ইসলামের রুকন সমূহ ও তার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমূহ
ইসলামের রুকন সমূহ ও তার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমূহ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ ঈমান, ইসলামের পরিচয় এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্য সাব্যস্ত করার প্রতি ঈমান ওয়াজিব হওয়া, ভাগ্যলিপির উপর অবিশ্বাসী লোকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা ও তাহাঁর ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণের প্রমাণাদির বর্ণনা
২. অধ্যায়ঃ সলাতের বর্ণনা যা ইসলামের একটি রুকন
৩. অধ্যায়ঃ ইসলামের রুকনসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার বর্ণনা
৪. অধ্যায়ঃ যে ঈমানের বদৌলত জান্নাতে পাওয়া যাবে এবং যে ব্যক্তি [আল্লাহর] নির্দেশকে আঁকড়ে ধরবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে
৫. অধ্যায়ঃ ইসলামের রুকনসমূহ ও তার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমূহ
৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআ:]-এর দ্বীনের অনুশাসনের প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দেয়া এবং তার প্রতি মানুষকে আহবান করা, দ্বীন সম্বন্ধে [জানার জন্য] প্রশ্ন করা ও তা সংরক্ষণ করা আর যার কাছে দ্বীন পৌঁছায়নি তার নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করা
১. অধ্যায়ঃ ঈমান, ইসলামের পরিচয় এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্য সাব্যস্ত করার প্রতি ঈমান ওয়াজিব হওয়া, ভাগ্যলিপির উপর অবিশ্বাসী লোকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা ও তাহাঁর ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণের প্রমাণাদির বর্ণনা
অত্র গ্রন্থের সংকলক ইমাম আবুল হুসায়ন মুসলিম ইবনিল হাজ্জাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমরা এ কিতাব আল্লাহর সাহায্যে শুরু করছি এবং তাঁকেই যথেষ্ট মতে করছি। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ ভিন্ন আমাদেরকে আর তাওফীকদাতা কেউ নেই।
১ -ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়ামার হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বাসরার অধিবাসী মাবাদ জুহাইনাহ্ প্রথম ব্যক্তি যে তাকদীর অস্বীকার করে। আমি ও হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান উভয়ে হাজ্জ অথবা উমরাহর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। আমরা বললাম, যদি আমরা এ সফরে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] এর যে কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়ে যাই তাহলে ঐ সব লোক তাকদীর সম্বন্ধে যা কিছু বলে সে সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করব। সৌভাগ্যক্রমে আমরা আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর মাসজিদে ঢুকার পথে পেয়ে গেলাম। আমি ও আমার সাথী তাঁকে এমনভাবে ঘিরে নিলাম যে, আমাদের একজন তাহাঁর ডান এবং অপরজন তাহাঁর বামে থাকলাম। আমি মনে করলাম আমার সাথী আমাকেই কথা বলার সুযোগ দেবে। [কারণ আমি ছিলাম বাকপটু]। আমি বললাম : “হে আবু আবদুর রহমান! আমাদের এলাকায় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, তারা একদিকে কুরআন পাঠ করে অপরদিকে জ্ঞানের অন্বেষণও করে। ইয়াহ্ইয়া তাহাদের কিছু গুণাবলীর কথাও উল্লেখ করিলেন। তাহাদের ধারণা [বক্তব্য] হচ্ছে, তাকদীর বলিতে কিছু নেই এবং প্রত্যেক কাজ অকস্মাৎ সংঘটিত হয়।” ইবনি উমার [রাঃআ:] বললেনঃ “যখন তুমি এদের সাথে সাক্ষাৎ করিবে তখন তাহাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাহাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আর আমার সাথেও তাহাদের কোন সম্পর্ক নেই। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] আল্লাহর নামে শপথ করে বলিলেন, এদের কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা দান-খয়রাত করে দেয় তবে আল্লাহ তাহাঁর এ দান গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকদীরের উপর ঈমান না আনবে। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমার পিতা উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তারপরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তাহাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাঁকে চিনেও না।
অবশেষে সে নবি [সাঃআ:]-এর সামনে বসলো। সে তাহাঁর হাঁটুদ্বয় নবি [সাঃআ:]-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলো এবং দুই হাতের তালু তাহাঁর [অথবা নিজের] উরুর উপর রাখলো এবং বললো, হে মুহাম্মাদ [সাঃআ:] ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ [মাবুদ] নেই, এবং মুহাম্মাদ [সাঃআ:] আল্লাহর রসূল, সলাত কায়িম করিবে, যাকাত আদায় করিবে, রমাযানের সওম পালন করিবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হাজ্জ করিবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী {উমার [রাঃআ:] } বলেন, আমরা তাহাঁর কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলাম। কেননা সে [অজ্ঞের ন্যায়] প্রশ্ন করছে আর [বিজ্ঞের ন্যায়] সমর্থন করছে। এরপর সে বললো, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাহাঁর ফেরেশতাকুল, তাহাঁর কিতাবসমূহ, তাহাঁর প্রেরিত নবিগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। এবার সে বললো, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ ইহসান এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করিবে যেন তাঁকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করিবে। এবার সে জিজ্ঞেস করলো, আমাকে কিয়ামাত সম্বন্ধে বলুন! রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। অতঃপর সে বললো, তাহলে আমাকে এর কিছু নিদর্শন বলুন। তিনি বলিলেন, দাসী তাহাঁর মনিবকে প্রসব করিবে {১৫} এবং [এককালের] নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গর্ব-অহংকারে মত্ত দেখিতে পাবে। {১৬} বর্ণনাকারী {উমার [রাঃআ:] } বলেন, এরপর লোকটি চলে গেলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাকে বলিলেন, হে উমার! তুমি জান, এ প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত আছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন, তিনি জিবরীল। তোমাদের কাছে তিনি তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১ম খণ্ড, ১; বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১ম খণ্ড, ১]
{১৪} জ্ঞাতব্য : প্রথম প্রকাশে হাদীসের পরিভাষা-বিষয়ক নীতিমালা এখানে উল্লেখিত হয়েছিল। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে উক্ত বিষয়টি সহিহ মুসলিম-এর হাদীস বর্ণনার কতিপয় পরিভাষা অনুচ্ছেদের পূর্বাংশে আলোচনা করা হয়েছে।
{১৫} বাঁদী মনিবকে প্রসব করিবে। এর অর্থ হলো মনিব তাহাঁর বাঁদীর সাথে যেরূপ ব্যবহার করে, সন্তানগণ তাহাদের মাতাহাদের সাথে সেরূপ ব্যবহার করিবে, তারা মাতাহাঁর বাধ্য থাকিবে না। সন্তান মাতাহাঁর অবাধ্য হইবে, স্ত্রীর অনুগত হইবে। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শারীআত মোতাবেক বিয়ে শাদী করিবে না। বাদশাহ ও ধনী ব্যক্তিগণ দাসী ইচ্ছামত রাখবে। বাঁদী দাসী অধিক কেনাবেচা হইবে। সে সময় দাসীকে বিয়ে করিবে অথচ সেটা যে তাহাঁর মা জানতে পারবে না।
{১৬} তুচ্ছ লোক বড় হয়ে যাবে, দুনিয়ার অবস্থা ব্যবস্থা বদলে যাবে। বড় ছোট হয়ে যাবে, সম্মানী ব্যক্তি অপমানিত হইবে। অসম্মানী ব্যক্তি মানের দাবী করিবে। যারা এ কাজের উপযুক্ত নয়, তারা সে কাজের মালিক মুখতাহাঁর হয়ে বসবে।
২ -ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়ামার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাবাদ [আল জুহানী] তাকদীর সম্পর্কে তার মত ব্যক্ত করলে আমরা তা অস্বীকার করি। তিনি [ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়ামার] বলেন, আমি ও হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান আল হিম্ইয়ারী হাজ্জ পালন করিতে গিয়েছিলাম। এরপর কাহমাস-এর হাদীসের অনুরূপ সানাদসহ হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে এ বর্ণনায় কিছু বেশ কম রয়েছে।
[ই.ফা. ২; ই.সে. ২] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩ – ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়ামার এবং হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান থেকে হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা উভয়ে বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাহাঁর কাছে তাকদীর বিষয়ে ঐ সকল লোকেরা [মাবাদ ও তাহাঁর অনুসারীরা] যা মন্তব্য করে তা উল্লেখ করি। অতঃপর এ হাদীসটি নবি [সাঃআ:] থেকে উমার [রাঃআ:]-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনাকারীরা যেরূপ বর্ণনা করিয়াছেন আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদাহ্ ঠিক অনুরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য এতে শব্দের কম বেশি আছে।
[ই.ফা ৩; ই.সে. ৩] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪ -উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই.ফা. ৪; ই.সে. ৪] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫ -আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] লোকেদের নিয়ে বসেছিলেন। এমন সময় একজন লোক এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্র রসূল! ঈমান কি? তিনি বলিলেন, ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ্, তাহাঁর ফেরেশতাকুল, তাহাঁর [নাযিলকৃত] কিতাব, [আখিরাত] তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ ও তাহাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান রাখবে এবং পুনরুত্থান দিবসের উপরও ঈমান আনবে। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! ইসলাম কি? তিনি বলিলেন, ইসলাম এই যে, তুমি আল্লার ইবাদাত করিতে থাকিবে, কিন্তু তাহাঁর সাথে কাউকে শারীক করিবে না, ফারযকৃত সলাত কায়িম করিবে, নির্ধারিত ফারয যাকাত আদায় করিবে এবং রমাযানের সওম পালন করিবে। সে আবার জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! ইহ্সান কি? তিনি বলিলেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করিবে যেন তাঁকে দেখছো; যদি তাঁকে না দেখো তা হলে তিনি তোমাকে দেখছেন [বলে অনুভব করিবে]। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ রসূল! কিয়ামাত কখন হইবে? তিনি বলিলেন, এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশি কিছু জানেন না। তবে আমি তোমাকে তার [কিয়ামাতের] কিছু নিদর্শন বলে দিচ্ছিঃ যখন দাসী তাহাঁর মনিবকে প্রসব করিবে এটা তার নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি। আর যখন বস্ত্রহীন, জুতাহীন [ব্যক্তি] জনগণের নেতা হইবে, এটাও তার একটি নিদর্শন। আর মেষ শাবক ও ছাগলের রাখালরা যখন সুউচ্চ দালান-কোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করিবে, এটাও তার একটি নিদর্শন। প্রকৃতপক্ষে যে পাঁচটি জিনিসের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ রাখেন, কিয়ামাতের জ্ঞান তারই অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর নবি [সাঃআ:] নিম্নবর্ণিত আয়াত তিলাওয়াত করিলেন, “আল্লাহর নিকটই কিয়ামাতের জ্ঞান রয়েছে, আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং মাতৃগর্ভে কি আছে তা তিনিই জানেন। কোন প্রাণীই আগামীকাল কী উপার্জন করিবে তা জানে না এবং কোন্ জমিনে সে মৃত্যুবরণ করিবে তাও জানে না। বস্তুতঃ আল্লাহই সব জানেন এবং তিনি সব বিষয়ই অবগত”-[সূরাহ লুকমান ৩১ : ৩৪]।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি চলে গেল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, লোকটিকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনো। তাঁরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য গেলেন। কিন্তু কাউকে পেলেন না। তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, ইনি জিবরীল [আ:], লোকেদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন।
[ই.ফা. ৫, ই.সে ৫] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬ -আবু হাইয়্যান আত্ তাইমী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আবু হাইয়্যান আত্ তাইমী [রাঃআ:] থেকে উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাহাঁর বর্ণনায় “দাসী তার মনিব স্বামী জন্ম দিবে” কথাটির উল্লেখ রয়েছে
[ই.ফা. ৬; ই.সে. ৬] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭ -আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] [সহাবাদের] বলিলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। কিন্তু লোকেরা তাঁকে প্রশ্ন করিতে সংকোচবোধ করিল। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে হাঁটুর কাছে বসে বললোঃ হে আল্লাহর রসূল! ইসলাম কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
“তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শারীক করিবে না, সলাত কায়িম করিবে, যাকাত আদায় করিবে এবং রমাযানের সওম পালন করিবে।” সে বলিল, আপনি সত্যই বলেছেন। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! ঈমান কি? তিনি বলিলেন, তুমি আল্লাহ, তাহাঁর ফেরেশতাকুল, তাহাঁর কিতাব, আখিরাতে তাহাঁর সাথে সাক্ষাৎ ও তাহাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান রাখবে। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার প্রতি ঈমান রাখবে এবং তাকদীরের উপরও পূর্ণ ঈমান রাখবে। সে বলিল, আপনি সত্যই বলেছেন। এবার সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! ইহসান কি? তিনি বলিলেন, “তুমি এমনভাবে আল্লাহকে ভয় করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো, আর যদি তুমি তাঁকে না দেখো, তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করো”। সে বলিল, আপনি সত্যই বলেছেন। এবার সে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাত কখন হইবে? তিনি বলিলেন, এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানে না। তবে আমি তার নিদর্শন ও লক্ষণসমূহ তোমাকে বলে দিচ্ছিঃ “যখন তুমি দেখবে কোন নারী তার মনিবকে প্রসব করিবে এটা কিয়ামাতের একটি নিদর্শন। যখন তুমি দেখবে, জুতাবিহীন, বস্ত্রহীন, বধির ও বোবা পৃথিবীতে শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, এটা একটি নিদর্শন। আর যখন তুমি দেখবে মেষ চালকরা সুউচ্চ দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব করছে, এটাও কিয়ামাতের একটি নিদর্শন। যে পাঁচটি অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, কিয়ামাতের জ্ঞান তাহাঁরই অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর নবি [সাঃআ:] এ আয়াত পাঠ করিলেন, “অবশ্যই আল্লাহর নিকটই কিয়ামাতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। মাতৃগর্ভে কী আছে তা তিনিই জানেন। কোন জীবই আগামীকাল কী উপার্জন করিবে তা জানে না এবং কোন স্থানে সে মরবে তাও জানেনা”-[সূরাহ লুক্মান ৩১ : ৩৪] তিনি সূরাহর শেষ পর্যন্ত পাঠ করিলেন। এরপর লোকটি চলে গেলো। তখন তিনি {রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] } সহাবাদের বলিলেন, তোমরা লোকটিকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো। অথচ অনেক খোঁজা-খুজি করা হলো কিন্তু তাঁরা তাকে আর পেলো না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, ইনি জিবরীল [আ:] তোমরা প্রশ্ন না করায় তিনি চাইলেন যেন তোমরা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কর।
[ই.ফা. ৭; ই.সে. ৭] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২. অধ্যায়ঃ সলাতের বর্ণনা যা ইসলামের একটি রুকন
৮ -তাল্হাহ্ ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তাল্হাহ্ ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেন, নাজ্দের বাসিন্দা এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর খিদমাতে আসলো। তার মাথার চুলগুলো ছিল এলোমেলো ও বিক্ষিপ্ত। আমরা তার গুন গুন আওয়াজ শুনছিলাম কিন্তু সে কী বলছিল তা বুঝা যাচ্ছিলো না। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর অতি নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বললেনঃ দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত। সে বলিল, এ ছাড়া আমার কোন কিছু [সলাত] আছে কি? তিনি বলিলেন, না তবে নফল আদায় করিতে পারো। এরপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] তাকে যাকাত প্রদানের কথাও বলিলেন। সে জিজ্ঞেস করলো, এ ছাড়া আমার উপর আরো কোন কর্তব্য আছে কি? তিনি বলিলেন, না। তবে নফল দান-সদাকাহ্ করিতে পারো। {১৭} বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি এ কথা বলিতে বলিতে চলে গেল, “আমি এর বেশিও করবো না, আর কমও করবো না। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, লোকটি যদি তার কথার সত্যতা প্রমাণ করিতে পারে তাহলে সফলকাম হয়েছে।
[ই.ফা. ৮; ই.সে. ৮] {১৭} ফার্য ব্যতীত যে সব আমাল করা হয়, তা ফার্যের পরিপূরক ও আমালকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে। মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯ -তালহাহ্ ইবনি উবাইদুল্লাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি হাদীসটি নবি [সাঃআ:] থেকে ইমাম মালিকের বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি এ হাদীসের শেষাংশে বলেছেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, “সে সফলকাম হয়েছে তার বাবার কসম! যদি সে সত্য কথা বলে থাকে।” অথবা তিনি [সাঃআ:] বলেছেন, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করেছে, যদি সে সত্য কথা বলে থাকে।” {১৮}
[ই.ফা. ৯; ই.সে. ৯]
{১৮} তাল্হাহ্ ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] এর বাবার নামে কসম খাওয়া প্রমাণিত হচ্ছে অথচ আল্লাহর রসূল [সাঃআ:] বাবার নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কসম আল্লাহ্র নামে করিতে হয়।
উত্তরে বলা হয় যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কসম খাওয়া এটা অভ্যাস মোতাবেক। কেননা আরবের লোকজন এভাবে কসম খাওয়ার অভ্যস্ত ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] এটা কারও সম্মানের জন্য কসম করেননি বা তখন এভাবে কসম খাওয়া নিষেধ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের নামে কসম করা এজন্য নিষেধ যে, আল্লাহর সামনে কারও স্থান না দেয়া। কতক আলিমের নিকট এটা ছিল আল্লাহ ভিন্ন অন্যের নামে কসম নিষিদ্ধ হবার পূর্বের ঘটনা। [নাবাবী] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৩. অধ্যায়ঃ ইসলামের রুকনসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার বর্ণনা
১০ -আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। আমরা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়েছিলাম তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবী করিয়াছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রসূল হিসেবে পাঠিয়েছে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, সে সত্য বলেছে। আগন্তুক বলিল, আসমান কে সৃষ্টি করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলিল, জমিন কে সৃষ্টি করিয়াছেন? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, আল্লাহ। আগন্তক বলিল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করিয়াছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করিয়াছেন? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলিল, কসম সে সত্তার! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছেন। আল্লাহই, আপনাকে রসূলরূপে পাঠিয়েছেন? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলিল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেয়া ফারয। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বললেনঃ ঠিকই বলেছে। আগন্তুক বলিল, যিনি আপনাকে রসূলরূপে পাঠিয়েছেন, তাহাঁর কসম, আল্লাহই কি আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ। আগুন্তক বলিল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে বাইতুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর হাজ্জ ফার্জ। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, সত্যি বলেছে। রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে যেতে বলিল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন তাহাঁর কসম, আমি এর অতিরিক্তও করবো না এবং এর কমও করবো না। এ কথা শুনে নবি [সাঃআ:] বলিলেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে। {১৯}
[ই.ফা. ১০; ই.সে. ১০]
{১৯} প্রশ্নকারী নবম হিজরীতে নবি [সাঃআ:]-এর নিকট এসেছিল। তার নাম যিমাম ইবনি সালাবাহ্। সে বানু সাদ ইবনি বাক্র গোত্রের লোক ছিল। সে ব্যক্তির সত্যপরায়ণাতায় জান্নাতী; এ কথাই নবি [সাঃআ:]-কে জানিয়ে দিয়েছেন। কিংবা নবি [সাঃআ:] ঐ ব্যক্তির প্রশ্ন ও দৃঢ় প্রত্যয় দেখে আত্মবিশ্বাস থেকে এ কথা বলেছেন। মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১ – আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে কোন প্রশ্ন করিতে কুরআন মাজীদে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারপর তিনি হাদীসটির বাকী অংশ [উল্লিখিত হাদীসের] অনুরূপ বর্ণনা করেন।
[ই.ফা. ১১; ই.সে. ১১] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪. অধ্যায়ঃ যে ঈমানের বদৌলত জান্নাতে পাওয়া যাবে এবং যে ব্যক্তি [আল্লাহর] নির্দেশকে আঁকড়ে ধরবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে
১২ -আবু আইয়ূব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আবু আইয়ূব [রাঃআ:] বলেন যে, কোন এক সফরে এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর সম্মুখে এসে তাহাঁর উটনীর লাগাম ধরে ফেললো। এ সময় তিনি সফরে ছিলেন। সে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! অথবা হে মুহাম্মদ [সাঃআ:]! আমাকে এমন কিছু কাজের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে এবং আগুন [জাহান্নাম] থেকে দূরে রাখবে। বর্ণনাকালী বলেন, নবি [সাঃআ:] থেমে গেলেন। তিনি সহাবাদের দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয়ই তাকে অনুগ্রহ করা হয়েছে, অথবা তিনি বললেনঃ তাকে হিদায়াত দান করা হয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি কি বলেছিলে? রাবী বলেন, লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলো। নবি [সাঃআ:] বলিলেন, আল্লাহর ইবাদাত করো, তাহাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশী স্থাপন করো না, সলাত কায়িম কর, যাকাত আদায় কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, এবার উটনীটি ছেড়ে দাও।
[ই.ফা. ১২, ই.সে ১২] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩ – আবু আইয়ূব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবি [সাঃআ:] হতে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪ -আবু আইয়ূব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবি [সাঃআ:]-এর খিদমাতে হাযির হয়ে আরয করলো, আমাকে এমন একটি আমালের কথা বলে দিন, যে আমাল আমাকে জান্নাতের কাছে পৌঁছে দিবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। ন্নবী [সাঃআ:] বললে, তুমি আল্লাহর ইবাদাত করিবে, তাহাঁর সাথে কোন কিছু শারীক করিবে না, সলাত কায়িম করিবে, যাকাত দিবে এবং আত্মীতার সম্বর্ক বজায় রাখবে। সে ব্যক্তি চলে গেলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বললে, তাকে যে আমালের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে পালন করলে জান্নতে প্রবেশ করিবে। আর আবু শাইবার বর্ণনায় [আরবী] এর স্থলে [আরবী] রয়েছে।
[ই.ফা. ১৪, ই.সে ১৪] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫ -আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে এসে আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কাজের নির্দেশ দিন, যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি। তিনি বলিলেন, আল্লাহর ইবাদাত করো, তাহাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না, ফারয সলাত কায়িম করো, নির্ধারিত যাকাত আদায় করো এবং রমাযানের সওম পালন করো। সে লোক বলিল : সে সত্তার শপথ! যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, আমি কখনো এর মধ্যে বৃদ্ধিও করবো না, আর তা থেকে কমাবও না। লোকটি যখন চলে গেলো, নবি [সাঃআ:] বললেনঃ যদি কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে নেয়।
[ই.ফা. ১৫; ই.সে. ১৫] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬ -জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নুমান ইবনি কাওকাল [রাঃআ:] নবি [সাঃআ:]-এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি হারামকে জেনে বর্জন করি এবং হালালকে হালাল বলে গ্রহণ করি তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবো? নবি [সাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ।
[ই.ফা. ১৬; ই.সে. ১৬] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৭ -জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নুমান ইবনি কাওকাল [রাঃআ:] বলেছেন, হে আল্লাহর রসূল! বাকী অংশ উপরোক্ত বর্ণনার অনুরূপ। তবে তিনি তাহাঁর বর্ণনায় তাতে কোন কিছু বর্ধিত করব না কথাটি অতিরিক্ত উল্লেখ করিয়াছেন।
[ই.ফা. ১৭; ই.সে. ১৭] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৮ -জাবির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
কোন এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর খিদমাতে আরয করিলেন, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি ফারয সলাত সমূহ আদায় করি, রমাযানের সিয়াম পালন করি, হালালকে হালাল জানি এবং হারামকে হারাম জানি এবং যদি এর অতিরিক্ত কিছু না করি, তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবো? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ। সে ব্যক্তি বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি এর উপর কিছুমাত্র বাড়াবো না।
[ই.ফা. ১৮; ই.সে. ১৮] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫. অধ্যায়ঃ ইসলামের রুকনসমূহ ও তার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভসমূহ
১৯ -ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেছেন, ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত- আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, সলাত কায়িম করা, যাকাত দেয়া, রমাযানের সিয়াম পালন করা এবং হাজ্জ করা। এক ব্যক্তি [এ ক্রম পাঁচটিতে] বলিল, হাজ্জ করা ও রমাযানের সিয়াম পালন করা। রাবী বলিলেন, না রমাযানের সিয়াম পালন করা ও হাজ্জ করা এভাবে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] থেকে শুনিয়াছি।
[ই.ফা. ১৯, ই.সে ১৯] – মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেনঃ পাচঁটি জিনিসের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। আল্লাহর ইবাদাত করা এবং তাঁকে ছাড়া আর সব কিছু অস্বীকার করা [অর্থাৎ ইবাদাতের মালিক তিনি একাই], সলাত কায়িম করা, যাকাত আদায় করা, বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করা ও রমাযানের সওম পালন করা।
[ই.ফা. ২০; ই.সে. ২০] মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১ – ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ [সাঃআ:] তাহাঁর বান্দা ও রসূল- এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সলাত কায়িম করা, যাকাত দেয়া, বাইতুল্লাহর হাজ্জ করা ও রমাযানের সিয়াম পালন করা।
[ই.ফা. ২১; ই.সে. ২১]
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২. তাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে জিজ্ঞেস করলো, আপনি জিহাদে অংশগ্রহণ করিয়াছেন না কেন? {২০} তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, সলাত কায়িম করা, যাকাত আদায় করা, রমাযানের সওম পালন করা ও বাইতুল্লাহ্র হাজ্জ করা।
[ই.ফা. ২২; ই.সে. ২২]
{২০} জিহাদ প্রথমতঃ ফারযে কিফায়া, কিছু সংখ্যক মুসলিম আদায় করলেই সকলের পক্ষ থেকে হয়ে যাবে, আর কেউ পালন না করলে সকলেই গুনাহগার হইবে। আর যখন মুসলিম বাহিনী অপারগ, তখন সকলের উপর ফারয।
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআ:]-এর দ্বীনের অনুশাসনের প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দেয়া এবং তার প্রতি মানুষকে আহবান করা, দ্বীন সম্বন্ধে [জানার জন্য] প্রশ্ন করা ও তা সংরক্ষণ করা আর যার কাছে দ্বীন পৌঁছায়নি তার নিকট দ্বীনের দাওয়াত পেশ করা
২৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল কায়স-এর [গোত্রের] একটি ওয়াফ্দ {২১} [প্রতিনিধি দল] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাবীআহ্ গোত্রের লোক। আমাদের এবং আপনার মধ্যে কাফির মুযার গোত্র বিদ্যমান। আমরা শাহরুল হারাম ব্যতীত আপনার নিকট নিরাপদে পৌঁছাতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু শিক্ষা দিন আমরা যে সবের উপর আমাল করিতে পারি এবং আমাদের অন্যান্যদের তৎপ্রতি আহবান জানাতে পারি। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, তোমাদের আমি চারটি বিষয় পালনের আদেশ করছি এবং চারটি বিষয়ে নিষেধ করছি। তারপর তাহাদের এ সম্বন্ধে বর্ণনা দিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআ:] আল্লাহর রসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, সলাত কায়িম করা, যাকাত দেয়া এবং তোমাদের গনীমাতলদ্ধ সামগ্রীর এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের নিষেধ করছি দুববা, হানতাম, নাকীর, মুকাইয়্যার থেকে। {২২} খালাফ তাহাঁর বর্ণনায় আরও উল্লেখ করছেন, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই বলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] একটি অঙ্গুলি [সংকেতসূচক] বন্ধ করেন।
[ই.ফা. ২৩; ই.সে. ২৩]
{২১} ওয়াফ্দ বলা হয় ঐ লোকদের যাদেরকে কোন সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী নির্বাচন করে বিশেষ কোন ব্যক্তির নিকট যেমন বাদশাহ, মন্ত্রী, সরকারের নিকট পাঠানো হয়।
আবদুল কায়স এক ব্যক্তি যার সন্তানদের বানী আবদুল কায়স বলা হয়, যা আরব সম্প্রদায়ের রাবীআহ্ নামীয় একটা বড় গোত্র। উক্ত গোত্রের ১৪ জন ব্যক্তি সওয়ার হয়ে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর নিকট আগমন করেন। তাহাদের নেতা ছিলেন “আশাজ্জ আল আসরী” তার সঙ্গে ছিলেন মাযিদাহ বিন মালিক মুহারিবী, উবাইদাহ্ বিন হাম্মাম মুহারিবী। তাহাদের আগমনের কারণঃ “মুনকায বিন হাইয়্যান” এক ব্যক্তি ব্যবসার জন্য মাদীনায় বেশী আসা যাওয়া করিতেন। অজ্ঞতার যুগে সে ব্যক্তি খেজুর ও চাদর নিয়ে মাদীনার এক বস্তি হাজার’ সেখানে আগমন করেন। আর সে সময় আল্লাহর রসূল [সাঃআ:] মাক্কাহ্ থেকে মাদীনাহ্ হিজরত করে এসে গেছেন। কোন এক সময় মুনকায রাস্তায় বসে আছেন এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] যাচ্ছিলেন, তৎক্ষণাৎ মুনকায তোমাদের অবস্থা কেমন রসূল [সাঃআ:]-এর মুখে তাহাদের বড় বড় নেতাহাদের নাম উল্লেখ শুনে আশ্চর্য হয়ে তখনই সে কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যায়। আর দুএকটি শিক্ষা লাভ করেন।
অতঃপর মুনকায হাজার [বস্তি] যেতে লাগলেন, সে অবস্থায় আবদুল কায়স গোত্রের নামে নবি [সাঃআ:] তাহাঁর হাতে একটা পত্র দিয়ে পাঠালেন কিন্তু মুনকায তা গোপন রাখলেন, পত্র পৌঁছাননি।
একবার মুনকাযের স্ত্রী যিনি মুনযির বিন আয়যের কন্যা, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] মুনযিরের নাম আশাজ রাখেন, তার স্বামীর কথা বাবা আশাজকে বলেছেন, যখন সে মাদীনাহ্ থেকে এসেছে তখন থেকে তাহাঁর পরিবর্তন দেখিতে পায়। কোমর ঝোকায়, মাথা মাটিতে লাগায়। এ কথাগুলো শুনে যখন জামাই শ্বশুড় এক জায়গায় হয়ে অনেক কথাবার্তা হলো, তখন আশাজের অন্তরে ইসলামের ভাব দেখা গেল। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর মুনকাযের হাতে সেই প্রেরিত পত্র নিজ সম্প্রদায়ের নিকট আনেন। পত্র পাঠে সকলের মন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
এখন তাহাদের একটি দল আশাজের নেতৃত্বে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর নিকট আগমনের জন্য রওয়ানা হয়ে মাদীনার নিকটবর্তী হয়েছে। সে মতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] সহাবায়ি কিরামগণকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমাদের নিকট পূর্ব দেশের মধ্য হতে আবদুল কায়সের উত্তম ব্যক্তিগণ আসছে তার মধ্য আশাজও আছে। তারা ইসলাম গ্রহণ না করে ফিরে যাবে না।
{২২} নিষিদ্ধ পাত্রগুলোঃ হানতাম’ মাটির সবুজ পাত্র বিশেষ। দুব্বা কদুর বোল দ্বারা প্রস্তুত পাত্র বিশেষ। নাকীর কাঠের পাত্র বিশেষ। মুযাফফাত তৈলাক্ত পাত্র বিশেষ। এ সকল পাত্রে তখন শরাব ব্যবহার করা হত। উক্ত পাত্র ব্যবহার করিতে নিষেধ করার উদ্দেশ্য পাত্রগুলো দেখলে শরাব পান করার কথা মনে হইবে বা চুপচাপ মদ রেখে পান সম্ভাবনা থাকতে পারে, এ পাত্র নিষেধাজ্ঞা চিরদিনের জন্য নয়। সাময়িকভাবে যাতে সেটা দূর হয়ে যায়।
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪. আবু জামরাহ্ [নাস্র ইবনি ইমরান] হইতে বর্ণিতঃ
আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর সম্মুখে তাহাঁর ও ভিনদেশী লোকদের মধ্যে দোভাষীর কাজ করতাম। একদা জনৈক মহিলা এসে তাঁকে মাটির কলসীর মধ্যে নবিয {২৩} প্রস্তুত করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বলিলেন, আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে আসলো। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] জিজ্ঞেস করলেনঃ কাদের এ প্রতিনিধি দল? অথবা তিনি বলিলেন, কোন গোত্রের লোক? তারা বলিল, রাবীআহ্ গোত্রের। তিনি বলিলেন, ঐ গোত্রের অথবা বলিলেন, প্রতিনিধি দলের আগমন শুভ হোক। তাহাদের লজ্জিত হওয়ার ও অপমানিত হওয়ারও কোন কারণ নেই [তারা ইতিপূর্বে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে]। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেন, এরপর তারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে আপনার কাছে এসেছি। আমাদের ও আপনার মাঝখানে কাফির মুযারা গোত্র বাস করে। তাই আমরা মাহে-হারাম [সম্মানিত মাস] ছাড়া অন্য সময় আপনার কাছে আসতে পারি না। আপনি আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে কোন কাজের কথা বলে দিন যেন আমরা তা আমাদের পশ্চাতের অন্যান্য লোকদের জানিয়ে দিতে পারি এবং সে অনুযায়ী আমাল করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] তখন তাহাদের চারটি বিষয় পালনের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করিলেন। এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিলেন এবং বলিলেন, তোমরা জান এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কী? তারা আরয করলো, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআ:] এ বিষয়ে ভালো জানেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআ:] আল্লাহর রসূল আর তোমরা সলাত কায়িম করিবে, যাকাত দিবে, রমাযানের সিয়াম পালন করিবে এবং গনীমাতলদ্ধ সামগ্রীর এক পঞ্চমাংশ দান করিবে। তিনি তাহাদের চারটি বিষয়ে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তা হচ্ছে দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত। চতুর্থটি সম্বন্ধে শুবাহ্ বলেন, এরপর রাবী কখনো নাকীর কখনো বা মুকাইয়্যার শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, এসব বিধান হিফাযাত করিবে এবং যারা আসেনি তাহাদের তা জানিয়ে দিবে। আবু বকর [রাঃআ:]-এর রিওয়ায়াতে [আরবী] [যারা আসেনি] কথাটি রয়েছে কিন্তু [আরবী] শব্দটি নেই।
[ই.ফা. ২৪; ই.সে. ২৪]
{২৩} নবিযঃ কিসমিস খেজুর ইত্যাদি ভিজিয়ে তৈরি পানীয়।
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
শুবাহ্র বর্ণনার অনুরূপ রিওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলেন, আমি তোমাদের দুব্বা, নাকীর, হানতাম ও মুযাফ্ফাত নামক নবিয তৈরীর পাত্রের ব্যবহার নিষেধ করছি। ইবনি মুআয [রাঃআ:] তাহাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে আরো উল্লেখ করেন যে ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] আবদুল কায়স গোত্রের আশাজ্জ [ক্ষত বিশিষ্ট দলপতিকে] বলিলেন, তোমাদের দুটো বিশেষ গুণ রয়েছে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন – ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা।
[ই.ফা. ২৫, ই.সে ২৫]
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৬. কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎকারী এক ব্যক্তি আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [বর্ণনাকারী] সাঈদ বলেছেন, কাতাদাহ্ আবু নায্রার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল কায়স গোত্রের কজন লোক রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর নবি! আমরা রাবীআহ্ গোত্রের লোক। আমাদের ও আপনার মাঝখানে কাফির মুযার গোত্রের অবস্থান। তাই আমরা মাহে হারাম ব্যতীত অন্য কোন সময় আপনার কাছে আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদেরকে এমন কিছু কাজের নির্দেশ দিন, যা করার জন্য আমরা আমাদের পশ্চাতের অন্যান্য লোকদেরকে হুকুম করবো এবং আমরা নিজেরাও তা বাস্তবায়ন করবো যাতে এর মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] বলিলেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের হুকুম করবো, আর চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করবো। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো, তাহাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করো না, সলাত কায়িম করো, যাকাত দাও এবং রমাযানের সওম পালন কর। আর গনীমাতের সম্পদ থেকে এক পঞ্চমাংশ দান কর এবং তোমাদেরকে চারটি জিনিস [ব্যবহারে] নিষেধ করবোঃ কদুর শুকনো খোল, সবুজ রং লাগানো কলসী, আলকাতরা লাগানো হাঁড়ি-পাতিল ও কাষ্ঠ পাত্র ব্যবহার করিতে। তারা বলিল, হে আল্লাহর নবি! নাকীর [কাষ্ঠ পাত্র] সম্বন্ধে আপনি কতটুকু অবগত? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। খেজুর গাছের কাণ্ড যা তোমরা খোদাই করে নাও, পরে এর মধ্যে খেজুরের টুকরাগুলো নিক্ষেপ করো, [অর্থাৎ খেজুরের মধ্যে পানি ঢেলে তা দ্বারা নবিয অথবা মদ প্রস্তুত করে থাকো]। সাঈদ বলেন, অথবা তিনি [নবি [সাঃআ:]] বলেছেন, খেজুরের টুকরা নিক্ষেপ করো, পরে তম্মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দাও। অবশেষে যখন তার ফেনা থেমে যায় [অর্থাৎ তা মদে পরিণত হয়] তখন তোমরা পান করো। ফলে তোমাদের কেউ অথবা তাহাদের কেউ মদের নেশায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আপন চাচাত ভাইকে তরবারি দিয়ে হত্যা করে। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, উক্ত প্রতিনিধি দলের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল যার শরীরের মধ্যে ছিল ক্ষতের চিহ্ন। সে বলিল, লজ্জাবশতঃ আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:] থেকে আমার ক্ষত চিহ্নটি লুকিয়ে রাখলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তা হলে আমরা পানীয় বস্তু কিসে পান করবো? তিনি বলিলেন, চামড়ার থলি বা মশকের মধ্যে যার মুখ রশি দ্বারা বেঁধে দেয়া হয়। তারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের এলাকায় ইঁদুরের উপদ্রব খুব বেশী, ফলে চামড়ার থলি একটিও নিরাপদে থাকে না। নবি [সাঃআ:] বললেনঃ যদিও তা ইঁদুর খেয়ে ফেলে, যদিও তা ইঁদুর খেয়ে ফেলে, যদিও তা ইঁদুর খেয়ে ফেলে। অতঃপর নবি [সাঃআ:] আবদুল কায়স গোত্রের ক্ষত চিহ্নওয়ালা লোকটির উদ্দেশ্যে বলিলেন, অবশ্য তোমার মধ্যে এমন দুটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়- সহিষ্ণুতা ও ধীরতা-নম্রতা।
[ই.ফা. ২৬, ই.সে ২৬]
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৭. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, [আবদুল কায়স-এর] প্রতিনিধি দলের সাথে যাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল তাহাদের একাধিক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন। আবু নায্রাহ আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআ:]-এর কাছে আসলো। হাদীসটির বাকী অংশ ইবনি উলাইয়্যার বর্ণনার অনুরূপ। তবে তাতে উল্লেখ আছে যে, তোমরা এক [কাষ্ঠ পাত্রের] মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেজুর, খুরমা এবং পানি ঢেলে দিয়ে থাকো। [আরবী] এর পরিবর্তে [আরবী] রয়েছে এবং সাঈদের খেজুর থেকে কথাটি উল্লেখ নেই।
[ই.ফা. ২৭; ই.সে. ২৭]
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নবি [সাঃআ:]-এর নিকট আসল, তখন বলিল, হে আল্লাহর নবি! আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন, অথবা আল্লাহ আমাদের প্রাণ আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। পানপাত্রের মধ্যে আমাদের জন্য কোন্ ধরনের পাত্র উপযোগী? তিনি বলিলেন, নাকীরের পানীয় দ্রব্য পান করো না। এবার তারা বলিল, হে আল্লাহর নবি! আল্লাহ আপনার জন্য আমাদের কুরবান করুন। নাকীর কী, তা আপনি কি জানেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ! নাকীর এক প্রকার পাত্র যা খেজুর গাছ খোদাই করে তৈরিকরা হয়। তিনি আরো বলিলেন, দুববা বা হানতাম-এর মধ্যেও পানীয় পান করিতে পারবে না, তবে তোমাদের উচিত যে পাত্রের মুখ রশি দ্বারা বাঁধা যায় [অর্থাৎ চামড়ার মশক বা থলি] তা ব্যবহার করা।
[ই.ফা. ২৮; ই.সে. ২৮]
মুসলিম শরীফ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply