আল্লাহ ভীতি, ধৈর্য ধারণ, বাদানুবাদ এবং গুনাহ হইতে বেঁচে থাকা

আল্লাহ ভীতি, ধৈর্য ধারণ, বাদানুবাদ এবং গুনাহ হইতে বেঁচে থাকা

আল্লাহ ভীতি, ধৈর্য ধারণ, বাদানুবাদ এবং গুনাহ হইতে বেঁচে থাকা  >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৮১, কোমল হওয়া, অধ্যায়ঃ (১৮-২৬)=৯টি

৮১/১৮. অধ্যায় : আমলে মাঝারি পন্থা গ্রহণ এবং নিয়মিত কাজ সম্পাদন
৮১/১৯. অধ্যায় : ভয়ের সঙ্গে আশা রাখা ।
৮১/২০. অধ্যায় : আল্লাহর নিষেধাবলীর ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করা । (আল্লাহর বাণী) : ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি । (সুরা আয্ যুমার ৩৯/১০)
৮১/২১. অধ্যায় : যে কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট । (সুরা ত্বলাক ৬৫/৩)
৮১/২২. অধ্যায় : নিরর্থক বাদানুবাদ অপছন্দনীয়
৮১/২৩. অধ্যায় : যবান সংযত করা ।
৮১/২৪. অধ্যায় : আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ।
৮১/২৫. অধ্যায় : আল্লাহ ভীতি
৮১/২৬. অধ্যায় : গুনাহ হইতে বেঁচে থাকা

৮১/১৮. অধ্যায় : আমলে মাঝারি পন্থা গ্রহণ এবং নিয়মিত কাজ সম্পাদন

৬৪৬১

মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আয়েশাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে কোন আমাল সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল? তিনি বলিলেন, যা সর্বদা নিয়মিত করা হয়। আমি বললাম, তিনি রাতে কখন উঠতেন? তিনি বলিলেন, তিনি উঠতেন যখন তিনি মোরগের ডাক শুনতেন।(আঃপ্রঃ- ৬০১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৭)

৬৪৬২

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল সে আমাল যা সব সময় নিয়মিত করা হয়। (আঃপ্রঃ- ৬০১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৮)

৬৪৬৩

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের আমাল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ আমাকে তাহাঁর রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমাল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। [২২][৩৯; মুসলিম ৫০/১৭, হাদীস ২৮১৬] (আঃপ্রঃ- ৬০১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৯)

[২২] হাদীসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু আমলের দ্বারা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না । (ফাতহুল বারী)

৬৪৬৪

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ঠিকভাবে নিষ্ঠাসহ কাজ করে নৈকট্য লাভ কর। জেনে রেখ, তোমাদের কাউকে তার আমাল জান্নাতে প্রবেশ করাবে না এবং আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমাল হলো, যা সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয় যদিও তা অল্প হয়। [৬৪৬৭; মুসলিম ৫০/১৭, হাদীস ২৮১৮, আহমাদ ২৪৯৯৫] (আঃপ্রঃ- ৬০১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২০)

৬৪৬৫

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমাল কি? তিনি বললেনঃ যে আমাল সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হয়। তিনি আরও বলিলেন, তোমরা সাধ্যের অতীত কাজ নিজের উপর চাপিয়ে নিও না। [২৩] (আঃপ্রঃ- ৬০১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২১)

[২৩] এখানে পরস্পর কয়েকটি হাদীসে সৎ আমলের ধারাবাহিকতা বা স্থায়ীত্বের উপর উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, যদিও সৎ আমলগুলো অল্প হয় । (ফাতহুল বারী)

৬৪৬৬

আলক্বামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ)-এর আমাল কেমন ছিল? তিনি কি কোন ইবাদাতের জন্য কোন দিন নির্দিষ্ট করিতেন? তিনি বলিলেন, না। তাহাঁর আমাল ছিল সার্বক্ষনিক ও নিয়মিত। নাবী (সাঃআঃ) যা করিতে পারতেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে তা করিতে পারবে? (আঃপ্রঃ- ৬০১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২২)

৬৪৬৭

আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ তোমরা ঠিক ঠিকভাবে নিয়মিত কাজ করে যাও। আর সুসংবাদ নাও। কিন্তু (জেনে রেখো) কারো আমাল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ আমাকে তাহাঁর ক্ষমা ও রহমতে আবৃত রেখেছেন। তিনি বলেছেন, এটি আমি ধারণা করছি আবু নায্র….. আয়েশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। আফ্ফান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. আয়েশাহ (রাদি.)…..নাবী সাঃআঃ হইতে বর্ণিত। তোমরা যথাযথ আমাল কর আর সুসংবাদ নাও। মুজাহিদ বলেছেন, سَدِيدًا وَسَدَادًا শব্দগুলোর অর্থ সত্য। [৬৪৬৪] (আঃপ্রঃ- ৬০১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৩)

৬৪৬৮

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদিন আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করিলেন। এরপর মিম্বারে উঠলেন এবং মাসজিদের কিবলার দিকে হাত দিয়ে ইংগিত করে বললেনঃ এইমাত্র যখন আমি তোমাদের নিয়ে সলাত আদায় করছিলাম, তখন এ দেয়ালের সামনে আমাকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হলো। আমি অদ্যকার ন্যায় ভাল ও মন্দ আর কোন দিন দেখিনি। কথাটি দুবার বলিলেন। [২৪](আঃপ্রঃ- ৬০১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৪)

[২৪] আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি মানুষকে যে সত্যের দিকে আহবান জানাতেন তা তাঁকে হর হামেশাই দেখানো হত । ফেরেশতাদের শ্রেষ্ঠ জিবরীল তাহাঁর কাছে সব সময় আসতেন, নাবী (সাঃআঃ) কে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হত । তদুপরি তাঁকে সাত আসমানের উপরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি পূর্ববর্তী অনেক নাবীকে দেখেছেন, পরকালের বহু দৃশ্যাবলী তাঁকে দেখানো হয়েছে, তাঁকে জান্নাতী খাবারও খাওয়ানো হয়েছে ।

৮১/১৯. অধ্যায় : ভয়ের সঙ্গে আশা রাখা ।

সুফ্ইয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুরআনের মধ্যে আমার কাছে এত্থেকে কঠিন আয়াত দ্বিতীয়টি নেই : তাওরাত, ইঞ্জিল আর তোমাদের রবের নিকট হইতে যা তোমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে তার বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমরা কোন ভিত্তির উপরই দণ্ডায়মান নও । (সুরা মায়িদাহ ৫/৬৮)

৬৪৬৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি। আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেন সেদিন একশটি রহমত সৃষ্টি করিয়াছেন। নিরানব্বইটি তাহাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন এবং একটি রহমত সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি কাফির আল্লাহর কাছে সুরক্ষিত রহমত সম্পর্কে জানে তাহলে সে জান্নাত লাভে নিরাশ হইবে না। আর মুমিন যদি আল্লাহর কাছে যে শাস্তি আছে সে সম্পর্কে জানে তা হলে সে জাহান্নাম থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করিবে না। (আঃপ্রঃ- ৬০১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৫)

৮১/২০. অধ্যায় : আল্লাহর নিষেধাবলীর ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করা । (আল্লাহর বাণী) : ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি । (সুরা আয্ যুমার ৩৯/১০)

উমার (রাদি.) বলেন, আমরা উত্তম জীবন লাভ করেছিলাম ধৈর্য ধরার কারণেই ।

৬৪৭০

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাহাঁর কাছে যা কিছু ছিল নিঃশেষ হয়ে গেল। যখন তাহাঁর দুহাতে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে যা কিছু থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে নিজেকে চাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন; আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হইতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবরের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কক্ষনো তোমাদের দান করা হইবে না।(আঃপ্রঃ- ৬০২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৬)

৬৪৭১

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.)-কে বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এত (দীর্ঘ সময় ধরে) সলাত আদায় করিতেন যে, তাহাঁর দুপা ফুলে যেত। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি কি শুকরগুযার বান্দা হবো না?(আঃপ্রঃ- ৬০২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৭)

৮১/২১. অধ্যায় : যে কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট । (সুরা ত্বলাক ৬৫/৩)

রাবী ইবনে খুসাইম বলেন, (এটা) সকল বিপদের ক্ষেত্রে, মানুষের উপর যা ঘটতে পারে ।

৬৪৭২

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করিবে। তারা হইবে এমন লোক, যারা ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, শূভ অশুভ মানে না এবং তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।(আঃপ্রঃ- ৬০২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৮)

৮১/২২. অধ্যায় : নিরর্থক বাদানুবাদ অপছন্দনীয়

৬৪৭৩

মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.)-এর কাতিব ওয়াররাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মুআবিয়াহ (রাদি.) মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.)-কে চিঠি লিখলেন যে, আপনি আমার কাছে একটা হাদীস লিখে পাঠান, যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে শুনেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মুগীরাহ ইবনু শুবাহ (রাদি.) তাহাঁর কাছে লিখে পাঠালেন, আমি নিশ্চয় নাবী সাঃআঃ-কে সালাত থেকে ফিরার সময় বলিতে শুনিয়াছি।

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

(অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাহাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাহাঁরই এবং হাম্দ তাহাঁরই। তিনি সবার উপর শক্তিমান। আর তিনি নিষেধ করিতেন অনর্থক কথা নিয়ে বাদানুবাদ করা হইতে, অধিক প্রশ্ন করা হইতে, মালের অপচয় করা হইতে, আর তিনি নিষেধ করিয়াছেন, কৃপনতা ও ভিক্ষা বৃত্তি হইতে, মাতাপিতার অবাধ্যতা এবং কন্যাদেরকে জীবন্ত প্রোথিত করা হইতে। [৮৪৪]

হুশায়ম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..আবদুল মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ওয়াররাদ (রাদি.)-কে আল মুগীরা…..নাবী সাঃআঃ হইতে এ হাদীস বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি। (আঃপ্রঃ- ৬০২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৯)

৮১/২৩. অধ্যায় : যবান সংযত করা ।

নাবী (সাঃআঃ)র বাণী : আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে । আল্লাহর বাণী : যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে (তা সংরক্ষণের জন্য) তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী আছে । (সুরা ক্বাফ ৫০/১৮)

৬৪৭৪

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুচোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহবা) এবং দুরানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তাহাঁর জান্নাতের যিম্মাদার। [২৫] (আঃপ্রঃ- ৬০২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩০)

[২৫] দুনিয়াতে যত ফিতনা ফাসাদ ও অপকর্ম সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই হয়ে থাকে জিহবা ও লজ্জা স্থানের দ্বারা । এ দুটোকে যে সংযত করিবে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছেন ।

৬৪৭৫

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে ক্লেশ না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। (আঃপ্রঃ- ৬০২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩১)

৬৪৭৬

আবু শুরাইহ আল খুযায়ী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার দুকান নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছে এবং আমার অন্তর তা হিফাযাত করে রেখেছে, মেহমানদারী তিন দিন, ভদ্রতার সঙ্গে। জিজ্ঞেস করা হল, ভদ্রতা কী? তিনি বলিলেন, একদিন ও এক রাত (বিশেষ মেহমানদারী)। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা নীরব থাকে। (আঃপ্রঃ- ৬০২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩২)

৬৪৭৭

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, নিশ্চয় বান্দা পরিণাম চিন্তা ব্যতিরেকেই এমন কথা বলে যে কথার কারণে সে ঢুকে যাবে জাহান্নামের এমন গভীরে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশী। [২৬][৬৪৭৮; মুসলিম ৫৩/৬, হাদীস ২৯৮৮] (আঃপ্রঃ- ৬০২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৩)

[২৬] নেক আমল করা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি কুফরি কথাবার্তা বললে তা তাকে জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে পৌঁছে দিবে ।

৬৪৭৮

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় বান্দা কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন কথা বলে অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। কিন্তু এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হইবে।[৬৪৭৭; মুসলিম ৫৩/৬, হাদীস ২৯৮৮] (আঃপ্রঃ- ৬০২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৪)

৮১/২৪. অধ্যায় : আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা ।

৬৪৭৯

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সাত প্রকার লোককে আল্লাহ ছায়া দান করবেন। (তন্মধ্যে) এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহর যিক্‌র করে অতঃপর তার দুটি চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। (আঃপ্রঃ- ৬০২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৫)

৮১/২৫. অধ্যায় : আল্লাহ-ভীতি

৬৪৮০

হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের পূর্বের উম্মাতের এক লোক ছিল, যে তার আমাল সম্পর্কে আশংকা পোষণ করত। সে তার পরিবারের লোকদের বলিল, আমি মারা গেলে তখন তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে দিয়ে অতঃপর প্রচণ্ড গরমের দিনে আমার ছাই সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করলো। অতঃপর আল্লাহ সেই ছাই জমা করে তাকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাকে এ কাজে কিসে প্ররোচিত করলো? সে বললো, একমাত্র আপনার ভয়ই আমাকে এ কাজ করিতে বাধ্য করেছে। তখন আল্লাহ তাকে মাফ করে দিলেন। [২৭] (আঃপ্রঃ- ৬০৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৬)

[২৭] উল্লেখিত একটি দেহকে একত্র করা এটাই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহ তাআলার শক্তি ক্ষমতা কত বড়! সুতরাং যারা কিয়ামত দিবস, হিসাব ইত্যাদিকে অস্বীকার করে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত । আল্লাহকে ভয় করাই হচ্ছে সকল ইবাদতের প্রাণ । ভয়-শূন্য ও বেপরোয়াভাবে কৃত কোন আমলই আল্লাহ কবুল করবেন না । আল্লাহর প্রতি ভয় ভীতিপূর্ণ যথাযথ কম পরিমাণ ইবাদতও মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দিতে পারে ।

৬৪৮১

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) আগের অথবা পূর্ব যুগের এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করিলেন। আল্লাহ তাকে ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দান করেছিলেন। মৃত্যুর সময় হাজির হলে সে তার সন্তানদেরকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলিল, উত্তম। সে বললো, যে আল্লাহর কাছে কোন সম্পদ জমা রাখেনি, সে আল্লাহর কাছে হাজির হলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন। তোমরা খেয়াল রাখবে, আমি মারা গেলে আমাকে জ্বালিয়ে দেবে। আমি যখন কয়লা হয়ে যাব তাকে ছাই করে ফেলবে। অতঃপর যখন প্রবল বাতাস বইবে, তখন তোমরা তা উড়িয়ে দেবে। এ ব্যাপারে সে তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিল। রাবী বলেন, আমার প্রতিপালকের কসম! তারা তাই করিল। অতঃপর আল্লাহ বলিলেন, এসে যাও। হঠাৎ সে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল। তখন তিনি বলিলেন, হে আমার বান্দা! এ কাজে কিসে তোমাকে প্রেরণা দিল? সে বলিল, আপনার ভীতি অথবা আপনার থেকে সরে থাকার কারণে। তখন তিনি এর প্রতিদানে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আমি আবু উসমানকে বর্ণনা করেছি, তিনি বলেছেন, আমি সালমানকে শুনিয়াছি, তিনি এছাড়া অতিরিক্ত করিয়াছেন…..আমার ছাইগুলো সমুদ্রে ছিটিয়ে দেবে। অথবা তিনি যেমনটি বর্ণনা করিয়াছেন। মুআয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..উক্‌বাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমি আবু সাঈদ (রাদি.)-কে শুনিয়াছি নাবী (সাঃআঃ) থেকে।(আঃপ্রঃ- ৬০৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৭)

৮১/২৬. অধ্যায় : গুনাহ হইতে বেঁচে থাকা

৬৪৮২

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি ও আমাকে যা দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ এমন এক লোকের মত, যে তার সম্প্রদায়ের কাছে এসে বলিল, আমি আমার চোখ দিয়ে শত্রুদলকে দেখেছি আর আমি স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং তোমরা সত্বর আত্মরক্ষার ব্যবস্থা কর। অতঃপর একদল তার কথা মান্য করে রাতের অন্ধকারে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিল। এদিকে আরেক দল তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিল, যদ্দরুন ভোর বেলায় শত্রুসেনা এসে তাদেরকে বিধ্বস্ত করে দিল।(আঃপ্রঃ- ৬০৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৮)

৬৪৮৩

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন যে, আমার ও লোকদের উদাহরণ এমন লোকের মত, যে আগুন জ্বালালো আর যখন তার চারদিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ঐ সমস্ত প্রাণী যেগুলো আগুনে পুড়ে, তারা তাতে পুড়তে লাগল। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে ফিরানোর চেষ্টা করিল। কিন্তু সেগুলো আগুনে তাকে পরাজয় করিল এবং আগুনে পতিত হল। (তদ্রূপ) আমিও তোমাদের কোমর ধরে আগুন থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু তোমরা তাতেই পতিত হচ্ছ।[মুসলিম ৪৩/৬, হাদীস ২২৮৪, আহমাদ ৮১২৩] (আঃপ্রঃ- ৬০৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৩৯)

৬৪৮৪

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিম (প্রকৃত) সেই, যার যবান ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে। আর (প্রকৃত) মুহাজির সেই, আল্লাহ যা নিষেধ করিয়াছেন তা যে পরিত্যাগ করে।(আঃপ্রঃ- ৬০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৪০)

Comments

Leave a Reply