পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং দাস দাসী ও ইয়াতিমের হক

পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং দাস দাসী ও ইয়াতিমের হক

পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং দাস দাসী ও ইয়াতিমের হক >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ৪৩, অনুচ্ছেদঃ ১৩০-১৩৬=৬টি

অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা
অনুচ্ছেদ-১৩১ঃ ইয়াতীমদের প্রতিপালনের ফাযীলাত
অনুচ্ছেদ-১৩২ঃ ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর মর্যাদা
অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ দাস দাসীর হক
অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ কর্তব্যপরায়ণ দাস সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-১৩৬ঃ যে কোন ক্রীতদাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়

অনুচ্ছেদ-১৩০ঃ পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা

৫১৩৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার হক আদায় করিতে সক্ষম নয়, তবে ক্রীতদাস পিতাহাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিলে [সামান্য হক আদায় হয়]।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৩৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার এক স্ত্রী ছিলো এবং তাহাকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা [উমার] তাহাকে অপছন্দ করিতেন। তিনি আমাকে তাহাকে তালাক দিতে আদেশ করলে আমি তাতে অসম্মতি জানালাম। উমার [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]–এর নিকট এসে এ ব্যাপারে তাঁকে জানালেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃতাহাকে তালাক দাও।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৩৯. বাহয ইবনি হাকীম [রাদি.] হইতে তার পিতা এবং তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার কে? তিনি বলিলেন, তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, অতঃপর তোমার বাবা, এরপর পর্যায়ক্রমে আত্মীয়তার নৈকট্য অনুসারে হইবে। তিনি [সাঃআঃ] আরো বলেনঃ কোন গোলাম তার মালিকের নিকট তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে চাইলে এবং সে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্বিয়ামতের দিন ঐ অতিরিক্ত সম্পদ তার জন্য একটি মাথায় টাক পড়া বিষধর সাপে রূপান্তরিত করা হইবে। {৫১৩৭}

{৫১৩৭} তিরমিজি । এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৫১৪০. কুলাইব ইবনি মান্‌ফাআহ [রহ.] তার দাদা হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কার সঙ্গে অধিক উত্তম ব্যবহার করবো। তিনি বলিলেনঃতোমার মা, বোন, ভাই এবং তোমার মুক্তদাস, যা তোমার আবশ্যকীয় কর্তব্য এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যা বজায় রাখতে হয়। {৫১৩৮}

দুর্বল ঃ ইরওয়া হা/৮৩৭ {৫১৩৮} বুখারীর আদাবুল মুফরাদ । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে মারাত্ব‌ক গুনাহ হলো, কোন ব্যক্তির তার পিতা-মাতাহাকে অভিসম্পাত করা। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল ! মানুষ কিভাবে স্বীয় পিতা-মাতাহাকে অভিসম্পাত করিতে পারে? তিনি বলিলেনঃএই ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির পিতাহাকে অভিশাপ দেয়, প্রতিউত্তরে সেও তার পিতাহাকে অভিশাপ দেয়। আবার এই ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে অভিশাপ দেয়, প্রতিউত্তরে সেও তার মাকে অভিশাপ দেয়।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৪২. আবু উসাইদ মালিক ইবনি রবীআহ আস-সাঈদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় বনী সালিমার এক লোক তাহাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও কি তাহাদের প্রতি হক রয়েছে যা আমি পালন করবো? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, তাহাদের জন্য দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাহাদের ওয়াদা পূরণ করা, তাহাদের উভয়ের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে তা রক্ষা করা এবং তাহাদের বন্ধুদের সম্মান করা।{৫১৪০}

দুর্বল ঃ মিশকাত হা/৪৯৩৬। {৫১৪০} ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান । সনদের আলী ইবনি উবাইদ সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল । ঈমাম যাহাবী বলেনঃ তাহাকে চেনা যায়নি । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪৩. ইবনি উমার[রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ সর্বাধিক পুণ্যের কাজ হলো, কোন ব্যক্তির তার পিতার ইন্তিকালের পর [অবর্তমানে] তার বন্ধুদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৪৪. আবুত তুফাইল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে আল-জিইর্‌রানা নামক স্থানে গোশত বণ্টন করিতে দেখেছি। আবুত তুফাইল [রাদি.] বলেন, তখন আমি যুবক ছিলাম এবং উটের হাড় বহন করছিলাম। এ সময় এক মহিলা আসলেন। তিনি নাবী [সাঃআঃ] -এর কাছে এলে তিনি [সাঃআঃ] স্বীয় চাদর বিছিয়ে দিলেন। তিনি তার উপর বসলেন। আমি বলিলাম, ইনি কে? সাহাবীগণ বলিলেন, ইনি হলেন তাহাঁর দুধমাতা। {৫১৪২}

{৫১৪২} হাকিম । সনদের জাফার ইবনি ইয়াহইয়া সম্পর্কে ইবনিল মাদীনী বলেনঃ মাজহুল । ঈমাম যাহাবী বলেনঃ তার চাচা উমরাহ বিন সাওবান শিথিল [লাইয়িন] ।হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ উমরাহ মাসতূর ।এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪৫. উমার ইবনিস সায়িব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জানতে পেরেছেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বসা ছিলেন। এমন সময় তাহাঁর দুধপিতা এলে তিনি তাহাঁর জন্য তাহাঁর কাপড়ের একাংশ বিছিয়ে দিলেন এবং তিনি তাহাঁর উপর বসলেন। এরপর তাহাঁর দুধমাতা আসলে তিনি তাহাঁর জন্যও অন্য পাশে তাহাঁর টুকরা কাপড় বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে তিনি বসলেন। তারপর আসলেন তাহাঁর দুধভাই। তখন রসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] তাহাঁর জন্য উঠে দাঁড়ান এবং তাহাকে তাহাঁর সামনে বসান। {৫১৪৩}

{৫১৪৩} সানাদে বর্ণনাকারী উমার ইবনি সায়িব এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর মাঝে বর্ণনাকারী বাদ পড়েছে । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩১ঃ ইয়াতীমদের প্রতিপালনের ফাযীলাত

৫১৪৬.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে যদি তাহাকে জীবন্ত কবর না দেয় এবং তাহাকে অবজ্ঞা না করে এবং তার পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তাহাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। বর্ণনাকারী উসমান পুত্র সন্তান কথাটি উল্লেখ করেননি।{৫১৪৪}

দুর্বল ঃ মিশকাত হা/৪৯৭৯। {৫১৪৪} আহমাদ। সানাদে ইবনি জুবাইর রয়েছে। হাফিয বলেনঃ মাসতূর, তার নাম জানা যায়নি। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তানকে লালন-পালন করলো, তাহাদেরকে আদব শিক্ষা দিলো, বিয়ে দিলো এবং তাহাদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলো, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। {৫১৪৫}

{৫১৪৫} তিরমিজি, আহমাদ । সনদের আইয়ূব ইবনি বাশীর সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাজহুল এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪৮. সুহাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সুহাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণিত। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, তিনটি বোন অথবা তিনটি কন্যা অথবা দুটি কন্যা অথবা দুটি বোন হলেও ।{৫১৪৬}

দুর্বল। {৫১৪৬} এর পুর্বেরটি দেখুন । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪৯. আওফ ইবনি মালিক আল্‌-আশজাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ] বলিয়াছেন ক্বিয়ামাতের দিন আমি এবং কালো গালবিশিষ্ট মহিলা এভাবে থাকবো। বর্ণনাকারী ইয়াযীদ মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে দেখান। অর্থাৎ যে বংশীয়া, সুন্দরী বিধবা মহিলা তার ইয়াতিম বাচ্চাদের স্বাবলম্বী করার জন্য মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে [পুনর্বিবাহ থেকে] বিরত রেখেছে। {৫১৪৭}

দুর্বলঃ যঈফাহ হা/১১২২। {৫১৪৭} আহমাদ, বুখারীর আদাবুল মুফরাদ সনদের নাহহাস সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ দুর্বল । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩২ঃ ইয়াতীমের লালন-পালনকারীর মর্যাদা

৫১৫০. সাহল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি ও ইয়াতীমদের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকবো। এ বলে তিনি তার মধ্যমা ও তর্জনী [আঙ্গুল] একত্র করিলেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অণুচ্ছেদ-১৩৩ঃ প্রতিবেশীর হক

৫১৫১. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ ] বলিয়াছেনঃ জিব্‌রীল [আঃ] আমাকে নিয়মিত প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দিতে থাকলেন। এমনকি আমি ভাবলাম, অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানাবেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫২.আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একটি বকরি যাবাহ করিলেন, তিনি বলিলেন, তোমরা কি আমার প্রতিবেশি ইয়াহুদীকে উপঢৌকন দিয়েছ? কেননা আমি [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ জিবরাঈল [আঃ] অবিরত আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্বন্ধে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। এমনকি আমার ধারনা হল, তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তিনি বলিলেন, যাও ধৈর্য ধরো। অতঃপর সে দুই বা তিনবার এভাবে এসে অভিযোগ করলে তিনি বলিলেনঃ তুমি গিয়ে তোমার জিনিষপত্র রাস্তায় ফেলে রাখো। অতঃপর সে তার জিনিষপত্র রাস্তায় ফেলে রাখলে লোকেরা তাহাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করিতে লাগলো এবং সে তাহাদেরকে তার প্রতিবেশীর খবর জানাতে থাকলো। লোকেরা তাহাকে অভিশাপ দিতে লাগলো, আল্লাহ তোমার এরূপ এরূপ করুন। তার প্রতিবেশী তার নিকট এসে তাহাকে বললো, তুমি ফিরে যাও। ভবিষ্যতে তুমি আমার পক্ষ হইতে এরূপ কিছুর পুনরাবৃত্তি দেখবে না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৫১৫৪.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার উচিৎ তার মেহমানের সম্মান করা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে তার উচিৎ প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫৫. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার দুই প্রতিবেশী পরিবার। তাহাদের মধ্যে কোন পরিবারকে আমি আগে [হাদিয়া] পাঠাবো? তিনি [রসূলুল্লাহ সাঃআঃ] বলিলেনঃ তাহাদের মধ্যে যে তোমার দরজার অতি নিকটে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৪ঃ দাস দাসীর হক

৫১৫৬. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর শেষ উপদেশ ছিলঃ সলাত, সলাত এবং দাস-দাসীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫৭. আল-মারূর ইবনি সুয়াইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি আর-রাবাযাহ নামক স্হানে আবু যার [রাদি.] কে দেখিতে পেলাম। তখন তিনি একটি চাদর পরিহিত ছিলেন এবং তার দাসও অনুরূপ চাদর পরিহিত ছিল। আল-মারুর [রাদি.] বলেন, লোকেরা বললো, হে আবু যার ! আপনি যদি আপনার দাস যে কাপড় পরেছে তা নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো আর আপনার দাসকে অন্য পোশাক পরাতেন তাহলে ভাল হতো। বর্ণনাকারী বলেন, আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি এক লোককে, [যার মা অনারব ছিলো] গালি দিয়েছিলাম এবং মন্দ ব্যবহার করেছিলাম। এতে সে আমার বিরুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট অভিযোগ করলে তিনি বলিলেনঃ হে আবু যার! তুমি এমন ব্যক্তি যে, তোমার মধ্যে জাহিলিয়াত রয়েছে। তিনি আরো বলিলেনঃ এরা তোমাদের ভাই; আল্লাহ তাহাদের উপর তোমাদেরকে মর্যাদা দিয়েছেন। এদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল না লাগে তাহাকে বিক্রি করে দাও। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে শাস্তি দিও না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫৮. আল-মারূর ইবনি সুয়াইদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা আর-রাবাযাহ নামক স্হানে আবু যার [রাদি.] এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। এ সময় তিনি ও তার দাস একই ধরনের চাদর পরিহিত ছিলেন। আমরা বলিলাম, আপনি যদি আপনার দাসের চাদরটি নিয়ে নিতেন তাহলে আপনার জোড়া পুরা হতো। আর তাহাকে অন্য পোশাক পরাতেন। তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের ভাইয়েরা, আল্লাহ এদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই রয়েছে তার উচিৎ সে নিজে যা খায় তাহাকেও তাই খেতে দেয়া, নিজে যা পরিধান করে তাহাকেও তাই পরতে দেয়া এবং তার অসাধ্য কোন কাজ তার উপর না চাপানো। আর যদি এমন কোন কষ্টসাধ্য কাজের ভার তাহাকে দেয়া হয় তাহলে সে যেন তাহাকে সাহায্য করে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৫৯. আবু মাসউদ আল-আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। এ সময় আমার পিছন হইতে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবু মাসউদ! জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার উপর এর চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার উপর ক্ষমতাবান। আমি পিছন হইতে তার এরূপ ডাক দুবার শুনতে পেলাম। আমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নাবী [সাঃআঃ]। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! সে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য স্বাধীন [আমি তাহাকে মুক্ত করে দিলাম]। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ তুমি যদি তাহাকে মুক্ত না করে দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করতো।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬০. আল-আমাশ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আল-আমাশ [রাদি.] সূত্রে এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরুপ বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক গোলামকে চাবুক দিয়ে প্রহার করেছিলাম। এতে দাসত্বমুক্ত করার কথা উল্লেখ নেই।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬১. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদেরকে খুশি করে তাহাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তাই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাহাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬২. রাফি ইবনি মাকীস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে নাবী [সাঃআঃ] এর সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ [দাস-দাসী বা চাকর–চাকরানীর সাথে] উত্তম ব্যবহার প্রাচূর্য বয়ে আনে এবং মন্দ আচরণ দুর্ভাগ্য টেনে আনে।{৫১৬০}

দুর্বলঃ যঈফাহ হা/৭৯৬। {৫১৬০} আহমাদ । সানাদে কতিপয় বনী রাফে রয়েছে । যাদের নাম উল্লেখ হয়নি । এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৬৩. আল-হারিস ইবনি রাফি ইবনি মাকীস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাফি [রাদি.] ছিলেন জুহাইনাহ গোত্রভুক্ত, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌র [সাঃআঃ] সঙ্গে হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ উত্তম ব্যবহার সৌভাগ্য বয়ে আনে, আর মন্দ ব্যবহার দুর্ভাগ্য বয়ে আনে।{৫১৬১}

{৫১৬১} এর পূর্বেরটি দেখুন। এর দুটি দোষ রয়েছেঃ এক, সনদের উসমান বিন যুফার জাহালাত । দুই, সনদ মুযতারিব। এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৬৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কাজের লোককে প্রতিদিন কতবার মাফ করবো? তিনি চুপ থাকলেন। লোকটি আবার একই প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ থাকলেন। তৃতীয় বার প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেনঃ প্রতিদিন সত্তর বার।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তাওবার নাবী আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামের উপর মিথ্যা অপবাদ দিবে, ক্বিয়ামাতের দিন তাহাকে বেত্রাঘাত করা হইবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬৬. হিলাল ইবনি ইয়াসাফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনি মুক্বাররিন [রাদি.] এর বাড়ীতে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে একজন মেজাজী বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি দাসী ছিল। তিনি তার চেহারায় চড় মারলেন। এ কারণে, সুয়াইদ [রাদি.] এতোটা উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাহাকে এমন উত্তেজিত হইতে আর দেখিনি। তিনি বলিলেন, একে আযাদ করা ব্যতীত তোমার জন্য অন্য কোন পথ নেই। তুমি দেখছো যে, আমাদের মুক্বাররিনের সাতটি সন্তান। আমাদের মাত্র একজন খাদেম ছিল। আমাদের কনিষ্ঠজন তার মুখে চড় মেরেছিল বিধায় নাবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে তাহাকে আযাদ করার নির্দেশ দিলেন।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬৭.মুআবিয়াহ ইবনি সুয়াইদ ইবনি মুক্বাররিন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমাদের এক দাসকে চড় মারলাম। আমার পিতা তাহাকে ও আমাকে ডেকে বলিলেন, তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নাও। আমার নাবী [সাঃআঃ]-এর যুগে মুক্বাররিন গোত্রের সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি খাদেম ছিল। আমাদের মধ্যকার একজন তাহাকে চড় মারলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ একে মুক্ত করে দাও। তারা বললো, এছাড়া আমাদের কোন খাদেম নেই। তিনি বলিলেনঃ এরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সে তাহাদের সেবা করিবে। তারা স্বাবলম্বী হলে তাহাকে যেন মুক্ত করে দেয়া হয়।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬৮. যাজান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি ইবনি উমারের [রাদি.] নিকট গেলাম। তিনি তার দাসকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তিনি মাটি হইতে এক টুকরো কাঠ বা অন্য কিছু উঠিয়ে বলিলেন, একে মুক্ত করায় আমার এর সমানও নেকি নেই। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে চড় মারবে বা মারধর করিবে, এর কাফফারাহ হলো তাহাকে মুক্ত করে দেয়া।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৫ঃ কর্তব্যপরায়ণ দাস সম্পর্কে

৫১৬৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে দাস যথাযথভাবে তার মালিকের প্রতি কর্তব্য আদায় করে এবং সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদতও করে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩৬ঃ যে কোন ক্রীতদাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়

৫১৭০. আবু হুরাইয়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি অন্যের স্ত্রীকে তাহাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা ক্রীতদাসকে তাহাঁর মনিবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply