বুখারী শরীফ pdf download অধ্যায়- ইলম

বুখারী শরীফ pdf download অধ্যায়- ইলম

বুখারী শরীফ pdf download অধ্যায়- ইলম >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১ – ইলম, অধ্যায়ঃ (১-৫৩)=৫৩টি

অধ্যায়ঃ ৩/১. ইলমের ফাযীলাত।
অধ্যায়ঃ ৩/৩ উচ্চস্বরে ইলমের আলোচনা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪- মুহাদ্দিসের উক্তি: হাদ্দাসানা, আখবারানা ও আম্বাআনা।
অধ্যায়ঃ ৩/৫ শিষ্যদের জ্ঞান যাচাইয়ের উদ্দেশে শিক্ষকের কোন বিষয় উত্থাপন করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৬ হাদিস অধ্যয়ন ও মুহাদ্দিসের নিকট তা বর্ণনা করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৭ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।
অধ্যায়ঃ ৩/৮ মজলিসের শেষ প্রান্তে বসা এবং মজলিসের অভ্যন্তরে ফাঁক দেখে সেখানে বসা।
অধ্যায়ঃ ৩/৯ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী “যাদের নিকট হাদিস পৌঁছানো হয় তাঁদের মধ্যে অনেকে এমন রয়েছে, যে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক আয়ত্ত রাখতে পারে।
অধ্যায়ঃ ৩/১১ লোকজন যাতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে সে জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহতে ও ইলম শিক্ষাদানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।
৩/১০. বলা ও করার পূর্বে জ্ঞান আবশ্যক।
অধ্যায়ঃ ৩/১২ ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা
অধ্যায়ঃ ৩/১৩ আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।
অধ্যায়ঃ ৩/১৪ ইলমের ব্যাপারে সঠিক অনুধাবন
অধ্যায়ঃ ৩/১৫ ইলম ও হিকমাহ এর ক্ষেত্রে সমতুল্য হবার উৎসাহ
অধ্যায়ঃ ৩/১৬ সমুদ্রে খাযির (আঃ) এর নিকট মূসা (আঃ) এর গমন
অধ্যায়ঃ ৩/১৭ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর উক্তি “হে আল্লাহ! আপনি তাকে কিতাব শিক্ষা দিন”
অধ্যায়ঃ ৩/১৮ বালকদের কোন বয়সের কথা শোনা গ্রহণযোগ্য।
অধ্যায়ঃ ৩/১৯ জ্ঞান অন্বেষণের উদ্দেশ্যে বের হওয়া
অধ্যায়ঃ ৩/২০ ইলম অন্বেষণকানী ও ইলম প্রদানকারীর ফাযীলাত
অধ্যায়ঃ ৩/২১ ইলমের বিলুপ্তি ও মূর্খতার প্রসার
অধ্যায়ঃ ৩/২২ জ্ঞানের উপকারিতা
অধ্যায়ঃ ৩/২৩ প্রানী বা অন্য বাহনের উপর সওয়ারীর হয়ে দণ্ডায়মান অবস্থায় ফাতওয়া দেয়া।
অধ্যায়ঃ ৩/২৪ হাত ও মাথার ইঙ্গিতে ফাতাওয়ার জওয়াব দান
অধ্যায়ঃ ৩/২৫ আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলকে ঈমান ও ইলমের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরবর্তীদেরকে তা জানিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর উদ্ধুদ্ধকরণ।
অধ্যায়ঃ ৩/২৬ উদ্ভূত মাসআলার উদ্দেশে সফর করা এবং নিজের পরিজনদের শিক্ষা প্রদান।
অধ্যায়ঃ ৩/২৭ পালাক্রমে ইলম শিক্ষা করা।
অধ্যায়ঃ ৩/২৮ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে ওয়ায-নাসীহাত বা শিক্ষাপ্রদানের সময় রাগ করা।
অধ্যায়ঃ ৩/২৯ ইমাম বা মুহাদ্দিসের সামনে হাঁটু পেতে বসা
অধ্যায়ঃ ৩/৩০ ভালোভাবে বুঝানোর জন্য কোন কথা তিনবার বলা
অধ্যায়ঃ ৩/৩১ নিজের দাসী ও পরিবার পরিজনকে শিক্ষা প্রদান।
অধ্যায়ঃ ৩/৩২ আলিম কর্তৃক নারীদের উপদেশ প্রদান করা ও দীনী ইলম শিক্ষা প্রদান।
অধ্যায়ঃ ৩/৩৩ হাদিসের প্রতি লালসা।
অধ্যায়ঃ ৩/৩৪ কীভাবে (দ্বীনী) জ্ঞান তুলে নেয়া হইবে।
অধ্যায়ঃ ৩/৩৫. নারীদের জ্ঞান লাভের জন্য আলাদাভাবে দিন নির্ধারণ করা যায় কি?
অধ্যায়ঃ ৩/৩৬ কোন কথা শুনে না বুঝলে জানার জন্য পুনরাবৃত্তি করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৩৭ উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ইলম পৌঁছে দেয়।
অধ্যায়ঃ ৩/৩৮. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করার পাপ
অধ্যায়ঃ ৩/৩৯ ইলম লিপিবদ্ধ করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪০. রাতে ইল্‌ম শিক্ষাদান এবং ওয়ায-নাসীহাত করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪১. রাতে ইল্‌মের আলোচনা করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪২. ইলম আয়ত্ত করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৩. আলিমদের কথা শ্রবণের জন্য লোকদের চুপ করানো।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৪. আলিমের জন্য মুস্তাহাব এই যে, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? এ প্রশ্ন যখন তাঁকে করা হয় তখন তার উচিত এটা আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৫. আলিমের বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৬. কঙ্কর মারার সময় কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৭. আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী, তোমাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে অতি অল্পই।” (সূরা আল-ইসরা : ৮৫)
অধ্যায়ঃ ৩/৪৮. কোন কোন মুস্তাহাব কাজ এই আশঙ্কায় ছেড়ে দেয়া যে, কিছু কম মেধাবী লোকে ভুল বুঝতে পারে এবং তারা আরো অধিকতর বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে।
অধ্যায়ঃ ৩/৪৯. বুঝতে না পারার আশঙ্কায় ইলম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেয়া।
অধ্যায়ঃ ৩/৫০. ইল্‌ম শিক্ষা করিতে লজ্জাবোধ করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৫১. নিজে লজ্জা করলে অন্যকে দিয়ে প্রশ্ন করানো।
অধ্যায়ঃ ৩/৫২. মসজিদে ইলম ও ফতোয়া আলোচনা করা।
অধ্যায়ঃ ৩/৫৩. প্রশ্নকারীর প্রশ্নের চেয়ে বেশী উত্তর প্রদান

৩/১.  ইলমের ফাযীলাত।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার আল্লাহ তাআলা তাহাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তাহাদেরকেও (বাড়িয়ে দিবেন) যাদেরকে ইলম দেয়া হয়েছে। আর আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন- (সূরাহ্ আল-মুজাদালাহ্ ৫৮/১১)।

মহান আল্লাহর বাণীঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও। (সূরাহ্ তোয়াহা ২০/১১৪)

৫৯. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে জনসম্মুখে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে তাহাঁর নিকট জনৈক বেদুঈন এসে জিজ্ঞেস করিল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হইবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলিলেন, লোকটি যা বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেননি। আর কেউ কেউ বলিলেন বরং তিনি শুনতেই পাননি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষে বললেনঃ ক্বিয়ামাত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলিল, এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করিবে। সে বলিল, কিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়? তিনি বললেনঃ যখন কোন অনুপযুক্ত ব্যক্তির উপর কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তুমি কিয়ামতের অপেক্ষা করিবে। (৬৪৯৬) (আঃপ্রঃ ৫৭, ইঃফাঃ ৫৭)

অধ্যায়ঃ ৩/৩ উচ্চস্বরে ইলমের আলোচনা।

৬০. আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পিছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের নিকট পৌঁছলেন, এদিকে আমরা (আসরের) সালাত আদায় করিতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চৈস্বঃরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুকনো থাকার) জন্য জাহান্নামের আযাব রয়েছে। তিনি দুবার বা তিনবার এ কথা বলিলেন। (৯৬, ১৬৩; মুসলিম ২/৯ হাঃ ২৪১, আহমাদ ৬৮২৩) (আঃপ্রঃ ৫৮, ইঃফাঃ ৫৮)

অধ্যায়ঃ ৩/৪- মুহাদ্দিসের উক্তি: হাদ্দাসানা, আখবারানা ও আম্বাআনা।

হুমাইদী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ)-এর মতে حَدَّثَنَا وَأَخْبَرَنَا وَأَنْبَأَنَا وَسَمِعْتُ  একই অর্থবোধক। ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ) বলেন, حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন; আর তিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদীরূপে স্বীকৃত। শাকীক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন, سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَلِمَةً আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ উক্তি শুনিয়াছি…। হুযাইফাহ (রাঃআঃ) বলেন, حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ  حَدِيثَيْنِ  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দুটি হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। আবুল আলিয়াহ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন, يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم   নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি তাহাঁর রব থেকে বর্ণনা করেন…। আনাস (রাঃআঃ) বলেন, عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ  নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি বর্ণনা করেন তাহাঁর রব থেকে….। আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) বলেন, عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, তিনি তোমাদের মহিমাময় ও সুমহান প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন…।

৬১. ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেনঃ গাছগাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা ঝরে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ, তোমরা আমাকে অবগত কর সেটি কী গাছ? তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করিতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃআঃ) বলেন, আমার ধারণা হল, সেটা হইবে খেজুর গাছ। কিন্তু আমি (ছোট থাকার কারণে) তা বলিতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সহাবীগণ (রাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কী গাছ? তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে খেজুর গাছ। (৬২, ৭২, ১৩১, ২২০৯, ৪৬৯৮, ৫৪৪৪, ৫৪৪৮, ৬১২২, ৬১৪৪; মুসলিম ৫০/১৫ হাঃ ২৮১১, আহমাদ ৬৪৭৭) (আঃপ্রঃ ৫৯,ইঃফাঃ ৫৯)

অধ্যায়ঃ ৩/৫ শিষ্যদের জ্ঞান যাচাইয়ের উদ্দেশে শিক্ষকের কোন বিষয় উত্থাপন করা।

৬২. ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেনঃ গাছ-গাছালির মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যার পাতা ঝরে পড়ে না। আর তা মুসলিমের উদাহরণ। তোমরা আমাকে বল, সেটি কী গাছ? রাবী বলেন, তখন লোকেরা জঙ্গলের বিভিন্ন গাছ-গাছালির নাম ধারণা করিতে লাগল। আবদুল্লাহ (রাঃআঃ) বলেন, আমার ধারণা হল, সেটা হইবে খেজুর গাছ। কিন্তু আমি (ছোট থাকার কারণে) তা বলিতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। অতঃপর সহাবীগণ (রাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের বলে দিন সেটি কী গাছ? তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে খেজুর গাছ। (৬১) (আঃপ্রঃ ৬০, ইঃফাঃ ৬০)

অধ্যায়ঃ ৩/৬ হাদিস অধ্যয়ন ও মুহাদ্দিসের নিকট তা বর্ণনা করা।

হাসান (বসরী), সুফইয়ান সাউরী এবং মালিক (রহঃ)-এর মতে মুহাদ্দিসের সম্মুখে পাঠ করা বৈধ। কতিপয় মুহাদ্দিস উস্তাদের সামনে পাঠ করার স্বপক্ষে যিমাম ইবনু সালাবা (রাঃআঃ)-এর হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলেছিলেন, আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার সম্বন্ধে আল্লাহ্ আপনাকে কী নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রাবী বলেন, এগুলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে পাঠ করা। যিমাম (রাঃআঃ) তাহাঁর গোত্রের নিকট এ নির্দেশগুলো অবগত করেন এবং তাঁরা তা গ্রহণ করেন। (ইমাম) মালিক (রহঃ) তাহাঁর মতের সমর্থনে লিখিত দলীলকে প্রমাণ হিসেবে বর্ণনা করেন, যা লোকদের সামনে পাঠ করা হলে তারা বলে, অমুক আমাদের সাক্ষী বানিয়েছেন। শিক্ষকের সামনে পাঠ করে পাঠক বলে, অমুক আমাকে পড়িয়েছেন।

হাসান বসরী (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, শিক্ষকের সামনে শিষ্যদের পাঠ করাতে কোন দ্বিধা নেই। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) সুফইয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যখন মুহাদ্দিসের সম্মুখে (কোন হাদিস) পাঠ করা হয় তখন হাদ্দাসানী (তিনি আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন) বলায় কোন আপত্তি নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ আসিমকে মালিক ও সুফইয়ান (রহঃ) হতে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি যে, শিক্ষকের সামনে পাঠ করা এবং শিক্ষকের নিজে পাঠ করা একই পর্যায়ভুক্ত। (আঃপ্রঃ ৬১, ইঃফাঃ ৬১)

৬৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা মসজিদে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন জনৈক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় প্রবেশ করিল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে (বেঁধে) দিল। অতঃপর সহাবীদের লক্ষ্য করে বলিল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ ব্যক্তি? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাহাদের সামনেই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা বললাম, এই হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ফর্সা ব্যক্তিটিই হলেন তিনি।

অতঃপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলিল, হে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ আমি তোমার উত্তর দিচ্ছি? লোকটি বলিল, আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হব, এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হইবেন না। তিনি বলিলেন, তোমার যা মনে চায় জিজ্ঞেস কর।

সে বলিল, আমি আপনাকে স্বীয় প্রতিপালক এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতিপালকের শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আল্লাহ্ কি আপনাকে সমগ্র মানবকুলের প্রতি রাসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলিল, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলিল, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমাযান) সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলিল, আমি আপনাকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, আল্লাহ্ই কি আপনাকে আদেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে এসব সদাক্বাহ (যাকাত) আদায় করে দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করে দিতে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ সাক্ষী, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি বলিল, আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম আপনি যা (যে শরীআত) এনেছেন তার উপর। আর আমি আমার গোত্রের রেখে আসা লোকজনের পক্ষে প্রতিনিধি, আমার নাম যিমাম ইবনু সালাবা, বানী সাআদ ইবনু বক্র গোত্রের একজন।

মূসা ও আলী ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ)….আনাস (রাঃআঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ ৬২, ইঃফাঃ ৬২)

অধ্যায়ঃ ৩/৭ শায়খ কর্তৃক ছাত্রকে হাদিসের কিতাব প্রদান এবং আলিম কর্তৃক ইলমের কথা লিখে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ।

আনাস (রাঃআঃ) বলেন, উসমান (রাঃআঃ) কুরআনের বহু কপি তৈরি করিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ), ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ও মালিক (রহঃ) এটাকে জায়িয মনে করেন। কোন কোন হিজাযবাসী ছাত্রকে হাদিস বর্ণনার অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ হাদিস দিয়ে দলীল পেশ করেন যে, তিনি একটি সেনাদলের প্রধানকে একখানি পত্র দেন এবং তাঁকে বলে দেন, অমুক অমুক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত এটা পড়ো না। অতঃপর তিনি যখন সে স্থানে পৌঁছলেন, তখন লোকের সামনে তা পড়ে শোনান এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফরমান তাহাদেরকে জানান।

৬৪. আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে তাহাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরাইনের গভর্নর-এর নিকট তা পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর বাহরাইনের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর নিকট দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। (বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন) আমার ধারণা ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদের জন্য বদদুআ করেন যে, তাহাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। (২৯৩৯, ৪৪২৪, ৭২৬৪) (আঃপ্রঃ ৬৪, ইঃফাঃ ৬৪)

৬৫. আনাস ইবন মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা পত্র লিখলেন অথবা একখানা পত্র লিখতে ইচ্ছা পোষণ করিলেন। তখন তাঁকে বলা হল, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীলমোহর ব্যতীত কোন পত্র পাঠ করেনা। অতঃপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরি করিয়ে নিলেন যাতে খোদিত ছিল (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ)। আমি যেন তাহাঁর হাতে সে আংটির শুভ্রতা দেখিতে পাচ্ছি (শুবা (রহঃ) বলেন) আমি কাতাদাহ (রহঃ) কে বললাম, কে বলেছে যে, তার নকশা (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ) ছিল? তিনি বলিলেন, আনাস (রাঃআঃ)। (২৯৩৮, ৫৮৭০, ৫৮৭২, ৫৮৭৪, ৫৮৭৫, ৫৮৭৭, ৭১৬২; মুসলিম ৩৭/১২ হাঃ ২০৯২, আহমাদ ১২৯৪০) (আঃপ্রঃ ৬৫, ইঃফাঃ ৬৫)

অধ্যায়ঃ ৩/৮ মজলিসের শেষ প্রান্তে বসা এবং মজলিসের অভ্যন্তরে ফাঁক দেখে সেখানে বসা।

৬৬. আবূ ওয়াক্বিদ আল-লায়সী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে বসে ছিলেন; তাহাঁর সাথে আরও লোকজন ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনজন লোক আসলো। তন্মধ্যে দুজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে এগিয়ে আসলেন এবং একজন চলে গেলেন। আবূ ওয়াকিদ (রাঃআঃ) বলেন, তাঁরা দুজন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তাঁদের একজন মাজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাহাদের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হলেন (সহাবীদের লক্ষ্য করে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাহাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করিল, আল্লাহ্ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করিল, তাই আল্লাহ্ও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করিলেন। আর অপরজন (মাজলিসে হাযির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাই আল্লাহ্ও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (৪৭৪; মুসলিম ৩৯/১০ হাঃ ৬১৭৬, আহমাদ ২১৯৬৬) (আঃপ্রঃ ৬৬, ইঃফাঃ ৬৬)

অধ্যায়ঃ ৩/৯ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী “যাদের নিকট হাদিস পৌঁছানো হয় তাঁদের মধ্যে অনেকে এমন রয়েছে, যে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক আয়ত্ত রাখতে পারে।

৬৭. আবূ বাকরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন, (মিনায়) তিনি তাহাঁর উটের উপর উপবেশন করিলেন। জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তিনি বললেনঃ এটা কোন্ দিন? আমরা চুপ করে রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এ দিনটির আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, জি হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেসঃ এটা কোন্ মাস? আমরা নীরব রইলাম আর ধারণা করলাম যে, অচিরেই তিনি এর আলাদা কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, জী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের জন্য হারাম, যেমন আজকের তোমাদের এ দিন, তোমাদের এ মাস, তোমাদের এ শহর মর্যাদা সম্পন্ন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা (আমার এ বাণী) যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব কথা পৌঁছে দেয়। কারণ উপস্থিত ব্যক্তি সম্ভবত এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছাবে, যে এ বাণীকে তার চেয়ে অধিক আয়ত্তে রাখতে পারবে। (১০৫, ১৭৪১, ৩১৯৭, ৪৪০৬, ৪৬৬২, ৫৫৫০, ৭০৭৮, ৭৪৪৭; মুসলিম ২৮/৯ হাঃ ১৬৭৯, আহমাদ ২০৪০৮) (আঃপ্রঃ ৬৭, ইঃফাঃ ৬৭)

অধ্যায়ঃ ৩/১১ লোকজন যাতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে সে জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহতে ও ইলম শিক্ষাদানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।

৩/১০.  বলা ও করার পূর্বে জ্ঞান আবশ্যক।

মহা মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ সুতরাং জেনে রাখ, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। আল্লাহ্ ইলম দ্বারা আরম্ভ করিয়াছেন।

আলিমগণই নাবীগণের উত্তরাধিকারী। তাঁরা জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হয়েছেন। যে জ্ঞান অর্জন করে সে বিরাট অংশ লাভ করে। আর যে ব্যক্তি ইল্ম অর্জনের জন্য পথ চলে, আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমগণই তাঁকে ভয় করে- (সূরাহ্ ফাতির ৩৫/২৮)। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ আলিমগণ ব্যতীত তা কেউ অনুধাবন করে না- (সূরাহ্ আল-আনকাবুত ২৯/৩৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ তারা বলবে, আমরা যদি শুনতাম অথবা উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না- (সূরাহ্ মুল্ক ৬৭/১০)। অন্যত্র তিনি বলেনঃ বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? (সূরাহ্ যুমার ৩৯/৯)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ্ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের ইল্ম দান করেন। আর অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়। আবূ যার (রাঃআঃ) তাহাঁর ঘাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, যদি তোমরা এখানে তরবারী রাখ, অতঃপর আমি বুঝতে পারি যে, তোমরা সে তরবারী আমার উপর চালাবার পূর্বে আমি একটু কথা বলার সুযোগ পাব, তবে আমি যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনিয়াছি, অবশ্যই তা বলে ফেলব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেন, كُونُوا رَبَّانِيِّينَ তোমরা রববানী হও। (সূরাহ আলু ইমরানঃ ৩/৭৯)। এখানে  رَبَّانِيِّينَ অর্থ প্রজ্ঞাবান, আলিম ও ফকীহগণ। আরো বলা হয়  رَبَّانِيসে ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি মানুষকে জ্ঞানের বড় বড় বিষয়ের পূর্বে ছোট ছোট বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

৬৮. ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট দিনে নাসীহাত করিতেন, আমরা যাতে বিরক্ত বোধ না করি। (৭০,৬৪১১; মুসলিম ৫০/১৯ হাঃ ২৮২১, আহমাদ ৪০৬০) (আঃপ্রঃ ৬৮, ইঃফাঃ ৬৮)

অধ্যায়ঃ ৩/১১ লোকজন যাতে বিরক্ত না হয়ে পড়ে সে জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহতে ও ইলম শিক্ষাদানে উপযুক্ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।

৬৯. আনাস (রাঃআঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না। (৬১২৫; মুসলিম ৩২/৩ হাঃ ১৭৩৪, আহমাদ ১৩১৭৪) (আঃপ্রঃ ৬৯, .ফা. ৬৯)

অধ্যায়ঃ ৩/১২ ইলম শিক্ষার্থীদের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা

৭০. আবূ ওয়াইল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের নাসীহাত করিতেন। তাঁকে একজন বলিল, হে আবূ আবদুর রহমান! আমার ইচ্ছা জাগে, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নাসীহাত করেন। তিনি বললেনঃ এ কাজ থেকে আমাকে যা বাধা দেয় তা হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে ক্লান্ত করিতে পছন্দ করি না। আর আমি নাসীহাত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি খেয়াল রাখি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্লান্তির আশংকায় আমাদের প্রতি যেমন লক্ষ্য রাখতেন। (৬৮) (আঃপ্রঃ ৭০, ইঃফাঃ ৭০)

অধ্যায়ঃ ৩/১৩ আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।

৭১. হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মুআবিয়াহ (রাঃআঃ)-কে খুৎবায় বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকিবে, বিরোধিতাকারীরা তাহাদের কোন ক্ষতি করিতে পারবে না। (৩১১৬, ৩৬৪১,৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম ১২/৩৩ হাঃ ১০৩৭, আহমাদ ১৬৮৪৯, ১৬৮৭৮, ১৬৯১০) (আঃপ্রঃ ৭১, ইঃফাঃ ৭১)

অধ্যায়ঃ ৩/১৪ ইলমের ব্যাপারে সঠিক অনুধাবন

৭২. মুজাহিদ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সফরে মদিনা পর্যন্ত ইবনু উমার (রাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় তাঁকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একটি মাত্র হাদিস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, আমরা একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলাম। তখন তাহাঁর নিকট খেজুর গাছের (অভ্যন্তরের কোমল অংশ) মাথি আনা হল। অতঃপর তিনি বললেনঃ বৃক্ষরাজির মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ রয়েছে, যার দৃষ্টান্ত মুসলিমের ন্যায়। তখন আমি বলিতে চাইলাম যে, তা হল খেজুর বৃক্ষ, কিন্তু আমি লোকদের মাঝে বয়সে সবচাইতে ছোট ছিলাম। তাই নীরব থাকলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেটা হলো খেজুর বৃক্ষ। (৬১) (আঃপ্রঃ ৭২, ইঃফাঃ ৭২)

অধ্যায়ঃ ৩/১৫ ইলম ও হিকমাহ এর ক্ষেত্রে সমতুল্য হবার উৎসাহ

উমার (রাঃআঃ) বলেন, তোমরা নেতা হবার পূর্বেই জ্ঞানার্জন করে নাও। আবূ আবদুল্লাহ্ (বুখারী) বলেন, আর নেতা বানিয়ে দেয়ার পরও, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহাবীগণ বৃদ্ধ বয়সেও ইল্ম অর্জন করিয়াছেন।

৭৩. ক্বায়স বিন হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবল দুটি বিষয়ে ইর্ষা করা বৈধ; (১) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে বৈধ পন্থায় অকাতরে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; (২) সে ব্যক্তির উপর, যাকে আল্লাহ্ তাআলা প্রজ্ঞা দান করিয়াছেন, অতঃপর সে তার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করে ও তা অন্যকে শিক্ষা দেয়। (১৪০৯,৭১৪১,৭৩১৬; মুসলিম ৬/৪৭ হাঃ ৮১৬, আহমাদ ৩৪৫১) (আঃপ্রঃ ৭৩, ইঃফাঃ ৭৩)

অধ্যায়ঃ ৩/১৬ সমুদ্রে খাযির (আঃ) এর নিকট মূসা (আঃ) এর গমন

وَقَوْلِهِ تَعَالَى )هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا(

আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ আমি কি আপনার অনুসরণ করব এ শর্তে যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দেয়া হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন। (সূরাহ্ কাহ্ফ ১৮/৬৬)

৭৪. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল-ফাযারীর মধ্যে মূসা (আ)-এর সম্পর্কে বাদানুবাদ হলো। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলিলেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাহাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইব্ন কাব (রাঃআঃ) যাচ্ছিলেন। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মূসা (আ)-এর সেই সহচর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছি যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আ) আল্লাহর নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন- আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাহাঁর সম্পর্কে কিছু বলিতে শুনেছেন কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি,

একদা মূসা (আ) বানী ইসরাঈলের কোন এক মাজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাহাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে মনে করেন কি? মূসা (আ) বলিলেন, না। তখন আল্লাহ্ তাআলা মূসা (আ)-এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর। অতঃপর মূসা (আ) তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পথের সন্ধান চাইলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা মাছকে তার জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে যাবে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাহাঁর সাথে মিলিত হইবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিদর্শন অনুসরণ করিতে লাগলেন। মূসা (আ)-কে তাহাঁর সঙ্গী যুবক (ইউশা ইবনু নূন) বলিলেন,

(কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ) আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন আমরা যখন পাথরের নিকট বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মূসা বলিলেন, আমরা তো সেটিরই সন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদ চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চলল। (সূরাহ্ কাহ্ফ ১৮/৬৩-৬৪)

তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাহাদের ঘটনা সেটাই, যা আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর কিতাবে বিবৃত করিয়াছেন। (২২৬৭, ২৭২৮, ৩২৭৮, ৩৪০০,৩৪০১, ৪৭২৫, ৪৭২৬, ৪৭২৭, ৬৬৭২, ৭৪৭৮) (আঃপ্রঃ ৭৪, ইঃফাঃ ৭৪)

অধ্যায়ঃ ৩/১৭ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর উক্তি “হে আল্লাহ! আপনি তাকে কিতাব শিক্ষা দিন”

৭৫. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জাপটে ধরে বলিলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাবের (কুরআন) জ্ঞান দান করুন। (১৪৩, ৩৭৫৬, ৭২৭০; মুসলিম ৪৪/৩০ হাঃ ২৪৭৭, আহমাদ ২৩৯৭, ২৮৮১, ৩০২৩) (আঃপ্রঃ ৭৫, ইঃফাঃ ৭৫)

অধ্যায়ঃ ৩/১৮ বালকদের কোন বয়সের কথা শোনা গ্রহণযোগ্য।

৭৬. আবদুল্লাহ্ ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একদা একটি গাধীর উপর আরোহিত অবস্থায় এলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মিনায় সালাত আদায় করছিলেন তার সামনে কোন দেয়াল না রেখেই। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম এবং গাধীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারের ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করেননি। (৪৯৩, ৮৬১, ১৮৫৭, ৪৪১২; মুসলিম ৪/৪৭ হাঃ ৫০৪, আহমাদ ১৮৯১) (আঃপ্রঃ ৭৬, ইঃফাঃ ৭৬)

৭৭. মাহমূদ ইবনুর-রাবী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বালতি থেকে পানি নিয়ে আমার মুখমন্ডলের উপর কুলি করে দিয়েছিলেন, তখন আমি ছিলাম পাঁচ বছরের বালক। (১৮৯, ৮৩৯, ১১৮৫, ৬৩৫৪, ৬৪২২ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ৭৭, ইঃফাঃ ৭৭)

অধ্যায়ঃ ৩/১৯ জ্ঞান অন্বেষণের উদ্দেশ্যে বের হওয়া

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) একটি মাত্র হাদিসের জন্য আব্দুল্লাহ্ ইবনু উনায়স (রাঃআঃ)-এর নিকট এক মাসের পথ সফর করে গিয়েছিলেন।


৭৮. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি এবং হুর ইবনু কায়স ইবনু হিসন আল-ফাযারীর মধ্যে মূসা (আ)-এর সম্পর্কে বাদানুবাদ হলো। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলিলেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাহাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইব্ন কাব (রাঃআঃ) যাচ্ছিলেন। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেনঃ আমি ও আমার এ ভাই মূসা (আ)-এর সেই সহচর সম্পর্কে বাদানুবাদ করছি যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা (আ) আল্লাহর নিকট পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাহাঁর সম্পর্কে কিছু বলিতে শুনেছেন কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা মূসা (আ) বানী ইসরাঈলের কোন এক মাজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাহাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে মনে করেন কি? মূসা (আ) বলিলেন, না। তখন আল্লাহ্ তাআলা মূসা (আ)-এর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর। অতঃপর মূসা (আ) তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য পথের সন্ধান চাইলেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা মাছকে তার জন্য নিদর্শন বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে যাবে। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি তাহাঁর সাথে মিলিত হইবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের নিদর্শন অনুসরণ করিতে লাগলেন। মূসা (আ)-কে তাহাঁর সঙ্গী যুবক (ইউশা ইবনু নূন) বলিলেন, (কুরআন মজীদের ভাষায়ঃ) আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন আমরা যখন পাথরের নিকট বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তানই তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মূসা বলিলেন, আমরা তো সেটিরই সন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের পদ চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চলল। (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/৬৩-৬৪)

তাঁরা খিযরকে পেলেন। এ হল তাহাদের দুজনের ঘটনা, যা আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর কিতাবে বিবৃত করিয়াছেন। (৭৪) (আঃপ্রঃ ৭৮, ইঃফাঃ ৭৮)

অধ্যায়ঃ ৩/২০ ইলম অন্বেষণকানী ও ইলম প্রদানকারীর ফাযীলাত

৭৯. আবূ মূসা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত হল যমীনের উপর পতিত প্রবল বর্ষণের ন্যায়। কোন কোন ভূমি থাকে উর্বর যা সে পানি শুষে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘাসপাতা এবং সবুজ তরুলতা উৎপাদন করে। আর কোন কোন ভূমি থাকে কঠিন যা পানি আটকে রাখে। পরে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে মানুষের উপকার করেন; তারা নিজেরা পান করে ও (পশুপালকে) পান করায় এবং তা দ্বারা চাষাবাদ করে। আবার কোন কোন জমি রয়েছে যা একেবারে মসৃণ ও সমতল; তা না পানি আটকে রাখে, আর না কোন ঘাসপাতা উৎপাদন করে। এই হল সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ্ তাআলা আমাকে যা দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন তাতে সে উপকৃত হয়। ফলে সে নিজে শিক্ষা করে এবং অপরকে শিখায়। আর সে ব্যক্তিরও দৃষ্টান্ত- যে সে দিকে মাথা তুলে দেখে না এবং আল্লাহর যে হিদায়াত নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তা গ্রহণও করে না।

আবূ আবদুল্লাহ্ (বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ইসহাক (রহঃ) আবূ উসামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি قلت এর স্থলে قَيَّلَتْ  (আটকিয়ে রাখে) ব্যবহার করিয়াছেন। قاع হল এমন ভূমি যার উপর পানি জমে থাকে। আর الصَّفْصَفُ হল সমতল ভূমি। (মুসলিম ৪৩/৫ হাঃ ২২৮২, আহমাদ ১৯৫৯০) (আঃপ্রঃ ৭৯, ইঃফাঃ ৭৯)

অধ্যায়ঃ ৩/২১ ইলমের বিলুপ্তি ও মূর্খতার প্রসার

রাবীআহ (রহঃ) বলেন, যার নিকট সামান্য জ্ঞান আছে, তার উচিত নয় নিজেকে অপমানিত করা

৮০. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামাতের কিছু আলামত হলঃ ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসারতা লাভ করিবে, মদপানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা ব্যভিচার বিস্তার লাভ করিবে। (৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮; মুসলিম ৪৭/৪ হাঃ ২৬৭১, আহমাদ ১৩০৯৩, ১৪০৮০) (আঃপ্রঃ ৮০, ইঃফাঃ ৮০)

৮১. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন একটি হাদিস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা করিবে না। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কিয়ামতের কিছু আলামাত হলঃ ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হইবে পরিচালক। (৮০) (আঃপ্রঃ ৮১, ইঃফাঃ ৮১)

অধ্যায়ঃ ৩/২২ জ্ঞানের উপকারিতা

৮২. ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম। তখন (স্বপ্নে) আমার নিকট এক পিয়ালা দুধ নিয়ে আসা হল। আমি তা পান করলাম। এমনকি আমার মনে হতে লাগল যে, সে পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অবশিষ্টাংশ আমি উমার ইবনুল-খাত্তাবকে দিলাম। সহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এ স্বপ্নের কী ব্যাখ্যা করেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তা হল আল-ইলম। (৩৬৮১,৭০০৬,৭০০৭,৭০২৭,৭০৩২; মুসলিম ৪৩/২ হাঃ ২৩৯১, আহমাদ ৫৫৫৫) (আঃপ্রঃ ৮২, ইঃফাঃ ৮২)

অধ্যায়ঃ ৩/২৩ প্রানী বা অন্য বাহনের উপর সওয়ারীর হয়ে দণ্ডায়মান অবস্থায় ফাতওয়া দেয়া।

৮৩. আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের দিবসে মিনায় লোকদের সম্মুখে (বাহনের উপর) দাঁড়ালেন। লোকেরা তাঁকে বিভিন্ন মাসআলা জিজ্ঞেস করছিল। জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে বলিল, আমি ভুলক্রমে কুরবানীর পূর্বেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ কর, কোন ক্ষতি নেই। আর এক ব্যক্তি এসে বলিল, আমি ভুলক্রমে কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কঙ্কর ছুঁড়ো, কোন অসুবিধে নেই। আবদুল্লাহ্ ইবনু আমার (রাঃআঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন পূর্বে বা পরে করা যে কোন কাজ সম্পর্কেই জিজ্ঞাসিত হচ্ছিলেন, তিনি এ কথাই বলেছিলেনঃ কর, কোন ক্ষতি নেই।* (১২৪,১৭৩৬,১৭৩৭,১৭৩৮,৬৬৬৫; মুসলিম ১৫/৫৭ হাঃ ১৩০৬, আহমাদ ৬৪৯৯) (আঃপ্রঃ ৮৩, ইঃফাঃ ৮৩)

* হানাফি মাযহাব মতে কাফফারা দিতে হইবে কিন্তু এর কোন সহিহ হাদিসভিত্তিক দলিল নেই। বরং এটা হাদিস বিরোধী মত।

অধ্যায়ঃ ৩/২৪ হাত ও মাথার ইঙ্গিতে ফাতাওয়ার জওয়াব দান

৮৪. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। হাজ্জের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসিত হলেন। কোন একজন বলিলঃ আমি কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই যবেহ (কুরবানী) করে ফেলেছি। ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেন, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেনঃ কোন অসুবিধে নেই। আর এক ব্যক্তি বলিলঃ আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলেছি। তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেনঃ কোন ক্ষতি নেই। (১৭২১, ১৭২২, ১৭২৩, ১৭৩৪, ৬৬৬৬ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ৮৪, ইঃফাঃ ৮৪)

৮৫. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (শেষ যামানায়) ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হইবে, অজ্ঞতা ও ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং হার্জ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! হার্জ কী? তিনি হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেনঃ এ রকম। যেন তিনি এর দ্বারা হত্যা বুঝিয়েছিলেন। (১০৩৬, ১৪১২, ৩৬০৮, ৪৬৩৫, ৬০৩৭, ৬৫০৬, ৬৯৩৫, ৭০৬১, ৭১১৫, ৭১২১) (আঃপ্রঃ ৮৫, ইঃফাঃ ৮৫)

৮৬. আসমা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃআঃ)-র নিকট আসলাম, তিনি তখন সালাত রত ছিলেন। আমি বললাম, মানুষের কী হয়েছে? তিনি আকাশের দিকে ইঙ্গিত করিলেন (সূর্য গ্রহণ লেগেছে)। তখন সকল লোক (সালাতুল কুসূফ এর জন্য) দাঁড়িয়ে রয়েছে। আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর আমি (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি (দীর্ঘতার কারণে) আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হল। তাই আমি মাথায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর হাম্দ ও সানা পাঠ করিলেন। অতঃপর বললেনঃ যা কিছু আমাকে ইতোপূর্বে দেখানো হয়নি, তা আমি আমার এ স্থানেই দেখিতে পেয়েছি। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামও। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা আমার নিকট ওয়াহী প্রেরণ করিলেন, দাজ্জালের ন্যায় (কঠিন) পরীক্ষা অথবা তার কাছাকাছি বিপদ দিয়ে তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষায় ফেলা হইবে।

ফাতিমাহ (রাঃআঃ) বলেন, আসমা (রাঃআঃ) مثل (অনুরূপ) শব্দ বলেছিলেন, قريب (কাছাকাছি) শব্দ, তা ঠিক আমার স্মরণ নেই। (কবরের মধ্যে) বলা হইবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান? তখন মুমিন ব্যক্তি বা মুকিন (বিশ্বাসী) ব্যক্তি (ফাতিমাহ (রাঃআঃ) বলেন) আসমা (রাঃআঃ) এর কোন্ শব্দটি বলেছিলেন আমি জানিনা), বলবে, তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি আল্লাহর রাসূল। আমাদের নিকট মুজিযা ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তা গ্রহণ করেছিলাম এবং তাহাঁর ইততিবা করেছিলাম। তিনি মুহাম্মাদ। তিনবার এরূপ বলবে। তখন তাকে বলা হইবে, আরামে ঘুমিয়ে থাক, আমরা জানতে পারলাম যে, তুমি (দুনিয়ায়) তাহাঁর উপর বিশ্বাসী ছিলে। আর মুনাফিক অথবা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) ফাতিমাহ বলেন, আসমা কোনটি বলেছিলেন, আমি ঠিক মনে করিতে পারছি না- বলবে, আমি কিছুই জানি না। মানুষকে (তাহাঁর সম্পর্কে) যা বলিতে শুনিয়াছি, আমিও তাই বলেছি। (১৮৪, ৯২২, ১০৫৩, ১০৫৪, ১০৬১, ১২৩৫, ১৩৭৩, ২৫১৯, ২৫২০, ৭২৮৭; মুসলিম ১০/২ হাঃ ৯০৫, আহমাদ ২৬৯৯১) (আঃপ্রঃ ৮৬, ইঃফাঃ ৮৬)

অধ্যায়ঃ ৩/২৫ আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলকে ঈমান ও ইলমের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরবর্তীদেরকে তা জানিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর উদ্ধুদ্ধকরণ।

মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃআঃ) বলেন, নাবী (সঃ) আমাদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের গোত্রের নিকট ফিরে যাও এবং তাহাদেরকে শিক্ষা দাও।

৮৭. আবূ জামরাহ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃআঃ) ও লোকদের মধ্যে ভাষান্তরের কাজ করতাম। একদা ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলিলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তোমরা কোন্ প্রতিনিধি দল? অথবা বললেনঃ তোমরা কোন্ গোত্রের? তারা বলিল, রাবীআহ গোত্রের। তিনি বললেনঃ স্বাগতম। এ গোত্রের প্রতি অথবা এ প্রতিনিধি দলের প্রতি, এরা কোনরূপ অপদস্থ ও লাঞ্ছিত না হয়েই এসেছে। তারা বলিল, আমরা বহু দূর হতে আপনার নিকট এসেছি। আর আমাদের ও আপনার মধ্যে রয়েছে কাফিরদের এই মুযার গোত্রের বাস। আমরা নিষিদ্ধ মাস ব্যতীত আপনার নিকট আসতে সক্ষম নই। সুতরাং আমাদের এমন কিছু নির্দেশ দিন, যা আমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাহাদের নিকট পৌঁছাতে এবং তার ওয়াসীলায় আমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারি। তখন তিনি তাহাদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ থেকে নিষেধ করিলেন। তাহাদের এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনের আদেশ করিলেন। তিনি বললেনঃ এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন কীরূপে হয় জান? তারা বলিলঃ আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তা হল এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা এবং রমাযান-এর সিয়াম পালন করা আর তোমরা গনীমাতের মাল থেকে এক-পঞ্চমাংশ দান করিবে। আর তাহাদের নিষেধ করিলেন শুকনো কদুর খোল, সবুজ কলস এবং আলকাতরা দ্বারা রঙ করা পাত্র ব্যবহার করিতে। শুবা বলেন, কখনও (আবূ জামরা) খেজুর গাছ থেকে তৈরি পাত্রের কথাও বলেছেন আবার তিনি কখনও النَّقِيرِ -এর স্থলে الْمُقَيَّرِ বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এগুলো মনোযোগ সহকারে স্মরণ রাখ এবং তোমাদের পশ্চাতে যারা রয়েছে তাহাদের নিকট পৌঁছে দাও। (৫৩) (আঃপ্রঃ ৮৭, ইঃফাঃ ৮৭)

অধ্যায়ঃ ৩/২৬ উদ্ভূত মাসআলার উদ্দেশে সফর করা এবং নিজের পরিজনদের শিক্ষা প্রদান।

৮৮. উকবাহ ইবনুল হারিস (রাঃআঃ) বর্ণনা করেন, তিনি আবূ ইহাব ইবনু আযীয (রাঃআঃ)-এর কন্যাকে বিয়ে করলে তাহাঁর নিকট জনৈকা স্ত্রীলোক এসে বলিল, আমি উকবাহ (রাঃআঃ)-কে এবং সে যাকে বিয়ে করেছে তাকে (আবূ ইহাবের কন্যাকে) দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ তাকে বলিলেন আমি জানি না তুমি আমাকে দুধ পান করিয়েছ, আর (ইতোপূর্বে) তুমি আমাকে একথা জানাও নি। অতঃপর তিনি মদিনা্য় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কথার পর তুমি কীভাবে তার সঙ্গে সংসার করিবে? অতঃপর উকবাহ তাহাঁর স্ত্রীকে আলাদা করে দিলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। (২০৫২, ২৬৪০, ২৬৫৯, ২৬৬০, ৫১০৪) (আঃপ্রঃ ৮৮, ইঃফাঃ ৮৮)

অধ্যায়ঃ ৩/২৭ পালাক্রমে ইলম শিক্ষা করা।

৮৯. উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী বনি উমাইয়াহ ইবনু যায়দের মহল্লায় বাস করতাম। এ মহল্লাটি ছিল মদিনার উঁচু এলাকায় অবস্থিত। আমরা দুজনে পালাক্রমে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হতাম। তিনি একদিন আসতেন আর আমি একদিন আসতাম। আমি যেদিন আসতাম, সেদিনের ওয়াহী প্রভৃতির খবর নিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিতাম। আর তিনি যেদিন আসতেন সেদিন তিনিও তাই করিতেন। অতঃপর একদা আমার আনসারী সাথী তাহাঁর পালার দিন আসলেন এবং (সেখান থেকে ফিরে) আমার দরজায় খুব জোরে জোরে আঘাত করিতে লাগলেন। (আমার নাম নিয়ে) বলিতে লাগলেন, তিনি কি এখানে আছেন? আমি ঘাবড়ে গিয়ে তাহাঁর দিকে গেলাম। তিনি বলিলেন, এক বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর স্ত্রীগণকে তালাক দিয়েছেন)। আমি তখনি (আমার কন্যা) হাফসাহ (রাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদের তালাক দিয়ে দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, আমি জানি না। অতঃপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম এবং দাঁড়িয়ে থেকেই বললামঃ আপনি কি আপনার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেনঃ না। আমি তখন বললাম আল্লাহ আকবার। (২৪৬৮, ৪৯১৩, ৪৯১৫, ৫১৯১, ৫২১৮, ৫৮৪৩, ৭২৫৬, ৭২৬৩) (আঃপ্রঃ ৮৯, ইঃফাঃ ৮৯)

অধ্যায়ঃ ৩/২৮ অপছন্দনীয় কিছু দেখলে ওয়ায-নাসীহাত বা শিক্ষাপ্রদানের সময় রাগ করা।

৯০. আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃআঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সালাতে (জামাআতে) শামিল হতে পারি না। কারণ অমুক ব্যক্তি আমাদের নিয়ে খুব দীর্ঘ সালাত আদায় করেন। (আবূ মাসঊদ (রাঃআঃ) বলেন,) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কোন নাসীহাতের মাজলিসে সেদিনের তুলনায় অধিক রাগান্বিত হতে দেখিনি। (রাগত স্বরে) তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা মানুষের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি কর। অতএব যে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিবে সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাহাদের মধ্যে রোগী, দুর্বল ও কর্মব্যস্ত লোকও থাকে। (৭০২, ৭০৪, ৬১১০, ৭১৫৯) (আঃপ্রঃ ৯০, ইঃফাঃ ৯০)

৯১. যায়দ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তার বাঁধনের রশি অথবা বলিলেন, থলে-ঝুলি ভাল করে চিনে রাখ। অতঃপর এক বছর পর্যন্ত তার ঘোষণা দিতে থাক। তারপর (মালিক পাওয়া না গেলে) তুমি তা ব্যবহার কর। অতঃপর যদি এর প্রাপক আসে তবে তাকে তা দিয়ে দেবে। সে বলিল, হারানো উটের ব্যাপারে কী করিতে হইবে? এ কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রাগ করিলেন যে, তাহাঁর গাল দুটো লাল হয়ে গেল। অথবা বর্ণণাকারী বলেন, তাহাঁর মুখমন্ডল লাল হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ উট নিয়ে তোমার কী হয়েছে? তার তো আছে পানির মশক ও শক্ত পা। পানির নিকট যেতে পারে এবং গাছ খেতে পারে। কাজেই তাকে ছেড়ে দাও এমন সময়ের মধ্যে তার মালিক তাকে পেয়ে যাবে। সে বলিল, হারানো ছাগল পাওয়া গেলে? তিনি বলিলেন, সেটি তোমার হইবে, নাহলে তোমার ভাইয়ের, না হলে বাঘের। (২৩৭২, ২৪২৭, ২৪২৮, ২৪২৯, ২৪৩৬, ২৪৩৮, ৫২৯২, ৬১১২) (আঃপ্রঃ ৯১, ইঃফাঃ ৯১)

৯২. আবূ মূসা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। প্রশ্নের সংখ্যা অধিক হয়ে যাওয়ায় তখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদেরকে বললেনঃ তোমরা আমার নিকট যা ইচ্ছা প্রশ্ন কর। জনৈক ব্যক্তি বলিল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ। আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হল শায়বার দাস সালিম। তখন উমার (রাঃআঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার অবস্থা দেখে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট তাওবাহ করছি। (৭২৯১; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৬০) (আঃপ্রঃ ৯২, ইঃফাঃ ৯২)

অধ্যায়ঃ ৩/২৯ ইমাম বা মুহাদ্দিসের সামনে হাঁটু পেতে বসা

৯৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনু হুযাফাহ দাঁড়িয়ে বলিলেন, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ। অতঃপর তিনি বারবার বলিতে লাগলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। উমার (রাঃআঃ) তখন জানু পেতে বসে বললেনঃ আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নাবী হিসেবে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছি। তিনি এ কথা তিনবার বলিলেন। এতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হলেন। (৫৪০, ৭৪৯, ৪৬২১, ৬৩৬২, ৬৪৬৮, ৬৪৮৬, ৭০৮৯, ৭০৯০, ৭০৯১, ৭২৯৪, ৭২৯৫; মুসলিম ৪৩/৩৭ হাঃ ২৩৫৯, আহমাদ ১২৬৫৯) (আঃপ্রঃ ৯৩, ইঃফাঃ ৯৩)

অধ্যায়ঃ ৩/৩০ ভালোভাবে বুঝানোর জন্য কোন কথা তিনবার বলা

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মিথ্যা কথা থেকে সাবধান! এ কথাটি পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগলেন। ইবনু উমার (রাঃআঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিদায় হাজ্জে) বলেছেন আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? একথা তিনি তিনবার বলেছেন।

৯৪. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম দিতেন, তিনবার সালাম দিতেন। আর যখন কোন কথা বলিতেন তখন তা তিনবার বলিতেন। (৯৫, ৬২৪৪) (আঃপ্রঃ নাই, ইঃফাঃ ৯৪)

৯৫. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলিতেন তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলিতেন। আর যখন তিনি কোন গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাহাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। (৯৪) (আঃপ্রঃ ৯৪, ইঃফাঃ ৯৫)

৯৬. আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পিছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের নিকট পৌঁছলেন, এদিকে আমরা (আসরের) সালাত আদায় করিতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চস্বরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুকনো থাকার) জন্য জাহান্নামের আযাব রয়েছে। তিনি দুবার বা তিনবার এ কথা বলিলেন। (৬০) (আঃপ্রঃ ৯৫, ইঃফাঃ ৯৬)

অধ্যায়ঃ ৩/৩১ নিজের দাসী ও পরিবার পরিজনকে শিক্ষা প্রদান।

৯৭. আবূ বুরদাহ, তিনি তাহাঁর পিতা হতে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের জন্য দুটি পুণ্য রয়েছেঃ (১) আহলে কিতাব- যে ব্যক্তি তার নাবীর উপর ঈমান এনেছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরও ঈমান এনেছে। (২) যে ক্রীতদাস আল্লাহর হাক আদায় করে এবং তার মালিকের হাকও (আদায় করে)। (৩) যার বাঁদী ছিল, যার সাথে সে মিলিত হত। তারপর তাকে সে সুন্দরভাবে আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়েছে এবং ভালভাবে দ্বীনি ইল্ম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; তার জন্য দুটি পুণ্য রয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী আমির (রহঃ) (তাহাঁর ছাত্রকে) বলেন, তোমাকে কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীতই হাদিসটি শিক্ষা দিলাম, অথচ পূর্বে এর চেয়ে ছোট হাদিসের জন্যও লোকেরা (দূর-দূরান্ত থেকে) সওয়ার হয়ে মদিনা্য় আসত। (২৫৪৪, ২৫৪৭, ২৫৫১, ৩০১১, ৩৪৪৬, ৫০৮৩; মুসলিম ১/৭০ হাঃ ১৫৪, আহমাদ ১৯৭৩২) (আঃপ্রঃ ৯৬, ইঃফাঃ ৯৭)

অধ্যায়ঃ ৩/৩২ আলিম কর্তৃক নারীদের উপদেশ প্রদান করা ও দীনী ইলম শিক্ষা প্রদান।

৯৮. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সাক্ষী রেখে বলছি, কিংবা পরবর্তী বর্ণনাকারী আত্বা (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আববাসকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঈদের দিন পুরুষের কাতার থেকে) বের হলেন আর তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল (রাঃআঃ)। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করিলেন যে, দূরে থাকার জন্য তাহাঁর নাসীহাত মহিলাদের নিকট পৌঁছেনি। ফলে তিনি তাঁদের নাসীহাত করিলেন এবং দান-খায়রাত করার উপদেশ দিলেন। তখন মহিলারা কানের দুল ও হাতের আংটি দান করিতে লাগলেন। আর বিলাল (রাঃআঃ) সেগুলো তাহাঁর কাপড়ের প্রান্তে গ্রহণ করিতে লাগলেন। ইসমাঈল (রহঃ) আত্বা (রহঃ) সূত্রে বলেন যে, ইবনু আববাস (রাঃআঃ) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাক্ষী রেখে বলছি। (৮৬৩, ৯৬২, ৯৬৪, ৯৭৫, ৯৭৭, ৯৭৯, ৯৮৯, ১৪৩১, ১৪৪৯, ৪৮৯৫, ৫২৪৯, ৫৮৮০, ৫৮৮১, ৫৮৮৩, ৭৩২৫; মুসলিম ৮/১ হাঃ ৮৮৪, আহমাদ ৩০৬৪) (আঃপ্রঃ ৯৭, ইঃফাঃ ৯৮)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৩ হাদিসের প্রতি লালসা।

৯৯. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হইবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আবূ হুরাইরা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার পূর্বে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করিবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ লোভ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হইবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠচিত্তে لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ  (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই) বলে। (৬৫৭০) (আঃপ্রঃ ৯৮, ইঃফাঃ ৯৯)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৪ কীভাবে (দ্বীনী) জ্ঞান তুলে নেয়া হইবে।

উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু হাযম (রহঃ)-এর নিকট এক চিঠিতে লিখেনঃ অনুসন্ধান কর, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যে হাদিস পাও তা লিপিবদ্ধ করে নাও। আমি ধর্মীয় জ্ঞান লোপ পাওয়ার এবং আলিমদের বিদায় নেয়ার ভয় করছি এবং জেনে রাখ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদিস ব্যতীত অন্য কিছুই গ্রহণ করা হইবে না এবং প্রত্যেকের উচিত ধর্মীয় জ্ঞানের প্রচার-প্রসার ঘটানো আর তারা যেন একসাথে বসে (ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা করে), যাতে যে না জানে সে শিক্ষা গ্রহণ করিতে পারে। কারণ জ্ঞান গোপন না হওয়া পর্যন্ত বিলুপ্ত হইবে না।

আলা ইবনু আবদুল জাববার (রহঃ)…. আবদুল্লাহ্ ইবনু দ্বীনার (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতে উমার ইবনু আবদুল-আযীয এর উপরোক্ত হাদীসে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিদায় নেয়া পর্যন্ত বর্ণিত আছে। (আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ পৃঃ ৮৫, ইঃফাঃ ১০০)

১০০. আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের অন্তর থেকে ইল্ম উঠিয়ে নেন না, কিন্তু দ্বীনের আলিমদের উঠিয়ে নেয়ার ভয় করি। যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকিবে না তখন লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাহাদের জিজ্ঞেস করা হলে না জানলেও ফাতাওয়া প্রদান করিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হইবে, এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করিবে।

ফিরাবরী বলেন, …….. জরীর হিশামের নিকট হতে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। (৭৩০৭; মুসলিম ৪৭/৪, হাঃ ২৬৭৩, আহমাদ ৬৫২১) (আঃপ্রঃ ৯৯, ইঃফাঃ ১০১)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৫. নারীদের জ্ঞান লাভের জন্য আলাদাভাবে দিন নির্ধারণ করা যায় কি?

১০১. আবূ সাঈদ খুদরী (রযি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নারীরা একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিল, পুরুষেরা আপনার নিকট আমাদের চেয়ে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তাই আপনি নিজে আমাদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন। তিনি তাহাদের বিশেষ একটি দিনের অঙ্গীকার করিলেন; সে দিন তিনি তাহাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন এবং তাহাদের নাসীহাত করিলেন ও নির্দেশ দিলেন। তিনি তাহাদের যা যা বলেছিলেন, তার মধ্যে একথাও ছিল যে, তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক তিনটি সন্তান পূর্বেই পাঠাবে, তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে। তখন জনৈক স্ত্রীলোক বলিল, আর দুটি পাঠালে? তিনি বললেনঃ দুটি পাঠালেও। (১২৪৯,৭৩১০; মুসলিম ৪৫/৪৭, হাঃ ২৬৩৩, আহমাদ ১১২৯৬) (আঃপ্রঃ ১০০, ইঃফাঃ ১০২)

১০২. আবূ সাঈদ (রাঃআঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রহমান আল-আসবাহানী (রহঃ)…. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এমন তিনজন, যারা সাবালকত্বে পৌঁছেনি। (১২৫০ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১০০ শেষাংশ, ইঃফাঃ ১০৩)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৬ কোন কথা শুনে না বুঝলে জানার জন্য পুনরাবৃত্তি করা।

১০৩. ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রাঃআঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃআঃ) কোন কথা শুনে না বুঝলে বার বার প্রশ্ন করিতেন। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, (ক্বিয়ামাতের দিন) যার কাছ থেকে হিসেব নেয়া হইবে তাকে শাস্তি দেয়া হইবে। আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ্ তাআলা কি ইরশাদ করেননি, فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হইবে)- (সূরাহ্ ইনশিক্বাক ৮৪/৮)। তখন তিনি বললেনঃ তা কেবল হিসেব প্রকাশ করা। কিন্তু যার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে নেয়া হইবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবে। (৪৯৩৯, ৬৫৩৬, ৬৫৩৭; মুসলিম ৫১/১৮, হাঃ ২৮৭৬, আহমাদ ২৪২৫৫) (আঃপ্রঃ ১০১, ইঃফাঃ ১০৪)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৭ উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ইলম পৌঁছে দেয়।

 ইবনু আববাস (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তা বর্ণনা করেন।

১০৪. আবূ শুরায়হ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, তিনি আমর ইবনু সাঈদ (মদিনার গভর্নর)-কে বলিলেন, যখন তিনি মক্কায় সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন- হে আমাদের নেতা! আমাকে অনুমতি দিলে আপনাকে এমন একটি হাদিস শুনাতে পারি যেটা মক্কা বিজয়ের পরের দিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। আমার দু কান তা শ্রবণ করেছে, আমার হৃদয় তা আয়ত্ত রেখেছে, আর আমার চোখ দুটো তা দেখেছে। তিনি আল্লাহর হাম্দ ও সানা বর্ণনা করে বললেনঃ মক্কাকে আল্লাহ্ হারাম করিয়াছেন, কোন মানুষ তাকে হারাম করেনি। তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে তার জন্য সেখানে রক্তপাত করা, সেখানকার গাছ কাটা বৈধ নয়। কেউ যদি আল্লাহর রাসূলের (সেখানকার) লড়াইকে দলীল হিসেবে পেশ করে তবে তোমরা বলে দাও, আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর রাসূলকে এর অনুমতি দিয়েছিলেন; কিন্তু তোমাদেরকে তা দেননি। আমাকেও সে দিনের কিছু সময়ের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর পূর্বের মতই আজ আবার একে তার নিষিদ্ধ হবার মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। উপস্থিতগণ যেন অনুপস্থিতদের নিকট (এ বাণী) পৌঁছে দেয়। অতঃপর আবূ শুরায়হ্ (রাঃআঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার এ হাদিস শুনে আমর কী বলিলেন? (আবূ শুরায়হ্ (রাঃআঃ) উত্তর দিলেন) তিনি বললেনঃ হে আবূ শুরায়হ্! (এ বিষয়ে) আমি তোমার চেয়ে অধিক জানি। মক্কা কোন বিদ্রোহীকে, কোন খুনের পলাতক আসামীকে এবং কোন চোরকে আশ্রয় দেয় না। (১৮৩২,৪২৯৫; মুসলিম ১৫/৮২, হাঃ ১৩৫৪, আহমাদ ১৬৩৭৩, ২৭২৩৪) (আঃপ্রঃ ১০২, ইঃফাঃ ১০৫)

১০৫. আবূ বাকরাহ (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের জান তোমাদের মাল বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেনঃ এবং তোমাদের মান-সম্মান (অন্য মুসলমানের জন্য) এ শহরে এ দিনের মতই মর্যাদা সম্পন্ন। শোন, (আমার এ বাণী যেন) তোমাদের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দেয়। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন, তা-ই হয়েছে। তারপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু দুবার করে বলিলেন, হে লোক সকল! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? (৬৭) (আঃপ্রঃ ১০৩, ইঃফাঃ ১০৬)

(৬৭) (আঃপ্রঃ ১০৩, ইফাঃ ১০৬)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৮. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যারোপ করার পাপ

১০৬. আলী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করিবে সে জাহান্নামে যাবে। (মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ২) (আঃপ্রঃ ১০৪, ইঃফাঃ ১০৭)

১০৭. আবদুল্লাহ্ ইবনুয্-যুবায়র (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতা যুবায়রকে বললামঃ আমি তো আপনাকে অমুক অমুকের মত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করিতে শুনি না। তিনি বললেনঃ জেনে রাখ, আমি তাহাঁর থেকে দূরে থাকিনি, কিন্তু আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, যে আমার উপর মিথ্যারোপ করিবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নিবে (এজন্য হাদিস বর্ণনা করি না)। (মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৩) (আঃপ্রঃ ১০৫, ইঃফাঃ ১০৮)

১০৮. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ কথাটি তোমাদের নিকট বহু হাদিস বর্ণনা করিতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (আঃপ্রঃ ১০৬, ইঃফাঃ ১০৯)

১০৯. সালামাহ ইবনু আক্ওয়া (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আমার উপর এমন কথা আরোপ করে যা আমি বলিনি, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (আঃপ্রঃ ১০৭, ইঃফাঃ ১১০)

১১০. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নামে তোমরা নাম রেখ; কিন্তু আমার উপনামে (কুনিয়াতে) তোমরা নাম রেখ না। আর যে আমাকে স্বপ্নে দেখে সে ঠিক আমাকেই দেখে। কারণ শয়তান আমার আকৃতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করিতে পারে না। যে ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার আসন বানিয়ে নেয়। (৩৫৩৯, ৬১৮৮, ৬১৯৭, ৬৯৯৩; মুসলিম মুকাদ্দামা, দ্বিতীয় অধ্যায়, হাঃ ৪) (আঃপ্রঃ ১০৮, ইঃফাঃ ১১১)

অধ্যায়ঃ ৩/৩৯ ইলম লিপিবদ্ধ করা।

১১১. আবূ জুহাইফাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃআঃ)-কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেনঃ না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি (আবূ জুহাইফাহ (রাঃআঃ)) বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বলিলেন, ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, মুসলিমকে কাফির হত্যার বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না। (১৮৭০, ৩০৪৭, ৩১৭২, ৩১৭৯, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৭৩০০ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১০৯, ইঃফাঃ ১১২)

১১২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, মক্কা্ বিজয়কালে খুযাআহ গোত্র লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করিল। এ হত্যা ছিল তাহাদের এক নিহত ব্যক্তির প্রতিশোধ, যাকে ইতোপূর্বে লায়স গোত্রের লোক হত্যা করেছিল। তারপর এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাহাঁর উটের উপর আরোহণ করে ভাষণ দিলেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা মক্কা্ হতে হত্যা-কে কিংবা হাতী-কে রোধ করিয়াছেন। (২৪৩৪, ৬৮৮০ দ্রষ্টব্য)

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা বলেছেন না হাতী বলেছেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী আবূ নুআয়ম সন্দেহ পোষণ করেন। অন্যরা শুধু হাতী শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন। অবশ্য মক্কাবাসীদের উপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুমিনগণকে (যুদ্ধের মাধ্যমে) বিজয়ী করা হয়েছে। জেনে রাখ, আমার পূর্বে কারো জন্য মক্কাকে হালাল করা হয়নি এবং আমার পরেও হালাল হইবে না। জেনে রাখ, তাও আমার জন্য দিনের কিছু সময়ের জন্য বৈধ করা হয়েছিল। আরো জেনে রাখ যে, আমার এই কথা বলার মুহূর্তে আবার তা অবৈধ হয়ে গেছে। সেখানকার কোন কাঁটা কিংবা গাছ কাটা যাবে না এবং সেখানে পড়ে থাকা কোন বস্তু কুড়িয়ে নেয়া যাবে না। তবে ঘোষণা দেয়ার জন্য তা নিতে পারবে। আর কেউ নিহত হলে তার আপনজনদের জন্য দুটি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের এখতিয়ার আছে। হয় তার রক্তপণ নিবে নয় কিসাসের ফায়সালা গ্রহণ করিবে। অতঃপর ইয়ামানবাসী জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (এ কথাগুলো) আমাকে লিখে দিন। তিনি (সহাবীদের) বললেনঃ তোমরা অমুকের পিতাকে লিখে দাও। তারপর জনৈক কুরায়শ (আববাস (রাঃআঃ)) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! গাছপালা কাটার নিষেধাজ্ঞা হতে ইযখির (এক প্রকার লম্বা ঘাষ) বাদ দিন। কারণ তা আমরা আমাদের গৃহে ও কবরে কাজে লাগাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, ইযখির ব্যতীত, ইযখির ব্যতীত। (আঃপ্রঃ ১১০, ইঃফাঃ ১১৩)

১১৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহাবীগণের মধ্যে আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃআঃ) ব্যতীত আর কারো নিকট আমার চেয়ে অধিক হাদিস নেই। কারণ তিনি লিখতেন, আর আমি লিখতাম না। মামার (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ ১১১, ইঃফাঃ ১১৪)

১১৪. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অসুখ যখন বৃদ্ধি পেল তখন তিনি বললেনঃ আমার নিকট লেখার জিনিস নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরে তোমরা আর পথভ্রষ্ট হইবে না। উমার (রাঃআঃ) বলিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলিতে বা লিখতে তাহাঁর কষ্ট হইবে)। আর আমাদের নিকট তো আল্লাহর কিতাব আছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সহাবীগণের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার নিকট ঝগড়া-বিবাদ করা অনুচিত। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আববাস (রাঃআঃ) (যেখানে বসে হাদিস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলিতে বলিতে বেরিয়ে এলেন যে, হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাহাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে। (৩০৫৩, ৩১৬৮, ৪৪৩১, ৪৪৩২, ৫৬৬৯, ৭৩৬৬ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১১২, ইঃফাঃ ১১৫)

অধ্যায়ঃ ৩/৪০. রাতে ইল্‌ম শিক্ষাদান এবং ওয়ায-নাসীহাত করা।

১১৫. উম্মু সালামাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা হতে জেগে বলেনঃ সুবহানাল্লাহ্! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভান্ডার উন্মুক্ত করা হচ্ছে! অন্য সব ঘরের নারীদেরকেও জানিয়ে দাও, বহু মহিলা যারা দুনিয়ায় পোশাক পরিহিতা, তারা অখিরাতে হইবে বিবস্ত্র। (১১২৬, ৩৫৯৯, ৫৮৪৪, ৬২১৮, ৭০৬৯ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১১৩, ইঃফাঃ ১১৬)

অধ্যায়ঃ ৩/৪১. রাতে ইল্‌মের আলোচনা করা।

১১৬. আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করিলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাহাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকিবে না। (৫৬৪, ৬০১; মুসলিম ৪৪/৫৩, হাঃ ২৫৩৬) (আঃপ্রঃ ১১৪, ইঃফাঃ ১১৭)

১১৭. ইবনু আববাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী মায়মূনা বিন্ত হারিস (রাঃআঃ)-এর ঘরে এক রাতে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে (পালার) রাতে সেখানে ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার সালাত আদায় করে তাহাঁর ঘরে চলে আসলেন এবং চার রাকআত সালাত আদায় করে শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর উঠে বললেনঃ বালকটি কি ঘুমিয়ে পড়েছে? বা এরূপ কোন কথা বলিলেন। অতঃপর (সালাতে) দাঁড়িয়ে গেলেন, আমিও তাহাঁর বাঁ দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাহাঁর ডান দিকে সরিয়ে এনে পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করিলেন। পরে আরো দু রাকআত আদায় করিলেন। অতঃপর শুয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাহাঁর নাক ডাকার আওয়াজ শুনতে পেলাম। অতঃপর উঠে তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন। (১৩৮, ১৮৩, ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭২৬, ৮৫৯, ১১৯৮, ৪৫৬৯, ৪৫৭০, ৪৫৭১, ৪৫৭২, ৫৯১৯, ৬২১৫, ৬৩১৬, ৭৪৫২ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১১৫, ইঃফাঃ ১১৮)

অধ্যায়ঃ ৩/৪২. ইলম আয়ত্ত করা।

১১৮. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকে বলে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) অধিক হাদিস বর্ণনা করে। (জেনে রাখ,) কিতাবে দুটি আয়াত যদি না থাকত, তবে আমি একটি হাদিসও পেশ করতাম না। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ আমি সেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা বিস্তারিত বর্ণনার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ্ তাহাদেরকে অভিশাপ দেন এবং অভিশাপকারীগণও তাহাদেরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু যারা তাওবাহ করে এবং আত্মসংশোধন করে এবং প্রকাশ করে দেয় যে, আমি তাহাদের (ক্ষমার) জন্য ফিরে আসি, আর আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৫৯-১৬০)। (প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনসার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকত। আর আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) (অভুক্ত থেকে) তুষ্ট থেকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে লেগে থাকত। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকত না, তখন সে উপস্থিত থাকত এবং তারা যা আয়ত্ত করত না সে তা আয়ত্ত রাখত। (১১৯, ২০৪৭, ২৩৫০, ৩৬৪৮, ৭৩৫৪ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১১৬, ইঃফাঃ ১১৯)

হাদিস নম্বরঃ ১১৯ | 119 | ۱۱۹

১১৯. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট হতে অনেক হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। তিনি বললেনঃ তোমার চাদর মেলে ধর। আমি তা মেলে ধরলাম। তিনি দুহাত খাবল করে তাতে কিছু ঢেলে দেয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগাও। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। অতঃপর আমি আর কিছুই ভুলে যাইনি। (১১৮) (আঃপ্রঃ ১১৭, ইঃফাঃ ১২০)

ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহঃ)…..ইবনু আবূ ফুদায়ক (রহঃ) সূত্রে একইরূপ হাদিস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্যে (কিছু) দিলেন। (ইঃফাঃ ১২১)

১২০. আবূ হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুপাত্র ইলম আয়ত্ত করে রেখেছিলাম। তার একটি পাত্র আমি বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি এমন যে, প্রকাশ করলে আমার কণ্ঠনালী কেটে দেয়া হইবে। আবদুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন, হাদীসে উল্লিখিত الْبُلْعُومُ শব্দের অর্থ খাদ্যনালী। (আঃপ্রঃ ১১৮, ইঃফাঃ ১২২)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৩. আলিমদের কথা শ্রবণের জন্য লোকদের চুপ করানো।

১২১. জারীর (রাঃআঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হাজ্জের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি লোকদেরকে চুপ করিয়ে দাও, তারপর তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কাফির (এর মত) হয়ে যেও না। (৪৪০৫, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ১/২৯, হাঃ ৬৫, আহমাদ ১৯২৩৭) (আঃপ্রঃ ১১৯, ইঃফাঃ ১২৩)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৪. আলিমের জন্য মুস্তাহাব এই যে, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? এ প্রশ্ন যখন তাঁকে করা হয় তখন তার উচিত এটা আল্লাহর দিকে সোপর্দ করা।

১২২. সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু আববাস (রাঃআঃ)-কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা (আ) (যিনি খাযির (আ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি) বানী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে) তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবনু কাব (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ মূসা (আ) একদা বানী ইসরাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি বলিলেন, আমি সবচেয়ে জ্ঞানী। মহান আল্লাহ্ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্মকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ করেন নি। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাঁর নিকট এ ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে তার সাক্ষাৎ পাব? তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। অতঃপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। অতঃপর তিনি ইউশা ইবনু নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা করিলেন। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি থলে হতে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা (আ) ও তাহাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়।

অতঃপর তাঁরা তাহাদের বাকী দিন ও রাতভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা (আ) তাহাঁর খাদিমকে বলিলেন, আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে খুবই ক্লান্ত, আর মূসা (আ)-কে যে স্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তারপর তাহাঁর সাথী তাঁকে বলিল, আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? মূসা (আ) বলিলেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। অতঃপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের নিকট পৌঁছে দেখিতে গেলেন, এক ব্যক্তি (বর্ণনাকারী বলেন,) কাপড় মুড়ি দিয়ে আছেন। মূসা (আ) তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বলিলেন, এ দেশে সালাম কোথা হতে আসল! তিনি বলিলেন, আমি মূসা। খাযির প্রশ্ন করিলেন, বানী ইসরাঈলের মূসা (আ)? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বলিলেন, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি কি আপনাকে অনুসরণ করিতে পারি? খাযির বলিলেন, তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। হে মূসা (আ)! আল্লাহর ইল্মের মধ্যে আমি এমন এক ইল্ম নিয়ে আছি যা তিনি কেবল আমাকেই শিখিয়েছেন, যা তুমি জান না। আর তুমি এমন ইল্মের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিখিয়েছেন, তা আমি জানি না। মূসা (আ) বলিলেন, আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না।

অতঃপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতোমধ্যে তাঁদের নিকট দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সাথে তাহাদের তুলে নেয়ার কথা বলিলেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে একবার কি দুবার সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির বলিলেন, হে মূসা (আ)! আমার এবং তোমার জ্ঞান (সব মিলেও) আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে তার চেয়েও কম। অতঃপর খাযির নৌকার তক্তাগুলোর মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা (আ) বলিলেন, এরা আমাদের বিনা ভাড়ায় আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন? খাযির বলিলেন, আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না? মূসা (আ) বলিলেন, আমার ত্রুটির জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোর হইবেন না। বর্ণনাকারী বলেন, এটা মূসা (আ)-এর প্রথমবারের ভুল। অতঃপর তাঁরা দুজন (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন। মূসা (আ) বলিলেন, আপনি হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন? খাযির বলিলেন আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না? ইব্ন উয়ায়নাহ (রহঃ) বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে অধিক জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাহাদের নিকট খাদ্য চাইলেন কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। অতঃপর সেখানে তাঁরা ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম এমন একটি প্রাচীর দেখিতে পেলেন। খাযির তাহাঁর হাত দিয়ে সেটি দাঁড় করে দিলেন। মূসা (আ) বলিলেন, আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য মজুরী নিতে পারতেন। তিনি বলিলেন, এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান।(সূরাহ কাহ্ফঃ ৭৭-৭৮)  নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মূসার উপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করিতেন, তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।* (৭৪; মুসলিম ৪৩/৪৬, হাঃ ২৩৮০, আহমাদ ২১১৬৭) (আঃপ্রঃ ১২০, ইঃফাঃ ১২৪)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৫. আলিমের বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করা।

১২৩. আবূ মূসা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে যুদ্ধ কোনটি, কেননা আমাদের কেউ লড়াই করে রাগের বশবর্তী হয়ে, আবার কেউ লড়াই করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাহাঁর মাথা তোলার কারণ ছিল যে, সে ছিল দাঁড়ানো। অতঃপর তিনি বললেনঃ আল্লাহর বাণী বিজয়ী করার জন্য যে যুদ্ধ করে তার লড়াই আল্লাহর পথে হয়। (২৮১০, ৩১২৬, ৭৪৫৮; মুসলিম ৩৩/৪২, হাঃ ১৯০৪, আহমাদ ১৯৫১০, ১৯৫৬০, ১৯৬১৩) (আঃপ্রঃ ১২১, ইঃফাঃ ১২৫)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৬. কঙ্কর মারার সময় কোন মাসআলা জিজ্ঞেস করা।

১২৪. আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, জামরাহর নিকট তাঁকে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কঙ্কর মার, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল!  আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কুরবানী করে নাও, কোন ক্ষতি নেই। বস্তুত আগ পিছ করার যে কোন প্রশ্নই তাঁকে করা হচ্ছিল, তিনি বলছিলেনঃ কর, কোন ক্ষতি নেই। (৮৩) (আঃপ্রঃ ১২২, ইঃফাঃ ১২৬)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৭. আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী, তোমাদেরকে ইলম দেওয়া হয়েছে অতি অল্পই।” (সূরা আল-ইসরা : ৮৫)

১২৫. আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মাদ্বীনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলিতে লাগল, তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। আর একজন বলিল, তাঁকে কোন প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোন জবাব দিবেন যা তোমরা পছন্দ করোনা। আবার কেউ কেউ বলিল, তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই। অতঃপর তাহাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, হে আবুল কাসিম! রূহ কী? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাহাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেনঃ

তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। এবং তাহাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেয়া হয়েছে। (সূরাহ্ আল-ইসরা ১৭/৮৫)

আমাশ (রহঃ) বলেন, এভাবেই আয়াতটিকে আমাদের কিরাআতে أُوْتِيْتُمْ -এর স্থলে أُوْتُوْ পড়া হয়েছে। (৪৭২১, ৭২৯৭, ৭৪৫৬, ৭৪৬২; মুসলিম ৫০/৪, হাঃ ২৭৯৪, আহমাদ ৩৬৮৮) (আঃপ্রঃ ১২৩, ইঃফাঃ ১২৭)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৮. কোন কোন মুস্তাহাব কাজ এই আশঙ্কায় ছেড়ে দেয়া যে, কিছু কম মেধাবী লোকে ভুল বুঝতে পারে এবং তারা আরো অধিকতর বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে।

১২৬. আসওয়াদ (রহঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু যুবায়র (রাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, আয়িশাহ (রাঃআঃ) তোমাকে অনেক হাদিস গোপনে বলিতেন। বল তো কাবা সম্পর্কে তোমাকে কী বলেছেন? আমি বললাম, তিনি আমাকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আয়িশাহ! তোমাদের কওম যদি (ইসলাম গ্রহণে) নতুন না হত, ইব্ন যুবায়র বলেনঃ কুফর থেকে; তবে আমি কাবা ভেঙ্গে ফেলে তার দুটি দরজা বানাতাম। এক দরজা দিয়ে লোক প্রবেশ করত আর এক দরজা দিয়ে বের হত। (পরবর্তীকালে মক্কার আধিপত্য পেলে) তিনি এরূপ করেছিলেন। (১৫৮৩, ১৫৮৪, ১৫৮৫, ১৫৮৬, ৩৩৬৮, ৪৪৮৪, ৭২৪৩ দ্রষ্টব্য) (আঃপ্রঃ ১২৪, ইঃফাঃ ১২৮)

অধ্যায়ঃ ৩/৪৯. বুঝতে না পারার আশঙ্কায় ইলম শিক্ষায় কোন এক গোত্র ছেড়ে আর এক গোত্র বেছে নেয়া।

আলী (রাঃআঃ) বলেন, মানুষের নিকট সেই ধরনের কথা বল, যা তারা বুঝতে পারে। তোমরা কি পছন্দ কর যে, আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হোক?

১২৭. আলী (রাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন। (আঃপ্রঃ নাই, ইঃফাঃ ১২৯)

১২৮. আনাস ইবনু মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, একদা মুআয (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে সওয়ারীতে ছিলেন, তখন তিনি তাকে ডাকলেন, হে মুআয ইবনু জাবাল! মুআয (রাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি আপনার সার্বিক সহযোগিতা ও খিদমাতে হাযির আছি। তিনি ডাকলেন, মুআয! মুআয (রাঃআঃ) উত্তর দিলেন, আমি হাযির হে আল্লাহর রাসূল এবং প্রস্তুত। তিনি আবার ডাকলেন, মুআয। তিনি উত্তর দিলেন, আমি হাযির এবং প্রস্তুত। এরূপ তিনবার করিলেন। অতঃপর বললেনঃ যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-তার জন্য আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হারাম করে দিবেন। মুআয (রাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি মানুষকে এ খবর দেব না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে? তিনি বলিলেন, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করিবে। মুআয (রাঃআঃ) (জীবন ভর এ হাদিসটি বর্ণনা করেননি) মৃত্যুর সময় এ হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন যাতে (ইল্ম গোপন রাখার) গুনাহ্ না হয়। (১২৯; মুসলিম ১/১০, হাঃ ৩২) (আঃপ্রঃ ১২৫, ইঃফাঃ ১৩০)

১২৯. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয (রাঃআঃ)-কে বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনরূপ শির্ক না করে তাহাঁর সাথে সাক্ষাত করিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। মুআয (রাঃআঃ) বলিলেন, আমি কি লোকদের সুসংবাদ দেব না? তিনি বলিলেন, না, আমার আশংকা হচ্ছে যে, তারা এর উপরই ভরসা করে বসে থাকিবে। (১২৮) (আঃপ্রঃ ১২৬, ইঃফাঃ ১৩১)

অধ্যায়ঃ ৩/৫০. ইল্‌ম শিক্ষা করিতে লজ্জাবোধ করা।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, লাজুক এবং অহঙ্কারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করিতে পারে না। আয়িশাহ (রাঃআঃ) বলেন, আনসারী মহিলারাই উত্তম। লজ্জা তাহাদেরকে ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি।

১৩০. উম্মু সালামাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উম্মু সুলায়ম (রাঃআঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ হক কথা প্রকাশ করিতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করিতে হইবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখিতে পাবে। তখন উম্মু সালামাহ (লজ্জায়) তার মুখ ঢেকে নিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাহাদের সন্তান তাহাদের আকৃতি পায় কীভাবে? (২৮২, ৩৩২৮, ৬০৯১, ৬১২১; মুসলিম ৩/৭, হাঃ ৩১৩, আহমাদ ২৬৬৭৫) (আঃপ্রঃ ১২৭, ইঃফাঃ ১৩২)

১৩১. ইবনু্উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ রয়েছে যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হল মুসলিমের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বল তো সেটা কোন্ গাছ? তখন লোকজনের খেয়াল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি গেল। আর আমার মনে হতে লাগল যে, সেটি খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) বলেন, কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করলাম। সহাবায়ে কিরাম (রাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনিই আমাদের তা বলে দিন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তা হল খেজুর গাছ। আবদুল্লাহ্ (রাঃআঃ) বলেন, তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বলিলেন, তুমি তখন তা বলে দিলে তা আমার নিকট এরূপ এরূপ জিনিস লাভ করার চেয়ে অধিক প্রিয় হতো। (৬১) (আঃপ্রঃ ১২৮, ইঃফাঃ ১৩৩)

অধ্যায়ঃ ৩/৫১. নিজে লজ্জা করলে অন্যকে দিয়ে প্রশ্ন করানো।

১৩২. আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার অধিক পরিমাণে মযী বের হত। তাই এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করার জন্য মিকদাদকে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে কেবল উযূ করিতে হয়। (১৭৮,২৬৯; মুসলিম ৩/৪, হাঃ ৩০৩, আহমাদ ৬০৬, ১০০৯, ১০৩৫) (আঃপ্রঃ ১২৯, ইঃফাঃ ১৩৪)

অধ্যায়ঃ ৩/৫২. মসজিদে ইলম ও ফতোয়া আলোচনা করা।

১৩৩. আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি মসজিদে দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের কোন্ স্থান হতে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা্বাসী ইহরাম বাঁধবে যুল-হুলাইফাহ হতে, সিরিয়াবাসী ইহরাম বাঁধবে জুহফা হতে এবং নাজদবাসী ইহরাম বাঁধবে কর্ন হতে। ইবনু উমার (রাঃআঃ) বলেন, সহাবীগণ বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেনঃ এবং ইয়ামানবাসী ইহরাম বাঁধবে ইয়ালামলাম হতে। ইবনু উমার (রাঃআঃ) বলেছেন, এ কথাটি আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বুঝে নেইনি। (১৫২২, ১৫২৫, ১৫২৭, ১৫২৮, ৭৩৩৪) (আঃপ্রঃ ১৩০, ইঃফাঃ ১৩৫)

অধ্যায়ঃ ৩/৫৩. প্রশ্নকারীর প্রশ্নের চেয়ে বেশী উত্তর প্রদান

১৩৪. ইবনু উমার (রাঃআঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করিল, মুহরিম কী কাপড় পরিধান করিবে? তিনি বললেনঃ জামা, পাগড়ী, পাজামা, টুপি এবং কুসুম বা যাফরান রঙ্গে রঞ্জিত কোন কাপড় পরিধান করিবে না। জুতা না পেলে চামড়ার মোজা পরতে পারে, তবে এমনভাবে কেটে ফেলতে হইবে যাতে মোজা দুটি পায়ের গিরার নিচে থাকে। (৩৬৬, ১৫৪২, ১৮৩৮, ১৮৪২, ৫৭৯৪, ৫৮০৩, ৫৮০৫, ৫৮০৬, ৫৮৪৭, ৫৮৫২) (আঃপ্রঃ ১৩১, ইঃফাঃ ১৩৬)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply