নফল সিয়ামের ইফতার নিয়ম এর বর্ণনা
নফল সিয়ামের ইফতার নিয়ম এর বর্ণনা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৭, অধ্যায়ঃ ৭
- অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ
২০৭৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কী [খাবার] কিছু আছে? আমি বললাম, না [কিছুতো নেই]। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, তাহলে আমি [আজ] সিয়াম পালন করবো! এরপর আর একদিন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার কাছে এলেন। [জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কাছে কী খাবার কিছু আছে?] আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের জন্য হায়স হাদিয়্যাহ্ এসেছে। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, আনো, আমাকে দেখাও। আমি সকাল থেকে সওম রেখেছি। তারপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হায়স খেয়ে নিলেন। [মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১১৫৪, তিরমিজি ৭৩৩, নাসায়ী ২৩২৭, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২১৪৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৯১৩। ইফতার নিয়ম-এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উম্মু সুলায়ম-এর কাছে গেলেন। সে রসূলের জন্য ঘি ও খেজুর আনল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তুমি ঘি পাত্রে ঢালো আর খেজুরগুলোকে থালায় রাখো। কেননা আমি সায়িম। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফরয নামাজ ছাড়া নামাজ আদায় করিতে লাগলেন। অতঃপর উম্মু সুলায়ম ও তাহাঁর পরিবারের জন্য দুআ করিলেন
। [বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৯৮২, ইবনি হিববান ৯৯০, আহমাদ ১২০৫৩। ইফতার নিয়ম-এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে যদি খাবার জন্য দাওয়াত দেয়া হয়, আর সে ব্যক্তি সায়িম হয়, তার বলা উচিত, আমি সায়িম [রোযাদার]। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেয়া হলে তার উচিত দাওয়াত কবূল করা। সে সায়িম হলে দু রাক্আত [নফল] নামাজ আদায় করিবে। আর সায়িম না হলে খাওয়ায় অংশ নেবে।
[মুসলিম]{১},{১} সহীহ : মুসলিম ১১৫০, ১৪৩১, আবু দাউদ ২৪৬১, ইবনি মাজাহ ১৭৫০, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৯৪৩৮, তিরমিজি ৭৮১, আহমাদ ৭৩০৪, দারিমী ১৭৭৮, সহীহ আল জামি ৫৪০। ইফতার নিয়ম-এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৭৯. উম্মু হানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমা [রাদি.] এলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন। আর উম্মু হানী [রাদি.] ছিলেন তাহাঁর ডান পাশে। এ সময় একটি দাসী হাতে একটি পাত্র নিয়ে এলো। এতে কিছু পানীয় ছিল। দাসীটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পান পাত্রটি রাখল। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সেখান থেকে কিছু পান করে তা উম্মু হানীকে দিলেন। উম্মু হানী [রাদি.]-ও ঐ পাত্র হইতে কিছু পান করে বলিতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ইফতার করে ফেলেছি। অথচ আমি সায়িম ছিলাম। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি রমাযান [রমজান] মাসের কোন সওম বা মানৎ কাযা করছিলে? উম্মু হানী [রাদি.] বললেন, না। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন বললেন, নফল সওম হলে কোন অসুবিধা নেই-
[আবু দাউদ, তিরমিজি, দারিমী]। ঈমাম আহমদ ও আত তিরমিজির এক বর্ণনায় এরূপই বর্ণিত হয়েছে। আর এতে আরো আছে, তখন উম্মু হানী [রাদি.] বললেন, আপনার জানা থাকতে পারে যে, আমি সায়িম। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ নফল সায়িম নিজের নাফসের মালিক [সে রাখতেও পারে ভাঙতেও পারে]।{১} {১} সহীহ : ২৪৫৬, তিরমিজি ৭৩১, দারিমী ১৭৭৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৩৫০, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১০৩৫, আহমাদ ২৬৮৯৩, সহীহ আল জামি ৩৮৫৪। ইফতার নিয়ম-এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৭. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২০৮০. যুহরী উরওয়াহ্ হইতে এবং উরওয়াহ্ আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, আমি ও হাফসাহ্ দুজনেই সওমে ছিলাম। আমাদের সামনে খাবার আনা হলো। খাবার দেখে আমাদের লোভ হলো। আমরা সওমে খেয়ে নিলাম। অতঃপর হাফসা [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আরয করিল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সওমে ছিলাম। আমাদের সামনে খাবার আনা হলে আমাদের লোভ হলো। তাই খেয়ে ফেললাম [আমাদের ব্যাপারে এখন হুকুম কী?] তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ অন্য একদিন তা কাযা করে নিও-
[তিরমিজি]। আর [হাদিসের] হাফেযদের একদল যুহরী হইতে, যুহরী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। [তাতে উরওয়াহ্ হইতে উল্লেখ করা হয়নি।] এটাই বেশী সহীহ। হাদিসটি ঈমাম আবু দাউদ যুমায়ল হইতে উদ্ধৃত করিয়াছেন। যুমায়ল ছিলেন উরওয়ার আযাদ করা গোলাম। যুমায়ল উরওয়াহ্ হইতে, আর উরওয়াহ্ আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।{১}. {১} জইফ : তিরমিজি ৭৩৫, আহমাদ ২৬২৬৭। কারণ এর সানাদে জাফার ইবনি বুরক্বন বিশেষত যুহরী থেকে বর্ণনায় একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২০৮১. উম্মু উমারাহ্ বিনতু কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু উমারার ওখানে গেলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাবার আনলেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উম্মু উমারাহ্-কে বললেন, তুমিও খাও। উম্মু উমারাহ্ বললেন, আমি তো সায়িম। তিনি বললেন, যখন কোন সায়িমের সামনে খাওয়া হয় [তখন তারও খেতে লোভ হয়, সওম রাখা তার জন্য কষ্ট কর হয়], তখন যতক্ষণ খাবার গ্রহণকারী খাবার খেতে থাকে ততক্ষণ মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] তার ওপর রহমত বর্ষণ করিতে থাকেন।
[আহমদ, তিরমিজি, ইবনি মাজাহ, দারিমী]{১}, {১} জইফ : তিরমিজি ৭৮৫, ইবনি মাজাহ ১৭৮৮, আহমাদ ২৭০৬০, দারিমী ১৭৩৮, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২১৩৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫১৩, সহীহ ইবনি হিববান ৩৪৩০, যঈফাহ্ ১৩৩২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২০৮২. বুরায়দাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বিলাল [রাদি.] একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এলেন। এ সময় তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সকালের নাশতা করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে বললেন, হে বিলাল! এসো খাবার খাও। বিলাল বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি সওমে আছি। তিনি বললেন, আমরা তো [এখানে অর্থাৎ- দুনিয়ায়] আমাদের রিযক খাচ্ছি। আর বিলালের উত্তম খাবার হবে জান্নাতে। হে বিলাল! তুমি কি জানো? [সায়িমের সামনে যখন খাবার খাওয়া হয় তখন] সায়িমের হাড় আল্লাহর তাসবীহ করে। যতক্ষণ তার সামনে খাওয়া চলে। ততক্ষণ আল্লাহর মালায়িকাহ্ [ফেরেশতা] [ফেরেশতাগণ] তার জন্য মাগফিরাত কামনা করিতে থাকেন।
[বায়হাক্বী, শুআবিল ঈমান]{১}, {১} মাওযূ : শুআবুল ঈমান ৩৩১৪, ইবনি মাজাহ ১৭৪৯, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৩৩১, জইফ আত তারগীব ৬৫৬, জইফ আল জামি ৫৯৫২। কারণ এর সানাদে রাবী মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহমান সম্পর্কে ইবনি আদী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সে মুনকারুল হাদিস। আর আবদী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, সে মিথ্যুক, মাতরূকুল হাদিস। এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
Leave a Reply