ইমাম নির্বাচন ও ইমাম নির্ধারণ করা হয় অনুসরণ করার জন্য
ইমাম নির্বাচন ও ইমাম নির্ধারণ করা হয় অনুসরণ করার জন্য >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ১০, আযান, অধ্যায়ঃ (৪৬-৭০)=২৫টি
১০/৪৬. অধ্যায়ঃ বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতের অধিক যোগ্য।
১০/৪৭. অধ্যায়ঃ কারণবশত ইমামের পাশে দাঁড়ানো।
১০/৪৮. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি লোকদের ইমামত করার জন্য অগ্রসর হলে যদি পূর্ব (নির্ধারিত) ইমাম এসে যান তাহলে তিনি পিছে সরে আসুন বা না আসুন উভয় অবস্থায় তাহাঁর সালাত আদায় হয়ে যাবে।
১০/৪৯. অধ্যায়ঃ কয়েক ব্যক্তি কিরাআত পাঠে সমান হলে, তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি ইমাম হইবেন।
১০/৫০. অধ্যায়ঃ ইমাম অন্য লোকদের নিকট উপস্থিত হলে, তাদের ইমামত করিতে পারেন।
১০/৫১. অধ্যায়ঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় অনুসরণ করার জন্য।
১০/৫২. অধ্যায়ঃ মুক্তাদীগণ কখন সিজদাতে যাবেন?
১০/৫৩. অধ্যায়ঃ ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহ।
১০/৫৪. অধ্যায়ঃ গোলাম, আযাদকৃত গোলাম, অবৈধ সন্তান, বেদুঈন ও অপ্রাপ্ত বয়স্কের ইমামত।
১০/৫৫. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম সালাত সম্পূর্ণভাবে আদায় না করেন আর মুক্তাদীগণ তা সম্পূর্ণভাবে আদায় করেন।
১০/৫৬. অধ্যায়ঃ ফিতনাবাজ ও বিদআতীর ইমামত।
১০/৫৭. অধ্যায়ঃ দুজন সালাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।
১০/৫৮. অধ্যায়ঃ যদি কেউ ইমামের বাম পাশে দাঁড়ায় এবং ইমাম তাকে ডান পাশে নিয়ে আসেন, তবে কারো সালাত নষ্ট হয় না ।
১০/৫৯. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম ইমামাতের নিয়্যত না করেন এবং পরে কিছু লোক এসে শামিল হয় এবং তিনি তাদের ইমামাত করেন
১০/৬০. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম সালাত দীর্ঘ করেন এবং কেউ প্রয়োজনবশতঃ (জামাআত হইতে) বেরিয়ে এসে (একাকী) সালাত আদায় করে ।
১০/৬১. অধ্যায়ঃ ইমাম কর্তৃক সালাতে কিয়াম সংক্ষিপ্ত করা এবং রুকু ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করা
১০/৬২. অধ্যায়ঃ একাকী সালাত আদায় করলে ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘায়িত করিতে পারে ।
১০/৬৩. অধ্যায়ঃ ইমাম সালাত দীর্ঘায়িত করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ।
১০/৬৪. অধ্যায়ঃ সালাত সংক্ষেপে এবং পূর্ণভাবে আদায় করা ।
১০/৬৫. অধ্যায়ঃ শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা ।
১০/৬৬. অধ্যায়ঃ নিজের সালাত আদায় করার পর অন্য লোকের ইমামাত করা।
১০/৬৭ অধ্যায়: লোকদেরকে ইমামের তাকবীর শোনান ।
১০/৬৮. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির ইমামের অনুসরণ করা এবং অন্যদের সেই মুক্তাদীর ইক্তিদা করা।
১০/৬৯. অধ্যায়ঃ ইমামের সন্দেহ হলে মুক্তাদীদের মত গ্রহণ করা ।
১০/৭০. অধ্যায়ঃ সালাতে ইমাম কেঁদে ফেললে ।
১০/ ৪৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সালাত ও তাহাঁর নিয়ম-নীতি শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন ।
৬৭৭. আবু কিলাবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাদি.) আমাদের এ মসজিদে এলেন। তিনি বলিলেন, আমি অবশ্যিই তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করবো, বস্তুত আমার উদ্দেশ্য সালাত আদায় করা নয় বরং নাবী (সাঃআঃ)-কে আমি যেভাবে সালাত আদায় করিতে দেখেছি, তা তোমাদের দেখানোই আমার উদ্দেশ্য। [আইয়ূব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমি আবু কিলাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কিরূপে সালাত আদায় করিতেন? তিনি বলিলেন, আমাদের এই শাইখের মত আর শাইখ প্রথম রাকআতের সিজদা শেষ করে যখন মাথা উত্তোলন করিতেন, তখন দাঁড়ানোর আগে একটু বসতেন।
১০/৪৬. অধ্যায়ঃ বিজ্ঞ ও মর্যাদাশীল ব্যক্তিই ইমামতের অধিক যোগ্য।
৬৭৮. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, ক্রমে তাহাঁর অসুস্থতা তীব্রতর হলে তিনি বলিলেন, আবু বক্রকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে বল। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক, যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে পারবেন না। নাবী (সাঃআঃ) আবার বলিলেন, আবু বক্রকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়েশা (রাদি.) আবার সে কথা বলিলেন। তখন তিনি আবার বলিলেন, আবু বকর (রাদি.) -কে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফের (আঃ) সাথী মহিলাদের মতোই। অতঃপর একজন সংবাদদাতা আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট সংবাদ নিয়ে আসলেন এবং তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর জীবদ্দশাতেই লোকদেরকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করিলেন।
৬৭৯. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বলিলেন, আবু বকর (রাদি.) -কে বল সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাদি.) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তাহাঁর কান্নার দরুন লোকেরা তাহাঁর কিছু্ই শুনতে পাবে না। কাজেই উমর (রাদি.) -কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিন। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি হাফ্সা (রাদি.) -কে বললাম, তুমিও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বল যে, আবু বকর (রাদি.) আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার জন্য লোকেরা কিছুই শুনতে পাবে না। তাই উমর (রাদি.) -কে লোকদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিন। হাফ্সা (রাদি.) তাই করিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, থামো, তোমরা ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গী মহিলাদের মত। আবু বকর (রাদি.) -কে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে বল। তখন হাফ্সা (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) -কে বলিলেন, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও ভাল কিছু পেলাম না।
৬৮০. আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.) যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর অনুসারী, খাদিম এবং সাহাবী ছিলেন হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অন্তিম রোগে পীড়িত অবস্থায় আবু বকর (রাদি.) সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করিতেন। অবশেষে যখন সোমবার এল এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়াল, তখন নাবী (সাঃআঃ) হুজরার পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাহাঁর চেহারা যেন কুরআনে করীমের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখিতে পেয়ে খুশীতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম এবং আবু বকর (রাদি.) কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নাবী (সাঃআঃ) হয়তো সালাতে বেরিয়ে আসবেন। নাবী (সাঃআঃ) আমাদেরকে ইশারায় জানালেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। অতঃপর তিনি পর্দা ছেড়ে দিলেন। সে দিনই তাহাঁর ওফাত হয়।
৬৮১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (রোগাক্রান্ত থাকায়) তিনদিন পর্যন্ত নাবী (সাঃআঃ) বাইরে আসেননি। এমতাবস্থায় একসময় সালাতের ইকামত দেয়া হল। আবু বকর (রাদি.) ইমামত করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নাবী (সাঃআঃ)-এর চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তাহাঁর চেহারার চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমরা আর কথনো দেখিনি। যখন তাহাঁর চেহারা আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নাবী (সাঃআঃ) হাতের ইঙ্গিতে আবু বকর (রাদি.) -কে (ইমামতের জন্য) এগিয়ে যেতে বলিলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। তারপর মৃত্যুর আগে তাঁকে আর দেখিতে পাইনি।
৬৮২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর রোগ যখন খুব বেড়ে গেল, তখন তাঁকে সালাতের জামাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বলিলেন, আবু বক্রকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেয়। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর (রাদি.) অত্যস্ত কোমল মনের লোক। কিরআতের সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন। তিনি বলিলেন, তাঁকেই সালাত আদায় করিতে বল। আয়েশা (রাদি.) সে কথার পুনরাবৃত্তি করিলেন। তিনি আবার বলিলেন, তাঁকেই সালাত আদায় করিতে বল। তোমরা ইউসুফ (আঃ)-এর সাথী মহিলাদের মতো।
এ হাদীসটি যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে যুবাইদী, যুহরীর ভাতিজা ও ইসহাক ইবনু ইয়াহইয়া কালবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। এবং মামার ও উকাইল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে হামযা (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীসটি (মুরসাল হিসেবে) বর্ণনা করেন।
১০/৪৭. অধ্যায়ঃ কারণবশত ইমামের পাশে দাঁড়ানো।
৬৮৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, অস্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু বকর (রাদি.) -কে লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, ইতিমধ্যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একটু সুস্থতা বোধ করিলেন এবং সালাতের জন্য বেরিয়ে আসলেন। তখন আবু বকর (রাদি.) লোকদের ইমামত করছিলেন। তিনি নাবী (সাঃআঃ) কে দেখে পিছিয়ে আসতে চাইলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে ইঙ্গিত করিলেন যে, যেভাবে আছ সেভাবেই থাক। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু বকর (রাদি.)-এর বরাবর তাহাঁর পাশ বসে গেলেন। তখন আবু বকর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিলেন আর লোকেরা আবু বকর (রাদি.) -কে অনুসরণ করে সালাত আদায় করছি।
১০/৪৮. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি লোকদের ইমামত করার জন্য অগ্রসর হলে যদি পূর্ব (নির্ধারিত) ইমাম এসে যান তাহলে তিনি পিছে সরে আসুন বা না আসুন উভয় অবস্থায় তাহাঁর সালাত আদায় হয়ে যাবে।
এ মর্মে আয়েশা (রাদি.) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছে।
৬৮৪. সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমর ইবনু আওফ গোত্রের এক বিবাদ মীমাংসার জন্য সেখানে যান। ইতিমধ্যে (আসরের) সালাতের সময় হয়ে গেলে, মুয়ায্যিন আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিলেন, আপনি কি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেবেন? তা হলে ইকামত দেই? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আবু বকর (রাদি.) সালাত আরম্ভ করিলেন। লোকেরা সালাতরত অবস্থাতেই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আসলেন এবং তিনি সারিগুলো ভেদ করে প্রথম সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। তখন সাহাবীগণ হাতে তালি দিতে লাগলেন। আবু বকর (রাদি.) সালাতে আর কোন দিকে তাকাতেন না। কিন্তু সাহাবীগণ যখন অধিক করে হাতে তালি দিতে লাগলেন, তখন তিনি তাকালেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে দেখিতে পেলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর প্রতি ইঙ্গিত করিলেন- নিজের জায়গায় থাক। তখন আবু বকর (রাদি.) দুহাত উঠিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নির্দেশের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে পিছিয়ে গেলেন এবং কাতারের বরাবর দাঁড়ালেনন। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সামনে এগিয়ে সলাত আদায় করিলেন। সালাত শেষ করে তিনি বলিলেন, হে আবু বক্র! আমি তোমাকে নির্দেশ দেয়ার পর কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছিল? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আবু কুহাফার পুত্রের জন্যে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা শোভনীয় নয়। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের এক হাতে তালি দিতে দেখলাম। কারণ কী? শোন! সালাতের কারো কিছু ঘটলে সুবহানাল্লাহ বলবে। সুবহানাল্লাহ বললেই তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হইবে। আর হাতে তালি দেয়া তো মহিলাদের জন্য।
১০/৪৯. অধ্যায়ঃ কয়েক ব্যক্তি কিরাআত পাঠে সমান হলে, তাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি ইমাম হইবেন।
৬৮৫. মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একদল যুবক একদা নাবী (সাঃআঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং প্রায় বিশ রাত্রি আমরা সেখানে থাকলাম। নাবী (সাঃআঃ) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তাই তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা যখন নিজ দেশে ফিরে গিয়ে লোকদের দ্বীন শিক্ষা দিবে, তখন তাদের এ সময়ে অমুক সালাত আদায় করিতে বলবে এবং ঐ সময়ে অমুক সালাত আদায় করিতে বলবে। অতঃপর যখন সালাতের সময় হয় তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে বয়সে বড় ব্যক্তি ইমামত করিবে।
১০/৫০. অধ্যায়ঃ ইমাম অন্য লোকদের নিকট উপস্থিত হলে, তাদের ইমামত করিতে পারেন।
৬৮৬. ইতবান ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (আমার গৃহে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গাটি আমার সালাত আদায়ের জন্য তুমি পছন্দ কর। আমি আমার পছন্দসই একটি স্থান ইঙ্গিত করে দেখালে তিনি সেখানে সালাতের জন্য দাঁড়ালেন, আমরা তাহাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আমরা সালাম ফিরালাম।
১০/৫১. অধ্যায়ঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় অনুসরণ করার জন্য।
যে রোগে নাবী (সাঃআঃ)-এর ওফাত হয়, সে সময় তিনি বসে বসে লোকদের ইমামত করিয়াছেন। ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বলেন, কেউ যদি ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তাহলে ফিরেগিয়ে ততটুকু সময় বিলম্ব করিবে, যতটুকু সময় মাথা উঠিয়ে রেখেছিল। অতঃপর ইমামকে অনুসরণ করিবে। হাসান বাসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু সহ দুরাকআত সালাত আদায় করে, কিন্তু সিজদা দিতে পারে না, সে শেষ রাকআতের জন্য দুসিজদা করিবে এবং প্রথম রাকআত সিজদাসহ পুনরায় আদায় করিবে। আর যে ব্যক্তি ভুলক্রমে এক সিজদা না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, সে (পরের রাকআতে) সে সিজদা করে নিবে।
৬৮৭. উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বললাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর (অন্তিম কালের) অসুস্থতা সম্পর্কে কি আপনি আমাকে কিছু শুনাবেন? তিনি বলিলেন, অবশ্যই। নাবী (সাঃআঃ) মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসুল! তাঁরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি বলিলেন, আমার জন্য গোসলের পানি দাও। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করিলেন। অতঃপর একটু উঠতে চাইলেন, কিন্তু বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর একটু হুঁশ ফিরে পেলে আবার তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসুল! তাঁরা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলিলেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি রাখ। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল করিলেন। আবার উঠতে চাইলেন, কিন্তু বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হুঁশ ফিরে পেয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসুল! তাঁরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলিলেন, আমার জন্য গোসলের পাত্রে পানি রাখ। অতঃপর তিনি উঠে বসলেন, এবং গোসল করিলেন। এবং উঠতে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর আবার হুঁশ ফিরে পেলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, লোকেরা কি সালাত আদায় করে ফেলেছে? আমরা বললাম, না, হে আল্লাহর রাসুল! তাঁরা আপনার জন্য অপেক্ষারত। ওদিকে সাহাবীগণ ইশার সালাতের জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর অপেক্ষায় মাসজিদে বসে ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট এ মর্মে লোক পাঠালেন যে, তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলরেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আপনাকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আবু বকর (রাদি.) অত্যস্ত কোমল মনের লোক ছিলেন, তাই তিনি উমর (রাদি.) -কে বলিলেন, হে উমর! আপনি সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করে নিন। উমর (রাদি.) বলিলেন, আপনিই এর অধিক যোগ্য। তাই আবু বকর (রাদি.) সে কয়দিন সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) একটু নিজে হাল্কাবোধ করিলেন এবং দুজন লোকের কাঁধে ভর করে যুহরের সালাতের জন্য বের হলেন। সে দুজনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাদি.)। আবু বকর (রাদি.) তখন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি যখন নাবী (সাঃআঃ) -কে দেখিতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে পিছিয়ে না আসার জন্য ইঙ্গিত করিলেন এবং বলিলেন, তোমরা আমাকে তাহাঁর পাশে বসিয়ে দাও। তাঁরা তাঁকে আবু বকর (রাদি.)-এর পাশে বসিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু বকর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সালাতের ইক্তিদা করে সালাত আদায় করিতে লাগলেন। আর সাহাবীগণ আবু বকর (রাদি.)-এর সালাতের ইক্তিদা করিতে লাগলেন। নাবী (সাঃআঃ) তখন উপবিষ্ট ছিলেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর অন্তিম কালের অসুস্থতা সম্পর্কে আয়েশা (রাদি.) আমাকে যে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ণনা করব না? তিনি বলিলেন, করুন। তাই আমি তাঁকে সে হাদীস শুনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশেই আপত্তি করিলেন না, তবে তাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করিলেন যে, আব্বাস (রাদি.)-এর সাথে যে অপর এক সাহাবী ছিলেন,আয়েশা (রাদি.) কি আপনার নিকট তাহাঁর নাম বলেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তিনি আলী (রাদি.)।
৬৮৮. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার অসুস্থ থাকার কারণে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজগৃহে সালাত আদায় করেন এবং বসে সালাত আদায় করছিলেন, একদল সাহাবী তাহাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিতে লাগলেন। তিনি তাদের প্রতি ইঙ্গিত করিলেন যে, বসে যাও। সালাত শেষ করার পর তিনি বলিলেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাহাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই সে যখন রুকূ করে তোমরাও রুকূ করিবে এবং সে যখন রুকূ হইতে মাথা উঠায় তখন তোমরাও মাথা উঠাবে, আর সে যখন বসে সালাত আদায় করে, তখন তোমরা সবাই বসে সালাত আদায় করিবে। [১]
[১] এ হুকুম পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু রোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রহিত হয়ে গেছে। কাজেই ইমাম বসে সালাত আদায় করলেও সক্ষম মুক্তাদী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন।
৬৮৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘোড়ায় সওয়ার হন অতঃপর তিনি তা হইতে পড়ে যান, এতে তার ডান পাশে একটু আঘাত লাগে। তিনি কোন এক ওয়াক্তের সালাত বসে আদায় করছিলেন, আমরাও তাহাঁর পিছনে বসে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ করার পর তিনি বলিলেন, ইমাম নির্ধারণই করা হয় তাহাঁর ইক্তিদা করার জন্য। কাজেই ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিবে, সে যখন রুকূ করে থাকে তোমরাও রুকূ করিবে, সে যখন উঠে, তখন তোমরাও উঠবে, আর সে যখন
سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه
বলে তখন তোমরা
رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ
বলবে। আর সে যখন বসে সালাত আদায় করে, তখন তোমরা সবাই বসে সালাত আদায় করিবে। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হুমাইদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, “যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করে, তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করিবে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এ নির্দেশ ছিলো পূর্বে অসুস্থকালীন। অতঃপর তিনি বসে সালাত আদায় করেন এবং সাহাবীগণ তাহাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, কিন্তু তিনি তাদের বসতে নির্দেশ দেননি। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর আমলের মধ্যে সর্বশেষ আমলই গ্রহণ করিতে হইবে।
১০/৫২. অধ্যায়ঃ মুক্তাদীগণ কখন সিজদাতে যাবেন?
আনাস (রাদি.) বলেন, যখন ইমাম সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করিবে।
৬৯০. বারাআ (রাদি.) তিনি মিথ্যাবাদী নন [১] হইতে বর্ণিতঃ
যিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)
سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه
বলার পর যতক্ষণ পর্যন্ত না সিজদায় না যেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ বাঁকা করিতেন না। তিনি সিজদায় যাওয়ার পর আমরা সিজদায় যেতাম।
সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।
[১] هُوَ غَيرُ كُذوُبٍ তিনি মিথ্যাবাদী নন একথা বলে হযরত বারাআ (রা.) – এর সত্যবাদীতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করিয়াছেন।
১০/৫৩. অধ্যায়ঃ ইমামের পূর্বে মাথা উঠানো গুনাহ।
৬৯১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলে, তখন সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মাথা গাধার মাথায় পরিণত করে দিবেন, তার আকৃতি গাধার আকৃতি করে দেবেন।
১০/৫৪. অধ্যায়ঃ গোলাম, আযাদকৃত গোলাম, অবৈধ সন্তান, বেদুঈন ও অপ্রাপ্ত বয়স্কের ইমামত।
আয়েশা (রাদি.) এর গোলাম যাকওয়ান কুরআন দেখে কিরাআত পড়ে আয়েশা (রাদি.)-এর ইমামত করিতেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তাদের মধ্যে যে আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে অধিক জানে সে তাদের ইমামত করিবে। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,] বিনা কারণে গোলামকে জামাতে উপস্থিত হইতে বাধা দেয়া যাবে না]।
৬৯২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর (মদীনায়) আগমনের পূর্বে মুহাজিরগণের প্রথম দল যখন কুবা এলাকার কোন এক স্থানে এলেন, তখন আবু হুযাইফা (রাদি.)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম (রাদি.) তাঁদের ইমামত করিতেন। তাঁদের মধ্যে তিনি কুরআন সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ ছিলেন।
৬৯৩. আনাস ইবন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা শোন ও আনুগত্য কর, যদিও তোমাদের উপর এমন কোন হাবশীকে নেতা নিযুক্ত করা হয়-যার মাথা কিসমিসের মতো।
১০/৫৫. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম সালাত সম্পূর্ণভাবে আদায় না করেন আর মুক্তাদীগণ তা সম্পূর্ণভাবে আদায় করেন।
৬৯৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তারা তোমাদের ইমামত করে। যদি তারা সঠিকভাবে আদায় করে তাহলে তার সওয়াব তোমরা পাবে। আর যদি তারা ভুল করে, তাহলে তোমাদের জন্য সওয়াব আছে, আর ভুলত্রুটির দায়িত্ব তাদের (ইমামের) উপরই বর্তাবে।
১০/৫৬. অধ্যায়ঃ ফিতনাবাজ ও বিদআতীর ইমামত।
হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তাহাঁর পিছনেও সালাত আদায় করে নিবে। তবে বিদআতের গুনাহ তার উপরই বর্তাবে।
৬৯৫. আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী রহঃ) বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উবাইদুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উসমান ইবনু আফ্ফান (রাদি.) অবরুদ্ধ থাকার সময় তাহাঁর নিকট গিয়ে বলিলেন, আসলে আপনিই জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ কী তা নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামত করছে বিদ্রোহীদের নেতা। ফলে আমরা গুনাহগার হবার ভয় করছি। তিনি বলিলেন, মানুষের আমলের মধ্যে সালাতই সবোর্ত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে অংশ নিবে, আর যখন তারা মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মন্দ কাজ হইতে বেঁচে থাকবে।
যুবাইদী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন যে, যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, যারা ইচ্ছে করে হিজড়া সাজে, তাদের পিছনে বিশেষ জরুরী ছাড়া সালাত আদায় করা উচিত বলে মনে করি না।
৬৯৬. আনাস (ইবনু মালিক) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আবু যার (রাদি.) -কে বলেন, শোন এবং আনুগত্য কর, যদিও কোন হাবশী আমীর হয় যার মাথা কিস্মিসের মতো।
১০/৫৭. অধ্যায়ঃ দুজন সালাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।
৬৯৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাদি.) এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাকআত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাহাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাহাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর আরও দুরাকআত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাহাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।
১০/৫৮. অধ্যায়ঃ যদি কেউ ইমামের বাম পাশে দাঁড়ায় এবং ইমাম তাকে ডান পাশে নিয়ে আসেন, তবে কারো সালাত নষ্ট হয় না ।
৬৯৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (আমার খালা) মাইমুনা (রাদি.) এর ঘরে ঘুমালাম, নাবী (সাঃআঃ) সে রাতে তাহাঁর নিকট ছিলেন। তিনি (নাবী সাঃআঃ) উযূ করিলেন। অতঃপর সালাতে দাঁড়ালেন। আমিও তাহাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিমি আমাকে ধরে তাহাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। আর তিনি তের রাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন, এমনকি তাহাঁর নাক ডাকতে শুরু করিল এবং তিনি যখন ঘুমাতেন তাহাঁর নাক ডাকত। অতঃপর তাহাঁর নিকট মুয়াজ্জিন এলেন, তিনি বেরিয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করিলেন এবং (নতুন) উযূ করেননি। আমর (রাদি.) বলেন, এ হাদীস আমি বুকায়র (রাদি.) কে শুনালে তিনি বলেন, কুরায়ব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও এ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন।
১০/৫৯. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম ইমামাতের নিয়্যত না করেন এবং পরে কিছু লোক এসে শামিল হয় এবং তিনি তাদের ইমামাত করেন ।
৬৯৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি আমার খালা মায়মুনা (রাদি.) এর নিকট রাত্রি যাপন করলাম। নাবী (সাঃআঃ) রাতের সালাতে দাঁড়ালেন, আমিও তাহাঁর সাথে সালাত আদায় করিতে দাঁড়ালাম। আমি তাহাঁর বামপাশে দাড়িয়ে ছিলাম, তিনি আমার মাথা ধরে তাহাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন।
১০/৬০. অধ্যায়ঃ যদি ইমাম সালাত দীর্ঘ করেন এবং কেউ প্রয়োজনবশতঃ (জামাআত হইতে) বেরিয়ে এসে (একাকী) সালাত আদায় করে ।
৭০০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের ইমামাত করিতেন।
৭০১. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, মুআয ইবনু জাবাল (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করার পর ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের সাথে ইমামাত করিতেন। একদা তিনি ইশার সালাতে সুরা বাক্বারা পাঠ করেন। এতে এক ব্যক্তি জামাআত হইতে বেরিয়ে যায়। এজন্য মুআয (রাদি.) তাহাঁর সমালোচনা করেন। এ খবর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পৌঁছলে তিনি তিনবার فَتّاَنُ (ফিতনাহ সৃষ্টিকারী) অথবা فاَتِناً (বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী) শব্দটি বলিলেন। এবং তিনি তাকে আওসাতে মুফাস্সালের দুটি সুরা পাঠের নির্দেশ দেন। আমর (রাদি.) বলেন, কোন দুটি সুরার কথা তিনি বলেছিলেন, তা আমার স্মরণ নেই।
১০/৬১. অধ্যায়ঃ ইমাম কর্তৃক সালাতে কিয়াম সংক্ষিপ্ত করা এবং রুকু ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করা
৭০২. আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর শপথ! আমি অমূকের কারনে ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। তিনি (জামআতে) সালাতকে খুব দীর্ঘ করেন। আবু মাসউদ (রাদি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে নসীহাত করিতে গিয়ে সে দিনের ন্যায় এতও অধিক রাগান্বিত হইতে আর কোনদিন দেখিনি। তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ অন্য লোক দিয়ে সালাত আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মধ্য দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতওয়ালা লোকও থাকে।
১০/৬২. অধ্যায়ঃ একাকী সালাত আদায় করলে ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘায়িত করিতে পারে ।
৭০৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে, তখন যেন সে সংক্ষেপ করে। কেননা, তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃর্দ্ধ রয়েছে। আর কেউ যদি একাকী সালাত আদায় করে, তখন ইচ্ছামত দীর্ঘ করিতে পারে।
১০/৬৩. অধ্যায়ঃ ইমাম সালাত দীর্ঘায়িত করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ।
আবু উসাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, বেটা! তুমি আমাদের সালাত দীর্ঘায়িত করে ফেলেছ ।
৭০৪. আবু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সাহাবী এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! অমুক ব্যক্তির জন্য আমি ফজরের সালাতে অনুপস্থিত থাকি। কেননা, তিনি আমাদের সালাত খুব দীর্ঘায়িত করেন। এ শুনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাগান্বিত হলেন। আবু মাসউদ (রাদি.) বলেন, নসীহাত করিতে গিয়ে সে দিন তিনি যেমন রাগান্বিত হয়েছিলেন, সে দিনের মত রাগান্বিত হইতে তাঁকে আর কোন দিন দেখিনি। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী রয়েছে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামাত করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কেননা, তার পিছনে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতওয়ালা লোকেরা রয়েছে।
৭০৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈক সাহাবী দুটি উটের পিঠে পানি নিয়ে আসছিলেন। রাতের অন্ধকার তখন ঘনীভূত হয়ে এসেছিল। এ সময় তিনি মুআয (রাদি.) কে সালাত আদায়রত পান, তিনি তার উট দুটি বসিয়ে মুআয (রাদি.)-এর দিকে (সালাত আদায় করিতে) এগিয়ে গেলেন। মুআয (রাদি.) সুরা বাক্বারা বা সুরা আন-নিসা পড়তে শুরু করেন। এতে তিনি সাহাবী (জামাআত ছেড়ে) চলে যান। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মুআয (রাদি.) এ জন্য তার সমালোচনা করিয়াছেন। তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট এসে মুআয (রাদি.)- এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এতে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে মুআয! তুমি কি লোকদের ফিতনায় ফেলতে চাও? বা তিনি বলেছিলেন, তুমি কি ফিতনা সৃষ্টিকারী? তিনি একথা তিনবার বলেন। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ, وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا এবং
وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰ (সুরা)
দ্বারা সালাত আদায় করলে না কেন? কারণ, তোমার পিছনে দুর্বল, বৃদ্ধ ও হাজতওয়ালা লোক সালাত আদায় করে থাকে।
[শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমার ধারনা শেষোক্ত বাক্যটিও হাদীসের অংশ। সায়ীদ ইবনু মাসরূক, মিসওআর এবং শাইবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও অনুরূপ রিওয়ায়াত করিয়াছেন। আমর, উবাইদুল্লাহ ইবনু মিকসাম এবং আবু যুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন যে, মুআয (রাদি.) ইশার সালাতে সুরা বাকারাহ পাঠ করেছিলেন। আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও মুহারিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে এরূপই রিওয়ায়াত করেন।
১০/৬৪. অধ্যায়ঃ সালাত সংক্ষেপে এবং পূর্ণভাবে আদায় করা ।
৭০৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালাত সংক্ষেপে এবং পূর্ণভাবে আদায় করিতেন।
১০/৬৫. অধ্যায়ঃ শিশুর কান্নাকাটির কারণে সালাত সংক্ষেপ করা ।
৭০৭. আবু ক্বাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমি অনেক সময দীর্ঘ করে সালাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাঁড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত সংক্ষেপ করি। কারণ শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করি না। বিশ্র ইবনু বক্র, বাকিয়্যাহ ও ইবনু মুবারাক আওযায়ী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
৭০৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং পূর্ণাঙ্গ সালাত আর কোন ইমামের পিছনে আদায় করিনি। আর তা এজন্য যে, তিনি শিশুর কান্না শুনতে পেতেন এবং তার মায়ের ফিতনায় পড়ার আশংকায় সংক্ষেপ করিতেন।
৭০৯ .আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তা আমি জানি।
৭১০. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত শুরু করি এবং শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, আমি জানি শিশু কান্না করলে মায়ের মন খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
১০/৬৬. অধ্যায়ঃ নিজের সালাত আদায় করার পর অন্য লোকের ইমামাত করা।
৭১১. জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুআয (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করে নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তাদের ইমামাত করিতেন।
১০/৬৭ অধ্যায়: লোকদেরকে ইমামের তাকবীর শোনান ।
৭১২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকাকালে একবার বিলাল (রাদি.) তাহাঁর নিকট এসে সালাতের (সময় হওয়ার) সংবাদ দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃআবু বক্রকে বল, যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। [আয়েশা (রাদি.) বলিলেন] আমি বললাম, আবু বকর (রাদি.) কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাআত পড়তে পারবেন না। তিনি আবার বললেনঃআবু বকরকে বল, সালাত আদায় করিতে। আমি আবারও সেকথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বলিলেন, তোমরা তো ইউসুফের (আঃ)–সাথী রমণীদেরই মত। আবু বকর (রাদি.) কে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আবু বকর (রাদি.) লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে লাগলেন, ইতিমধ্যে নাবী (সাঃআঃ) দুজন লোকের কাঁধে ভর করে বের হলেন। [আয়েশা (রাদি.) বললেনঃ] আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখিতে পাই, তিনি দুপা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। আবু বকর (রাদি.) তাঁকে দেখিতে পেয়ে পিছনে সরে আসতে লাগলেন। নাবী (সাঃআঃ) ইঙ্গিতে তাঁকে সালাত আদায় করিতে বলিলেন, (তবুও) আবু বকর (রাদি.) পিছনে সরে আসলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর পাশে বসলেন, আবু বকর (রাদি.) তাকবীর শুনাতে লাগলেন।
মুহাযির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) –এর অনুসরণ করিয়াছেন।
১০/৬৮. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তির ইমামের অনুসরণ করা এবং অন্যদের সেই মুক্তাদীর ইক্তিদা করা।
বর্ণিত আছে যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমার অনুসরণ করিবে, তোমাদের পিছনের লোকেরা যেন তোমাদের ইকতিদা করে ।
৭১৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন (রোগে) পীড়িত হয়ে পড়েছিলেন, বিলাল (রাদি.) এসে সালাতের কথা বলিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আবু বক্রকে বল, লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বকর (রাদি.) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাদি.)-কে এ নির্দেশ দেন (তবে ভাল হয়)। তিনি (সাঃআঃ) আবার বললেনঃ লোকদের নিয়ে আবু বকর (রাদি.)-কে সালাত আদায় করিতে বল। আমি হাফ্সাহ (রাদি.) কে বললাম, তুমি তাঁকে একটু বল যে, আবু বকর (রাদি.) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন আপনার বদলে সে স্থানে দাঁড়াবেন, তখন সাহাবীগণকে কিছুই শোনাতে পারবেন না। যদি আপনি উমর (রাদি.)-কে এ নির্দেশ দিতেন (তবে ভালো হতো)। এ শুনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা ইউসুফের সাথী নারীদেরই মতো। আবু বক্রকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে বল। আবু বকর (রাদি.) লোকদের নিয়ে সালাত শুরু করিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজে একটু সুস্থবোধ করিলেন এবং দুজন সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মসজিদে গেলেন। তাহাঁর দুপা মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। আবু বকর (রাদি.) যখন তাহাঁর আগমন টের পেলেন, পিছনে সরে যেতে উদ্যত হলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার প্রতি ইঙ্গিত করিলেন (স্বস্থানে থাকার জন্য)। অতঃপর তিনি এসে আবু বকর (রাদি.)-এর বামপাশে বসে গেলেন। অবশেষে আবু বকর (রাদি.) দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। আর সাহাবীগণ আবু বকর (রাদি.) এর সালাতের অনুসরণ করছিল।
১০/৬৯. অধ্যায়ঃ ইমামের সন্দেহ হলে মুক্তাদীদের মত গ্রহণ করা ।
৭১৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দু রাকআত আদায় করে সালাত শেষ করে ফেললেন। যূল-ইয়াদাইন (রাদি.) তাঁকে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত কি কম করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (অন্যদের লক্ষ্য করে) বললেনঃ যূল-ইয়াদাইন কি ঠিক বলছে? সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং আরও দু রাকআত সালাত আদায় করিলেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে স্বাভাবিক সিজদার মতো অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সিজদা করিলেন।
৭১৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুহরের সালাত দু রাকআত আদায় করিলেন। তাঁকে বলা হল, আপনি দু রাকআত সালাত আদায় করিয়াছেন। তখন তিনি আরও দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন এবং সালাম ফিরানোর পর দুটি (সাহু) সিজদা করিলেন।
১০/৭০. অধ্যায়ঃ সালাতে ইমাম কেঁদে ফেললে ।
আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি পিছনের কাতার হইতে উমার (রাদি.)-এর চাপা কান্নার আওয়ায শুনিয়াছি। তিনি তখন
{إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ}
(আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহর নিকটই পেশ করছি (সুরা ইউসুফ ১২/১৮)-এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন।
৭১৬. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (অন্তিম) রোগে আক্রান্ত অবস্থায় বললেনঃআবু বক্রকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করিতে বল। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আবু বকর (রাদি.) যখন আপনার স্থালে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাদি.) কে লোকদিন নিয়ে সালাত আদায় করিতে নির্দেশ দিন। তিনি (সাঃআঃ) আবার বললেনঃ আবু বক্রকে বল লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে দিতে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, তখন আমি হাফ্সাহ (রাদি.) কে বললাম, তুমি তাকেঁ বল যে, আবু বকর (রাদি.) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন কান্নার কারণে সাহাবীগণকে কিছুই শুনাতে পারবেন না। কাজেই উমর (রাদি.) কে বলুন তিনি যেন সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। হাফ্সা (রাদি.) তাই করিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ থামো! তোমরা ইউসুফের সাথী মহিলাদেরই মতো। আবু বক্রকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। এতে হাফসা (রাদি.) আয়েশা (রাদি.) কে (দুঃখ করে) বলিলেন, তোমার কাছ হইতে আমি কখনো ভাল কিছু পাইনি।
Leave a Reply