ইসতিনজা ও বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন

ইসতিনজা ও বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন

ইসতিনজা ও বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন >> আল হিদায়া ফিকহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিতাবঃ আল হিদায়া, পঞ্চম অনুচ্ছেদ – বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন

  1. পঞ্চম অনুচ্ছেদ – বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন
  2. পরিচ্ছেদ- ইসতিনজা

পঞ্চম অনুচ্ছেদ – বিভিন্ন নাজাসাত ও তা থেকে পবিত্রতা অর্জন

মুসল্লীর শরীর, তার কাপড় এবং নামাজ আদায়ের স্থান নাজাসাত থেকে পবিত্র করা ওয়াজিব। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন- তোমার বস্ত্রাদি পবিত্র করো।
এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-
প্রথমে তা চেছে নাও। তারপর রগড়িয়ে নাও, তারপর পানি দ্বারা তা ধুয়ে নাও। তার দাগ থেকে তোমার ক্ষতি হবে না।
কাপড়ের ক্ষেত্রে যখন পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব, তখন শরীর ও স্থানের ক্ষেত্রেও তা ওয়াজিব হবে। কেননা সালাতের অবস্থায় সবগুলো ব্যবহারে আসছে।

নাজাসাত থেকে পবিত্রতা অর্জন জাইয হবে পানি দ্বারা, এমন সকল তরল পদার্থ দ্বারা, যার মধ্য নাজাসাত দূর করা সম্ভব। যেমন সিরকা গোলাব জল ইত্যাদি, যা নিংড়ালে নিংড়ে পড়ে।
এটি ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আবূ ইউসূফের মত। আর ইমাম মুহাম্মদ, যুফার ও শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, পানি ছাড়া জাইয হবে না। কেননা প্রথম স্পর্শেই তা নাপাক হয়ে যায়। আর নাপাক জিনিসে পবিত্রতা অর্জন হয় না; তবে পানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনবশতঃ এই কিয়াস পরিহার করা হয়েছে।

বড় ইমামদ্বয়ের দলীল এই যে, তরল পদার্থ বিদূরণকারী। আর বিদূরণ ও পরিষ্করণের কারণেই তাহারাত অর্জিত হয়। আর মিশ্রিত হওয়ার কারণে নাপাকীর হুকুম আসে। সুতরাং হানীফা [রঃআঃ] এর মত এবং ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত দুটি রিওয়ায়াতের একটি। আর ইমাম আবূ ইউসূফের রিওয়ায়াত মতে উভয়ের মাঝে তিনি পার্খক্য করিয়াছেন। অর্থাত্ শরীরের ক্ষেত্রে পানি ছাড়া জাইয বলেননি।

মোজাতে যদি স্থূলশরীর বিশিষ্ট কোন নাজাসাত লাগে, যেমন গোবর, পায়খানা, রক্ত ও বীর্য আর তা শুকিয়ে যায় এরপর তা মাটি দ্বারা ঘষে নেয়। তাহলে জাইয হবে। এটা সূক্ষ কিয়াস। ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] বলেন, জাইয হবে না। এ-ই হলো সাধারণ কিয়াসের চাহিদা। তবে বিশেষভাবে শুক্র ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কেননা মোজাতে যা প্রবেশ করে, তাকে তো শুষ্কতা ও ঘসা দ্বারা দূর করতে পারে না। শুক্র এর ব্যতিক্রম। এ সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করবো।
বড় ইমামদ্বয় দলীল হলো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-

যদি মোজাদ্বয়ে কোন নাপাকি থাকে তা হলে উভয় দিকে মাটি দ্বারা মুছে ফেলবে। কেননা মাটি মোজাদ্বয়ের জন্য পবিত্রকারী।
তাছাড়া চামড়া শক্ত হওয়ার দরুন তাতে নাজাসাতের খুব সামান্য অংশই ঢুকতে পারে। পরে স্থূল নাজাসাত দূর হবে। তখন তার সাথে যুক্ত সে আর্দ্রতাও দূর হয়ে যাবে।
ভিজা নাজাসাতের ক্ষেত্রে ধোয়া ছাড়া জাইয হবে না। কেননা মাটি দিয়ে নাজাসাত প্রসারিত করিবে, তা পাক করিবে না।
আর ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, যদি তা মাটি দিয়ে এমনভাবে মুছে যে, নাজাসাতের চিহ্নই অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে তা পাক হয়ে যাবে। কারণ, এ ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটে থাকে আর তা উল্লিখিত হাদীছে শর্ত আরোপ করা হয়নি। আর এ মতের উপর আমাদের ফকীহগণের ফতওয়া রয়েছে।

