ইসলামী কিতাব ও সুন্নাহকি সুদির ভাবে আক্রে ধরা

ইসলামী কিতাব ও সুন্নাহকি সুদির ভাবে আক্রে ধরা

ইসলামী কিতাব ও সুন্নাহকি সুদির ভাবে আক্রে ধরা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১, অধ্যায়ঃ ৫

  • অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ

১৪০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। [বোখারী ও মুসলিম]{১}

{১} সহীহ: বোখারী ২৬৯৭, মুসলিম ১৭১৮, আবু দাউদ ৪৬০৬, ইবনি মাজাহ ১৪, আহমাদ ২৬০৩৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৬, ইরওয়া ৮৮, সহীহ আল জামি ৫৯৭০, সহীহাহ্ ২৩০২, সহীহ আত তারগীব ৪৯। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ অতঃপর নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল দীনে [মনগড়াভাবে] নতুন জিনিস সৃষ্টি করা এবং [এ রকম] সব নতুন সৃষ্টিই গুমরাহী [পথভ্রষ্ট]। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৮৬৭, সহীহ ইবনি হিব্বান ১০, সহীহ আত তারগীব ৫০, বুলূগুল মারাম ৪৪৮, দারিমি ২০৬, ইবনি মাজাহ ৪৫, নাসায়ী ১৫৭৮, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ১৭৮৫। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত। [১] যে ব্যক্তি মাক্কার হারাম এলাকার মধ্যে নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ করে। [২] যে ব্যক্তি ইসলামে থেকে [ইসলাম-পূর্ব] জাহিলী যুগের নিয়ম-নীতি অনুকরণ করে। [৩] যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে শুধু অন্যায়ভাবে [রক্তপাতের উদ্দেশ্যে] কোন লোকের রক্তপাত ঘটায়। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৮৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫৯০২, সহীহাহ্ ৭৭৮, সহীহ আল জামি ৪০। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার সকল উম্মত জান্নাতে যাবে, যে অস্বীকার করিবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করিবে? তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, যারা আমার আনুগত্য স্বীকার করেছে তারা জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হলো সে-ই [জান্নাতে যেতে] অস্বীকার করেল [অতএব সে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে]। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭২৮০, সহীহ আল জামি ৪৫১৩, আহমাদ ৮৭২৮, সহীহাহ্ ৩১৪১। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা একদল মালাক [ফেরেশতা] নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] শুয়েছিলেন। মালয়িকাহ্‌ [ফেরেশতাগণ] পরস্পরে বলাবলি করিলেন, তোমাদের সাথী {মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]] সম্পর্কে একটি উদাহরণ রয়েছে। তাহাঁর সামনেই উদাহরণটি বলো। তখন একজন বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন। আবার একজন বললেন, তাহাঁর চোখ ঘুমালেও তাহাঁর মন সর্বদা জাগ্রত। তাহাঁর উদাহরণ হলে সে ব্যক্তির ন্যায়, যিনি একটি ঘর বানিয়েছেন। অতঃপর মানুষকে আহার করানোর জন্য দস্তরখান বিছালেন, তারপর মানুষকে ডাকবার জন্য আহ্বায়ক পাঠালেন। যারা আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল তারা ঘরে প্রবেশ করিল এবং খাবারও খেল। আর যারা আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না, তারা না ঘরে প্রবেশ করিতে পারল আর না খাবারও পেল। এসব কথা শুনে তারা [মালায়িকাহ্‌] পরস্পর বললেন, এ কথাটার তাৎপর্য বর্ণনা কর যাতে তিনি কথাটা বুঝতে পারেন। এবারও কেউ বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে। আর কেউ বললেন, তাহাঁর চোখ ঘুমিয়ে থাকলেও অন্তর জেগে আছে। তারা বললেন, ঘরটি হল জান্নাত আর আহ্বায়ক হলেন মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [ঘর ও মেহমানদারী প্রস্তুতকারী হলেন আল্লাহ্‌ তাআলা]। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর অবাধ্য হল সে আল্লাহ্‌র অবাধ্য হল। মুহাম্মদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হলেন মানুষের মধ্যে [মুসলিম ও কাফিরের] পার্থক্য নিধারণকারী মানদণ্ড। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭২৮১। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ইবাদাতের অবস্থা জানার জন্য তাহাঁর স্ত্রীগণের নিকট এলে। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ইবাদাতের খবর শুনে তারা যেন তাহাঁর ইবাদাতকে কম মনে করিলেন এবং পরস্পর আলাপ করিলেন: নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা কোথায়, আল্লাহ্‌ তাআলা তাহাঁর আগের-পরের [গোটা জীবনের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদের একজন বললেন, আমি কিন্তু সারা রাত নামাজ আদায় করবো। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি দিনে সিয়াম পালন করবো, আর কখনো তা ত্যাগ করব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, কখনো বিয়ে করবো না। তাদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সময় নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এসে পড়লেন এবং বললেন, তোমরা কী ধরনের কথাবর্তা বলছিলে? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি, তোমাদের চেয়ে বেশী পরহেয করি। কিন্তু এরপরও আমি কোন দিন সিয়াম পালন করি আবার কোন দিন সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেই। রাতে নামাজ আদায় করি আবার ঘুমিয়েও থাকে। আমি বিয়েও করি। সুতরাং এটাই আমার সুন্নাত [পথ], যে ব্যক্তি আমার পথ থেকে বিমূখ হবে সে আমার [উম্মাতের] মধ্যে গণ হবে না। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩১৭, ইরওয়া ১৭৮২, সহীহ আল জামি ১৩৩৬, সহীহ আত তারগীব ১৯১৮, বুলুগুল মারাম ৯৭৫, আহমাদ ১৩৭২৭। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] একটি কাজ করিলেন [অর্থাৎ সফরে সিয়াম ভঙ্গ করিলেন], অন্যদেরকেও তা করার জন্য অনুমতি দিলেন। কিন্তু কতক লোক তা থেকে বিরত থাকল [অর্থাৎ সিয়াম ভাঙ্গল না]। এ সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] খুত্‌বাহ্‌ দিলেন, হাম্‌দ-সানা পড়ার পর বললেন, লোকদের কী হল? তারা এমন কাজ হইতে বিরত থাকছে যা আমি করছি। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাঁকে [আল্লাহ্‌কে] তাদের চেয়ে অধিক জানি ও তাদের চেয়ে বেশী ভয় করি। [সুতরাং আমি যে কাজ করিতে দ্বিধাবোধ করি না, তারা তা করিতে ইতঃস্তত করিবে কেন?]। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬১০১, মুসলিম ২৩৫৬, সহীহাহ্ ৩২৮, সহীহ আল জামি ৫৫৭৩, আহমাদ ২৫৪৮২, সহীহ ইবনি খুযাইমাহ্ ২০১৫। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৭. রাফি ইবনি খদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যে সময় মাদীনায় [হিজরত করে] আসলেন, সে সময় মাদীনার লোকেরা খেজুর গাছে তাবীর করিতেন। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাদের জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা এরূপ করছ কেন? মাদীনাবাসী উত্তর দিল, আমরা বরাবরই এমনি করে আসছি। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, মনে হয় তোমরা এমন না করলেই ভাল হত। তাই মাদীনাবাসীরা এ কাজ করা পরিত্যাগ করিল। কিন্তু ফসল [এ বছর] কম হল। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কানে গেলে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ। তাই আমি যখন তোমাদেরকে দ্বীন সম্পর্কে কোন বিষয়ে নির্দেশ দেই, তখন তোমরা অবশ্যই আমার কথা শুনবে। আর আমি যখন নিজের মতানুসারে দুনিয়ার বিষয় সম্পর্কে তোমাদেরকে কিছু বলব তখন মনে করিবে, আমি একজন মানুষ [তাই দুনিয়ার ব্যাপারে আমারও ভুল হইতে পারে]। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ২৩৬২, সহীহ আল জামি ২৩৩৮। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৮. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমার এবং যে ব্যাপারটি দিয়ে আল্লাহ্‌ আমাকে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল, যেমন- এক ব্যক্তি তার জাতির নিকট এসে বলিল, হে আমার জাতি! আমি আমার এ দুই চোখে শত্রু বাহিনী দেখে এসেছি। আমি হচ্ছি তোমাদের একজন নাঙ্গা [নিঃস্বার্থ] সাবধানকারী। অতএব তোমরা শীঘ্রই তোমাদের মুক্তির পথ খোঁজ কর [তাহলে মুক্তি পাবে]। একথা শুনে জাতির একদল লোক তার কথা [বিশ্বাস করে] মেনে নিল। রাতেই তারা [শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য] ধীরে-সুস্থে চলে গেল এবং তারা মুক্তি পেল। জাতির অপর একদল তাঁকে মিথ্যুক মনে করিল [তাই ভোর পর্যন্ত নিজেদের স্থানেই রয়ে গেল]। ভোরে অতর্কিতে শত্রু সৈন্য এসে তাদের উপর আপতিত হল এবং তাদেরকে সমূলে ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দিল। এই হল সে ব্যক্তির উদাহরণ- যে আমার কথা স্বীকার করেছে, আমি যা এনেছি তার অনুসরণ করেছে। আর সে ব্যক্তির উদাহরণ- যে আমার কথা মানেনি ও আমি যে সত্য নিয়ে [দীন ও শারীআত] তাদের নিকট এসেছি, তাকে তারা মিথ্যা মনে করেছে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭২৮৩, মুসলিম ২২৮৩, সহীহ আল জামি ৫৮৬০। النَّذِيْرُ الْعُرْيَانُ [আন্ নাযীরুল উর্ইয়া-ন] এটি একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদবাক্য যা কঠিন পরিস্থিতি এবং আগত বিপদের সময় ব্যবহার করা হয়। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমার উদাহরণ হল সে ব্যক্তির ন্যয় যে আগুন জ্বালাল এবং আগুন যখন তার চারদিক আলোকিত করিল, তখন পতঙ্গসমূহ ও পোকা-মাকড় দলে দলে প্রজ্জ্বলিত আগুনে এসে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে লাগল, আর আগুন প্রজ্জ্বলনকারী সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু তারা বাধা উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়তেই থাকল। ঠিক তদ্রূপ আমিও [হে মানবজাতি!] তোমাদেরকে পেছন থেকে তোমাদের কোমর ধরে আগুন হইতে [বাঁচাবার জন্য] টানছি। আর তোমরা সে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। ঈমাম বোখারী এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম মুসলিমও সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনের সাথে এ পর্যন্ত একই রূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শেষের দিকে কিছু বাড়িয়ে এরূপ বলেছেন, অতঃপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেন, এটাই হল আমার ও তোমাদের উদাহরণ। আমি কোমর ধরে তোমাদেরকে আগুন থেকে [বাঁচানোর জন্য] টানছি ও বলছি, এসো আমার দিকে, আগুন থেকে দূরে থাক; এসো আমার দিকে, আগুন থেকে দূরে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছ। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৬৪৮৩, মুসলিম ২২৮৪, তিরমিজি ২৮৭৪, আহমাদ ৭৩২১, ইবনি হিব্বান ৬৪০৮, সহীহ আল জামি ৫৮৫৮, সহীহ আত তারগীব ৩৬৬০। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫০. আবু মূসা আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও ইল্‌ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল জমিনে মুষলধারে বৃষ্টি, যা কোন ভূখণ্ডে পড়েছে। সে ভূখণ্ডের একাংশ উৎকৃষ্ট, যা বৃষ্টিকে চুষে নিয়েছে এবং প্রচুর উদ্ভিদ, গাছ-গাছালি ও ঘাস জন্ম দিয়েছে। আর অপর অংশ ছিল কঠিন ও গভীর, যা পানি [শোষণ না করে] আটকিয়ে রেখেছে। যার দ্বারা মানুষের উপকার সাধন করেছে। লোকেরা তা পান করেছে, অন্যকে পান করিয়েছে এবং তার দ্বারা ক্ষেত-খামারে কৃষি কাজ করেছে। আর কিছু বৃষ্টি ভূমির সমতল ও কঠিন জায়গায় পড়েছে, যা পানি আটকিয়ে রাখেনি বা শোষণ করেনি অথবা গাছপালা জন্মায়নি। এটা হল সে ব্যক্তির উদাহরণ যে আল্লাহ্‌র দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছে ও [মানুষকে] শিক্ষা দিয়েছে। আর সে ব্যক্তির উদাহরণ, যে এর দিকে মাথা তুলেও তাকায়নি এবং আল্লাহ্‌র যে হিদায়াত দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা কবূলও করেনি। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৯, মুসলিম ২২৮২, সহীহ আল জামি ৫৮৫৫, আহমাদ ১৯৫৭৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৪, সহীহ আত তারগীব ৭৬। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কুরআনের এ আয়াত পাঠ করিলেন- “তিনি তোমার উপর এ কিতাব নাযিল করিয়াছেন, যার কতক আয়াত মুহকাম” হইতে “আর বোধশক্তি সম্পন্নরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা লাভ করে না” পর্যন্ত- [সূরাহ্‌ আ-লি ইমরাম ৩:৭]।

আয়িশাহ্‌ [রাদি.] বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন: যে সময় তুমি দেখবে, মুসলিমের বর্ণনায় আছে, যখন তোমরা দেখ যে, লোকেরা কুরআনের মুতাশাবিহ আয়াতের অনুসরণ করছে [তখন মনে করিবে], এরাই সে সকল লোক আল্লাহ্‌ তাআলা [বাঁকা হৃদয়ের লোক বলে] যাদের উল্লেখ করিয়াছেন। সুতরাং তাদের থেকে সতর্ক থাকিবে।{১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৫৪৭, মুসলিম ২৬৬৫, তিরমিজি ২৯৯৪, আবু দাউদ ৪৫৯৮, ইবনি মাজাহ ৪৭, আহমাদ ২৬১৯৭, দারিমি ১৪৭। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫২. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন দুপুর বেলায় আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর দরবারে পৌঁছলাম। [আবদুল্লাহ বলেন,] তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তখন দুজন লোকের স্বর শুনলেন। তারা একটি [মুতাশাবিহ] আয়াতের ব্যাপারে তর্কবিতর্ক করছিল [অর্থাৎ আয়াতের অর্থ নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল]। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন, তখন তাহাঁর চেহারায় রাগের ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তোমাদের আগের লোকেরা আল্লাহ্‌র কিতাব নিয়ে মতভেদ করার দরুনই ধ্বংস হয়েছে {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৬৬, সহীহাহ্ ৩৫৭৮, আহমাদ ৬৮০২, শুয়াবুল ঈমান ২০৬৩। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৩. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: মুসলিমদের মধ্যে সে-ই সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধী, যে ব্যক্তি এমন কোন বিষয়ে [নবীকে] প্রশ্ন করেছে, যা মানুষের জন্য পূর্বে হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার দরুন হারাম হয়ে গছে। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭২৮৯, মুসলিম ২৩৫৮, আবু দাউদ ৪৬১০, আহমাদ ১৫৪৫, সহীহ ইবনি হিব্বান ১১০, সহীহাহ্ ৩২৭৬, সহীহ আল জামি ১৫৬৮। মুসলিমের বর্ণনায় لَمْ يَحْرُمْ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ রয়েছে। আর আবু দাঊদে রয়েছে عَلَى النَّاسِ। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: শেষ যামানায় এমন মিথ্যুক দাজ্জাল লোক হবে, যারা তোমাদের কাছে এমন সব [মনগড়া] হাদিস নিয়ে উপস্থিত হবে যা তোমরা শুনোনি, তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেননি। অতএব সাবধান! তাদের থেকে দূরে থাকিবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করিতে বা বিপদে ফেলতে না পারে। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৪৪, সহীহ আল জামি ৮১৫১। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আহলে কিতাবগণ তাওরাত কিতাব হিব্রু ভাষায় পাঠ করত [এটা ইয়াহূদীদের ভাষা ছিল]। আর মুসলিমদেরকে তা আরবী ভাসায় বুঝাত। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [তাদের ব্যাপারে সহাবীগণকে] বললেন, তোমরা আহলে কিতাবদেরকে সমর্থনও করো না, আবার মিথ্যা প্রতিপন্নও করো না। সুতরাং তোমরা তাদের বলবে, “আমরা আল্লাহ্‌র ওপর ঈমান এনেছি, আর যা আমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে”- [সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২: ১৩৬] আয়াতের শেষ পর্যন্ত। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৪৮৫, সহীহাহ্ ৪২২, সহীহ আল জামি ৭৩৪৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০৬১৫। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: কোন লোকের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে [সত্যতা যাচাই না করে] তা-ই বলে বেড়ায়। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ২৫৬১৭,। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৭. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমার পূর্বে আল্লাহ্‌ তাআলা এমন কোন নবীকে তাহাঁর উম্মাতের মধ্যে পাঠাননি, যাঁর উম্মাতের মধ্যে কোন সাহায্যকারী বা সহাবীর দল ওই উম্মাতে ছিল না। এ তারা সুন্নাতের পথ অনুসরণ করেছে, তার হুকুম-আহকাম মেনে চলেছে। তারপর এমন লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হল, যারা অন্যদেরকে যা বলত নিজেরা তা করত না। আর তারা সে সব কাজ করত যার আদেশ [শারীআতে] তাদেরকে দেয়া হয়নি। [আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন কতিপয় লোক থাকতে পারে]। তাই যে নিজের হাত দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিবে সে [পূর্ণ] মুমিন। আর যে মুখের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিবে সেও মুমিন। আর যে অন্তর দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিবে সেও মুমিন। আর এরপর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৫০। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোককে সৎ কাজের দিকে আহ্বান করিবে, তার জন্যও সে পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে যা তার অনুসারীদের জন্য রয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াবের কোন অংশ একটুও কমবে না। অনুরূপ যে ব্যক্তি কাউকে গোমরাহীর দিকে আহ্বান করে তারও সে পরিমাণ গুনাহ হবে, যতটুকু গুনাহ তার অনুসারীদের জন্য হবে। অথচ এটা অনুসারীদের গুনাহ্‌কে একটুও কমাবে না। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৭৪। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৫৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ ইসলাম আগন্তুকের [অপরিচিতের] ন্যায় [স্বল্প সংখ্যক লোকের মাধ্যমে অপরিচিত ও নিঃসঙ্গ অবস্থায়] শুরু হয়েছে এবং তা পরিশেষে ঐ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করিবে, যেভাবে শুরু হয়েছে। তাই আগন্তুকের [ঈমানদার লোকদের] জন্য সুসংবাদ। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ১৪৫। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: ইসলাম মাদীনার দিকে এভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ [পরিশেষে] তার গর্তে ফিরে আসে- [বোখারী ও মুসলিম]। {১} আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] এর হাদিস “যারূনী মা-ত্বরাক্‌তুকুম” কিতাবুল মানাসিকে এবং মুআবিয়াহ্‌ এবং জাবির [রাদি.] এর হাদিস দুটি “লা- ইয়াযা-লু মিন উম্মাতী” এবং “লা- ইয়াযা-লু ত্ব-য়িফাতুম্‌ মিন উম্মাতী”। আমরা শীঘ্রই “সাওয়া-বি হা-যিহিল উম্মাতি” অধ্যায়ে বর্ণনা করব ইনশা-আল্লাহ্‌।

{১} সহীহ : মুসলিম ১৪৭। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৬১. রবীআহ্ আল জুরাশী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কে স্বপ্নে কতক মালাক দেখানো হল এবং মালাক তাঁকে [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আপনার চোখ ঘুমিয়ে থাকুক, কান শুনতে থাকুক এবং অন্তর বুঝতে থাকুক। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আমার চোখ দুটি ঘুমাল, আমার কান দুটি শুনল এবং আমার অন্তর বুঝল। অতঃপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তখন আমাকে [অর্থাৎ দৃষ্টান্ত স্বরূপ] বলা হল, যেন একজন মহৎ ব্যক্তি একটি ঘর তৈরি করিলেন এবং এতে দাওয়াতের ব্যবস্থা করিলেন। অতঃপর [লোকেদের আহ্বানের জন্য] একজন আহ্বানকারীকে পাঠালেন। অতঃপর যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করিতে পারল এবং খেতেও পারল। আর গৃহস্বামীও তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। অপরদিকে যে ব্যক্তি আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দিল না, সে ঘরেও ঢুকল না, খেতেও পারল না এবং গৃহস্বামীও তার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। অতঃপর মালায়িকাহ্‌ [এর রূপে] বললেন, এ দৃষ্টান্তের গৃহস্বামী হলেন আল্লাহ্‌, আহ্বানকারী হলেন মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এবং ঘর হল ইসলাম এবং খাবারের স্থান হল জান্নাত। {১}

{১} জইফ : দারিমী ১১। কারণ বর্ণনাকারী রাবী রবীআহ্ আল জুরাশীর সাহাবী হওয়ার বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬২, আবু রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমি তোমাদের কাউকেও যেন এরূপ অবস্থায় না দেখি যে, সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকিবে। আর তার নিকট আমার নির্দেশাবলীর কোন একটি পৌঁছবে, যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা কোন বিষয় নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানি না, যা কিছু আমি আল্লাহ্‌র কিতাবে পাব তার অনুসরণ করব। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ২৩৩৪৯, আবু দাউদ ৪৬০৫, তিরমিজি ২৬৬৩, ইবনি মাজাহ ১৩, সহীহুল জামি ৭১৭২। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৩. মিক্বদাম ইবনি মাদীকারিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: সাবধান! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ জিনিসও। জেনে রেখ, শীঘ্রই এমন এক সময় এসে যাবে, যখন কোন উদরভর্তি বড় লোক তার গদিতে বসে বলবে, তোমরা কেবল এ কুরআনকেই গ্রহণ করিবে। এতে যা হালাল পাবে তাকেই হালাল জানবে এবং যা এতে হারাম পাবে তাকেই হারাম মনে করিবে। অথচ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যা হারাম বলেছেন, তা আল্লাহ্‌ যা হারাম করিয়াছেন তারই অনুরূপ। তাই জেনে রেখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং শিকারী দাঁতওয়ালা কোন হিংস্র পশুও হালাল নয়। এমতাবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের কোন হারানো বস্তুও তোমাদের জন্য হালাল নয়, তবে সে যদি সেটির মুখাপেক্ষী না হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে, তাদের উচিত ঐ লোকের মেহমানদারি করা। যদি তারা তার মেহমানদারি না করে তবে সে জোরপূর্বক তাদের নিকট থেকে তার মেহমানদারির সম-পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার রাখবে। [অথচ কুরআনে এ সকল বিষয়ের উল্লেখ নেই]। {১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪৬০৪, সহীহুল জামি ২৬৪৩, ইবনি মাজাহ ১২। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৪. ইরবায ইবনি সারিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] খুত্‌বাহ্‌ দিতে উঠে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি নিজের গদিতে ঠেস দিয়ে বসে এ কথা মনে করে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা যা কিছু এ কুরআনে হারাম করিয়াছেন তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? জেনে রেখ, আল্লাহ্‌র কসম! নিঃসন্দেহে আমি নির্দেশ করেছি, আমি উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, আর এর পরিমাণ কুরআনের হুকুমের সমান, বরং এর চেয়ে অধিক হবে। তোমরা মনে রাখবে যে, অনুমতি ব্যতীত আহলে কিতাব যিম্মীদের বাসগৃহে প্রবেশ করা, তাদের নারীদের প্রহার করা এবং তাদের ফসল বা শস্য খাওয়াকেও আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাদের জন্য হালাল করেননি, যদি তারা তাদের উপর ধার্যকৃত কর আদায় করে দেয় [এসব বিষয় কুরআনে নেই, আমার দ্বারাই আল্লাহ্‌ এসব হারাম করিয়াছেন]। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৩০৫০, যঈফুল জামি ২১৮৪। কারণ এর সানাদে আশ্আস ইবনি শুবাহ্ নামক একজন রাবী রয়েছেন যার মধ্যে হাদিস বর্ণনায় শিথিলতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬৫. ইরবায ইবনি সারিয়াহ্ হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদের নামাজ আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে গেলেন। আমাদের উদ্দেশ্যে এমন মর্মস্পর্শী নাসীহাত করিলেন যাতে আমাদের চোখ গড়িয়ে পানি বইতে লাগল। অন্তরে ভয় সৃষ্টি হল মনে হচ্ছিল বুঝি উপদেশ দানকারীর যেন জীবনের এটাই শেষ উপদেশ। এক ব্যক্তি আবেদন করিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় করার, [ঈমাম বা নেতার] আদেশ শোনার ও [তার] অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে [নেতা ঈমাম] হাবশী গোলাম হয়। আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকিবে সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকিবে। সাবধান! দ্বীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার [বিদআত] উদ্ভব ঘটানো হইতে বেঁচে থাকিবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই {বা কাজ শারীআতে আবিষ্কার করা যা রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এবং সহাবীগণ করেননি তা] বিদআত এবং প্রত্যেকটা বিদআতই ভ্রষ্টতা। কিন্তু এ বর্ণনায় তিরমিজি ও ইবনি মাজাহ নামাজ আদায়ের কথা উল্লেখ করেননি। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ১৬৬৯৪, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিজি ২৬৭৬, ইবনি মাজাহ ৪২। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে] একটি [সরল] রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহ্‌র পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে। এরা [মানুষকে] তাদের পথের দিকে আহ্বান করে। অতঃপর তিনি তাহাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করিলেন : Arbi “নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের অনুসরণ করে চলো…” [সূরাহ্‌ আনআম ৬:১৬৩] আয়াতের শেষ পর্যন্ত]। {১}

{১} হাসান : আহমাদ ৪১৩১, নাসায়ী তাহাঁর কুবরা গ্রন্থে ১১১৭৪, দারিমী ২০২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হইতে পারবে না যতক্ষণ না তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনা দ্বীন ও শরীআতের অধীন না হবে-[শারহে সুন্নাহ]। ঈমাম নাবাবী তার “আরবাঈন” গ্রন্থে বলেছেন, এটা একটা সহীহ হাদিস। আমরা কিতাবুল হুজ্জাত-এ হাদিসটি সহীহ সানাদসহ বর্ণনা করিছে। {১}

{১} জইফ : ইবনি আবু আসিম-এর আস্ সুন্নাহ ১৫। কারণ এর সানাদে নুআয়ম ইবনি হাম্মাদ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬৮. বিলাল ইবনি হারিস আল মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার কোন একটি সুন্নাতকে যিন্দা করেছে, যে সুন্নাত আমার পরে ছেড়ে দেয়া হয়ছিল, তার এত সাওয়াব হবে যত সাওয়াব এ সুন্নাত আমালকারীদের হবে, কিন্তু সুন্নাতের উপর আমালকারীদের সাওয়াবে কোন অংশ হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর নতুন [বিদআত] পথ সৃষ্টি করিবে, যাতে আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রসূল রাযী-খুশী নন, তার জন্য সে সকল লোকের গুনাহ চাপিয়ে দেয়া হবে, যারা তার সাথে আমাল করিবে, অথচ তাদের গুনাহের কোন অংশ হ্রাস করিবে না। {১}

{১} খুবই দুর্বল: তিরমিজি ২৬৭৭, ইবনি মাজাহ ২১০, যঈফুত্ তারগীব ৪২। হাদিসের শব্দগুলো ইবনি মাজাতে। হাদিসের হুকুম বা মান সম্পর্কে ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এটি একটি হাসান স্তরের হাদিস। কিন্তু তার এ হুকুমটি প্রত্যাখ্যাত বা ভুল। কারণ হাদিসটির সানাদে কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর নামক একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছেন। যার সম্পর্কে ঈমাম শাফিঈ ও আবু দাউদ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেনঃ সে মিথ্যার একটি রুকন বা স্তম্ভ। ইবনি হিব্বানও অনুরূপ বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ বর্ণনাটিকে ইবনি মাজাহ [রাহিমাহুল্লাহ] কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র থেকে, তিনি তার পিতা হইতে এবং তিনি তার দাদা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

১৭০. আমর ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: নিঃসন্দেহে দ্বীন [ইসলাম] হিজাযের দিকে এমনভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ [পরিশেষে] তার গর্তের দিকে ফিরে আসে এবং দ্বীন হিজাযেই আশ্রয় নিবে যেভাবে পার্বত্য মেঘ পর্বত-শিখরে আশ্রয় নিয়ে থাকে। দ্বীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর [গরীবীর] ন্যায় যাত্রা শুরু করেছে, আবার তা ফিরে আসবে যেভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব অপিরিচিতের জন্য সুসংবাদ রয়েছে, তারা ঐসব লোক যারা আমার পর লোকদের দ্বারা নষ্ট করা সুন্নাতকে পূণঃ জারী করে। {১}

{১} সানাদটি খুবই দুর্বল : তিরমিজি ২৬৩০। কারণ এর সানাদে কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর রয়েছেন যিনি দুর্বল রাবী। হাদিসের এ সানাদটি একেবারেই ভিত্তিহীন যদিও ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর জামি আত তিরমিজির ২/১০৫ নং এ একে হাসান সহীহ বলেছেন। কারণ এর সানাদে কাসীর ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আমর নামক একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। তবে হাদিসটির অধিকাংশই অন্যান্য সানাদে প্রমাণিত। ১ম অংশ তথা إِنَّ الدِّينَ ….. إِلَى جُحْرِهَا বোখারী মুসলিমে রয়েছে। ৩য় অংশ তথা إِنَّ الدِّيْنَ بَدَأَ ….. فَطُوْبىْ لِلْغُرَبَاءِ মুসলিমে রয়েছে। আর وَهُمُ الَّذِيْنَ ….. অংশটুকু ঈমাম খাত্ত্বাবী ও আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] এক স্থানে দুর্বল সানাদে বর্ণনা করলেও মুসনাদে আহমাদ-এর অন্যান্য স্থানে তা সহীহ সানাদে প্রমাণিত রয়েছে। কিন্তু ২য় অংশ তথা وَلَيَعْقِلَنَّ الدِّيْنُ مِنَ الْحِجَازِ সম্পর্কে শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আমি এ অংশটুকুর কোন শাহিদ বর্ণনা পাইনি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৭১. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতের উপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বানী ইসরাঈলের উপর এসেছিল। যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ঠিক সমান হয়। এমনটি বানী ইসরাঈলের মধ্যে যদি কেউ তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে কুকর্ম করে থাকে, তাহলে আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন লোক হবে যারা অনুরূপ কাজ করিবে আর বানী ইসরাঈল ৭২ ফিরক্বায় [দলে] বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মাত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকিবে। {১}

{১} প্রথম অংশটুকু ব্যতীত জইফ : তিরমিজি ২৬৪১, সহীহুল জামি ৫৩৪৩। কারণ এর সানাদে আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ আল আফরীফী যিনি দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য

১৭২. মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আহ্‌মাদ ও আবু দাঊদে মুআবিয়াহ্‌ [রাদি.] হইতে [কিছু পার্থক্যের সাথে] বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামে যাবে। আর একটি দল জান্নাতে যাবে। আর সে দলটি হচ্ছে জামাআত। আর আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েকটি দলের উদ্ভব হবে যাদের শরীরে এমন কুপ্রবৃত্তি [বিদআত] ছড়াবে যেমনভাবে জলাতংক রোগ রোগীর সমগ্র শরীরে সঞ্চারণ করে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকি থাকে না, যাতে তা সঞ্চার করে না। {১}

{১} হাসান : আহমাদ ১৬৪৯০, আবু দাউদ ৪৫৯৭, সহীহুত্ তারগীব ৫১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৭৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আল্লাহ্‌ তাআলা আমার গোটা উম্মাতকে; অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করিবেন না। আল্লাহ্‌ তাআলার হাত [রহমাত ও সাহায্য] জামাআতের উপর রয়েছে। যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে [অবশেষে ] জাহান্নামে যাবে। {১}

{১} প্রথম অংশটুকু ব্যতীত জইফ। তিরমিজি ২১৬৭। কারণ এর সানাদে সুলায়মান আল মাদানী নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছেন। তবে বেশ কয়েকটি শাহিদ বর্ণনা থাকায় হাদিসের প্রথম অংশটুকু সহীহ। অর্থাৎ- [مَنْ شَذَّ شُذَّ فِيْ النَّار] অংশটুকু ব্যতীত বাকীটুকু সহীহ। এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য

১৭৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: বৃহত্তম দলের অনুসরণ কর। কেননা, যে ব্যক্তি দল থেকে আলাদা হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে [পরিশেষে] জাহান্নামে যাবে। {১}

{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ৩৯৫০। কারণ এর সানাদে আবু খাল্ফ আল আসা একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাকে বলেছেন: হে বৎস! তুমি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে কাটাতে পার তাহলে তাই কর। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবাসে, আর যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকিবে। {১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৬৭৮, যঈফুত্ তারগীব ১৭২৮। কারণ সানাদে আলী ইবনি যায়দ নামক একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। যদিও হাদিসটি ঈমাম তিরমিজি হাসান বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৬.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শাহীদের সাওয়াব রয়েছে। {১}

{১} জইফ জিদ্দান [খুবই দুর্বল]: হিল্ইয়া ৮/২০০, যঈফুত্ তারগীব ৩০। হাদিসটির সব সানাদই দুর্বল। ইবনি আদী হাদিসটি যে সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন সেটি খুবই দুর্বল। কারণ তাতে হাসান ইবনি কুতায়বাহ্ নামে একজন রাবী রয়েছেন যাকে ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] ধ্বংসকারী হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। এছাড়াও ঈমাম ত্ববারানী তাহাঁর মুজামুল আওসাতে এবং আবু নুআয়ম তাহাঁর হিল্ইয়াহ্ গ্রন্থের ৮/২০০ নং-এ যে সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন সেটিও দুর্বল। কারণ তাতে আবদুল আযীয ইবনি আবু রাও্ওয়াদ নামে একজন রাবী রয়েছেন যার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৭৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন উমার [রাদি.] নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহূদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভালো মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, ইয়াহূদী ও নাসারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি [তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে] এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। মূসা [আঃ]-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাহাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। {১}

{১} হাসান: আহমাদ ১৪৭৩৬, বায়হাক্বী ১৭৭। ঈমাম দারিমীও হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের সানাদটি দুর্বল। কারণ তাতে মুজালিদ ইবনি সাঈদ নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ তবে আমার মতে হাদিসটি হাসান স্তরের। কারণ এর আরো অনেক শাহিদ সূত্র রয়েছে যার মাধ্যমে হাদিসটি হাসান স্তরে পৌঁছে যায়। اَلتَّحَوُّكُ [আত তাহাব্বুক] হলো না দেখেই কোন বিষয়ে জড়িয়ে পড়া। হাসান বসরী বলেনঃ হতবুদ্ধি, দিশেহারা, অসহায় হওয়া ইত্যাদি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৭৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি হালাল [রিয্‌ক্ব] খাবে, সুন্নাতের উপর আমাল করিবে এবং যার অনিষ্ট থকে মানুষ নিরাপদ থাকিবে, সে জান্নাতে যাবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ ধরনের লোক তো আজকাল অগণিত। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, [ইনশা-আল্লাহ্‌] আমার পরবর্তী যুগেও এ ধরনের লোক থাকিবে। {১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২৫২০, যঈফুত্ তারগীব ২৯, মুসতাদরাকে হাকিম ৪/১০৪। কারণ এ হাদীসে আবু ওয়ায়িল থেকে আবু বিশর নামে একজন রাবী রয়েছেন তিনি মূলত মাজহূল বা অপরিচিত। যদিও ভুলবশত ঈমাম হাকিম হাদিসটি সহীহ বলেছেন এবং ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] তা সমর্থন করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৭৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: তোমরা এমন যুগে আছ, যে যুগে তোমাদের কেউ তার উপর নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশও ছেড়ে দিলে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর এমন এক যুগ আসবে, যখন কেউ যদি তার প্রতি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশের উপরও আমাল করে সে পরিত্রাণ পাবে। {১}

{১} জইফ : তিরমিজি ২২৬৭, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২/৬৮৪। কারণ এর সানাদে নুআয়ম ইবনি হাম্মাদ একজন রাবী রয়েছেন যিনি দুর্বল। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : এর সানাদে নুআয়ম ইবনি হাম্মাদ নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে যে বিষয়ে আমি اَلْأَحَادِيْثُ الضَّعِيْفَةُ وَالْمَوْضُوْعَةُ গ্রন্থে আলোচনা করেছি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৮০. আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: হিদায়াত প্রাপ্তির এবং হিদায়াতের উপর ক্বায়িম থাকার পর কোন জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় না, কিন্তু যখন তারা ধর্মীয় বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পাঠ করিলেন [অর্থ]: “তারা বাক-বিতণ্ডা করার উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার নিকট তা উত্থাপন করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে বাক-বিতণ্ডাকারী লোক”- [সূরাহ্‌ যুখরুফ ৪৩:৫৮]। {১}

{১} হাসান : আহমাদ ২১৬৬০, তিরমিজি ৩২৫৩, ইবনি মাজাহ ৪৩, সহীহুত্ তারগীব ১৪১। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৮১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিতেন: তোমরা নিজেদের নাফ্‌সের [আত্মার] উপর ইচ্ছা করে কঠোরতা করো না। কেননা পরবর্তীতে আল্লাহ্‌ না আবার তোমাদের উপর কঠোরতা চাপিয়ে দেন। পূর্বেও একটি জাতি [বানী ইসরাঈল] নিজেদের উপর কঠোরতা অবলম্বন করেছিল। তাই আল্লাহ্‌ তাআলাও তাদের উপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দিলেন। গির্জায় ও ধর্মশালায় যে লোকগুলো আছে, এরা তাদেই উত্তরাধিকারী। [কুরআনে উল্লেখ আছে] “তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য রাহ্‌বানিয়্যাত বা বৈরাগ্যবাদ-কে আবিষ্কার করেছিল। আমি তাদের উপর নির্ধারণ করিনি”- [সূরাহ আল হাদীদ ৫৭:২৭]। {১}

{১} জইফ : আবু দাউদ ৪৯০৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩৪৬৮। কারণ এর সানাদে সাঈদ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আবুল আম্ইয়া নামক একজন রাবী রয়েছেন যাকে ইবনি হিব্বান ব্যতীত কেউই বিশ্বস্ত বলেননি। আর হাফিয ইবনি হাজার তাকে হাদীসে শিথিল বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৮২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: কুরআন পাঁচটি বিষয়সহ নাযিল হয়েছে: [১] হালাল [২] হারাম [৩] মুহ্‌কাম [৪] মুতাশাবিহ ও [৫] আমসাল [উপদেশপূর্ণ ঘটনা]। সুতরাং তোমরা হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম মনে করিবে। মুহকামের উপর আমাল করিবে, মুতাশাবিহের সাথে ঈমান পোষণ করিবে। আর আমসাল [উপদেশপূর্ণ কাহিনী] থেকে শিক্ষা গ্রহণ করিবে। এটা মাসাবীহের বাক্য বিন্যাস। কিন্তু বায়হাক্বী শুআবুল ঈমানে এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন: তোমরা হালালের উপর আমাল কর, হারাম থেকে বেঁচে থাক এবং মুহকামের অনুসরণ কর। {১}

{১} খুবই দুর্বল: বায়হাক্বী ২২৯৩, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৩৪৬। কারণ এ হাদিসের একজন রাবী মুয়াবিক দুর্বল। আর তার শিক্ষক আবদুল্লাহ ইবনি সাঈদ আল মুকরিবী খুবই দুর্বল এবং মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ঈমাম বায়হাক্বী ছাড়াও আরো কেউ কেউ হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন তবে সবগুলো সূত্রই দুর্বল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল

১৮৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: শারীআতের বিষয় তিন প্রকার: [১] এমন বিষয়, যার হিদায়াত সম্পূর্ণ পরিষ্কার। তাই এ নির্দেশ মেনে চল। [২] সে বিষয়, যার ভ্রষ্টতাও স্পষ্ট, সুতরাং তা পরিহার কর এবং [৩] এ বিষয়, যা মতভেদপূর্ণ তা মহান আল্লাহ্‌র হাতে ছেড়ে দাও। {১}

{১} জইফ : ইবনি আসা-কির এর তা-রিখাহ্ ৫৫/১৩৩; হাদিসটি আহমাদে নেই। কারণ এর সানাদে আবুল মিক্বদাম হাশিম ইবনি যিয়াদ নামক একজন রাবী রয়েছেন যাকে হাফিয ইবনি হাজার মাতরূক বা পরিত্যক্ত বলেছেন এবং সে মিথ্যা বলাতে অভ্যস্ত। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ আমি কাউকে জানি না যে, এ হাদিসটি ঈমাম আহমাদ-এর সাথে সম্পৃক্ত করিয়াছেন এবং এ হাদিসটি তার মুসনাদে নেই বলেও আমার ধারণা। ঈমাম সুয়ূত্বী আল জা-মিউল কাবীর গ্রন্থে হাদিসটি ইবনি মানী-এর দিকে সম্বোধন করিয়াছেন যার নামও আহমাদ। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১৮৪. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: মেষপালের ক্ষেত্রে নেকড়ে বাঘের ন্যায় শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। পালের যে মেষটি দল হইতে আলাদা হয়ে যায় অথবা যেটি খাবারের সন্ধানে দূরে সরে পড়ে অথবা যেটি অলসতাবশতঃ এক কিনারায় পড়ে থাকে, নেকড়ে সেটিকে শিকার করে নিয়ে যায়। সুতরাং সাবধান! তোমরা কক্ষণও [দল ছেড়ে] গিরিপথে চলে যাবে না, আর জামাআতবদ্ধ হয়ে [মুসলিম] জনগণের সাথে থাকিবে। {১}

{১} জইফ : আহমাদ ২১৬০২, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৩০১৬। কারণ দুটি। প্রথমত এর সানাদে একজন বেনামী রাবী রয়েছেন। আর উমার ইবনি ইব্রাহীম ক্বাতাদাহ্ থেকে বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল যা এ সানাদে বিদ্যমান। ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর মুসনাদের ৫/২৪৩ নং এ হাদিসটি দুর্বল সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৮৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি জামাআত [দল] হইতে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি [বন্ধন] তার গলা হইতে খুলে ফেলেছে। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ২১০৫১, আবু দাউদ ৪৭৫৮, সহীহুল জামি ৬৪১০, তিরমিজি ২/১৪১, হাকিম ১/৪২২। [বায়হাক্বী] {তাহাঁর শুআবুল ঈমান গ্রন্থে হাদিসটি মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসটি মুরসাল হওয়ার কারণে জইফ বটে। কিন্তু আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এর মারফূ ও মাওসুল তথা অনেক সানাদ থাকার কারণে হাসানের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৬. মালিক ইবনি আনাস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দুটি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহ্‌র কিতাব ও তাহাঁর রসূলের হাদিস। [ঈমাম মালিক মুওয়াত্তায় বর্ণনা করিয়াছেন]। {১}

{১} হাসান: মুয়াত্ত্বা মালিক ১৫৯৪। {ঈমাম মালিক মুয়াত্ত্বায় বর্ণনা করিয়াছেন।] এ হাদিসটি মুরসাল বরং মুযাল [অর্থাৎ- পর্যায়ক্রমে দুজন রাবীর নাম উল্লেখ করা হয়নি] এজন্য জইফ বটে। তবে ইবনি আব্বাস [রাদি.] থেকে হাসান সানাদে ঈমাম হাকিম-এর শাহিদ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি আত্তাজুল জামিউ লিল উসূলিল খামসাহ্ নামক গ্রন্থে এর উভয় সানাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৮৭. গুযায়ফ ইবনি আল হারিস আস্ সুমালী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যখনই কোন জাতি একটি বিদআত সৃষ্টি করেছে, তখনই সমপরিমাণ সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নাতের উপর আমাল করা [সু্ন্নাত যত ক্ষুদ্রই হোক], একটি বিদআত সৃষ্টি করা অপেক্ষা উত্তম। {১}

{১} জইফ : আহমাদ ১৬৫২২, যঈফুত্ তারগীব ৩৭, যঈফাহ্ ৬৭০৭। কারণ এর সানাদে আবু বাকর বিন আবদুল্লাহ [রাদি.] যার প্রকৃত নাম ইবনি আবী মারইয়াম [আঃ] আল গাস্সানী নামে একজন রাবী রয়েছে যাকে ইবনি হাজার তার তাক্বরীবে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৮৮. হাসসান [ইবনি আতিয়্যাহ্] [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিন বলেন, কোন জাতি যখনই দ্বীনের মধ্যে কোন বিদআত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের থেকে সে পরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। ক্বিয়ামাত পর্যন্ত এ সুন্নাত আর তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। {১}

{১} সহীহ : দারিমী ৯৮। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৮৯. ইব্রাহীম ইবনি মায়সারাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ.

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে সম্মান দেখাল, সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করিল। {১}

{১} জইফ : বায়হাক্বী ৯৪৬৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৮৬২। এর সানাদে হাসান বিন ইয়াহ্ইয়া নামে একজন মাতরূক রাবী রয়েছে যিনি অনেক বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কিতাবের শিক্ষা লাভ করিল, অতঃপর এ কিতাবের মধ্যে যা আছে তা অনুসরণ করিল, আল্লাহ্‌ তাআলা এ ব্যক্তিকে পৃথিবীতে পথভ্রষ্টতা হইতে বাঁচিয়ে রাখবেন এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তাকে নিকৃষ্ট হিসাবের কষ্ট হইতে রক্ষা রকবেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে- তিনি বলেছেন, যে আল্লাহ্‌ তাআলার কিতাবের অনুসরণ করিবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতেও হতভাগ্য হবে না। অতঃপর এ কথার প্রমাণ স্বরূপ তিনি তিলাওয়াত করিলেন: [আরবী] অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আমার হিদায়াত গ্রহণ করিল, সে [দুনিয়াতে] পথভ্রষ্ট হবে না এবং [পরকালেও] ভাগ্যাহত হবে না”- [সূরাহ্ ত্ব-হা ২০ : ১২৩] {১}

{১} ইবনি আবু শায়বাহ্ ২৯৯৫৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

১৯১. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা একটি উদাহরণ পেশ করিয়াছেন। তা হল একটি সরল সঠিক পথ আছে, এর দুদিকে দুটি দেয়াল। এসব দেয়ালে খোলা দরজা রয়েছে এবং সে সব দরজায় পর্দা ঝুলানো রয়েছে। আর রাস্তার মাথায় একজন আহ্বায়ক, যে [লোকদেরকে] আহ্বান করছে, এসো সোজা রাস্তা দিয়ে চলে যাও। ভুল ও বাঁকা পথে যাবে না। আর এ আহ্বানকারীর একটু আগে আছেন আর একজন আহ্বানকারী। যখনই কোন বান্দা সে দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখনই সে তাকে ডেকে বলেন, সর্বনাশ! এ দরজা খুলো না। যদি তুমি এটা খুলো তাহলে ভিতরে ঢুকে যাবে [প্রবেশ করলেই পথভ্রষ্ট হবে]। অতঃপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর  করলেনঃ সঠিক সরল পথের অর্থ হচ্ছে ইসলাম [সে পথ জান্নাতে চলে যায়]। আর খোলা দরজার অর্থ হল, ঐ সব জিনিস আল্লাহ্‌ তাআলা যা হারাম করিয়াছেন এবং দরজার মধ্যে ঝুলানো পর্দার অর্থ হল আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সীমাসমূহ। রাস্তার মাথায় আহ্বায়ক হচ্ছে কুরআন। আর তার সামনের আহ্বায়ক হচ্ছে নাসীহাতকারী মালাক, যা প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে আল্লাহ্‌র তরফ থেকে বিদ্যমান। {১}

{১} সহীহ : আহমাদ ১৭১৮২, সহীহুল জামি ৩৮৮৭, হাকিম ১/৭৩, তিরমিজি ২/১৪০। ইসলামী কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৯২. নাও্ওয়াস ইবনি সাম্আন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ঈমাম তিরমিজিও একই সহাবী থেকে এটি বর্ণনা করিয়াছেন, তবে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্তাকারে।

এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়

১৯৩. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্‌ অনুসরণ করিতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ [দ্বীনের ব্যাপারে] ফিত্নাহ হইতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক দিয়ে। আল্লাহ্‌ তাআলা তাদেরকে তাহাঁর প্রিয় রসূলের সাথী ও দ্বীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ কর এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আকঁড়ে ধর। কারণ তাঁরাই [আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রসূলের নির্দেশিত] সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন। {১}

{১} জইফ : হিল্ইয়াহ্ ১/৩০৫-৩০৬, ইবনি আবদুল বার ২/৯৭, কারণ এর সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পাণ্ডুলিপি এনে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এটা হল তাওরাতের একটি পাণ্ডুলিপি। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] চুপ থাকলেন। এরপর উমার [রাদি.] তাওরাত পড়তে আরম্ভ করিলেন। [এদিকে রাগে] রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চেহারা বিবর্ণ হইতে লাগল। আবু বাক্র [রাদি.] বললেন, উমার! তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর বিবর্ণ চেহারা মুবারক দেখছো না? উমার [রাদি.] রসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং [চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ্য করে] বললেন, আমি আল্লাহ্‌র গযব ও তাহাঁর রসূলের ক্রোধ হইতে পানাহ চাচ্ছি। আমি রব হিসেবে আল্লাহ্‌ তাআলার উপর, দ্বীন হিসেবে ইসলামের উপর এবং নবী হিসেবে মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর উপর সন্তুষ্ট আছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, “আল্লাহ্‌র কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি [তাওরাতের নবী স্বয়ং] মূসা [আঃ] তোমাদের মধ্যে থাকতেন আর তোমরা তাহাঁর অনুসরণ করিতে আর আমাকে ত্যাগ করিতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা [আঃ] যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নবূওয়াতের যুগ পেতেন, তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করিতেন। {১}

{১} হাসান : দারিমী ৪৩৫। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

১৯৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার কথা আল্লাহ্‌র কথাকে রহিত করিতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্‌র কথা আমার কথাকে রহিত করে। এছাড়া কুরআনের একঅংশ অপরাংশকে রহিত করে। {১}

{১} মাওযূ : দারাকুত্বনী ৪/১৪৫, যঈফুল জামি ৪২৭৫। কারণ এর সানাদে হিবরুন ইবনি নামে একজন রাবী রয়েছেন যাকে ঈমাম যাহাবী [রাহিমাহুল্লাহ] মিথ্যার অপবাদপ্রাপ্ত হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। হাফিয ইবনে হাজারও লিসানুল মিযান গ্রন্থে এ ব্যক্তিকে হাদিস জালকারী বলেছেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

১৯৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আমার কোন হাদিস অপর হাদিসকে রহিত করে; যেমন কুরআনের কোন অংশ অপর অংশকে রহিত করে। {১}

{১} মাওযূ : দারাকুত্বনী ৪/১৪৫। ইবনি হিব্বান বলেন, এর মধ্যে মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান বিলমানী এমন এক রাবী, যে তার পিতা থেকে প্রায় ২০০ হাদিসের একটি নুসখা [কপি] বর্ণনা করেছে। এর সব কটি হাদিসই মাওযূ জাল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস

১৯৭. আবু সালাবাহ্ আল খুশানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা কিছু জিনিসকে ফার্য হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন, সেগুলো ছেড়ে দিবে না। তিনি কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন সে [হারাম] কাজগুলো করিবে না। আর কতকগুলো [জিনিসের] সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন, সেগুলোর সীমালঙ্ঘন করিবে না। আর কিছু বিষয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নীরব রয়েছেন, সে সকল বিষয়ে বিতর্ক-বাহাসে লিপ্ত হবে না। উপরের তিনটি হাদিসই দারাকুত্বনী বর্ণনা করিয়াছেন। {১}

{১} হাসান : দারাকুত্বনী ৪/১৮৪ [ইবনি তাইমিয়াহ্ এর তাহকীফুল ঈমান]।এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply