ইদরীস (আঃ) । আমি আদ জাতির নিকট তাদেরই ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম
ইদরীস (আঃ) । আমি আদ জাতির নিকট তাদেরই ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ (৫-৬)=২টি
৬০/৫. অধ্যায়ঃ ইদরীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৬. অধ্যায়ঃ (মহান আল্লাহর বাণীঃ)
৬০/৫. অধ্যায়ঃ ইদরীস (আঃ)-এর বিবরণ।
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়ামঃ ৫৭)
৩৩৪২.আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু যার (রাদি.) হাদীস বর্ণনা করিতেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, (লাইলাতুল মিরাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করিলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করিলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিক্মত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বলিলেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বলিলেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করিলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাহাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাহাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাহাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বলিলেন, মারহাবা! নেক নাবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাহাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাহাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল ( আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বলিলেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিলেন, তেমনি বলিল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাদি.) বলেন, অতঃপর আবু যার (রাদি.) উল্লেখ করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আকাশসমূহে ইদরীস, মূসা, ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করিয়াছেন যে, তিনি নাবী (সাঃআঃ) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং যষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পেয়েছেন।
আনাস (রাদি.) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নাবী (সাঃআঃ) সহ ইদরীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করিলেন, তখন তিনি [ইদরীস (আঃ)] বলেছিলেন, হে নেক নাবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। [নাবী (সাঃআঃ) বলেন] আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদরীস (আঃ)! অতঃপর মূসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বলিলেন, মারহাবা! হে নেক নাবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তিনি [জিবরাঈল (আঃ)] বলিলেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বলিলেন, মারহাবা! হে নেক নাবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি [জিবরাঈল (আঃ)] বলিলেন, ইনি ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বলিলেন, মারহাবা। হে নেক নাবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি [জিবরাঈল (আঃ)] বলিলেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) জানিয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবু ইয়াহয়্যা আনসারী (রাদি.) বলিতেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখান হইতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফর্য করিয়াছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, আপনার রব আপনার উম্মত এর উপর কী ফর্য করিয়াছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ উয়াক্ত সালাত ফর্য করা হয়েছে। তিনি বলিলেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মত তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বলিলেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি [নাবী(সাঃআঃ)] পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করিলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বলিলেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বলিলেন, আপনার রবের নিকট ফিরে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বলিলেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হইবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বলিলেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হইতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখালাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিস্ক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়।
৬০/৬. অধ্যায়ঃ (মহান আল্লাহর বাণীঃ)
আর আমি আদ জাতির নিকট তাদেরই ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম ………… (হূদ ৫০)
এবং আল্লাহর বাণীঃ আর স্মরণ কর (হূদের কথা) যখন তিনি আহকাফ অঞ্চলে নিজ জাতিকে সতর্ক করেছিলেন ……….. এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি- (আহকাফ ২১-২৫)।
এ প্রসঙ্গে আত্বা ও সুলাইমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আয়েশা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে হাদীস বর্ণিত আছে।
আর আদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে একটি প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার দ্বারা। ——- অর্থ ———– শক্ত।
ইবনু উওয়াইনাহ বলেন, প্রবাহিত করেছিলেন তিনি যা নিয়ন্ত্রণশারীর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বিধায় হীনভাবে সাত ও আট দিন পর্যন্ত তাদের উপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। ——— অর্থ ধারাবাহিক ভাবে। (সেখানে তুমি থাকলে) দেখিতে পেতে যে, তারা সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে সা. ———- অর্থ শিকড়।
৩৩৪৩. .حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَرْعَرَةَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى . له عليه وسلم قَالَ “ نُصِرْتُ بِالصَّبَا، وَأُهْلِكَتْ عَادٌ بِالدَّبُورِ ”.
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমাকে ভোরের বায়ু দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে আর আদ জাতিকে দাবুর বা পশ্চিমের বায়ু দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।
৩৩৪৪. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যাক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনু হানযালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন। (২) উআইনা ইবনু বদর ফাযারী। (৩) যায়দ ত্বায়ী, যিনি বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) আলকামাহ ইবনু উলাসা আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলিতে লাগলেন, নাবী (সাঃআঃ) নাজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি তো তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটারাগত, গন্ডদ্বয় ঝুলে পড়া; কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বলিলেন, আমিই যদি নাফারমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করিবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। [আবু সাঈদ (রাদি.) বলেন] আমি তাকে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.) বলে ধারণা করছি। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) তাকে নিষেধ করিলেন। অতঃপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এ ব্যাক্তির বংশ হইতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হইবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। দ্বীন হইতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হইতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে (মুসলিমদেরকে) হত্যা করিবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা হইতে বাদ দেবে। আমি যদি তাদের পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম।
৩৩৪৫. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে (আদ জাতির ঘটনা বর্ণনায়) —————————— এ আয়াতটি পড়তে শুনিয়াছি।
Leave a Reply