দুই ইদের সালাত

দুই ইদের সালাত

দুই ঈদের সালাত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

পর্বঃ ৯, দুই ইদের সালাত , অধ্যায়ঃ (১-৪)=৪টি

১. অধ্যায়ঃ দু ঈদের দিনে নারীদের ঈদগাহে যাওয়া এবং পুরুষদের থেকে পৃথক থেকে খুত্‌বায় শারীক হওয়ার বৈধতা প্রসঙ্গে
২. অধ্যায়ঃ ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে ঈদগাহে সুন্নাত নামাজ আদায় না করা
৩. অধ্যায়ঃ দু ঈদের সলাতে কোন্‌ সূরাহ পাঠ করিবে
৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিনগুলোতে আল্লাহর নাফরমানী হয় না এমন ক্রীড়া-কৌতুক করার অবকাশ প্রদান

১. অধ্যায়ঃ দু ঈদের দিনে নারীদের ঈদগাহে যাওয়া এবং পুরুষদের থেকে পৃথক থেকে খুত্‌বায় শারীক হওয়ার বৈধতা প্রসঙ্গে

১৯২৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-এর এবং আবু বাক্‌র, উমর ও উসমান [রাদি.]-এর সাথে ঈদুল ফিত্বরের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সবাই খুত্‌বার আগে নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং পরে খুত্‌বাহ পাঠ করিয়াছেন। তিনি বলেন, এরপর নবী [সাঃআঃ] [মিম্বার থেকে] অবতরণ করিলেন। যখন তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে লোকদের বসিয়ে দিচ্ছিলেন, তা যেন আমি দেখিতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি লোকদের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের নিকট আসলেন। এ সময় তাহাঁর সাথে বিলাল [রাদি.] ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াতটুকু পাঠ করিলেন:

‏ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَنْ لاَ يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا

“হে নবী! ঈমানদার মহিলারা আপনার নিকট আসে, তখন তারা এ কথার ওপর বাইয়াত করিবে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করিবে না”- [সুরা আল মুম্‌তাহিনাহ্‌ ৬০:১২]।

এ আয়াত পাঠ সমাপ্ত করে নবী [সাঃআঃ] তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমরা কি এ কথার ওপর অটল আছ? তখন মাত্র একজন মহিলাই উত্তর করিল, হ্যাঁ। হে আল্লাহর নবী! সে ব্যতীত তাদের মধ্যে থেকে আর কেউ প্রতি উত্তর করেননি। অবশ্যই মহিলাটি কে তখন তা জানা যায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা সদাক্বাহ করিতে লাগল আর বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন অতঃপর বলিলেন, তোমাদের প্রতি আমার মা-বাপ কুরবান হোক! এগিয়ে আসো। তখন মহিলারা তাদের ছোট-বড় আংটিসমূহ বিলালের কাপড়ের উপর ফেলতে লাগল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২১]

১৯৩০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি [সাঃআঃ] ঈদের নামাজ খুত্‌বার পূর্বেই আদায় করিয়াছেন। নামাজের পর তিনি [সাঃআঃ] খুত্‌বাহ্‌ দিয়েছেন। তাই তিনি [সাঃআঃ] মহিলাদের কাছে এসে তাদেরকে বুঝালেন ও উপদেশ দিলেন এবং তাদেরকে দান সদাক্বার জন্যে আদেশ করিলেন। বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাপড় বিছিয়ে রেখেছিলেন। মহিলাগণ নিজ নিজ আংটি, বালা অন্যান্য জিনিস এতে ঢেলে দিতে লাগল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২২]

১৯৩১. আবুর রাবী আয্ যাহরানী, ইয়াকুব আদ্ দাওরাক্বী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. উভয়েই আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৩]

১৯৩২. আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আমি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, নবী [সাঃআঃ] ঈদুল ফিত্বরের দিন দাঁড়ালেন, অতঃপর নামাজ আদায় করিলেন। তিনি খুত্‌বাহ্‌ দেয়ার আগে প্রথমে নামাজ আদায় করিয়াছেন, পরে জনতার উদ্দেশে খুত্‌বাহ্‌ দিয়েছেন। নবী [সাঃআঃ] খুত্‌বাহ্‌ শেষ করে মহিলাদের কাছে এসে উপদেশ দিলেন। এ সময় তিনি [সাঃআঃ] বিলালের হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বিলাল তাহাঁর কাপড় প্রসারিত করে রেখেছিলেন। মহিলারা এতে দান বস্তু ফেলছিল। আমি [ইবনি জুরায়জ] আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা কি ঈদুল ফিত্বরের যাকাত [সদাক্বায়ে ফিতর]? আত্বা বলিলেন, না বরং তা সাধারণ সদাক্বাই ছিল। মহিলারা তাদের মূল্যবান আংটি [দানপাত্রে] ফেলছিল এবং সম্ভব সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছিল।

আমি আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে জিজ্ঞেস করলাম, বর্তমানে কি ইমামের জন্য খুত্‌বাহ্‌ সমাপ্ত করার পর মহিলাদের কাছে এসে তাদেরকে উপদেশ শুনানোর বিধি সম্মত? আত্বা বলিলেন, হ্যাঁ। আমার জীবনের রবের শপথ! এটা ঈমামদের ওপর অবশ্য কর্তব্য। তাদের এ কাজ না করার কি কারণ থাকতে পারে?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৪]

১৯৩৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ঈদের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি খুত্‌বার আগে প্রথমে নামাজ আদায় করিলেন-আযান ইক্বামাত ছাড়া। অতঃপর তিনি বিলালের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন এবং “আল্লাহ ভীতি” অর্জন করার আদেশ করিলেন ও তাহাঁর আনুগত্য করার জন্য অনুপ্রাণিত করিলেন। তিনি সমবেত জনতাকে উপদেশ দিলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা সদাক্বাহ্‌ কর। কেননা তোমাদের বেশীর ভাগ মহিলাই জাহান্নামের জ্বালানী হইবে। [এ কথা শুনে] মহিলাদের মধ্যে থেকে উভয় গালে কালো দাগ বিশিষ্ট একটি মেয়েলোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করিল, কেন আল্লাহর রসূল? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, কেননা তোমরা বেশী অজুহাত ও অভিযোগ পেশ করে থাক এবং স্বামীর অবাধ্যচরণ করে থাক। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর মহিলাগণ তাদের অলঙ্কারাদি দান করিতে শুরু করিল। তারা তাদের কানের ঝুমকা, রিং এবং আংটিসমূহ বিলালের কাপড়ে ফেলতে লাগল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৫]

১৯৩৪. ইবনি আব্বাস ও জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাঁরা উভয়ে বলেন, [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়] ঈদুল ফিত্বরের দিন এবং ঈদুল আযহার দিন [ঈদের জন্য] আযান দেয়া হত না। ইবনি জুরায়জ বলেন, কিছু সময় পর আমি আত্বাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে বলেন, আমাকে জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আল আনসারী [রাদি.] জানিয়েছেন, ঈদুল ফিত্বরের দিন ঈদের নামাজের জন্য আযানও নেই ইক্বামাতও নেই। কোন ডাক বা কোন প্রকার ধ্বনিও নেই। ঐ দিন ঈদের জন্য কোন আযান ও ইক্বামাতের নিয়ম নেই। ঈমাম [নামাজের উদ্দেশে] বের হওয়ার সময় এবং বের হওয়ার পরেও আযানের কোন প্রয়োজন নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯১৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৬]

১৯৩৫. আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমাকে জানিয়েছেন যে, ইবনি যুবায়র-এর নিকট প্রথমে লোকেরা যখন বাইয়্যাত নিচ্ছিল- ইবনি আব্বাস [রাদি.] তাহাঁর কাছে এ সংবাদ পাঠালেন যে, ঈদুল ফিত্বরের দিন ঈদের নামাজের জন্য আযান দেয়া হতো না। অতএব তুমি ঈদের নামাজের জন্য আযানের প্রচলন করিবে না। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনিয্‌ যুবায়র [রাদি.] তাহাঁর সময় আযানের প্রচলন করেননি। ইবনি আব্বাস [রাদি.] এ কথাটুকু ইবনিয্‌ যুবায়র-এর নিকট বলে পাঠান যে, খুত্‌বাহ্‌ নামাজের পরে হইবে, আর এ নিয়ম পালিত হয়ে আসছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব ইবনিয্‌ যুবায়র [রাদি.] খুত্‌বার পূর্বে ঈদের নামাজ সমাপন করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৭]

১৯৩৬. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে একবার দুবার নয়, অনেক বার দু ঈদেরনামাজ আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত আদায় করেছি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৮]

১৯৩৭. আবদুল্লাহ উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ], আবু বকর [রাদি.] ও উমর [রাদি.] ঈদের নামাজ খুত্‌বার আগে আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২২, ইসলামিক সেন্টার- ১৯২৮]

১৯৩৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন বের হইতেন এবং প্রথমে নামাজ আদায় করিতেন। যখন নামাজ সম্পন্ন করে সালাম ফিরাতেন, লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তারা নিজ নিজ নামাজের স্থানে বসে থাকত। তারপর যদি কোথাও সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন হতো, তবে তা লোকদের নিকট ব্যক্ত করিতেন। অথবা যদি অন্য কোন প্রয়োজন হতো তবে সে সম্পর্কে তাদেরকে নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলিতেন, তোমরা সদাক্বাহ্‌ কর, সদাক্বাহ্‌ কর। দানের সবচেয়ে অগ্রগামী ছিল মহিলাগণ। অতঃপর তিনি ঘরে ফিরতেন। পরবর্তীকালে মারওয়ান যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল, তখন একবার আমি তাহাঁর হাত ধরে চলতে চলতে ঈদগাহে এসে উপনীত হলাম। এসে দিখি কাসীর ইবনি সাল্‌ত শক্ত মাটি ও ইট দিয়ে একটা মিম্বার তৈরি করে রেখেছে। মারওয়ান আমার থেকে এমনভাবে হাত টেনে ছুটাচ্ছিল যেন আমাকে মিম্বারের দিকে টানা হেঁচড়া করছে আর আমি তাকে নামাজের দিকে টানা হেঁচড়া করছি। যখন আমি তাহাঁর এ মনোভাব দেখলাম আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রথমে নামাজ আদায়ের নিয়ম কি হল? মারওয়ান বলিল, না হে আবু সাঈদ! তুমি যে নিয়ম সম্পর্কে অবহিত তা রহিত হয়ে গেছে। আমি বললাম, কখনও না! সে সত্তার ক্বসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমি যে নিয়ম সম্পর্কে অবহিত এর চেয়ে উত্তম কিছু তোমরা কখনও করিতে পারবে না। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। এরপর তিনি চলে আসলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩০]

১৯৩৯. উম্মু আত্বিয়্যাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমাদেরকে নবী [সাঃআঃ] আদেশ করিয়াছেন, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা মেয়েদেরকে ও পর্দানশীন মেয়ে লোকদেরকে ঈদের সলাতে যাওয়ার জন্য বলি এবং তিনি ঋতুবতী নারীদেরকে আদেশ করিয়াছেন তারা যেন মুসলিমদের নামাজের স্থান থেকে কিছুটা পৃথক থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩১]

১৯৪০. উম্মু আতিয়্যাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময়] ঈদের মাঠে বের হওয়ার আদেশ করা হত এমনকি গৃহবাসিনী পর্দানশীন মহিলা ও প্রাপ্তবয়স্কা কুমারীকেও অনুমতি দেয়া হতো। উম্মু আতিয়্যাহ্‌ বলেন, ঋতুবতী মহিলারাও বের হয়ে আসত এবং সব লোকের সাথে তাকবীর পাঠ করত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩২]

১৯৪১. উম্মু আতিয়্যাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদেশ করিয়াছেন। আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহাতে বের করে দেই- পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা নামাজ থেকে বিরত থাকিবে। বাকী পুণ্যের কাজে ও মুসলিমদের দুআয় শারীক হইবে। আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো চাদর ওড়না নেই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তার জন্য বোন তাকে নিজ চাদর বা ওড়না পরিয়ে দিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৩]

২. অধ্যায়ঃ ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে ঈদগাহে সুন্নাত নামাজ আদায় না করা

১৯৪২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন বের হলেন এবং দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এর পূর্বে ও পরে কোন নামাজ আদায় করেননি। অতঃপর তিনি মহিলাদের নিকট আসলেন। এ সময় তাহাঁর সাথে বিলাল [রাদি.] ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদেরকে সদাক্বাহ্‌ করিতে আদেশ করিলেন। মহিলারা নিজ নিজ কানের রিং ও গলার হার বিলিয়ে দিতে লাগল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৪]

১৯৪৩. আম্‌র আন্‌ নাক্বিদ, আবু বাক্‌র ইবনি নাফি ও মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. তারা শুবাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৫]

৩. অধ্যায়ঃ দু ঈদের নামাজে কোন্‌ সূরাহ পাঠ করিবে

১৯৪৪. উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] আবু ওয়াক্বিদ আল লায়সী [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদুল ফিত্বর ও আযহার নামাজে কি ক্বিরাআত পাঠ করিতেন? আবু ওয়াক্বিদ [রাদি.] বলিলেন, তিনি এতে “ক্বাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ” [সূরাহ ক্বাফ] এবং “ইক্বতারাবাতিস্‌ সা-আতু ওয়ান্‌ শাক্বক্বাল ক্বামার” [সুরা ক্বামার] পাঠ করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯২৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৬]

১৯৪৫. আবু ওয়াক্বিদ আল লায়সী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঈদের দিনে কোন্‌ সুরা পড়েছেন? আমি উত্তরে বললাম, তিনি [সাঃআঃ] “ইক্বতারাবাতিস্‌ সা-আতু” [সুরা ক্বামার] এবং “ক্বাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ” [সূরাহ ক্বাফ] পাঠ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৭]

৪. অধ্যায়ঃ ঈদের দিন গুলোতে আল্লাহর নাফরমানী হয় না এমন ক্রীড়া-কৌতুক করার অবকাশ প্রদান

১৯৪৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু বকর [রাদি.] আমার নিকট আসলেন। এ সময় আমার কাছে আনসার সম্প্রদায়ের দুটি মেয়ে গান গাচ্ছিল। আনসারগণ বুআস যুদ্ধের সময় এ গানটি গেয়েছিল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, তারা অবশ্য [পেশাগত] গায়িকা ছিল না। আবু বাক্‌র [রাদি.] বলিলেন, একি? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে আবু বাক্‌র! প্রত্যেক জাতির জন্য উৎসবের ব্যবস্থা আছে। আর এটা হচ্ছে আমাদের উৎসবের দিন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৮]

১৯৪৭. ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া ও আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. উভয়ে হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে- দুটি বালিকা দফ্‌ বাজিয়ে খেলা করছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩২, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৩৯]

১৯৪৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু বকর [রাদি.] আইয়্যামে তাশরীকের দিনে আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে দেখেন যে, তাহাঁর কাছে দুটি বালিকা গান করছে এবং দফ বাজাচ্ছে। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় ছিলেন। আবু বকর [রাদি.] এটা দেখে বালিকাদ্বয়কে খুব শাসালেন বা ধমক দিলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বলেন, হে আবু বাক্‌র! এদেরকে ছেড়ে দাও। এ দিনগুলো হলো ঈদের দিন! আয়িশা [রাদি.] আরও বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি। তিনি [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর চাদর দ্বারা ঢেকে দিচ্ছেন, যখন আমি আবিসিনিয়ার যুবকদের [কৃষ্ণাঙ্গ] খেলার দৃশ্য অবলোকন করছিলাম। তখন আমি সবেমাত্র বালক। অতএব তোমরা অল্পবয়স্কা বালিকাদের সখের মূল্যায়ন কর। অল্পবয়স্কা বালিকারা অনেকক্ষণ আমোদ-ফূর্তিতে মেতে থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪০]

১৯৪৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখলাম, তিনি আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন আর কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা তাদের অস্ত্র দ্বারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মাসজিদে নাবাবীতে তাদের যুদ্ধের কলাকৌশল দেখাচ্ছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর চাদর দ্বারা আড়াল করে দিচ্ছেন যাতে আমি তাদের খেলা দেখিতে পারি। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ আমি নিজে ফিরে না আসি। অতএব অল্পবয়স্কা বালিকাদের খেল-তামাশার প্রতি যে লোভ রয়েছে তার মূল্যায়ন কর [তার সখ পূর্ণ কর]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪১]

১৯৫০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, আমার কাছে দুটি বালিকা জাহিলিয়্যাত যুগে সংঘটিত বুআস যুদ্ধের গান গাইছে। তিনি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন সময় আবু বকর [রাদি.] প্রবেশ করিলেন। তিনি [এ দৃশ্য দেখে] আমাকে ধমক দিয়ে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর নিকটে শাইত্বনের বাদ্য চলছে? [এ কথা শুনে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর দিকে ফিরে বলিলেন, হে আবু বাক্‌র! এদের ছেড়ে দাও। এরপর তিনি যখন অন্যমনস্ক হলেন, আমি বালিকাদ্বয়কে আস্তে খোঁচা দিলাম। তারা বের হয়ে চলে গেল। এটা ঈদের ঘটনা। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা ঢাল-বল্লম দ্বারা রণকৌশল ও খেল-তামাশা করছিল। তখন হয়ত আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আবেদন করেছি না হয় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিয়াছেন তুমি কি তা দেখিতে আগ্রহী? আমি বললাম- জি হ্যাঁ। তিনি [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গণ্ডদেশ তাহাঁর গণ্ডদেশের উপর সংলগ্ন হলো। এরপর তিনি [সাঃআঃ] তাদেরকে লক্ষ্য করে বলিলেন, হে বানী আরফিদাহ্‌! তোমরা তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও। অনেকক্ষণ পর আমি যখন একটু বিরক্তবোধ করলাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হয়েছে তো? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ! তিনি বলিলেন, তাহলে এবার যাও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪২]

১৯৫১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক আবিসিনীয় লোক মাদীনায় পৌঁছে ঈদের দিন মাসজিদে নাবাবীতে [অস্ত্র নিয়ে] খেলা করছিল। নবী [সাঃআঃ] আমাকে ডাকলেন। আমি তাহাঁর কাঁধের উপর মাথা রেখে তাদের খেলা দেখিতে লাগলাম। অনেকক্ষণ এ দৃশ্য উপভোগ করে শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪৩]

১৯৫২. ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া, ইবনি নুমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. উভয়ে হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তাঁরা মাসজিদের কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪৪]

১৯৫৩. উবায়দ ইবনি উমায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমাকে আয়িশা [রাদি.] জানিয়েছেন, তিনি ক্রীড়া প্রদর্শনকারীদের বলে পাঠালেন যে, তিনি তাদেরকে দেখিতে আগ্রহী। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও আমি উভয়ে দরজার উপর দাঁড়ালাম। আমি তাহাঁর দুকানের মাঝে ও কাঁধ সংলগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখেছিলাম তারা মাসজিদে [হাতিয়ার নিয়ে] খেলছিল।

আত্বা বলেন, তারা পারস্যের অথবা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিল। আর ইবনি আতীক্ব আমাকে বলেনঃ বরং তারা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪৫]

১৯৫৪. আবু হুরায়রাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আবিসিনীয় লোকেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে যুদ্ধাস্ত্রের সাহায্যে খেলাধূলা করছিল। এমন সময় উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] সেখানে আসলেন। তিনি [এ দৃশ্য দেখে] প্রস্তর খণ্ড তুলে তাদের প্রতি নিক্ষেপ করিতে উদ্যত হলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, এদেরকে খেলতে দাও হে উমর!

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৪৬]


Posted

in

by

Comments

One response to “দুই ইদের সালাত”

Leave a Reply