করিতে চাইল। কাজেই সে আলাদা হয়ে) সংক্ষেপে সালাত আদায় করলো। এ খবর মুআয -এর কাছ পৌঁছলে তিনি বললেনঃ সে মুনাফিক। লোকটির কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে সে নাবী সাঃআঃ -এর নিকট এসে বললঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এমন এক কাওমের লোক, যারা নিজের হাতে কাজ করি, আর নিজের উট দিয়ে সেচের কাজ করি। মুআয গত রাতে সুরা আল-বাকারাহ দিয়ে সালাত আদায় করিতে শুরু করিলেন, তখন আমি সংক্ষেপে সালাত আদায় করে নিলাম। এতে মুআয বলিলেন যে, আমি মুনাফিক। তখন নাবী সাঃআঃ বললেনঃ হে মুআয! তুমি কি লোকেদের) দ্বীনের ব্যাপারে অনাগ্রহী করিতে চাও? এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। পরে তিনি তাকে বললেনঃ وَالشَّمْسِوَضُحَاهَا)এবং سَبِّحِاسْمَرَبِّكَالأَعْلٰى) তুমি এবং এর মত ছোট সুরা পড়বে। [৭০০] আঃপ্রঃ- ৫৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৩)
৬১০৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি কসম করে এবং লাত্ ও উয্যার কসম করে, তবে সে যেন لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُবলে। আর যদি কেউ তার সঙ্গীকে বলে, এসো আমরা জুয়া খেলি, তবে সে যেন সদাকাহ করে। [৪৮৬০] আঃপ্রঃ- ৫৬৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৪)
৬১০৮
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বর্নিত যে, তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) -কে একদিন আরোহীর মাঝে এমন সময় পেলেন, যখন তিনি তাহাঁর পিতার নামে শপথ করছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উচ্চৈঃস্বরে তাদের বললেনঃ জেনে রাখ! আল্লাহ তোমাদের নিজের পিতার নামে শপথ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। যদি কাউকে শপথ করিতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামেই শপথ করে, তা না হলে সে যেন চুপ থাকে। [২৬৭৮; মুসলিম ১/২৭, হাদীস ১৬৪৬, আহমাদ ৬২৯৬] আঃপ্রঃ- ৫৬৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৫)
৭৮/৭৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বিধি-নিষেধের ব্যাপারে রাগ করা ও কঠোরতা অবলম্বন করা জায়িয।
আল্লাহ বলেছেনঃ কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর। (সুরা আত-তাওবাহ ৯:৭৩)
৬১০৯
আয়েশা (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখান পর্দা ঝুলানো ছিল। যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নাবী (সাঃআঃ) -এর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) লোকেদের মধ্যে বললেনঃ কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হইবে ঐসব লোকের যারা এ সব ছবি অঙ্কণ করে। (আঃপ্রঃ- ৫৬৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৬)
৬১১০
আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললেনঃ অমুক ব্যক্তি সলাত দীর্ঘ করে। যে কারণে আমি ফাজ্রের সলাত থেকে পিছনে থাকি। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে কোন ওয়াজের মধ্যে সেদিনের চেয়ে অধিক রাগান্বিত হইতে দেখিনি। রাবী বলেন, এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘৃণা সৃষ্টিকারী আছে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ লোকেদের নিয়ে সলাত আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ এবং কাজের লোক থাকে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৭)
৬১১১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) সলাত আদায় করিলেন। তখন তিনি মাসজিদের কিবলার দিকে নাকের শ্লেষ্মা দেখিতে পান। এরপর তিনি তা নিজ হাতে খুঁচিয়ে সাফ করিলেন এবং রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তোমাদের কেউ যতক্ষণ সলাতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার চেহারার সম্মুখে থাকেন। কাজেই সলাতরত অবস্থায় কখনো সামনের দিকে নাকের শ্লেষ্মা ফেলবে না।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৮)
৬১১২
যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে পথে পড়ে থাকা বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বললেনঃ তুমি তা এক বছর পর্যন্ত প্রচার করিতে থাকো, তারপর তার বাঁধন থলে চিনে রাখ। তারপর তা তুমি ব্যয় কর। এরপর যদি এর মালিক এসে যায়, তবে তুমি তাকে ফিরিয়ে দাও। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! হারিয়ে যাওয়া ছাগলের কী হুকুম? তিনি বললেনঃ সেটা তুমি নিয়ে যাও। কারণ এটা হয়ত তোমার জন্য অথবা তোমার কোন ভাই এর অথবা চিতা বাঘের। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আর হারানো উটের কী হুকুম? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাগান্বিত হলেন। এমন কি তাহাঁর গাল দুটি লাল হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ তাতে তোমার কী? তার সাথেই তার পা ও পানি রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সেটি তার মালিকের নাগাল পেয়ে যাবে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৬৯)
৬১১৩
যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একবার নাবী (সাঃআঃ) খেজুরের পাতা দিয়ে, অথবা চাটাই দিয়ে একটি ছোট হুজরা তৈরী করিলেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ঐ হুজরায় (রাতে নফল) সলাত আদায় করিতে লাগলেন। তখন একদল লোক তাহাঁর খোঁজে এসে তাহাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করিতে লাগল। পরবর্তী রাতেও লোকজন সেখানে এসে হাযির হল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) দেরী করিলেন এবং তাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন না। তারা উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ দিতে লাগল এবং ঘরের দরজায় কংকর নিক্ষেপ করিল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ তোমরা যা করছ তাতে আমি ভয় করছি যে, এটি না তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হয়। সুতরাং তোমাদের উচিত যে, তোমরা ঘরেই সলাত আদায় করিবে। কারণ ফরয ছাড়া অন্য সলাত নিজ নিজ ঘরে পড়াই উত্তম।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭০)
৭৮/৭৬. অধ্যায়ঃ ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকা।
মহান আল্লাহর বাণীঃ যারা বড় বড় পাপ এবং অশ্লীল কার্যকলাপ হইতে বেঁচে চলে এবং রাগান্বিত হয়েও ক্ষমা করে।– (সুরা আশ্-শূরা ৪২/৩৭)। (এবং আল্লাহর বাণী): যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন- (সুরা আল ইমরান ৩/১৩৪)।
৬১১৪
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।[মুসলিম৪৫/৩০, হাদীস ২৬০৯, আহমাদ ৭২২৩] আঃপ্রঃ- ৫৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭১)
৬১১৫
সুলাইমান ইবনু সুরদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার নাবী (সাঃআঃ) -এর সম্মুখেই দুব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাহাঁর কাছেই উপবিষ্ট ছিলাম, তাদের একজন অপর জনকে এত রেগে গিয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহারা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তবে তার রাগ দূর হয়ে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি আউযু বিল্লাহি মিনাশ্শাইত্বনির রাজীম পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলিল, নাবী (সাঃআঃ) কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বললঃ আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭২)
৬১১৬
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট বললঃ আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেনঃ তুমি রাগ করো না।। লোকটি কয়েকবার তা বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) প্রত্যেক বারেই বললেনঃ রাগ করো না।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৩)
৭৮/৭৭. অধ্যায়ঃ লজ্জাশীলতা
৬১১৭
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কাব (রাদি.) বললেনঃ হিকমাতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন কোন লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন কোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ইমরান (রাদি.) বললেনঃ আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তার স্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।(মুসলিম১/১২, হাদীস ৩৭, আহমাদ ২০০১৯] আঃপ্রঃ- ৫৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৪)
৬১১৮
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তির পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় লোকটি (তার ভাইকে) লজ্জা সম্পর্কে ভর্ৎসনা করছিল এবং বলছিল যে, তুমি অধিক লজ্জা করছ, এমনকি সে যেন এ কথাও বলছিল যে, এটা তোমাকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও। কারণ নিশ্চয়ই লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৫)
