ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ এর মাসআলা – আল হেদায়া কিতাব

ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ এর মাসআলা – আল হেদায়া কিতাব

ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ এর মাসআলা – আল হেদায়া কিতাব >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, পরিচ্ছেদ: ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ

যদি আপন স্ত্রীর গুপ্তাংশের প্রতি কাম দৃষ্টিতে তাকায় এবং বীর্যস্খলিত হয়ে যায় তাহলে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। কেননা হারাম হলো সহবাস করা আর তা এখানে পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটা কাম চিন্তার কারণে বীর্যস্খলিত হওয়ার অনুরূপ হলো।

যদি কামভাবে চুম্বন বা স্পর্শ করে তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হবে।

জামেউস সাগীর কিতাবে বলা হইয়াছে, যদি কামভাবে স্পর্শ করে এবং বীর্যস্খলিত হয়(তবে দম ও্রয়াজিব হবে)। আর মাবসূত কিতাবে রহিয়াছে, বীর্যস্খলিত হওয়া না হওয়ার কোন পার্থক্য নেই। আর অনুরূপ হুকুম লজ্জাস্থানের বাইরে সংগম করার ক্ষেত্রেও। একই হুকুম (অর্থাত্‌ স্খলন হওয়া না হওয়া উভয় অবস্থাতেই দম ওয়াজিব হবে। )

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, এই সকল অবস্থায় বীর্যস্খলন হলে তার ইহরাম ফাসিদ হয়ে যাবে। তিনি এটাকে সাওমের উপর কিয়াস করেছেন।

আমাদের দলিল এই যে, হজ্জ নষ্ট হওয়ার সর্ম্পক হলো সংগমের সংগে। এ কারণেই অন্যাণ্য নিষিদ্ধ কাজের কোনটির কারণেই হজ্জ নষ্ট হয় না। আর এগুলো তো উদ্দিষ্ট সংগম নয়। সুতরাং যা মূল সংগমের সংগে সম্পৃক্ত তা এগুলোর সংগে যুক্ত হবে না। তবে এগুলোতে স্ত্রী থেকে আনন্দ লাভ ও সংগমের অর্থ বিদ্যমান আর তা হজ্জের নিষিদ্ধ বিষয়; এ জন্য দম ওয়াজিব হবে। সাওমের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা সাওমে নিষিদ্ধ বিষয় হলো শাহওয়াত পূর্ণ করা। আর লজ্জাস্থান ছাড়া অন্যত্র সংগমে বীর্যস্খলন ছাড়া তা পূর্ণ হয় না।

যদি কেউ আরাফায় অবস্থানের পূর্বে দুই পথের কোন একটিতে সংগম করে তাহলে তার হজ্জ ফাসিদ হয়ে যাবে এবং একটি বকরী যবাহ করা তার উপর ওয়াজিব আর সে ঐ ব্যক্তির মতোই হজ্জের ক্রিয়াকর্ম করে যাবে, যার হজ্জ নষ্ট হয়নি।

এ বিষয়ে মূল দলিল বর্ণীত হাদীস যে, নাবী করীম(সাঃআঃ) কে ঐ লোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে তার স্ত্রীর সংগে উভয়ে হজ্জের ইহরামে থাকা অবস্থায় সহবাস করেছে। তিনি বললেন, উভয়ে একটি দম দিবে এবং নিজেদের হজ্জের ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাবে। আর আগামী বছর তাদের উপর হজ্জ করা ওয়াজিব। সাহাবায়ে কিরামের এক জামাআতের থেকেও এরূপই বর্ণীত হইয়াছে।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, একটি উট ওয়াজিব হবে ঐ ব্যক্তির উপর কিয়াস করে যে, আরাফায় উকুফের পরে যদি সে সহবাস করে বাদানাহ ওয়াজিব হবে। তার বিপক্ষে দলিল হলো আমাদের বর্ণীত হাদীছের নিঃশর্ততা।

তাহা ছাড়া এ কারণে যে, হজ্জের কাযা যখন ওয়াজিব হইয়াছে- আর তা কল্যাণ পুনঃঅর্জনের জন্যই ওয়াজিব হয়ে থাকে- তখন অপরাধের দিকটি লঘু হয়ে গেল। সুতরাং বকরী যবাহ্‌ করাই যথেষ্ট হবে। উকুফের পরের অবস্থা এর বিপরীত। কেননা, তখন হজ্জের কাযা করা ওয়াজিব হয় না।

ইমাম কুদূরী(রঃআঃ) উভয় পথের সংগমকে অভিন্ন ধরেছেন।

আর আবূ হানীফা(রঃআঃ) থেকে একটি বর্ণনায় রহিয়াছে যে, সম্মুখ পথ ছাড়া হলে সংগমের অপূর্ণতার কারণে ফাসিদ হয়ে যাবে। সুতরাং তার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দুটি বর্ণনা হলো।

আমাদের মতে তাদের নষ্টকৃত হজ্জ কাযা করার সময় স্ত্রীকে দূরে রাখা তার জন্য জরুরী নয়।

ইমাম মালিক(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, তারা যখন থেকে বের হবে তখন থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ইমাম যুফার(রঃআঃ) বলেন, যখন উভয়ে ইহরাম বাধবে (তখন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।)

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, যখন ঐ স্থানে উপনীত হবে, যেখানে সহবাস করেছিল (তখন বিচ্ছিন্ন হবে)।

তার দলী্ল এই যে, (সেই স্থানে পৌছায়) স্বামী-স্ত্রী বিগত হজ্জের সহবাসের কথা স্মরণ করিতে এবং সহবাসে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। সুতরাং উভয়ে বিচ্ছিন্ন থাকবে।

আমাদের দলিল এই যে, উভয়ের মাঝে সংযোগকারী গুণ তথা বিবাহ তাদের  মাঝে বিদ্যমান রহিয়াছে। সুতরাং ইহরামের পূর্বে তাদের বিচ্ছিন্ন থাকার কোন অর্থ নেই। কেননা তখন তো সহবাস করা জাইয রহিয়াছে। ইহরামের পরেও একই কথা। কেননা তারা আলোচনা করবে যে, ক্ষণিক আনন্দের মাশুল হিসাবে কি কঠিন কষ্ট আর ভোগান্তি তাদের হচ্ছে। ফলে স্বভাবঃতই তাদের লজ্জা ও অনুতাপ বৃদ্ধি পাবে এবং তা পরিহার করে চলবে। সুতরাং বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

যে ব্যক্তি উকুফে আরাফার পরে সহবাস করবে তার হজ্জ ফাসিদ হবে না, তবে তার উপর উট কুরবানী ওয়াজিব হবে।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, যদি রামীর পূর্বে সহবাস করে তাহলেও তার হজ্জ নষ্ট হয়ে যাবে।

আমাদের দলিল হল রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃআঃ) এর বাণী- ব্যক্তি আরাফায় উকুফ করল, তার হজ্জ সম্পূর্ণ হয়ে গেল। তবে উট ওয়াজিব ইব্‌ন আব্বাস  (রাঃআঃ) এর ফাতওয়ার কারণে। কিংবা এই কারণে যে, সহবাস হলো উপকার লাভের সর্বোচ্চ পর্যায়। সুতরাং তার ওয়াজিবও হবে গুরুতর।

যদি হলকের পরে সহবাস করে তাহলে তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। কেননা স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে তার ইহরাম বহাল রহিয়াছে; সেলাই করা কাপড় পরিধান করা এবং এই জাতীয় অন্যান্য ব্যাপারে বহাল নেই। সুতরাং অপরাধ অপেক্ষাকৃত লঘু হয়ে গেলো। ফলে বকরীই যথেষ্ট।

যে ব্যক্তি উমরার চার চক্কর তাওয়াফ সম্পন্ন করার পূর্বে সহবাস করবে, তার উমরা ফাসিদ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় সে উমরার ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাবে এবং তা কাযা করবে আর তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব। আর যদি চার বা তার বেশী চক্কর তাওয়াফ করার পর সহবাস করে, তাহলে তার উপর একটি বকরী ওয়াজিব হবে। কিন্তু তার উমরা ফাসিদ হবে না।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, উভয় অবস্থাতেই ফাসিদ হয়ে যাবে এবং হজ্জের উপর কিয়াস করে তার উপর একটি উট ওয়াজিব হবে। কেননা তার মতে হজ্জের ন্যায় উমরাও ফরয। আমাদের দলিল এই যে, উমরা হলো সুন্নাত। সুতরাং এর মর্যাদা হজ্জের চেয়ে নিম্নতর। সুতরাং উভয়ের পার্থক্য প্রকাশ করার  জন্য উমরার ক্ষেত্রে বকরী ওয়াজিব হবে এবং হজ্জের ক্ষেত্রে উট ওয়াজিব হবে।

যে ব্যক্তি ইহরামের কথা ভুলে গিয়ে সহবাস করে, তার হুকুম ঐ ব্যক্তির মতই যে, ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করল।

ইমাম শাফিঈ(রঃআঃ) বলেন, ভুলে গিয়ে সহবাস করা হজ্জকে নষ্ট করে না। একই রকম মতভিন্নতা রহিয়াছে ঘুমন্ত ও বল প্রয়োগকৃত স্ত্রীলোকের সংগে সহবাসের ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, এ সকল উপসর্গের কারণে নিষেধাজ্ঞা বিলুপ্ত হয়ে যায়, সুতরাং তার এ কর্মটি অপরাধ বলে গণ্য নয়।

আমাদের দলিল এই যে, হজ্জ নষ্ট হওয়ার কারণ ইহরাম অবস্থায় বিশেষ উপকার ভোগ করা। আর তা এ সকল উপসর্গের কারণে বিলুপ্ত হয় না।

আর হজ্জ সাওমের সমপর্যায়ের নয়। কেননা ইহরামের অবস্থাই হলো স্মরণ প্রদানকারী, যেমন নামাজের অবস্থা। পক্ষান্তরে সিয়ামের বিষয়টি এর বিপরীত। আল্লাহ্‌ই অধিক অবগত।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply