ইসলামী নেতৃত্ব, আমীর কুরাইশদের মধ্যে থেকে হইবে
ইসলামী নেতৃত্ব, আমীর কুরাইশদের মধ্যে থেকে হইবে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৯৩, আহকাম, অধ্যায়ঃ (১-১০)=১০টি
৯৩/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের। (সুরা আন্-নিসাঃ ৪/৫৯)
৯৩/২. অধ্যায়ঃ আমীর কুরাইশদের মধ্যে থেকে হইবে।
৯২/৩. অধ্যায়ঃ হিকমাত (সঠিক জ্ঞান)-এর সঙ্গে বিচার ফয়সালাকারীর প্রতিদান।
৯২/৪. অধ্যায়ঃ ইমামের কথা শুনা ও মানা, যতক্ষণ তা নাফরমানীর কাজ না হয় ।
৯৩/৫. অধ্যায়ঃ যে লোক আল্লাহর কাছে নেতৃত্ব চায় না, তাকে আল্লাহ সাহায্য করেন ।
৯৩/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নেতৃত্ব চায়, তা তার উপরই ন্যস্ত করা হয় |
৯৩/৭. অধ্যায়ঃ নেতৃত্বের লোভ পছন্দনীয় নয়।
৯৩/৮. অধ্যায়ঃ জনগণের নেতৃত্ব পাওয়ার পর তাদের কল্যাণ কামনা করা ।
৯৩/৯. অধ্যায়ঃ যে কঠোর ব্যবহার করিবে আল্লাহও তার প্রতি কঠোর ব্যবহার করবেন
৯৩/১০. অধ্যায়ঃ রাস্তায় বিচার করা কিংবা ফাতওয়া দেয়া ।
৯৩/১. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের। (সুরা আন্-নিসাঃ ৪/৫৯)
৭১৩৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে আমার আনুগত্য করিল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করিল। আর যে আমার নাফরমানী করিল, সে আল্লাহরই নাফরমানী করিল। এবং যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের আনুগত্য করিল, সে আমারই আনুগত্য করিল। আর যে আমার (নির্বাচিত) আমীরের নাফরমানী করিল সে আমারই নাফরমানী করিল। (১৬৮)[২৯৫৭; মুসলিম ৩৩/৮, হাদীস ১৮৩৫, আহমাদ ৯৩৯৬] (আঃপ্রঃ- ৬৬৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫২)
(১৬৮) যে আমীর কুরআন ও আল্লাহর রাসূলের সহীহ হাদীস মোতাবেক নেতৃত্ব করেন তিনিই রাসুল (সাঃআঃ) এর আমীর। এ আমীরের নাফরমানী করলে রাসুল (সাঃআঃ)-এর নাফরমানী করা হইবে। আমীর কোন অপছন্দনীয় কাজ করলেও তার বিরুদ্ধাচারণ না করে ধৈর্য্য ধারণ করিতে হইবে।
৭১৩৮
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। কোন ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে।(আঃপ্রঃ- ৬৬৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৩)
৯৩/২. অধ্যায়ঃ আমীর কুরাইশদের মধ্যে থেকে হইবে।
৭১৩৯
মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র ইবনু মুতঈম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা কুরাইশদের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর নিকট ছিলেন। তখন মুআবিয়াহ (রাদি.)-এর নিকট সংবাদ পৌছল যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) বর্ণনা করেন যে, অচিরেই কাহতান গোত্র থেকে একজন বাদশাহ হইবেন। এ শুনে তিনি ক্রুদ্ধ হলেন এবং দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রশংসা করিলেন, তারপর তিনি বলিলেন, যা হোক! আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তোমাদের কিছু লোক এমন কথা বলে থাকে যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং যা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকেও বর্ণিত নেই। এরাই তোমাদের মাঝে সবচেয়ে জাহিল। সুতরাং তোমরা এ সকল মনগড়া কথা থেকে যা স্বয়ং বক্তাকেই পথভ্রষ্ট করে- সতর্ক থাক। আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, (খিলাফতের) এ বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যদ্দিন তারা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকবে। যে কেউ তাদের বিরোধিতা করে তবে আল্লাহ তাকেই অধোমুখে নিপতিত করবেন। (১৬৯)
নুআয়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে শুআয়ব-এর অনুসরণ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৬৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৪)
[১৬৯] যতদিন ইসলামী হুকুমাত কুরাইশ প্রভাবিত এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল ততদিন কুরাইশরাই ছিলেন ইমারাতের হকদার। কারণ কুরাইশগণ হলেন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। কুরাইশ প্রভাবিত ভূখণ্ডে কুরাইশদের বর্তমানে অন্য কেউ আমীর হলে তিনি সকলের নিকট গ্রহণীয় হইতেন না, সেখানে কুরাইশরাই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। আরব ভূখণ্ডে ইসলামী হুকুমাতের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এ কথা বলেছিলেন। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই মুসলিমদের নেতৃত্ব দিবে।
৭১৪০
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ (খিলাফাতের) এই বিষয়টি সব সময় কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যতদিন তাদের থেকে দুজন লোকও অবশিষ্ট থাকবে।(আঃপ্রঃ- ৬৬৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৫)
৯২/৩. অধ্যায়ঃ হিকমাত (সঠিক জ্ঞান)-এর সঙ্গে বিচার ফয়সালাকারীর প্রতিদান।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ যা নাযিল করিয়াছেন তদানুযায়ী যারা বিচার ফয়সালা করে না তারাই ফাসিক। (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৭)
৭১৪১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, দুরকমের লোক ব্যতীত অন্য কারো প্রতি ঈর্ষা করা যায় না। একজন হলো এমন লোক, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করিয়াছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন। অন্যজন হল, যাকে আল্লাহ হিকমাত (সঠিক জ্ঞান) দান করিয়াছেন, সে তার দ্বারা বিচার ফয়সালা করে এবং তা অন্যকে শিক্ষা দেয়।(আঃপ্রঃ- ৬৬৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৬)
৯২/৪. অধ্যায়ঃ ইমামের কথা শুনা ও মানা, যতক্ষণ তা নাফরমানীর কাজ না হয় ।
৭১৪২
আনাস্ ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যদি তোমাদের উপর এমন কোন হাবশী দাসকেও শাসক নিযুক্ত করা হয়, যার মাথাটি কিশমিশের মত তবুও তার কথা শোন ও তার আনুগত্য কর।(আঃপ্রঃ- ৬৬৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৭)
৭১৪৩
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ যদি তার আমীর (ক্ষমতাসীন) থেকে এমন কিছু দেখে, যা সে অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য্য ধরে। কারণ, যে কেউ জামাআত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে মারা যাবে, তার মৃত্যু হইবে জাহিলীয়্যাতের মৃত্যু। (আঃপ্রঃ- ৬৬৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৮)
৭১৪৪
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ যতক্ষণ আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া না হয়, ততক্ষণ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তার মান্যতা ও আনুগত্য করা কর্তব্য। যখন নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয়, তখন আর কোন মান্যতা ও আনুগত্য নেই। [২৯৫৫; মুসলিম ৩৩/৮, হাদীস ১৮৩৯] (আঃপ্রঃ- ৬৬৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৯)
৭১৪৫
আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল পাঠালেন এবং একজন আনসারীকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে সেনাবাহিনীকে তাহাঁর আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (আমীর) তাদের উপর রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ নাবী (সাঃআঃ) কি তোমাদের আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি যে তোমরা কাঠ জড় কর এবং তাতে আগুন জ্বালাও। এরপর তোমরা তাতে প্রবেশ করিবে। তারা কাঠ জড় করিল এবং তাতে আগুন জ্বালাল। এরপর যখন প্রবেশ করিতে ইচ্ছা করিল, তখন একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগল। তাঁদের কেউ কেউ বলিল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর অনুসরণ করেছি। তাহলে কি আমরা (সবশেষে) আগুনেই প্রবেশ করব? তাঁদের এসব কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে যায়। আর তাহাঁর (আমীরের) ক্রোধও দমিত হয়ে যায়। এ ঘটনা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করিতে, তাহলে কোনদিন আর এ থেকে বের হত না। জেনে রেখো! আনুগত্য কেবল বৈধ কাজেই হয়ে থাকে। [৪৩৪০; মুসলিম ৩৩/৮, হাদীস ১৮৪০, আহমাদ ৭২৪] (আঃপ্রঃ- ৬৬৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬০)
৯৩/৫. অধ্যায়ঃ যে লোক আল্লাহর কাছে নেতৃত্ব চায় না, তাকে আল্লাহ সাহায্য করেন ।
৭১৪৬
আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হে আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেও না। কারণ চাওয়ার পর যদি তোমাকে তা দেয়া হয়, তবে তার দায়িত্ব তোমার উপরই বর্তাবে। আর যদি চাওয়া ছাড়াই তা তোমাকে দেয়া হয় তবে এ ক্ষেত্রে তোমাকে সাহায্য করা হইবে। আর কোন বিষয়ে কসম করার পর, তার বিপরীত দিকটিকে যদি এর চেয়ে কল্যাণকর মনে কর, তাহলে কসমের কাফ্ফারা আদায় কর এবং কল্যাণকর কাজটি বাস্তবায়িত করো। (১৭০)(আঃপ্রঃ- ৬৬৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬১)
[১] হাদীসটি এই ইঙ্গিত বহন করে যে, শাসনকার্য চেয়ে নেয়া মাকরূহ। যেমন বুখারীর অন্য রেওয়ায়েতে আছে, إنا لا نولي هذا من سأله ولا من حرص عليه।
যার পরিপ্রেক্ষিতে রাসুল (সাঃ) শাসনকার্য চেয়ে নেয়ার ভয়াবহতা বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তিকে তার প্রার্থনার ফলে শাসনকার্য দেয়া হয় তাকে তার উপর সোপর্দ করে দেয়া হয় (অর্থাৎ আল্লাহর তরফ থেকে সে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না)।
আর যে ব্যক্তিকে বিনা প্রার্থনায় শাসনকার্য দেয়া হয় তাকে আল্লাহর তরফ হইতে সাহায্য দেয়া হয়। ইমাম মুহাল্লাব বলেন : এ ব্যাপারে সাহায্যের ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে।
আনাস (রাদি.) হইতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে :
৯৩/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নেতৃত্ব চায়, তা তার উপরই ন্যস্ত করা হয় |
৭১৪৭
আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে বলেছেনঃ হে আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ! নেতৃত্ব চেয়ে নিও না। কেননা, যদি চাওয়ার পর তোমাকে তা দেয়া হয়, তাহলে তার সকল দায়িত্বভার তোমার উপরই অর্পিত হইবে। আর যদি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে তা দেয়া হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সহযোগিতা করা হইবে। আর কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত দিকটিকে যদি উত্তম বলে মনে কর, তাহলে উত্তম কাজটিই করিবে আর তোমার কসমের কাফ্ফারা আদায় করে দিবে। (আঃপ্রঃ- ৬৬৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬২)
৯৩/৭. অধ্যায়ঃ নেতৃত্বের লোভ পছন্দনীয় নয়।
৭১৪৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ তোমরা নিশ্চয়ই নেতৃত্বের লোভ কর, অথচ ক্বিয়ামাতের দিন তা লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কত উত্তম দুগ্ধদায়িনী এবং কত মন্দ দুগ্ধ পানে বাধা দানকারিণী (এটা) (অর্থাৎ এর প্রথম দিক দুগ্ধদানের মত তৃপ্তিকর, আর পরিণাম দুধ ছাড়ানোর মত যন্ত্রণাদায়ক)। (আঃপ্রঃ- ৬৬৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৩)
মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার… আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে এ হাদীসটি আবু হুরাইরা( রাঃ)-এর ভাষ্য হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
৭১৪৯
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আমি ও আমার কওমের দুব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম। সে দুজনের একজন বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে (কোন বিষয়ে ) আমীর নিযুক্ত করুন। অন্যজনও ঐরূপ কথা বলিল। তখন তিনি বললেনঃ যারা নেতৃত্ব চায় এবং এর লোভ করে, আমরা তাদেরকে এ পদে নিয়োগ করি না। (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৪)
৯৩/৮. অধ্যায়ঃ জনগণের নেতৃত্ব পাওয়ার পর তাদের কল্যাণ কামনা করা ।
৭১৫০
হাসান বাস্রী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
যে, উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাকিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখিতে গেলেন। তখন মাকিল (রাদি.) তাকে বলিলেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করছি যা আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। আমি নাবী (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন,আর সে কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা। (১৭১) [মুসলিম ১/৬৩, হাদীস ১৪২] (আঃপ্রঃ- ৬৬৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৫)
(১৭১) নেতাদের জন্য জনগণের তত্ত্বাবধান করা ইসলামে একটি ফরয কাজ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
৭১৫১
হাসান বাস্রী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা মাকিল ইবনু ইয়াসারের কাছে তার সেবা-শুশ্রূষার জন্য আসলাম। এ সময় উবাইদুল্লাহ প্রবেশ করিল। তখন মাকিল (রাদি.) বলিলেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করে শোনাবো যা আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করিল আর তার মৃত্যু হল এই হালতে যে, সে ছিল খিয়ানাতকারী, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।[মুসলিম ১/৬৩, হাদীস ১৪২, আহমাদ ২০১৩১] (আঃপ্রঃ- ৬৬৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৬)
৯৩/৯. অধ্যায়ঃ যে কঠোর ব্যবহার করিবে আল্লাহও তার প্রতি কঠোর ব্যবহার করবেন
৭১৫২
তারীফ আবু তামীমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সাফওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), জুনদাব (রাদি.) ও তাহাঁর সাথীদের কাছে ছিলাম। তখন তিনি তাঁদের নাসীহাত করছিলেন। তাঁরা জিজ্ঞেস করিল, আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -থেকে কোন কথা শুনেছেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি যে, যারা মানুষকে শোনাবার জন্য কোন কাজ করে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার এ কথা শুনিয়ে দেবেন। আর যারা অন্যের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি কঠোরতা অবলম্বন করবেন। তাঁরা পুনরায় বলিল, আমাদেরকে কিছু নাসীহাত করুন। তিনি বলিলেন, মানুষের দেহের যে অংশ প্রথম দুর্গন্ধময় হইবে, তা হল তার পেট। কাজেই যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে যে একমাত্র পবিত্র (হালাল) খাদ্য ব্যতীত আর কিছু সে আহার করিবে না, সে যেন তাই করিতে চেষ্টা করে। আর যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে যে এক আঁজলা পরিমাণ রক্তপাত ঘটিয়ে তার ও জান্নাতের মাঝে বাধা সৃষ্টি করিবে না, সে যেন অবশ্যই তা করে। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ছাত্র ফেরাবরী] বলেন, আমি আবু আবদুল্লাহ (রাদি.) (ইমাম বুখারী) –কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) থেকে আমি শুনিয়াছি -এ কথা কি জুনদাব বলেছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, জুনদাবই। (আঃপ্রঃ- ৬৬৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৭)
৯৩/১০. অধ্যায়ঃ রাস্তায় বিচার করা কিংবা ফাতওয়া দেয়া ।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়ামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) রাস্তায় বিচার কার্য করিয়াছেন। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর ঘরের দরজায় বিচার কার্য করিয়াছেন।
৭১৫৩
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি ও নাবী (সাঃআঃ) দুজনে মাসজিদ থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় এক লোক মাসজিদের আঙ্গিনায় আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! ক্বিয়ামাত কবে হইবে? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তার জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? এতে লোকটি যেন কিছুটা লজ্জিত হল। তারপর বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! সওম, সালাত, সদকাহ খুব একটা তার জন্য করিতে পারিনি। তবে আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালোবাস (ক্বিয়ামাতে) তার সঙ্গেই থাকবে। (১৭২)(আঃপ্রঃ- ৬৬৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৮)
¬¬¬¬¬¬¬¬¬¬¬(১৭২) ইবনু বাত্তাল বলেন, হাদীসটি হইতে জানা যায়ঃ
১. কোন মাসালাহ যদি জানা না থাকে তাহলে সে ব্যাপারে প্রশ্নকারীর জবাব দান হইতে আলেমের চুপ থাকার বৈধতা।
২. মানুষের অপ্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেয়া হইতে আলেমের চুপ থাকার বৈধতা।
৩. ফিতনা–ফ্যাসাদের আশংকা রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর দান হইতে আলেমের চুপ থাকার বৈধতা।
চলমান অবস্থায় বিচার করা সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছেঃ
ইমাম আশহাব বলেনঃ যদি উপলব্ধি করা হইতে (অন্য কোন বিষয় তাকে) ব্যস্ত না রাখে তাহলে কোন অসুবিধা নাই। ইমাম সাহনুন বলেনঃ চলন্ত অবস্থায় বিচার করা উচিৎ নয়। ইমাম ইবনে হাবীব বলেনঃ সাধারণ কোন বিষয়ে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম ইবনু বাত্তাল বলেনঃ এটাই উত্তম, আর ইমাম আশহাবের মতটি দলীলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইবনু ত্বীন বলেনঃ ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য বিষয়ে বিচার করা জায়েয নাই। ইমাম ইবনুল মুনীর বলেনঃ ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় ইলম সম্পর্কিত কথাবার্তা বলা যারা নিষিদ্ধ বলেন তাদের দলীল সঠিক নয়।
উপসংহারে ইবনু হাজার আসকালানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ পায়ে হাঁটা ও আরোহী হয়ে চলমান অবস্থায় রাসুল (সাঃআঃ) -কে সাহাবীদের প্রশ্ন করা সম্পর্কিত অনেক হাদিস রয়েছে। (ফাতহুল বারী)
৯৩/১১. অধ্যায়ঃ
উল্লেখ্য আছে যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর কোন দ্বাররক্ষী ছিল না।
৭১৫৪
সাবিত বুনানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) -কে তাহাঁর পরিবারের একজন মহিলাকে এ মর্মে বলিতে শুনিয়াছি যে, তুমি কি অমুক মহিলাকে চেন? সে বলিল,হ্যাঁ। আনাস (রাদি.) বলিলেন, একবার নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তখন একটি কবরের পাশে কাঁদছিল। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বললেনঃ আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। তখন সে বলিল, আমার নিকট হইতে সরে যাও, কেননা, তুমি আমার বিপদ থেকে মুক্ত। আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলেন। এ সময় অপর লোক তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে তাকে জিজ্ঞেস করিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাকে কি বলিলেন। মহিলাটি বলিল, আমি তো তাঁকে চিনতে পারি নি। লোকটি বলিল, ইনিই তো রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)। তিনি বলিলেন, পরে সে (মহিলাটি) রাসুলুল্লাহ-এর দরজায় এল। তবে দরজায় কোন দ্বাররক্ষী দেখিতে পেল না। তখন সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে চিনতে পারি নি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আঘাতের প্রথম চোটেই ধৈর্য ধারণ করিতে হয়।(আঃপ্রঃ- ৬৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৬৮)
৯৩/১২. অধ্যায়ঃ
বিচারক উপরস্থ শাসনকর্তার বিনা অনুমতিতেই হত্যাযোগ্য আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করিতে পারেন ।
৭১৫৫
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, কায়স ইবনু সাদ নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে এরূপ থাকতেন যেরূপ আমীরের (রাষ্ট্রপ্রধানের) সামনে পুলিশ প্রধান থাকেন। (আঃপ্রঃ- ৬৬৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭০)
৭১৫৬
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে (শাসনকর্তা) পাঠালেন আর তাহাঁর পশ্চাতে মুআয (রাদি.) -কেও পাঠালেন। (আঃপ্রঃ- ৬৬৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭১)
৭১৫৭
আবদুল্লাহ ইবনু সাব্বাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক লোক ইসলাম গ্রহণ করার পর আবার ইয়াহূদী হয়ে যায়। তার কাছে মুআয ইবনু যাবাল (রাদি.) এলেন। তখন সে লোকটি আবু মূসা (রাদি.)-এর কাছে ছিল। তিনি [মুআয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] জিজ্ঞেস করিলেন, এর কী হয়েছে? তিনি বলিলেন, ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আবার ইয়াহূদী হয়ে গেছে। মুআয (রাদি.) বলিলেন, একে হত্যা না করে আমি বসব না। আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের (এটাই) বিধান।(আঃপ্রঃ- ৬৬৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭১)
৯৩/১৩. অধ্যায়ঃ
রাগের হালতে বিচারক বিচার করিতে এবং মুফ্তী ফাত্ওয়া দিতে পারবেন কি?
৭১৫৮
আবদুর রাহমান ইবনু আবু বাক্রাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আবু বকরাহ (রাদি.) তাহাঁর ছেলেকে লিখে পাঠালেন- সে সময় তিনি সিজিস্তানে অবস্থান করছিলেন- যে তুমি রাগের হালতে বিবদমান দুলোকের মাঝে ফায়সালা করো না। কেননা, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কোন বিচারক রাগের হালতে দুজনের মধ্যে বিচার করিবে না। [মুসলিম ৩০/৭, হাদীস ১৭১৭, আহমাদ ২০৪০১] (আঃপ্রঃ- ৬৬৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭২)
৭১৫৯
আবু মাসঊদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর শপথ! আমি অমুক ব্যক্তির কারণে ফজরের জামাআতে হাজির হই না। কেননা, তিনি আমাদেরকে নিয়ে দীর্ঘ সালাত আদায় করেন। আবু মাসঊদ (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে কোন ওয়াজে সে দিনের মত বেশি রাগান্বিত হইতে আর দেখিনি। এরপর তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতৃষ্ণার সৃষ্টিকারী রয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করিবে, সে যেন সংক্ষিপ্ত করে। কারণ, তাদের মাঝে আছে বয়স্ক, দুর্বল ও কর্মব্যস্ত মানুষ।[৯০; মুসলিম ৪/৩৭, হাদীস ৪৬৬, আহমাদ ২২৪০৭] (আঃপ্রঃ- ৬৬৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৩)
৭১৬০
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি স্বীয় স্ত্রীকে ঋতুবতী অবস্থায় ত্বালাক দিয়েছিলেন। উমর (রাদি.) এ ঘটনা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করেন। এতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাগান্বিত হন। এরপর তিনি বলেনঃ সে যেন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনে এবং তাকে ধরে রাখে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে পবিত্র হয়ে আবার ঋতুবতী না হয় এবং পুনরায় পবিত্র না হয়। এরপরও যদি সে তালাক দিতে চায়, তাহলে যেন তখন (পবিত্রাবস্থায়) ত্বলাক দেয়। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যুহ্রী-ই মুহাম্মাদ। (আঃপ্রঃ- ৬৬৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৪)
৯৩/১৪. অধ্যায়ঃ
যে লোক মনে করে যে, বিচারকের নিজ জ্ঞান অনুযায়ী লোকদের ব্যাপারে বিচার ফায়সালা করার অধিকার রয়েছে।
________________________________________
যদি জনগণের কুধারণা ও অপবাদের ভীতি তার না থাকে। যেমন নাবী (সাঃআঃ) হিন্দা বিনত্ উত্বাকে বলেছিলেন, তুমি তোমার ( স্বামী আবু সুফ্ইয়ানের সম্পদ থেকে) এতটুকু পরিমাণ গ্রহণ কর, যতটুকু তোমার ও তোমার সন্তানের জন্য যথেষ্ট হইবে ন্যায়নিষ্ঠা ভাবে। আর এটা হইবে তখন, যখন বিষয়টি খুবই প্রসিদ্ধ।
৭১৬১
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা হিন্দা বিন্ত উত্বা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! যমীনের বুকে এমন কোন পরিবার ছিল না, আপনার পরিবারের চেয়ে যার লাঞ্ছনা ও অবমাননা আমার নিকট অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় ছিল। কিন্তু আজ আমার কাছে এমন হয়েছে যে, এমন কোন পরিবার যমীনের বুকে নেই, যে পরিবার আপনার পরিবারের চেয়ে অধিক উত্তম ও সম্মানিত। তারপর হিন্দা (রাদি.) বলিল, আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) একজন অত্যন্ত কৃপণ লোক। কাজেই আমি আমাদের সন্তানদেরকে তার ধনমাল থেকে খাওয়াই, আমার জন্য এটা দোষের হইবে কি? নাবী (সাঃআঃ) তখন বললেনঃ না, তোমার জন্য তাদেরকে খাওয়ানো কোন দোষের হইবে না, যদি তা ন্যায়সঙ্গত হয়। (আঃপ্রঃ- ৬৬৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৫)
৯৩/১৫. অধ্যায়ঃ
মোহরকৃত চিঠির ব্যাপারে সাক্ষ্য, এতে যা বৈধ ও যা সীমিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালকের চিঠি প্রশাসকদের কাছে এবং বিচারপতির চিঠি বিচারপতির কাছে ।
________________________________________
কোন কোন লোক বলেছেন, হদ (শারীআতের নির্ধারিত শাস্তি) ব্যতীত অন্যান্য ব্যাপারে রাষ্ট্র পরিচালককে চিঠি দেয়া বৈধ। এরপর তিনি বলেছেন, হত্যা যদি ভুলবশত হয় তাহলে রাষ্ট্র পরিচালকের চিঠি বৈধ। কেননা, তাহাঁর মতে এটি মাল সংক্রান্ত বিষয়। অথচ এটি মাল সংক্রান্ত বিষয় বলে ঐ সময় প্রতীয়মান হইবে, যখন হত্যা প্রমাণিত হইবে। ভুলবশত হত্যা ও ইচ্ছাকৃত হত্যা একই। উমর (রাদি.) তাহাঁর কর্মকর্তার নিকট জারুদের উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে চিঠি লিখেছিলেন। উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ভেঙ্গে যাওয়া দাঁতের ব্যাপারে চিঠি লিখেছিলেন। ইব্রাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, লেখা ও মোহর যদি চিনতে পারেন, তাহলে বিচারপতির কাছে অন্য বিচারপতির চিঠি লেখা বৈধ। শাবী বিচারপতির পক্ষ থেকে মোহরকৃত চিঠি বৈধ মনে করিতেন। ইব্ন উমর (রাদি.) থেকেও তদ্রূপ বর্ণিত। মুআবিয়াহ ইবনু আবদুল কারীম সাকাফী বলেন, আমি বস্রার বিচারপতি আবদুল মালিক ইবনু ইয়ালা, ইয়াস ইবনু মুআবিয়াহ, হাসান, সুমায়াহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আনাস, বিলাল ইবনু আবু বুরদা, আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়দা আসলামী, আমের ইবনু আবীদা ও আব্বাস ইবনু মানসূরকে দেখেছি, তাঁরা সকলেই সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে বিচারপতিদের চিঠি বৈধ মনে করিতেন। চিঠিতে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হত সে যদি একে মিথ্যা বা জাল বলে দাবি করত, তাহলে তাকে বলা হত যাও, এ অভিযোগ থেকে মুক্তির পথ খোঁজ কর। সর্বপ্রথম যারা বিচারপতির চিঠির ব্যাপারে প্রমাণ দাবি করিয়াছেন তারা হলেন, ইবনু আবু লায়লা এবং সাওয়ার ইবনু আবদুল্লাহ ।
আবু নুআয়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের বলেছেন, উবাইদুল্লাহ ইবনু মুহ্রেয আমাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি বস্রার বিচারপতি মূসা ইবনু আনাসের নিকট হইতে চিঠি নিয়ে আসলাম। সেখানে আমি তাহাঁর নিকট এ ব্যাপারে প্রমাণ পেশ করলাম যে, অমুকের নিকট আমার এত এত পাওনা আছে, আর সে কূফায় অবস্থান করেছে। এ চিঠি নিয়ে আমি কাসেম ইবনু আবদুর রহমানের কাছে আসলাম, তিনি তা কার্যকর করিলেন। হাসান ও আবু কেলাবা অসিয়্যতনামায় কী লেখা আছে তা না জেনে তার সাক্ষী হওয়াকে মাক্রূহ মনে করিতেন। কেননা, সে জানে না ,হয়তো এতে কারো প্রতি অবিচার করা হয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) খায়বারবাসীদের প্রতি চিঠি লিখেছিলেন যে, হয়তো তোমরা তোমাদের সাথীর দিয়ত (রক্তপণ) আদায় কর, না হয় যুদ্ধের ঘোষণা গ্রহণ কর। পর্দার অন্তরাল থেকে মহিলাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া সম্পর্কে ইমাম যুহরী বলেন, যদি তুমি তাকে চিনতে পার তাহলে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে, তা না হলে সাক্ষ্য দেবে না।
৭১৬২
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ যখন রোমের সম্রাটের নিকট চিঠি লিখতে চাইলেন, তখন লোকেরা বলিল, মোহরকৃত চিঠি না হলে তারা তা পড়ে না। তাই নাবী সাঃআঃ একটি রৌপ্যের আংটি তৈরি করিলেন। [আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি এখনও যেন এর উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করছি। তাতে مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ অংকিত ছিল। [৬৫] (আঃপ্রঃ- ৬৬৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৬)
৯৩/১৬. অধ্যায়ঃ
লোক কখন বিচারক হবার যোগ্য হয়।
________________________________________
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আল্লাহ তাআলা বিচারকদের থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে, তারা যেন কখনও খেয়াল খুশির অনুসরণ না করেন, মানুষকে ভয় না করেন এবং অল্প মূল্যের বদলে আল্লাহর আয়াতকে বিক্রয় না করেন। এরপর তিনি পড়লেন- ইরশাদ হলোঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে (আমার) প্রতিনিধি বানালাম, কাজেই তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে শাসন-বিচার পরিচালনা কর, এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। কেননা, তা তোমাকে আল্লাহর পথ হইতে বিচ্যুত করে ফেলবে। যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য আছে কঠিন আযাব কারণ তারা হিসাব-নিকাশের দিনকে ভুলে গেছে- (সুরা সোয়াদ ৩৮/২৬)। তিনি আরো পাঠ করিলেন, (আল্লাহর বাণী): আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল সঠিক পথের দিশা ও আলো। নাবীগণ যারা ছিল মুসলিম এগুলো দ্বারা ইয়াহূদীদেরকে ফায়সালা দিত। দরবেশ ও আলিমরাও (তাই করত) কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল আর তারা ছিল এর সাক্ষী। কাজেই মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, আর আমার আয়াতকে নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করো না। আল্লাহ যা নাযিল করিয়াছেন, সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির- (সুরা আল-মায়িদাহ ৫/৪৪)। এবং আরো পাঠ করিলেন (আল্লাহ তাআলার বাণী): স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানের কথা যখন তারা কৃষিক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল যখন তাতে রাতের বেলা কোন ব্যক্তির মেষ ঢুকে পড়েছিল, আর আমি তাদের বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করছিলাম। আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের (সঠিক) বুঝ দিয়েছিলাম আর (তাদের) প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম বিচারশক্তি ও জ্ঞান। আমি পর্বত ও পাখীদেরকে দাঊদের অধীনে করে দিয়েছিলাম, তারা দাঊদের সাথে আমার মাহাত্ন্য ও পবিত্রতা ঘোষণা করত। (এসব) আমিই করতাম। (সুরা আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)
(আল্লাহ) সুলায়মান (আঃ)-এর প্রশংসা করিয়াছেন, তবে দাঊদ (আঃ)-এর প্রতি তিরস্কার করেননি। যদি আল্লাহ তাআলা দুজনের অবস্থাকেই উল্লেখ না করিতেন, তাহলে মনে করা হত যে, বিচার করা ধ্বংস হয়ে গেছেন। তিনি তাহাঁর (সুলায়মানের) ইল্মের প্রংশসা করিয়াছেন এবং (দাঊদকে) তাহাঁর (ভুল) ইজ্তিহাদের জন্য মাফ করে দিয়েছেন।
মুযাহিম ইবনু যুফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাদের বলেছেন যে, পাঁচটি গুণ এমন যে, বিচারকদের মধ্যে যদি এগুলোর একটিও অভাব থাকে তাহলে তা তার জন্য দোষ বলে গণ্য হইবে। তাকে হইতে হইবে বুদ্ধিমান, ধৈর্যশীল, পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, দৃঢ়প্রত্যয়ী ও জ্ঞানী, জ্ঞানের অনুসন্ধানকারী।
৯৩/১৭. অধ্যায়ঃ
প্রশাসক ও প্রশাসনিক কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ভাতা ।
________________________________________
বিচারপতি শুরায়হ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিচার কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিতেন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, (ইয়াতীমের) দেখাশুনাকারী সম্পদ থেকে তার পারিশ্রমিকের সমান খেতে পারবেন। আবু বক্র (রাদি.) ও উমর (রাদি.) (সরকারী ভাতা) ভোগ করিয়াছেন।
৭১৬৩
আবদুল্লাহ ইবনু সাদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, উমর (রাদি.) -এর খিলাফাত সময়ে তিনি একবার তাহাঁর কাছে আসলেন। তখন উমর (রাদি.) তাঁকে বলিলেন- আমাকে কি এ সম্পর্কে জানানো হয়নি যে তুমি জনগণের অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে থাক। কিন্তু যখন তোমাকে এর পারিশ্রমিক দেয়া হয়, তখন তুমি সেটা নেয়াকে অপছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ। উমর (রাদি.) বলিলেন, কী কারণে তুমি এরূপ কর। আমি বললাম, আমার অনেক ঘোড়া ও গোলাম আছে এবং আমি ভাল অবস্থায় আছি। কাজেই আমি চাই যে, আমার পারিশ্রমিক সাধারণ মুসলমানদের জন্য সদাকাহ হিসাবে গণ্য হোক। উমর (রাদি.) বলিলেন, এরকম করো না। কেননা, আমিও তোমার মত এরকম ইচ্ছে পোষণ করতাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন আমাকে কিছু দিতেন, তখন আমি বলতাম, আমার চেয়ে যার প্রয়োজন বেশি তাকে দিন। এতে একবার তিনি আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার হইতে এ মালের প্রয়োজন যার অধিক তাকে দিন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা নিয়ে মালদার হও এবং বৃদ্ধি করে তা থেকে সদাকাহ কর। আর এ মাল ধনের যা কিছু তোমার নিকট এভাবে আসে, তুমি যার অধিকারী নও বা প্রার্থী নও তা গ্রহণ করো। তা না হলে তার পিছনে নিজেকে নিয়োজিত করো না। (১৭৩)(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৪ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৭)
(১৭৩) জামহুর ওলামার নিকট বিচারকের বিচারকার্য পরিচালনার পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয। যদিও কেউ কেউ মাকরূহ বলেন। যেমন বিশিষ্ট তাবেয়ী মাসরুক। কিন্তু কেউ হারাম বলেননি। ইমাম ত্ববারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ উমার (রাদি.)-এর হাদীসের মধ্যে মুসলিমদের যে কোন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি তার ঐ কর্মের পরিশ্রমিক গ্রহণ করিতে পারবে তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যেমন শাসক, বিচারক, কর বা ট্যাক্স আদায়কারী, যাকাত আদায়কারী ইত্যাদি। কারণ রাসুল (সাঃআঃ) উমারকে (রাদি.) তার কর্মের মজুরী প্রদান করেছিলেন। (ফাতহুল বারী)
ধনসম্পদের পিছনে না ছুটেও কেউ যদি সম্পদশালী হয় তবে তার প্রতি অনীহা প্রকাশ করা উচিত নয়। কারণ তার থেকে যাকাত লাভ করে বহু গরীব উপকৃত হইতে পারে।
৭১৬৪
যুহরী আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যুহরী আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে বলেন, তিনি উমর (রাদি.) -কে বলিতে শুনেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে যখন কিছু দান করিতেন, তখন আমি বলতাম, আমার চেয়ে যার অধিক প্রয়োজন তাকে দিন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এটা লও এবং বাড়িয়ে তা থেকে সদাকাহ কর। আর এ রকম মালের যা কিছু তোমার কাছে এমন অবস্থায় আসে যে তুমি তার আশা কর না এবং প্রার্থীও নও তাহলে তা গ্রহণ কর। তবে যা এভাবে আসবে না নিজেকে তার অনুসারী বানাবে না।(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৪ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৭)
৯৩/১৮. অধ্যায়ঃ
যে লোক মাসজিদে বসে বিচার করে ও লিআন (১৭৪) করে ।
________________________________________
(১৭৪) স্বামী বা স্ত্রীর একে অপরের প্রতি যিনের অভিযোগ উত্থাপন করলে শরীয়তসম্মত বিধান মুতাবিক উভয়কে যে কসম করানো হয় তাকে লিআন বলে।
উমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) এর মিম্বারের নিকটে লিআন করিয়েছিলেন। মারওয়ান যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.)-এর উপর নাবী (সাঃআঃ)-এর মিম্বারের কাছে শপথ করার রায় দিয়েছিলেন। শুরায়হ, শাবী, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়ামামার মাসজিদে বিচারকার্য পরিচালনা করিয়াছেন। হাসান ও যুরারাহ ইবনু আওফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাসজিদের বাহিরের চত্বরে বিচার করিতেন।
৭১৬৫
সাহ্ল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
(তিনি বলেন) আমি দুজন (স্বামী-স্ত্রী) লিআনকারীকে স্বচক্ষে দেখেছি, তাদের বিবাহের বন্ধন ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। তখন আমি ছিলাম পনের বছর বয়সের।(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৮)
৭১৬৬
সাহেল ইবনু সাদ (রাদি.) বনূ সাঈদার ভ্রাতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, এক আনসারী নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, আপনার কী রায়? যদি কোন লোক তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন পুরুষকে দেখিতে পায় তাহলে সে কি তাকে হত্যা করিবে? পরে সে লোক ও তার স্ত্রীকে মাসজিদে লিআন করানো হয়েছিল, তখন আমি সেখানে হাজির ছিলাম।(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৭৯)
৯৩/১৯. অধ্যায়ঃ
যে লোক মাসজিদে বিচার করে। অবশেষে যখন হদ কার্যকর করার সময় হয়, তখন সাজাপ্রাপ্তকে মাসজিদ থেকে বের করে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়।
________________________________________
উমর (রাদি.) বলেন, তোমরা দুজন একে মাসজিদ হইতে বাইরে নিয়ে যাও। আলী (রাদি.) থেকেও এরকমই বর্ণিত হয়েছে।
৭১৬৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক লোক রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এল। তখন তিনি ছিলেন মাসজিদে। লোকটি নাবী (সাঃআঃ) -কে ডেকে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যিনা করে ফেলেছি। তিনি তাহাঁর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। এভাবে সে যখন নিজের সম্পর্কে চারবার সাক্ষ্য দিল, তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি পাগল? লোকটি বলিল, না। তখন তিনি বললেনঃ একে রজম কর।(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮০)
৭১৬৮
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু শিহাব বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে যিনি শুনেছেন, তিনি আমাকে বলেছেন যে, যারা তাকে জানাযা পড়ার জায়গায় নিয়ে রজম করেছিলেন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। ইউনুস, মামার ও ইবনু জুরায়জ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) রজমের ব্যাপারে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮০)
৯৩/২০. অধ্যায়ঃ
বিবাদীয় পক্ষদ্বয়কে ইমাম কর্তৃক নাসীহাত করা।
৭১৬৯
উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি মানুষ ছাড়া অন্য কিছু নই। তোমরা আমার কাছে ঝগড়া বিবাদ নিয়ে আসো। হয়ত তোমাদের কেউ অন্যজনের অপেক্ষা প্রমাণ পেশের ব্যাপারে অধিক বাকপটু। আর আমি তো যেমন শুনি তার ভিত্তিতেই বিচার করে থাকি। কাজেই আমি যদি কারো জন্য তার অন্য ভাইয়ের হক সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত দেই, তাহলে সে যেন তা গ্রহণ না করে। কেননা, আমি তার জন্য যে অংশ নির্ধারণ করলাম তা তো কেবল এক টুক্রা আগুন।(আঃপ্রঃ- ৬৬৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮১)
৯৩/২১. অধ্যায়ঃ
বিচারক যদি নিজে বিবাদের সাক্ষী হয়, তা বিচারকদের পদে অধিষ্ঠিত থাকার সময়েই হোক কিংবা তার আগে।
________________________________________
বিচারক শুরায়হ্কে এক লোক তাহাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার আবেদন করলে তিনি তাকে বলিলেন, তুমি শাসকের কাছে যাও, সেখানে আমি তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিব। ইক্রামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উমর (রাদি.) আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) -কে বলিলেন, যদি তুমি শাসক হও, আর তুমি নিজে কোন লোককে হদের কাজ যিনা বা চুরিতে লিপ্ত দেখ (সে অবস্থায় তুমি কী করিবে?) জওয়াবে তিনি বলিলেন (আপনি শাসক হলেও) আপনার সাক্ষ্য সাধারণ একজন মুসলিমের সাক্ষ্যের মতই। তিনি [উমর (রাদি.)] বলিলেন, তুমি ঠিকই বলেছ। উমর (রাদি.) বলেন, যদি মানুষ এ কথা বলবে বলে আশংকা না হত যে, উমর আল্লাহর কিতাবে নিজের পক্ষ থেকে বাড়িয়ে দিয়েছে, তাহলে আমি নিজ হাতে রজমের আয়াত লিখে দিতাম। মায়েয নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট চারবার যিনার কথা স্বীকার করেছিলেন; তখন তাকে রজম করার আদেশ দেন। আর এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, নাবী (সাঃআঃ) উপস্থিত লোকেদের নিকট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়াছেন। হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, বিচারকের কাছে কেউ একবার স্বীকার করলে তাকে রজম করা হইবে। আর হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, চারবার স্বীকার করিতে হইবে।
৭১৭০
আবু ক্বাতাদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনায়নের দিন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, শত্রুপক্ষের কোন নিহত লোককে হত্যা করা সম্পর্কে যার সাক্ষী আছে, সেই তার ছেড়ে যাওয়া সম্পদ পাবে। (রাবী বলেন) আমি আমার দ্বারা নিহত ব্যক্তির সাক্ষী খুঁজতে দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে এমন কেউ দেখিতে পেলাম না, কাজেই আমি বসে গেলাম। তারপর আমার খেয়াল হল। আমি তাই হত্যার ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট জানালাম। তখন তাহাঁর নিকট বসা লোকদের মধ্যে একজন বলিল, যে নিহত লোকটির আলোচনা চলছে তার হাতিয়ার আমার কাছে আছে। অতএব আপনি তাকে আমার পক্ষ হয়ে খুশি করে দিন। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, কক্ষনো না। আপনি এই পাংশুবর্ণ কুরাইশকে কক্ষনো দিবেন না। আল্লাহ ও রাসূলের হয়ে যে আল্লাহর সিংহ যুদ্ধ করছে, তাকে আপনি বঞ্চিত করবেন। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বিষয়টি বুঝতে পারলেন এবং তা আমাকে দিলেন। আমি তা দিয়ে একটি বাগান কিনলাম। এটাই ছিল আমার প্রথম সম্পদ, যা আমি মূলধন হিসাবে সংরক্ষণ করেছিলাম।
আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) লায়সের সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করিতে সাঃআঃفَعلم رسول الله এর স্থলে فَقَامَ النَّبِيُّ (নাবী সাঃআঃ দাঁড়িয়ে গলেন) বর্ণনা করিয়াছেন। হিজাযের আলিমরা বলেন, শাসক তার জ্ঞান অনুসারে বিচার করিবে না, তা পদে আসীনকালে দেখে থাকুক, কিংবা তার আগে। তাদের কারো কারো মতে যদি বাদী বিবাদীর কোন এক পক্ষ অপর পক্ষের হকের ব্যাপারে বিচার চলাকালে তার সামনে স্বীকার করে তা হলেও তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত দুজন সাক্ষী ডেকে সে ব্যক্তির স্বীকারোক্তির সময় তাদের হাজির না রাখবেন। কোন কোন ইরাকী আলিম বলেন, বিচার চলার সময় যা কিছু শুনবে বা দেখবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিবে। তবে অন্য জায়গায় যা কিছু শুনবে বা দেখবে দুজন সাক্ষী ব্যতীত ফায়সালা দিতে পারবে না। তাদের অন্যরা বলেন বরং তার ভিত্তিতে ফায়সালা দিতে পারবে। কেননা সে তো বিশ্বস্ত। আর সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্য হল প্রকৃত সত্যকে জানা। সুতরাং তার জানা (সাক্ষীর) সাক্ষ্যের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। তাদের অন্য কেউ বলেন যে, মাল সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারক তার নিজের জানার ভিত্তিতে ফায়সালা দিবে। তবে অন্য ব্যাপারে নয়। কাসেম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, অপরের সাক্ষ্য গ্রহণ ব্যতীত শাসকের নিজের জ্ঞান মুতাবেক ফায়সালা দেয়া উচিত নয়, যদিও তার জানা অন্যের সাক্ষ্যের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য তবুও। এতে মুসলিম জনসাধারণের কাছে নিজেকে অপবাদের মুখে পড়তে হয় এবং তাদেরকে সন্দেহে ফেলা হয়। কারণ নাবী সাঃআঃ সন্দেহ করাকে পছন্দ করিতেন না। এজন্যেই তিনি পথচারীকে ডেকে বলে দিয়েছেনঃ এ হচ্ছে সফীয়্যাহ (আমার স্ত্রী)। [২১০০] (আঃপ্রঃ- ৬৬৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮২)
৭১৭১
আলী ইবনু হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মুল মুমিনীন সফীয়্যাহ বিন্ত হুয়াই [রাঃ] নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসেছিলেন। যখন তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর সাথে সাথে হাঁটছিলেন। এমন সময় দুজন আনসারী তাহাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করিল। তিনি তাদেরকে ডাকলেন এবং বললেনঃ এ হচ্ছে সফীয়্যাহ। তাঁরা বলিল, সুবাহানাল্লাহ (আমরা আপনার ব্যাপারে সন্দেহ করব নাকি?) তিনি বললেনঃ শয়তান বনী আদমের শিরায় শিরায় বিচরণ করে। শুআয়ব …… সফীয়্যাহ [রাঃ] সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। (১৭৫)(আঃপ্রঃ- ৬৬৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৩)
(১৭৫) মুমিনদের উচিত শয়তানকে কোন প্রকার সুযোগ না দেওয়া যাতে সে মুমিনের চরিত্র সম্পর্কে কোন প্রকার অপবাদ ছাড়াতে না পারে।
৯৩/২২. অধ্যায়ঃ
দুজন আমীরের প্রতি শাসনকর্তার আদেশ, যখন তাদেরকে কোন জায়গার দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় যেন তারা পরস্পরকে মান্য করে, বিরোধিতা না করে।
৭১৭২
আবু বুরদাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার পিতা ও মুআয ইবনু জাবালকে ইয়ামানে প্রেরণ করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা সহজ করো, কঠোর করো না (১৭৬) , তাদের সুসংবাদ দাও, ভয় দেখায়ও না এবং পরস্পর পরস্পরকে মেনে চলো। তখন আবু মূসা (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, আমাদের দেশে বিত্ নামীয় এক ধরণের পানীয় প্রস্তুত করা হয়। জওয়াবে তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম।
নাযর, আবু দাঊদ, ইয়াযিদ ইবনু হারুন, ওকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…… সাঈদ- এর দাদা আবু মূসা (রাদি.) সূত্রে হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৬৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৪)
(১৭৬) যেমন কাউকে কোন বড় গুনাহে লিপ্ত দেখে বলা হল আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, সে জাহান্নামী হয়ে গেছে। এরকম বলা ঠিক নয়। বরং আশার বাণী শোনাতে হইবে, তাওবা করে কেউ সৎ পথে ফিরলে আল্লাহ পূর্বের তামাম গোনাহ মাফ করে দিবেন- এমন কথা জানিয়ে দিতে হইবে।
৯৩/২৩. অধ্যায়ঃ
প্রশাসকের দাওয়াত গ্রহণ করা।
________________________________________
উসমান (রাদি.) মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.)-এর ক্রীতদাসের দাওয়াত গ্রহণ করেছিলেন।
৭১৭৩
আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বন্দীদেরকে মুক্ত কর, আর দাওয়াত দাতার দাওয়াত গ্রহণ কর। (আঃপ্রঃ- ৬৬৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৫)
৯৩/২৪. অধ্যায়ঃ
কর্মকর্তাদের দ্বারা হাদিয়া গ্রহণ।
৭১৭৪
আবু হুমায়দ আস্-সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, নাবী সাঃআঃ বানী আসাদ গোত্রের ইবনু লুতাবিয়্যা নামের এক লোককে যাকাত আদায়ের জন্য কর্মচারী বানালেন। সে যখন ফিরে এল, তখন বলিল, এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। এ কথা শোনার পর নাবী সাঃআঃ মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। সুফ্ইয়ান কখনো বলেন, তিনি মিম্বরের উপর উঠলেন এবং আল্লাহর হামদ ও সানা করিলেন। এরপর বললেনঃ কর্মকর্তার কী হল! আমি তাকে পাঠাই, তারপর সে ফিরে এসে বলিল, এগুলো আপনার আর এগুলো আমার। সে তার বাপের বাড়ি কিংবা মায়ের বাড়িতে বসে থেকে দেখত যে, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কিনা? যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাহাঁর কসম! যা কিছুই সে গ্রহণ করিবে, ক্বিয়ামাতের দিন তা কাঁধে বয়ে নিয়ে হাজির হইবে। যদি উট হয়, তাহলে তা চিৎকার করিবে, যদি গাভী হয় তবে তা হাম্বা হাম্বা করিবে, অথবা যদি বক্রী হয় তাহলে তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করিবে। তারপর তিনি উভয় হাত উঠালেন। এমনকি আমরা তাহাঁর দু বগলের শুভ্র ঔজ্জ্বল্য দেখিতে পেলাম। তারপর বলিলেন, শোন! আমি কি আল্লাহর হুকুম পৌঁছে দিয়েছি? এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন।
সুফ্ইয়ান বলেন, আমাদের কাছে যুহরী এ রেওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন। তবে হিশাম তার পিতার সূত্রে আবু হুমায়দ থেকে বর্ণনা করিতে আর একটু বৃদ্ধি করে বলেছেন যে, তিনি (আবু হুমায়দ) বলেছেন, আমার দু কান তা শুনেছে এবং দুচোখ তা দেখেছে। যায়দ ইবনু সাবিতকে জিজ্ঞেস কর, সেও আমার সঙ্গে শুনিয়াছিল। আমি বলিল দু কান শুনেছে এবং দুচোখ তাকে দেখেছে যুহরী এ কথা বলেননি। [বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] خُوَارٌ বলা হয় শব্দকে। আর خُؤََارٌ থেকে يحرءون গরুর শব্দের মত চেঁচানো।[১] [৯২৫] (আঃপ্রঃ- ৬৬৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৬)
[১] হাদীসটি হইতে জানা যায় :
১. গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইমামের বক্তব্য প্রদান।
২. জুমুআর খুৎবার ন্যায় বক্তব্যে أما بعد শব্দ ব্যবহার করা।
৩. আমানত গ্রহীতার হিসাব রক্ষণের বৈধতা।
৪. যে কর্মচারী যে কাজের জন্য নিয়োজিত সেই কাজের বিনিময়ে উপঢৌকন গ্রহণের নিষিদ্ধতা। হ্যাঁ, তবে যদি কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকে তাহলে দোষণীয় নয়।
৫. কৃর্তপক্ষের বিনা অনুমতিতে গ্রহণকৃত উপঢৌকন সরকারী কোষাগারে জমা করিতে হইবে। কোন কর্মচারীর জন্য নির্দিষ্ট হইবে না।
৬. ইবনুল মুনীর বলেন : هَلاَّ جَلَسَ فِي بَيْتِ أَبِيهِ وَأُمِّهِ বাক্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যাদের সাথে ইতঃপূর্বে উপঢৌকন বিনিময় হয়েছে তাদের কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ জায়েয।
৭. ভুলকারীকে তিরস্কার করার বৈধতা।
৮. শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তিকে আমীর পদে, ইমামতিতে ও আমানতের কাজে কর্মচারী নিয়োগ দানের বৈধতা। (ফাতহুল বারী)
৯৩/২৫. অধ্যায়ঃ
আযাদকৃত দাসকে বিচারক কিংবা প্রশাসক নিয়োগ করা।
৭১৭৫
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু হুযাইফাহর আযাদকৃত দাস সালিম (রাদি.) মাসজিদে কুবাতে প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরীন ও নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের ইমামতি করিতেন। যাদের মাঝে ছিলেন আবু বক্র, উমর, আবু সালামাহ, যায়দ ও আমির ইবনু রাবীআ(রাদি.)।(আঃপ্রঃ- ৬৬৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৭)
৯৩/২৬. অধ্যায়ঃ
মানুষদের জন্য প্রতিনিধি হওয়া ।
৭১৭৬
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, মারওয়ান ইবনু হাকাম ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) তার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হাওয়াযেনের বন্দীদেরকে মুক্ত করার ব্যাপারে মুসলিমরা যখন এসে সর্বসম্মতভাবে অনুমতি দিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে অনুমতি দিয়েছ, আর কে দাও নি, তা আমি বুঝতে পারি নি। কাজেই তোমরা ফিরে যাও, তোমাদের প্রতিনিধিরা তোমাদের মতামত জেনে আমার নিকট আসবে। লোকেরা ফিরে গেল এবং তাদের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করিল। পরে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে সংবাদ দিল যে, লোকেরা সন্তোষ সহকারে অনুমতি দিয়েছে। (১৭৮) (আঃপ্রঃ- ৬৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৮)
(১৭৮) প্রত্যেক মুসলমানকে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দিতে হইবে। মতভেদ, দলাদলি ও বিবাদ এড়ানোর এটা একটা বড় পন্থা।
৭১৭৭
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, মারওয়ান ইবনু হাকাম ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) তার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হাওয়াযেনের বন্দীদেরকে মুক্ত করার ব্যাপারে মুসলিমরা যখন এসে সর্বসম্মতভাবে অনুমতি দিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে অনুমতি দিয়েছ, আর কে দাও নি, তা আমি বুঝতে পারি নি। কাজেই তোমরা ফিরে যাও, তোমাদের প্রতিনিধিরা তোমাদের মতামত জেনে আমার নিকট আসবে। লোকেরা ফিরে গেল এবং তাদের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করিল। পরে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে সংবাদ দিল যে, লোকেরা সন্তোষ সহকারে অনুমতি দিয়েছে। (১৭৮) (আঃপ্রঃ- ৬৬৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৮)
(১৭৮) প্রত্যেক মুসলমানকে স্বীয় মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দিতে হইবে। মতভেদ, দলাদলি ও বিবাদ এড়ানোর এটা একটা বড় পন্থা।
৯৩/২৭. অধ্যায়ঃ
শাসকের প্রশংসা করা এবং বাইরে এসে তার উল্টা বলা অপছন্দনীয়।
৭১৭৮
মুহাম্মাদ ইবনু যায়েদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কয়েকজন লোক ইবনু উমার (রাদি.) -কে বলিল, আমরা আমাদের শাসকের কাছে গিয়ে তার এমন কথা বলি, তার দরবার থেকে বাইরে আসার পর সে কথার উল্টো বলি। তিনি বলিলেন, আমরা এটাকেই নিফাক বলে গণ্য করতাম।(আঃপ্রঃ- ৬৬৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৯)
৭১৭৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছেন- দুমুখো লোকেরা সবচেয়ে খারাপ যারা এদের কাছে এক চেহারা নিয়ে আসে আবার ওদের কাছে আর এক চেহারা নিয়ে আসে।(আঃপ্রঃ- ৬৬৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯০)
৯৩/২৮. অধ্যায়ঃ
অনুপস্থিত ব্যক্তির বিচার
৭১৮০
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, হিন্দা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) –কে বলিল, আবু সুফ্ইয়ান (রাদি.) বড় কৃপণ লোক। কাজেই তার সম্পদ থেকে কিছু নিতে আমি বাধ্য হয়ে পড়ি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার ও সন্তানের জন্য যতটা প্রয়োজন ন্যায়সঙ্গতভাবে ততটা নিতে পার। (আঃপ্রঃ- ৬৬৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯১)
৯৩/২৯. অধ্যায়ঃ
বিচারক যাকে তার ভাই-এর হক প্রদান করে, সে যেন তা না নেয়, কারণ বিচারকের ফায়সালা হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করিতে পারে না।
৭১৮১
যাইনাব বিনত আবু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে তার কাছে বর্ণনা করছেন যে, একবার তিনি তাহাঁর কক্ষের দরজায় ঝগড়া বিবাদের শব্দ শুনতে পেলেন। এরপর তিনি তাদের কাছে এসে বলিলেন, আমি তো একজন মানুষ। আমার নিকট বাদী-বিবাদীরা আসে। হয়ত তোমাদের মাঝে কেউ অন্যের তুলনায় কথায় পটু। আমি মনে করি যে সে সত্যবাদী। ফলে আমি তার পক্ষে ফায়সালা করি। কিন্তু আমি যদি কোন মুসলিমের হক অন্য কারো জন্য ফায়সালা করি, তাহলে সেটা এক খন্ড আগুন ব্যতীত আর কিছু নয়। কাজেই সে চাইলে তা গ্রহণ করুক অথবা তা ত্যাগ করুক। (আঃপ্রঃ- ৬৬৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯২)
৭১৮২
নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উতবাহ ইবনু আবু ওয়াক্কাস তাহাঁর ভাই সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস-কে ওসিয়ত করেন যে, যামআ-এর বাঁদীর গর্ভজাত সন্তানটি আমার ঔরস থেকে জন্মেছে। কাজেই তুমি তাকে তোমার হেফাজতে নিয়ে এসো। মক্কা বিজয়ের বছর সাদ (রাদি.) তাকে ধরলেন এবং বলিলেন, আমার ভাই এ ছেলের সম্পর্কে আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন। তখন আবদ ইবনু যামআহ দাঁড়াল এবং বলিল, এ আমার ভাই, আমার পিতার বাঁদীর পেটের সন্তান। আমার পিতার ঔরসে তার জন্ম। তারপর তারা দুজনেই বিষয়টি নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে বিচার প্রার্থী হলেন। সাদ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ আমার ভাইয়ের ছেলে। আমার ভাই এর ব্যাপারে আমাকে ওসিয়ত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআহ বলিল, এ হচ্ছে আমার ভাই, আমার পিতার বাঁদীর পেটের সন্তান। আমার পিতার ঔরসেই তার জন্ম। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবদ ইবনু যামআহ! সে তোমারই। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ সন্তান হল বিছানার মালিকেরই আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর। পরে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উতবাহর সঙ্গে এ ছেলেটির চেহারার মিল দেখে, সাওদা বিনত যামআহ (রাদি.) -কে বলিলেন, এর থেকে পর্দা কর। সে জন্য মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ছেলেটি সাওদা (রাদি.) -কে দেখিতে পাইনি। (আঃপ্রঃ- ৬৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯৩)
৯৩/৩০. অধ্যায়ঃ
কূয়া ইত্যাদি বিষয়ক বিচার।
৭১৮৩
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে লোক মাল আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করিবে যে, তিনি তার উপর অত্যন্ত রাগান্বিত থাকবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করেছেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে”- (সুরা আল ইমরান ৩/৭৭)। (আঃপ্রঃ- ৬৬৮১ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯৪)
৭১৮৪
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যখন আবদুল্লাহ (রাদি.) তাদেরকে হাদীস বর্ণনা করছিলেন, তখন আশআস ইবনু কায়স (রাদি.) এলেন এবং বলিলেন যে এ আয়াতটি আমি ও অন্য একটি লোক সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। একটি কূয়া নিয়ে যার সাথে আমি বিবাদ করেছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তাহলে সে কসম করুক। আমি বললাম, সে কসম করিবেই। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। “যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা এবং নিজেদের শপথকে নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করে…” -(সুরা আল ইমরান ৩/৭৭)। (আঃপ্রঃ- ৬৬৮১ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯৪)
৯৩/৩১. অধ্যায়ঃ
মাল অল্প হোক আর বেশি, এর বিচার একই।
________________________________________
ইবনু উয়াইনাহ ইবনু শুবরুমা-এর সূত্রে বলেন যে, অল্প মাল আর বেশি মালের বিচারের বিধান একই রকম।
৭১৮৫
উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর দরজার পাশে ঝগড়া বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তাই তিনি তাদের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং বললেনঃ আমি একজন মানুষ মাত্র। ঝগড়া বিবাদ আমার কাছে নিয়ে আসা হয়। হয়ত তাদের কেউ অন্যের চেয়ে পটুভাষী। আমি তার ভিত্তিতে ফায়সালা করি এবং আমি মনে করি সে সত্যবাদী। সুতরাং আমি যদি কাউকে অন্য মুসলিমের হক দেয়ার ফায়সালা করি তা (তার জন্য) এক টুকরা আগুন ছাড়া আর কিছু নয়। কাজেই সে তা গ্রহণ করুক কিংবা ছেড়ে দিক। (আঃপ্রঃ- ৬৬৮২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৫)
৯৩/৩২. অধ্যায়ঃ
ইমাম কর্তৃক লোকের ধন সম্পদ ও ভূ-সম্পত্তি বিক্রি করা।
________________________________________
নাবী (সাঃআঃ) ইবনু নাহহামের পক্ষে বিক্রি করিয়াছেন।
৭১৮৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে খবর পৌঁছল যে, তাহাঁর সাহাবীদের একজন তার গোলামকে এই শর্তে আযাদ করিলেন যে মৃত্যুর পর তা কার্যকর হইবে। অথচ তাহাঁর এছাড়া কোন সম্পদ ছিল না। নাবী (সাঃআঃ) গোলামটিকে আটশ দিরহামে বিক্রি করিলেন এবং তার মূল্য তার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। [২১৪১; মুসলিম ১২/১৩, হাদীস ৯৯৭, আহমাদ ১৪২৭৭] (আঃপ্রঃ- ৬৬৮৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৬)
৯৩/৩৩. অধ্যায়ঃ
না জেনে যে লোক আমীরদের সমালোচনা করে, এমন লোকের সমালোচনায় যিনি পরোয়া করেন না।
৭১৮৭
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সেনাদল পাঠালেন এবং উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) -কে তাঁদের আমীর নিয়োগ করিলেন। কিন্তু তার আমীর নিযুক্তির সমালোচনা করা হল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা যদি তার আমীর নিযুক্তির সমালোচনা কর, তোমরা এর আগে তার পিতার আমীর নিযুক্তিরও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম! সে ইমারাতের যোগ্য ছিল। আর সে ছিল আমার কাছে মানুষদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয়। আর তারপরে এ হল আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়। (১৭৯)(আঃপ্রঃ- ৬৬৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৮৭)
(১৭৯) একমাত্র অতি উচ্চমানের খাঁটি ঈমানদার ছাড়া গোত্র ও বর্ণের ভেদাভেদ মন থেকে কেউ দূর করিতে পারে না।
৯৩/৩৪. অধ্যায়ঃ
অতি ঝগড়াটে ঐ লোক, যে সবসময় ঝগড়ায় লিপ্ত থাকে। (আরবি) অর্থ বক্রতা ।
৭১৮৮
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণ্য ঐ ব্যক্তি, যে সব সময় ঝগড়ায় লিপ্ত থাকে।(আঃপ্রঃ- ৬৬৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯৮)
৯৩/৩৫. অধ্যায়ঃ
বিচারক যদি সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যাপারে অবিচার করেন কিংবা আহলে ইল্মের বিপরীত ফায়সালা দেন তবে বাতিল।
৭১৮৯
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে জাযীমা গোত্রের প্রতি পাঠালেন। কিন্তু “আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি” কথাটি তারা উত্তমরূপে বলিতে পারল না। বরং বলিল, সাবানা সাবানা (আমরা পুরাতন ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম গ্রহণ করেছি)। এরপর খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করিতে শুরু করিলেন। আর আমাদের প্রত্যেকের কাছে বন্দী হাওয়ালা করিলেন এবং প্রত্যেককে নিজ বন্দীকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীদের কেউ তার বন্দীকে হত্যা করিবে না। অতঃপর এ ব্যাপারটি আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! খালিদ ইবনু ওয়ালীদ যা করেছে তা থেকে আমি আপনার কাছে অব্যাহতি চাচ্ছি। এ কথাটি তিনি দুবার বলিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৯৯)
৯৩/৩৬. অধ্যায়ঃ
ইমামের কোন গোত্রের কাছে গিয়ে তাদের মাঝে ইমাম কর্তৃক নিষ্পত্তি করে দেয়া।
৭১৯০
সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বানী আমের গোত্রে সংঘর্ষ বিরাজিত ছিল। এ খবর নাবী সাঃআঃ-এর কাছে পৌঁছল। যুহরের সালাত আদায় করে তিনি তাদের মাঝে মীগোশতা করার উদ্দেশে আসলেন। (আসার সময়) তিনি বিলালকে বললেনঃ যদি সালাতের সময় হয়ে যায় আর আমি না আসি, তাহলে আবু বকরকে বলবে, লোকদের নিয়ে সে যেন সালাত আদায় করে। যখন আসরের সময় উপস্থিত হল, বিলাল (রাদি.) আযান দিলেন ইক্বামাত দিলেন। অতঃপর আবু বকরকে সালাত আদায় করিতে বলিলেন। আবু বকর (রাদি.) সামনে এগোলেন। আবু বকর (রাদি.)-এর সালাতের মাঝেই নাবী সাঃআঃ এলেন এবং মানুষকে ফাঁক করে আবু বকরের পশ্চাতে দাঁড়ালেন। অর্থাৎ আবু বকরের লাগোয়া কাতার পর্যন্ত এগোলেন। রাবী বলেন, লোকেরা হাততালি দিল। তিনি আরও বলেন যে, আবু বকর (রাদি.) সালাত শুরু করলে, সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এদিক-ওদিক তাকাতেন না। তিনি যখন দেখলেন হাততালি দেয়া বন্ধ হচ্ছে না তখন তিনি তাকালেন এবং নাবী সাঃআঃ-কে তাহাঁর পশ্চাতে দেখিতে পেলেন। নাবী সাঃআঃ হাতের ইঈিতে তাকে সালাত পুরা করিতে বলিলেন এবং যেভাবে আছেন সে ভাবেই থাকতে বলিলেন। আবু বকর (রাদি.) কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিলেন এবং নাবী সাঃআঃ-এর আদেশের কারণে আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। অতঃপর পশ্চাতে সরে আসলেন। নাবী সাঃআঃ যখন এটা দেখলেন তখন এগিয়ে গেলেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। যখন তাহাঁর সালাত শেষ হল, তখন তিনি আবু বকরকে বললেনঃ আমি যখন তোমাকে ইঙ্গিত দিলাম, তখন তোমায় কিসে বাধা দিল যে, তুমি সালাত পূর্ণ করলে না? তিনি বলিলেন, নাবী সাঃআঃ-এর ইমামত করার সাহস ইবনু আবু কুহাফার কক্ষনো নেই। অতঃপর তিনি লোকদের বললেনঃ সালাতে তোমাদের কোন বিঘ্ন সৃষ্টি হলে পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে আর নারীরা হাতের উপর হাত মারবে। আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, يَا بِلالٌ مَرَّاَبَابكْرٍ কথাটি হাম্মাদ ছাড়া অন্য কোন রাবী বলেনি। [৬৮৪] (আঃপ্রঃ- ৬৬৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০০)
৯৩/৩৭. অধ্যায়ঃ
যারা লিখে দেয় তারা হইবে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান।
৭১৯১
যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদদের কারণে আবু বকর (রাদি.) আমার নিকট লোক পাঠালেন তখন তাহাঁর কাছে উমার (রাদি.)-ও উপস্থিত ছিলেন। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, উমার (রাদি.) আমার কাছে এসে বলেছেন যে, কুরআনের বহু হাফিয ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। এজন্য আমার ভয় হচ্ছে যে, আরো অনেক জায়গায় যদি কুরআনের হাফিযগণ এমন ব্যাপক হারে শহীদ হন তাহলে কুরআনের বহু অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সুতরাং আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের আদেশ দিন। আমি বললাম, কী করে আমি এমন কাজ করব যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ করেন নি। উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম! এটা একটা উত্তম কাজ। উমার (রাদি.) আমাকে এ বিষয়ে বারবার বলছিলেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর খুলে দিলেন। যে বিষয়ে তিনি উমার (রাদি.)-এর অন্তর খুলে দিয়েছিলেন এবং আমিও এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করলাম যা উমার (রাদি.) পোষণ করেছিলেন। যায়দ (রাদি.) বলেন যে, এরপর আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক, তোমার সম্পর্কে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তুমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর ওয়াহী লিখতে। কাজেই তুমি কুরআন খোঁজ কর এবং তা একত্রিত কর। যায়দ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর শপথ! কুরআন খোঁজ করে একত্রিত করার নির্দেশ না দিয়ে যদি আমাকে পাহাড়গুলোর একটিকে স্থানান্তর করার দায়িত্ব অর্পণ করতো, তাও আমার জন্য ভারী মনে হত না। আমি বললাম, কী করে আপনারা দুজন এমন একটি কাজ করবেন, যা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ করেন নি । আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর শপথ! এটি একটি উত্তম কাজ। আমি আমার কথা বার বার বলিতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা আমার অন্তর খুলে দিলেন, যে বিষয়ে আবু বকর (রাদি.) ও উমার (রাদি.)-এর অন্তর খুলে দিয়েছিলেন। এবং তাঁরা দুজন যা ভাল মনে করিলেন আমিও তা ভাল মনে করলাম। কাজেই আমি কুরআন খোঁজ করিতে শুরু করলাম। খেজুরের ডাল, পাতলা চামড়ার টুক্রা, সাদা পাথর ও মানুষের অন্তর থেকে আমি কুরআনকে জমা করলাম। সুরা তাওবার শেষ অংশ لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসুল এসেছেন…..(সুরা আত্-তাওবাহ ৯/১২৮) থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত এ অংশটুকু খুযাইমাহ কিংবা আবু খুযাইমাহর কাছে পেলাম। আমি তা সুরার সঙ্গে জুড়ে দিলাম। কুরআনের এ সংকলিত সহীফাগুলো আবু বকরের জীবনকাল পর্যন্ত তাহাঁর কাছে ছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে ওফাত দিলেন। পরে উমারের জীবনকাল পর্যন্ত তাহাঁর নিকট ছিল। অতঃপর আল্লাহ তার ওফাত দিলেন, অতঃপর হাফসাহ বিন্ত উমার (রাদি.)-এর কাছে ছিল। মুহাম্মাদ ইবনু উবাইদুল্লাহ বলেন, হাদীসে ব্যবহৃত اللِّخَفُ অর্থ হল চাড়ি (মাটির বড় গামলা)। [২৮০৭] (আঃপ্রঃ- ৬৬৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০১)
৯৩/৩৮. অধ্যায়ঃ
কর্মকর্তাদের নিকট শাসনকর্তার পত্র এবং সচিবদের নিকট বিচারকের পত্র।
৭১৯২
সাহল ইবনু হাসমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ও তাহাঁর কওমের কতক বড় বড় ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাদি.) ও মুহাইয়াসা ক্ষুধার্ত হয়ে খায়বারে আসেন। একদা মুহাইয়াসা জানতে পারেন যে, আবদুল্লাহ নিহত হয়েছে এবং তার লাশ একটি গর্তে অথবা কূপে ফেলে দেয়া হয়েছে। তখন তিনি ইয়াহূদীদের কাছে এসে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে তোমরাই তাকে মেরে ফেলেছ। তারা বলিল, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তারপর তিনি তার কওমের কাছ এসে এ ঘটনা বর্ণনা করিলেন। পরে তিনি, তার বড় ভাই হওয়াইয়াসা এবং আবদুর রহমান ইবনু সাহল আসলেন। মুহাইয়াসা যিনি খায়বারে ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এ ঘটনা বলার জন্য এগিয়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ বড়কে কথা বলিতে দাও, বড়কে কথা বলিতে দাও। এ দ্বারা তিনি উদ্দেশ্য করিলেন বয়সে বড়কে। তখন হুওয়াইয়াসা প্রথমে ঘটনা বর্ণনা করিলেন। এরপর কথা বলিলেন, মুহাইয়াসা। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ হয় তারা তোমাদের মৃত সাথীর রক্তপণ আদায় করিবে, না হয় তাদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হইবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের কাছে এ ব্যাপারে পত্র লিখলেন। জবাবে লেখা হল যে, আমরা তাকে হত্যা করিনি। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হুওয়াইয়াসা, মুহাইয়াসা ও আবদুর রহমানকে বলিলেন, তোমরা কি কসম করে বলিতে পারবে? তাহলে তোমরা তোমাদের সঙ্গীর রক্তপণের অধিকারী হইবে। তারা বলিল, না। তিনি বলিলেন, তাহলে ইয়াহূদীরা কি তোমাদের সামনে কসম করিবে? তাঁরা বলিল, এরা তো মুসলমান না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজের পক্ষ হইতে একশ উট রক্তপণ বাবদ আদায় করে দিলেন। অবশেষে উটগুলোকে ঘরে ঢুকানো হল। সাহল বলেন, ওগুলো থেকে একটা উট আমাকে লাথি মেরেছিল।(আঃপ্রঃ- ৬৬৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০২)
৯৩/৩৯. অধ্যায়ঃ
কোন বিষয়ের তদন্ত করার জন্য শাসকের তরফ হইতে একজন মাত্র লোককে পাঠানো জায়েয কিনা?
৭১৯৩
আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বর্ণনা করেন যে, এক বেদুঈন এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন। তখন তার বিবাদী পক্ষ দাঁড়াল এবং বলিল, সে ঠিকই বলেছে। আপনি আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন। তারপর বেদুঈন বলিল যে, আমার ছেলে এ লোকের মজুর হিসেবে কাজ করত। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করে ফেলেছে। লোকেরা আমাকে বলিল, তোমার ছেলেকে রজম করা হইবে। আমি একশ বক্রী ও একটি দাসী দিয়ে আমার ছেলেকে তার থেকে মুক্ত করেছি। পরে আমি এ বিষয়ে আলেমদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলিলেন, তোমার পুত্রকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কারের শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহর কিতাব মোতাবেক তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। দাসী ও বকরীগুলো তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। আর তোমার ছেলেকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কারের শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। হে উনায়স! তুমি কাল এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাও অতঃপর তাকে রজম কর। অতঃপর উনায়স পর দিবস সেই স্ত্রী লোকের কাছে গিয়ে তাকে রজম করিল।(আঃপ্রঃ- ৬৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৩)
৭১৯৩
আবু হুরাইরা ও যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বর্ণনা করেন যে, এক বেদুঈন এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন। তখন তার বিবাদী পক্ষ দাঁড়াল এবং বলিল, সে ঠিকই বলেছে। আপনি আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব মোতাবেক ফায়সালা করুন। তারপর বেদুঈন বলিল যে, আমার ছেলে এ লোকের মজুর হিসেবে কাজ করত। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করে ফেলেছে। লোকেরা আমাকে বলিল, তোমার ছেলেকে রজম করা হইবে। আমি একশ বক্রী ও একটি দাসী দিয়ে আমার ছেলেকে তার থেকে মুক্ত করেছি। পরে আমি এ বিষয়ে আলেমদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলিলেন, তোমার পুত্রকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কারের শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহর কিতাব মোতাবেক তোমাদের মাঝে ফায়সালা করব। দাসী ও বকরীগুলো তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হইবে। আর তোমার ছেলেকে একশ বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশ থেকে বহিষ্কারের শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। হে উনায়স! তুমি কাল এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাও অতঃপর তাকে রজম কর। অতঃপর উনায়স পর দিবস সেই স্ত্রী লোকের কাছে গিয়ে তাকে রজম করিল। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৩)
৯৩/৪০. অধ্যায়ঃ
শাসনকর্তা কর্তৃক দোভাষী নিয়োগ করা এবং মাত্র একজন দোভাষী নিয়োগ জায়েয কিনা?
৭১৯৫
যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) তাকে ইয়াহূদীদের লিখন পদ্ধতি শিক্ষা করার জন্য আদেশ করেছিলেন। তিনি বলেন, যার ফলে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর পক্ষ থেকে তাহাঁর চিঠিপত্র লিখতাম এবং তারা কোন চিঠিপত্র তাহাঁর কাছে লিখলে তা তাঁকে পড়ে শোনাতাম। উমর (রাদি.) বলিলেন- তখন তাহাঁর কাছে হাজির ছিলেন আলী, আবদুর রহমান ও উসমান (রাদি.)- এ স্ত্রীলোকটি কী বলছে? আবদুর রহমান ইবনু হাতিব বলেন, আমি বললাম, এ স্ত্রীলোকটি তার এক সঙ্গীর ব্যাপারে আপনার নিকট অভিযোগ করেছে যে, সে তার সঙ্গে কুকাজ করেছে। আবু জামরাহ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাদি.) ও লোকদের মাঝে দোভাষীর কাজ করতাম। আর কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যেক শাসনকর্তার জন্য দুজন করে দোভাষী অত্যাবশ্যকীয়। (আঃপ্রঃ- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)
৭১৯৬
আবু সুফ্ইয়ান হার্ব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বর্ণনা করেন যে, কুরাইশদের কাফেলাসহ অবস্থান করার সময় সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর সম্রাট তার দোভাষীকে বলিলেন, তাদেরকে বল যে, আমি এ লোকটিকে কিছু প্রশ্ন করব। যদি সে আমার কাছে মিথ্যা বলে তাহলে তারা যেন তাকে মিথ্যাচারী বলে। তারপর দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন। পরে হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বলিলেন, ওকে বলে দাও যে, সে যা বলেছে তা যদি সত্য হয়, তাহলে তিনি (অর্থাৎ মুহাম্মাদ শীঘ্রই আমার পায়ের তলার জায়গারও মালিক হইবেন।(আঃপ্রঃ- ৬৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৪)
৯৩/৪১. অধ্যায়ঃ
শাসনকর্তা (কর্তৃক) কর্মচারীদের জবাবদিহি নেয়া।
৭১৯৭
আবু হুমায়দ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) ইবনু লুতাবিয়্যাকে বানী সুলায়ম-এর সদাকাহ সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত করিলেন। যখন সে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে ফিরে আসল এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার কাছে হিসেব চাইলেন, তখন সে বলিল, এগুলো আপনাদের আর এগুলো হাদিয়া যা আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি সত্যবাদী হলে তোমার হাদিয়া তোমার কাছে না আসা পর্যন্ত তুমি তোমার বাবার ঘরে ও মায়ের ঘরে বসে থাকলে না কেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করিলেন। তারপর বললেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাআলা আমার উপর যেসব দায়িত্ব ন্যস্ত করিয়াছেন তা থেকে কিছু কাজের জন্য তোমাদের কতক লোককে নিযুক্ত করে থাকি। তাদের কেউ এসে বলে এগুলো আপনাদের, আর এগুলো হাদিয়া যা আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে সত্যবাদী হলে সে তার বাবার ঘরে ও মায়ের ঘরে কেন বসে থাকল না, যাতে তার হাদিয়া তার নিকট আসে? আল্লাহর শপথ! তোমাদের কেউ যেন তা থেকে অন্যায়ভাবে কিছু গ্রহণ না করে। তা না হলে সে ক্বিয়ামাতের দিন তা বহন করে আল্লাহর নিকট আসবে। সাবধান! আমি অবশ্যই চিনতে পারব যা নিয়ে আল্লাহর নিকট হাজির হইবে। এক ব্যক্তি উট নিয়ে আসবে যা চেঁচাতে থাকবে অথবা গরু নিয়ে আসবে যে গরুটি হাম্বা হাম্বা করিতে থাকবে, অথবা বক্রী নিয়ে আসবে, যে বক্রী ভ্যা ভ্যা করিতে থাকবে। অতঃপর তিনি হাত দুখানা উপরের দিকে এতটুকু উঠালেন যে, আমি তার বগলের শুভ্র উজ্জ্বলতা দেখিতে পেলাম। এবং বলিলেন, শোন! আমি কি (আল্লাহর বিধান তোমাদের নিকট) পৌঁছিয়েছি। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৫)
৯৩/৪২. অধ্যায়ঃ
রাষ্ট্র শাসকের অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও পরামর্শদাতা।
________________________________________
الْبِطَانَةُ শব্দটি الدُّخَلاَءُ -এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে (অর্থাৎ যিনি একান্তে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে কথোপকথন করেন এবং তাহাঁর অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে তাঁকে অবগত করেন এবং তিনিও গোপন কথা তাকে বলেন ও বিশ্বাস করেন)
৭১৯৮
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ যাকেই নাবী হিসাবে পাঠান এবং যাকেই খলীফা নিযুক্ত করেন, তার জন্য দুজন করে ঘনিষ্ঠ জন থাকে। এক ঘনিষ্ঠ জন তাকে ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং তাকে তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর এক ঘনিষ্ঠ জন তাকে মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। কাজেই নিষ্পাপ ঐ ব্যক্তিই যাকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেন।
সুলায়মান ইবনু শিহাব থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং ইবনু আবু আতীক ও মূসার সূত্রে ইবনু শিহাব থেকে এরকমই একটি হাদীস বর্ণনা করেন। তাছাড়া শুআয়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও আবু সাঈদ (রাদি.) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। আওযায়ী ও মুআবিয়াহ ইবনু সাল্লাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবনু আবু হুসাইন ও সাঈদ ইবনু যিয়াদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও আবু সাঈদ (রাদি.) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
উবাইদুল্লাহ ইবনু আবু জাফর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আইউব (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন যে, আমি নাবী (সাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৬)
৯৩/৪৩. অধ্যায়ঃ
রাষ্ট্রের প্রধান কিভাবে জনগণের নিকট হইতে বায়আত গ্রহণ করবেন।
৭১৯৯
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এ মর্মে বায়আত করলাম যে, সুখে দুঃখে আমরা তাহাঁর কথা শুনব ও তাকে মেনে চলব। দায়িত্বশীলদের নির্দেশের ক্ষেত্রে মতভেদে লিপ্ত হব না।(আঃপ্রঃ- ৬৬৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৭ )
৭২০০
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যেখানেই থাকি না কেন সত্যের উপর দৃঢ় থাকব কিংবা বলেছিলেন, সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর কাজে কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করব না। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৭ )
৭২০১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) শীতের এক সকালে বের হলেন। মুহাজির ও আনসাররা তখন খন্দক খনন করছিল। তিনি বললেনঃ
হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণই সত্যিকারের কল্যাণ,
অতএব তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও।
এর জবাবে তারা বলিল,
আমরা তারাই যারা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) এর হাতে বায়আত করেছে
মৃত্যু অবধি জিহাদ করার জন্য।(আঃপ্রঃ- ৬৬৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৮)
৭২০২
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তাহাঁর কথা শোনার ও তাঁকে মান্য করার জন্য বায়আত নিতাম তখন তিনি আমাদের বলিতেনঃ যতটা তোমরা করিতে সক্ষম হও।[মুসলিম ৩৩/২২, হাদীস ১৮৬৭] (আঃপ্রঃ- ৬৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭০৯)
৭২০৩
আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা যখন আবদুল মালিকের খিলাফাতের বিষয়ে একমত হল, তখন আমি ইবনু উমর (রাদি.) এর কাছে হাজির ছিলাম। তিনি পত্র লিখলেন যে, আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) এর সুন্নাত অনুসারে আল্লাহর বান্দা, আমীরুল মুমিনীন আবদুল মালিকের কথা যথাসাধ্য শোনার ও মেনে চলার অঙ্গীকার করছি। আমার ছেলেরাও তেমনি অঙ্গীকার করছে। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১০)
(১৮০) মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানকে মেনে চলার অঙ্গীকার এ শর্তে করিতে হইবে যে, রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।
৭২০৪
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট তাহাঁর কথা শোনার, তাঁকে মান্য করার ও সকল মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনার বিষয়ে বায়য়াত করলাম। তিনি আমাকে এ কথা বলিতে শিখিয়ে দিলেন যে, যতটা করিতে আমি সক্ষম হই।(আঃপ্রঃ- ৬৬৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১১)
৭২০৫
আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন লোকেরা আবদুল মালিকের নিকট বায়আত নিল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) তার কাছে চিঠি লিখলেন- আল্লাহর বান্দা, মুমিনদের নেতা আবদুল মালিকের প্রতি, আমি আমার সাধ্য মোতাবেক আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) এর সুন্নাত অনুযায়ী তাহাঁর কথা শোনা ও তাকে মেনে চলার অঙ্গীকার করছি আর আমার ছেলেরাও তেমনি অঙ্গীকার করছে। (আঃপ্রঃ- ৬৬৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১২)
৭২০৬
ইয়াযীদ ইবনু আবু উবায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি সালামাকে জিজ্ঞেস করলাম, হুদাইবিয়াহর দিন আপনারা কোন বিষয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে বায়আত করেছিলেন? তিনি বলিলেন, মৃত্যুর উপর।(আঃপ্রঃ- ৬৭০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৩)
৭২০৭
মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) যে দলটিকে খলীফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাঁরা সমবেত হয়ে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করিলেন। আবদুর রহমান (রাদি.) তাঁদেরকে বলিলেন, আমি তো এমন লোক নই যে এ ব্যাপারে (নির্বাচিত হওয়ার) আশা করব। কিন্তু আপনারা যদি ইচ্ছে করেন তবে আপনাদের থেকে একজনকে আমি নির্বাচিত করে দিতে পারি। তাঁরা একমত হয়ে আবদুর রহমানের উপর দায়িত্ব দিলেন। যখন তাঁরা আবদুর রহমানের উপর দায়িত্ব দিলেন, তখন সকল লোক আবদুর রহমানের প্রতি ঝুঁকে পড়ল। এমনকি আমি একজনকেও সেই দলের অনুসরণ করিতে কিংবা তাঁদের পিছনে যেতে দেখলাম না। লোকেরা আবদুর রহমানের প্রতিই ঝুঁকে পড়ল এবং কয়েক রাত তাহাঁর সঙ্গে পরামর্শ করিতে থাকল। শেষে সেই রাত এল, যে রাতের শেষে আমরা উসমান (রাদি.)-এর হাতে বায়আত করলাম। মিসওয়ার (রাদি.) বলেন, রাতের একাংশ অতিবাহিত হবার পর আরদুর রহমান (রাদি.) আমার কাছে আসলেন এবং দরজায় খটখট করিলেন। ফলে আমি জেগে গেলাম। তিনি বলিলেন, তোমাকে ঘুমন্ত দেখছি। আল্লাহর কসম! আমি এ তিন রাতের মাঝে বেশি ঘুমাতে পারিনি। যাও, যুবায়র ও সাদকে ডেকে আন। আমি তাঁদেরকে তার কাছে ডেকে আনলাম। তিনি তাঁদের দুজনের সঙ্গে পরামর্শ করিলেন। তারপর আমাকে আবার ডেকে বলিলেন, আলীকে আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাঁকে ডেকে আনলাম। তিনি তাহাঁর সঙ্গে অর্ধরাত্রি পর্যন্ত গোপন পরামর্শ করিলেন। তারপর আলী (রাদি.) তাহাঁর নিকট হইতে উঠে গেলেন। তবে তিনি আশায় ছিলেন। আর আবদুর রহমান (রাদি.) আলী (রাদি.) থেকে কিছু (বিরোধিতার) আশঙ্কা করছিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, উসমানকে আমার কাছে ডেকে আন। তিনি তাহাঁর সঙ্গে গোপনে পরামর্শ করিলেন। ফজরের সময় মুআযযিন (এর আযান) তাদের দুজনকে পৃথক করিল। লোকেরা যখন ফজরের সালাত পড়ল এবং সেই দলটি মিম্বরের নিকট জমায়েত হলো তখন তিনি মুহাজির ও আনসারদের যারা হাজির ছিলেন তাঁদেরকে ডেকে আনতে পাঠালেন এবং সেনা প্রধানদেরকেও ডেকে আনতে পাঠালেন এবং এরা সবাই উমরের সঙ্গে গত হাজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যখন সকলে এসে জমায়েত হন, তখন আবদুর রহমান (রাদি.) ভাষণ আরম্ভ করিলেন। তারপর বলেন, হে আলী! আমি জনমত যাচাই করেছি, তারা উসমানের সমকক্ষ কাউকে মনে করে না। কাজেই তুমি অবশ্যই অন্য পথ ধরো না। তখন তিনি [উসমান (রাদি.) -কে সম্বোধন করে] বলিলেন, আমি আল্লাহর, তাহাঁর রসূলের ও তাহাঁর পরবর্তী উভয় খালীফার আদেশ অনুযায়ী আপনার নিকট বায়আত করছি। অতঃপর আবদুর রহমান (রাদি.) তাহাঁর কাছে বায়আত করিলেন। অতঃপর মুহাজির, আনসার, সেনাপ্রধান এবং সাধারণ মুসলিম তাহাঁর কাছে বায়আত করলে। (১৮১) (আঃপ্রঃ- ৬৭০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৪)
(১৮১) প্রচলিত গণতন্ত্র অনুযায়ী সবচেয়ে মূর্খ ব্যক্তির আর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির ভোটের অর্থাৎ মতামতের মূল্য সমান। আর সকল সমাজেই জ্ঞানী ব্যক্তির সংখ্যা কম। তাই এই গণতন্ত্রে সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তির নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অন্য দিকে ইসলাম শুরাতন্ত্রে বিশ্বাসী যেখানে সমাজের নেতৃস্থানীয় জ্ঞান ব্যক্তিদের পরামর্শের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হইবেন।
৯৩/৪৪. অধ্যায়ঃ
যে দুবার বাইআত করে।
৭২০৮
সালমা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন,আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)–এর কাছে বৃক্ষের নীচে বায়আত (বায়আতে রিদওয়ান) গ্রহন করেছিলাম। পরে তিনি আমাকে বললেনঃ হে সালমা! তুমি বায়আত গ্রহন করিবে না? আমি বললাম , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি তো প্রথমবার বায়আত গ্রহন করেছি। তিনি বললেনঃ দ্বিতীয়বারও গ্রহন কর। [২৯৬০] (আঃপ্রঃ- ৬৭০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৫)
৯৩/৪৫. অধ্যায়ঃ
বেদুঈনদের বাইআত (গ্রহণ)।
৭২০৯
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট ইসলামের বায়আত করিল। তারপর সে জ্বরে আক্রান্ত হল। তখন সে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা অস্বীকৃতি জানালেন। সে আবার তাহাঁর কাছে আসল। তিনি আবার অস্বীকৃতি জানালেন। সে আবার তাহাঁর কাছে এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। তিনি আবারও অস্বীকার করিলেন। তখন সে বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মাদীনা হাপরের মত, সে তার আবর্জনাকে দূর করে দেয় এবং ভালটাকে ধরে রাখে।[১৮৮৩; মুসলিম ১৫/৮৮, হাদীস ১৩৮৩, আহমাদ ১৫১৩৪] (আঃপ্রঃ- ৬৭০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৬)
৯৩/৪৬. অধ্যায়ঃ
বালকদের বায়আত (গ্রহণ) ।
৭২১০
আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাক্ষাত পেয়েছেন। তার মা যাইনাব বিনত হুমায়দ (রাদি.) তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট নিয়ে গিয়ে বলেন, সে আল্লাহর রাসুল! এর বায়আত নিন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ সে তো ছোট। অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত বুলালেন এবং তার জন্য দুআ করিলেন। তিনি [আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাদি.)] তার পরিবারের সবার পক্ষ হইতে একটি বক্রী কুরবানী করিতেন। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৭)
৯৩/৪৭. অধ্যায়ঃ
কারো বায়আত গ্রহণ করার পর অতঃপর তা ফিরিয়ে নেয়া।
৭২১১
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক বেদুঈন এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাতে ইসলামের বায়আত নিল। মাদীনায় সে জ্বরে আক্রান্ত হল। তখন সেই বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তা অস্বীকার করিলেন, সে পুনরায় এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। তিনি এবারও অস্বীকার করিলেন। সে আবার এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। তিনি আবারও অস্বীকার করিলেন। তখন বেদুঈন বেরিয়ে গেল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মাদীনা হল হাপরের মত, যে তার আবর্জনাকে দূর করে দেয় এবং ভালটাকে ধরে রাখে। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৮)
(১৮২) হাপর যেমন আবর্জনা দূর করে, মদীনাও তেমনি (ঐ বেদুইনের মত সকল) বেঈমানকে দূর করে দেয়।
৯৩/৪৮. অধ্যায়ঃ
এমন ব্যক্তির বায়আত গ্রহণ করা যে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে বায়আত নেয়।
৭২১২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তিন রকম লোকের সঙ্গে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করিবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শান্তি। (এক) ঐ ব্যক্তি, যে পথের পাশে অতিরিক্ত পানির মালিক কিন্তু মুসাফিরকে তা থেকে পান করিতে দেয় না। (দুই) ঐ ব্যক্তি যে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে ইমামের বায়আত গ্রহণ করে। (বাদশাহ) ঐ লোকের মনের বাসনা পূর্ণ করলে সে তার বায়আত পূর্ণ করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বায়আত ভঙ্গ করে। (তিন) সে ব্যক্তি যে আসরের পর অন্য লোকের নিকট দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করিতে গিয়ে এমন কসম খায়ে যে, আল্লাহর শপথ! এটার এত দাম হয়েছে। ক্রেতা সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাশ করে সে জিনিস কিনে নেয়। অথচ সে জিনিসের এত দাম হয়নি। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৯)
৭৩/৪৯. অধ্যায়ঃ
মহিলাদের বায়আত গ্রহণ।
________________________________________
এ বিষয়টি ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে।
৭২১৩
উবাদাহ ইবনু সামিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক মজলিসে ছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের বললেনঃ তোমরা আমার নিকট বায়আত কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করিবে না, চুরি করিবে না, যিনা করিবে না; তোমাদের সন্তানদের হত্যা করিবে না এবং কোন ব্যক্তিকে এমন মিথ্যা অপবাদ দেবে না যা তোমাদেই গড়া আর ন্যায় সঙ্গত কাজে নাফরমানী করিবে না। তোমাদের যারা এ অঙ্গীকার পূর্ণ করিবে, তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে। আর যে এর কোন একটি করিবে দুনিয়ায় এ কারণে তাকে শাস্তি দেয়া হইবে, তাহলে এটা তার কাফ্ফারা (পাপ মোচন) হয়ে যাবে। আর যদি কেউ এর কোন একটি অপরাধ করে ফেলে আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তাহলে তার বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। তিনি ইচ্ছে করলে তাকে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছে করলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর আমরা এর উপর বায়আত করলাম। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২০)
৭২১৪
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করিবে না”- এ আয়াত পাঠ করে স্ত্রীলোকদের নিকট হইতে বায়আত নিতেন। তিনি আরও বলেন, যাদের হাতে হাত দেয়া বৈধ এমন মহিলা ব্যতীত রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর হাত অন্য কোন মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২১)
৭২১৫
উম্মু আতীয়্যাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট বায়আত নিলাম। তিনি আমার সামনে পাঠ করলেনঃ মহিলারা যেন আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে এবং তিনি আমাদেরকে বিলাপ করিতে নিষেধ করিলেন। এ অবস্থায় আমাদের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক তার হাত গুটিয়ে নিল এবং বলিল, অমুক স্ত্রীলোক একবার আমার সঙ্গে বিলাপে সহযোগিতা করেছে। কাজেই আমি তার প্রতিদান দিতে চাই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কিছু বলিলেন না। স্ত্রীলোকটি চলে গেল এবং পরে এসে বায়আত গ্রহণ করিল। তবে তাদের মধ্যে উম্মু সুলায়ম, উম্মুল আলা, আর মুআয (রাদি.)-এর স্ত্রী আবু সাবরা-এর মেয়ে, কিংবা বলেছিলেন, আবু সাবরা-এর মেয়ে ও মুআয-এর স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মহিলা এ অঙ্গীকার পূর্ণ করে নি। (আঃপ্রঃ- ৬৭০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২২)
৯৩/৫০. অধ্যায়ঃ
যে লোক বাইআত ভঙ্গ করে।
________________________________________
আল্লাহর বাণীঃ যারা তোমার কাছে বাইআত (অর্থাৎ আনুগত্য করার শপথ ) করে আসলে তারা আল্লাহর কাছে বাইআত করে। তাদের হাতের উপর আছে আল্লাহর হাত। এক্ষণে যে এ ওয়াদা ভঙ্গ করে, এ ওয়াদা ভঙ্গের কুফল তার নিজেরই উপর পড়বে। আর যে ওয়াদা পূর্ণ করিবে-যা সে আল্লাহর সঙ্গে করেছে-তিনি অচিরেই তাকে মহা পুরস্কার দান করবেন। (সুরা আল- ফাতহ ৪৮/১০)
৭২১৬
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক বেদুঈন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, ইসলামের উপর আমার বায়আত নিন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইসলামের উপর তার বায়আত নিলেন। পর দিবস সে জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় এসে বলিল, আমার বায়আত ফিরিয়ে দিন। তিনি অস্বীকার করিলেন। যখন সে চলে গেল, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মাদীনা হাপরের মত, সে তার আবর্জনাকে দূর করে দেয় এবং ভালটুকু ধরে রাখে।(আঃপ্রঃ- ৬৭১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৩)
৯৩/৫১. অধ্যায়ঃ
খলিফা নিয়োগ করা।
৭২১৭
কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আয়েশা (রাদি.) একদিন বলিলেন, হায়! আমার মাথা। (তা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি জীবিত থাকতে তা যদি ঘটে, তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দুআ করব। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, হায় সর্বনাশ! আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যু পছন্দ করছেন। হ্যাঁ, যদি এমনটি হয়, তাহলে আপনি সেদিনের শেষে অন্য কোন স্ত্রীর সঙ্গে বাসর করবেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি বলছি আক্ষেপ আমার মাথা ব্যথা। অথচ আমি সংকল্প করছি কিংবা রাবী বলেছেন, ইচ্ছা করেছি যে, আবু বক্র ও তাহাঁর পুত্রের নিকট লোক পাঠাব এবং (তাহাঁর খিলাফাতের) অসীয়্যাত করে যাব; যাতে এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলিতে না পারে। অথবা কোন আশা পোষণকারী এ ব্যাপারে কোনরূপ আশা করিতে না পারে। পরে বললাম (আবু বাক্রের বদলে অন্য কারো খলীফা হবার ব্যাপারটি) আল্লাহ অস্বীকার করবেন এবং মুমিনরাও তা প্রত্যাখ্যান করিবে। কিংবা বলেছিলেন, আল্লাহ প্রত্যাখ্যান করবেন এবং মুমিনরা তা অস্বীকার করিবে।(আঃপ্রঃ- ৬৭১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৪)
৭২১৮
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উমর (রাদি.) -কে বলা হল, আপনি কি (আপনার পরবর্তী) খলীফা মনোনীত করে যাবেন না? তিনি বললেনঃ যদি আমি খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে গিয়েছিলেন, অর্থাৎ আবু বক্র। আর যদি মনোনীত না করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে যাননি অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)। এতে লোকেরা তাহাঁর প্রশংসা করিল। তারপর তিনি বলিলেন, কেউ (এর) ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষী আর কেউ ভীত। আর আমি পছন্দ করি আমি যেন এটা থেকে মুক্তি পাই সামনে সমান, আমার জন্য পুরস্কারও নাই, শাস্তিও নাই। আমি বেঁচে থাকতে কিংবা মৃত্যুর পরে এর (শাস্তির) বোঝা বহন করিতে পারব না। [মুসলিম ৩৩/২, হাদীস ১৮২৩] (আঃপ্রঃ- ৬৭১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৫)
৭২১৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উমর (রাদি.)-এর দ্বিতীয় ভাষণটি শুনেছেন- যা তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর ইন্তিকালের পরদিন মিম্বারে বসে দিয়েছিলেন। তিনি ভাষণ দিলেন, আর আবু বকর (রাদি.) চুপ করে থাকলেন, কোন কথা বলিলেন না। তিনি বলিলেন, আমি আশা করছিলাম, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন এবং আমাদের পিছনে যাবেন। এ থেকে তাহাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, তিনি সবার শেষে ইন্তিকাল করবেন। তবে মুহাম্মদ (সাঃআঃ) যদিও ইন্তিকাল করিয়াছেন, তবে আল্লাহ তোমাদের মাঝে এমন এক নূর রেখেছেন, যা দ্বারা তোমরা হিদায়াত পাবে। আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে (এ নূর দিয়ে) হিদায়াত করেছিলেন। আর আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর সঙ্গী এবং দুজনের দ্বিতীয় জন। তোমাদের এ দায়িত্ব বহন করার জন্য মুসলিমদের মধ্যে তিনিই সর্বোত্তম। সুতারাং তোমরা উঠ এবং তাহাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ কর। অবশ্য এক জামাআত ইতোপূর্বে বনী সাঈদা গোত্রের ছত্রছায়ায় তাহাঁর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিল। আর সাধারণ বায়আত হয়েছিল মিম্বারের উপর। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি সেদিন উমর (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তিনি আবু বকর (রাদি.) -কে বলছেন, মিম্বরে উঠুন। তিনি বারবার একথা বলিতে থাকলে অবশেষে আবু বকর (রাদি.) মিম্বরে উঠলেন। অতঃপর তাহাঁর কাছে সাধারণ লোকেরা সাধারণ বায়আত নিল। (আঃপ্রঃ- ৬৭১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৬)
৭২২০
যুবায়র ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এল এবং কোন ব্যাপারে তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে আবার আসার আদেশ দিলেন। স্ত্রীলোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আবার এসে যদি আপনাকে না পাই? স্ত্রী লোকটি এ কথা বলে (রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর) মৃত্যুর কথা বোঝাতে চাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ যদি আমাকে না পাও, তাহলে আবু বাক্রের কাছে আসবে। (আঃপ্রঃ- ৬৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৭)
৭২২১
আবু বক্র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বুযাখা প্রতিনিধিদলকে বলেছিলেন, যদ্দিন না আল্লাহ তাহাঁর নাবী (সাঃআঃ)-এর খলীফা ও মুহাজিরীনদের এমন একটা পথ দেখিয়ে দেন যাতে তারা তোমাদের ওযর গ্রহণ করেন, তদ্দিন পর্যন্ত তোমরা উটের লেজের পেছনেই লেগে থাকবে (অর্থাৎ যাযাবর জীবন যাপন করিবে)। (আঃপ্রঃ- ৬৭১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৮)
৯৩/৫২ অধ্যায়ঃ
কুরাইশ গোত্র থেকে বারজন আমীর হইবে।
৭২২২
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, বারজন আমীর হইবে। এরপর তিনি একটি কথা বলিলেন যা আমি শুনতে পাই নি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হইবে।[মুসলিম ৩৩/১, হাদীস ১৮২১, আহমাদ ২০৮৮২] (আঃপ্রঃ- ৬৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৯)
৭২২৩
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, বারজন আমীর হইবে। এরপর তিনি একটি কথা বলিলেন যা আমি শুনতে পাই নি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হইবে।[মুসলিম ৩৩/১, হাদীস ১৮২১, আহমাদ ২০৮৮২] (আঃপ্রঃ- ৬৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭২৯)
৯৩/৫৩. অধ্যায়ঃ
কলহে লিপ্ত সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জেনে নেয়ার পর তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়া।
________________________________________
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করার কারণে উমর (রাদি.) আবু বক্র (রাদি.)-এর বোনকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
৭২২৪
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জান তাহাঁর শপথ করে বলছি! আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি জ্বালানি কাঠ জোগাড়ের আদেশ দেই। তারপর সালাতের আযান দেয়ার জন্য হুকুম করি এবং একজনকে লোকদের ইমামত করিতে বলি। অতঃপর আমি জামাআতে আসেনি এমন লোকেদের কাছে যাই আর তাদেরসহ তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেই। আমার প্রাণ যে সত্তার হাতে তাহাঁর শপথ করে বলছি, যদি তারা জানত যে, একটি গোশতওয়ালা হাড় কিংবা দুটি বক্রীর ক্ষুরের গোশত পাবে তাহলে তারা এশার জামাআতে অবশ্যই হাযির হত। মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আবু আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন مرماة অর্থ বকরীর ক্ষুরের মাঝের গোশত। ছন্দের দিক দিয়ে منساة ميضاة এর মত। مرماة এর মীম বর্ণটি যেরযুক্ত। [৬৪৪] (আঃপ্রঃ- ৬৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩০)
৯৩/৫৪. অধ্যায়ঃ
রাষ্ট্রপ্রধান অপরাধী ও পাপীদেরকে তার সঙ্গে কথা বলা ও সাক্ষাত ইত্যাদি থেকে নিষেধ করিতে পারবেন কিনা?
৭২২৫
কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাদি.), কাব (রাদি.) অন্ধ হয়ে যাবার পর তাহাঁর ছেলেদের মধ্যে হইতে তিনি তাঁকে (কাব) পথ দেখাতেন। তিনি বলেন, আমি কাব ইবনু মালিক (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি তিনি বলেন যে, যখন তিনি তাবূকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে গমন করা থেকে পেছনে রয়ে গেলেন। তারপর তিনি পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে বলিলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুসলিমদেরকে আমাদের সঙ্গে কথা বলিতে নিষেধ করে দিলেন। ফলে পঞ্চাশ রাত আমরা এভাবে থাকলাম। এরপর আল্লাহ কর্তৃক আমাদের তাওবাহ কবূলের কথা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জানিয়ে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৭১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৩১)
Leave a Reply