আর যদি মোজায় পেশাব লাগে এবং শুকিয়ে যায় তাহলে তা ধোয়া ছাড়া জাইয হবে না। তদ্রুপ ঐ সমস্ত নাজাসাত, যার স্থূলতা নেই-যেমন, মদ। কেননা, নাজাসাতের অংশ মোজাতে শোষিত হয়ে যায়। আর তা চুষে তুলে আনার মত কোন চোষণকারী নেই। কারো কারো মতে তার সাথে লেগে থাকা ধূলঅ তার স্থূলতা হিসেবে গণ্য। কাপড় শুকিয়ে গেলেও ধোয়া ছাড়া যথেষ্ট হবে না। কেননা, কাপড় ফাক ফাক হওয়ার কারণে তাতে নাজাসাতের অংশ অধিক পরিমাণে প্রবেশ করে। সুতরাং ধোয়া ছাড়া তা বের হবে না।

শুক্র নাপাক; আর্দ্র অবস্থায় তা ধোয়া ওয়াজিব। যদি কাপড়ে শুকিয়ে যায় তাহলে রগড়িয়ে ফেললেও যথেষ্ট হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আইশা রাঃআঃ কে বলিয়াছেন- আর্দ্র হলে তা ধুয়ে ফেলো আর শুষ্ক হলে তা রগড়িয়ে ফেলো।
ইমাম শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, শুক্র পাক; আমাদের বর্ণিত হাদীস তাঁর বিপক্ষে দলীল।
তাছাড়া রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন, পাচটি জিনিস থেকে কাপড় ধুইয়ে নিতে হয়। তার মধ্যে তিনি শুক্র ও উল্লেখ করিয়াছে।।

শুক্র যদি শরীরে লাগে তাহলে আমাদের মাশায়েখগণ বলিয়াছেন, রগড়ালে তা পাক হয়ে যাবে। কেননা এ ধরনের ঘটনা আরো অধিক নাপাক।
আর ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, ধোয়া ছাড়া তা পাক হবে না। কেননা, শরীরের তা তা শোষণ করে নেয়। সুতরাং শোষিত অংশ শুষ্ক স্থলে ফিরে আসবে না। আর শরীরকে তো রগড়ানো সম্ভব নয়।
আয়না, তলোয়ার ইত্যাদিতে যদি নাজাসাত লেগে থাকে, তাহলে তা মুছে ফেলাই যথেষ্ট। কেননা নাজাসাত তাতে প্রবিষ্ট হয় না। আর তার উপরাংশে যা আছে, তা মোছার মাধ্যমেই বিদূরিত হয়ে যায়।

মাটিতে নাজাসাত লাগাবার পর যদি সে মাটি রোদের তাপে শুকিয়ে যায় এবং তার চিহ্ন চলে যায় তাহলে উক্ত স্থানে নামাজ আদায় করা জাইয হবে।
ইমাম যুফার ও শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, জাইয হবে না। কেননা, নাজাসাত দূরকারী কিছু পাওয়া যায়নি। এ জন্যই তো ঐ মাটি দ্বারা তায়াম্মুম জাইয নয়।
আমাদের দলীল এই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-শুষ্কতাই হলো ভূমির পবিত্রতা।

তবে তায়াম্মুম জাইয না হওয়ার কারণ এই যে, কিতাবুল্লাহর বাণী দ্বারা মাটির পবিত্রতার শর্ত সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং হাদীস দ্বারা যে মাটির পবিত্রতা প্রমাণিত হয়েছে, তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জিত হবে না।
রক্ত, পেশাব, মদ, মুরগীর পায়খানা, গাধার পেশাব ইত্যাদি গলীয নাজাসাত পরিমাণে এক দিরহাম বা তার কম হলে তা সহ নামাজ জাইয হবে। কিন্তু এর বেশী হলে জাইয হবে না।
ইমাম যুফার ও শাফিঈ [রঃআঃ] বলেন, অল্প নাজাসাত ও অধিক নাজাসাত সমান। কেননা পবিত্রতা ওয়াজিবকারী শরীআতের বাণী কোন পার্থক্য করেনি।

আমাদের দলীল এই যে, অল্প পরিমাণ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং তা ক্ষমাই। আর মল নির্গমন স্থলের উপর ভিত্তি করে দিরহামের পরিমাণ দ্বারা আমরা স্বল্পতার পরিমাণ নির্ধারণ করেছি।
বিশুদ্ধ মতে দিরহামের হিসাব করা হয়েছে আয়তনের দিক থেকে। অর্থাত্ হাতের তালুর মধ্যভাগ পরিমাণ। তবে ওযনের দিক থেকে বিবেচনা করার কথাও বর্ণিত আছে। অর্থাত্ বড় দিরহাম, যার ওজন এক মিছকাল [প্রায় পঁচিশ গ্রাম]। উভয় বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান প্রসংগে বলা হয়েছে যে, প্রথমটি হলো তরল নাজাসাতের ক্ষেত্রে আর দ্বিতীয়টি হলো গাঢ় নাজাসাতের ক্ষেত্রে। এ জিনিসগুলোর গলিজ নাজাসাত হওয়ার কারণ এই যে, তা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। আর নাজাসাত যদি লঘু হয়, যেমন হালাল পশুর পেশাব, তাহলে কাপড়ের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে নামাজ জাইয হবে।

তা ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নামাজ জাইয হওয়ার সর্বনিম্ন পরিমাণ কাপড়ের এক-চতুর্থাংশ। যেমন, লুংগী।
কোন কোন মতে কাপড়ের যে আংশে নাজাসাত লেগেছে, তার এক-চতুর্থাংশ। যেমন, আঁচল, কলি।
ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] থেকে এক বর্গ বিঘত পরিমাণ হলে নামাজ জাইয হবে না।
ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে ঐ কাপড়ে নামায জাইয হবে না। কেননা, গোবরের নাপাকী সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসের সাথে অন্য কোন হাদিসের বিরোধ নেই। হাদীসটি এই যে, নবী [সাঃআঃ] এক খণ্ড গোবর ছুড়েঁ বলেছিলেন- এটা নাপাকী। আর ইমাম সাহেবের মতে এতেই গলীয নাজাসাত প্রমাণিত হয়। আর বাণী বিরোধ দ্বারা লঘুত্ব প্রমাণিত হয়।
সাহেবাইন বলেন, অনেক বেশী পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত জাইয হবে। কেননা এ বিষয়ে ইজতিহাদের অবকাশ আছে, আর তাদের মতে এতেই লঘুত্ব প্রমাণিত হয়।
তাছাড়া রাস্তাঘাট গোবর ভরা থাকার কারনে তাতে [সম্পৃক্ত হওয়ার] প্রয়োজন রয়েছে। আর লঘুত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রয়োজনের প্রভাব স্বীকৃত। গাধার পেশাবের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা ভূমি তা শুষে নেয়। [সুতরাং তাতে প্রয়োজন নেই]।

আমরা বলি, প্রয়োজন [মূলতঃ] জুতার মধ্যে। আর হুকুম লঘু হওয়ার ব্যাপারে একবার তা ভূমিকা রেখেছে। সুতরাং মুছে নিলেই পাক হয়ে যায়। এতেই প্রয়োজনের দাবী পূর্ণ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে হালাল পশু ও হারাম পশুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু ইমাম যুফার [রঃআঃ] উভয়ের মাঝে পার্থক্য করিয়াছেন। অর্থাত্ হারাম পশুর ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর সাথে একমত পোষণ করিয়াছেন এবং হালাল পশুর ব্যাপারে ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর সঙ্গে একমত পোষণ করিয়াছেন। ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন রায় শহরে প্রবেশ করলেন এবং ব্যাপকভাবে লিপ্ততা দেখতে পেলেন, তখন তিনি অনেক বেশী পরিমাণও নামাজ আদায়ে বাধা হবে না বলে ফাতওয়া দিয়েছেন। মাশায়েখগণ এর উপর বুখারার [গোবর মিশ্রিত] কাদা মাটিকে কিয়াস করিয়াছেন। এখান থেকে মোজার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] পূর্ব শর্ত প্রত্যাহার করিয়াছেন বলে বর্ণনা করা হয়।

যদি কাপড়ের ঘোড়ার পেশাব লেগে যায় তাহলে আবূ হানীফা [রঃআঃ] ও আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে বেশী পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত তা কাপড় নষ্ট করে না। আর ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে বেশী পরিমাণ হলেও তা [নামাজ আদায়ে] বাধা সৃষ্টি করিবে না।
কেননা, তার মতে হালাল পশুর পেশাব পাক। ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে তা লঘু নাজাসাত। তার উভয়ের মতে তার গোশত হালাল। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফা [রঃআঃ] এর মতে তাতে লঘুত্ব এসেছে হাদিসের পরস্পর বিরোধের কারণে।

হারাম পাখীর পায়খানা যদি কাপড়ে দিরহাম পরিমাণের বেশী লেগে যায় তাহলে আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর মতে তাতে নামাজ জাইয হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে জাইয হবে না।
কারো কারো মতে এ মতপার্থক্য হলো নাজাসাতের ব্যাপারে আর কারো কারো মতে পরিমাণের ব্যাপারে। এটাই বিশুদ্ধতম মত।
ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] যুক্তি দিয়ে বলেন, লঘুত্ব আরোপ করা হয় প্রয়োজনের ভিত্তিতে। কিন্তু সাধারণত এদের মতে মেলামেশা না থাকার কারণে এখানে প্রয়োজন নেই। সুতরাং লঘুত্ব আরোপিত হবে না।

শায়খাইনের যুক্তি এই যে, পাখীরা শূন্য থেকে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। আর তা থেকে বেঁচে থাকা দুষ্কর। সুতরাং এ প্রেক্ষিতে প্রয়োজন সাব্যস্ত হয়েছে। যদি তা [হারাম পাখীর পায়খানা] পাত্রে পড়ে, তাহলে কোন কোন মতে তা পাত্রকে নষ্ট করে দিবে। আর কোন কোন মতে নষ্ট করিবে না। কেননা পাত্রাদি তা থেকে রক্ষা করা দুষ্কর।
যদি কাপড়ে মাছের রক্ত বা গাধা ও খচ্চরের লালা দিরহামের বেশী পরিমাণও লেগে যায়, তাহলে তাতে নামাজ দুরস্ত হবে। মাছের রক্তের ক্ষেত্রে কারণ এই যে, প্রকৃতপক্ষে তা রক্তই নয়। সুতরাং তা নাপাক হবে না। ইমাম আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, এক্ষেত্রে তিনি অত্যধিক পরিমাণের উপর নির্ভর করিয়াছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এটাকে তিনি নাজাসাত গণ্য করিয়াছেন।

গাধা ও খচ্চরের লালা সম্পর্কে কারণ এই যে, তা নাপাক হওয়ার ব্যাপারেই সন্দেহ রয়েছে। সুতরাং কোন পাক বস্তু তা দ্বারা নাপাক হতে পারে না।
যদি কাপড়ে সূচের মাথার মতো পেশাবের ছিটা এসে পড়ে তাহলে তা ধর্তব্য নয়। কেননা, তা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
নাজাসাত দুপ্রকার- দৃশ্য ও অদৃশ্য সুতরাং যে নাজাসাত দৃশ্য হয়, তা থেকে পবিত্রতা অর্জিত হবে নাজাসাতের মূল পদার্থ দূর হওয়া দ্বারা। কেননা নাজাসাত সত্ত্বাগতভাবে স্থানটিতে প্রবেশ করিয়াছে। সুতরাং তার সত্তা দূর হলে নাজাসাত বিদূরিত হবে। তবে দূর করা কষ্টকর, এমন দাগ থেকে গেলে দোষ নেই। কেননা, [শরীআতে] কষ্ট থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।

এ হুকুম ইংগিত করে যে, একবার ধোয়ার দ্বারাও যদি নাপাক পদার্থ দূর হয়ে যায় তাহলে পুনরায় ধোয়ার [তিনবার ধোয়ার] শর্ত নেই। অবশ্য এ সম্পর্কে [মাশায়াখদের] মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
আর যে নাজাসাত দৃশ্য নয় [যেমন, পেশাব ও মদ], তা থেকে তাহারাতের উপায় হলো এমনভাবে ধোয়া, যাতে ধৌতকারীর প্রবল ধারণা হয় যে, তা পাক হয়ে গেছে। কেননা নাপাকির নিষ্কাশনের জন্য [ধোয়ার ক্ষেত্রে] বারংবার অপরিহার্য। আর নাজাসাত দূরীভূত হওয়ার নিশ্চয়তা লাভ সম্ভব নয়। সুতরাং প্রবল ধারণাই হবে বিবেচ্য যেমন কিবলার মাসআলায় রয়েছে।

ফকীহ্গণ তিনবারের সীমা নির্ধারণ করিয়াছেন এ কারণে যে, তাতে [নিষ্কাশনের] প্রবল ধারণা লাভ হয়ে থাকে। সুতরাং সহজীকরণের লক্ষ্যে প্রকাশ্য কারণকে প্রবল ধারণার স্থলবর্তী করা হয়েছে। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়া সংক্রান্ত হাদীস দ্বারা এ মতামতের সমর্থন পাওয়া যায়। যাহিরী বর্ণনা মতে প্রতিবার ধোয়ার পর নিংড়ানো জরুরী। কেননা নিংড়ানোই [নাজাসাত] নিষ্কাশনকারী।

পরিচ্ছেদ- ইসতিনজা

ইসতিনজা হলো সুন্নত। কেননা নবী কারীম [সাঃআঃ] তা সর্বদা করিয়াছেন। আর তাতে পাথর ও এর গুণের স্থলবর্তী জিনিস ব্যবহার করা জাইয আছে। এর দ্বারা মুছে ফেলবে যাতে নাজাসাতের স্থানটি পরিষ্কার হয়ে যায়। কেননা পরিষ্কার হওয়াই হলো মূল উদ্দেশ্য। সুতরাং যা মূল উদ্দেশ্য, সেটাই বিবেচ্য হবে।
ইমাম শাফিঈ[রঃআঃ] বলেন, তিন সংখ্যা হওয়া জরুরী। কেননা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন- তোমাদের প্রত্যেকে যেন প্রতিটি পাথর দ্বারা ইসতিনজা করে

আমাদের দলীল এই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেন-
যে ব্যক্তি ইসতিনজায় পাথর ব্যবহার করিবে, সে যেন বেজোড় [অর্থাত্ তিন] সংখ্যা ব্যবহার করে। যে তা করলো, সে ভাল করলো। আর যে করল না, তার কোন ক্ষতি নেই।
শাফিঈ [রঃআঃ] যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তার বাহ্যিক অর্থ বর্জন করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করিয়াছেন- সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা উত্তমভাবে তাহারাত লাভ করা পছন্দ করে।
আলোচ্য আয়াত ঐ লোকদের শানে নাযিল হয়েছিলো, যারা পাথর ব্যবহারের পর পানি ব্যবহার করতো।
মোটকথা পানি ব্যবহার করা ইসতিনজা আদব। কারো কারো মতে আমাদের যুগে এটা সুন্নত। আর পানি ততক্ষণ ব্যবহার করতো, যতক্ষণ তার প্রবল ধারণা হয় যে, তা পাক হয়ে গেছে। কতবার হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কেউ খুতখুতে স্বভাবের হলে তার ক্ষেত্রে তিনবার এবং মতান্তরে সাতবার নির্ধারণ করা হবে।

নাজাসাত যদি নির্গমন স্থান থেকে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে পানি ছাড়া যথেষ্ট হবে না। কুদূরীর কোন কোন সংস্করণে এর পরিবর্তে রয়েছে। অর্থাত্ তরল পদার্থ ছাড়া যথেষ্টে হবে না। উভয় নুসখার এ পার্থক্য পানি ছাড়া [অন্য তরল পদার্থ দ্বারা] অংগ পাক করার ক্ষেত্রে ভিন্ন দুটি মত থাকা প্রমাণ করে।
পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এ জন্য যে, শুধু মোছা [নাজাসাত] দূরীভূত করে না। তবূও নাজাসাতের নির্গমন স্থানের ক্ষেত্রে [প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে] সেটাকে যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত হুকুমকে অন্যত্র প্রলম্বিত করা যাবে না।
আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ [রঃআঃ] এর নাজাসাতের মূল স্থান বাদ দিয়ে নামাযে বাধাদানকারী পরিমাণ বিবেচনা করা হবে। কেননা [শরীআতের বিধান মতেই] উক্ত স্থান ধর্তব্য হওয়া রহিত হয়ে গেছে।

ইমাম মুহাম্মদ [রঃআঃ] এর মতে অন্য সকল স্থানের উপর কিয়াস করে এখানেও নাজাসাতের স্থানসহ হিসাব করা হবে।
হাড়, ও শুকনো গোবর দ্বারা ইসতিনজা করিবে না। কেননা, নবী করিম [সাঃআঃ] তা করতে নিষেধ করিয়াছেন। আর যদি কেউ তা করে, তাহলে মূল উদ্দেশ্য হাছিল হওয়ার কারণে জাইয হয়ে যাবে। গোবরের ক্ষেত্রে নিষেধের কারণ তা নাপাক হওয়া। আর হাড়ের ক্ষেত্রে কারণ এই যে, তা জিন জাতির খাদ্য।
খাদ্যদ্রব্য দ্বারাও ইসতিনজা করিবে না। কেননা এটা খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করা এবং অপচয়ের শামিল।
ডান হাতেও ইসতিনজা করিবে না। কেননা নবী কারীম [সাঃআঃ] ডান হাতে ইসতিনজা করতে নিষেধ করিয়াছেন। আল হেদায়া কিতাব


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply