ইমামের আনুগত্য করা ও মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা

ইমামের আনুগত্য করা ও মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা

ইমামের আনুগত্য করা ও মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (১০৮-১২২)=১৫টি

৫৬/১০৮. অধ্যায়ঃ পাপ কাজের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইমামের কথা শুনা ও আনুগত্য করা।
৫৬/১০৯. অধ্যায়ঃ ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও তাহাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা।
৫৬/১১০. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে বায়আত করা।
৫৬/১১১. অধ্যায়ঃ ইমাম মানুষকে তাদের সাধ্যানুযায়ী নির্দেশ করিবে।
৫৬/১১২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) দিবার প্রারম্ভে যুদ্ধারম্ভ না করলে সূর্য ঢলা অবধি যুদ্ধারম্ভ বিলম্ব করিতেন।
৫৬/১১৩. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইমামের অনুমতি গ্রহণ।
৫৬/১১৪. অধ্যায়ঃ বিবাহের নতুন অবস্থায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে জাবির (রাদি.) কর্তৃক আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে
৫৬/১১৫. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মিলনের পর নব বিবাহিতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে
৫৬/১১৬. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির সময় ইমামের অগ্রগমন।
৫৬/১১৭. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির সময় ত্বরা করা ও দ্রুত অশ্ব চালনা করা।
৫৬/১১৮. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতিকালে একাকী নিস্ক্রান্ত হওয়া।
৫৬/১১৯. অধ্যায়ঃ পারিশ্রমিক প্রদানপূর্বক নিজের পক্ষ হইতে অন্যের দ্বারা যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহর পথে সাওয়ারী দান করা।
৫৬/১২০. অধ্যায়ঃ মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা।
৫৬/১২১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
৫৬/১২২. অধ্যায়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দুরত্বে অবস্থিত শত্রুর মনেও আমার সম্পর্কে ভয়-ভীতি জাগরণের দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।

৫৬/১০৮. অধ্যায়ঃ পাপ কাজের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইমামের কথা শুনা ও আনুগত্য করা।

২৯৫৫

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, পাপ কাজের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা শোনা ও তার আদেশ মানা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।

৫৬/১০৯. অধ্যায়ঃ ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও তাহাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা।

২৯৫৬

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা সর্বশেষ আগমনকারী (পৃথিবীতে) সর্বাগ্রে প্রবেশকারী (জান্নাতে)।

২৯৫৭

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আর এ সনদেই বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইরশাদ করিয়াছেন,) যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করিল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করিল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করিল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলারই নাফরমানী করিল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করিল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করিল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করিল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করিল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাহাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাহাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য পুরষ্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে।

৫৬/১১০. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে বায়আত করা।

আর কেউ বলেছেন, মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ অবশ্যই ‎আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ ‎করিল। (ফাতহ ১৮)‎

২৯৫৮

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন হুদাইবিয়া সন্ধির পরবর্তী বছর প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন আমাদের মধ্য হইতে দুজন লোকও যে বৃক্ষের নীচে আমরা বায়আত করেছিলাম সেটি চিহ্নিত করার ব্যাপারে একমত হইতে সক্ষম হয়নি। তা ছিল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তাঁদের নিকট হইতে কিসের বায়আত গ্রহণ করা হয়েছিল? তা কি মৃত্যুর উপর? তিনি বলিলেন, না, বরং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁদের নিকট হইতে দৃঢ় থাকার উপর বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।

২৯৫৯

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হার্‌রা নামক যুদ্ধের সময়ে তাহাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনু হানযালা (রাদি.) মানুষের নিকট থেকে মৃত্যুর উপর বায়আত গ্রহণ করছেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পর আমি তো কারো নিকট এমন বায়আত করব না।

২৯৬০

সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বায়আত করলাম। অতঃপর আমি একটি বৃক্ষের ছায়ায় গেলাম। মানুষের ভীড় কমে গেলে, (তাহাঁর নিকট উপস্থিত হলে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে বলিলেন, ইবনু আকওয়া! তুমি কি বায়আত করিবে না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তো বায়আত করেছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আরেক বার। তখন আমি দ্বিতীয় বার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট বায়আত করলাম। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু মুসলিম! সেদিন তোমরা কোন জিনিসের উপর বায়আত করেছিলে? তিনি বলিলেন, মৃত্যুর উপর।

২৯৬১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দকে যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেনঃ “আমরাই হচ্ছি সে সকল ব্যক্তি, যারা মুহাম্মাদের হাতে জিহাদ করার উপর বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব।” আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর উত্তর দিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ! পরকালের সুখ হচ্ছে প্রকৃত সুখ; তাই তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে সম্মানিত কর।

২৯৬২

মুজাশি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার ভ্রাতুস্পুত্রকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়আত নিন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে। আমি বললাম, তাহলে আপনি আমাদের কিসের উপর বায়আত নিবেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ইসলাম ও জিহাদের উপর।

২৯৬৩

মুজাশি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার ভ্রাতুস্পুত্রকে নিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়আত নিন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে। আমি বললাম, তাহলে আপনি আমাদের কিসের উপর বায়আত নিবেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, ইসলাম ও জিহাদের উপর।

৫৬/১১১. অধ্যায়ঃ ইমাম মানুষকে তাদের সাধ্যানুযায়ী নির্দেশ করিবে।

২৯৬৪

আবদুল্লাহ (ইবনু মাসঊদ) (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আজ আমার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে। সে আমাকে একটি বিষয়ে প্রশ্ন করে, যার উত্তর কী দিব, তা আমার বুঝে আসছিল না। লোকটি বললো, বলুন তো, এক ব্যক্তি সশস্ত্র অবস্থায় সন্তুষ্টচিত্তে আমাদের আমীরের সঙ্গে যুদ্ধে বের হল। কিন্তু সে আমীর এমন সব নির্দেশ দেন যা পালন করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের এ প্রশ্নের কী উত্তর দিব? হ্যাঁ, তবে এতটুকু বলিতে পারি যে, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সাধারণত আমাদেরকে কোন বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু একবার মাত্র এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমরা তা পালন করেছিলাম। আর তোমাদের যে কেউ ততক্ষণ ভাল থাকবে, যতক্ষণ সে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করিতে থাকবে। আর যখন সে কোন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে, তখন সে এমন ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করে নিবে, যে তাকে সন্দেহ মুক্ত করে দিবে। আর সে যুগ অতি নিকটে যে, তোমরা এমন ব্যক্তি পাবে না। শপথ সেই সত্তার যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। দুনিয়ায় যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার উপমা এরূপ যেমন একটি পুকুরের মধ্যে পানি জমেছে। এর পরিষ্কার পানি তো পান করা হয়েছে, আর নীচের ঘোলা পানি বাকী রয়ে গেছে।

৫৬/১১২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) দিবার প্রারম্ভে যুদ্ধারম্ভ না করলে সূর্য ঢলা অবধি যুদ্ধারম্ভ বিলম্ব করিতেন।

২৯৬৫

উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবু নাযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাতে ছিল যে, শত্রুদের সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করিলেন।

২৯৬৬

উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবু নাযর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

অতঃপর তিনি তাহাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেনঃ হে লোক সকল! শত্রুর সঙ্গে মোকেবেলায় অবতীর্ণ হবার কামনা করিবে না এবং আল্লাহ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দুআ করিবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হইবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করিবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়ার নীচে অবস্থিত। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! কুরআন নাযিলকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সেনাদল পরাভূতকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।

৫৬/১১৩. অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইমামের অনুমতি গ্রহণ।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের প্রতি ঈমান রাখে এবং যখন তারা কোন সমষ্টিগত কাজে রসূলের সাথে সমবেত হয় তখন তারা তাহাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে চলে যায় না। (নূর ৬২)

২৯৬৭

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার উটের কী হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উটনীর পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনীকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর এটি সবকটি উটের আগে আগে চলতে থাকে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, এখন তোমার উটনীটি কেমন মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করিবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনের অন্য কোন উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয় কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাহাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত এর উপর আরোহণ করব। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। অতঃপর আমি তাহাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদীনায় পৌঁছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তিনি আমাকে উটনীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করিলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বলিলেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলা করিতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমান বয়সের কোন মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করিতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্বে বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি; যাতে সে তাদের দেখাশোনা করিতে পারে এবং তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মদীনায় আসেন, পরদিন আমি তাহাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরাহ (রাদি.) বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এতে কোন দোষ মনে করি না।

৫৬/১১৪. অধ্যায়ঃ বিবাহের নতুন অবস্থায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে জাবির (রাদি.) কর্তৃক আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

এ প্রসঙ্গে জাবির (রাদি.) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

৫৬/১১৫. অধ্যায়ঃ স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মিলনের পর নব বিবাহিতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা (রাদি.) কর্তৃক নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে

৫৬/১১৬. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির সময় ইমামের অগ্রগমন।

২৯৬৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার মদীনায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ল। তখন আল্লহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর ঘোড়ায় আরোহণ করেন এবং বলেন যে, আমি তো ভয়ের কিছু দেখিতে পেলাম না। তবে আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি।

৫৬/১১৭. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতির সময় ত্বরা করা ও দ্রুত অশ্ব চালনা করা।

২৯৬৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময়ে লোকেরা ভীত হয়ে পড়ল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর ধীরগতি সম্পন্ন একটি ঘোড়ার উপর চড়লেন এবং একাকী ঘোড়াটিকে হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। লোকেরা তখন তাহাঁর পিছু পিছু ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা ভয় করো না। এ ঘোড়াটি তো দ্রুতগামী। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন হইতে আর কখনো সে ঘোড়াটি কারো পেছনে পড়েনি।

৫৬/১১৮. অধ্যায়ঃ ভয়-ভীতিকালে একাকী নিস্ক্রান্ত হওয়া।

৫৬/১১৯. অধ্যায়ঃ পারিশ্রমিক প্রদানপূর্বক নিজের পক্ষ হইতে অন্যের দ্বারা যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহর পথে সাওয়ারী দান করা।

মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি ইবনু উমর (রাদি.)-কে বললাম, আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলিলেন, আমি তোমাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করিতে চাই। আমি বললাম, আল্লাহ তাআলা আমাকে আর্থিক সচ্ছলতা দান করিয়াছেন। তিনি, [ইবনু উমর (রাদি.)] বলিলেন, তোমার সচ্ছলতা তোমার জন্য। আমি চাই, আমার কিছু সম্পদ এ পথে ব্যয় হোক। উমর (রাদি.) বলেন, এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা জিহাদ করার জন্য অর্থ গ্রহণ করে, পরে জিহাদ করে না। যারা এরূপ করে, আমরা তার সম্পদে অধিক হকদার এবং আমরা তা ফেরত নিয়ে নিব, যা সে গ্রহণ করেছে। তাউস ও মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাহে বের হবার জন্য তোমাকে কিছু দান করা হয়, তা দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তা করিতে পার আর তোমার পরিবার-পরিজনের কাছেও রেখে দিতে পার।

২৯৭০

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব আরোহণের জন্য দান করেছিলাম। অতঃপর আমি তা বিক্রয় হইতে দেখিতে পাই। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি সেটা কিনে নিব? রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, না, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার সদকা ফেরত নিও না।

২৯৭১

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উমর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এক অশ্বারোহীকে আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব দান করেন। অতঃপর তিনি দেখিতে পান যে, তা বিক্রয় করা হচ্ছে। তখন তিনি তা কিনে নেয়ার ইচ্ছা করিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করিলেন। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)] বলিলেন, তুমি ওটা কিনিও না এবং তোমার সদকা ফেরত নিও না।

২৯৭২

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি কোন সেনা অভিযান থেকে পিছিয়ে থাকতাম না। কিন্তু আমি তো (সকলের জন্য) সাওয়ারী সংগ্রহ করিতে পারছি না এবং আমি এতগুলো সাওয়ারী পাচ্ছি না যার উপর আমি তাদের আরোহণ করাতে পারি। আর আমার জন্য এটা কষ্টদায়ক হইবে যে, তারা আমার থেকে পেছনে পড়ে থাকবে। আমি তো এটাই কামনা করি যে, আমি আল্লাহর রাহে জিহাদ করব এবং শহীদ হয়ে যাবো, অতঃপর আমাকে আবার জীবিত করা হইবে এবং আমি আবার শহীদ হবো। অতঃপর আমাকে আবার জীবিত করা হইবে।

৫৬/১২০. অধ্যায়ঃ মজুরী নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করা।

হাসান বসরী ও ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মজদুরকেও গনীমত লব্ধ সম্পদে অংশ দান করা হইবে। আতিয়্যা ইবনু কায়েস (রাদি.) এক ব্যক্তি থেকে একটি অশ্ব এ শর্তে গ্রহণ করেন যে, গনীমত লব্ধ সম্পদে প্রাপ্ত অংশ অর্ধেক করে বন্টিত হইবে। তিনি অশ্বটির অংশে চারশ দীনার পেয়েছিলেন। তখন তিনি দুশ দীনার গ্রহণ করেন এবং দুশ দীনার অশ্বের মালিককে দিয়ে দেন

২৯৭৩

ইয়ালা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে জিহাদে শরীক হই। আমি একটি জওয়ান উট (জিহাদে) আরোহণের জন্য (এক ব্যক্তিকে) দেই। আমার সঙ্গে এটিই ছিল আমার অধিক নির্ভরযোগ্য কাজ। আমি এক ব্যক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে নিয়োগ করলাম। তখন সে এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া লেগে যায়, একজন আরেকজনের হাত কামড়ে ধরলে সে তার হাত মুখ হইতে সজোরে বের করে আনে। ফলে তার সামনের দাঁত উপড়ে আসে। উক্ত ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর দাঁতের কোন প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। আর তিনি বলিলেন, সে কি তার হাতটিকে তোমার মুখে রেখে দিবে, আর তুমি তাকে উটের মত কামড়াতে থাকবে।

৫৬/১২১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।

২৯৭৪

কায়েস ইবনু সাদ আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আর তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পতাকাবাহী, তিনি হজ্জের সংকল্প করেন, তখন তিনি মাথার চুল আঁচড়ে নিলেন।

২৯৭৫

সালামা ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আলী (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাহাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বলিলেন, আমি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর আলী (রাদি.) বেরিয়ে পড়লেন এবং নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে আলী (রাদি.) খায়বার জয় করেছিলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব, কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করিবে যাকে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-কে ভালবাসে। আল্লাহ তাআলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখিতে পেলাম যে, আলী (রাদি.) এসে হাজির, অথচ আমরা তাহাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বলিলেন, এই যে, আলী (রাদি.) চলে এসেছেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে পতাকা প্রদান করিলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাহাঁরই হাতে বিজয় দিলেন।

২৯৭৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি যুবাইর (রাদি.)-কে বলেছিলেন, এখানেই কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আপনাকে পতাকা গাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন?

৫৬/১২২. অধ্যায়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দুরত্বে অবস্থিত শত্রুর মনেও আমার সম্পর্কে ভয়-ভীতি জাগরণের দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।

মহান আল্লাহর তাআলার বানীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি প্রবিষ্ট করব। যেহেতু তারা আল্লাহর শরীক করেছে। (আল্‌ ইমরান ১৫১)

(এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) থেকে হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন

২৯৭৭

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তো চলে গেছেন আর তোমারা ওগুলো বাহির করছ।

২৯৭৮

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁকে আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, হিরাক্‌ল আমাকে ডেকে পাঠান। তখন তিনি ইলিয়া নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। অতঃপর সম্রাট আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পত্রখানি আনতে আদেশ করেন যখন পত্র পাঠ সমাপ্ত হল, তখন বেশ হৈ চৈ ও শোরগোল পড়ে গেল। অতঃপর আমাদেরকে বাইরে নিয়ে আসা হল। যখন আমাদেরকে বের করে দেয়া হচ্ছিল তখন আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ্য করে বললাম, আবু কাবশার পুত্রের [১] ব্যাপারটার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেল। রোমের বাদশাহও তাঁকে ভয় করে।

[১] আবু কাবশা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর দুধ মা হালীমাহ (রাদি.)-এর স্বামী ছিলেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply