ইসলামে জিহাদ Abu Dawud Bangla Pdf Download

ইসলামে জিহাদ Abu Dawud Bangla Pdf Download

ইসলামে জিহাদ Abu Dawud Bangla Pdf Download , এই অধ্যায়ে মোট হাদীস ৩১১ টি (২৪৭৭ – ২৭৮৭)>>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১৫, অনুচ্ছেদঃ ১-৪২=৪২টি

অনুচ্ছেদ-১ঃ হিজরাত প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-২ঃ হিজরাত কি শেষ?
অনুচ্ছেদ-৩ঃ সিরিয়ায় বসবাস সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৪ঃ জিহাদ অব্যাহত থাকিবে
অনুচ্ছেদ-৫ঃ জিহাদের সওয়াব
অনুচ্ছেদ-৬ঃ বনবাসী জীবন নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৭ঃ জিহাদ শেষে প্রত্যাবর্তনের ফাযীলত
অনুচ্ছেদ-৮ঃ অন্যান্য জাতির তুলনায় রোমবাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদের মর্যাদা
অনুচ্ছেদ-৯ঃ জিহাদের জন্য সমুদ্রযাত্রা
অনুচ্ছেদ-১০ঃ সমুদ্র জিহাদের ফাযীলত
অনুচ্ছেদ-১১ঃ কাফিরকে হত্যাকারীর মর্যাদা
অনুচ্ছেদ-১২ঃ মুজাহিদ পরিবারের নারীদের সতীত্ব রক্ষা করা
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ গনীমাত ছাড়া মুজাহিদ বাহিনী প্রত্যাবর্তন করলে
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ আল্লাহর পথে যিকরের সওয়াব বৃদ্ধি হওয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ যে যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ সীমান্ত পাহাড়া দেয়ার ফাযীলত
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রহরা দেয়ার ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ যুদ্ধ পরিহার করা অপছন্দনীয়
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ কতিপয় লোকের যুদ্ধে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে সার্বজনীন অংশগ্রহনের নির্দেশ রহিত
অনুচ্ছেদ-২০ঃ গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে জিহাদে অংশগ্রহণ না করার অনুমতি
অনুচ্ছেদ-২১ঃ যে কাজে জিহাদের সওয়াব রয়েছে
অনুচ্ছেদ-২২ঃ বীরত্ব ও কাপুরুষতা প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ মহান আল্লাহর বাণী ঃ তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ তীরন্দাজী সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে জিহাদ করে
অনুচ্ছেদ–২৬ঃ যে লোক আল্লাহ্‌র কালেমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ শহীদের মর্যাদা
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ শহীদের শাফাআত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ শহীদের কবরে নূর দৃষ্টিগোচর হওয়া
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ মজুরীর বিনিময়ে যুদ্ধে শ্রমদান
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ অর্থের বিনিময়ে সৈন্য বা যুদ্ধাস্ত্র গ্রহনের অনুমতি সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ কেউ জিহাদে অংশ গ্রহণকালে নিজের সঙ্গে খাদেম নিলে
অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদে যোগদান প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৩৪ঃ যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহন
অনুচ্ছেদ-৩৫: স্বৈরাচারী শাসকের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩৬ঃ অন্যের বাহনে চড়ে জিহাদে যোগদান
অনুচ্ছেদ-৩৭ঃ যে ব্যক্তি সওয়াব ও গনীমাতের আশায় যুদ্ধ করে
অনুচ্ছেদ-৩৮ঃ যে ব্যক্তি নিজেকে [আল্লাহ্‌র রাহে] বিক্রি করে
অনুচ্ছেদ-৩৯ঃ কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহনের পর পরই সেখানে নিহত্ হলে
অনুচ্ছেদ-৪০ঃ যে ব্যক্তি নিজের অস্ত্রের আঘাতে নিহত্ হয়
অনুচ্ছেদ-৪১ঃ দুশমনের মোকাবেলার সময় দুআ করা
অনুচ্ছেদ-৪২ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে

অনুচ্ছেদ-১ঃ হিজরাত প্রসঙ্গে

২৪৭৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জনৈক গ্রাম্যলোক নাবী [সাঃআঃ] কে হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃহায়! হিজরাতের বিষয়টি খুবই কঠিন। তোমার উট আছে কি? সে বললো হাঁ। তিনি [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেনঃ তুমি কি এর সদাক্বাহ দিয়ে থাকো? সে বললো, হাঁ। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃতুমি নদীর ওপারে থেকে আমল করে যাও। আল্লাহ তোমার আমলের নেকী কিছুই কমাবেন না।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৭৮. আল-মিক্বদাম ইবনি শুরাইহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি “আয়িশাহ [রাদি.] কে ইবাদাতের উদ্দেশে নির্জনবাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্জনবাসের জন্য এ টিলাভূমিতে যেতেন। তিনি একবার নির্জনবাসে যাওয়ার ইচ্ছা করেন এবং আমার কাছে সদাক্বাহ্‌র একটি আনাড়ী উট পাঠিয়ে দেন। তিনি বলিলেনঃহে আশিয়াহ! সদয় হও। কেননা সহানুভূতি কোন জিনিষের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে। আর সহানুভূতি উঠে গেলে তা ত্রুটিযুক্ত হয়।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২ঃ হিজরাত কি শেষ?

২৪৭৯.মুআবিয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ তাওবাহ্‌র দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হিজরাত শেষ হইবে না। আর তাওবাহ্‌র দরজা বন্ধ হইবে না যতক্ষণ পশ্চিম দিক হইতে সূর্য উদিত না হয়।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৮০.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাক্কাহ বিজয়ের দিন বলিয়াছেনঃ আর হিজরাত নেই। কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত থাকিবে। এরপর তোমাদের জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হলে তোমরা বেরিয়ে পড়বে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৮১.আমির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদা আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] এর কাছে একটি লোক এলো। তখন কতিপয় লোক সেখানে উপস্থিত ছিল। লোকটি তার নিকটে বসে বললো, আপনি আমাকে এমন কিছু অবহিত করুন যা আপনি  রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেন। তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শূনেছি ঃ সে-ই প্রকৃত মুসলিম যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট হইতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর ঐ ব্যক্তি প্রকৃত মুহাজির যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩ঃ সিরিয়ায় বসবাস সম্পর্কে

২৪৮২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছিঃ [মদিনায়] হিজরাতের পর আরেকটি হিজরাত হইবে [সিরিয়াতে]। পৃথিবীবাসীর যারা এ সময় ইবরাহীম [আঃ] এর হিজরাতের স্থানে [সিরিয়াতে] একত্রিত হইবে তারাই হইবে উত্তম। ঐ সময় দুনিয়ার খারাপ লোকেরাই অন্যান্য এলাকায় অবশিষ্ট থাকিবে। তাহাদের আবাসস্থল তাহাদেরকে স্থানান্তরে নিক্ষেপ করিবে। আল্লাহ তাহাদেরকে মন্দ জানেন। আগুন তাহাদেরকে বাঁদর ও শূকরের সাথে সমবেত করিবে।

দুর্বল ঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৩২৫৯]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৪৮৩. ইবনি হাওয়ালা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শিঘ্রই ইসলামের ব্যপক প্রসার ঘটবে যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনাদল গঠিত হইবে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইয়ামানের সেনাবাহিনী এবং ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনি হাওয়ালা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙ্গী হওয়া মঙ্গলজনক মনে করেণ? তিনি বলিলেনঃতুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে। কেননা তখন এ এলাকাটাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম গণ্য হইবে। আল্লাহ তার সৎকর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর তুমি সিরিয়া যেতে রাজী না হলে অবশ্যই ইয়ামানী সেনাবাহিনীর সঙ্গী হইবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কূপগুলো হইতে পানি উত্তোলন করো। কেননা মহান আল্লাহ আমার ওয়াসিলায় সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরণ পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪ঃ জিহাদ অব্যাহত থাকিবে

২৪৮৪,. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের পক্ষে জিহাদ করিতে থাকিবে এবং তাহাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হইবে। অবশেষে তাহাদের সর্বশেষ দলটি ঈসা [আঃ] এর নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করিবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫ঃ জিহাদের সওয়াব

২৪৮৫. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা নাবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ কোন ধরণের মুমিন পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী? তিনি বলিলেনঃযে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং ঐ ব্যক্তি যে নিজের অনিষ্ট হইতে লোকদের নিরাপদ থাকার জন্য কোন নির্জন গুহায় আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত থাকে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬ঃ বনবাসী জীবন নিষেধ

২৪৮৬. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সন্ন্যাসী জীবন অবলম্বনের অনুমতি দিন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃআমার উম্মাতের সন্ন্যাসবাদ হল মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭ঃ জিহাদ শেষে প্রত্যাবর্তনের ফাযীলত

২৪৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যুদ্ধ থেকে ফেরা যুদ্ধে যোগদানের মতই নেকীর কাজ।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৮ঃ অন্যান্য জাতির তুলনায় রোমবাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদের মর্যাদা

২৪৮৮. আবদুল খাবীর ইবনি সাবিত ইবনি ক্বায়িস ইবনি শাম্মাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা ও দাদা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [তার দাদা] বলেন, একদা উম্মু খাল্লাদ নামক এক মহিলা মুখমন্ডল আবৃত অবস্থায় তার নিহত পুত্রের কথা জিজ্ঞেস করিতে নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে এলেন। নাবী [সাঃআঃ] এর কতিপয় সাহাবী মহিলাকে বলিলেন, তুমি মুখমন্ডল আবৃত অবস্থায় তোমার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করিতে এসেছো। তিনি বলিলেন, যদিও আমার ছেলেকে হারিয়েছি, কিন্তু আমার লজ্জা-শরম তো হারাইনি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তোমার ছেলের জন্য দুজন শহীদের সমান সওয়াব রয়েছে। উম্মু খাল্লাদ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা কিসের জন্য? তিনি বলিলেনঃ কারণ তাহাকে আহলে কিতব হত্যা করেছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৯ঃ জিহাদের জন্য সমুদ্রযাত্রা

২৪৮৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কেউ হাজ্জ, উমরাহ অথবা আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্য ছাড়া যেন সমুদ্রযাত্রা না করে। কারণ সমুদ্রের নীচে আগুন আছে এবং আগুনের নীচে আছে সমুদ্র।

দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬৩৪৩], সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ ওয়াল মাওযুআহ [৪৭৮], ইরওয়া [৯৯১]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১০ঃ সমুদ্র জিহাদের ফাযীলত

২৪৯০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উম্মু সুলাইমের বোন উম্মু হারাম বিনতু মিলকান [রাদি.] [অর্থাৎ আমার খালা] আমার কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের নিকট দুপুরে বিশ্রাম নিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম [রাদি.] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাসির কারণ কি? তিনি বলিলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, [আমার উম্মাতের] কিছু লোক এই সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। যেন তারা রাজার মত সিংহাসনে বসে আছে। উম্মু হারাম বলেন, আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন, যেন আমি তাহাদের দলভুক্ত হই। তিনি বলিলেনঃ তুমি তাহাদের দলভুক্ত হইবে। উম্মু হারাম বলেন, তিনি আবারো ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি আবারো একই কথার পুনরাবৃত্তি করিলেন। তিনি বলেন, আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাহাদের দলভুক্ত করেন। তিনি বলিলেনঃ তুমি তাহাদের প্রথম দলে থাকিবে। আনাস [রাদি.] বলেন, পরবর্তীতে উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] তাহাকে বিবাহ করেন। অতঃপর তিনি নৌ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং উম্মু হারামকেও সাথে নেন। যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তনকালে উম্মু হারামকে একটি খচ্চর বাহন হিসাবে দেয়া হয়। খচ্চরটিতে আরোহণ করলে সেটা তাহাকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়, ফলে তিনি মারা যান।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৯১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

যখনই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুবা নামক পল্লীতে যেতেন, তিনি উম্মু হারাম বিনতু মিলহানের [রাদি.] বাড়িতে উঠতেন। তিনি উবাদাহ ইবনিস সামিত [রাদি.] এর স্ত্রী ছিলেন। একদা তিনি [সাঃআঃ] উম্মু হারামের বাড়িতে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তার মাথায় উঁকুন বেছে দিতে বসেন। হাদিসের বাকী অংশ পূর্বের হাদিসের অনুরূপ।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৯২. উম্মু সুলাইমের [রাদি.] বোন রুমাইসা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার নাবী [সাঃআঃ] ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তখন তিনি [উম্মু হারাম] নিজের মাথা ধৌত করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে মাথা ধৌত করিতে দেখে হাসছেন? তিনি বলিলেনঃ না। অতঃপর হাদিসের বাকী অংশ কিছুটা কম-বেশিসহ পূর্বের হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪৯৩. উম্মু হারাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ সমুদ্রে সফরকারী সৈনিকের নৌযানের ঝাঁকুনিতে বমি হলে তার জন্য একজন শহীদের সওয়াব রয়েছে এবং সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির জন্য রয়েছে দুজন শহীদের সওয়াব।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৪৯৪. আবু উমামাহ আল-বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। অতঃপর আল্লাহ তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাহাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মসজিদে যায়, আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। এমনকি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাহাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ তার জিম্মাদার।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১১ঃ কাফিরকে হত্যাকারীর মর্যাদা

২৪৯৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন কাফির ও তার হত্যাকারী [মুসলিম] কখনও জাহান্নামে একত্র হইবে না।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১২ঃ মুজাহিদ পরিবারের নারীদের সতীত্ব রক্ষা করা

২৪৯৬. ইবনি বুরাইদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [বুরাইদাহ] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বসে থাকা লোকদের উপর মুজাহিদগনের স্ত্রীদের সতীত্ব রক্ষা করা তাহাদের মায়েদের সম্ভ্রম হিফাযাত করার সমতুল্য। মুজাহিদগনের পরিবারের তত্বাবধানকারী বসে থাকা লোকদেরকে কিয়ামাতের দিন মুজাহিদ ব্যক্তির সামনে দাঁড় করানো হইবে। তাহাকে বলা হইবে, এ ব্যক্তি তোমার অনুপস্থিতিতে [খিয়ানাতের সাথে] তোমার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেছে। এখন তুমি তার নেক আমল থেকে যা ইচ্ছা নিয়ে নাও। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলিলেনঃ কাজেই তোমাদের ধারণা কেমন?

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩ঃ গনীমাত ছাড়া মুজাহিদ বাহিনী প্রত্যাবর্তন করলে

২৪৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কোন যোদ্ধাদল আল্লাহর পথে জিহাদ করে গনীমাত লাভ করলে তারা তাহাদের পুরস্কারের দুই-তৃতীয়াংশ পেয়ে গেলো এবং একভাগ অবশিষ্ট রইলো আখিরাতের জন্য। আর যদি তারা গনীমাত না পায় তাহলে তাহাদের সম্পূর্ণ পুরস্কার আখিরাতে দেয়া হইবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৪ঃ আল্লাহর পথে যিকরের সওয়াব বৃদ্ধি হওয়া সম্পর্কে

২৪৯৮. সাহল ইবনি মুআয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ সলাত, সাওম ও যিক্‌র মহান আল্লাহর পথে খরচের তুলনায় নেকীর দিক দিয়ে সাত শত গুণ মর্যাদা রাখে।

দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [১৪৯৩]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৫ঃ যে যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়

২৪৯. আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ কেউ মহান আলাহর পথে [জিহাদের উদ্দেশ্যে] বের হয়ে মারা গেলে কিংবা নিহত হলে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করে। ঘোড়া বা উট তাহাকে পায়ের তলায় পিষ্ট করলে কিংবা বিষধর প্রাণী তাহাকে দংশন করলে বা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও সে শহীদের মর্যাদা পায় এবং তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়।

দুর্বলঃ মিশকাত [৩৮৪০]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৬ঃ সীমান্ত পাহাড়া দেয়ার ফাযীলত

২৫০০. ফাদালাহ ইবনি উবাইদ [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সীমান্ত প্রহরার সওয়াব বন্ধ হয় না। কিয়ামাত পর্যন্ত তার আমলের সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকিবে এবং সে ক্ববরের যাবতীয় ফিত্বনাহ থেকে নিরাপদ থাকিবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৭ঃ মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রহরা দেয়ার ফাযীলাত

২৫০১. সাহল ইবনিল হানযালিয়া [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তারা [সাহাবীগণ] রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সঙ্গে হুনাইনের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে সফরে বের হন। রাত আসা পর্যন্ত তার একে অপরের অনুসরন করে চলতে থাকেন। পথিমধ্যে রাসূলুলাহ [সাঃআঃ]-কে সলাতের সময় উপস্থিত হওয়ার কথা জানানো হলো। এমন সময় একজন অশ্বারোহী এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাদের কাছে থেকে পৃথক হয়ে অমুক অমুক পাহাড়ে উঠে দেখিতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই তাহাদের উট, বকরী সবকিছু নিয়ে হুনাইনে একত্র করেছে, একথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হেসে বলিলেনঃ ইনশাআল্লাহ আগামীকাল এসব কিছুই মুসলিমদের গনীমাতের বস্তু হইবে। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ আজ রাতে কে আমাদের পাহাড়া দিবে? আনাস ইবনি আবু মারসাদ আল-গানাবী [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। তিনি বলিলেনঃ তাহলে ঘোড়ায় চড়ো। তিনি তার একটি ঘোড়ায় চড়ে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে গেলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ তুমি এ গিরিপথের দিকে খেয়াল করিবে এবং এর শেষ চূড়ায় গিয়ে পাহারা দিবে। সাবধান! আমরা যেন তোমার অসর্তকতার কারণে ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোর হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতের জন্য বেরিয়ে এসে দু রাকআত [সুন্নাত] সলাত আদায় করে বলিলেনঃ তোমাদের অশ্বারোহীর কি খবর? সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার কোন খবর অবহিত নই। অতঃপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাত পড়ালেন এবং গিরিপথের দিকে তাকাতে থাকলেন। সলাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি বলিলেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের অশ্বারোহী এসে গেছে। সাহাবীগণ বলিলেন, আমরা গাছের ফাঁক দিয়ে গিরিপথের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আসতেছেন। এমনকি তিনি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সামনে এসে তাঁকে সালাম দিয়ে বললো, আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] নির্দেশ অনুযায়ী গিরিপথের শেষ প্রান্তে গিয়েছি এবং ভোর বেলায় উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, কিন্তু কোন [শত্রুকেই] দেখিতে পাইনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ তুমি কি রাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমেছিলে? তিনি বলিলেন, সলাত ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া নামিনি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে বলিলেনঃ তুমি তোমার জন্য [জান্নাত] অবধারিত করেছো, এরপর তোমার কোন [অতিরিক্ত] নেক কাজ না করলেও চলবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ যুদ্ধ পরিহার করা অপছন্দনীয়

২৫০২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, সে জিহাদ করেনি এবং মনে জিহাদের আকাঙ্খাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিক্বী অবস্থায় মারা গেলো।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫০৩. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে নিজে জিহাদ করেনি যা কোন মুজাহিদকে জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেয়নি অথবা মুজাহিদ পরিবারের উপকারও করেনি, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের পূর্বে তাহাকে কঠিন বিপদে ফেলবেন।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৫০৪. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্পদ, জীবন ও কথার দ্বারা জিহাদ করো।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৯ঃ কতিপয় লোকের যুদ্ধে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে সার্বজনীন অংশগ্রহনের নির্দেশ রহিত

২৫০৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [মহান আল্লাহর বাণী]ঃ “তোমরা যুদ্ধের জন্য বের না হলে তিনি তোমাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দিবেন… [সূরাহ আত-তাওবাহঃ আয়াত ৩৯]। “মাদীনাহ্‌র অধিবাসী… তারা যা করে” পর্যন্ত [সূরাহ আত-তাওবাহঃ ১২০-১২১]। উল্লেখিত আয়াতগুলোর হুকুম নিম্নের আয়াত দ্বারা মানসুখ হয়েছেঃ “সকল মুমিনের একসঙ্গে বের হওয়া জরুরী নয়… [সূরাহ আত-তাওবাহঃ ১২২]।

সহিহ। এটি নিকাহ অধ্যায়ের প্রথম দিকে গত হয়েছে। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫০৬. নাজাদা ইবনি নুফাই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলামঃ “তোমরা যুদ্ধের জন্য বের না হলে তিনি তোমাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দিবেন… [সূরাহ আত-তাওবাহঃ আয়াত ৩৯]। তিনি বলিলেন, [যারা যুদ্ধে যায়নি] তাহাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর এটাই ছিল তাহাদের শাস্তি [অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ]।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২০ঃ গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে জিহাদে অংশগ্রহণ না করার অনুমতি

২৫০৭. যায়িদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর[সাঃআঃ] পাশে ছিলাম। এমতাবস্থায় প্রশান্তি ও নীরবতা তাঁকে আচ্ছন্ন করলো। রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] উরু আমার উরুর উপর পড়লো। আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] উরুর চাইতে অধিক ভারি কোন জিনিস অনুভব করিনি। অতঃপর ওয়াহীর প্রভাব কেটে গেলে তিনি বল্‌লেনঃ লিখ! কাজেই আমি [ছাগলের] কাঁধের [চামড়ার] উপর লিখলাম, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে, তারা সম্মানের দিক দিয়ে মু্জাহিদগণের সমান নয়।”[সূরাহ আন-নিসা ঃ আয়াত ৯৫]। ইবনি উম্মু মাকতুম [রাদি.] মুজাহিদদের মর্যাদার কথা শুনে দাঁড়ালেন। তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে যারা জিহাদ করিতে অক্ষম তাহাদের অবস্থা কি হইবে? তিনি কথা শেষ করার পর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [ওহী অবতীর্ণের কারণে] প্রশান্তি ও নীরবতা আচ্ছন্ন করে ফেললো। তাহাঁর উরু আমার উরুর উপর পতিত হলো। আমি প্রথমবারের মতই দ্বিতীয়বার অনুরূপ ভারি অনুভব করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] উপর থেকে ওয়াহীর প্রভাব কেটে গেলে তিনি বলিলেনঃহে যায়িদ! পড়ো। আমি পড়লাম, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে, তারা সম্মানের দিক দিয়ে মুজাহিদগণের সমান নয়”। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] “অক্ষমতার ওজর ছাড়াই…..” পুরো আয়াত বলেন। যায়িদ [রাদি.] বলেন, দ্বিতীয়বার মহান আল্লাহ আলাদাভাবে এ অংশটুকু অবতীর্ণ করিলেন। আমি নির্দিষ্ট জায়গাতে এটি সংযোজন করে দিলাম। ঐ সত্ত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! হাড়ের ফাটা স্থানে উল্লেখিত অংশটুকু সংযোজন করার দৃশ্য এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

২৫০৮. মূসা ইবনি আনাস ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা [যুদ্ধে আসার সময়] মাদীনাহ হইতে কিছু লোক রেখে এসেছো। তোমরা যে স্থানই সফর করেছো, যা কিছুই ব্যয় করেছো এবং যে কোনো প্রান্তর অতিক্রম করেছো, তারা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কিভাবে আমাদের সাথে আছেন, অথচ তারা তো মাদীনাহ্‌তেই অবস্থান করছেন! তিনি বলিলেনঃঅক্ষমতা তাহাদেরকে আটকে রেখেছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২১ঃ যে কাজে জিহাদের সওয়াব রয়েছে

২৫০৯. যায়িদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদকে আল্লাহর পথে জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিলো, সেও যেন জিহাদ করলো। আর যে ব্যক্তি মঙ্গলের সাথে কোন মুজাহিদ পরিবারের দেখাশুনা করলো সেও যেন জিহাদ করলো।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫১০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [একদল সাহাবীকে] লিহ্‌য়ান গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠানোর সময় বলেছিলেনঃ প্রত্যেক পরিবারের প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন জিহাদে যোগ দিবে। অতঃপর তিনি পিছনে থেকে যাওয়া লোকদের উদ্দেশ্যে বলিলেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি বাইরে যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ও সম্পদের কল্যাণকর হিফাযাত করিবে তার জন্য জিহাদে গমনকারীর অর্ধেক সওয়াব।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২২ঃ বীরত্ব ও কাপুরুষতা প্রসঙ্গে

২৫১১.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীনমানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৩ঃ মহান আল্লাহর বাণী ঃ তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না

২৫১২. আবু ইমরান আসলাম ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মাদীনাহ হইতে কনস্টান্টিনোপলে অভিমুখে বের হলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন আবদুর রহমান ইবনি খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ [রাদি.]। রোমের সৈন্যবাহিনী শহরের প্রাচীর-বেষ্টনীর বহির্ভাগ থেকে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। জনৈক মুসলিম সৈনিক শত্রুবাহিনীর উপর হামলা করে বসলো। লোকেরা বললো, হায়, থামো! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবু আইউব আল-আনসারী [রাদি.] বলিলেন, এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিলো। আল্লাহ যখন তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ]-কে সাহায্য করিলেন এবং দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করিলেন, আমরা মনে মনে বলিলাম, এসো! এবার আমরা নিজেদের ধন-সম্পদ দেখাশুনা ও ঠিকঠাকে মনোযোগ দেই। মহান আল্লাহ তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করিলেন ঃ “তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।“ [সূরাহ আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১৯৫]। আমাদের নিজেদের হাতকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করার অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা, এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবু ইমরান [রাদি.] বলেন, এরপর থেকে আবু আইউব আল-আনসারী [রাদি.] সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদে শরীক হইতেন, অবশেষে তিনি জিহাদ করিতে করিতে কুস্ত্তনতুনিয়াতে সমাহিত হন।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৪ঃ তীরন্দাজী সম্পর্কে

২৫১৩. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ একটি তীরের কারণে মহান আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তীর প্রস্তুতকারী, যদি সে জিহাদের নেক আশা প্রস্তুত করে, [যুদ্ধে] তীর নিক্ষেপকারী এবং যে ব্যক্তি তা নিক্ষেপের উপযোগী করে নিক্ষেপকারকে সরবরাহ করে। তোমরা তীরন্দাজী ও অশ্বারোহীর প্রশিক্ষণ নাও। তোমাদের অশ্বরোহীর প্রশিক্ষণের চাইতে তীরন্দাজীর প্রশিক্ষণ আমার নিকট অধিক প্রিয়। তিন ধরণের খেলাধুলা অনুমোদিত-কোন ব্যক্তির তার ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, নিজ স্ত্রীর সাথে খেলা-স্ফুর্তি করা এবং তীর ধনুকের প্রশিক্ষণ নেয়া। যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিখার পর অনাগ্রহবশত তা ছেড়ে দেয়, সে আল্লাহর দেয়া এক নিআমাত বর্জন করলো। অথবা তিনি বলিয়াছেনঃ সে এই নিআমাতের অকৃতজ্ঞ হলো।

দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান আত-তিরমিজি [২৭৭/১৭০৩], যয়ীফ সুনান ইবনি মাজাহ [৬১৮/২৮১১]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫১৪. উক্ববাহ ইবনি আমির আল-জু্হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মিম্বারের উপরে বলিতে শুনিয়াছিঃ “দুশমনের মুকাবিলার জন্য তোমরা যথাসাধ্য শক্তি অর্জন করো” [সুরাহ আন-আনফালঃ আয়াত ৬০]। জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী [ক্ষেপনাস্ত্র],জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী [ক্ষেপনাস্ত্র], জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী [ক্ষেপনাস্ত্র]।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৫ঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে জিহাদ করে

২৫১৫. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যুদ্ধ দুই প্রকার। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করে, ইমামের আনুগত্য করে, উত্তম জিনিস খরচ করে, সহকর্মীর সাথে কোমল ব্যবহার করে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ হইতে বিরত থাকে, তার নিদ্রা ও জাগরণ সবকিছুই সওয়াবে পরিণত হয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লোক দেখানো ও সুনামের জন্য যুদ্ধ করে, ইমামের অবাধ্য হয় এবং দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, সে জিহাদের সামান্য সওয়াব নিয়েও বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে না।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৫১৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের ইচ্ছা করেছে এবং সে এর দ্বারা পার্থিব সম্পদও অর্জন করিতে চায়, [এ ব্যক্তির কি হইবে?]। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃসে কোন নেকী পাবে না। লোকেরা এতে অবাক হলো। তারা ঐ ব্যক্তিকে বললো, তুমি পুনরায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করে দেখো। মনে হয় তুমি তাঁকে বুঝিয়ে বলিতে পারনি। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদের ইচ্ছা করেছে এবং সে এর দ্বারা পার্থিব সম্পদও অর্জন করিতে চায়। তিনি বলিলেনঃসে কোন নেকী পাবে না। লোকেরা বললো, তুমি বিষয়টি আবারো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করো। লোকটি তৃতীয়বার তাঁকে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলিলেনঃসে কোন নেকী পাবে না।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ–২৬ঃ যে লোক আল্লাহ্‌র কালেমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে

২৫১৭. আবু মুসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

জনৈক বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, কোন ব্যক্তি নাম প্রচারের জন্য যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি প্রশংসা লাভের জন্য যুদ্ধ করে, কোন ব্যক্তি গনীমাত লাভের জন্য যুদ্ধ করে এবং কোন ব্যক্তি তার বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে কেবল সে-ই মহান আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত গণ্য হইবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫১৮. আমর ইবনি মুররাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু ওয়াইলের নিকট এমন একটি হাদিস শুনিয়াছি, যা আমাকে হতবাক করেছে … অতঃপর বাকি অংশ উপরের হাদিসের অনুরূপ।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫১৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে জিহাদ ও যুদ্ধের সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনি আমর! তুমি ধৈর্য ও নেকীর আশায় যুদ্ধ করলে আল্লাহ্ তোমাকে এ দুটি গুণে করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করবেন। আর যদি তুমি প্রদর্শন ইচ্ছা ও সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করো, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তোমাকে রিয়াকারী ও সম্পদলোভী করে উপস্থিত করাবেন। হে আবদুল্লাহ ইবনি আমর! তুমি যে মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধ করিবে কিংবা নিহত হইবে, আল্লাহ্‌ তোমাকে উক্ত অবস্থায়ই উত্থিত করবেন।

দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬৩৯৭], মিশকাত [৩৮৪৭]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৭ঃ শহীদের মর্যাদা

২৫২০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ উহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়, মহান আল্লাহ্‌ তাহাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করিলেন। তারা জান্নাতের ঝর্ণা সমূহের উপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং আরশের ছায়ায় ঝুলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেলো, তখন বললো, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দিবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদেরকে নিয়মিত রিযিক দেয়া হচ্ছে! [এটা জানতে পারলে] তারা জিহাদে অমনোযোগী হইবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করিবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ বলিলেনঃ আমি তাহাদের নিকট তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দিবো। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ্‌ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয়েছে তোমারা তাহাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাহাদের রবের নিকট নিয়মিত রিযিক পাচ্ছে”। [সূরাদি. আল-ইমরানঃ ১৬৯]

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৫২১. হাসনাআ বিনতু মুআবিয়াহ আস-সারীমিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার চাচা আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞাসা করলাম কোন লোক জান্নাতে প্রবেশ করিবে? তিনি বলিলেন, নাবীগণ [আ] জান্নাতে প্রবেশ করবেন, শহীদগণ জান্নাতে প্রবেশ করিবে, গর্ভের মৃত শিশু জান্নাতে প্রবেশ করিবে এবং জীবন্ত প্রথিত সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৮ঃ শহীদের শাফাআত সম্পর্কে

২৫২২, নিমরান ইবনি উতবাহ আয-যামারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা কতক ইয়াতীম উম্মুদ দারদা [রাদি.] এর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের বলিলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন করো। কেননা আমি আবু দারদা [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য শাফাআত করিবে এবং তার সুপারিশ কবুল করা হইবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৯ঃ শহীদের কবরে নূর দৃষ্টিগোচর হওয়া

২৫২৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যখন [বাদশা] নাজ্জাশী মারা যান, তখন আমরা বলাবলি করছিলাম যে, তার কবরের উপর সর্বদা নূর দেখা যাবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫২৪. উবাইদ ইবনি খালিদ আস-সুলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুই ব্যক্তির মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন। তাহাদের একজন [যুদ্ধে] নিহত হন এবং অন্যজন তার পরে কোন এক জুমআর দিন কিংবা তার কাছাকাছি কোন দিনে মারা যান। আমরা তার জানাযা আদায় করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা [দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য] কি দুআ করেছো? আমরা বলিলাম, আমরা তার জন্য দুআ করেছি এবং বলেছি, “হে আল্লাহ্‌! তাঁকে ক্ষমা করুন এবং তাঁকে তার সঙ্গীর সাথে মিলিত করুন”। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তাহলে প্রথম ব্যক্তির সালাতের পর দ্বিতীয় ব্যক্তির সালাত, প্রথম ব্যক্তির সওমের পর দ্বিতীয় ব্যক্তির সওম ও অন্যান্য আমল কোথায় যাবে? এ দুই ব্যক্তির [মর্যাদার] মধ্যে আসমান-যমীনের ব্যবধান। উল্লেখ্য, এতে সওমের কথা উল্লেখ হয়েছিল কিনা এ বিষয়ে বর্ণনাকারী শুবাহ সন্দিহান।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩০ঃ মজুরীর বিনিময়ে যুদ্ধে শ্রমদান

২৫২৫. আবু আইউব আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেনঃ অচিরেই বহু শহর তোমাদের অধীনস্থ হইবে এবং সুসংগঠিত সৈন্যবাহিনী গঠন করা হইবে। তোমরা তাতে সৈনিক নিয়োজিত হইবে। সে সময় তোমাদের মধ্যকার কেউ কেউ [পারিশ্রমিক ছাড়া] উক্ত বাহিনীতে যোগ দিতে অপছন্দ করিবে। সেজন্য সে দল থেকে কেটে পড়বে। অতঃপর সে বিভিন্ন গোত্রে গোত্রে গিয়ে তাহাদের কাছে নিজেকে সেনাদলে ভাড়ায় নেয়ার জন্য পেশ করে বলবে, কে আমাকে মজুরীর বিনিময়ে কাজে লাগাবে? কে আমাকে মজুরীর বিনিময়ে কাজে লাগাবে? জেনে রেখো! এ ব্যক্তি তার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত ভাড়াটিয়া শ্রমিকই থাকিবে [মুজাহিদের মর্যাদা লাভ করিতে পারবে না]।

দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৩২৫২], মিশকাত [৩৮৪৩]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩১ঃ অর্থের বিনিময়ে সৈন্য বা যুদ্ধাস্ত্র গ্রহনের অনুমতি সম্পর্কে

২৫২৬. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ গাজীর জন্য তার নির্ধারিত সওয়াব রয়েছে। আর যুদ্ধের সরঞ্জাম দানকারীর জন্য সওয়াব রয়েছে, অধিকন্তু সে গাজীর সমান সওয়াবও পাবে [অর্থাৎ সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে]।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩২ঃ কেউ জিহাদে অংশ গ্রহণকালে নিজের সঙ্গে খাদেম নিলে

২৫২৭. আবদুল্লাহ ইবনি দায়লামী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

ইয়ালা ইবনি মুনইয়া [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুদ্ধের জন্য আহবান জানালেন। তখন আমি খুবই বৃদ্ধ ছিলাম এবং আমার কোন খাদেম ছিল না। তাই আমি এমন একজন শ্রমিক খোঁজ করলাম যে আমার সহায়তা করিতে সক্ষম এবং আমি তাহাকে [গনীমাতের] অংশ প্রদানেরও চিন্তা করলাম। অতঃপর আমি এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েও গেলাম। যুদ্ধে যাবার সময় ঘনিয়ে এলে সে এসে আমাকে বলিল, আমি সৈনিকের প্রাপ্য অংশ সম্পর্কে কিছুই অবহিত নই এবং আমাকে কি পরিমাণ প্রাপ্য দেয়া হইবে তাও আমি জানি না, কাজেই আমার মজুরী নির্ধারণ করুন। আমি তার জন্য তিন দিনার মজুরী নির্ধারণ করলাম। অতঃপর গনীমাত বণ্টনের সময় উপস্থিত হলে আমি তাহাকে এর একটি অংশ দেয়ার ইচ্ছা করলাম। এমতাবস্থায় দিনারের কথা স্মরণ হল। অতঃপর আমি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বলিলেনঃ আমি এ যুদ্ধের বিনিময়ে দুনিয়া এবং আখিরাতে তার জন্য নির্ধারিত [দিনার] ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৩ঃ পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদে যোগদান প্রসঙ্গে

২৫২৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, আমি আপনার কাছে হিজরতের বাইআত নিতে এসেছি এবং আমার মাতা-পিতাহাকে কান্নারত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বলিলেনঃ তুমি ফিরে যাও। তাহাদেরকে যেভাবে কাঁদিয়েছ ঐভাবে তাহাদেরকে হাসাও।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫২৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি জিহাদ করবো। তিনি বলিলেনঃ তোমার পিতা-মাতা আছেন কি? সে বললো, হাঁ। তিনি বলিলেনঃ তাহাদের সেবা করো, এটাই তোমার জন্য জিহাদ হিসাবে গণ্য হইবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫৩০. আবু সাইদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি ইয়ামান থেকে হিজরাত করে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হল। তিনি তাহাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়ামানে তোমার কেউ আছেন কি? জবাবে সে বলিল, আমার মাতা-পিতা আছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তারা তোমাকে জিহাদের অনুমতি দিয়েছেন কিনা? সে বলিল, না। তিনি বলেনঃ তবে তুমি ফিরে গিয়ে তাহাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করো। তারা তোমাকে অনুমতি দিলে জিহাদে অংশগ্রহণ করিবে, অন্যথায় তাহাদের সেবায় নিয়োজিত থাকিবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৪ঃ যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহন

২৫৩১, আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উম্মু সুলাইমকে এবং কতিপয় আনসার মহিলাকে যুদ্ধে নিয়ে যেতেন। তারা মুজাহিদদের পানি সরবরাহ করিতেন এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতেন।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৫: স্বৈরাচারী শাসকের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা সম্পর্কে

২৫৩২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তিনটি বিষয় ঈমানের মূলের অন্তর্ভুক্ত। [এক] যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়বে তার ক্ষতি করা হইতে বিরত থাকা, কোন গুনাহের কারণে তাহাকে কুফরির দিকে ঠেলে না দেয়া এবং [শরীআতের বিরোধী] কোন কাজের কারণে তাহাকে ইসলাম থেকে বহিস্কার না করা। [দুই] আমাকে [রাসূল করে] প্রেরনের সময় থেকে জিহাদ চালু রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকিবে। অবশেষে উম্মাতের জিহাদকারী সর্বশেষ দল দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার অথবা কোন ন্যায়পরায়ণ শাসকের ইনসাফ এটাকে রহিত করিতে পারবে না। [তিন] তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৫৩৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

.তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, প্রত্যেক শাসকের নেতৃত্তে জিহাদ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব – চাই সে সৎ হোক বা অসৎ। প্রত্যেক মুসলিমের পিছনে সালাত আদায় করা তোমাদের ওপর ওয়াজিব, চাই সে সৎ হোক বা অসৎ, এমনকি সে কবীরাহ গুনাহ করলেও। প্রত্যেক [মৃত] মুসলিমের জানাযা পড়া ওয়াজিব, চাই সে নেককার হোক অথবা পাপী, এমনকি সে কবীরাহ গুনাহ করলেও।

দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [২৬৭৩], মিশকাত [১১২৫]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৬ঃ অন্যের বাহনে চড়ে জিহাদে যোগদান

২৫৩৪ .জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

একদা তিনি [সাঃআঃ] যুদ্ধে বের হওয়ার সময় বলিলেনঃ হে মুজাহির ও আনসার সম্প্রদায়! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোকও রয়েছে, যাদের যুদ্ধে খরচ করার নিজস্ব আর্থিক সামর্থ্য নাই এবং তাহাদেরকে সহযোগিতা করার মত কোন আত্মীয়-স্বজনও নাই। তোমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ [বাহন ও আহারে] তাহাদের দুই কিংবা তিনজনকে শামিল করে নেয়া। তখন আমাদের কারো সাথে একের অধিক মালবাহী সাওয়ারী ছিল না, পালা করা ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। জাবির [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমি তাহাদের দুই বা তিনজনকে আমার সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। জাবির বলেন, আমার মাত্র একটি উট ছিল। আমিও অন্যদের মত তাতে পালা করে আরোহণ করি।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৭ঃ যে ব্যক্তি সওয়াব ও গনীমাতের আশায় যুদ্ধ করে

২৫৩৫. দামরাহ ইবনি যুগ্‌ব আল-ইয়াদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ ইবনি হাওয়ালা আল-আযদী [রাদি.] আমার মেহমান হলেন। তিনি আমাকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি পদাতিক বাহিনীকে গনীমাতের লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে প্রেরণ করিলেন। আমরা ফিরে এলাম, অথচ কোন গনীমাত পেলাম না। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করিলেন। তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলিলেন, “হে আল্লাহ্‌! তাহাদের ক্লান্তি দূর করিতে তাহাদেরকে আমার দিকে সোপর্দ করো না। এবং তাহাদেরকে তাহাদের দিকেও সোপর্দ করো না, তাহলে লোকেরা তাহাদের উপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে”। [ইবনি হাওয়ালা বলেন], এরপর তিনি আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বলিলেন, হে ইবনি হাওয়ালা! যখন তুমি দেখবে যে, বাইতুল মাকদিসে [সিরিয়ার] ভূমিতে খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করিবে অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহা দুর্ঘটনা ও পেরেশানী সন্নিকটে। কিয়ামত তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হইবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যত নিকটে রয়েছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৮ঃ যে ব্যক্তি নিজেকে [আল্লাহ্‌র রাহে] বিক্রি করে

২৫৩৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমাদের মহান রব ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হইবেন, যে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদে লিপ্ত হয়েছে। তার সাথীরা পালিয়ে গেছে, কিন্তু সে জানতে পারলো তার উপর আল্লাহ্‌র হক রয়েছে। কাজেই সে পুনরায় [যুদ্ধের ময়দানে] ফিরে গেলো। অতঃপর তার রক্ত বয়ে দিয়ে শহীদ হলো। মহান আল্লাহ্‌ তাহাঁর ফেরেশতাহাদের বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকিয়ে দেখ, সে আমার কাছে সওয়াবের আশা নিয়ে এবং আমার আযাবের ভয় করে [যুদ্ধের ময়দানে] ফিরে গিয়ে নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৯ঃ কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহনের পর পরই সেখানে নিহত্ হলে

২৫৩৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমর ইবনি উক্বাইশের জাহিলী যুগের কিছু সুদ অনাদায়ী ছিল। সেগুলো আদায় না করে তিনি মুসলমান হওয়া অপছন্দ করিলেন। কাজেই তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন এসে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার চাচাতো ভাইয়েরা কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, অমুক কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি তার যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে নিজ ঘোড়ায় চড়ে উহুদে রওয়ানা হলেন। মুসলমানগন তাহাকে দেখিতে পেয়ে বলিলেন, হে আমর! আমাদের থেকে তুমি অন্য দিকে যাও। [আমাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা। কেননা তুমি কাফের]। তিনি বলিলেন, আমিতো ঈমান এনেছি। তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হলেন। আহত অবস্থায় তাহাকে তার পরিবার-পরিজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। সাদ ইবনি মুআয [রাদি.] তার বাড়িতে আসলেন। তিনি তার বোনকে বলিলেন, তুমি তাহাকে জিজ্ঞেস করো, তুমি কি তোমার গোত্রের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য অথবা তাহাদের [দুশমনদের] প্রতি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অথবা আল্লাহর গযব থেকে বাচার জন্য যুদ্ধ করেছো? তিনি [আমর] বলিলেন, আমি বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপ থেকে বাচার জন্য জিহাদ করেছি। তিনি মারা গেলেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করিলেন। অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত নামাযও পড়ার সুযোগ পান নি।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪০ঃ যে ব্যক্তি নিজের অস্ত্রের আঘাতে নিহত্ হয়

২৫৩৮, আব্দুর রহমান ইবনি আব্দুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সালামাহ ইবনিল আকওয়া [রাদি.] বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমার ভাই কঠোরভাবে যুদ্ধ করিলেন। ঘটনাক্রমে নিজের তরবারি তার দিকে ঘুরে গেলে এর আঘাতেই তিনি নিহত হন। এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাহাবীগণ বলাবলি করিলেন এবং তার মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে বলিলেন, তিনি তো নিজ অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সে জিহাদকারি মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে। বর্ননাকারী ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অতঃপর আমি সালামাহ ইবনিল আকওয়ার এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সেও তার পিতার সূত্রে একই কথা বললো। তবে সে এও বলেছে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহাদের ধারণা মিথ্যা। সে জিহাদকারী মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে এবং তার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫৩৯. আবিয়াহ ইবনি আবু সাল্লাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা আবু সাল্লাম হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ] এর জনৈক সাহাবী সূত্রে বর্ননা করেন যে, আমরা [সাহাবীগণ] জুহাইনাহ বংশের এক উপ-গোত্রের বিরুদ্ধে আক্রমন চালালাম। মুসলিমদের এক ব্যক্তি কাফিরদের এক ব্যক্তিকে অনুসরন করে তার উপর আঘাত হানলো, কিন্তু আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তরবারি ঘুরে এসে তার নিজের উপরই পড়লো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের ভাই কোথায়, তার সংবাদ নাও। লোকজন তার খোঁজ নিতে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো এবং তাহাকে মৃত অবস্থায় পেল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাকে তার রক্তমাখা পরিধেয় বস্ত্রেই জড়িয়ে নিলেন [কাফন দিলেন], অতঃপর তার জানাযা পড়ে দাফন করিলেন। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি শহীদ? তিনি বলিলেন, হাঁ, আমি তার সাক্ষী।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪১ঃ দুশমনের মোকাবেলার সময় দুআ করা

২৫৪০. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ দুই সময়ের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না অথবা খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়। আযানের সময়ের দুআ এবং যখন একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। [হাদিসের মধ্যবর্তী বর্ননাকারী] মূসা ইবনি ইয়াকূব অন্য সানাদে রিয্বক ইবনি সাঈদ হইতে…নাবী [সাঃআঃ] এর সূত্রে বর্ননা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বৃষ্টির সময়ের দুআও [কবুল হয়ে থাকে]।

সহিহ। তবে “বৃষ্টির সময়” কথাটি বাদে। মিশকাত [৬৭২]। ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪২ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে

২৫৪১. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি উষ্ট্রির দুধ দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময়টুকু আল্লাহর পথে জিহাদ করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব। যে ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের প্রার্থনা করে, অতঃপর [নিজ ঘরেই] মারা যায় অথবা নিহত হয়, তার জন্য শহীদের সওয়াব রয়েছে। [মধ্যবর্তী বর্ননাকারী] ইবনিল মুসান্না এরপর আরো বর্ননা করেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে [যুদ্ধে] আহত হয় কিংবা কোন বিপদে পতিত হয়, ক্বিয়ামাতের দিন তার এ যখমের স্থান পুর্বের মত তাজা থাকিবে এবং এর রং হইবে জাফরানের রংয়ের মত আর এর ঘ্রান হইবে কস্তরীর ঘ্রানের অনুরুপ। মহান আল্লাহর পথে যার শরীরে কোন ফোড়া উঠে, তাতে শহীদের সীলমোহর অংকিত হইবে।

ইসলামে জিহাদ – হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

One response to “ইসলামে জিহাদ Abu Dawud Bangla Pdf Download”

Leave a Reply