ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা মাসায়েল
ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা মাসায়েল >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
কিতাবঃ আল হিদায়া, পঞ্চম অনুচ্ছেদ – ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা
কুফার অধিবাসী কোন লোক যদি বনু আমির এর উদ্যানে প্রবেশ করে এবং উমরার ইহরামে বাধে অতঃপর যাতে ইরক এ ফিরে গিয়ে তালবিয়া পড়ে, তাহলে (ইহরাম ছাড়া) মীকাত অতিক্রম করার দম রহিত হয়ে যাবে। আর যদি ফিরে আসে কিন্তু তালবিয়া না পড়ে এবং মক্কায় প্রবেশ করে উমরার তাওয়াফ করে ফেলে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। এ হল ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মত।
সাহেবাইন বলেন, যদি ইহরাম অবস্থায় (মীকাতে) ফিরে আসে, তাহলে তালবিয়া পাঠ করুক কিংবা তালবিয়া পাঠ না করুক, তার উপর কোন দম ওয়াজিব হবে না। ( হজ্জের মাসালা মাসায়েল )
ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, তালবিয়া পাঠ করুক কিংবা না করুক দম রহিত হবে না। কেননা ফিরে আসার কারণে মীকাত থেকে ইহরাম না করার অপরাধ রহিত হবে না। এটা (সূর্যাস্তের পূর্বে) আরাফা থেকে বের হয়ে সূর্যাস্তের পর আবার ফিরে আসার ন্যায় হলো।
আমাদের দলিল এই যে, সে তো ছেড়ে দেওয়া আমলটি যথাসময়ে পূরণ করে নিয়েছে। আর যথা সময় হলো, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং দম রহিত হয়ে যাবে।
আরাফা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা ছেড়ে দেওয়া আমলটি পূরণ করা হয়নি। যেমন পূর্বে (জিনায়ত অধ্যায়ে) বলা হইয়াছে। তবে সাহেবাইনের মতে ক্ষতিপূরণ হলো মুহরিম অবস্থায় ফিরে আসা। কেননা এভাবে সে মীকাতের হক প্রকাশ করেছে, যেমন, যদি সে ইহরাম বেধে নীরব অবস্থায় মীকাত অতিক্রম করে।
ইমাম আবূ হানীফা(রঃআঃ) এর মতে (ক্ষতিপূরণ হবে) ইহরাম অবস্থায় তালবিয়া পাঠসহ ফিরে আসার মাধ্যমে। কেননা ইহরামের ক্ষেত্রে আযীমাত হলো আপন বাড়ি থেকে ইহরাম বাধা। যখন সে মীকাত পর্যন্ত ইহরামকে বিলম্বিত করার মাধ্যমে রখছাত গ্রহণ করলো, তখন তার অবশ্য কর্তব্য হবে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে মীকাতের হক আদায় করা। আর ক্ষতিপূরণ হলো তালবিয়া পাঠ অবস্থায় ফিরে আসার মাধ্যমে।
মীকাত অতিক্রম করার পরে উমরার পরিবর্তে যদি হজ্জের ইহরাম বেধে থাকে তাহলে উপরোল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই একই রকম মতভিন্নতা রহিয়াছে।
আর যদি মীকাতের দিকে ফিরে আসে তাওয়াফ শুরু ও হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করার পর, তবে সর্বসম্মতিক্রমে তার উপর থেকে দম রহিত হবে না।
যদি ইহরাম বাধার পূর্বে ঐ (মীকাতে) ফিরে আসে, তাহলে সকলের মতেই দম রহিত হয়ে যাবে। এই যে বিধান আমরা উল্লেখ করলাম, তা ঐ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যখন সে হজ্জ উমরার নিয়্যত করে থাকে।
যদি নিজস্ব প্রয়োজনে বনু আমিরের উদ্যানে (অর্থাত্ মীকাতের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করে থাকে, তাহলে (উক্ত এলাকায় বাসকারীর ন্যায় সেও) ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করিতে পারবে এবং তার মীকাত হবে উক্ত উদ্যান। অর্থাত্ সে এবং উক্ত স্থানের অধিবাসী সমপর্যায়ের হবে। কেননা উক্ত উদ্যানে (অর্থাত্ মীকাতের অভ্যন্তরস্থ এলাকা) এর তাযীম ওয়াজিব নয়। সুতরাং উক্ত এলাকার উদ্দেশ্য আগমনের কারণে তার উপর ইহরাম ওয়াজিব হবে না। আর যখন সে উক্ত এলাকার উদ্দেশ্য আগমনের কারণে তার উপর ইহরাম ওয়াজিব হবে না। আর যখন সে উক্ত এলাকায় প্রবেশ করে ফেললো, তখন উক্ত এলাকার অধিবাসীদের মতই হয়ে গেলো। আর যেহেতু স্থানীয় ব্যক্তির পক্ষে প্রয়োজনের জন্য ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশের অনুমতি রহিয়াছে, সেহেতু তার জন্যও অনুমতি থাকবে।
ইমাম মুহাম্মাদ(রঃআঃ) এর বক্তব্য তার মীকাত হলো উদ্যান এর অর্থ হলো মীকাত ও হরমের মধ্যবর্তী সকল হালাল অঞ্চল। ইতোপূর্বে এ আলোচনা এসে গেছে। সুতরাং যে উক্ত এলাকায় প্রবেশ করবে এবং স্থানীয়দের সংগে যুক্ত হয়ে যাবে, তার মীকাত হবে এটি।
এরা উভয়ে যদি হালাল অঞ্চল থেকে ইহরাম বাধে এবং আরাফায় উকুফ করে নেয়, তাহলে তাদের উপর কোন দম আসবে না।
উভয় দ্বারা উক্ত উদ্যান এলাকার বাসিন্দা এবং সেখানে প্রবেশকারী ব্যক্তিকে বুঝান হইয়াছে। কেননা,তারা উভয়েই তাদের মীকাত থেকেই ইহরাম বেধেছে।
যে ব্যক্তি ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করলো অতঃপর সেই বছরেই মীকাতের উদ্দেশ্যে বের হলো এবং হজ্জের ইহরাম বাধল, তার এই ইহরামের (ইতোপূর্বে) বিনা ইহরামে মক্কায় প্রবেশের (প্রতিকার রূপে) যথেষ্ট হবে।
ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, তা যথেষ্ট হবে না। এই কিয়াসের দাবী। নযর বা মান্নাতের কারণে ওয়াজিব হওয়া হজ্জের উপর কিয়াস করে এটা বলা হইয়াছে। সুতরাং এটা পরবর্তী বছরের হজ্জ করার মতো হলো।
আমাদের দলিল এই যে, সে যথা সময়ে ছেড়ে দেয়া আমলটি আদায় করে নিয়েছে। কেননা তার অবশ্য কর্তব্য ছিলো ইহরামের মধ্যমে পবিত্র ভূমির প্রতি তাযীম প্রকাশ করা(আর সে তা করেছে) যেমন শুরুতেই যদি ফজর হজ্জের ইহরাম বেধে আসতো।
বছরান্তে হজ্জ করার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা এটা তার যিম্মায় অনাদায়ী রূপে রয়ে গেছে। সুতরাং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে কৃত স্বতন্ত্র ইহরাম ছাড়া তা আদায় হবে না। যেমন মান্নাতের কারণে ওয়াজিব হওয়া ইতিকাফের বিষয়টি। কেননা উক্ত ইতিকাফ বর্তমান বছরের রমাযানের রোযার সংগে তো আদায় হতে পারে, কিন্তু দ্বিতীয় বছরের রোযার সংগে হবে না। (বরং আলাদা রোযার মাধ্যমে ইতিকাফ আদায় করিতে হবে)।
যে ব্যক্তি মীকাত অতিক্রম করার পর উমরার ইহরাম বাধল আবার (স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে) তা নষ্ট করে দিলো, সে উক্ত উমরা সম্পন্ন করবে এবং পরে কাযা করবে। কেননা ইহরামটি অবশ্য পালনীয় রূপে সংঘটিত হইয়াছে। সুতরাং তা হজ্জ নষ্ট করার মতোই হলো।
তবে বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার কারণে তার উপর কোন দম ওয়াজিব হবে না।
ইমাম যুফার(রঃআঃ) এর মতামতের উপর কিয়াসের আলোকে দম রহিত হবে না। এটা বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রমের পর হজ্জ ফউত হওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে মতভিন্নতার সমতুল্য এবং বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করার পর হজ্জের ইহরাম বেধে হজ্জ নষ্ট করে দেয়া ব্যক্তি সম্পর্কে মতভিন্নতার সমতূল্য।
ইমাম যুফার(রঃআঃ) এই মীকাত অতিক্রমকে অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজের সাথে তুলনা করেন।
আমাদের দলিল এই যে, কাযা করার সময় মীকাত থেকে ইহরাম বাধার মাধ্যমে সে ইহরামের হক আদায় করে দিয়েছে। কেননা কাযার মাধ্যমে তো সে ফউত হওয়া আমলটিরই অনরুপ আদায় করেছে। পক্ষান্তরে অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজতো কাযা করার কারণে অস্তিত্বহীন হয়ে যাচ্ছে না। সুতরাং উভয়ের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেলো।
মক্কী যদি হজ্জের উদ্দেশ্যে হিল এর দিকে বের হয় এবং ইহরাম বাধে আর মক্কায় ফিরে না এসে আরাফায় উকুফ বা অবস্থান করে নেয়, তাহলে তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। কেননা তার মীকাত হলো হরম। আর সে তা বীনা ইহরামে অতিক্রম করেছে।
যদি সে হরমে ফিরে আসে তাহলে বহিরাগত সম্পর্কে যে মতপার্থক্যের কথা আমরা উল্লেখ করেছি, এখানেও সেই মতপার্থক্যের কথা আমরা উল্লেখ করেছি, এখানেও সেই মতপার্থক্য বিদ্যমান থাকবে। তালবিয়া পাঠ করুক কিংবা না করুক।
তামাত্তুকারী যদি তার উমরা থেকে ফারেগ হওয়ার পর হরম থেকে বের হয় এবং ইহরাম বেধে আরাফায় অবস্থান করে, তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। সে যখন মক্কায় প্রবেশ করে উমরার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করলো, তখন সে মক্কীর সমপর্যায়ের হয়ে গেলো। আর মক্কীর ইহরাম হরম থেকে হয়ে থাকে। এর কারণ (ইতোপূর্বে মীকাত পরিচ্ছেদে) আমরা উল্লেখ করেছি। সুতরাং ইহরামকে হরম থেকে বাইরে করার কারণ দম ওয়াজিব হবে।
যদি সে আরাফায় উকুফ করার পূর্বে হরমে ফিরে আসে এবং সেখান থেকে ইহরাম বাধে,ে তাহলে তার উপর কোন দম ওয়াজিব হবে না। বহিরাগতের ক্ষেত্রে পূর্বে যে মতপার্থক্য উল্লেখ করা হইয়াছে, তা এখানেও বিদ্যমান রহিয়াছে।
Leave a Reply