৬১১৯
আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) নিজ গৃহে অবস্থানকারিনী কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৬)
৭৮/৭৮. অধ্যায়ঃ তোমার যদি লজ্জা না থাকে, তাহলে তুমি যা ইচ্ছে কর।
৬১২০
আবু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পূর্ববর্তী নাবীদের নাসীহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না কর, তবে যা ইচ্ছা তাই কর।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৭)
৭৮/৭৯. অধ্যায়ঃ দ্বীনের জ্ঞানার্জন করার জন্য সত্য বলিতে কোন লজ্জা নেই।
৬১২১
উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদিন উম্মু সুলায়ম (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো সত্য বলার ক্ষেত্রে লজ্জা করিতে নির্দেশ দেন না। সুতরাং মেয়ে লোকের স্বপ্নদোষ হলে কি তার উপরও গোসল করা ফরয? তিনি বলিলেন, হাঁ, যদি সে পানি, বীর্য দেখিতে পায়।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৮)
৬১২২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিনের দৃষ্টান্ত হলো এমন একটি সবুজ গাছ, যার পাতা ঝরে না এবং একটির সঙ্গে আর একটি ঘেষা লাগে না। তখন কেউ কেউ বললঃ এটি অমুক গাছ, কেউ বলিল অমুক গাছ। তখন আমি বলিতে চেয়েছিলাম যে, এটি খেজুর গাছ। তবে যেহেতু আমি অল্প বয়স্ক তরুন ছিলাম, তাই বলিতে লজ্জাবোধ করলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) নিজেই বলে দিলেন যে, সেটি খেজুর গাছ। [৬১]
আর শুবাহ (রাদি.) থেকে ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, তারপর আমি উমার (রাদি.) -এর নিকট এ সম্পর্কে জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ যদি তুমি কথাটি বলে দিতে, তবে তা আমার কাছে এত এত অধিক খুশির কারণ হতো।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৭৯)
৬১২৩
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে এলো এবং তাহাঁর সামনে নিজেকে পেশ করে বললঃ আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? (খবরটি জানার) পরে আনাস (রাদি.) -এর মেয়ে বলেছিলঃ এ মহিলার লজ্জা কত কম! আনাস (রাদি.) বললেনঃ সে তোমার চেয়ে উত্তম। সে তো রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর খিদমতে নিজেকে পেশ করেছে।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮০)
৭৮/৮০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর বানীঃ তোমরা নম্র হও, কঠোর হয়ো না।
নাবী (সাঃআঃ) মানুষের জন্য সংক্ষিপ্ততা ও সহজতা পছন্দ করিতেন।
৬১২৪
আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে আর মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) -কে (ইয়ামানে) পাঠান, তখন তাদের ওয়াসীয়াত করেনঃ তোমরা (লোকের সাথে) নম্র ব্যবহার করিবে, কঠোর হইবে না। শুভ সংবাদ দেবে, বিদ্বেষ সৃষ্টি করিবে না। আর তোমরা দুজনের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখবে। তখন আবু মূসা (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা এমন এক দেশে যাচ্ছি, যেখানে মধু হইতে শরাব প্রস্তুত হয়। একে বিতউ বলা হয়। আর যব থেকেও শরাব প্রস্তুত হয়, তাকে বলা হয় মিয্র। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ প্রত্যেক নেশার বস্তুই হারাম।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮২)
৬১২৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা নম্র হও এবং কঠোর হয়ো না। শান্তি দান কর, বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮১)
৬১২৬
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে যখন কোন দুটি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হতো, তখন তিনি দুটির মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহন করিতেন যদি তা গুনাহর কাজ না হত। আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তা হলে তিনি তাত্থেকে সবার চেয়ে দূরে সরে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহন করিতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৩)
৬১২৭
আযরাক ইবনু ক্বায়স (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা আহওয়ায নামক স্থানে একটা খালের ধারে অবস্থান করছিলাম। খালটির পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। এমন সময় আবু বারযা আসলামী (রাদি.) একটি ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে সেখানে এলেন। তিনি ঘোড়াটিকে ছেড়ে দিয়ে সলাতে দাঁড়ালেন। তখন ঘোড়াটা (দূরে) চলে গেল দেখে তিনি সলাত ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ার পিছু নিলেন এবং ঘোড়াটি পেয়ে ধরে আনলেন। তারপর সলাত পূর্ণ করিলেন। এ সময় আমাদের মধ্যে একজন বিরূপ সমালোচক ছিলেন। তিনি তা দেখে বললেনঃ এই বৃদ্ধের প্রতি লক্ষ্য কর, সে ঘোড়ার কারণে সলাত ছেড়ে দিল। তখন আবু বারযাহ (রাদি.) এগিয়ে এসে বললেনঃ যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে হারিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে ভর্ৎসনা করেননি। তিনি আরও বললেনঃ আমার বাড়ী অনেক দূরে। সুতরাং যদি আমি সলাত আদায় করতাম এবং ঘোড়াটিকে এভাবেই ছেড়ে দিতাম, তাহলে আমি রাতে নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারতাম না। তিনি আরও উল্লেখ করিলেন যে, নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গ লাভ করিয়াছেন এবং তাহাঁর নম্র ব্যবহার দেখেছেন।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৪)
৬১২৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার এক বেদুঈন মাসজিদে প্রস্রাব করে দিলো। তখন লোকজন তাকে শাসন করার জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি অথবা একমাত্র পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে নম্র ব্যবহারকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি।(আঃপ্রঃ- ৫৬৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৫)
৭৮/৮১. অধ্যায়ঃ মানুষের সাথে হাসিমুখে মেলামেশা করা।
ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলেন, মানুষের সাথে এমনভাবে মেলামেশা করিবে, যেন তাতে তোমার দীনে আঘাত না লাগে। আর পরিবারের সঙ্গে হাসি তামাশা করা।
৬১২৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের সাথে মেলামেশা করিতেন, এমনকি তিনি আমার এক ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আবু উমায়র! কেমন আছে তোমার নুগায়র? (আঃপ্রঃ- ৫৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৬)
৬১৩০
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত।[মুসলিম৪৪/১৩, হাদীস ২৪৪০, আহমাদ ২৬০২০] (আঃপ্রঃ- ৫৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৭)
৭৮/৮২. অধ্যায়ঃ মানুষের সঙ্গে শিষ্টাচার করা।
আবু দারদা (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে, আমরা কোন কোন কাওমের সঙ্গে বাহ্যত হাসি-খুশি মেলামেশা করি। কিন্তু আমাদের অন্তরগুলো তাদের উপর লানাত বর্ষণ করে।
৬১৩১
আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান। অথবা বললেনঃ সে তার গোত্রের ঘৃণ্যতম ভাই। যখন সে প্রবেশ করিল, তখন তিনি তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সাথে নম্রভাবে কথা বলিলেন। তিনি বললেনঃ হে আয়েশাহ! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অশালীন ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংসর্গ বর্জন করে চলে। (আঃপ্রঃ- ৫৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৮)
৬১৩২
আবদুল্লাহ ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, একবার নাবী (সাঃআঃ) -কে কয়েকটি রেশমের তৈরী (সোনার বোতাম লাগান) কাবা হাদিয়া দেয়া হলো। তিনি এগুলো সহাবীদের মধ্যে বেঁটে দিলেন এবং তা থেকে একটি মাখ্রামাহ (রাদি.) -এর জন্য আলাদা করে রাখলেন। পরে যখন তিনি এলেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি এটি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। আইয়ূব নিজের কাপড়ের দিকে ইশারা করিলেন, তিনি যেন তাহাঁর কাপড় মাখ্রামাহকে দেখাচ্ছিলেন। মাখ্রামাহ (রাদি.) -এর মেজাজের মধ্যে কিছু (অসন্তুষ্টির ভাব) ছিল।(আঃপ্রঃ- ৫৬৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৮৯)
৭৮/৮৩ অধ্যায়ঃ মুমিন এক গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না।
মুআবিয়া (রাদি.) বলেছেনঃ অভিজ্ঞতা ব্যতীত সহনশীলতা সম্ভব নয়।
৬১৩৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রকৃত মুমিন একই গর্ত থেকে দুবার দংশিত হয় না। [মুসলিম৫৩/১২, হাদীস ২৯৯৮, আহমাদ ৮৯৩৭] আঃপ্রঃ- ৫৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৯০)
Leave a Reply