ইসলামে নিষিদ্ধ ক্রয় বিক্রয় বিষয়ক হাদীস সমূহ

ইসলামে নিষিদ্ধ ক্রয় বিক্রয় বিষয়ক হাদীস সমূহ

ইসলামে নিষিদ্ধ ক্রয় বিক্রয় বিষয়ক হাদীস সমূহ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ১২, অনুচ্ছেদঃ (১৫-৩৩)=১৯টি

১৫. অনুচ্ছেদঃ ফল পরিপুষ্ট বা ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা নিষেধ
১৬. অনুচ্ছেদঃ পশুর গর্ভস্থিত বাচ্চার বাচ্চা বিক্রয় করা নিষেধ
১৭. অনুচ্ছেদঃ প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ
১৮. অনুচ্ছেদঃ একই বিক্রয়ে দুই প্রকারের শর্ত নিষেধ
১৯. অনুচ্ছেদঃ যে জিনিস আয়ত্তে নেই তার অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ
২০. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালার স্বত্ব বিক্রয় অথবা হেবা করা মাকরূহ
২১. অনুচ্ছেদঃ পশুর বিনিময়ে পশু ধারে বিক্রয় করা নিষেধ
২২. অনুচ্ছেদঃ দুটি গোলামের বিনিময়ে একটি গোলাম ক্রয়-বিক্রয় করা
২৩. অনুচ্ছেদঃ গমের বিনিময়ে সমপরিমাণ গম বেচা-কেনা করিতে হইবে, অতিরিক্ত দেয়া-নেয়া নিষেধ
২৪. অনুচ্ছেদঃ মুদ্রার বিনিময়
২৫. অনুচ্ছেদঃ তাবীরের পর খেজুর গাছ ক্রয় করা এবং সম্পদশালী গোলাম ক্রয় করা
২৬. অনুচ্ছেদঃ একে অপর হইতে আলাদা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের [ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের] স্বাধীনতা বজায় থাকে
২৭. অনুচ্ছেদঃ ক্রয়-বিক্রয়ের পর একে অপরের সন্তুষ্টি ছাড়া আলাদা না হওয়া
২৮. অনুচ্ছেদঃ যে লোক ক্রয়-বিক্রয়ের কালে প্রতারিত হয়
২৯. অনুচ্ছেদঃ দুধ জমিয়ে স্তন ফুলানো পশুর বর্ণনা
৩০. অনুচ্ছেদঃ পশু বিক্রয়ের সময় এর পিঠে চড়ার শর্ত রাখা
৩১. অনুচ্ছেদঃ বন্ধকী জিনিসের ব্যবহার প্রসঙ্গে
৩২. অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণ ও পুঁতির দানা খচিত মালা কেনা প্রসঙ্গে
৩৩. অনুচ্ছেদঃ গোলাম বিক্রয়ের সময় ওয়ালার শর্ত করা নিষেধ

১৫. অনুচ্ছেদঃ ফল পরিপুষ্ট বা ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা নিষেধ

১২২৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

খেজুরের লাল বা হলুদ বর্ণ না আসা পর্যন্ত তা বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারণ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২২৭. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণীতঃ

একই সনদ সূত্রে আরো বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শীষ জাতীয় ফসল [ধান, গম ইত্যাদি] বিক্রয় করিতে নিষেধ করিয়াছেন যতক্ষণ তা পেকে সাদা না হয়।

সহীহ্‌, প্রাগুক্তআনাস, আইশা, আবু হুরাইরা, ইবনি আব্বাস, জাবির, আবু সাঈদ ও যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিম অমল করিয়াছেন। ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই বিক্রয় করা তাহাদের মতে মাকরূহ্‌। এই মত পোষণ করেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২২৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কাল রং ধারণ না করা পর্যন্ত আঙ্গুরকে এবং হৃষ্টপুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত শস্যকে বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২১৭]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটাকে শুধু হাম্মাদ ইবনি সালামার সূত্রেই মারফু হিসেবে জেনেছি।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬. অনুচ্ছেদঃ পশুর গর্ভস্থিত বাচ্চার বাচ্চা বিক্রয় করা নিষেধ

১২২৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[পশুর] গর্ভস্থিত বাচ্চার বাচ্চা বিক্রি করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৯৭], মুসলিম, বুখারী।আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস ও আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস মোতাবিক অভিজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। হাবলুল হাবল বলিতে বাচ্চার বাচ্চা বুঝায়। এভাবে বিক্রয় করাটা আলিমদের মতে বাতিল বলে গণ্য হইবে। এটা ক্রয়-বিক্রয়ে এক প্রকারের প্রতারণা। শুবা-আইয়্যূব হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর সূত্রে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উমারের এ হাদীসটি আবুল ওয়াহ্‌হাব আস-সাকাফী এবং অন্যান্যরা আইয়্যূব হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি নাফি হইতে, তিনি ইবনি উমার হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং এ সূত্রটি অনেক বেশি সহিহ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭. অনুচ্ছেদঃ প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ

১২৩০.আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করিতে এবং কাঁকর নিক্ষেপে ক্রয়-বিক্রয় নির্ধারিত করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৯৪], মুসলিম।ইবনি উমার, ইবনি আব্বাস, আবু সাঈদ ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তারা প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করাকে নিষিদ্ধ বলেছেন। ঈমাম শাফি বলেছেন, প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে রহিয়াছে পানির মধ্যের মাছ, পলাতক গোলাম, শূন্যে উড়ন্ত পাখি বা অনুরূপ পর্যায়ের কোন কিছুর ক্রয়-বিক্রয়। কাঁকর নিক্ষেপে বিক্রয়ের ধরণ হলঃ যদি বিক্রেতা ক্রেতাকে বলে, তোমার দিকে আমি যখন কোন কাঁকর ছুড়ে মারবো তখন তোমার ও আমার মাঝে বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে ক্রয়-বিক্রয় করাটা। এটা মুনাবাযা ধরণের ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এটাও জাহিলী যুগের প্রথা।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৮. অনুচ্ছেদঃ একই বিক্রয়ে দুই প্রকারের শর্ত নিষেধ

১২৩১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, দুই ধরণের বিক্রয় ব্যবস্থার মাধ্যমে [দুই ধরনের শর্তে] একই জিনিসের বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, মিশকাত [২৮৬৮], ইরওয়া [৫/১৪৯]আবদুল্লাহ ইবনি আমর, ইবনি উমার ও ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করেন। “বাইআতাইনে ফী বাইআতিন”-এর ব্যাখ্যায় একদল বিশেষজ্ঞ আলিম বলেছেনঃ ক্রেতাকে বিক্রেতা বলিল, এই কাপড়টি দশ টাকায় যদি নগদ মূল্যে ক্রয় করা হয়, তবে বাকীতে ক্রয় করলে বিশ টাকা। এই দুটি বিক্রয় প্রস্তাবের মধ্যে কোন একটিকে কোন পক্ষই নাকচ করিল না। কিন্তু কোন একটি প্রস্তাব যদি গ্রহণ করে নেয় এবং সে অনুযায়ী চুক্তি হয় তবে তাতে কোন সমস্যা নেই।ঈমাম শাফি বলেছেন, একই বিক্রয়ে দুই ধরণের বিক্রয় অন্তর্ভুক্ত করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন। তার দৃষ্টান্ত হলঃ কোন লোক বলিল, আমি তোমার নিকট এত টাকায় আমার এই ঘর বিক্রয় করব এই শর্তে যে, আমার নিকট তোমার গোলামটিও এত টাকায় বিক্রয় করিতে হইবে। তোমার গোলাম যখন আমার অধীনে আসবে আমার ঘরও তখন তোমার অধীনে চলে যাবে। এই প্রকারের ক্রয়-বিক্রয় ঐ ক্রয়-বিক্রয় হইতে ভিন্ন যেখানে পণ্যের মধ্যে কোনটিরই মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি বিধায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে বিক্রিত দ্রব্যের মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯. অনুচ্ছেদঃ যে জিনিস আয়ত্তে নেই তার অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ

১২৩২. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট জানার জন্য বললাম, আমার নিকট এসে কোন লোক এমন জিনিস কিনতে চায় যা আমার নিকট নেই। আমি এভাবে বিক্রয় করিতে পারি কি যে, তা বাজার হইতে ক্রয় করে এনে তাকে দিব? তিনি বলেনঃ যা তোমার অধিকারে নেই তা তুমি বিক্রয় কর না।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৮৭]আব্দুল্লাহ ইবনি উমার হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৩৩. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার হাতে নেই এমনসব বস্তু বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, দেখুন পূর্বের হাদীসআবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। ইসহাক ইবনি মানসূর বলেন, ঈমাম আহ্‌মাদকে আমি প্রশ্ন করলাম, “ঋণ ও বিক্রয় একত্রে জায়িয নয়” এ কথার অর্থ কি? তিনি বলিলেন, কোন লোককে ঋণও প্রদান করলে এবং এর সাথে সাথে তার নিকট তোমার পণ্যও চড়া দামে বিক্রয় করলে। অথবা এরূপও হইতে পারে যে, কোন জিনিস [বন্ধক রেখে] তাকে ঋণ দিয়ে বললে, তোমার এটা [বন্ধক] এতো দামে বিক্রীত বলে গণ্য হইবে যদি ঐটা পরিশোধ করিতে না পার। ইসহাক আরও বলেন, আমি ঈমাম আহ্‌মাদকে পুনরায় বললাম, “লোকসানের দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিক্রয় হয় না” কথার অর্থ কি? তিনি বলিলেন, আমার মতে শুধু খাদ্যদ্রব্যের বেলায় এটা প্রযোজ্য হইবে অর্থাৎ যতক্ষণ এটা তোমার হস্তগত না হইবে ততক্ষণ তা বিক্রয় করিতে পারবে না। ইসহাক বলেন, পরিমাপ যন্ত্র বা পাত্র দিয়ে যা মাপা হয় সেই সব ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য। ঈমাম আহ্‌মাদ বলেন, যদি এভাবে বলা হয়ঃ আমি এ কাপড় তোমার নিকট বিক্রয় করলাম এবং এর সেলাই ও ধোয়ার কাজ আমার দায়িত্বে, তবে একই বিক্রয়ের মধ্যে এটাও দুটি শর্তারোপের একটি উদাহরণ। সে যদি এরূপ বলেঃ এটা তোমার নিকট বিক্রয় করলাম এবং আমিই এটা ধুয়েও দিব, তবে এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা, একটি শর্ত করা হয়েছে [দুটি নয়]।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৩৪. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঋণ ও বিক্রয় একত্রে জায়িয নয় এবং দুই প্রকারের শর্তও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া জায়িয নয়, মুনাফা গ্রহণও জায়িয নয় যতক্ষণনা লোকসানের দায়িত্ব না নেয়া হয়, তোমার আয়ত্তে নেই এমন বস্তু বিক্রয় করাও জায়িয নয়।

হাসান সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৮৮]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। একাধিক সূত্রে হাকীম [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটি বর্ণিত আছে। আইয়ূব সাখতিয়ানী ও আবু বিশর বর্ণনা করিয়াছেন, ইউসুফ ইবনি মাহিক হইতে, তিনি হাকীম ইবনি হিযাম হইতে। আউফ এবং হিশাম ইবনি হাস্‌সান বর্ণনা করিয়াছেন, ইবনি সীরীন হইতে, তিনি হাকীম ইবনি হিযাম হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। এর পরবর্তী বর্ণনাটি মুরসাল। প্রকৃত পক্ষে ইবনি সীরীন বর্ণনা করিয়াছেন, আইয়ুব সাখতিয়ানী হইতে, তিনি ইউসুফ ইবনি মাহাক হইতে, তিনি হাকীম ইবনি হিযাম হইতে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২৩৫. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে নিষেধ করিয়াছেন আমার কাছে নেই এমন জিনিস বিক্রয় করিতে।

সহীহ্‌, দেখুন হাদীস নং [১২৩২, ১২৩৩]

আবু ঈসা বলেন, ওয়াকী এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন, ইয়াযীদ ইবনি ইবরাহীম হইতে, তিনি ইবনি সীরীন হইতে, তিনি আইয়্যূব হইতে, তিনি হাকীম ইবনি হিযাম হইতে। এতে ওয়াকী ইউসুফ ইবনি মাহাকের উল্লেখ করেননি। আব্দুস সামাদের সনদ সূত্রটি অনেক বেশি সহিহ। ইয়াহইয়া ইবনি কাসীর এই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন ইয়ালা ইবনি হাকীম হইতে, তিনি ইউসুফ ইবনি মাহাক হইতে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি ইসমাহ হইতে, তিনি হাকীম ইবনি হিযাম হইতে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসায়াম হইতে। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করেন। তারা হস্তগতহীন জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়কে মাকরূহ্‌ বলেছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২০. অনুচ্ছেদঃ ওয়ালার স্বত্ব বিক্রয় অথবা হেবা করা মাকরূহ

১২৩৬. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ওয়ালা স্বত্ব বিক্রয় করিতে অথবা তা দান করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৭৪৭,২৭৪৮]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আমরা এ হাদীসটি শুধু আব্দুল্লাহ ইবনি দীনারের সূত্রেই ইবনি উমার হইতে জেনেছি। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। উপরোক্ত হাদীসটি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে অন্য একটি সূত্রেও বর্ণিত আছে, কিন্তু তার সনদে বিপত্তি আছে {উবাইদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ [রাদি.]-এর মাঝে নাফি [রঃ]-এর নাম যোগ করার}। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সুলাইম এই ভুল করিয়াছেন। আবদুল ওয়াহ্‌হাব আস-সাকাকী, আবদুল্লাহ ইবনি নুমাইর এবং আরও অনেকে উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে, তিনি ইবনি উমার হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সনদ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। এই সনদসূত্রটি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সুলাইমের সনদের চেয়ে অনেক বেশি সহিহ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২১. অনুচ্ছেদঃ পশুর বিনিময়ে পশু ধারে বিক্রয় করা নিষেধ

১২৩৭. সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

পশুর বিনিময়ে পশু ধারে [করজে] বিক্রয় করিতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করিয়াছেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২৭০]ইবনি আব্বাস, জাবির ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। আলী ইবনিল মাদীনী ও অন্যান্যের মতে সামুরা [রাদি.]-এর নিকট হাসান [রঃ]  হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন। এ হাদীস মোতাবিক রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগন আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, পশুর বিনিময়ে পশু ধারে বিক্রয় করা জায়িয নয়। এই মত দিয়েছেন সুফিয়ান সাওরী ও কূফাবাসী আলিমগণ। ঈমাম আহ্‌মাদও একই রকম মত দিয়েছেন। পশুর বিনিময়ে পশু ধারে বিক্রয় করার পক্ষে রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর অপর একদল সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগন সন্মতি দিয়েছেন। এই মত ঈমাম শাফি ও ইসহাকের।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৩৮. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুটি পশুর বদলে একটি পশু ধারে [করজে] বিক্রয় করা জায়িয নয়, কিন্তু উপস্থিত [নগদ] লেনদেন হলে কোন সমস্যা নেই।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২৭১]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২২. অনুচ্ছেদঃ দুটি গোলামের বিনিময়ে একটি গোলাম ক্রয়-বিক্রয় করা

১২৩৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট একজন ক্রিতদাস এসে হিজরাতের উদ্দেশ্যে তাহাঁর নিকট শপথ করে। সে যে ক্রীতদাস রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেটা জানতেন না। তার মালিক এসে উপস্থিত হল তাকে ফেরত নেয়ার জন্য। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি একে আমার নিকট বিক্রয় করে দাও। তিনি তাকে কিনলেন দুইটি হাবশী গোলামের বিনিময়ে। এরপর হইতে কারো বাইআত গ্রহণের পূর্বে তিনি প্রশ্ন করে নিতেন, সে ক্রীতদাস কি না।

সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস, মুসলিমআনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা ৰলেন, জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। আলিমগণ এ হাদীস মোতাবিক আমল করেন। তাহাদের মতে দুটো গোলামের বিনিময়ে একটি গোলাম কেনাতে কোন সমস্যা নেই, তবে নগদ লেন-দেন হইতে হইবে। বাকীর মাধ্যমে এ জাতীয় লেনদেন সম্পাদন প্রসঙ্গে তাহাদের মধ্যে মতের অমিল আছে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩. অনুচ্ছেদঃ গমের বিনিময়ে সমপরিমাণ গম বেচা-কেনা করিতে হইবে, অতিরিক্ত দেয়া-নেয়া নিষেধ

১২৪০. উবাদা ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সমপরিমাণ স্বর্ণের পরিবর্তে সমপরিমাণ স্বর্ণ হইতে হইবে; সমপরিমাণ রূপার পরিবর্তে সমপরিমাণ রূপা হইতে হইবে; সমপরিমাণ খেজুরের পরিবর্তে সমপরিমাণ খেজুর হইতে হইবে; সমপরিমাণ গমের পরিবর্তে সমপরিমাণ গম হইতে হইবে; সমপরিমাণ লবণের পরিবর্তে সমপরিমাণ লবণ হইতে হইবে এবং সমপরিমাণ যবের পরিবর্তে সমপরিমাণ যব হইতে হইবে। যে লোক এ সবের লেনদেনে বেশি পরিমাণ দিবে অথবা নিবে সে সূদে লেনদেনকারী বলে বিবেচিত হইবে। তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী রূপার পরিমাণের পরিবর্তে স্বর্ণের পরিমাণ নির্ধারণ করে নগদ বিক্রয় করিতে পার। তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী খেজুরের পরিমাণের পরিবর্তে গমের পরিমাণ নির্ধারণ করে নগদ বিক্রয় করিতে পার। তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী খেজুরের পরিমাণের পরিবর্তে যবের পরিমাণ ঠিক করে নগদ বিক্রয় করিতে পার।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২৫৪], মুসলিম।আবু সাঈদ, আবু হুরাইরা, বিলাল ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উবাদা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। উল্লেখিত হাদীসের অপর এক বর্ণনায় আছেঃ “তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী গমের পরিমাণের পরিবর্তে যবের পরিমাণ নির্ধারণ করে নগদ বিক্রয় করিতে পার”। আর এক বর্ণনায় আছেঃ “তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী বার্লির পরিমাণের পরিবর্তে গমের পরিমাণ নির্ধারণ করে [পরিমাণে কম-বেশি করে] নগদ বিক্রয় করিতে পার”। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, সমপরিমাণ গমের পরিবর্তে সমপরিমাণ গম এবং সমপরিমাণ যবের পরিবর্তে সম-পরিমাণ যব বিক্রয় করিতে কোন সমস্যা নেই। বিনিময়ের বস্তু দুটি যদি একই প্রজাতির না হয় তাহলে পরিমাণে কম-বেশি হলে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে নগদ আদান-প্রদান হইতে হইবে। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈ। সুফিয়ান সাওরী, আহ্‌মাদ ও ইসহাকেরও এই মত। শাফিঈ বলেন, এ কথার দলীল হল রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ “তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী গমের পরিমাণের পরিবর্তে যবের পরিমাণ ঠিক করে নগদ বিক্রয় করিতে পার”। একদল আলিমের মতে যবের পরিবর্তে গমের পরিমাণ বেশি নির্ধারণ করে বিক্রয় করা মাকরূহ্‌, উভয়ের পরিমাণ সমান থাকতে হইবে। ঈমাম মালিক এই মত পোষণ করেন। কিন্তু প্রথম মতই অনেক বেশি সহীহ্‌ ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪. অনুচ্ছেদঃ মুদ্রার বিনিময়

১২৪১. নাফি [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু সাঈদ [রাদি.]-এর নিকট আমি ও ইবনি উমার [রাদি.] গেলাম। তিনি আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, আমার দুটো কানই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেঃ তোমরা স্বর্ণের পরিবর্তে স্বর্ণ বিক্রয় কর না পরিমাণে সমান না রেখে। একইভাবে তোমরা রূপার পরিবর্তে রূপা বিক্রয় কর না পরিমাণে সমান সমান না রেখে। একটি অন্যটি হইতে পরিমাণে কম-বেশি করা যাবে না। উপস্থিত বস্তুর পরিবর্তে অনুপস্থিত বস্তু বিক্রয় কর না।

সহীহ্‌, ইরওয়া [৫/১৮৯], বেচা-কেনার হাদীস, নাসা-ঈ।আবু বাকার, উমার, উসমান, আবু হুরাইরা, হিশাম ইবনি আমির, বারাআ, যাইদ ইবনি আরকাম, ফাযালী ইবনি উবাইদ, আবু বাক্‌রা, ইবনি উমার, আবু দারদা ও বিলাল [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, সূদের অনুচ্ছেদে নাবী [সাঃআঃ] হইতে আবু সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ।এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈগণ আমল করিয়াছেন।তবে ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছেঃ “স্বর্ণের পরিবর্তে স্বর্ণ এবং রূপার পরিবর্তে রূপা নগদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পরিমাণে কম-বেশি করাতে তিনি কোন সমস্যা মনে করেন না। তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র ধার-কর্জের ক্ষেত্রেই [কম-বেশি করলে] সূদ হয়।”অন্য কতিপয় সাহাবী হইতেও একইরকম বর্ণিত আছে। কিন্তু এও বর্ণিত আছে যে, তাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এই হাদীসটি আবু সাঈদ [রাদি.] শুনানোর পর তিনি [ইবনি আব্বাস] তার উপরোক্ত বক্তব্য বাতিল করেন। [আবু ঈসা বলেন], উল্লেখিত দুটি মতের মধ্যে প্রথম মতই অনেক বেশি সহীহ্‌ ।আবু সাঈদের হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। এই মত সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকেরও। ইবনিল মুবারাক বলেন, মুদ্রার বিনিময় জায়িয হওয়া প্রসঙ্গে কোন দ্বিমত নেই।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৪২. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বাকি নামক বাজারে উটের ব্যবসা করতাম। আমি কখনও স্বর্ণ মুদ্রার বদলে উট বিক্রয় করতাম কিন্তু দাম নেয়ার সময় রৌপ্যমুদ্রা নিতাম। আবার কখনও রৌপ্য মুদ্রার বদলে তা বিক্রয় করতাম এবং দাম নেয়ার সময় স্বর্ণ মুদ্রা নিতাম। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে তাঁকে হাফসা [রাদি.]-এর ঘর হইতে বেরিয়ে আসতে দেখলাম। আমি এ সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ এরূপ দাম গ্রহণ করায় কোন সমস্যা নাই।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২২৬২]

আবু ঈসা বলেন, সিমাক ইবনি হারবের সূত্রেই আমরা এই হাদীসটি মারফূ হিসাবে জেনেছি। কিন্তু দাঊদ ইবনি আবু হিন্দ সাইদ ইবনি জুবাইরের সূত্রে ইবনি উমারের এ হাদীসটি মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। একদল বিশেষজ্ঞ আলিম এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে স্বর্ণ মুদ্রার পরিবর্তে রৌপ্যমুদ্রা অথবা রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে স্বর্ণ মুদ্রা নিতে কোন সমস্যা নেই। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাকের এই মত। একদল সাহাবী ও তাবিঈর মতে এরুপ করা মাকরূহ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১২৪৩. মালিক ইবনি আওস ইবনি হাদসান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এই বলিতে বলিতে সামনে এগিয়ে গেলাম, কে রূপার মুদ্রা পরিবর্তন করিবে? তালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ এ সময়ে উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-এর নিকট ছিলেন। তিনি বলিলেন, তোমার স্বর্ণ আমাদেরকে দেখাও এবং [কিছুক্ষণ] পরে আমাদের কাছে আস। আমাদের খাদিম আসার পরই তোমাকে রূপার মুদ্রা প্রদান করব। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহর শপথ! তা কখনও হইতে পারে না। হয় এখনই তাকে রূপার মুদ্রা প্রদান কর না হয় তাকে তার স্বর্ণ ফেরত দাও। কেননা, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ স্বর্ণের পরিবর্তে রূপার মুদ্রা নগদ আদান-প্রদান না হলে তা গ্রহণ করা সূদের অন্তর্ভুক্ত। গমের পরিবর্তে গম নগদ আদান-প্রদান না হলে তা সূদের অন্তর্ভুক্ত; যবের পরিবর্তে যবের নগদ বিনিময় না হলে তা সূদের অন্তর্ভুক্ত এবং খেজুরের পরিবর্তে খেজুরের নগদ বিনিময় না হলে সুদ হইবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২৫৩], নাসা-ঈ।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। হাআ ওয়া হাআ-এর অর্থ নগদ ও উপস্থিত বিনিময় ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫. অনুচ্ছেদঃ তাবীরের পর খেজুর গাছ ক্রয় করা এবং সম্পদশালী গোলাম ক্রয় করা

১২৪৪. সালিম [রঃ] হইতে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [পিতা] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ তাবীরের পর কোন লোক খেজুর বাগান কিনলে এর ফলের মালিক হইবে বিক্রেতা, যদি ক্রয়কারীর জন্য [মালিকানা] শর্ত করা না হয়। যদি কোন লোক সম্পদশালী গোলাম কিনে তবে ঐ সম্পদের অধিকারী হইবে বিক্রেতা, ক্রেতার জন্য ঐ সম্পদের যদি কোনরূপ শর্ত করা না হয়।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২১০, ২২১২], নাসা-ঈ।জাবির [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ। একইভাবে একাধিক সূত্রে যুহরী হইতে, তিনি সালিমের সূত্রে, তিনি ইবনি উমারের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন লোক তাবীরের পর খেজুর গাছ কিনলে বিক্রেতাই তার ফল ভোগ করিবে, যদি ক্রয়কারী এর মালিকানার কোন শর্ত না করে থাকে। একইভাবে কোন লোক যদি সম্পদশালী গোলাম কিনে তবে বিক্রেতা তার সম্পদের অধিকারী হইবে, যদি ক্রেতার জন্য কোন শর্ত নির্ধারণ করা না হয়। ইবনি উমর [রাদি.]-এর সূত্রে নাফি [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তাবীরের কাজ পূর্ণ হওয়ার পর কোন লোক খেজুর বাগান কিনলে এর ফল বিক্রেতা পাবে, কিন্তু ক্রেতার জন্য শর্ত করা হলে তা সে পাবে। নাফি [রাদি.] হইতে ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেছেন, যদি কোন লোক সম্পদশালী গোলাম কিনে তবে বিক্রেতাই এই সম্পদের মালিক হইবে, কিন্তু ক্রেতার জন্য শর্ত করা হলে তা সে পাবে। একইরকম হাদীস আরো কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত আছে।এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। একই কথা বলেছেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। ঈমাম বুখারী বলেছেন, সালিমের সূত্রে যুহুরী হইতে বর্ণিত ইবনি উমারের হাদীসটি এ অনুচ্ছেদে সর্বাধিক সহিহ।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬. অনুচ্ছেদঃ একে অপর হইতে আলাদা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের [ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের] স্বাধীনতা বজায় থাকে

১২৪৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপর হইতে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত অথবা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের জন্য ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার স্বাধীনতা বজায় থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, বসে থাকাবস্থায় ইবনি উমার [রাদি.] কোন জিনিস কিনলে [তা নির্ধারিত করার জন্য] উঠে দাড়িয়ে যেতেন।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২১৮১], নাসা-ঈ।আবু বারযা, হাকীম ইবনি হিযাম, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, সামুরা, আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল সাহাবী ও তাবিঈ আমল করিয়াছেন। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন ঈমাম শাফি, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। তারা বলেন, একে অপর হইতে আলাদা হওয়ার অর্থ হচ্ছেঃ সশরীরে আলাদা হওয়া, বাক্যালাপ বন্ধ করা নয়। অপর একদল আলিম বলেছেন, আলাদা হওয়ার অর্থ হচ্ছে কথাবার্তা বন্ধ হওয়া [অর্থাৎ চুক্তি অনুষ্ঠিত হলে এবং আলোচনার প্রসঙ্গ পরিবর্তিত হলে স্বাধীনতা বজায় থাকিবে না]। কিন্তু প্রথম মতই অধিকতর সহিহ। কেননা, এ হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনি উমার [রাদি.]। এজন্য তিনিই এ হাদীসের মর্ম বেশি ভাল বুঝতে পেরেছেন। তার প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে, তিনি ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক করিতে চাইলে উঠে দাঁড়িয়ে যেতেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৪৬. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপর হইতে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত উভয়ের জন্য [ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার] স্বাধীনতা বজায় থাকে। যদি তারা দুজনেই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে তবে তাহাদের এই লেন-দেনে বরকত হয়। যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং দোষ-ত্রুটিগুলো গোপন করে রাখে তবে তাহাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বারকাত তুলে নেয়া হয়।

সহীহ্‌, ইরওয়া [১২৮১], বেচা-কেনার হাদীস, নাসা-ঈ এ হাদীসটি সহিহ। আবু বারযা আসলামী [রাদি.] হইতেও একইভাবে বর্ণিত আছে যে, নৌকায় বসে দুটি লোক একটি ঘোড়া কেনা-বেচা করিল। এরপর দুজনের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে তারা আবু বারযা [রাদি.]-এর নিকট এর সমাধান চায়। তখন তিনিও নৌকায় ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের দুজনকে একে অপর হইতে আলাদা হইতে দেখি না। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপরে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত উভয়ের বেচা-কেনা বাতিল করার স্বাধীনতা বজায় থাকে।”কূফার আলিমগণ বলেন, আলাদা হওয়ার অর্থ কথাবার্তা হইতে আলাদা হওয়া। সুফিয়ান সাওরীরও এই মত। একইরকম মত ঈমাম মালিক হইতেও বর্ণিত হয়েছে। ইবনিল মুবারাক বলেন, এ হাদীসের দলীল [সশরীরে পৃথক হওয়ার] আমি কিভাবে খণ্ডন করিতে পারি? অথচ এ হাদীস সহীহ্‌ সনদে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হয়েছে যা এই মতকেই মজবুত করে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বাণীঃ স্বাধীনতামূলক ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থ হলঃ ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও যদি বিক্রেতা ক্রেতাকে তা বাতিলের স্বাধীনতা প্রদান করে কিন্তু ক্রেতা তারপরও তা ক্রয় ঠিক রাখে, তারপর উভয়ে পৃথক না হলেও ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার স্বাধীনতা আর থাকে না। এ হাদীসের ব্যাখ্যা ঈমাম শাফি ও অন্যান্যরা এরূপই করিয়াছেন। কিন্তু ইবনি উমারের হাদীস দ্বারা সশরীরে পৃথক হওয়ার মতটি প্রমাণিত হয়।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৪৭. আমর ইবনি শুআইব [রঃ] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে একে অপর হইতে আলাদা না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের জন্য [ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের] স্বাধীনতা বজায় থাকে, কিন্তু স্বাধীনতামূলক বেচা-কেনা হলে [আলাদা হওয়ার পরও স্বাধীনতা বজায় থাকে]। দুজনের মধ্যে যে কোন একজন ক্রয় বা বিক্রয় প্রত্যাখ্যান করিতে পারে, এই ভয়ে তাড়াতাড়ি আলাদা হওয়াও বৈধ নয়।

হাসান সহীহ্‌, ইরওয়া [১৩১১]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীসের তাৎপর্য হলঃকোন জিনিস বিক্রয়ের পর ক্রেতা বা বিক্রেতা তা ফেরত দিতে বা নিতে পারে-এই ভয়ে তাড়াতাড়ি করে আলাদা হওয়া উচিত নয়। যদি কথার দ্বারা পৃথক হওয়া নির্ধারিত হত এবং বিক্রয়ের পর স্বাধীনতা না থাকত, তাহলে “ক্রয়-বিক্রয় বাতিলের ভয়ে তাড়াতাড়ি আলাদা হয়ে যাওয়া বৈধ নয়। এ হাদীসের কোন অর্থই হত না।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৭. অনুচ্ছেদঃ ক্রয়-বিক্রয়ের পর একে অপরের সন্তুষ্টি ছাড়া আলাদা না হওয়া

১২৪৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয়ের পর দুজনেই একে অপরের সন্তুষ্টি ছাড়া আলাদা হইবে না।

হাসান সহীহ্‌, ইরওয়া [৫/১২৫, ১২৬]এ হাদীসটিকে আবু ঈসা গরীব বলেছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

১২৪৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] এক বেদুইনকে বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পরেও তা বাতিলের স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন।

হাসান, বেচা-কেনার হাদীস।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৮. অনুচ্ছেদঃ যে লোক ক্রয়-বিক্রয়ের কালে প্রতারিত হয়

১২৫০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি খুবই দুর্বল ছিল। সে ক্রয়-বিক্রয় করত [কিন্তু ঠকে যেত]। নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে এসে তার পরিবারের লোকেরা বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! তাকে ক্রয়-বিক্রয় হইতে বিরত থাকতে বলুন। নাৰী [সাঃআঃ] তাকে ডেকে ক্রয়-বিক্রয় করিতে নিষেধ করিলেন। সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ক্রয়-বিক্রয় হইতে বিরত থাকার কাজটি আমার ধৈর্যের উরধে। তিনি বললেনঃ যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করিবে তখন বলবে নগদ লেন-দেন হইবে এবং যেন প্রতারণা না করা হয়।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৩৫৪], নাসা-ঈ।আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ গারীব। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। তারা বলেন, দুর্বল জ্ঞানের অধিকারী লোক স্বাধীন হলেও তাকে ক্রয়-বিক্রয় হইতে বিরত রাখা উচিত। এই মত ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকের। অন্য একদল আলিমের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক স্বাধীন লোকের উপর [আর্থিক লেন-দেনে] প্রতিবন্ধকতা [হাজর] আরোপ করা উচিত নয়।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯. অনুচ্ছেদঃ দুধ জমিয়ে স্তন ফুলানো পশুর বর্ণনা

১২৫১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [দুধ জমা করে] স্তন ফুলানো পশু যদি কোন ব্যক্তি কিনে তবে তার জন্য [ক্রয় বাতিল করার] স্বাধীনতা আছে। সে চাইলে দুধ দোহনের পর তা ফেরত দিতে পারবে। তবে তাকে এর সাথে এক সা খেজুরও দিতে হইবে।

সহীহ্‌ ইবনি মা-জাহ [২২৩৯], নাসা-ঈ।আবু ঈসা বলেন, আনাস [রাদি.] এবং আরও একজন সাহাবী হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২৫২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ স্তনে দুধ জমা করে রাখা পশুকে যদি কোন লোক কিনে তবে সে [ক্রয় বাতিলের জন্য] তিন দিনের স্বাধীনতা পাবে। সে তা ফেরত দিলে এর সাথে গম ব্যতীত এক সা খাদ্যদ্রব্যও প্রদান করিবে।

সহীহ্‌, প্রাগুক্, মুসলিম। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আমাদের সাথীদের মতে এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিতে হইবে। তাহাদের অন্তর্ভুক্ত আছেন ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাক। “লা সামরা” অর্থঃ গম ব্যতীত অন্য কিছু।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০. অনুচ্ছেদঃ পশু বিক্রয়ের সময় এর পিঠে চড়ার শর্ত রাখা

১২৫৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট তিনি একটি উট বিক্রয় করেন এবং শর্ত রাখেন এর পিঠে আরোহণ করে বাড়ী পর্যন্ত পৌছানোর।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২২০৫], নাসা-ঈ। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। জাবির [রাদি.] হইতে বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস অনুযায়ী একদল সাহাবী ও তাবিঈ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে, একটিমাত্র শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলে তা জায়িয। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। অন্য একদল আলিম বলেন, ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে শর্তারোপ করা জায়িয নয়। শর্ত আরোপ করলে এ ধরণের ক্রয়-বিক্রয় জায়িয হইবে না।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩১. অনুচ্ছেদঃ বন্ধকী জিনিসের ব্যবহার প্রসঙ্গে

১২৫৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বাহনের পশুকে বন্ধক রাখা হলে তার পিঠে আরোহণ করা যাবে। দুগ্ধবতী পশুকে বন্ধক রাখা হলে তার দুধ পান করা যাবে। যে লোক আরোহণ করিবে এবং দুধ পান করিবে তাকে পশুর খরচও প্রদান করিতে হইবে।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৪৪০], বুখারী। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আমরা এ হাদীসটিকে কেবল আমিরের সূত্রেই আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে মারফূভাবে জেনেছি। এটিকে আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী আবু সালিহ [রঃ] হইতে মাওকূফভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। এই মত দিয়েছেন ঈমাম আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। অপর একদল আলিমের মতে, বন্ধক রাখা জিনিস ব্যবহার করা জায়িয নয়।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩২. অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণ ও পুঁতির দানা খচিত মালা কেনা প্রসঙ্গে

১২৫৫. ফাযালা ইবনি উবাইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি খাইবারের যুদ্ধের সময় বার দীনারে একটি মালা ক্রয় করলাম। এতে স্বর্ণ ও পুঁতির দানা মিশানো ছিল। আমি এগুলোকে আলাদা করে বার দীনারের বেশি পরিমাণ স্বর্ণ পেলাম। আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এটা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তা বিক্রয় করা যাবে না যতক্ষণ না তা আলাদা করা হইবে।

সহীহ্‌, বেচা-কেনার হাদীস, মুসলিম।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। ইবনিল মুবারকও উল্লিখিত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে রূপার কারুকার্য খচিত তরবারি, কোমরবন্ধ, তরবারির খাপ ইত্যাদি দিরহামের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করিতে হলে এর সাথে রূপা পৃথক করে নিতে হইবে। এই মত দিয়েছেন ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহ্‌মাদ ও ইসহাকও। অন্য একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম এগুলো আলাদা না করেই তা ক্রয়-বিক্রয়ের সম্মতি দিয়েছেন।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩. অনুচ্ছেদঃ গোলাম বিক্রয়ের সময় ওয়ালার শর্ত করা নিষেধ

১২৫৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বারীরা নাম্নী গোলামকে কিনতে চাইলেন, কিন্তু মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্ত আরোপ করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি তাকে কিনতে পার। কেননা, যে লোক মূল্য পরিশোধ করে অথবা এর মালিক হয় সেই ওয়ালার অধিকারী হয়।

সহীহ্‌, ইবনি মা-জাহ [২৫২১], নাসা-ঈ।ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আমল করিয়াছেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ বলেন, যখন তোমার নিকট মানসূরের সূত্রে বর্ণনা করা হয় তখন তুমি মনে করিবে যে, তুমি তোমার হাত কল্যাণে পরিপূর্ণ করলে। আমি ইবরাহীম নাখঈ ও মুজাহিদ হইতে রিওয়ায়াতের ক্ষেত্রে মানসূরের তুলনায় বেশি আস্থাভাজন অন্য কাউকে পাইনি। আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্‌দী বলেন, কুফাবাসীদের মধ্যে মানসূর সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য লোক।ক্রয় বিক্রয় হাদিস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply