ইসলামি নেতৃত্ব চাওয়া, খলীফাহ নিয়োগ, বাইআত হাদিস
ইসলামি নেতৃত্ব চাওয়া, খলীফাহ নিয়োগ, বাইআত হাদিস >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ২০, অনুচ্ছেদঃ ১-৯=৯টি
ইসলামি নেতৃত্ব চাওয়া, খলীফাহ নিয়োগ, বাইআত হাদিস
অনুচ্ছেদ-১ঃ নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রপ্রধাণের দায়িত্ব
অনুচ্ছেদ–২ঃ নেতৃত্ব চাওয়া
অনুচ্ছেদ-৩ঃ অন্ধ ব্যক্তির নেতৃত্ব সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৪ঃ মন্ত্রী নিয়োগ সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৫ঃ সমাজপতি সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৬ঃ সচিব নিয়োগ করা
অনুচ্ছেদ-৭ঃ যাকাত আদায়কারীর সওয়াব সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৮ঃ রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক তার পরবর্তী খলীফাহ নিয়োগ
অনুচ্ছেদ -৯ঃ বাইআত সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ–১ঃ নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রপ্রধাণের দায়িত্ব
২৯২৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেনঃ সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইতে হইবে। জনগণের শাসক তাহাদের দায়িত্বশীল। তাহাকে তাহাদের সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। পরিবারের কর্তা তার পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বশীল। তাহাকে তাহাদের সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার ও সস্তানদের দায়িত্বশীল। তাহাকে এর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইতে হইবে। ক্রীতদাস তার মনিবের সম্পদের রাখাল, তাহাকে এ সম্পর্কে জবাবদিহি করিতে হইবে। সুতরাং তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইতে হইবে।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–২ঃ নেতৃত্ব চাওয়া
২৯২৯. আবদুর রহমান ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বলিলেনঃ হে আবদুর রহমান ইবনি সামুরাহ! রাষ্ট্রীয় পদ চেয়ে নিবে না। কারণ তোমার চাওয়ার কারণে তোমাকে পদ দেয়া হলে এর দায়-দায়িত্ব তোমার উপরই বর্তাবে [তুমি আল্লাহর সাহায্য পাবে না]। আর চাওয়া ছাড়া তোমাকে নেতৃত্ব পদ দেয়া হলে তুমি দায়িত্ব পালনে [আল্লাহর পক্ষ হইতে] সাহায্য পাবে।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৯৩০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি দুইজন লোকের সাথে নাবী সাঃআঃ এর নিকট যাই। তাহাদের একজন তাশাহহুদ পড়ার পর বললো, আমরা আপনার কাছে এ উদ্দেশ্যে এসেছি যে আপনি আমাদেরকে আপনার প্রশাসনে কর্মচারী নিযুক্ত করে আমাদের সাহায্য করবেন। দ্বিতীয় ব্যক্তিও তার সাথীর অনুরূপ বললো। তিনি বলিলেনঃ তোমাদের মধ্যে ঐ লোক আমাদের দৃষ্টিতে বড় খিয়ানাতকারী যে পদ চেয়ে নেয়। অতঃপর আবু মূসা [রাদি.] নাবী সাঃআঃ-কে বলিলেন, তারা আপনার নিকট এ উদ্দেশ্যে এসেছে তা আমি জানতাম না। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী সাঃআঃ তাহাঁর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এদের কাছ থেকে কোনরূপ সহযোগিতা নেননি।
হাদিসের তাহকিকঃ মুনকার
অনুচ্ছেদ–৩ঃ অন্ধ ব্যক্তির নেতৃত্ব সম্পর্কে
২৯৩১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী সাঃআঃ ইবনি উম্মু মাকতূম [রাদি.]-কে দুইবার মাদীনাহ্তে নিজের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলেন।
সহীহঃ অনুরূপ গত হয়েছে [৫৯৫] ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৪ঃ মন্ত্রী নিয়োগ সম্পর্কে
২৯৩২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিয়াছেনঃ আল্লাহ কোন রাষ্ট্রপ্রধানের কল্যাণের ইচ্ছা করলে তার জন্য একজন সৎপন্থী মন্ত্রীর ব্যবস্থা করেন। রাষ্ট্রপ্রধান ভুল করলে সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তার স্মরণ থাকলে মন্ত্রী তাহাকে সহযোগিতা করেন। আর আল্লাহ তার অকল্যাণ চাইলে একজন খারাপ লোককে তার মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। সে [আল্লাহর নির্দেশ] ভুলে গেলে মন্ত্রী তাহাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না, আর তার স্মরণ থাকলে সে তাহাকে সহযোগিতা করে না।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ–৫ঃ সমাজপতি সম্পর্কে
২৯৩৩. আল-মিক্বদাদ ইবনি মাদিকারিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ তার কাঁধে হাত রেখে বলিলেনঃ হে কুদাইম! তুমি যদি মৃত্যু পর্যন্ত শাসক, সচিব এবং সমাজপতি না হও তাহলে তুমি নাজাত পাবে।
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [১০৫৫], মিশকাত [৩৭০২]।হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৩৪. গালিব আল-কাত্তান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি পর্যায়ক্রমে জনৈক ব্যক্তি, তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন, তারা কোন এক ঝর্ণার পাশে বাস করতো। তাহাদের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌছলে ঝর্ণার মালিক তার অধীনস্থ লোকদেরকে বলিলেন, তারা যদি ইসলাম কবুল করে তাহলে তিনি তাহাদেরকে একশো উট দিবেন। তারা ইসলাম কবুল করলো। ওয়াদা মোতাবেক তিনি তাহাদের মধ্যে উট বন্টন করে দিলেন। অতঃপর তিনি তাহাদের কাছ থেকে উটগুলো ফেরত নেয়ার ইচ্ছা করিলেন। তিনি তার ছেলেকে ডেকে নাবী সাঃআঃ এর নিকট পাঠালেন। তিনি তাহাকে বলে দিলেন, তুমি নাবী সাঃআঃ এর নিকট গিয়ে তাঁকে বলবে, আমার পিতা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ইসলাম কবুলের শর্তে একশো উট প্রদানের ওয়াদা করেছিলেন। তারা ইসলাম কবুল করলে তিনি উটগুলো তাহাদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। তিনি এখন তাহাদের কাছ থেকে উটগুলো ফেরত নিতে চাইছেন। তিনি কি এগুলো ফেরত নিতে পারেন, নাকি সেগুলো তাহাদেরই প্রাপ্য? তিনি তোমাকে হাঁ কিংবা না বললে তাঁকে আবার বলবে, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ এবং তিনিই ঐ কূপের তত্ত্বাবধায়ক। তিনি আপনার নিকট আবেদন করেছেন তার মৃত্যুর পর আমাকে সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক বানাতে। আর সে [ছেলেটি] রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এসে বললো, আমার পিতা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি সাঃআঃ বলিলেনঃ তোমার এবং তোমার পিতার প্রতি সালাম! সে বললো, আমার পিতা তার গোত্রের লোকদের ইসলাম কবুলের শর্তে একশো উট প্রদানের ওয়াদা করেন। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল করে তাহাদের ইসলামী জীবনকে সুন্দর করেছে। এখন তিনি উটগুলো তাহাদের কাছ থেকে ফেরত নিতে চাইছেন। সুতরাং তিনি এসবের হকদার নাকি তারা? তিনি বলিলেনঃ সে যদি উটগুলো তাহাদেরকেই দিয়ে দিতে চায় তবে তাই করুক। আর ফিরিয়ে নিতে চাইলে সে তাহাদের চেয়ে এর অধিক হকদার। তারা ইসলাম কবুল করে এর উপকারিতা তারাই পাবে। তারা যদি ইসলাম গ্রহণ না করতো তবে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাহাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হতো। সে পুনরায় বললো, আমার পিতা খুব বৃদ্ধ। তিনিই ওখানকার ঝর্ণার তত্ত্বাবধায়ক। তিনি তার অবর্তমানে আমাকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করিতে আপনার নিকট আবেদন জানিয়েছেন। জবাবে তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয় তত্ত্বাবধায়ক দরকার আছে। জনসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া চলে না। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক [পক্ষপাতিত্বের কারণে] জাহান্নামে যাবে।
দুর্বলঃ মিশকাত [৩৬৯৯]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৬ঃ সচিব নিয়োগ করা
২৯৩৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ এর আস্সিজিল্ল নামক এক সচিব ছিল।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৭ঃ যাকাত আদায়কারীর সওয়াব সম্পর্কে
২৯৩৬. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছিঃ সততার সাথে যাকাত আদায়কারী আল্লাহর পথে জিহাদকারী সমতুল্য যতক্ষণ না সে তার বাড়িতে ফিরে আসে।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৯৩৭. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছিঃ খাজনা আদায়কারীরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না।
দুর্বলঃ যয়ীফ আল-জামিউস সাগীর [৬৩৪১], মিশকাত [৩৭০৩]। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৩৮. ইবনি ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনগণের নিকট থেকে খাজনা আদায়কারীকে তহসিলদার বলা হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ মাক্বতু
অনুচ্ছেদ–৮ঃ রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক তার পরবর্তী খলীফাহ নিয়োগ
২৯৩৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমর [রাদি.] বলিলেন, আমি খলীফাহ নিযুক্ত করবো না। কারণ রসূলুল্লাহ সাঃআঃ খলীফাহ নিযুক্ত করে যাননি। তবে আমি খলীফাহ নিয়োগ করিতে পারি। যেহেতু আবু বকর [রাদি.] খলীফাহ নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! উমার [রাদি.] রসূলুল্লাহ সাঃআঃ ও আবু বকর [রাদি.] এর কথা উল্লেখ করাতে আমি বুঝতে পারি, তিনি উমার [রাদি.] কাউকে রসূলুল্লাহর সাঃআঃ সমকক্ষ মনে করার মত মানুষ নন এবং তিনি কাউকে খলীফাহ বানাবেন না।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ –৯ঃ বাইআত সম্পর্কে
২৯৪০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী সাঃআঃ এর নিকট শ্রবণ এবং আনুগত্যের বাইআত করেছি। তিনি আমাদেরকে বলিতেন, “তোমাদের সামর্থ্য অনুপাতে”।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৯৪১. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশাহ [রাদি.] তাহাকে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ কর্তৃক নারীদের বাইআত গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলিয়াছেন, নাবী সাঃআঃ কোন নারীকে নিজ হাতে স্পর্শ করিতেন না, শুধু তাহাদের থেকে ওয়াদা নিতেন। তিনি কোন নারী থেকে ওয়াদা নিলে এবং সে তাহাঁর আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি বলিতেনঃ তোমার কাছ থেকে বায়আত নিয়েছি, কাজেই এখন তুমি যেতে পারো।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৯৪২. আবদুল্লাহ ইবনি হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নাবী সাঃআঃ এর যুগ পান। তার মা যাইনাব বিনতু হুমাইদ [রাদি.] তাহাকে নিয়ে নাবী সাঃআঃ এর নিকট গিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর বাইআত নিন। রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেনঃ সে তো ছোট, পরে তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
ইসলামি নেতৃত্ব হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply