ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ । মুহরিমের ও তার বিধান

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ । মুহরিমের ও তার বিধান

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ । মুহরিমের ও তার বিধান >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৮, হজ্জ, অধ্যায়ঃ (১-২৭)=২৭টি

২৮/১. অধ্যায়ঃ আর মহান আল্লাহর বাণীঃ
২৮/২. অধ্যায়ঃ মুহরিম নয় এমন ব্যক্তি যদি শিকার করে মুহরিমকে উপঢৌকন দেয় তাহলে মুহরিম তা খেতে পারবে।
২৮/৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তিগণ শিকার জন্তু দেখে হাসাহাসি করার ফলে ইহরামবিহীন ব্যক্তিরা যদি তা বুঝে ফেলে।
২৮/৪. অধ্যায়ঃ শিকার্য জন্তু হত্যা করার জন্য মুহরিম কোন গাইর মুহরিম ব্যক্তিকে সহযোগিতা করিবে না।
২৮/৫. অধ্যায়ঃ গাইর মুহরিমের শিকারের জন্য মুহরিম ব্যক্তি শিকার্য জন্তুর দিকে ইঙ্গিত করিবে না।
২৮/৬. অধ্যায়ঃ মুহরিমকে জীবিত বন্য গাধা হাদিয়া দেয়া হলে সে তা গ্রহণ করিবে না।
২৮/৭. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি যে যে প্রাণী হত্যা করিতে পারে।
২৮/৮. অধ্যায়ঃ হারমের অন্তর্গত কোন গাছ কাটা যাবে না।
২৮/৯. অধ্যায়ঃ হারামের (অভ্যন্তরে) কোন শিকার্য জন্তুকে তাড়ানো যাবে না।
২৮/১০. অধ্যায়ঃ মক্কাতে লড়াই করা হালাল নয়।
২৮/১১. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য সিঙ্গা (রক্তমোক্ষম) লাগানো।
২৮/১২. অধ্যায়ঃ ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
২৮/১৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম পুরুষ ও মুহরিম নারীর জন্য নিষিদ্ধ সুগন্ধিদ্রব্য।
২৮/১৪. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির গোসল করা ।
২৮/১৫. অধ্যায়ঃ জুতা না থাকলে মুহরিম ব্যক্তির মোজা পরিধান করা।
২৮/১৬. অধ্যায়ঃ লুঙ্গি না পেলে (মুহরিম ব্যক্তি) ইযার বা পায়জামা পরবে।
২৮/১৭. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির অস্ত্র ধারণ করা ।
২৮/১৮. অধ্যায়ঃ হারাম ও মক্কায় ইহরাম ছাড়া প্রবেশ করা ।
১৮/১৯. অধ্যায়ঃ অজ্ঞাতাবশতঃ যদি কেউ জামা পরিধান করে ইহরাম বাঁধে ।
২৮/২০. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির আরাফাতে মৃত্যু হলে তাহাঁর পক্ষ হইতে হজ্জের বাকি রুকনগুলো আদায় করার জন্য নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ প্রদান করেন নি
২৮/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিমের মৃত্যু হলে তার বিধান ।
২৮/২২. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ বা মানৎ আদায় করা এবং মহিলার পক্ষ হইতে পুরুষ হজ্জ আদায় করিতে পারে ।
২৮/২৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সাওয়ারীতে বসে থাকতে অক্ষম, তার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করা ।
২৮/২৪. অধ্যায়ঃ পুরুষের পক্ষ হইতে নারীর হজ্জ আদায় করা।
২৮/২৫. অধ্যায়ঃ বালকদের হজ্জ পালন করা ।
২৮/২৬. অধ্যায়ঃ মহিলাদের হজ্জ ।
২৮/২৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পদব্রজে কাবা যিয়ারত করার নযর মানে ।

২৮/১. অধ্যায়ঃ আর মহান আল্লাহর বাণীঃ

“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ইহরামে থাকা অবস্থায় শিকারকে হত্যা করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ ইচ্ছা করে শিকার হত্যা করলে তার উপর বিনিময় বর্তাবে, যা সমান হইবে হত্যাকৃত জন্তুর, তোমাদের মধ্যের দুজন ন্যায়বান লোক এর ফায়সালা করিবে; সে জন্তুটি হাদিয়া হিসেবে কাবায় পৌছাতে হইবে। অথবা তার সমপরিমাণ রোযা রাখবে; যাতে সে আস্বাদন করে তার কৃতকর্মের প্রতিফল। যা গত হয়েছে আল্লাহ তা মাফ করিয়াছেন। তবে কেউ তা পুনরায় করলে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেন। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ধরা এবং তা খাওয়া, তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য। আর তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে স্থলচর শিকার ধরা, যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাকবে। ভয় কর আল্লাহকে যাঁর কাছে তোমাদের একত্র করা হইবে।” (আল-মায়িদাহ্ঃ ৯৫-৯৬)

২৮/২. অধ্যায়ঃ মুহরিম নয় এমন ব্যক্তি যদি শিকার করে মুহরিমকে উপঢৌকন দেয় তাহলে মুহরিম তা খেতে পারবে।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) ও আনাস (রাদি.) শিকার ব্যতীত অন্য কোন প্রাণী যবেহ করাতে মুহরিমের কোন অসুবিধা আছে বলে মনে করেন না। যেমন উট, বকরী, গরু, মুরগী ও ঘোড়া। বলা হয় (আরবী) অর্থ (আরবী) (অনুরূপ) এবং (আরবী) অর্থ (আরবী) (সমান) (আরবী) এর অর্থে (আরবী) (কল্যাণ) এবং (আরবী) এর অর্থ হল (আরবী) (সমকক্ষ দাঁড় করানো)

১৮২১. আবদুল্লাহ ইবনু আবু কাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা হুদাইবিয়ার বছর (শত্রুদের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য) বের হলেন। নাবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণ ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। নাবী (সাঃআঃ) কে বলা হল, একটি শত্রুদল তাহাঁর সাথে যুদ্ধ করিতে চায়। নাবী (সাঃআঃ) সামনে অগ্রসর হইতে লাগলেন। এ সময় আমি তাহাঁর সাহাবীদের সাথে ছিলাম। হঠাৎ দেখি যে, তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি তাকাতেই একটি বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। অমনিই আমি বর্শা দিয়ে আক্রমণ করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগিতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগিতা করিতে অস্বীকার করিল। এরপর আমরা সকলেই ঐ বন্য গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী (সাঃআঃ) হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশঙ্কা করলাম। তাই নাবী (সাঃআঃ) এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখনো আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝ রাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী (সাঃআঃ) কে কোথায় রেখে এসেছ? সে বলিল, তাহিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুকয়া নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে) আছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাহাবীগণ আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করিয়াছেন। তাঁরা আপনার হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। অতঃপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তার বাকী অংশটুকু আমার নিকট রয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) কওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তাঁরা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

২৮/৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তিগণ শিকার জন্তু দেখে হাসাহাসি করার ফলে ইহরামবিহীন ব্যক্তিরা যদি তা বুঝে ফেলে।

১৮২২. আবু কাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার বছর আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সাথে যাত্রা করলাম। তাহাঁর সকল সাহাবীই ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। এরপর আমাদেরকে গায়কা নামক স্থানে শত্রুর উপস্থিতি সম্পর্কে খবর দেয়া হলে আমরা শত্রুর অভিমুখে রওয়ানা হলাম। আমার সঙ্গী সাহাবীগণ একটি বন্য গাধা দেখিতে পেয়ে একে অন্যের দিকে চেয়ে হাসতে লাগলেন। আমি সেদিকে তাকাতেই তাকে দেখে ফেললাম। সাথে সাথে আমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বর্শা দিয়ে গাধাটিকে আঘাত করে ঐ জায়গাতেই ফেলে দিলাম। অতঃপর তাঁদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁরা সকলেই সাহায্য করিতে অসম্মতি প্রকাশ করিলেন। তবে আমরা সবাই এর গোশত খেলাম। এরপর গিয়ে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সাথে মিলিত হলাম। (এর পূর্বে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছিলাম। তাই আমি আমার ঘোড়াটি কখনো দ্রুতগতিতে আবার কখনো স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মধ্যরাতে গিয়ে গিফার গোষ্ঠীর এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে কোথায় রেখে এসেছেন? তিনি বলিলেন, আমি তাহিন নামক স্থানে তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুকয়া নামক স্থানে বিশ্রাম করছেন। এরপর আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সাথে মিলিত হলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সাহাবীগণ আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন এবং রহমতের দুআ করিয়াছেন। শত্রুরা আপনার হইতে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এ ভয়ে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। সুতরাং আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। রাসুল (সাঃআঃ) তাই করিলেন। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এর অবশিষ্ট কিছু অংশ এখনও আমাদের নিকট আছে। আল্লাহর রাসুল তাহাঁর সাহাবীদেরকে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তাঁরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায়।

২৮/৪. অধ্যায়ঃ শিকার্য জন্তু হত্যা করার জন্য মুহরিম কোন গাইর মুহরিম ব্যক্তিকে সহযোগিতা করিবে না।

১৮২৩. আবু কাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাদীনাহ হইতে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামক স্থানে আমরা রাসুল (সাঃআঃ) এর সাথে ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদেরকে দেখলাম তাঁরা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। (রাবী বলেন) এ সময় তার চাবুকটি পড়ে গেল। (তিনি আনিয়ে দেয়ার কথা বললে) সকলেই বলিলেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করিতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই তা উঠিয়ে নিলাম এরপর টিলার পিছন দিক হইতে গাধাটির কাছে এসে তা শিকার করে সাহাবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁদের কেউ বলিলেন, খাও, আবার কেউ বলিলেন, খেয়ো না। সুতরাং গাধাটি আমি নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি আমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ খাও, এতো হালাল। সুফইয়ান (রাদি.) বলেন, আমাদের কে আমর ইবনু দীনার বলিলেন, তোমরা সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং অন্যান্যের নিকট গিয়ে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস কর। তিনি আমাদের এখানে আগমন করেছিলেন।

২৮/৫. অধ্যায়ঃ গাইর মুহরিমের শিকারের জন্য মুহরিম ব্যক্তি শিকার্য জন্তুর দিকে ইঙ্গিত করিবে না।

১৮২৪. আবদুল্লাহ ইবনু আবু কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁকে তাহাঁর পিতা বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হাজ্জে যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করিলেন। তাঁদের হইতে একটি দলকে নাবী (সাঃআঃ) অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে আবু কাতাদাহ (রাদি.) ও ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হইবে আমাদের পরস্পর সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবু কাতাদাহ (রাদি.) ইহরাম বাঁধলেন না। পথ চলতে চলতে হঠাৎ তাঁরা কতগুলো বন্য গাধা দেখিতে পেলেন। আবু কাতাদাহ (রাদি.) গাধাগুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী গাধাকে হত্যা করে ফেললেন। এরপর এক স্থানে অবতরণ করে তাঁরা সকলেই এর গোশত খেলেন। অতঃপর বলিলেন, আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার্য জন্তুর গোশত খেতে পারি? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট গোশত উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর নিকট পৌঁছে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা ইহরাম বেঁধেছিলাম কিন্তু আবু কাতাদাহ (রাদি.) ইহরাম বাঁধেননি। এ সময় আমরা কতগুলো বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। আবু কাতাদাহ (রাদি.) এগুলোর উপর আক্রমণ করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেললেন। এক স্থানে অবতরণ করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নিই। এরপর বললাম, আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমণ করিতে তাকে আদেশ বা ইঙ্গিত করেছ? তাঁরা বলিলেন, না, আমরা তা করিনি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তাহলে বাকী গোশত তোমরা খেয়ে নাও।

২৮/৬. অধ্যায়ঃ মুহরিমকে জীবিত বন্য গাধা হাদিয়া দেয়া হলে সে তা গ্রহণ করিবে না।

১৮২৫. সাব ইবনু জাস্‌সামাহ লায়সী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক জায়গায় অবস্থানের সময় তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে একটি বন্য গাধা উপঢৌকন দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর চেহারায় মনোক্ষুণ্ণ ভাব দেখে বললেনঃ ওটা আমি কখনো তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না যদি আমি মুহরিম না হতাম।

২৮/৭. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি যে যে প্রাণী হত্যা করিতে পারে।

১৮২৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী হত্যা করা মুহরিমের জন্য দূষণীয় নয়।

আবদুল্লাহ ইবনু দীনার আবদুল্লাহ ইবনু উমারের বরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

১৮২৭. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর সহধর্মিণীগণের একজন নাবী (সাঃআঃ) হইতে আমার নিকট বলেন যে, মুহরিম ব্যক্তি (নির্দিষ্ট) প্রাণী হত্যা করিতে পারবে।

১৮২৮.আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হাফসা (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী যে হত্যা করিবে তার কোন দোষ নেই। (যেমন) কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর।

১৮২৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রাণী এত ক্ষতিকর যে, এগুলোকে হারামের মধ্যেও হত্যা করা যেতে পারে। (যেমন) কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।

১৮৩০. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মিনাতে পাহাড়ের কোন এক গর্তে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সঙ্গে অবস্থান করছিলাম। এমতাবস্থায় তাহাঁর উপর —- সুরা ওয়াল মুরসালাত অবতীর্ণ হল। তিনি সুরাটি তিলাওয়াত করছিলেন। আর আমি তাহাঁর পবিত্র মুখ হইতে গ্রহণ করছিলাম। তাহাঁর মুখ (তিলাওয়াতের ফলে) সিক্ত ছিল। এমতাবস্থায় আমাদের সম্মুখে একটি সাপ লাফিয়ে পড়ল। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ একে হত্যা কর। আমরা দৌঁড়িয়ে গেলে সাপটি চলে গেল। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের অনিষ্ট হইতে সাপটি যেমন রক্ষা পেল তোমরা তেমনি রক্ষা পেলে এর ক্ষতি হইতে।

১৮৩১. নাবী (সাঃআঃ) এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুল (সাঃআঃ) গিরগিটিকে ক্ষতিকর (রক্তচোষা) প্রাণী বলেছেন। কিন্তু একে হত্যা করার আদেশ দিতে আমি তাঁকে শুনিনি।

২৮/৮. অধ্যায়ঃ হারমের অন্তর্গত কোন গাছ কাটা যাবে না।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, হারম শরীফের অভ্যন্তরের কাঁটাও কর্তন করা যাবে না।

১৮৩২.আবু শুরায়হ আদাবী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আমর ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে বলিলেন, যখন আমর বিন সাঈদ মক্কাহয় সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, হে আমীর (মাদীনাহর গভর্নর)! আমাকে অনুমতি দিন। আমি আপনাকে এমন কথা শুনাব যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মক্কা বিজয়ের পরের দিন ইরশাদ করেছিলেন। আমার দুটি কান ঐ কথাগুলো শুনেছে, হৃদয় সেগুলোকে ধারণ করে রেখেছে এবং আমার চোখ দুটো তা প্রত্যক্ষ করেছে। যখন তিনি কথাগুলো বলছিলেন, তখন তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া করার পর বললেনঃ আল্লাহ তাআলা মক্কাকে হারম (মহাসম্মানিত) করিয়াছেন। কোন মানুষ তাকে মহাসম্মানিত করেনি। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্য মক্কায় রক্তপাত করা বা এর কোন গাছ কাটা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসুল কর্তৃক লড়াই পরিচালনার কারণে যদি (হারমের ভিতরে) কেউ যুদ্ধ করার অনুমতি দেয় তাহলে তাকে তোমরা বলে দিও, আল্লাহ তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)- কে তো অনুমতি দিয়েছিলেন। তোমাদেরকে তো আর তিনি অনুমতি দেননি। আর এ অনুমতিও কেবল শুধু আমাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য দেয়া হয়েছিল। আজ পুনরায় তার নিষিদ্ধতা পুনর্বহাল হয়েছে যেমনিভাবে অতীতে ছিল। অতএব প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি এ কথা যেন প্রত্যেক অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। আবু শুরায়হ (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করা হল, আপনাকে আমর কি জবাব দিয়েছিলেন? তিনি বলিলেন, আমর বলেছিলেন, হে আবু শুরায়হ! এর বিষয়টি আমি তোমার থেকে ভাল জানি। হার্‌ম কোন অপরাধীকে, হত্যা করে পলাতক ব্যক্তিকে এবং চুরি করে পলায়নকারী ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয় না। আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —- শব্দের অর্থ হল —- বা ফিতনা-ফাসাদ।

২৮/৯. অধ্যায়ঃ হারামের (অভ্যন্তরে) কোন শিকার্য জন্তুকে তাড়ানো যাবে না।

১৮৩৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মক্কাকে হারম (সম্মানিত) করিয়াছেন। সুতরাং তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল হইবে না। তবে আমার জন্য কেবল দিনের কিছু সময়ের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছিল। তাই এখানকার ঘাস, লতাপাতা কাটা যাবে না ও গাছ কাটা যাবে না। কোন শিকার্য জন্তুকে তাড়ানো যাবে না এবং কোন হারানো বস্তুকেও হস্তগত করা যাবে না। অবশ্য ঘোষণাকারী ব্যক্তি এ নিয়মের ব্যতিক্রম। আব্বাস (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! স্বর্ণকার এবং আমাদের কবরে ব্যবহারের জন্য ইযখির ঘাসগুলোকে বাদ রাখুন। তিনি বললেনঃ হাঁ ইযখিরকে বাদ দিয়েই। খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, হারমের শিকার্য জানোয়ারকে তাড়ান যাবে না, এর অর্থ তুমি কি জান? এর অর্থ হল ছায়া হইতে তাকে তাড়িয়ে তার স্থানে নামিয়ে দেয়া।

২৮/১০. অধ্যায়ঃ মক্কাতে লড়াই করা হালাল নয়।

আবু শুরাইহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, মক্কাতে কোন রক্তপাত করা যাবে না।

১৮৩৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেনঃ এখন হইতে আর হিজরত নেই, রয়েছে কেবল জিহাদ এবং নিয়ত। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাকা হইবে, এ ডাকে তোমরা সাড়া দিবে। আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন হইতেই আল্লাহ তাআলা এ শহরকে হারম (মহাসম্মানিত) করে দিয়েছেন। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারণেই কিয়ামত পর্যন্ত এ শহর থাকবে মহাসম্মানিত হিসেবে। এ শহরে লড়াই করা আমার পূর্বেও কারো জন্য বৈধ ছিল না এবং আমার জন্যও দিনের কিছু অংশ ব্যতীত বৈধ হয়নি। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারণে তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত হিসেবে। এর কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না, তাড়ানো যাবেনা এর শিকার্য জানোয়ারকে, ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ব্যতীত কেউ এ স্থানে পড়ে থাকা কোন বস্তুকে উঠিয়ে নিতে পারবে না এবং কর্তন করা যাবেনা এখানকার কাঁচা ঘাস ও তরুলতাগুলোকে। আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইযখির বাদ দিয়ে। কেননা এ তো তাদের কর্মকারদের জন্য এবং তাদের ঘরে ব্যবহারের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ, ইযখির বাদ দিয়ে।

২৮/১১. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির জন্য সিঙ্গা (রক্তমোক্ষম) লাগানো।

ইবনু উমার (রাদি.) তাহাঁর ছেলেকে ইহরাম অবস্থায় লোহা গরম করে দাগ দিয়েছিলেন। মুহরিম সুগন্ধিবিহীন ঔষধ ব্যবহার করিতে পারে।

১৮৩৫. সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমর (বিন দিনার) বলেছেন যে, আমি সর্বপ্রথম আতা ইবনু আব্বাস (রাদি.) কে বলিতে শুনিয়াছি তা হলো তিনি বলেছেন যে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.) কে বলিতে শুনেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইহরাম অবস্থায় রক্তমোক্ষম (সিঙ্গা) লাগিয়েছেন। অপর এক সূত্রে সুফইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অতঃপর আমি আমর (বিন দিনার) কে বলিতে শুনিয়াছি যে, ত্বাউস (রাদি.) আমাকে ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, এ হাদীসটি আমর (রাদি.) সম্ভবত আতা এবং তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উভয়ের কাছ থেকে শুনেছেন।

১৮৩৬. ইবনু বুহাইনা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইহরাম অবস্থায় লাহইয়ে জামাল নামক স্থানে তাহাঁর মাথার মধ্যখানে সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন।

২৮/১২. অধ্যায়ঃ ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।

১৮৩৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) ইহরাম অবস্থায় মাইমূনাহ (রাদি.)-কে বিবাহ করিয়াছেন।

২৮/১৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম পুরুষ ও মুহরিম নারীর জন্য নিষিদ্ধ সুগন্ধিদ্রব্য।

আয়েশা (রাদি.) বলেন, মুহরিম নারী ওয়ারস্‌ কিংবা যাফরানে রঞ্জিত কাপড় পরিধান করিবে না।

১৮৩৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেন? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপী পরিধান করিবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে তাহলে সে যেন মোজা পরিধান করে তার গিরার নীচ হইতে এর উপরের অংশটুকু কেটে নিয়ে তোমরা যাফরান এবং ওয়ারস্‌ লাগানো কোন কাপড় পরিধান করিবে না। মুহরিম মহিলাগণ মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা পরবে না। মূসা ইবনু উকবাহ, ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম ইবনু উকবাহ, জুওয়ায়রিয়া এবং ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নিকাব এবং হাত মোজার বর্ণনায় লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর অনুসরণ করিয়াছেন। উবাইদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) —– এর স্থলে —— বলেছেন এবং তিনি বলিতেন, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করিবে না। মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- এর মাধ্যমে ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ব্যবহার করিবে না। লায়স ইবনু আবু সুলায়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

১৮৩৯ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মুহরিম ব্যক্তিকে তার উষ্ট্রী ফেলে দেয়, ফলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় এবং মারা যায়। তাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর নিকট আনা হয়। তিনি বলিলেন তোমরা তাকে গোসল করাও এবং কাফন পরাও। তবে তার মাথা ঢেকে দিও না এবং সুগন্ধি লাগিও না। তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় ক্বিয়ামাতের ময়দানে উঠানো হইবে।

২৮/১৪. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির গোসল করা ।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, মুহরিম ব্যক্তি গোসলখানায় প্রবেশ করিতে পারবে। ইবনু উমার এবং আয়েশা (রাদি.) মুহরিম ব্যক্তির শরীর চুলকানোতে কোন দোষ আছে বলে মনে করেন না ।

১৮৪০. আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবাওয়া নামক জায়গায় আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.)- এর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, মুহরিম ব্যক্তি তার মাথা ধুতে পারবে আর মিসওয়ার (রাদি.) বলিলেন, মুহরিম ব্যক্তি তার মাথা ধুতে পারবে না। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে আবু আইউব আনসারী (রাদি.)- এর নিকট প্রেরণ করিলেন। আমি তাঁকে কুয়া হইতে পানি উঠানো চরকার দু খুঁটির মধ্যে কাপড় ঘেরা অবস্থায় গোসল করিতে দেখিতে পেলাম। আমি তাকে সালাম দিলাম। তিনি বলিলেন, কে? বললাম, আমি আবদুল্লাহ ইবন হুনায়ন। মুহরিম অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কিভাবে তাহাঁর মাথা ধুতেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) আপনার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন। এ কথা শুনে আবু আইউব (রাদি.) তাহাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং সরিয়ে দিলেন। ফলে তাহাঁর মাথাটি আমি সুস্পষ্টভাবে দেখিতে পেলাম। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে, যে তার মাথায় পানি ঢালছিল, বলিলেন, পানি ঢাল। সে তাহাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। অতঃপর তিনি দু হাত দিয়ে মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে এরকম করিতে দেখেছি।

২৮/১৫. অধ্যায়ঃ জুতা না থাকলে মুহরিম ব্যক্তির মোজা পরিধান করা।

১৮৪১.ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে মুহরিমদের উদ্দেশ্যে আরাফাতে ভাষণ দিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেনঃ যার চপ্পল নেই সে মোজা পরিধান করিবে আর যার লুঙ্গি নেই সে পায়জামা পরিধান করিবে।

১৮৪২. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুহরিম ব্যক্তি কোন কাপড় পরিধান করিবে এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ি, পায়জামা, টুপী এবং যাফরান কিংবা ওয়ারস্‌ দ্বারা রঞ্জিত কাপড় ব্যবহার করিতে পারবে না। যদি তার জুতা না থাকে তা হলে মোজা পরবে, তবে মোজা দুটি পায়ের গিরার নিচ হইতে কেটে নিবে।

২৮/১৬. অধ্যায়ঃ লুঙ্গি না পেলে (মুহরিম ব্যক্তি) ইযার বা পায়জামা পরবে।

১৮৪৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আরাফার ময়দানে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তাহাঁর ভাষণে বললেনঃ (মুহরিম অবস্থায়) যার লুঙ্গি নেই সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার জুতা নেই সে যেন মোজা পরিধান করে।

২৮/১৭. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির অস্ত্র ধারণ করা ।

ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, শত্রুর আশঙ্কা হলে মুহরিম অস্ত্রসজ্জিত থাকবে এবং ফিদয়া দিয়ে দিবে। তবে ফিদয়া আদায় করা সম্পর্কে আর কেউ তাঁকে সমর্থন করেননি ।

১৮৪৪. বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুল-কাদা মাসে উমরাহ আদায় করার নিয়তে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী লোকেরা তাঁকে মক্কাহ প্রবেশ করিতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তিনি তাদের সাথে এই শর্তে চুক্তি করেন যে, সশস্ত্র অবস্থায় নয় বরং তলোয়ার কোষবদ্ধ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করবেন।

২৮/১৮. অধ্যায়ঃ হারাম ও মক্কায় ইহরাম ছাড়া প্রবেশ করা ।

ইবনু উমার (রাদি.) ইহরাম ব্যতীত মক্কায় প্রবেশ করেছিলেন । নাবী (সাঃআঃ) হজ্জ ও উমরাহ আদায়ের সংকল্পকারী লোকদেরকেই ইহরাম বাঁধার আদেশ করাছিলেন । কাঠ বহনকারী এবং অন্যান্যদের জন্য তিনি ইহরাম বাঁধার কথা উল্লেখ করেননি ।

১৮৪৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মাদীনাহবাসীদের জন্য যুল-হুলাইফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম নামক জায়গাকে ইহরামের জন্য মীকাত নির্ধারণ করিয়াছেন। এ জায়গাগুলোর অধিবাসীদের জন্য এবং হজ্জ ও উমরাহর নিয়্যাত করে বাহিরে হইতে আগত যাত্রী, যারা এ জায়াগা দিয়ে অতিক্রম করিবে, তাদের জন্য এ স্থানগুলো মীকাত হিসেবে গণ্য হইবে। আর মীকাতের ভেতরে অবস্থানকারী লোকদের জন্য তার যেখান হইতে যাত্রা করিবে সেটাই তাদের ইহরাম বাঁধার জায়গা। এমনকি মক্কাবাসী লোকের মক্কা হইতেই ইহরাম বাঁধবে।

১৮৪৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মক্কা বিজয়ের বছর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) শিরস্ত্রাণটি মাথা হইতে খোলার পর এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলিলেন, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেনঃ তাকে তোমরা হত্যা কর।

১৮/১৯. অধ্যায়ঃ অজ্ঞাতাবশতঃ যদি কেউ জামা পরিধান করে ইহরাম বাঁধে ।

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অজ্ঞাতবশতঃ বা ভুলক্রমে যদি কেউ সুগন্ধি মাখে অথবা জামা পরিধান করে, তাহলে তার উপর কোন কাফফারা নেই।

১৮৪৭. সফওয়ান ইবনু ইয়ালা (রাদি.), তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে ছিলাম। এমতাবস্থায় হলুদ বা অনুরূপ রঙ্গের চিহ্ন বিশিষ্ট জামা পরিহিত এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট আসলেন। আর উমার (রাদি.) আমাকে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)- এর প্রতি যখন ওয়াহী নাযিল হয় সে মুহূর্তে তুমি কি তাঁকে দেখিতে চাও? এরপর (ঐ সময়ে) নাবী (সাঃআঃ)- এর প্রতি ওয়াহী নাযিল হল। অতঃপর এ অবস্থায় পরিবর্তন হলে তিনি (প্রশ্নকারীকে) বললেনঃ হাজ্জে তুমি যা কর উমরাতেও তাই কর।

১৮৪৮. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি অন্য একজনের হাত কামড়িয়ে ধরলে তার সামনের দুটি দাঁত উৎপাটিত হয়ে যায়, এ সংক্রান্ত নালিশ নাবী (সাঃআঃ) বাতিল করে দেন।

২৮/২০. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তির আরাফাতে মৃত্যু হলে তাহাঁর পক্ষ হইতে হজ্জের বাকি রুকনগুলো আদায় করার জন্য নাবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ প্রদান করেন নি

১৮৪৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাত ময়দানে নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান) করেছিলেন। হঠাৎ তিনি তাহাঁর সওয়ারী হইতে পরে যান এবং তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সাওয়ারীটি তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তার পরিধেয় দুটি কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার মাথা ঢেকে দিও না এবং হানত নামক সুগন্ধিও ব্যবহার কর না। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামাতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।

১৮৫০. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাতের মাঠে নাবী (সাঃআঃ)- এর সাথে অবস্থান করছিলেন, আকস্মাৎ তিনি তাহাঁর সওয়ারী হইতে পড়ে গেলে তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়ারীটি তার ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। (ফলে তিনি মারা যান)। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি মাখাবে না আর তার মাথা ঢাকবে না এবং হানূতও লাগাবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামাতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।

২৮/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিমের মৃত্যু হলে তার বিধান ।

১৮৫১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)- এর সাথে ছিলেন। হঠাৎ সাওয়ারী তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। ফলে তিনি মারা যান। এরপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা তাকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দু কাপড়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না; কেননা কিয়ামাতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় তাহাঁর উত্থান হইবে।

২৮/২২. অধ্যায়ঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ বা মানৎ আদায় করা এবং মহিলার পক্ষ হইতে পুরুষ হজ্জ আদায় করিতে পারে ।

১৮৫২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট এসে বলিলেন, আমার আম্মা হাজ্জের মানৎ করেছিলেন তবে তিনি হজ্জ আদায় না করেই ইন্তিকাল করিয়াছেন। আমি কি তাহাঁর পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করিতে পারি? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তার পক্ষ হইতে তুমি হজ্জ আদায় কর। তুমি এই ব্যাপারে কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋণ থাকত তা হলে কি তুমি তা আদায় করিতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই বেশী আদায়যোগ্য। [৬১]

[৬১] বদলি হাজ্জের আগে নিজের হজ্জ করিতে হইবে। আবু দাউদ ও ইবনু মাজাহ বর্ণিত হাদীস । ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন ।

২৮/২৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সাওয়ারীতে বসে থাকতে অক্ষম, তার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করা ।

১৮৫৩. ফাযল ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একজন মহিলা বলিলেন।

১৮৫৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বিদায় হাজ্জের বছর খাসআম গোত্রের একজন মহিলা এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর তরফ হইতে বান্দার উপর যে হজ্জ ফরয হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় ফর্‌য হয়েছে যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি তার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করলে তার হজ্জ আদায় হইবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ (নিশ্চয়ই আদায় হইবে)

২৮/২৪. অধ্যায়ঃ পুরুষের পক্ষ হইতে নারীর হজ্জ আদায় করা।

১৮৫৫. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ফযল (ইবনু আব্বাস) (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)- এর সওয়ারীতে তাহাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় খাসআম কবিলার এক মহিলা আগমন করিলেন। ফযল (রাদি.) মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তার দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নাবী (সাঃআঃ) ফযল (রাদি.)- এর মুখটি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বলিলেন, বৃদ্ধ অবস্থায় আমার পিতার উপর আল্লাহর পক্ষ হইতে এমন সময় হজ্জ ফর্‌য হয়েছে, যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় করিতে পারি? তিনি বললেনঃ হাঁ। এ ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা।

২৮/২৫. অধ্যায়ঃ বালকদের হজ্জ পালন করা ।

১৮৫৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে মালপত্রের সাথে মুযদালিফা হইতে রাত্রিকালে প্রেরণ করেছিলেন।

১৮৫৭.আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার গাধীর পিঠে আরোহণ করে (মিনায়) আগমন করলাম। তখন আমি সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী ছিলাম। ঐ সময়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিনায় দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করছিলেন। আমি চলতে চলতে প্রথম কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে চলে যাই। এরপর সওয়ারী হইতে নিচে অবতরণ করি। গাধীটি চরে খেতে লাগল। আর আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর পেছনে লোকদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে যাই। ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে তাহাঁর বর্ণনায় “মিনা” শব্দের পর “বিদায় হাজ্জের সময়” কথাটি বর্ণনা করিয়াছেন।

১৮৫৮. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে আমাকে নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে হজ্জ করানো হয়েছে।

১৮৫৯. উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সায়িব ইবনু ইয়াযীদ সম্পর্কে বলিতেন, সায়িবকে নাবী (সাঃআঃ)- এর সফর সামগ্রীর কাছে বসিয়ে হজ্জ করানো হয়েছে।

২৮/২৬. অধ্যায়ঃ মহিলাদের হজ্জ ।

১৮৬০. আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে বছর উমার (রাদি.) শেষবারের মত হজ্জ আদায় করেন সে বছর তিনি নাবী (সাঃআঃ)- এর সকল স্ত্রীকে হজ্জ আদায় করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তাঁদের সাথে উসমান ইবনু আফফান (রাদি.) এবং আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.)- কে প্রেরণ করেছিলেন।

১৮৬১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না? তিনি বলিলেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিহাদ হল হজ্জ, মাকবূল হজ্জ। আয়েশা (রাদি.) বললেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ্জ ছাড়ব না।

১৮৬২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করিবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করিতে পারবে না। এ সময় এক ব্যক্তি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করিতে যেতে চাচ্ছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তার সাথেই যাও।

১৮৬৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হজ্জ হইতে ফিরে এসে উম্মে সিনান (রাদি.) নাম্নী এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ হজ্জ আদায় করাতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তিনি বলিলেন, অমুকের আব্বা অর্থাৎ তাহাঁর স্বামী, কারণ পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দুটি উট আছে। একটিতে সাওয়ার হয়ে তিনি হজ্জ আদায় করিতে গিয়েছেন। আর অন্যটি আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, রমাযান মাসে একটি উমরাহ আদায় করা একটি ফারয্‌ হজ্জ আদায় করার সমান অথবা বলেছেনঃ আমার সাথে একটি হজ্জ আদায় করার সমান।

এ হাদীসটি ইবনু জুরাইজ আতা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন তিনি ইবনু আব্বাস (রাদি.)- কে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিতে শুনেছেন। আর ওবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল কারীম থেকে তিনি আতা থেকে, তিনি জাবির থেকে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

১৮৬৪. যিয়াদের আযাদকৃত গোলাম কাযাআহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ (রাদি.)- কে যিনি নাবী (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বলিতে শুনিয়াছি, চারটি বিষয় যা আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি (অথবা) তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিতেন। আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন, এ বিষয়গুলো আমাকে আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছে এবং চমৎকৃত করে ফেলেছে। (তা হল এই), স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা দুদিনের পথ সফর করিবে না। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা- এ দুই দিন কেউ সওম পালন করিবে না। আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় পর্যন্ত কেউ কোন সলাত আদায় করিবে না। আর মাসজিদে হারম (কাবা), আমার মাসজিদ (মাসজিদে নাববী) এবং মাসজিদে আকসা (বাইতুল মাকদিস)- এ তিন মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করিবে না।

২৮/২৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি পদব্রজে কাবা যিয়ারত করার নযর মানে ।

১৮৬৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের উপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেনঃ তার কী হয়েছে? তারা বলিলেন, তিনি পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করিয়াছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তাআলার এর কোন দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করিলেন।

১৮৬৬. উক্‌বাহ ইবনু আমির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার বোন পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ) হইতে ফাতাওয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নাবী (সাঃআঃ)- কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ারও হোক। ইয়াযীদ ইবনু আবু হাবীব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবুল খায়ের (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উক্‌বাহ (রাদি.) হইতে কখনো বিচ্ছিন্ন হইতেন না। উক্‌বাহ (রাদি.) হইতেও এ হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু আসিম আমাদের ইবনু জুরাইজের বরাতে তিনি ইয়াহইয়াহ বিন আইউব থেকে তিনি ইয়াযিদ বিন আবুল খায়ের থেকে তিনি উক্‌বাহ থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply