ইবরাহীম আঃ এর বর্ণনা কোরআন ও হাদিস থেকে
আর আল্লাহ ইবরাহীম আঃ কে বন্ধুরূপে গ্রহন করিয়াছেন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ (৮-১১)=৪টি
৬০/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে গ্রহন করিয়াছেন– (আন-নিসা ১২৫) ।
৬০/৯. অধ্যায়ঃ ——— অর্থ মানে দ্রুত বেগে চলা।
৬০/১০. অধ্যায়ঃ
৬০/১১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে মুহাম্মাদ) আপনি তাদেরকে ইবরাহীম (আঃ)-এর মেহমানগণের ঘটনা জানিয়ে দিন। যখন তারা তাহাঁর নিকট এসেছিলেন- (হিজরঃ ৫১-৫২)। ——– ভয় পাবেন না। (মহান আল্লাহর বাণী): স্মরণ করুন যখন ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, হে আমার রব! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবন দান করেন- (আল-বাকারাহঃ ২৬০)।
৬০/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে গ্রহন করিয়াছেন– (আন-নিসা ১২৫) ।
মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর অনুগত- (আশ্ শুয়ারাঃ ১২০)। মহান আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় ইবরাহীম নরম হৃদয় ও সহনশীল- (আত-তওবাহঃ ১১৪) । আর আবু মাইসারাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাবশী ভাষায় —- শব্দটি —— অর্থে ব্যবহৃত হয়।
৩৩৪৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, নিশ্চয় তোমাদেরকে হাশর ময়দানে খালি পা, বস্ত্রহীন এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় উপস্থিত করা হইবে। অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ যেভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই- (আম্বিয়াঃ ১০৪)। আর কেয়ামতের দিন সবার আগে যাকে কাপড় পরানো হইবে তিনি হইবেন ইবরাহীম (আঃ)। আর আমার অনুসারীদের মধ্যে হইতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী। এ সময় আল্লাহ বলিলেন, যখন আপনি এদের নিকট হইতে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহর নেক বান্দা [ঈসা (আঃ)] যেমন বলেছিলেন; তেমন আমি বলব, হে আল্লাহ! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি ক্ষমতাধর হিকমতওয়ালা- (আল-মায়িদাহ ১১৭-১১৮)।
৩৩৫০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, কেয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ) তার পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমন্ডলে কালি এবং ধূলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহীম (আঃ) তাকে বলবেন, আমি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাহাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহম হইতে বঞ্চিত হবার চেয়ে বেশী অপমান আমার জন্য আর কী হইতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হইবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখিতে পাবেন তাহাঁর পিতার জায়গায় সর্বাঙ্গে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হইবে। [১]
[১] আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আঃ)-এর কাফির পিতার চেহারার পরিবর্তন ঘটিয়ে ইবরাহীম (আঃ)-কে অপমান থেকে বাঁচাবেন।
৩৩৫১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একবার কাবা ঘরে প্রবেশ করিলেন। সেখানে তিনি ইবরাহীম (আঃ) ও মারইয়ামের ছবি দেখিতে পেলেন। তখন তিনি বলিলেন, তাদের কী হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফেরেশতামন্ডলী প্রবেশ করেন না। এ যে ইবরাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নির্ধারক অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন!
৩৩৫২ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন কাবা ঘরে ছবিগুলো দেখিতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাহাঁর নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করিলেন না। আর তিনি দেখিতে পেলেন, ইবরাহীম এবং ইসমাঈল (আঃ)-এর হাতে ভাগ্য নির্ধারণের তীর। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) উপর লানত করুন। আল্লাহর কসম, এঁরা দুজন কক্ষনোও ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করেননি।
৩৩৫৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মাঝে সবচেয়ে সন্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বলিলেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে অধিক মুত্তাকী। তখন তারা বলিল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলিলেন, তা হলে আল্লাহর নাবী ইউসূফ, যিনি আল্লাহর নাবীর পুত্র, আল্লাহর নাবীর পৌত্র এবং আল্লাহর খলীল-এর প্রপৌত্র। তারা বলিল, আমরা আপনাকে এ ব্যাপারেও জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলিলেন, তা হলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমূহের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছ? জাহিলী যুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যক্তি যদি তাঁরা ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন করেন। আবু উসামা ও মুতামির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …………….. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত।
৩৩৫৪. সামূরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, আজ রাতে (স্বপ্নে) আমার নিকট দুজন লোক আসলেন। অতঃপর আমরা দীর্ঘদেহ বিশিষ্ট লোকের নিকট আসলাম। তাহাঁর দেহ দীর্ঘ হবার দরুন আমি তাহাঁর মাথা দেখিতে পাচ্ছিলাম না। আসলে তিনি হলেন ইবরাহীম (আঃ)।
৩৩৫৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
লোকজন তাহাঁর সামনে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। তার দু চোখের মাঝখানে অর্থাৎ কপালে লেখা থাকবে কাফির বা কাফ, ফা, রা। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, এটা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট শুনেনি। বরং তিনি বলেছেন, যদি তোমরা ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে চাও তবে তোমাদের সাথীর দিকে তাকাও। আর মূসা (আঃ) হলেন কোঁকড়ানো চুল, তামাটে রঙ-এর দেহ বিশিষ্ট। তিনি এমন একটি লাল উটের উপর বসে আছেন, যার নাকের দড়ি খেজুর গাছের ছাল দিয়ে তৈরী। আমি যেন তাকে দেখিতে পাচ্ছি, তিনি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে দিতে উপত্যকায় নামছেন।
৩৩৫৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, নাবী ইবরাহীম (আঃ) সূত্রধরদের অস্ত্র দিয়ে নিজের খাতনা করেছিলেন যখন তার বয়স ছিল আশি বছর। আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে হাদীস বর্ণনায় মুগীরাহ ইবনু আব্দুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আজলান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে হাদীস বর্ণনায় আরজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন। আর মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৩৫৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, ইবরাহীম (আঃ) তিনবার ব্যতীত কখনও মিথ্যা বলেননি।
৩৩৫৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবরাহীম (আঃ) তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা বলেননি। তন্মধ্যে দুবার ছিল আল্লাহর ব্যাপারে। তার উক্তি “আমি অসুস্থ”- (আস্সাফফাতঃ ৮৯) এবং তাহাঁর অন্য এক উক্তি “বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি-(আম্বিয়াঃ ৬৩)। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি [ইবরাহীম (আঃ)] এবং সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। তখন তাকে খবর দেয়া হল যে, এ এলাকায় জনৈক ব্যক্তি এসেছে। তার সঙ্গে একজন সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা আছে। তখন সে তাহাঁর নিকট লোক পাঠাল। সে তাঁকে নারীটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল, এ নারীটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটি আমার বোন। অতঃপর তিনি সারার নিকট আসলেন এবং বলিলেন, হে সারা! তুমি আর আমি ব্যতীত পৃথিবীর উপর আর কোন মুমিন নেই। এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল। তখন আমি তাকে জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। অতঃপর সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো। তিনি যখন তার নিকট প্রবেশ করিলেন এবং রাজা তাহাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলিল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তখন সারা আল্লাহর নিকট দুআ করিলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর দ্বিতীয়বার তাঁকে ধরতে চাইল। এবার সে পূর্বের মত বা তার চেয়ে কঠিনভাবে পাকড়াও হলে। এবারও সে বলিল, আল্লাহর নিকট আমার জন্য দুআ কর। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আবারও তিনি দুআ করিলেন, ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর রাজা তার এক দারোয়ানকে ডাকল। সে তাকে বলিল, তুমি তো আমার নিকট কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। অতঃপর রাজা সারার খিদমতের জন্য হাযেরাকে দান করিল। অতঃপর তিনি (সারা) তাহাঁর (ইবরাহীম) নিকট আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বলিলেন, কি ঘটেছে? তখন সারা বলিলেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর সে হাযেরাকে খিদমতের জন্য দান করেছে। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, হে আকাশের পানির ছেলেরা![১] হাযেরাই তোমাদের আদি মাতা।
[১] ———— দ্বারা যমযমের পানিকে বুঝানো হয়েছে। কেননা আল্লাহ এই পানি হাযেরার জন্য ঝর্না হিসেবে বের করেছিলেন। এ পানির দ্বারাই তার সন্তান জীবন ধারণ করেছিল। ফলে আরবরা তার সন্তান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইবনু হিব্বান তার সহীহার মধ্যে বলেন —————————- তাই ইসমাঈলের সকল সন্তানই ————– এর সন্তান।
৩৩৫৯. উম্মু শারীক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) গিরগিটি মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ওটা ইবরাহীম (আঃ) যে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, তাতে এ গিরগিটি ফুঁ দিয়েছিল।
৩৩৬০.আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি- (আল-আনআম ৮২)। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে নিজের উপর যুল্ম করেনি? তিনি বলিলেন, তোমরা যা বলছ ব্যাপারটি তা নয়। বরং তাদের ঈমানকে যুল্ম অর্থাৎ শির্ক দ্বারা কলূষিত করেনি। তোমরা কি লুকমানের কথা শুননি? তিনি তাহাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, “হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে কোন রকম শির্ক করো না। নিশ্চয় শির্ক একটা বিরাট যুল্ম”। (লুকমানঃ ১৩)
৬০/৯. অধ্যায়ঃ ——— অর্থ মানে দ্রুত বেগে চলা।
৩৩৬১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন নাবী (সাঃআঃ)-এর সামনে কিছু গোশ্ত আনা হল। তখন তিনি বলিলেন, নিশ্চয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একই সমতল ময়দানে সমবেত করবেন। তখন আহবানকারী তাদের সকলকে তার ডাক সমানভাবে শুনাতে পারবে এবং তাদের সকলের উপর সমানভাবে দর্শকের দৃষ্টি পড়বে আর সূর্য তাদের অতি নিকতবর্তী হইবে। অতঃপর তিনি শাফাআতের হাদীস বর্ণনা করিলেন যে, সকল মানুষ ইবরাহীম(আঃ)-এর নিকট আসবে এবং বলবে, পৃথিবীতে আপনি আল্লাহর নাবী এবং তাহাঁর খলীল। অতএব আমাদের জন্য আপনি আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন। তখন তিনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা কথা স্মরণ করে বলবেন, নাফসী! নাফসী! তোমরা মূসার নিকট যাও। এ রকম হাদীস আনাস (রাদি.) ও নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৩৬২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ইসমাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহর রহম করুন। যদি তিনি তাড়াহুড়া না করিতেন, তবে যমযম একটি প্রবহমান ঝরণায় পরিণত হত।
৩৩৬৩. See previous Hadith. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনসারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বলেন যে, কাসীর ইবনু কাসীর বলেছেন যে, আমি ও উসমান ইবনু আবু সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলিলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে এরূপ বলেননি বরং তিনি বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ), ইসমাঈল (আঃ) এবং তাহাঁর মাকে নিয়ে আসলেন। মা তখন তাঁকে দুধ পান করাতেন এবং তাহাঁর সঙ্গে একটি মশক ছিল। এ অংশটি মারফুরূপে বর্ণনা করেননি।
৩৩৬৪. সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ বানানো শিখেছে ইসমাঈল (আঃ)-এর মায়ের নিকট থেকে। হাযেরা (আঃ) কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ (আঃ) থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) হাযেরা (আঃ) এবং তাহাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল (আঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এ অবস্থায় যে, হাযেরা (আঃ) শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কাবার ঘর অবস্থিত, ইবরাহীম (আঃ) তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের উপরে অবস্থিত একটা বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোন মানুষ, না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের নিকট রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (আঃ)-এর মা পিছু পিছু আসলেন এবং বলিতে লাগলেন, হে ইবরাহীম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদের এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সাহায্যকারী আর না আছে কোন ব্যবস্থা। তিনি এ কথা তাকে বারবার বলিলেন। কিন্তু ইবরাহীম (আঃ) তাহাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা (আঃ) তাঁকে বলিলেন, এর আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বলিলেন, হাঁ। হাযেরা (আঃ) বলিলেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইবরাহীম (আঃ) -ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখিতে পাচ্ছে না, তখন তিনি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি দুহাত তুলে এ দুআ করিলেন, আর বলিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারের কতককে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায় …. যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে- (ইবরাহীম ৩৭)। আর ঈসমাঈলের মা ঈসমাইলকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করিতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে তৃষ্ণার্ত হলেন এবং তাহাঁর শিশু পুত্রটিও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির দিকে দেখিতে লাগলেন। তৃষ্ণায় তার বুক ধড়ফড় করছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাহাঁর অবস্থানের নিকটবর্তী পর্বত সাফা-কে একমাত্র তাহাঁর নিকটতম পর্বত হিসাবে পেলেন। অতঃপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন এবং ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথায়ও কাউকে দেখা যায় কিনা? কিন্তু তিনি কাউকে দেখিতে পেলেন না। তখন সাফা পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাহাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন ক্লান্ত-শ্রান্ত মানুষের মত ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দান অতিক্রম করে মারওয়া পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখিতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখিতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করিলেন।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এজন্যই মানুষ এ পর্বতদ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। অতঃপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বলিলেন, একটু অপেক্ষা কর। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ। যদি তোমার নিকট কোন সাহায্যকারী থাকে। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফেরেশতা দেখিতে পেলেন। সেই ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করিলেন অথবা তিনি বলেছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করিলেন। ফলে পানি বের হইতে লাগল। তখন হাযেরা (আঃ)-এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধ দিয়ে এক হাউজের মত করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাহাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপচে উঠছিল। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করিতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, অতঃপর হাযেরা (আঃ) পানি পান করিলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফেরেশতা তাঁকে বলিলেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাহাঁর পিতা দুজনে মিলে এখানে ঘর নির্মাণ করিবে এবং আল্লাহ তাহাঁর আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার মত উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তার ডানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। অতঃপর হাযেরা (আঃ) এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভূমির পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কাহয় নীচু ভূমিতে অবতরণ করিল এবং তারা দেখিতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলিল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ ধরে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দুজন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখিতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে সকলকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল (আঃ)-এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলিল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করিতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন হ্যাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হ্যাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করিল।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। অতঃপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করিল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদেরও সাথে বসবাস করিতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদেরও কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাইলও যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের নিকট অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। অতঃপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করিলেন, তখন তারা তাহাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা (আঃ) ইন্তিকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইবরাহীম (আঃ) তাহাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে তাহাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিলেন। স্ত্রী বলিল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পুত্রবধূকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিলেন। সে বলিল, আমরা অতি দূরবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করিল। তিনি বলিলেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। অতঃপর যখন ইসমাঈল (আঃ) বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের নিকট কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলিল, হাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করিলেন, আমি তাঁকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল (আঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি কি তোমাকে কোন নাসীহাত করিয়াছেন? স্ত্রী বলিল, হাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাহাঁর সালাম পৌঁছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, ইনি আমার পিতা। এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জনদের নিকট চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল (আঃ) তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করিলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। অতঃপর তিনি আবার এদের দেখিতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল (আঃ)-এর দেখা পেলেন না। তিনি পুত্রবধূর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। সে বলিল, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবন যাপন ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলিল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছল অবস্থায় আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করিল। ইবরাহীম (আঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কী? সে বলিল, গোশ্ত। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কী, সে বলিল, পানি। ইবরাহীম (আঃ) দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! তাদের গোশ্ত ও পানিতে বরকত দিন। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইবরাহীম (আঃ) সে বিষয়েও তাদের জন্য দুআ করিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশ্ত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করিতে পারে না। কেননা, শুধু গোশ্ত ও পানি জীবন যাপনের অনুকূল হইতে পারে না।
ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাঁকে সালাম বলবে, আর তাঁকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করিবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখে। অতঃপর ইসমাঈল (আঃ) যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বলিলেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলিল, হাঁ। একজন সুন্দর চেহারার বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাহাঁর প্রশংসা করিল, তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিয়াছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। অতঃপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন কিছুর জন্য আদেশ করিয়াছেন? সে বলিল, হাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, ইনিই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। এ কথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। অতঃপর তিনি আবার আসলেন। (দেখিতে পেলেন) যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল (আঃ) তাহাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। যখন তিনি তাহাঁর পিতাকে দেখিতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাহাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যেমন করে থাকে তাঁরা উভয়ে তাই করিলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, হে ইসমাঈল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করিয়াছেন, তা করুন। ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, তুমি আমার সাহায্য করিবে কি? ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, আমি আপনার সাহায্য করব। ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু ঢিলাটির দিকে ইশারা করিলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে। তখনই তাঁরা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল তুলতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল (আঃ) পাথর আনতেন, আর ইবরাহীম (আঃ) নির্মাণ করিতেন। পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আঃ) (মাকামে ইবরাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইবরাহীম (আঃ) তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করিতে লাগলেন। আর ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দুআ করিতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবূল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কাবা ঘর তৈরী করিতে থাকেন এবং কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে এ দুআ করিতে থাকেন। “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবূল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন”। (আল-বাকারাহঃ ১২৭)
৩৩৬৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন ইবরাহীম (আঃ) ও তাহাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হবার হয়ে গেল, তখন ইবরাহীম (আঃ) (শিশুপুত্র) ইসমাঈল এবং তার মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সঙ্গে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল (আঃ)-এর মা মশক হইতে পানি পান করিতেন। ফলে শিশুর জন্য তাহাঁর স্তনে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইবরাহীম (আঃ) মক্কায় পৌঁছে হাযেরাকে একটা বিরাট গাছের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) আপন পরিবারের (সারার) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল (আঃ)-এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাহাঁর অনুসরণ করিলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছন হইতে ডেকে বলিলেন, হে ইবরাহীম! আপনি আমাদেরকে কার নিকট রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা (আঃ) বলিলেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী বলেন, অতঃপর হাযেরা (আঃ) ফিরে আসলেন, তিনি মশক হইতে পানি পান করিতেন আর শিশুর জন্য দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল (আঃ)-এর মা বলিলেন, আমি যদি গিয়ে এদিক সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখিতে পেতাম। রাবী বলেন, অতঃপর ইসমাঈল (আঃ)-এর মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখিতে পেলেন না। তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি বলিলেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে, শিশুটি কি করছে। অতঃপত তিনি গেলেন এবং দেখিতে পেলেন যে, সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাহাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বলিলেন, যদি সেখানে যেতাম এবং এদিক সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবতঃ কাউকে দেখিতে পেতাম। অতঃপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিকে সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকে দেখিতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করিলেন। তখন তিনি বলিলেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কী করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। অতঃপর তিনি মনে মনে বলিলেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল (আঃ)-কে দেখিতে পেলেন। রাবী বলেন, তখন তিনি (জিবরাঈল) তাহাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করিলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা জমিনের উপর আঘাত করিলেন। রাবী বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল (আঃ)-এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খুঁড়তে লাগলেন। রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম [রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)] বলেছেন, হাযেরা (আঃ) যদি একে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী বলেন, তখন হাযেরা (আঃ) পানি পান করিতে লাগলেন এবং তাহাঁর সন্তানের জন্য তাহাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী বলেন, অতঃপর জুরহুম গোত্রের একদল উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করছিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করিতে পারছিল না আর তারা বলিতে লাগল এসব পাখি তো পানি ব্যতীত কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দূত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের নিকট ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। অতঃপর তারা হাযেরা (আঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার নিকট থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার নিকট বসবাস করার অনুমতি দিবেন? [হাযেরা (আঃ) তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেটে গেল]। অতঃপর তাহাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়েকে বিয়ে করিলেন। রাবী বলেন, পুনরায় ইবরাহীম (আঃ)-এর মনে জাগল তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে (সারাহ) বলিলেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (আঃ)-এর স্ত্রী বলিল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, “তুমি তোমার ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে।” ইসমাঈল (আঃ) যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বলিলেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার নিকট চলে যাও। রাবী বলেন, অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বলিলেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি সেখানে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল (আঃ)-এর স্ত্রী বলিল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বলিলেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কি? স্ত্রী বলিল, আমাদের খাদ্য হল গোশ্ত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম (আঃ) দুআ করিলেন, “হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিন”। রাবী বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর দুআর কারণেই বরকত হয়েছে। রাবী বলেন, আবার কিছুদিন পর ইবরাহীম (আঃ)-এর মনে তাহাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাহাঁর স্ত্রী (সারাহ)-কে বলিলেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। অতঃপর তিনি এলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাহাঁর একটি তীর মেরামত করছেন। তখন ইবরাহীম (আঃ) ডেকে বলিলেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাহাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করিতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, তিনি আমাকে এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, তুমি যেন আমাকে এ বিষয়ে সহায়তা কর। ইসমাঈল (আঃ) বলিলেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। অতঃপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইবরাহীম (আঃ) ইমারত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দুআ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন। রাবী বলেন, এরই মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইবরাহীম (আঃ) এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইবরাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাঁকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দুআ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন–(আল-বাকারাহঃ ১২৭)।
৬০/১০. অধ্যায়ঃ
৩৩৬৬. আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বলিলেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলিলেন, মসজিদে আক্সা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বলিলেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হইবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে।
৩৩৬৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ওহুদ পর্বত রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বলিলেন, এ পর্বত আমাদের ভালবাসে আর আমরাও তাকে ভালবাসি। হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করিয়াছেন আর আমি হারাম ঘোষণা করছি এর দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী স্থানকে (মদীনাকে)। এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) -ও নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন
৩৩৬৮. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) [আয়েশা (রাদি.)-কে বলেছেন, তুমি কি জান তোমার কাউম যখন কাবা ঘর নির্মাণ করেছে, তখন তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তি হইতে তা ছোট করেছে? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি তা ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর পুনর্নির্মাণ করবেন না? তিনি বলিলেন, যদি তোমার কাওম কুফরী হইতে অল্পকাল আগে আগত না হতো। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, যদি আয়েশা (রাদি.) এ হাদীসটি রাসুলূল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে শুনে থাকেন, তবে আমি মনে করি রসুলূল্লাহ (সাঃআঃ) হাতীমে কাবার সংলগ্ন দুটি কোণকে চুমু দেয়া একমাত্র এ কারণে পরিহার করিয়াছেন যে, কাবার ঘর ইবরাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর পুরাপুরি নির্মাণ করা হয়নি। রাবী ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু আবু বক্র হলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবু বক্র।
৩৩৬৯. আবু হুমাইদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর উপর, তাহাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাহাঁর বংশধরদের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত নাযিল করিয়াছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর উপর, তাহাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাহাঁর বংশধরদের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করিয়াছেন ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।
৩৩৭০. আবদুর রহমান ইবনু আবু লাইলা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কাব ইবনু উজরা (রাদি.) আমার সঙ্গে দেখা করে বলিলেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদিয়া দেব না যা আমি নাবী (সাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি? আমি বললাম, হাঁ, আপনি আমাকে সে হাদিয়া দিন। তিনি বলিলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর কিভাবে দরুদ পাঠ করিতে হইবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বলিলেন, তোমরা এভাবে বল, “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর উপর এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম (আঃ) এবং তাহাঁর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করিয়াছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করিয়াছেন ইবরাহীম (আঃ) এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।
৩৩৭১. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) হাসান এবং হুসাইন (রাদি.)-এর জন্য নিম্নোক্ত দুআ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলিতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর জন্য দুআ পড়ে পানাহ চাইতেন। আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ঠ হইতে পানাহ চাচ্ছি।
৬০/১১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ (হে মুহাম্মাদ) আপনি তাদেরকে ইবরাহীম (আঃ)-এর মেহমানগণের ঘটনা জানিয়ে দিন। যখন তারা তাহাঁর নিকট এসেছিলেন- (হিজরঃ ৫১-৫২)। ——– ভয় পাবেন না। (মহান আল্লাহর বাণী): স্মরণ করুন যখন ইবরাহীম (আঃ) বলিলেন, হে আমার রব! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবন দান করেন- (আল-বাকারাহঃ ২৬০)।
৩৩৭২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, ইবরাহীম (আঃ) তাহাঁর অন্তরের প্রশান্তির জন্য মৃতকে কিভাবে জীবিত করা হইবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, (সন্দেহবশত নয়) যদি “সন্দেহ” বলে অভিহিত করা হয় তবে এরূপ “সন্দেহ” এর ব্যাপারে আমরা ইবরাহীম (আঃ)-এর চেয়ে অধিক উপযোগী। যখন ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বলিলেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বলিলেন, হাঁ। তা সত্ত্বেও যাতে আমার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে- (আল-বাকারাহঃ ২৬০)। অতঃপর [নাবী (সাঃআঃ) লূত (আঃ)-এর ঘটনা উল্লেখ করে বলিলেন।] আল্লাহ লূত (আঃ)-এর প্রতি রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন আর আমি যদি কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকতাম যত দীর্ঘ সময় ইউসুফ (আঃ) কারাগারে ছিলেন তবে তার (বাদশাহর) ডাকে সাড়া দিতাম। [১]
[১] রাসুলূল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর এ কথার দ্বারা ইউসুফ (আঃ) এর অসীম ধৈর্য্যের প্রশংসা করিয়াছেন।
Leave a Reply