ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘটনা এবং যুল-কারনাইন সম্পর্কে বর্ণনা

ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘটনা এবং যুল-কারনাইন সম্পর্কে বর্ণনা

ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘটনা এবং যুল-কারনাইন সম্পর্কে বর্ণনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ ৭=১টি

৬০/৭. অধ্যায়ঃ ইয়াজুজ ও মাজুজের ঘটনা

মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইয়াজূজ মাজূজ পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারী। (কাহফঃ ৯৪)

অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে নাবী‎) তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে …..।

আয়াতে —— অর্থ চলাচলের পথ ও রাস্তা। তোমরা আমার নিকট লোহার খন্ড নিয়ে আস-(কাহফ ৮৩-৯৬)। এখানে —— শব্দটি বহুবচন। একবচনে —— অর্থ খন্ড। অবশেষে মাঝের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন লোহার স্তূপ দুপর্বতের সমান হল- (কাহাফ ৯৬)। তখন তিনি লোকদেরকে বলিলেন, এখন তাতে ফুঁক দিতে থাক। এ আয়াতে ——– শব্দের অর্থ ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী দুটি পর্বতকে বুঝানো হয়েছে। আর ——– এর অর্থ দুটি পাহাড়। —— অর্থ পারিশ্রমিক। যুল-কারনাইন বলিল, তোমরা হাপরে ফুঁক দিতে থাক। যখন তা আগুনের মত গরম হল, তখন তিনি বলিলেন, তোমরা গলিত তামা নিয়ে আস, আমি তা এর উপর ঢেলে দেই -(কাহাফ ৯৬)। —— অর্থ সীসা। আবার লৌহ গলিত পদার্থকেও বলা হয় এবং তামাকেও বলা হয়। আর ইবনু আব্বাস (রাদি.) এর অর্থ তাম্রগলিত পদার্থ বলেছেন। (আল্লাহর বাণী) অতঃপর তারা (ইয়াজুজ ও মাজুজ) এ প্রাচীর অতিক্রম করিতে পারল না- (কাহফ ৯৭)। অর্থাৎ তারা এর উপরে উঠতে সক্ষম হল না। ——– শব্দটি ——– নিকট হইতে ———— আনা হয়েছে। একে ———— যবরসহ পড়া হয়ে থাকে। আর কেউ কেউ একে —————— রূপে পড়েন। (আল্লাহর বাণী) তারা তা ছিদ্রও করিতে পারল না। তিনি বলিলেন, এটা আমার রবের অনুগ্রহ। যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হইবে তখন তিনি এটিকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিবেন- (কাহফ ৯৭-৯৮)। —– অর্থ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিবেন। ———— বলে যে উটের কুঁজ নেই। ————- যমীনের সেই সমতল উপরিভাগকে বলা হয় যা শুকিয়ে যায় এবং উঁচু নিচু না থাকে। (আল্লাহর বাণী) আর আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য, সে দিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব, এ অবস্থায় যে, একদল অপর দলের উপর তরঙ্গের মত পতিত হইবে- (কাহফ ৯৯)। (আল্লাহর বাণী) এমন কি যখন ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্ত করা হইবে এবং তারা প্রতি উচ্চ ভূমি হইতে ছুটে আসবে- (আম্বিয়া ৯৬)। ক্বাতাদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ———- অতি টিলা। এক সাহাবী নাবী‎ (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমি প্রাচীরটিকে কারুকার্য খচিত চাদরের মত দেখেছি। নাবী‎ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তা ঠিকই দেখেছ।

৩৩৪৬. যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার নাবী‎ (সাঃআঃ) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাহাঁর নিকট আসলেন এবং বলিতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাহাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির আগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাদি.) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।

৩৩৪৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, ইয়াজূজ ও মাজূজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছে। এই বলে, তিনি তাহাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতির মত করে দেখালেন।

৩৩৪৮. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, মহান আল্লাহ ডাকবেন, হে আদম (আঃ)! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হইতেই। তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদেরকে বের করে দাও। আদম (আঃ) বলবেন, জাহান্নামী কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখাবে নেশাগ্রস্তের মত যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন- (হাজ্জঃ ২)। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বলিলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন কর। কেননা তোমাদের মধ্যে হইতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হইবে। অতঃপর তিনি বলিলেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাহাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হইবে। [আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন] আমরা এ সংবাদ শুনে আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বলিলেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হইবে। এ কথা শুনে আমরা আবারও আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম।

Comments

Leave a Reply