আইয়ুব ইয়াকুব ইউসুফ আঃ এর বিষয়ে আল্লাহর বানী

আইয়ুব ইয়াকুব ইউসুফ আঃ এর বিষয়ে আল্লাহর বানী

আইয়ুব ইয়াকুব ইউসুফ আঃ এর বিষয়ে আল্লাহর বানী >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ (১৮-২০)=৩টি

৬০/১৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বানীঃ যখন ইয়াকুব (আঃ)-এর নিকট মৃত্যু এসেছিল, তখন কি তোমরা হাযির ছিলে? (আল-বাকারাহঃ ১৩৩)
৬০/১৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইউসুফ এবং তাহাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসাকারীদের জন্য অনেক নিদর্শন আছে। (ইউসুফঃ ৭)
৬০/২০. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ (আর স্মরণ কর) আইয়ুবের কথা। যখন তিনি তাহাঁর রবকে ডেকে বলিলেন, আমিতো দুঃখ কষ্টে পড়েছি, আর তুমিতো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (আম্বিয়াঃ ৮৩)।

৬০/১৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বানীঃ যখন ইয়াকুব (আঃ)-এর নিকট মৃত্যু এসেছিল, তখন কি তোমরা হাযির ছিলে? (আল-বাকারাহঃ ১৩৩)

৩৩৮২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, সম্মানী ব্যক্তি- যিনি সম্মানী ব্যক্তির সন্তান, যিনি সম্মানী ব্যক্তির সন্তান, যিনি সম্মানী ব্যক্তির সন্তান। তিনি হলেন, ইউসুফ ইবনু ইয়াকূব ইবনু ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (আলাইহিমুস সালাম)।

৬০/১৯. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইউসুফ এবং তাহাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসাকারীদের জন্য অনেক নিদর্শন আছে। (ইউসুফঃ ৭)

৩৩৮৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি উত্তর দিলেন, তাদের মধ্যে যে আল্লাহকে সবচেয়ে অধিক ভয় করে। তারা বলিলেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলিলেন, তাহলে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি হলেন, আল্লাহর নাবী‎ ইউসুফ ইবনু আল্লাহর নাবী‎ ইবনু আল্লাহর নাবী‎ ইবনু আল্লাহর খালিল (আঃ)। তাঁরা বলিলেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়েও জিজ্ঞেস করিনি। তখন তিনি বলিলেন, তাহলে তোমরা আমার নিকট আরবের খণি অর্থাৎ গোত্রগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছ? (তাহলে শুন) মানুষ খণি বিশেষ, জাহিলিয়্যাতের যুগে যারা তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিল, ইসলামেও তারা সর্বোত্তম ব্যক্তি, যদি তারা ইসলামী জ্ঞান লাভ করে।

আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী‎ (সাঃআঃ) এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।

৩৩৮৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) তাঁকে বলেছেন, আবু বাকর (রাদি.)-কে বল, তিনি যেন লোকদের সালাতে ইমামতি করেন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার জায়গায় তিনি দাঁড়াবেন, তখন (সাঃআঃ) বিগলিত অন্তর হয়ে পড়বেন। নাবী‎ (সাঃআঃ) পুনরায় একই কথা করিলেন, আয়েশা (রাদি.) আবারও সেই উত্তর দিলেন, শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তৃতীয় অথবা চতুর্থবার বলিলেন, [হে আয়েশা]! তোমরা ইউসুফ (আঃ)-এর ঘটনার নিন্দাকারী নারীদের মত। আবু বক্‌রকে বল (তিনি যেন লোকদের সালাতে ইমামতি করেন)।

৩৩৮৫. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী‎ (সাঃআঃ) যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন তিনি বলিলেন, আবু বক্‌রকে বল, তিনি যেন লোকদের সালাত আদায় করিয়ে দেন। তখন আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, আবু বকর (রাদি.) তো এ রকম লোক। অতঃপর নাবী‎ (সাঃআঃ) অনুরূপ বলিলেন, তখন আয়েশা (রাদি.) ও ঐরূপই বলিলেন, তখন নাবী‎ (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আয়েশাহ! নিশ্চয় তোমরা ইউসুফ (আঃ)-এর ঘটনার নিন্দাকারী নারীদের মত হয়ে গেছ। অতঃপর আবু বকর (রাদি.) নাবী‎ (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশায় ইমামত করিলেন। বর্ণনাকারী হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যায়িদা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, এখানে —– এর স্থলে —— আছে অর্থাৎ তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক।

৩৩৮৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দুআ করিয়াছেন, হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবু রবীআকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! সালাম ইবনু হিশামকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ! দুর্বল মুমিনদেরকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! মুযার গোত্রকে শক্তভাবে পাকড়াও করুন। হে আল্লাহ! এ গোত্রের উপর এমন দুর্ভিক্ষ ও অনটন নাযিল করুন যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ (আঃ)-এর যামানায় হয়েছিল।

৩৩৮৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ লূত (আঃ) -এর উপর রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় নিয়েছিলেন আর ইউসুফ (আঃ) যত দীর্ঘ সময় জেলখানায় কাটিয়েছেন, আমি যদি অত দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতাম এবং পরে রাজদূত আমার নিকট আসত তবে নিশ্চয়ই আমি তার ডাকে সাড়া দিতাম।

৩৩৮৮. মাসরূক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-এর মা উম্মু রুমানার নিকট আয়েশাহর বিষয়ে যে সব মিথ্যা অপবাদের কথা বলাবলি হচ্ছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমি আয়েশার সঙ্গে একত্রে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা এ কথা বলিতে বলিতে আমাদের নিকট প্রবেশ করিল। আল্লাহ অমুককে শাস্তি দিক। আর শাস্তি তো দিয়েছেন। এ কথা শুনে উম্মু রুমানা (রাদি.) বলিলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কথা বলার কারণ কী? সে মহিলাটি বলিল, ঐ লোকটিই তো কথাটির চর্চা করছে। তখন আয়েশা (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, কোন কথাটির? অতঃপর সে আয়েশা (রাদি.)-কে বিষয়টি জানিয়ে দিল। আয়েশা (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, বিষয়টি কি আবু বকর (রাদি.) ও রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -ও শুনেছেন? সে বলিল, হাঁ! এতে আয়েশা (রাদি.) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। পরে তাহাঁর হুশ ফিরে আসল তবে তাহাঁর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল। অতঃপর নাবী‎ (সাঃআঃ) এসে জিজ্ঞেস করিলেন, তার কী হল? আমি বললাম, তাহাঁর সম্পর্কে যা কিছু রটেছে তাতে সে (মনে) আঘাত পেয়েছে ফলে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় আয়েশা (রাদি.) উঠে বসলেন, আর বলিতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, আমি যদি কসম খেয়ে বলি তবুও আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না আর যদি উযর পেশ করি তাও আপনারা আমার উযর শুনবেন না। অতএব এখন আমার ও আপনাদের উপমা হল ইয়াকুব (আঃ) ও তাহাঁর ছেলেদের মত। আপনারা যা বর্ণনা করিয়াছেন সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য চাওয়া হল। অতঃপর নাবী‎ (সাঃআঃ) ফিরে চলে গেলেন এবং আল্লাহ যা নাযিল করার তা নাযিল করিলেন। তখন নাবী‎ (সাঃআঃ) এসে আয়েশা (রাদি.)-কে এ খবর জানালেন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, আমি একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করব অন্য কারো প্রশংসা নয়।

৩৩৮৯. উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী‎ (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিলেন আল্লাহ তাআলার বাণীঃ —————————– আয়াতাংশের মধ্যে —– হইবে, না —– হইবে? (যাল হরফে তাশদীদ সহ পড়তে হইবে না তাশদীদ ব্যতীত)? আয়েশা (রাদি.) বলেন, (এখানে —– নয়, —— হইবে) কেননা, তাঁদের কাওম তাঁদেরকে মিথ্যাচারী বলেছিল। [উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি বললাম, মহান আল্লাহর কসম, রাসুলগণের দৃঢ় প্রত্যয় ছিল যে, তাঁদের কাওম তাদেরকে মিথ্যাচারী বলেছে, আর তাতো সন্দেহের বিষয় ছিল না। (কাজেই এখানে ——- হইবে কিভাবে?) তখন আয়েশা (রাদি.) বলেন, হে উরাইয়াহ! এ ব্যাপারে তো তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। [উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি বললাম, সম্ভবতঃ এখানে —— হইবে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, মাআযাল্লাহ! রাসুলগণ কখনো আল্লাহ সম্পর্কে এরূপ ধারণা করিতেন না। (অর্থাৎ —— হলে অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ তাআলা রাসুলগণের সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন। অথচ রাসুলগণ কখনো এরূপ ধারণা করিতে পারে না।) তবে এ আয়াত সম্পর্কে আয়েশা (রাদি.) বলেন, তারা রাসুলগণের অনুসারী যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রাসুলগণকে বিশ্বাস করিয়াছেন। তাঁদের উপর পরীক্ষা দীর্ঘায়িত হয়। তাঁদের প্রতি সাহায্য পৌঁছতে বিলম্ব হয়। অবশেষে রাসুলগণ যখন তাঁদের কাওমের লোকদের মধ্যে যারা তাঁদেরকে মিথ্যা মনে করেছে, তাদের ঈমান আনার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা এ ধারণা করিতে লাগলেন যে, তাঁদের অনুসারীগণও তাঁদেরকে মিথ্যাচারী মনে করবেন, ঠিক এ সময়ই মহান আল্লাহর সাহায্য পৌঁছে গেল। ——- শব্দটি ——- এর ওজনে এসেছে। ———- হইতে নিষ্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ তারা ইউসুফ (আঃ) হইতে নিরাশ হয়ে গেছে। ————— এর অর্থ তোমরা আল্লাহর রহমত হইতে নিরাশ হয়ো না।

৩৩৯০. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী‎ (সাঃআঃ) বলেন, সম্মানিত ব্যক্তি যিনি সম্মানিত ব্যক্তির সন্তান, যিনি সম্মানিত ব্যক্তির সন্তান, যিনি সম্মানিত ব্যক্তির সন্তান, তিনি হলেন, ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (আঃ)।

Comments

Leave a Reply