ইহরামের কাপড় এবং মুহরিমের কাপড়, চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করা

ইহরামের কাপড় এবং মুহরিমের কাপড়, চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করা

ইহরামের কাপড় এবং মুহরিমের কাপড়, চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৫, হজ্জ, অধ্যায়ঃ (১৭-২৪)=৮টি

২৫/১৭. অধ্যায়ঃ (ইহরামের) কাপড়ে খালুক বা সুগন্ধি লেগে থাকলে তিনবার ধৌত করা।
২৫/১৮. অধ্যায়ঃ ইহরাম বাঁধাকালে সুগন্ধি ব্যবহার ও কোন প্রকার কাপড় পরে ইহরাম বাঁধবে এবং চুল দাড়ি আঁচড়াবে ও তেল ব্যবহার করিবে।
২৫/১৯. অধ্যায়ঃ যে চুলে আঠালো বস্তু লাগিয়ে ইহরাম বাঁধে।
২৫/২০. অধ্যায়ঃ যুল-হুলাইফার মাসজিদের নিকটে ইহরাম বাঁধা।
২৫/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি যে প্রকার কাপড় পরিধান করিবে না।
২৫/২২. অধ্যায়ঃ হজ্জের সফরে বাহনে একাকী আরোহণ করা ও অপরের সঙ্গে আরোহণ করা।
২৫/২৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি কোন ধরনের কাপড়, চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করিবে।
২৫/২৪. অধ্যায়ঃ সকাল পর্যন্ত যুল-হুলাইফায় রাত্রি অতিবাহিত করা।

২৫/১৭. অধ্যায়ঃ (ইহরামের) কাপড়ে খালুক বা সুগন্ধি লেগে থাকলে তিনবার ধৌত করা।

১৫৩৬. সাফ্‌ওয়ান ইবনু ইয়ালা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইয়ালা (রাদি.) উমর (রাদি.) কে বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর উপর ওহী অবতরণ মুহূর্তটি আমাকে দেখাবেন। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন, তাহাঁর সঙ্গে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাঃআঃ)! কোন ব্যক্তি সুগন্ধিযুলত পোশাক পরে উমরাহর ইহরাম বাঁধলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? নাবী (সাঃআঃ) কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। এরপর তাহাঁর নিকট ওহী আসল। উমর (রাদি.) ইয়ালা (রাদি.) কে ইঙ্গিত করায় তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন একখন্ড কাপড় দিয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর উপর ছায়া করা হয়েছিল, ইয়ালা (রাদি.) মাথা প্রবেশ করিয়ে দেখিতে পেলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর মুখমন্ডল লাল বর্ণ, তিনি সজোরে শ্বাস গ্রহন করছেন। এরপর সে অবস্থা দূর হলো। তিনি বললেনঃ উমরাহ সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? প্রশ্নকারীকে উপস্থিত করা হলে তিনি বললেনঃ তোমার শরীরের সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল ও জুব্বাটি খুলে ফেল এবং হজ্জে যা করে থাক উমরাহইতেও তাই কর। (রাবী ইবনু জুরাইজ বলেন) আমি আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনবার ধোয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি কি উত্তমরূপে পরিষ্কার করা বুঝিয়েছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তাই।

(১৭৮৯, ১৮৪৭, ৪৩২৯, ৪৯৮৫, মুসলিম ১৫/১, হাদীস ১১৮০, আহমাদ ১৭৯৮৯) (আঃপ্রঃ ১৪৩৬, ইঃফাঃ ১৪৪২)

২৫/১৮. অধ্যায়ঃ ইহরাম বাঁধাকালে সুগন্ধি ব্যবহার ও কোন প্রকার কাপড় পরে ইহরাম বাঁধবে এবং চুল দাড়ি আঁচড়াবে ও তেল ব্যবহার করিবে।

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারবে। আয়নায় চেহারা দেখিতে পারবে এবং তৈল ও ঘি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে চিকিৎসা করিতে পারবে। আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আংটি পরতে পারবে, (কোমরে) থলে বাঁধতে পারবে। ইবনু উমর (রাদি.) ইহরাম বাঁধা অবস্থায় পেটের উপর কাপড় কষে তাওয়াফ করিয়াছেন। জাঙ্গিয়া পরার ব্যাপারে আয়েশা (রাদি.)-এর আপত্তি ছিল না। এ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যারা তার উটের পিঠে হাওদা বাঁধতো (কারণ সে সময় লজ্জাস্থান প্রদর্শিত হওয়ার আশঙ্কা থাকত)।

১৫৩৭. সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাদি.) (ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) যায়তুন তেল ব্যবহার করিতেন। (রাবী মানসুর বলেন) এ বিষয়ে আমি ইব্রাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট পেশ করলে তিনি বলিলেন, তাহাঁর কথায় তোমার কি দরকার।

(আঃপ্রঃ ১৪৩৭, ইঃফাঃ ১৪৪৩)

১৫৩৮. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সিঁথিতে যে সুগন্ধি তেল চকচক করছিল তা যেন আজও আমি দেখিতে পাচ্ছি। (২৭১)

(আঃপ্রঃ ১৪৩৭ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১৪৪৩ শেষাংশ)

১৫৩৯. নাবী সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইহরাম বাঁধার সময় [৫২] আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর গায়ে সুগন্ধি মেখে দিতাম এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে ইহরাম খুলে ফেলার সময়ও।

(১৭৪৫, ৫৯২২, ৫৯২৮, ৫৯৩০, মুসলিম ১/৪, হাদীস ১৩, আহমাদ) (আঃপ্রঃ ১৪৩৮, ইঃফাঃ ১৪৪৪) [৫২] ইহরামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকালে গোসল করা, সুগন্ধি মাখার নিয়মগুলি পালন করিতে হইবে। ইহরামের কাপড় পরিধানের পর সুগন্ধি মাখা চলবে না। ইহরামের নিয়ত করার পূর্বে মাখা সুগন্ধি মুহরিমের চেহারায় দৃশ্যমান হইতে পারে বা তা থেকে সুগন্ধ আসতে পারে। ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা চলবে।

২৫/১৯. অধ্যায়ঃ যে চুলে আঠালো বস্তু লাগিয়ে ইহরাম বাঁধে।

১৫৪০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে চুলে আঠালো বস্তু লাগিয়ে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করিতে শুনিয়াছি।

(১৫৪৯, ৫৯১৪, ৫৯১৫, মুসলিম ১৫/৩, হাদীস ১১৮৪) (আঃপ্রঃ ১৪৩৯, ইঃফাঃ ১৪৪৫)

২৫/২০. অধ্যায়ঃ যুল-হুলাইফার মাসজিদের নিকটে ইহরাম বাঁধা।

১৫৪১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুল-হুলাইফার মাসজিদের নিকট হইতে ইহরাম বেঁধেছেন।

(মুসলিম ১৫/৪, হাদীস ১১৮৬) (আঃপ্রঃ, ইঃফাঃ ১৪৪৬)

২৫/২১. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি যে প্রকার কাপড় পরিধান করিবে না।

১৫৪২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মুহরিম ব্যক্তি কী প্রকারের কাপড় পরবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ সে জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করিবে না। তবে কারো জুতা না থাকলে সে টাখ্‌নুর নিচ পর্যন্ত মোজা কেটে (জুতার ন্যায়) পরবে।[৫৩] তোমরা জাফরান বা ওয়ার্‌স (এক প্রকার খুশবু) রঞ্জিত কোন কাপড় পরবে না। [আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি মাথা ধুতে পারবে। চুল আঁচড়াবে না, শরীর চুলকাবে না। মাথা ও শরীর হইতে উকুন যমীনে ফেলে দিবে।]

(১৩৪, মুসলিম ১৫/১, হাদীস ১১৭৭, আহমাদ ৪৮৩৫) (আঃপ্রঃ ১৪৪১, ইঃফাঃ ১৪৪৭) [৫৩] জুতা না পেলে মোজাকে টাখনুর নীচ থেকে কেটে তা পরার বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। নাবী (সাঃআঃ) মোজা কাটার কথা পূর্বে বলেছিলেন এবং এটা তিনি বলেছিলেন মদীনায় থাকাকালীন। পক্ষান্তরে ইবনু আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত হাদীস যাতে তিনি জুতা না থাকাবস্থায় সাধারণভাবে কাটার শর্ত না করেই মোজা পরার নির্দেশ দিয়েছেন। উক্ত হাদীসটি হজ্জের মাঠে তথা আরাফার মাঠে নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন।

২৫/২২. অধ্যায়ঃ হজ্জের সফরে বাহনে একাকী আরোহণ করা ও অপরের সঙ্গে আরোহণ করা।

১৫৪৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আরাফাহ হইতে মুয্‌দালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নাবী (সাঃআঃ)-এর পিছনে উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হইতে মিনা পর্যন্ত ফযল [ইবনু আব্বাস (রাদি.)]-কে তাহাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।

(১৬৮৫, ১৬৮৫, ১৬৮৭, মুসলিম ১৫/৪৫, হাদীস ১২৮১, আহমাদ ১৮৩১) (আঃপ্রঃ ১৪৪২, ইঃফাঃ ১৪৪৮)

১৫৪৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আরাফাহ হইতে মুয্‌দালিফা পর্যন্ত একই বাহনে নাবী (সাঃআঃ)-এর পিছনে উসামা ইবনু যায়দ (রাদি.) উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর মুযদালিফা হইতে মিনা পর্যন্ত ফযল [ইবনু আব্বাস (রাদি.)]-কে তাহাঁর পিছনে আরোহণ করান। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, তাঁরা উভয়ই বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) জামরা আকাবায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।

(১৬৮৫, ১৬৮৫, ১৬৮৭, মুসলিম ১৫/৪৫, হাদীস ১২৮১, আহমাদ ১৮৩১) (আঃপ্রঃ ১৪৪২, ইঃফাঃ ১৪৪৮)

২৫/২৩. অধ্যায়ঃ মুহরিম ব্যক্তি কোন ধরনের কাপড়, চাদর ও লুঙ্গি পরিধান করিবে।

আয়েশা (রাদি.) ইহরাম অবস্থায় কুসুমীর রঙ্গে রঞ্জিত কাপড় পরেন এবং তিনি বলেন, নারীগণ ঠোঁট মুখমন্ডল আবৃত করিবে না। ওয়ার্‌স ও জাফরান রঙে রঞ্জিত কাপড়ও পরবে না। জাবির (রাদি.) বলেন, আমি উসফুরী (কুসুমী) রঙকে সুগন্ধি মনে করি না। আয়েশা (রাদি.) (ইহরাম অবস্থায়) নারীদের জন্য অলংকার পরা এবং কালো ও গোলাপী রং-এর কাপড় ও মোজা পরা দূষণীয় মনে করেননি। ইব্রাহীম (নাখ্‌য়ী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (ইহরাম অবস্থায়) পরনের কাপড় পরিবর্তন করায় কোন দোষ নেই [৫৪]।

[৫৪] ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধঃ ১। স্ত্রী সম্ভোগ করা, নির্লজ্জ কথাবার্তা বলা, যৌন আকর্ষণে স্পর্শ করা বা শরীরের সঙ্গে শরীর লাগানো। ২। চুল কাটা, নখ কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৩। পুরুষের জন্য সেলাই করে প্রস্তুত পোশাক পরা। ৪। মহিলাদের জন্য সেলাইকৃত বোরকা বা মুখাবরণ, মুখাচ্ছাদন ও হাত মোজা পরা। ৫। জাফরান ও কুসুম রঞ্জিত কাপড় পরিধান করা। ৬। বেহায়াপনা, শরীয়তবিরোধী কথা ও কাজ এবং বিবাদ-বিসংবাদমূলক কথা বলা। ৭। পুরুষের মাথা ও মুখ ঢাকা। ৮। স্থলচর জন্তু শিকার করা, শিকার তাড়ানো, শিকারে সাহায্য করা বা শিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা। ৯। বিবাহ করা বা করানো বা বিবাহের পয়গাম পাঠানো।

ইহরামের অবস্থায় যা বৈধঃ ১। পুরুষ লুঙ্গি না পেলে পায়জামা পরতে পারবে। ২। জুতা না পেলে চামড়ার মোজা পরতে পারবে গিটের নিম্নাংশ পর্যন্ত কেটে দিয়ে। ৩। লুঙ্গিতে গিরা দিয়ে বাঁধা কিংবা সূতা, ফিতা বা রশি জাতীয় কিছু দিয়ে বাঁধা। ৪। গোসল করা, মাথা ধোয়া, প্রয়োজন বোধে মাথা চুলকানো। ৫। প্রয়োজনে মহিলাদের মুখমন্ডলের উপর ওড়না লটকানো ও হস্তদ্বয় বস্ত্র বা অন্য কিছু দিয়ে ঢাকা। ৬। ময়লা বা ঘর্মে সিক্ত কাপড় ধৌত করা বা বদলানো। ৭। শরীয়ত এবং সত্যের প্রতিষ্ঠায় কথা কাটাকাটি ও তর্কযুদ্ধ করা। (হজ্জ, উমরাহ ও যিয়ারতঃ শায়খ আঃ আযীয বিন বায)

১৫৪৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাদি.) ইহরাম অবস্থায় কুসুমীর রঙ্গে রঞ্জিত কাপড় পরেন এবং তিনি বলেন, নারীগণ ঠোঁট মুখমন্ডল আবৃত করিবে না। ওয়ার্‌স ও জাফরান রঙে রঞ্জিত কাপড়ও পরবে না। জাবির (রাদি.) বলেন, আমি উসফুরী (কুসুমী) রঙকে সুগন্ধি মনে করি না। আয়েশা (রাদি.) (ইহরাম অবস্থায়) নারীদের জন্য অলংকার পরা এবং কালো ও গোলাপী রং-এর কাপড় ও মোজা পরা দূষণীয় মনে করেননি। ইব্রাহীম (নাখ্‌য়ী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (ইহরাম অবস্থায়) পরনের কাপড় পরিবর্তন করায় কোন দোষ নেই [৫৪]।

[৫৪] ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধঃ ১। স্ত্রী সম্ভোগ করা, নির্লজ্জ কথাবার্তা বলা, যৌন আকর্ষণে স্পর্শ করা বা শরীরের সঙ্গে শরীর লাগানো। ২। চুল কাটা, নখ কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৩। পুরুষের জন্য সেলাই করে প্রস্তুত পোশাক পরা। ৪। মহিলাদের জন্য সেলাইকৃত বোরকা বা মুখাবরণ, মুখাচ্ছাদন ও হাত মোজা পরা। ৫। জাফরান ও কুসুম রঞ্জিত কাপড় পরিধান করা। ৬। বেহায়াপনা, শরীয়তবিরোধী কথা ও কাজ এবং বিবাদ-বিসংবাদমূলক কথা বলা। ৭। পুরুষের মাথা ও মুখ ঢাকা। ৮। স্থলচর জন্তু শিকার করা, শিকার তাড়ানো, শিকারে সাহায্য করা বা শিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা। ৯। বিবাহ করা বা করানো বা বিবাহের পয়গাম পাঠানো।

ইহরামের অবস্থায় যা বৈধঃ ১। পুরুষ লুঙ্গি না পেলে পায়জামা পরতে পারবে। ২। জুতা না পেলে চামড়ার মোজা পরতে পারবে গিটের নিম্নাংশ পর্যন্ত কেটে দিয়ে। ৩। লুঙ্গিতে গিরা দিয়ে বাঁধা কিংবা সূতা, ফিতা বা রশি জাতীয় কিছু দিয়ে বাঁধা। ৪। গোসল করা, মাথা ধোয়া, প্রয়োজন বোধে মাথা চুলকানো। ৫। প্রয়োজনে মহিলাদের মুখমন্ডলের উপর ওড়না লটকানো ও হস্তদ্বয় বস্ত্র বা অন্য কিছু দিয়ে ঢাকা। ৬। ময়লা বা ঘর্মে সিক্ত কাপড় ধৌত করা বা বদলানো। ৭। শরীয়ত এবং সত্যের প্রতিষ্ঠায় কথা কাটাকাটি ও তর্কযুদ্ধ করা। (হজ্জ, উমরাহ ও যিয়ারতঃ শায়খ আঃ আযীয বিন বায)

১৫৪৫. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সাহাবীগণ চুল আঁচড়িয়ে, তেল মেখে, লুঙ্গি ও চাদর পরে ( হজ্জের উদ্দেশ্যে) মদীনা হইতে রওয়ানা হন। তিনি কোন প্রকার চাদর বা লুঙ্গি পরতে নিষেধ করেননি, তবে শরীরের চামড়া রঞ্জিত হয়ে যেতে পারে এরূপ জাফরানী রঙের কাপড় পরতে নিষেধ করিয়াছেন। যুল-হুলাইফা হইতে সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়দা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি ও তাহাঁর সাহাবীগণ তালবিয়া পাঠ করেন এবং কুরবানীর উটের গলায় মালা ঝুলিয়ে দেন, তখন যুলকাদা মাসের পাঁচদিন অবশিষ্ট ছিল। যিলহজ্জ মাসের চতুর্থ দিনে মক্কায় উপনীত হয়ে সর্বপ্রথম কাবাঘরের তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করেন। তাহাঁর কুরবানীর উটের গলায় মালা পরিয়েছেন বলে তিনি ইহরাম খুলেননি। অতঃপর মক্কার উঁচু ভূমিতে হাজূন নামক স্থানের নিকটে অবস্থান করেন, তখন তিনি হজ্জের ইহরামের অবস্থায় ছিলেন। (প্রথমবার) তাওয়াফ করার পর আরাফাহ হইতে ফিরে আসার পূর্বে আর কাবার নিকটবর্তী হননি। অবশ্য তিনি সাহাবাগণকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সায়ী সম্পাদন করে মাথার চুল ছেঁটে হালাল হইতে নির্দেশ দেন। কেননা যাদের সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই, এ বিধানটি কেবল তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যার সাথে তার স্ত্রী রয়েছে তার জন্য স্ত্রী-সহবাস, সুগন্ধি ব্যবহার ও যে কোন ধরনের কাপড় পরা জায়িয।

(১৬২৫, ১৭৩১) (আঃপ্রঃ ১৪৪৩, ইঃফাঃ ১৪৪৯)

২৫/২৪. অধ্যায়ঃ সকাল পর্যন্ত যুল-হুলাইফায় রাত্রি অতিবাহিত করা।

ইবনু উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ বিষয় বর্ণনা করিয়াছেন।

১৫৪৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মদীনায় চার রাকআত আদায় করেন ও যুল-হুলাইফায় পৌঁছে দুরাকআত সালাত আদায় করেন। অতঃপর ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন। এরপর যখন তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করেন এবং তা তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান তখন তিনি তালবিয়া পাঠ করেন। (১০৮৯)

(আঃপ্রঃ ১৪৪৪, ইঃফাঃ ১৪৫০)

১৫৪৭. আনাস ইবনে মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) মদীনায় যোহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলাইফায় পৌঁছে আসরের সালাত দুরাকআত আদায় করেন। রাবী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি ভোর পর্যন্ত সেখানে রাত যাপন করেন। (১০৮৯)

(আঃপ্রঃ ১৪৪৫, ইঃফাঃ ১৪৫১)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply