ইসলামী ব্যবসা নীতি খাদ্যদ্রব্য মজুত ও অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে

ইসলামী ব্যবসা নীতি খাদ্যদ্রব্য মজুত ও অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে

ইসলামী ব্যবসা নীতি খাদ্যদ্রব্য মজুত ও অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২৪, অনুচ্ছেদঃ ৪৭-৫৯=১৩টি

অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ শহরবাসীর জন্য গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি করা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ আটকানো দুধে পশুর পালান ফুলানো দেখে ক্রয়ের পর তা অপছন্দ হলে
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ অসৎ উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখা নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ দিরহাম ভাঙ্গা
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ ভেজাল দেয়া নিষেধ
অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ ক্রেতা- বিক্রেতার এখতিয়ার সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫৪ঃ ইক্বালাহ [অনুতাপজনিত চুক্তি] বাতিল করার ফাযীলাত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ একই চুক্তিতে দুই লেনদেন
অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ আল-ঈনাহ পদ্ধতির লেনদেন
অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ বিশেষ কোন ফলের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–৫৯ঃ অগ্রিম ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত না হলে তা অন্যের নিকট হস্তান্তর না করা

অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ শহরবাসীর জন্য গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি করা নিষেধ

৩৪৩৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শহুরে লোককে গ্রাম্য লোকের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করিতে নিষেধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, শহুরে লোক গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি না করে দেয়ার অর্থ কি? তিনি বলিলেনঃ সে তার দালাল না হওয়া।

সহিহঃ ইবনি মাজাহ [২১৭৭]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি না করে, যদিও সে তার ভাই অথবা পিতা হয়। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] সূত্রে আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ লোকেরা বলে থাকে, “শহরবাসী গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রয় করিবে না” এটি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য। অর্থাৎ তার পক্ষ হয়ে কিছু বিক্রিও করিবে না এবং কিনবেও না।

ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪১. সালিম আল-মাক্কী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এক বেদুঈন তাহাকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে তার দুধের উষ্ট্রী নিয়ে ত্বালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর নিকট অবতরণ করেন। তখন তিনি [তালহা] বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ] “শহরবাসীকে গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি করে দিতে নিষেধ করেছেন”। বরং তুমি বাজারে গিয়ে দেখো, তোমার পণ্য কে কিনতে চায়। তারপর আমার সঙ্গে পরামর্শ করিবে, আমি হয়তো তোমাকে অনুমতি দিব কিংবা নিষেধ করবো।

হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩৪৪২. জাবির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ শহরবাসী গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে পণ্য বিক্রি করিবে না। তোমরা লোকদেরকে ছেড়ে দাও। মহান আল্লাহ এক দলের মাধ্যমে উপর দলের রিজিক্বের ব্যবস্থা করেন।

সহিহঃ ইবনি মাজাহ [২১৭৬]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ আটকানো দুধে পশুর পালান ফুলানো দেখে ক্রয়ের পর তা অপছন্দ হলে

৩৪৪৩. আবু হুরা্‌ইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যারা বাজারে বিক্রিও উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসে, তোমরা তাহাদের পণ্য ক্রয়ের জন্য এগিয়ে তাহাদের সাথে মিলিত হইবে না। একজনের পক্ষ হইতে ক্রয়-বিক্রয়ের আলাপের সময় অন্যজন তা ক্রয়ের আলোচনা করিবে না। উট-বকরীর স্তনে দুধ জমা করে রাখা যাবে না। এরূপ করার পর কেউ তা কিনলে দুধ দোহনের পর তার জন্য এখতিয়ার থাকিবে। ইচ্ছা হলে সে ক্রয় বহাল রাখবে নতুবা ক্রয় ভঙ্গ করে তা ফেরত দিবে এবং [দুধপানের বিনিময় বাবদ] এক সা খেজুর দিবে।

সহিহঃ নাসায়ী [৪৪৮৭,৪১৭৯]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী বলেনঃ যে ব্যক্তি স্তন ফুলানো বকরী কিনবে তার জন্য তিন দিন পর্যন্ত অবকাশ থাকিবে। ইচ্ছা করলে সে তা ফেরত দিবে। [ফেরতের সময়] সাথে এক সা খাদ্যদ্রব্যও দিবে, তবে উন্নত মানের গম দিবে না।

সহিহঃ ইবনি মাজাহ [২২৩৯]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কেউ স্তন ফুলানো বকরী কিনলে তার দুধ দোহন করে দেখে নিবে। তারপর পছন্দ হলে সে তা রেখে দিবে, আর পছন্দ না হলে ফেরত দিতে পারবে। তবে দুধ দোহনের বিনিময়ে সাথে এক সা খেজুরও দিতে হইবে।

সহিহঃ আহাদীসুল বুয়ু। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি স্তন ফুলানো পশু ক্রয় করে তার জন্য তিন দিনের অবকাশ থাকে। সে তা ফেরত দিলে সাথে দোহনকৃত দুধের পরিমাণ অনুযায়ী অথবা তার দ্বিগুণ গম দিবে।

দুর্বলঃ ইবনি মাযাহ [২২৩৯]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ অসৎ উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য মজুত রাখা নিষেধ

৩৪৪৭. আদী ইবনি কাবের[রাদি.] এক পুত্র মামার ইবনি আবু মামার [রাদি.] সুত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ জঘন্য অপরাধী ছাড়া কেউই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি [মূল্য বৃদ্ধির আশায়] গুদামজাত করে না। আমি [মুহাম্মাদ ইবনি আমর] সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -কে বলি, আপনি তো গুদামজাত করেন। তিনি বলেন, মামারও গুদামজাত করিতেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমাদ ইবনি হাম্বল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কে জিজ্ঞাসা করলাম, [কোন বস্তু] গুদামজাত করা নিষেধ? তিনি বলিলেন, মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আওযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, গুদামজাতকারী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে বাজারজাত করার পথে প্রতিবন্ধক হয়।

সহীহঃ ইবনূ মাজাহ [২১৫৪]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৪৮. ক্বাতাদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খেজুর গুদামজাত করা নিষেধ নয়। ইবনিল মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইয়াহইয়া ইবনি ফাইয়্যাদ স্বীয় বর্ণনায় হাসান বাসরীকে যুক্ত করেছেন। আমরা তাহাকে বলিলাম, আপনি হাসানের বরাত দিবেন না [কারণ হাসান এটা বর্ণনা করেননি]। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদিস আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

সনদ দুর্বল মাক্বতু। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] খেজুরের আঁটি, পশুখাদ্য ও তৈলবীজ গুদামজাত করেতেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমাদ ইবনি ইউনুসের কাছে শুনিয়াছি ,আমি সুফিয়ানকে পশুখাদ্য গুদামজাত করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পূর্ববর্তী লোকেরা গুদামজাত করাকে মাকরূহ জানতেন। আমি [আহমাদ] আবু বকর ইবনিল আয়্যাশকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা গুদামজাত করাতে দোষ নেই। সহিহ মাক্বতু। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ-৫০ঃ দিরহাম ভাঙ্গা

৩৪৪৯. আলক্বামাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা বিশেষ কোন ত্রুটি ছাড়া ভাংতে নিষেধ করেছেন।

দুর্বলঃ ইবনি মাজাহ [২২৬৩], যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬০০১]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫১ঃ দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া

৩৪৫০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

একদা এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি বলিলেনঃ বরং আমি দুআ করবো। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করুন। তিনি বলিলেনঃ বরং আল্লাহই [জিনিসের দাম] কমান-বাড়ান। আমি আশা করি, আমি যেন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হই, আমার বিরুদ্ধে কারো প্রতি জুলুমের কোন অভিযোগ থাকিবে না।

সহীহঃ রাওযুন নাযীর [৪০৫]।ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ আল্লাহই মূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই তা কমান ও বৃদ্ধি করেন এবং একমাত্র তিনিই রিযিক্বদাতা। আমি এই আশা করি যে, আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবো যেন আমার উপর কারো জীবন বা সম্পদের উপর জুলুম করার কোনরূপ অভিযোগ না থাকে।

সহীহঃ ইবনূ মাজাহ [২২০০] ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫২ঃ ভেজাল দেয়া নিষেধ

৩৪৫২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল। তিনি তাহাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কিভাবে বিক্রি করছো? তখন সে তাঁকে এ সম্পর্কে জানালো। ইতিমধ্যে তিনি এ মর্মে ওয়াহী প্রাপ্ত হলেনঃ আপনি আপনার হাত শস্যের স্তূপের ভেতরে ঢুকান। তিনি স্তূপের ভেতরে তাহাঁর হাত ঢুকিয়ে অনুভব করিলেন যে , তার ভেতরের অংশ ভিজা। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যে ব্যক্তি প্রতারণা করে তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।

সহিহ ঃ ইবনি মাজাহ [২২২৪] ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫৩. ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সুফিয়ান সাওরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] লাইসা মিন্না -এর ব্যাখ্যা আমাদের মত নয় করাকে অপছন্দ করিতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু, অনুচ্ছেদ-৫৩ঃ ক্রেতা- বিক্রেতার এখতিয়ার সম্পর্কে

৩৪৫৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়ের জন্য সুযোগ থাকে। তবে সুযোগ থাকার শর্ত রাখা হলে ভিন্ন কথা।

সহিহ ঃ ইবনি মাজাহ [২১৮১]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫৫. ইবনি উমার [রাদি.] সুত্র হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ অর্থের হাদিস বর্ণিত। তিনি [সাঃআঃ] আরো বলেনঃ অথবা উভয়ের একজন অন্যজনকে এরূপ বলা হয়ে, বিক্রয় কার্য চূড়ান্ত করূন।

সহিহ ঃ এর পূর্বেরটি দেখূন। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫৬. আবদুল্লাহ ইবনি আস ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়য়ের জন্য [ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের] অবকাশ থাকে, তবে পরবর্তীতেও এ অবকাশ বহাল রাখলে ভিন্ন কথা। আর ক্রেতা বা বিক্রেতার একজন অপরজন থেকে [বিক্রয় প্রত্যাখ্যান হওয়ার আশংকায়] দ্রুত পৃথক হওয়া উচিত নয়।

হাসান ঃ তিরমিজি [১২৭০]। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৪৫৭. আবুল ওয়াদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা আমাদের কোন একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করি। তখন আমাদের একজন একটি গোলামের বিনিময়ে একটি ঘোড়া বিক্রি করে। অতঃপর তারা [ক্রেতা-বিক্রেতা] উভয়ে অবশিষ্ট দিন ও রাত একত্রে অবস্থান করে। অতঃপর পরদিন সকালে বিদায়ের পালা আসলে ক্রেতা তার ঘোড়ার পিঠে জিন বাঁধতে শুরু করলো। এমন সময় বিক্রেতা লজ্জিত অবস্থায় ক্রেতার নিকট এসে চুক্তি বাতিল করে ঘোড়া ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু ক্রেতা তাহাকে ঘোড়া ফেরত দিতে অস্বীকার করায় বিক্রেতা বললো, তোমার ও আমার মধ্যকার বিবাদ নিষ্পত্তি করে দিবেন নাবী [সাঃআঃ] এর সাহাবী আবু বারযা [রাদি.]। তারা উভয়ে তাহাকে ঘটনাটি জানালে তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ফায়সালার অনুরূপ সিদ্ধান্ত দিবো, তোমরা কি এতে রাজি আছো? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকে। হিশাম ইবনি হাস্‌সান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, জামীল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণনা করেছেন, আবু বারযা [রাদি.] বলিলেন, আমি দেখছি তোমরা এখনো বিচ্ছিন্ন হওনি।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ[২১৮২]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৫৮. ইয়াহইয়া ইবনি আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু যুরআহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কারো নিকট কিছু বিক্রি করলে তাহাকে অবকাশ দিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনিও বলিতেন, আমাকেও অবকাশ দিবে। তিনি বলিতেন, আমি আবু হুরায়রা [রাদি.] কে বলিতে শুনিয়াছি , রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যেন পরস্পরের সম্মতি ছাড়া একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়।

হাসান সহীহঃ তিরমিজি[১২৭১]। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৩৪৫৯. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ পরস্পর পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য [ক্রয়-বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের] অবকাশ থাকে। তারা সততার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করলে এবং বিক্রিত মালের দোষ-ত্রুটির প্রকাশ করলে তাহাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত হইবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং বিক্রিত বস্তুর দোষ গোপন করে তাহলে তাহাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত দূর হয়ে যাবে। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সাঈদ ইবনি আবু আরূবাহ ও হাম্মাদ এ হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মামের বর্ণনায় রয়েছেঃ পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য অবকাশ থাকে। তিনি কথাটি তিনবার বলেন।

সহীহঃ তিরমিজি[১২৬৯]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৪ঃ ইক্বালাহ [অনুতাপজনিত চুক্তি] বাতিল করার ফাযীলাত সম্পর্কে

৩৪৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের [অনুরোধে তার] সাথে সম্পাদিত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করিবে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ[২১৯৯]। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৫ঃ একই চুক্তিতে দুই লেনদেন

৩৪৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি একই দ্রব্য বিক্রয়ে দুই রকম নিয়ম রাখে তাহাকে দুই মূল্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যই গ্রহন করিতে হইবে, নতুবা তা হইবে সুদ।

হাসানঃ ইরওয়া [৫/১৪৯-১৫০] হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ আল-ঈনাহ পদ্ধতির লেনদেন

৩৪৬২. ইবনি উমার [রাদি.] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করিবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকিবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না।{২}

সহীহঃ সহিহাহ [১১] {২} ঈনাঃ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ধারে অধিক ক্রয়-বিক্রয় করা। যেমন কেউ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দশ টাকায় কিছু বিক্রি করলো এবং ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আট টাকায় কিনে নিলো। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে

৩৪৬৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মদীনাহ্য় আসলেন তখন সেখানকার লোকেরা এক, দুই অথবা তিন বছরের মেয়াদে খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃকেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করলে তাহাকে তা নির্দিষ্ট পরিমাপে, নির্দিষ্ট ওজনে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে করিতে হইবে।

সহীহঃ সহিহাহ [১১] ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৬৪. মুহাম্মাদ অথবা আব্দুল্লাহ ইবনি মুজালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনি শাদ্দাদ ও আবু বুরদার [রাদি.] মতভেদ করেন। তারা আমাকে ইবনি আবু আওফার [রাদি.] নিকট পাঠালেন। আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বকর [রাদি.] ও উমার [রাদি.] এর যুগে গম, বার্লি, খেজুর এবং কিসমিস অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করতাম। ইবনি কাসীরের বর্ণনায় রয়েছেঃ এমন লোকদের নিকট থেকে অগ্রিম ক্রয় করা হতো যাদের কাছে এগুলো বর্তমান থাকতো না। এরপর তারা [হাফ্‌স ইবনি উমার ও ইবনি কাসীর] একইরূপ বর্ণনা করেন। অতঃপর আমি ইবনি আবযাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনিও একই কথা বলিলেন।

সহীহঃ ইবনি মাজাহ[২২৮২] ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৬৫. আব্দুল্লাহ ইবনি মুজালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অথবা ইবনি আবুল মুজালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [ইবনি আবু আওফা] বলেন, এমন লোকদের কাছ থেকে অগ্রিম ক্রয় করতাম যাদের কাছে এগুলো বর্তমান থাকতো না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সঠিক হল ইবনি আবুল মুজালিদ নামটি। শুবাহ তার বর্ণনায় ভুল করেছেন।

সহীহঃ এর পূর্বেরটি দেখুন। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৪৬৬. আব্দুল্লাহ ইবনি আওফা আল-আসলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে সিরিয়ার যুদ্ধে গিয়েছিলাম। তখন সেখানকার কৃষকরা আমাদের কাছে আসলো। আমরা তাহাদের থেকে গম এবং যাইতূন নির্ধারিত দামে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে অগ্রিম কিনতাম। তাহাকে বলা হলো, আপনারা কি এমন লোকের কাছ থেকে অগ্রিম কিনতেন যার কাছে তা বর্তমান থাকতো? তিনি বলেন, তাহাদের নিকট ঐ বস্তু আছে কিনা তা আমরা জিজ্ঞেস করতাম না।

সহীহঃ এর পূর্বেরটির দ্বারা। ইসলামী ব্যবসা নীতি হাদিস এর তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ বিশেষ কোন ফলের অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে

৩৪৬৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির একটি গাছের খেজুর অগ্রিম কিনলো। কিন্তু ঐ বছর কোন ফল ধরলো না। তারা উভয়ে নাবী [সাঃআঃ] এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে তিনি বলিলেনঃ তুমি কিসের বিনিময়ে তার মাল [নিজের জন্য] বৈধ মনে করলে? তার মাল তাহাকে ফেরত দাও। অতপরঃ তিনি বলিলেনঃ গাছের খেজুর পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তার ক্রয়-বিক্রয় করিবে না।

দুর্বলঃ ইবনি মাজাহ [২২৮৪], যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬২২৯]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ–৫৯ঃ অগ্রিম ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত না হলে তা অন্যের নিকট হস্তান্তর না করা

৩৪৬৮. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বস্তু অগ্রিম কিনেছে, সে যেন ঐ বস্তুকে [হস্তগত করার পূর্বে] অন্যের নিকট হস্তান্তর না করে।

দুর্বলঃ ইবনি মাজাহ [২২৮৩], ইরওয়া [১৩৭৫], যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৫৪১৪], মিশকাত [২৮৯১]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply