হাজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয

হাজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয

হাজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১. অধ্যায়ঃ হাজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয ও কী ধরনের পোশাক নাজায়িয এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির ব্যবহার নিষিদ্ধ

২৬৮১. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট জানতে চাইল যে, মুহরিম ব্যক্তি কী ধরনের পোশাক পরবে? রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করিতে পারবে না। তবে কোন ব্যক্তি চপ্পলের অভাবে মোজা পরিধান করলে তাকে পায়ের গোছার নীচ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলতে হইবে। তোমরা এমন কাপড় পরিধান কর না যা জাফরান বা ওয়ারস-এর রংয়ে রঞ্জিত করা হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৫৭]

২৬৮২. সালিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -কে জিজ্ঞেস করা হল যে, মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কী পরিধান করিবে? তিনি বলিলেন, মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ী, টুপী, পায়জামা, জাফরান বা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় এবং মোজা পরিধান করিবে না। কিন্তু তার চপ্পল না থাকলে সে পায়ের গোছার নিম্নাংশ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলে তা পরিধান করিতে পারবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৫৮]

২৬৮৩. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] মুহরিম ব্যক্তিকে জাফরান বা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করিতে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আরও বলেছেন, কারও চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরিধান করিবে এবং পায়ের গোছার নীচ বরাবর এর উপরিভাগ কেটে ফেলবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬০, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৫৯]

২৬৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলূল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -কে তাহাঁর ভাষণে বলিতে শুনেছি, মুহরিম ব্যক্তির কাপড় না থাকলে সে পায়জামা পরতে পারবে এবং তার চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরতে পারবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬১, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬০]

২৬৮৫. আমর ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সানাদ সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.] নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছেন-এরপর তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬২, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬১]

২৬৮৬. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্ , ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়াহ্ইয়া, আবু কুরায়ব, আলী ইবনি খাশরম ও আলী ইবনি হুজর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সকলেই আমর ইবনি দীনারের সূত্রে এ সানাদে হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু শুবাহ্ ছাড়া তাদের কারও বর্ণনায় নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] “আরাফাতে ভাষণ দিয়েছেন” কথার উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬২]

২৬৮৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যার কাপড় নেই সে পায়জামা পরিধান করিতে পারে, আর যার চপ্পল নেই সে মোজা পরতে পারে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬৩]

২৬৮৮. সাফ্ওয়ান ইবনি ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত অথবা বলেন, হলুদ রং-এর চিহ্নযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্থায় জিরানাহ্ নামক স্থানে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিল, উমরাহ্ পালনের সময় আপনি আমাকে কী করার নির্দেশ দেন? এ সময় নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছিল এবং তিনি একটি কাপড় আচ্ছাদিত অবস্থায় ছিলেন। ইয়ালা [রাদি.] বলিতেন যে, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া অবস্থায় যদি আমি তাঁকে দেখিতে পেতাম! তখন উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, ওয়াহী নাযিল হওয়ার মুহূর্তে তুমি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -কে দেখে খুশি হইবে কি? ইয়ালা [রাদি.] বলেন, এরপর উমর [রাদি.] কাপড়ের এক কোণ উম্মুক্ত করিলেন এবং আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলাম যে, তাহাঁর মুখ দিয়ে উঠতি বয়সের উটের আওয়াজের মতো আওয়াজ বের হচ্ছে। যখন তাহাঁর এ অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, উমরাহ্ সম্বন্ধে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বলিলেন, তোমার দেহ থেকে হলুদ রং ধুয়ে ফেল, অথবা বলিলেন, সুগন্ধির চিহ্ন। তোমার জুব্বাহ্ খুলে ফেল। অতঃপর তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে যা করিতে, উমরার জন্য তাই কর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬৪]

২৬৮৯. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট এলো। তখন তিনি জিরানাহ্ নামক স্থানে ছিলেন এবং আমি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর কাছেই ছিলাম। লোকটি [খালূক্ব জাতীয়] সুগন্ধিযুক্ত একটি জুব্বাহ্ পরিহিত ছিল। সে বলিল, আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছি এবং আমার পরিধানে এ জুব্বাহ্ রয়েছে এবং আমি খালুক্ব জাতীয় সুগন্ধি ব্যবহার করেছি। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে কী করিতে? সে বলিল, আমি নিজের এ পরিধেয় খুলে এবং নিজের দেহ থেকে এ সুগন্ধি ধুয়ে ফেলতাম। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকে বলিলেন, তুমি হজ্জের ইহরামের থাকলে যা করিতে, উমরার জন্য তাই করো।

[ই.ফা ২৬৬৬, ই.সে ২৬৬৫]

২৬৯০. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

উমর ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে বলিতেন, আহা! নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর উপর যখন ওয়াহী নাযিল হয়, আমি যদি সে অবস্থায় তাঁকে দেখিতে পেতাম! একদা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] জিরানায় অবস্থান করছিলেন এবং একটি কাপড়ের সাহায্যে তাহাঁর উপর ছায়া বিস্তার করা হয়েছিল। তাহাঁর সঙ্গে তাহাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবাও ছিলেন- যাঁদের মধ্যে উমর [রাদি.]-ও ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত জুব্বাহ্ পরিহিত অবস্থায় তাহাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল ! এক ব্যক্তি জুব্বায় সুগন্ধি মেখে তা পরিহিত অবস্থায় উমরার ইহরাম বেঁধেছে, তার সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন, অতঃপর নীরব রইলেন। এ সময় তাহাঁর উপর ওয়াহী আসল। উমর [রাদি.] হাতের ইশারায় ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ [রাদি.]-কে বলিলেন, এদিকে আসো। ইয়ালা [রাদি.] এসে নিজের মাথা [কাপড়ের মধ্যে] ঢুকিয়ে দিলেন [এবং দেখলেন] নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং তাহাঁর মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে। অতঃপর এ অবস্থা দূরীভূত হল এবং তিনি বলিলেন, এই মাত্র যে ব্যক্তি আমার নিকট উমরাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল-সে কোথায়? লোকটিকে খুঁজে এনে তাহাঁর নিকট উপস্থিত করা হল। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, তোমার সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জুব্বাহ্ খুলে ফেল। অতঃপর যে নিয়মে হাজ্জ কর, ঠিক সে নিয়মে উমরাহ্ কর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬৬]

২৬৯১. ইয়ালা ইবনি উমাইয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি জিরানাহ্ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর নিকট আসলো। লোকটি উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার দাড়ি ও মাথার চুল হলুদ রং-এ রঞ্জিত ছিল এবং তার পরনে ছিল একটি জুব্বাহ। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উমরাহ্ করার জন্য ইহরাম বেঁধেছি এবং আমি কী অবস্থায় আছি তা আপনি দেখছেন। তিনি বলিলেন, তুমি জুব্বাহ্ খুলে ফেল এবং হলূদ রং ধুয়ে ফেল। অতঃপর হাজ্জে যে সব অনুষ্ঠান পালন কর, উমরাতেও তাই কর।

[ই.ফা ২৬৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬৭]

২৬৯২. সাফ্ওয়ান তার পিতা সূত্রে [ইবনি উমাইয়্যাহ্] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -এর সঙ্গে ছিলাম। তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তি জুব্বাহ্ পরিহিত অবস্থায় উপস্থিত হল। তাতে [খালূক্ব জাতীয়] সুগন্ধির চিহ্ন ছিল। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছি, আমাকে কী করিতে হইবে? তিনি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। যখন তাহাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হইতে আরম্ভ হল তখন উমর [রাদি.] তাঁকে ছায়া দেয়ার জন্য একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি [ইয়ালা] উমর [রাদি.]-কে বলেছিলাম, তাহাঁর উপর যখন ওয়াহী নাযিল হয় তখন আমি তাহাঁর সঙ্গে কাপড়ের অভ্যন্তরভাগে আমার মাথা ঢুকাতে চাই। যখন ওয়াহী নাযিল হল, উমর [রাদি.] তাঁকে একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি তাহাঁর নিকট এসে কাপড়ের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলাম এবং তাঁকে দেখলাম। এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি বলিলেন, এ্ই মাত্র উমরাহ্ সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি তাহাঁর সামনে দাঁড়াল। তিনি বলিলেন, তোমার পরিধানের জুব্বাহ্ খুলে ফেল এবং সুগন্ধির চিহ্ন ধুয়ে ফেল। অতঃপর যেভাবে হাজ্জ সমাপন কর, ঠিক সেভাবে উমরাহ্ কর।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৬৬৮]


Posted

in

by

Comments

One response to “হাজ্জ ও উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয”

Leave a Reply