ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম ব্যভিচারের পরিণাম
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম ব্যভিচারের পরিণাম >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১৩, অনুচ্ছেদঃ ৩৬-৫০=১৫টি
অনুচ্ছেদ-৩৬ঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত
অনুচ্ছেদ-৩৭ঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত সম্পর্কিত কিছু বিধান রহিত হওয়া সম্পর্কে।
অনুচ্ছেদ-৩৮ঃ তালাক প্রদানের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা [রিজঈ]
অনুচ্ছেদ-৩৯ঃ চূড়ান্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার খোরাকী
অনুচ্ছেদ-৪০ঃ যিনি ফাত্বিমাহ [রাদি.]-এর হাদিসটি অস্বীকার করেন
অনুচ্ছেদ-৪১ঃ ইদ্দাত পালনকারিণী দিনের বেলায় বাইরে যেতে পারবে
অনুচ্ছেদ-৪২ঃ মীরাস ফার্য হওয়ার পর বিধবার জন্য খোরাকী প্রদানের ব্যবস্থা রহিত
অনুচ্ছেদ-৪৩ঃ স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর শোক পালন
অনুচ্ছেদ-৪৪ঃ যার স্বামী মারা গেছে তার [বাড়ীর] বাইরে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-৪৫ঃ যার মতে, ইদ্দাত পালনকারিণী অন্যত্র যেতে পারবে
অনুচ্ছেদ-৪৬ঃ ইদ্দাত পালনকারিণী ইদ্দাতকালে যা বর্জন করিবে
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ গর্ভবতীর ইদ্দাত
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ উম্মু ওয়ালাদের উদ্দাত
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ তিন তারাকপ্রাপ্তা নারী, দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রথম স্বামী তার নিকট ফিরে আসতে পারবে না।
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ ব্যভিচারের পরিণাম
অনুচ্ছেদ–৩৬ঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত
২২৮১. আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনিস সাকান আল-আনসারিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যুগে তিনি তালাকপ্রাপ্তা হন। তখন তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত পালনের প্রথা ছিলো না। যখন আসমাকে তালাক দেয়া হলো তখন মহান আল্লাহ তালাক বিষয়ে ইদ্দাতের আয়াত অবতীর্ণ করিলেন। তিনিই হলেন সর্বপ্রথম নারী যাকে কেন্দ্র করে তালাকপ্রাপ্ত মহিলার ইদ্দাতের বিধান অবতীর্ণ হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩৭ঃ তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত সম্পর্কিত কিছু বিধান রহিত হওয়া সম্পর্কে।
২২৮২.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [আল্লাহর বাণী]ঃ
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ ثَلاَثَةَ قُرُوءٍ
“তালাক্বপ্রাপ্তা নারী তিন হায়িয পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকিবে” [সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২২৮]; এবং
وَاللاَّئِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِنْ نِسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلاَثَةُ أَشْهُرٍ
“তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের আর ঋতুবতী হওয়ার আশা নাই তাহাদের ইদ্দাত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাহাদের ইদ্দাতকাল হইবে তিন মাস” [সূরাহ আত-তালাক্বঃ ৪]। এ দ্বিতীয় বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। অতঃপর আল্লাহ বলিয়াছেন,
فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا
“যদি তোমরা তাহাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দাও তাহলে তোমাদের জন্য তাহাদের পালনীয় কোন ইদ্দাত নাই যা তোমরা গণনা করিবে” [সূরাহ আল-আহযাবঃ ৪৯]।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–৩৮ঃ তালাক প্রদানের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা [রিজঈ]
২২৮৩. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] হাফসাহ [রাদি.]-কে তালাক প্রদান করার পর তাহাকে আবার ফিরিয়ে নিয়েছেন।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৩৯ঃ চূড়ান্ত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার খোরাকী
২২৮৪. ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু আমর ইবনি হাফস [রাদি.] অনুপস্থিত থাকা অবস্থায়ই তাহাকে চূড়ান্ত তালাক দেন। তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে তার নিকট সামান্য কিছু যব [খোরাকী] পাঠালেন। এতে ফাত্বিমাহ [রাদি.] রাগান্বিত হলেন। প্রতিনিধি লোকটি বললো, আল্লাহর শপথ! আপনার জন্য আমাদের উপর কোন পাওনা নাই। অতঃপর ফাত্বিমাহ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বিষয়টি জানালেন। তিনি বলিলেনঃ তার থেকে তুমি খোরাকী পাওয়ার অধিকারী নও। তিনি তাহাকে উম্মু শারীকের ঘরে ইদ্দাত পালনের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বলিলেনঃ তার ঘরে তো আমার সাহাবীদের আসা-যাওয়ার একটা ভিড় থাকে। তুমি বরং ইবনি উম্মে মাকতূমের ঘরে অবস্থান করো। কারণ সে অন্ধ মানুষ। তোমার পোশাক বদলাতে অসুবিধা হইবে না। তোমর ইদ্দাতকাল শেষ হলে আমাকে জানাবে। ফাত্বিমাহ [রাদি.] বলেন, আমার ইদ্দতকাল শেষ হলে আমি তাহাকে জানালাম, মুআবিয়াহ ইবনি আবু সুফিয়ান ও আবু জাহম উভয়ে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এই যে আবু জাহম, তার কাঁধ থেকে লাঠি কখনো নীচে নামে না। আর মুআবিয়াহ! তার তো কোন সম্পদই নাই। তুমি বরং উসামাহ ইবনি যায়িদকে বিয়ে করো। ফাত্বিমাহ বলেন, প্রথমে আমি তাহাঁর এ প্রস্তাবকে অপছন্দ করি। কিন্তু তিনি পুনরায় বলিলেনঃ তুমি উসামাহ ইবনি যায়িদকে বিয়ে করো। সুতরাং আমি তাহাকে বিয়ে করলাম। মহান আল্লাহ আমাদের এ দাম্পত্য জীবনের মধ্যে যে বরকত দান করেছেন, তাতে আমি অন্যের ঈর্ষার পাত্র হয়েছি।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৮৫. আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] তাহাকে বর্ণনা করেছেন, আবু হাফ্স ইবনিল মুগীরাহ তাহাকে তিন তালাক প্রদান করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ খালিদ ইবনিল ওয়ালীদ এবং মাখযূম গোত্রীয় একদল লোক নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট আগমন করে বলিলেন, হে আল্লাহর নাবী! আবু হাফ্স ইবনিল মুগীরাহ তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছে এবং তার জন্য সামান্য খোরাকী রেখেছে। তিনি বলেনঃ সে কোন খোরাকী পাবে না। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। তবে মালিক বর্ণিত হাদিসটি এর চেয়ে পরিপূর্ণ।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৮৬. আবু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] আমাকে বর্ণনা করেন যে, আমর ইবনি হাফস আল-মাখযূমী তাহাকে তিন তালাক প্রদান করেছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী খালিদ ইবনিল ওয়ালীদের কথাটি সহ পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী [সাঃআঃ] ঐ মহিলা সম্পর্কে বলিলেনঃ সে খোরাকী ও বাসস্থান পাবে না। তাতে রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার কাছে সংবাদ পাঠিয়েছেন যে, আমার সাথে পরামর্শ ছাড়া কিছু করিবে না।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৮৭. ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি বনু মাখযূমের জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলাম। সে আমাকে বিচ্ছেদের তালাক দিলো। অতঃপর বর্ণনাকারী মালিক বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে আরো রয়েছেঃ রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছিলেনঃ “আমাকে না জানিয়ে কিছু করো না”।
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আশ-শাবী, আল-বাহী ও আত্বা প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ আবদুর রহমানের মাধ্যমে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবু বাক্র ইবনি আবুল জাহম, এরা সকলেই ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, তার স্বামী তাহাকে তিন তালাক প্রদান করেছে। ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৮৮. ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তার স্বামী তাহাকে তিন তালাক প্রদান করলো, কিন্তু নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে তার জন্য খোরাকী ও বাসস্থান কিছুই নির্ধারিত করেননি।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৮৯. ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আবু হাফস ইবনিল মুগীরাহ্র স্ত্রী ছিলেন। আবু হাফস ইবনিল মুগীরাহ তাহাকে সর্বশেষ তৃতীয় তালাকটিও দিলেন। তিনি বলেন যে, তিনি রসূলুল্লাহর [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিকট আগমন করে স্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফাতাওয়াহ চাইলেন। তিনি তাহাকে ইবনি উম্মে মাকতূমের ঘরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু মারওয়ান ইবনিল হাকাম তালাকপ্রাপ্তা নারীর স্বামীর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিষয়ে ফাত্বিমাহর হাদিসকে সঠিক বলে গ্রহণ করিতে অস্বীকৃতি জানান। আার উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আয়িশাহ [রাদি.] ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের হাদিসকে অস্বীকার করেছেন।
ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সালিহ ইবনি ক্বায়সান, ইবনি জুরাইজ, শুআইব ইবনি আবু হামযাহ এরা সবাই আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ঐভাবেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৯০, উবাইদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
মারওয়ান ফাত্বিমাহ [রাদি.] এর কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে প্রেরিত হলেন। তিনি তাহাকে জানালেন যে, তিনি [ফাত্বিমাহ] আবু হাফসের স্ত্রী ছিলেন। নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাদি.]-কে ইয়ামানে কোন একটি এলাকার শাসক নিযুক্ত করে পাঠান। তার স্বামীও তার সাথে সেখানে যান। অতঃপর তার স্বামী তাহাকে অবশিষ্ট এক তালাক প্রদান করিলেন। তিনি আয়্যাশ ইবনি আবু রাবীআহ এবং হারিস ইবনি হিশামকে অনুরোধ করেন, তারা উভয়ে যেন ফাত্বিমাহকে খোরাকী দেন। জবাবে তারা উভয়ে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! সে গর্ভবতী না হলে খোরাকী পাবে না। তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট আগমন করলে তিনি বলেনঃ তুমি গর্ভবতী না হয়ে থাকলে খোরাকী পাবে না। তিনি স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাহাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। ফাত্বিমাহ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কোথায় যাবো? তিনি বলিলেনঃ ইবনি উম্মে মাকতূমের নিকট। তিনি অন্ধ মানুষ। তুমি তার সামনে কাপড় বদলালেও সে দেখিতে পাবে না। অতঃপর ইদ্দাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করিলেন। অতঃপর নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে উসামাহ [রাদি.]-এর সাথে বিবাহ দিলেন। তারপর ক্বাবীসাহ মারওয়ানকে তা অবহিত করিলেন। মারওয়ান বলেন, আমরা উক্ত হাদিস শুধু একটি মহিলা থেকেই শুনিয়াছি। আমরা নির্ভরযোগ্য বিষয়ে অবিচল থাকবো, লোকজন যার উপর আমল করে আসছে। ফাত্বিমাহ মারওয়ানের মন্তব্য শুনতে পেয়ে বলেন, আল্লাহর কিতাবই আমার ও তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করিবে। মহান আল্লাহ বলিয়াছেনঃ “তোমরা তাহাদেরকে ইদ্দাত পালনের সুযোগ রেখে তালাক দিবে… তুমি জ্ঞাত নও, হয়তো এরপর আল্লাহ কোন উপায় করে দিবেন” [সূ-রাহ আত-তালাকঃ ১]। ফাত্বিমাহ [রাদি.] বলিলেন, তিন তালাকের [হায়িযের] পর আবার কি সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে? ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন ইউনুস যুহরী হইতে অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। আর যুবাইদী উভয় হাদিসকে উবাইদুল্লাহর হাদিসের মতই মামারের হাদিসের অর্থে বর্ণনা করেছেন। আর আবু সালামাহর হাদিস উক্বাইলের হাদিসের অর্থানুরূপ এবং মুহাম্মাদ ইবনি ইসহাক্ব যুহরীর মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, ক্বাবীসাহ ইবনি যুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর হাদিসের অর্থ উবাইুদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদিসের অর্থকে সমর্থন করে। তিনি বলিয়াছেন, “অতঃপর ক্বাবীসাহ মারওয়ানের নিকট গিয়ে ফাত্বিমাহ [রাদি.] এর বিবরণ তাহাকে অবহিত করিলেন।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪০ঃ যিনি ফাত্বিমাহ [রাদি.]-এর হাদিসটি অস্বীকার করেন
২২৯১. আবু ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি কুফার জামে মাসজিদে আল-আসওয়াদের সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস [রাদি.] উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] এর কাছে আগমন করলে তিনি বলিলেন, এক মহিলার কথার উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের প্রতিপালকের কিতাব এবং আমাদের নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সুন্নাত ত্যাগ করিতে পারি না। কেননা আমরা জানি না যে, তিনি প্রকৃত ঘটনা মনে রেখেছেন কিনা?
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ
২২৯২. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আয়িশাহ [রাদি.] ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িস বর্ণিত হাদিসের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ফাত্বিমাহ একটি ভীতিপ্রদ স্থানে বসবাস করিতেন, সেখানে তার একাকী অবস্থান নিরাপদ মনে না করায় রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাকে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২২৯৩. উরওয়াহ ইবনিয যুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আয়িশাহ [রাদি.] এর নিকট ফাত্বিমাহ্র বক্তব্যের ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা করার মধ্যে তার কোন কল্যাণ নেই।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৯৪. সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ফাত্বিমাহর চলে যাওয়ার বিষয়ে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার অশোভনীয় আচরণের কারণে তা হয়েছিল। {২২৯৪}
{২২৯৪} সনদ দুর্বল। কারণ এটি মুরসলাল বর্ণনা। অনুরূপ বলিয়াছেন আল্লামা মুনযিরী। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২২৯৫. আল-ক্বাযিম ইবনি মুহাম্মাদ ও সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ ইবনিল আস আবদুর রহমান ইবনিল হাকামের কন্যাকে চূড়ান্ত তালাক প্রদান করায় আবদুর রহমান তাহাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ খবর শুনে আয়িশাহ [রাদি.] মদিনায় গভর্নর মারওয়ান ইবনিল হাকামের কাছে লোক মারফত বলিলেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং মহিলাকে তার [স্বামীর] ঘরে পাঠিয়ে দাও। সুলায়মান বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ মারওয়ান বলিলেন, আবদুর রহমান এ বিষয়ে আমার উপর প্রভাব খাটিয়েছে। আল-ক্বাসিম বর্ণিত হাদিসে রয়েছেঃ মারওয়ান বলেন, আপনার কাছে কি ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের হাদিস পৌঁছেনি? আয়িশাহ [রাদি.] বলিলেন, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসের ঘটনা উল্লেখ না করলে তোমার কোন ক্ষতি হইবে না। মারওয়ান বলিলেন, আপনি তাতে মন্দ কিছু দেখলে, তা এই দম্পতির ব্যাপারেও যথেষ্ট হইবে।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২২৯৬. মায়মূন ইবনি মিহরান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি মদিনায় আসি এবং সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যাবের নিকট গিয়ে বলি, ফাত্বিমাহ বিনতু ক্বায়িসকে তালাক দেয়া হলে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, ঐ নারী তো মানুষকে বিপদে ফেলেছেন। তিনি মুখোরা নারী ছিলেন। তাই তাহাকে অন্ধ ইবনি উম্মে মাকতূমের বাড়িতে সোপর্দ করা হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
অনুচ্ছেদ–৪১ঃ ইদ্দাত পালনকারিণী দিনের বেলায় বাইরে যেতে পারবে
২২৯৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার খালাকে তিন তালাক দেয়া হয়। এরপর তিনি তার খেজুর কাটতে বের হলে জনৈক ব্যক্তি তাহাকে নিষেধ করলো। তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি বলিলেনঃ তুমি বাইরে যাও এবং তোমার খেজুর কাটো। হয়তো তুমি তা থেকে সদাক্বাহ করিবে অথবা কল্যাণমূলক কাজ করিবে।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪২ঃ মীরাস ফার্য হওয়ার পর বিধবার জন্য খোরাকী প্রদানের ব্যবস্থা রহিত
২২৯৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মহান আল্লাহর বাণীঃ
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لأَزْوَاجِهِمْ مَتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ
“তোমাদের মধ্যে যাদের মৃত্যু আসন্ন এবং স্ত্রী রেখে যায় তারা যেন এরূপ অসিয়ত করে যে, তাহাদেরকে এক বছর ঘর থেকে বের না করে খোরাকী দেয়” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ঃ ২৪০]। এ আয়াতটি মীরাসের আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। যেখানে স্ত্রীদের জন্য এক-চতুর্থাংশ ও এক-অষ্টমাংশ নির্ধারণ করা হয়। আর এক বছরের ইদ্দাত বাতিল করে চার মাস দশ দিন করা হয়।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ–৪৩ঃ স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর শোক পালন
২২৯৯.হুমাইদ ইবনি নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
যাইনাব বিনতু আবু সালামাহ [রাদি.] তাহাকে এ তিনটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যাইনাব [রাদি.] বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ [রাদি.] হলুদ রং-এর সুগন্ধি বা অন্য কিছুর জন্য ডাকলেন। সেটা দিয়ে একটি বালিকাকে সুগন্ধি মাখালেন এবং তার গাল স্পর্শ করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমার কোন সুগন্ধির প্রয়োজন ছিলো না। আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে নারী আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন বৈধ নয়। কিন্তু স্ত্রী স্বীয় স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করিবে। যাইনাব [রাদি.] বলেন, অতঃপর যাইনাব বিনতু জাহশের ভাই মারা গেলে আমি তার ঘরে প্রবেশ করি। তিনিও সুগন্ধি নিয়ে আহবান করিলেন এবং তা লাগিয়ে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমার সুগন্ধির কোন দরকার ছিলো না। শুধু এজন্যেই ব্যবহার করলাম যে, আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলিতে শুনেছিঃ যে মহিলা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা বৈধ নয়। স্ত্রী কেবল তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন করিবে। যাইনাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আমার মা উম্মু সালামাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কন্যার স্বামী মারা গেছে এবং কন্যাটির চোখে রোগ ধরেছে। আমরা কি তার চোখে সুরমা লাগিয়ে দিবো? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ না। মহিলাটি দুই অথবা তিনবার জিজ্ঞেস করলো আর তিনি প্রতিবারই না বলিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ সে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করিবে। অথচ জাহিলী যুগে তোমাদের কোন নারীকে এক বছর যাবত ইদ্দাত পালন করিতে হতো, অতঃপর পায়খানা নিক্ষেপ করে পবিত্র হতো। হুমাইদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি যাইনাবকে জিজ্ঞেস করি, বছর শেষে পায়খানা নিক্ষেপের অর্থ কি? যাইনাব বলেন, জাহিলী যুগে কোন নারীর স্বামী মারা গেলে সে একটি কুড়ে ঘরে প্রবেশ করতো এবং খুবই মন্দ পোশাক পরতো, কোন সুগন্ধি মাখতো না। এভাবে সে এক বছর অতিবাহিত করতো। অতঃপর তার কাছে চতুষ্পদ জন্তু, যেমন গাধা, বকরী বা পাখি আনা হতো। সে তার গায়ে হাত বুলাতো, সে যেটার গায়ে হাত বুলাতো সেটা কমই জীবিত থাকতো। অতঃপর মহিলাকে বের করে এসে কিছু পায়খানা দেয়া হতো। সে তা নিক্ষেপ করতো। তারপর সে যে কোন কাজ, যেমন সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদি করতো। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল-হাফশ অর্থ সংকীর্ণ ঘর।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪৪ঃ যার স্বামী মারা গেছে তার [বাড়ীর] বাইরে যাওয়া
২৩০০. যাইনাব বিনতু কাব ইবনি উজরাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.]-এর বান ফুরাইআহ বিনতু মালিক ইবনি সিনান [রাদি.] তাহাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বনু খুদরায় তার পিতার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট এসে অনুমতি চাইলেন। তার স্বামী তার কয়েকটি পলাতক গোলামের সন্ধানে গিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি আল-কাদূম সীমায় পৌঁছে তাহাদের দেখিতে পেলো। এরপর গোলামরা তাহাকে হত্যা করে ফেলে। তার স্ত্রী রসূলুল্লাহর [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট অনুমিত চাইলেন, আমি আমার পিত্রালয়ে ফিরে যেতে চাই। তিনি আমার জন্য তার মালিকাধীন বাসস্থান অথবা খোরপোষ রেখে যাননি। মহিলা বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেনঃ হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রওয়ানা হয়ে হুজরা অথবা মাসজিদ পর্যন্ত গেলে তিনি আমাকে ডাকলেন বা কাউকে দিয়ে ডাকালেন। তিনি আমাকে বলিলেনঃ তুমি কি বলেছিলে? তখন আমি আমার স্বামীর ঘটনাটি পুনরাবৃত্তি করি। তিনি আমাকে বলিলেনঃ তুমি ইদ্দাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার [স্বামীর] ঘরেই অবস্থান করো। মহিলাটি বলিলেন, আমি সেখানে চার মাস দশ দিন অতিবাহিত করলাম। উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] তার যুগে আমার নিকট লোক পাঠিয়ে আমার ঘটনাটি জানতে চাইলে আমি তাহাকে অবহিত করি। তিনি তা অনুসরণ করিলেন এবং সেই অনুযায়ী বিধান জারি করিলেন।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪৫ঃ যার মতে, ইদ্দাত পালনকারিণী অন্যত্র যেতে পারবে
২৩০১. আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিয়াছেন, আল্লাহর বাণীঃ “নিজ পরিবারে থেকে ইদ্দাত পালন করা” সম্পর্কিত আয়াতটি মানসূখ হয়ে গেছে। সুতরাং যেখানে খুশি ইদ্দাত পালন করিবে। তা হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণীঃ
غَيْرَ إِخْرَاجٍ
“ঘর থেকে বহিষ্কার না করে” [সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৪০]। আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সে ইচ্ছা হলে স্বামীর বাড়িতে ইদ্দাত পূর্ণ করিবে এবং [স্বামীর] ওসিয়াতকৃত বাড়িতে অবস্থান করিবে, আর ইচ্ছে হলে অন্যত্র চলে যেতে পারবে। আল্লাহর এ বাণী মোতাবেকঃ
فَإِنْ خَرَجْنَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ
“আর যদি তারা বের হয়ে যায় তবে এতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই, তাহাদের কাজের ব্যাপারে” [সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ২৪০]। আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হলে নির্দিষ্ট বাসস্থানও মানসূখ হয়ে যায়। এখন সে যেখানে খুশি ইদ্দাত পূর্ণ করিতে পারে।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪৬ঃ ইদ্দাত পালনকারিণী ইদ্দাতকালে যা বর্জন করিবে
২৩০২. উম্মু আতিয়্যা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ কোন নারী স্বামী ব্যতীত [কোন মৃত ব্যক্তির জন্য] তিন দিনের বেশি শোক পালন করিবে না, অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে সে শোক পালন করব চার মাস দশ দিন। এ সময়ের মধ্যে সে রঙ্গিন পোশাক পরিধান করিবে না, অবশ্য হালকা রংবিশিষ্ট পোশাক পরতে পারে এবং সুরমা ও কোন প্রকারের সুগন্ধি ব্যবহার করিবে না। তবে হায়েয বা ঋতুস্রাবের পরে তোহরের নিকটবর্তী সমেয় কোসত ও আযফার নামক হালকা সুগন্ধি ব্যবহার করিতে পারে, খেযাবও লাগাতে পারবে না।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩০৩. উম্মু আত্বিয়্যাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সুত্রে পূর্বোক্ত হাদিস বর্ণিত। তবে ঐ দুজনের [হারুন ও মালিকের] হাদিস পূর্ণাঙ্গ নয়। মালিক ইবনি আবদুল্লাহ আল-মিসমায়ী বলেন, ইয়াযীদ বলিয়াছেন, আামার ধারণা হাদিসে “সে খিযাব ব্যবহার করিবে না”- এ কথাটিও আছে। হারূন বলিয়াছেন, “সে রঙ্গিন পোশাক পরবে না, অবশ্য হালকা রঙ্গিন পোশাক পরতে পারবে।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩০৪. নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিয়াছেনঃ কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে সে রঙ্গিন পোশাক, কারুকার্য খচিত জামা ও অলংকার পরবে না, খিযাব ও সুরমা ব্যবহার করিবে না।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩০৫. উসাইদের কন্যা উম্মু হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার মায়ের সুত্র হইতে বর্ণীতঃ
তার স্বামী মারা যান। তখন তার চোখে অসুখ থাকায় তিনি ইসমিদ সুরমা ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে তিনি তার এক দসীকে উম্মু সালমাহ [রাদি.]-এর নিকট প্রেরণ করে তাহাকে ইসমিদ সুরমা ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। জবাবে তিনি বলেন, তুমি কোন সুরমাই লাগাবে না। একান্তই প্রয়োজন হলে রাতের বেলা সুরমা লাগাবে এবং দিনের বেলায় তা মুছে ফেলো। উম্মু সালমাহ [রাদি.] বলেন, [আমার প্রাক্তন স্বামী] আবু সালামাহ মারা গেলে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার নিকট আসলেন। এ সময় আমি চোখে সিবর [গাছের রস] লাগিয়েছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে উম্মু সালামাহ! এটা কি? আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! এটা সিবর। এতে কোন খোশবু নেই। তিনি বলিলেনঃ এটা চেহারাকে রঞ্জিত করে। কাজেই তুমি তা কেবলমাত্র রাতের বেলা ব্যবহার করিবে এবং দিনের বেলা তা মুছে ফেলবে। আর মাথার চুলে কোন সুগন্ধি মেখে আঁচড়াবে না এবং মেহেদি লাগাবে না, কারণ এটাও এক প্রকার খিযাব। তিনি [উম্মু সালামাহ] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তবে আমি মাথায় কি ব্যবহার করে চুল আঁচড়বো হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলিলেনঃ তোমার মাথায় কুল পাতা লেপে নিবে। {২৩০৫}
দুর্বলঃ যয়ীফ সুনান নাসায়ী [২৩০/৩৫৩৭]। {২৩০৫} নাসায়ী, বায়হাক্বী। সানাদে মুগীরাহ বিন যাহ্হাক রয়েছে। হাফিয বলেন ঃ মাক্ববূল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ–৪৭ঃ গর্ভবতীর ইদ্দাত
২৩০৬. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উতবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তার পিতা উমার ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আরক্বাম আয-যুহরীকে এ মর্মে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তিনি যেন আল হারীস আল-আসলামীর মেয়ে সুবাইয়ার নিকট গিয়ে তাহাকে তার হাদিসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, এবং তিনি রসূলুল্লাহর [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] নিকট ফাতাওয়াহ জানতে চাইলে তিনি তাহাকে কি উত্তর দিয়েছিলেন তাও যেন জিজ্ঞেস করেন। উমার ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবদুল্লাহ ইবুন উতবাহকে জানালেন, সুবাইয়া [রাদি.] তাহাকে জানিয়েছেন যে, তিনি সাদ ইবনি খাওলাহ্ [রাদি.] এর বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। আর তিনি ছিলেন আমির ইবনি লুয়াঈ গোত্রের লোক এবং অন্যতম বদরী সাহাবী। তিনি গর্ভবতী অবস্থায় তার স্বামী বিদায় হাজ্জ্বের সময় মারা যান। তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে তার সন্তান প্রসব হয়। তিনি নিফাসমুক্ত হওয়ার পর বিয়ের প্রস্তাবের আশার সাজসজ্জা করেন। তখন আবদুদ-দার গোত্রীয় আবুস সানাবিল ইবনি বাকাক তার নিকট এসে বললো, আমি যে তোমাকে সুসজ্জিত দেখছি, তুমি কি বিয়ের ইচ্ছা করো? আল্লাহর শপথ! চার মাস দশ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি কোথাও বিয়ে করিতে পারবে না। সুবাইয়া [রাদি.] বলেন, তিনি আমাকে একথা বললে আমি আমার পোশাক গুটিয়ে সন্ধ্যার সময় রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট গমন করে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি আমাকে বলিলেন, আমি তখনই হালাল হয়েছি যখন আমি সন্তান জন্ম দিয়েছি। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, আমি ইচ্ছা করলে বিয়ে বসতে পারি। ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সন্তান প্রসবের পর তার বিয়ে বসাতে আমি কোন দোষ দেখি না, যদিও তার নিফাসের রক্ত চালু রয়েছে। তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তার স্বামী তার সাথে সহবাস করিবে না।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩০৭. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি লিআন করিতে চায় আমি তার সাথে তা করিতে প্রস্তুত আছি। আমি দৃঢ়ভাবে বলিতে পারি যে, সূরাহ আন-নিসা যা তালাকের সূরাহ হিসেবেও পরিচিত, “চার মাস দশদিন” সম্পর্কিত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরেই অবতীর্ণ হয়।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪৮ঃ উম্মু ওয়ালাদের উদ্দাত
২৩০৮. আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তোমরা নাবী [সাঃআঃ] এর সুন্নাতকে আমাদের জন্য সংশয়পূর্ণ করো না। ইবনিল মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাদের নাবী [সাঃআঃ] এর সুন্নাত অনুযায়ী উম্মু ওয়ালাদের ইদ্দাতকালও চার মাস দশ দিন।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৪৯ঃ তিন তারাকপ্রাপ্তা নারী, দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রথম স্বামী তার নিকট ফিরে আসতে পারবে না।
২৩০৯. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, ফলে ঐ মহিলা অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করলে সে তার সাথে নির্জনবাস করার পর সঙ্গম না করেই তাহাকে তালাক প্রদান করেছে। এখন ঐ মহিলা কি তার প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ? তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ সে প্রথম স্বামীর জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল নয় যতক্ষণ পরস্পর পরস্পরের মধুর স্বাদ গ্রহন [সহবাস] না করিবে।
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
অনুচ্ছেদ–৫০ঃ ব্যভিচারের পরিণাম
২৩১০. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি বলিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বড় পাপ কি? তিনি বলেনঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বলিলাম, তারপর কোনটি? তিনি বলিলেনঃ তোমার সন্তান তোমার খাদ্যে ভাগ বসাবে এ ভয়ে তাহাকে হত্যা করা। তিনি বলেন, এরপর কোনটি? তিনি বলিলেনঃ তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার যিনা করা। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এর কথার সমর্থনে অবতীর্ণ করা হয়ঃ
وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُونَ
“যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে আহবান করে না এবং আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যিনা করে না। তবে যারা এরূপ করে, তারা তাহাদের পাপের ফল ভোগ করিবে।”
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩১১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মুসাইকাহ নামক এক আনসারী সাহাবীর দাসী নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললো, আমার মনিব আমাকে ব্যভিচারে বাধ্য করে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ [অর্থ]
وَلاَ تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ
“তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে যিনায় লিপ্ত হওয়ার জন্য বাধ্য করোনা।”
ইদ্দত পালনের সঠিক নিয়ম – এই হাদিসের তাহকিকঃ
২৩১২. উবায়দুল্লাহ ইব্ন মুআয মুতামির থেকে এবং তিনি তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
[কুরআনের এ আয়াত] বর্ণনা করেছেন যে,
وَمَنْ يُكْرِهْهُنَّ فَإِنَّ اللَّهَ مِنْ بَعْدِ إِكْرَاهِهِنَّ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“আর তাহাদের মধ্যে যারা অপছন্দনীয় কাজ করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার এ অপছন্দনীয় কাজের পরেও মার্জনাকারী, অনুগ্রহশীল।” রাবী বলেন, সাঈদ ইব্ন আবুল হাসান বলেন, যারা বাধ্য হয়ে অপকর্ম করে, সেই সমস্ত নারীদের জন্য আল্লাহ মার্জনাকারী।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান মাকতু
Leave a Reply