মসাকাত বা বিনিময়ে তত্ত্বাবধান ও ইজারাহ বা ঠিকায় সম্পাদন
মসাকাত বা বিনিময়ে তত্ত্বাবধান ও ইজারাহ বা ঠিকায় সম্পাদন >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১৫ঃ মসাকাত বা বিনিময়ে তত্ত্বাবধান ও ইজারাহ বা ঠিকায় সম্পাদন
পরিচ্ছেদ ০১. অংশ নির্ধারণ করে বর্গা দেয়া
পরিচ্ছেদ ০২. নির্দিষ্ট জিনিসের বিনিময়ে জমি কেরায়া ভাড়া করার বৈধতা
পরিচ্ছেদ ০৩. শিঙ্গা লাগিয়ে মজুরী নেওয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৪. কর্মচারীর মজুরী না দেয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৫. কুরআন শিখিয়ে বেতন নেওয়ার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৬. মজুরীর পরিমান জানা আবশ্যক
পরিচ্ছেদ ০১. অংশ নির্ধারণ করে বর্গা দেয়া
৯০৬ -ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইহূদীদের সঙ্গে উৎপাদিত ফল কিংবা ফসলের অর্ধেক শর্তে খায়বারের জমি বর্গা দিয়েছিলেন ।
উক্ত সহীহ্ দ্বয়ের বর্ণনায় আছে – তখন ইয়াহূদীরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে অনুরোধ করিল যেন তাহাদের সে স্থানে বহাল রাখা হয় এ শর্তে যে, তারা সেখানে চাষাবাদের দায়িত্ব পালন করিবে আর ফসলের অর্ধেক তাহাদের থাকিবে । আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাদের বলিলেন, আমরা এ শর্তে তোমাদের এখানে বহাল থাকতে দিব যতদিন আমাদের ইচ্ছা । কাজেই তারা সেখানে অহাল রইল । অবশেষে `উমার [রাঃআঃ] তাহাদেরকে নির্বাসিত করে দেন । {৯৭৩}
মুসলিমে আছে- উৎপন্ন ফল ও শস্যের অর্ধেকের বিনিময়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বারের ইহূদীদেরকে সেখানকার খেজুর বাগান ও আবাদী জমি তাহাদের নিজ ব্যয়ে আবাদ করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন ।
{৯৭৩} বুখারি এবং মুসলিমের বর্ণনায় আরো রয়েছে, অবশেষে `উমার [রাঃআঃ] তাহাদেরকে তাইমা ও আরীহায় নির্বাসিত করে দেন । বুখারি ২২৮৬, ২৩২৮, ২৩২৯, ২৩৩১, ২৩৩৮, ২৪৯৯, মুসলিম ১৫৫১, তিরমিজি ১৩৮৩, নাসায়ী ৩৮৬৩, ৩৮৬৪, ৩৮৬৫, আবূ দাউদ ৩০০৮, ৩৩৯৩, ৩৩৯৪, ইবনু মাযাহ ২৪৫৩, ২৪৬৭, ৮৮৯০, ৪৬৪৯, ৪৭১৮, মুয়াত্তা মালেক ১৪১৫ ।হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০২. নির্দিষ্ট জিনিসের বিনিময়ে জমি কেরায়া ভাড়া করার বৈধতা
৯০৭ -হানযালাহ বিন কাইস হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি রাফি` বিন খাদিজা[রাঃআঃ] কে সোনা ও রৌপ্যের বিনিময়ে জমি ইজারায় [লাগানর] বৈধতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি [সাহাবি রাফি`] বলিলেন, এতে কোন দোষ নেই । লোকেরা নবী[সাঃ] এর যুগে পানি প্রবাহের স্থলে, নহর ও নালার পাড়ের আর কোন ক্ষেতের অংশ বিশেষের বিনিময়ে ঠিকার লেনদেন করত । এসবের কোনটি নষ্ট হয়ে যেত আর কোনটি ঠিক থাকত এবং কোনটি ঠিক থাকত আর কোনটি নষ্ট হয়ে যেত, আর তখন এসব ঠিকা ব্যতিত অন্য কোনরূপ ঠিকা ছিল না । এই [অনিশ্চিত অবস্থার] ঠিকা সম্বন্ধেই নবী[সাঃ] তাকে ধমক দিয়েছেন ।
কিন্তু এমন জ্ঞ্যাত বস্তু যা নিশ্চিত ফলপ্রসূ ও জিম্মাদারির যোগ্য তাতে ঠিকা দেয়ার ব্যবস্থায় কোন দোষ নেই ।
অত্র কিতাবের সংকলক আসকালানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন- এ হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত সাধারনভাবে জমি ঠিকা দেয়ার নিষেধাজ্ঞাসূচক সংক্ষিপ্ত হাদিসটির বিশ্লেষণ স্বরূপ । {৯৭৪}
{৯৭৪} বুখারি ২২৮৬,২৩৮৭,২৩৩২,২৩৩৯,২৩৪৪,২৩৪৭, মুসলিম ১৫৪৭,১৫৪৮, তিরমিজি ১২২৪,১৩৮৪, নাসায়ী ৩৮৬২,৩৮৬৩,৩৮৬৪, আবূ দাউদ ৩৩৯২,৩৩৯৩, ইবনু মাযাহ ২৪৪৯,২৪৫৩, আহমাদ ৪৫৭২, মুয়াত্তা মালেক ১৪১৫ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯০৮ – সাবিত ইবনু যাহ্হাক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উৎপন্ন বস্তুর মধ্যে অংশ ধার্য চাষ আবাদের ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করিয়াছেন এবং ঠিকা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন । {৯৭৫}
{৯৭৫} মুসলিম ১৫৪৯, আহমাদ ১৫৯৫৩, দারেমী ২৬১৬/ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৩. শিঙ্গা লাগিয়ে মজুরী নেওয়ার বিধান
৯০৯ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন নবী[সাঃআঃ] শিঙ্গা লাগালেন এবং যে তাকে শিঙ্গা লাগিয়েছে, তাকে তিনি মজুরী দিলেন । যদি তা হারাম হতো তবে তিনি তা দিতেন না । {৯৭৬}
{৯৭৬} বুখারি ১৮৩৫,১৯৩৮,১৯৩৯,২১০৩, মুসলিম ১২০২, তিরমিজি ৭৭৫,৭৭৬,৭৭৭, নাসায়ী ২৮৪৫,২৮৪৬, আবূ দাঊদ ১৮৩৫,১৮৩৬,২৩৭২, ইবনু মাযাহ ১৬৮২,৩০৮১,১৮৫২,১৯২২, দারেমী ১৮১৯,১৮২১ । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯১০ – রাফি` বিন খাদীজ[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, সিঙ্গা লাগানর উপার্জন নোংরা বস্তু ।{৯৭৭}
{৯৭৭} মুসলিম ১৫৬৮, তিরমিজি ১২৭৫, নাসায়ী ৪২৯৪, আবূ দাঊদ ৩৪২১, আহমাদ ১৫৩৮৫, ১৫৪০০, দারেমী ২৬২১। মুসলিমের বর্ননায় সম্পুর্ন হাদিসটি হচ্ছেঃ কুকুরের মুল্য, ব্যভিচারিণীর মাহরানা এবং সিঙ্গা লাগানর উপার্জন নোংরা বস্তু । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৪. কর্মচারীর মজুরী না দেয়ার বিধান
৯১১ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ তা`আলা ঘোষণা করিয়াছেন যে, আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব । এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করিল । আরেক ব্যক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তাহাঁর মূল্য ভোগ করিল । আর এক ব্যক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে পুরো কাজ আদায় করে আর তাহাঁর পারিশ্রমিক দেয় না । {৯৭৮}
{৯৭৮} বুখারি ২২২৭, ২২৭০, ইবনু মাযাহ ২৪৪২, আহমাদ ৮৪৭৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৫. কুরআন শিখিয়ে বেতন নেওয়ার বিধান
৯১২ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা মজুরী গ্রহন কর এমন সব বস্তুর মধ্যে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহন করা সর্বাপেক্ষা বেশী হকদার ।{৯৭৯}
{৯৭৯} বুখারি ৫৭৩৭। বুখারির বর্ণনায় রয়েছে, ইবনু `আব্বাস[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাহাবীগনের একটি দল একটি কূয়ার পার্শ্ববর্তি বাসিন্দাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন । কূপের পাশে অবস্থানকারীদের মধ্যে ছিল সাপে কাটা এক ব্যক্তি কিংবা তিনি বলেছেন, দংশিত এক ব্যক্তি । তখন কূপের কাছে বসবাসকারীদের একজন এসে তাহাদের বললঃ আপনাদের মধ্যে কি কোন ঝার-ফুককারী আছেন? কূপ এলাকায় একজন সাপ বা বিচ্ছু দংশিত লোক আছে । তখন সাহাবীদের মধ্যে একজন সেখানে গেলেন । এরপর কিছু বকরী দানের বিনিময়ে তিনি সূরা ফাতিহা পড়লেন । ফলে লোকটির রোগ সেরে গেল । এরপর তিনি ছাগলগুলো নিয়ে তাহাঁর সাথিদের নিকট আসলেন, কিন্তু তারা কাজটি পছন্দ করিলেন না । তারা বললেনঃ আপনি আল্লাহ্র কিতাবের উপর পারিশ্রমিক নিয়েছেন । অবশেষে তারা মদিনায় পৌছে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল! তিনি আল্লাহ্র কিতাবের উপর পারিশ্রমিক গ্রহন করিয়াছেন । তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উপরোক্ত হাদিসটি উল্লেখ করিয়াছেন । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯১৩ – ইবনু `উমার[রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, শ্রমিককে তাহাঁর ঘাম শুকানোর পূর্বেই মজুরী দিয়ে দাও । {৯৮০}
আবূ ইয়া`লা ও বাইহাকিতে আবূ হুরাইরা[রাঃআঃ] থেকে আর ত্বাবারানীতে জাবীর[রাঃআঃ] থেকে এ ব্যাপারে আরো হাদিস বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তাহাঁর সবগুলোই য`ঈফ হাদিস । {৯৮১}
{৯৮০} ইবনু মাযাহ ২৪৪৩ । ইমাম হাইসামী মাজমাউয যাওায়েদ ৪/১০১ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে শারকি বিন কাত্তামি রয়েছে, সে দুর্বল । ইমাম সুয়ূতী আল জামেউস সগীর ১১৬৪ গ্রন্থে একে দুর্বল বলেছেন । ইমাম সনআনী সুবুলুস সালাম এর সনদে দুজন দুর্বল বর্ননাকারী পেয়েছে- শারকি বিন কাত্তামি ও মুহাম্মাদ বিন যিয়াদকে । কিন্তু শাইখ আলবানী তাখরীজ মিশকাতুল মাসাবীহ ২৯১৮ নং গ্রন্থে একে সহিহ লিগাইরিহী বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ১৪৯৮ গ্রন্থে সহিহ ও সহীহুল জামে ১০৫৫ গ্রন্থে একে হাসান বলেছেন । {৯৮১} বাইহাকি [৬/১২১] হাসান সনদে, আবূ ইয়ালা [৬৬৮২], তাবরানি সগীর[৩৪] । হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদ ০৬. মজুরীর পরিমান জানা আবশ্যক
৯১৪ – আবূ সা`ঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন শ্রমিককে কাজে লাগাবে সে যেন তাহাঁর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজে লাগায় । `আব্দুর রাযযাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সানাদ মুনকাতে`, আর বাইহাকি আবূ হানীফাহ[রহমাতুল্লাহি আলাইহি] – মাওসূল বা অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন । {৯৮২}
{৯৮২} ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর আত-তালখীসুল হাবীর [৩/১০৩৩] গ্রন্থে এটিকে মুনকাতি হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন । মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক [৮/২৩৫] হাদিস নং ১৫০২৩। এর সমর্থনে মা`মার থেকে হাম্মাদ সূত্রে মুরসাল সূত্রেও একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
Leave a Reply