আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস
আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৯৭, জাহমিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ, অধ্যায়ঃ (১৭-২৭)=১১টি
৯৭/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী: যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও- (সুরা ত্বহা ২০/৩৯)।
৯৭/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সুরা আল-হাশর ৫৯/২৪)
৯৭/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যাকে আমি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি। [২১১] (সুরা সোয়াদ ৩৮/৭৫)
৯৭/২০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ আল্লাহর চেয়ে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কেউই নয়
৯৭/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ বল, সাক্ষ্য প্রদানে সর্বশ্রেষ্ঠ কী? বল, আল্লাহ-(সুরা আনআম ৬/১৯)।
৯৭/২২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তখন তাহাঁর আরশ পানির ওপর ছিল- (সুরা হূদ ১১/৭)। তিনি আরশে আযীমের প্রতিপালক- (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১২৯)।
৯৭/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ফেরেশ্তা এবং রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়- (সুরা আন-নিসা ৪/৭০)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তাহাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে- (সুরা ইউনুস ১০/৩৫)।
৯৭/২৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কতক মুখ সেদিন উজ্জ্বল হইবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সুরা আল-ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)
৯৭/২৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর রাহমাত নেক্কারদের নিকটবর্তী। (সুরা আল-আরাফ ৭/৫৬)
৯৭/২৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহই আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন যাতে ও দুটো টলে না যায়। (সুরা ফাতির ৩৫/৪১)
৯৭/২৭. অধ্যায়ঃ আসমান, যমীন ইত্যাদির সৃষ্টি সম্পর্কে; এটি রব্বের কাজ ও নির্দেশ।
৯৭/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণী: যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও- (সুরা ত্বহা ২০/৩৯)।
আল্লাহর বাণী: যা চলত আমার তত্ত্বাবধানে- (সুরা আল-ক্বামার ৫৪/১৪)।
৭৪০৭
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের কাছে গোপন থাকবেন না। আল্লাহ অন্ধ নন। এর সঙ্গে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর হাত দিয়ে স্বীয় চোখের দিকে ইশারা করিলেন। মাসীহ দাজ্জালের ডান চোখ কানা। তার চোখটি যেন আংগুরের মত ভাসমান।(আঃপ্রঃ- ৬৮৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৩)
৭৪০৮
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোন নাবী পাঠাননি যিনি তাহাঁর জাতিকে কানা মিথ্যুকটির ব্যাপারে সতর্ক করেননি। সে কানা (দাজ্জাল)। আর তোমাদের প্রতিপালক কানা নন। তাহাঁর দুচোখের মাঝখানে কাফির লেখা থাকবে।(আঃপ্রঃ- ৬৮৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৪)
৯৭/১৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সুরা আল-হাশর ৫৯/২৪)
৭৪০৯
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বানী মুসতালিক যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, মুসলিমগণ যুদ্ধে কতকগুলো বন্দিনী লাভ করিলেন। এরপর তাঁরা এদেরকে ভোগ করিতে চাইলেন। আবার তারা যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সে ইচ্ছাও তারা করছিলেন। তাই তারা নাবী (সাঃআঃ) -কে আযল বিষয়ে জিজ্ঞেস করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এতে তোমাদের কোন লাভ নেই। কারণ আল্লাহ কিয়ামাত পর্যন্ত যত জীবন সৃষ্টি করবেন, তা সবই লিখে রেখেছেন। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কাযআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর মাধ্যমে আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যত জীবন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তা সৃষ্টি করবেনই।(আঃপ্রঃ- ৬৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫)
৯৭/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ যাকে আমি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি। [২১১] (সুরা সোয়াদ ৩৮/৭৫)
[২১১] এ আয়াতে আল্লাহ তাআলার বাস্তব বা প্রকৃত হাত রয়েছে তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তার হাত কেমন এ প্রশ্ন করা যাবে না। অর্থাৎ ধরন, প্রকৃতি, মাখলূকের হাতের সাথে তুলনা দেয়া, অস্বীকার করা বা অপব্যাখ্যা করা যাবে না। যেমন বলা হয়, হাত দ্বারা উদ্দেশ্য শক্তি, রাজত্ব, নিআমত, অঙ্গীকার ইত্যাদি। আবার বলা হয় কুদরতী হাত। এসব মনগড়া ব্যাখ্যা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহর পরিপন্থী। সুতরাং তার প্রকৃত হাত রয়েছে, কুদরতী হাত নয়।
৭৪১০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে একত্রিত করবেন, তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে কোন সুপারিশ যদি নিয়ে যেতাম তাহলে তিনি আমাদেরকে এ স্থান থেকে বের করে শান্তি প্রদান করিতেন। এরপর তারা আদাম (আঃ) -এর কাছে গিয়ে বলবে, হে আদাম (আঃ)! আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? অথচ আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করিয়াছেন। আপনাকে তিনি তাহাঁর ফেরেশ্তাগণ দিয়ে সাজদাহ করিয়েছেন। আর আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। কাজেই আপনি আমাদের রব্বের কাছে সুপারিশ করুন, যেন এ স্থান থেকে আমাদেরকে তিনি স্বস্তি দেন। আদাম (আঃ) তখন বলবেন, এ কাজের জন্য আমি উপযুক্ত নই। এবং আদাম (আঃ) তাদের কাছে নিজের ভুলের কথা স্মরণ করবেন এবং বলবেন, তোমরা বরং নূহ (আঃ) -এর কাছে যাও। যেহেতু তিনিই আল্লাহর প্রথম রাসুল। যাঁকে তিনি যমীনবাসীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা নূহ (আঃ) -এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি তাহাঁর কৃত ভুলের কথা মনে করে বলবেন, তোমরা বরং আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আঃ) -এর কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম (আঃ) -এর কাছে আসবে। তিনিও তাদের কাছে স্বীয় ভুলের কথা উল্লেখ করে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মূসা (আঃ) -এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ তাওরাত দিয়েছিলেন এবং তাহাঁর সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। তারা তখন মূসা (আঃ) -এর কাছে আসবে। মূসা (আঃ) -ও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। তাদের কাছে তিনি নিজের ভুলের কথা উল্লেখ করে বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আঃ) -এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা, তাহাঁর রাসুল, কালেমা ও রূহ। তখন তারা ঈসা (আঃ) -এর কাছে আসবে। তখন ঈসা (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ (সাঃআঃ) -এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা, যাঁর আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। তারা সবাই আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রব্বের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে এর অনুমতি দেয়া হইবে। আমি আমার রব্বকে যখন দেখিতে পাব, তখনই আমি তাহাঁর সামনে সাজদায় পড়বো। আল্লাহ তাহাঁর মরজী অনুসারে যতক্ষণ আমাকে সেভাবে রাখার রেখে দেবেন। তারপর আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হইবে। চান, দেয়া হইবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হইবে। তখন আমার রব্বের শিখিয়ে দেয়া প্রশংসার দ্বারা আমি তাহাঁর প্রশংসা করব। তারপর আমি শাফাআত করব। আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে। এরপর আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব। তারপর আমি ফিরে আসব। যখন আমি আমার প্রতিপালককে দেখিতে পাব তখন তাহাঁর জন্য সেজদায় পড়ে যাব। আল্লাহর মরজী মোতাবেক যতক্ষণ আমাকে এভাবে রাখতে চাইবেন রেখে দেবেন। তারপর আমাকে বলা হইবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হইবে। চান, দেয়া হইবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হইবে। তখন আমার রব্বের শিখিয়ে দেয়া প্রশংসার দ্বারা আমি তাহাঁর প্রশংসা করব এবং সুপারিশ করব। তখনো আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করা হইবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব। তারপর আমি আবার ফিরে আসব। আমি এবারও আমার প্রতিপালককে দেখামাত্র সাজদাহয় পড়ে যাব। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মরজী মোতাবেক যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে ঐ অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলা হইবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হইবে। চান, দেয়া হইবে। সুপারিশ করুন, কবুল করা হইবে। তখন আমার রব্বের শেখানো প্রশংশার দ্বারা প্রশংসা করে শাফাআত করব। তখনও আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করা থাকবে। আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব। অতঃপর আমি তাহাঁর কাছে ফিরে গিয়ে বলব, হে আমার রব্ব! এখন একমাত্র তারাই জাহান্নামে বাকী আছে, যাদেরকে কুরআন আটক করে রেখে দিয়েছে। এবং যাদের উপর স্থায়ীভাবে জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গিয়েছে। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে, আর তার দিলে একটি যবের ওজন পরিমাণ ঈমান আছে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে। তারপর বের করা হইবে জাহান্নাম থেকে তাদেরকেও, যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং তার দিলে একটি গমের ওযন পরিমাণ ঈমান আছে। জাহান্নাম থেকে (সর্বশেষ) তাকে বের করা হইবে, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়েছে এবং তার দিলে অণু পরিমাণ মাত্র ঈমান আছে। (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৬)
আল্লাহর বাণীঃ যাকে আমি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি।[১] (সুরা সোয়াদ ৩৮/৭৫)
[১] এ আয়াতে আল্লাহ তাআলার বাস্তব বা প্রকৃত হাত রয়েছে তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তার হাত কেমন এ প্রশ্ন করা যাবে না। অর্থাৎ ধরন, প্রকৃতি, মাখলূকের হাতের সাথে তুলনা দেয়া, অস্বীকার করা বা অপব্যাখ্যা করা যাবে না। যেমন বলা হয়, হাত দ্বারা উদ্দেশ্য শক্তি, রাজত্ব, নিআমাত, অঙ্গীকার ইত্যাদী। আবার বলা হয় কুদরতী হাত। এসব মনগড়া ব্যাখ্যা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহর পরিপন্থী। সুতরাং তার প্রকৃত হাত রয়েছে, কুদরতী হাত নয়।
৭৪১১
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহর হাত পূর্ণ, রাতদিন খরচ করলেও তাতে কমতি আসে না। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা কি দেখেছ? আসমান যমীন সৃষ্টি করার পর থেকে তিনি যে কত খরচ করিয়াছেন, তা সত্ত্বেও তাহাঁর হাতে যা আছে, তাতে এতটুকু কমেনি। এবং নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তখন তাহাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাহাঁর অন্য হাতে আছে দাঁড়িপাল্লা, যা কখনও তিনি নিচে নামান আবার কখনও উপরে উঠান। (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৭)
৭৪১২
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন পৃথিবীটা তাহাঁর মুঠোতে নিয়ে নেবেন। আসমানকে তাহাঁর ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন; বাদশাহ একমাত্র আমিই।
সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন। উমার ইবনু হামযাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর মাধ্যমে ইবনু উমার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে এরকম বর্ণনা করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮)
৭৪১৩
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ যমীনকে তাহাঁর মুঠোয় নিয়ে নেবেন। (আঃপ্রঃ- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮)
৭৪১৪
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, এক ইয়াহূদী নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এসে বলিল, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিনে আসমানগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর, যমীনগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর, পর্বতগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর, গাছগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর এবং বাকী সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলের ওপর তুলে বলবেন, বাদশাহ একমাত্র আমিই। এতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হেসে দিলেন। এমনকি তাহাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশিত হল। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ তারা আল্লাহ তাআলার যথোচিত মর্যাদা উপলব্ধি দেয়নি।
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ বলেন, এ বর্ণনায় একটু যোগ করিয়াছেন ফুদায়ল ইবনু আয়ায… আবিদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আবদুল্লাহ (রাদি.) থেকে যে, এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিস্মিত হয়ে তার সমর্থনে হেসে দিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৯)
৭৪১৫
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আহলে কিতাবদের এক লোক নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে বলিল, হে আবুল কাসিম! (ক্বিয়ামাতের দিন) আল্লাহ আসমানগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর, যমীনগুলোকে এক আঙ্গুলের ওপর, বৃক্ষ ও কাদামাটিকে এক আঙ্গুলের ওপর এবং বাকি সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলের ওপর তুলে বলবেন, বাদশাহ একমাত্র আমিই, বাদশাহ একমাত্র আমিই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখিতে পেলাম নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে ফেললেন। এমনকি তাহাঁর মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ল। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ আর তারা আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য মর্যাদা উপলব্ধি করিতে পারে নি। (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১০)
৯৭/২০. অধ্যায়ঃ নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাণীঃ আল্লাহর চেয়ে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কেউই নয়
وَقَالَ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ لاَ شَخْصَ أَغْيَرُ مِنْ اللهِ
উবাইদুল্লাহ বিন আমর আবদুল মালিক থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ অপেক্ষা অধিক মর্যাদাসম্পন্ন আর কেউই নয়।
৭৪১৬
মুগীরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে তরবারি দিয়ে হত্যা করব। এ কথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে বিস্মিত হচ্ছ? আল্লাহর শপথ! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। আর আল্লাহ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। আল্লাহ আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হবার কারণে প্রকাশ্য ও গোপনীয় (যাবতীয়) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহর চেয়ে অধিক পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এজন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মপ্রশংসা আল্লাহর চেয়ে অধিক কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। [৬৮৪৬; মুসলিম পর্ব ১৯/হাদীস ১৪৯৯, আহমাদ ১৮১৯২১] (আঃপ্রঃ- ৬৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১১)
৯৭/২১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ বল, সাক্ষ্য প্রদানে সর্বশ্রেষ্ঠ কী? বল, আল্লাহ-(সুরা আনআম ৬/১৯)।
এখানে আল্লাহ তাআলা নিজেকে শাইউন (বস্তু) বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন। আবার নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনকে আখ্যায়িত করিয়াছেন বস্তু বলে। অথচ এটি আল্লাহর গুণগুলোর মধ্যে একটি গুণ।
আল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহর সত্তা ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল- (সুরা আল-কাসাস ২৮/৮৮)।
৭৪১৭
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজনকে বলিলেন, তোমার কাছে কুরআনের কোন বস্তু আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, অমুক সুরা অমুক সুরা। তিনি সুরাহ্গুলোর নাম বলেছিলেন। (আঃপ্রঃ- ৬৯০০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১২)
৯৭/২২. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ তখন তাহাঁর আরশ পানির ওপর ছিল- (সুরা হূদ ১১/৭)। তিনি আরশে আযীমের প্রতিপালক- (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১২৯)।
قَالَ أَبُو الْعَالِيَةِ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ ارْتَفَعَ فَسَوَّاهُنَّ خَلَقَهُنَّ وَقَالَ مُجَاهِدٌ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ الْمَجِيدُ الْكَرِيمُ وَ الْوَدُودُ الْحَبِيبُ يُقَالُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ كَأَنَّهُ فَعِيلٌ مِنْ مَاجِدٍ مَحْمُودٌ مِنْ حَمِدَ
আবুল আলীয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ -এর অর্থ হচ্ছে আসমানকে উড্ডীন করিয়াছেন- (সুরা আল-আরাফ ৭/৫৪)। فَسَوَّاهُنَّ-এর অর্থ হচ্ছে, তিনি আসমানরাজিকে সৃষ্টি করিয়াছেন। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ -এর অর্থ হল, আরশের উপর সমুন্নত হলেন- (সুরা আল-আরাফ ৭/৫৪)। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাদি.) বলেছেন, مجيدঅর্থ সম্মানিত, الْوَدُودُ অর্থ প্রিয়। বলা হয়ে থাকে, حَمِيدٌ مَجِيدٌ মূলত প্রশংসনীয় ও পবিত্র। বস্তুত এটি مَاجِدٍ থেকে فَعِيلٌ -এর ওযনে এসেছে। আর مَحْمُود (প্রশংসনীয়) এসেছে حَمِدَ থেকে।
৭৪১৮
ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর কাছে বনূ তামীম-এর গোত্রটি আসল, নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে বনূ তামীম। তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। উত্তরে তারা বলিল, আপনি আমাদেরকে শুভ সংবাদ যখন দিচ্ছেন, তাহলে কিছু দান করুন। এ সময় ইয়ামানবাসী কতিপয় লোক নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সেখানে উপস্থিত হল। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ হে ইয়ামানবাসী! তোমাদের জন্য সুসংবাদ। বনূ তামীম তা গ্রহণ করিল না। তারা বলিল, আমরা গ্রহণ করলাম শুভ সংবাদ। যেহেতু আমরা আপনার কাছে এসেছি দীনী জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে এবং জিজ্ঞেস করার জন্য এসেছি যে, এ দুনিয়া সৃষ্টির আগে কী ছিল? নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তখন ছিলেন, তাহাঁর আগে আর কিছুই ছিল না। তাহাঁর আরশ তখন পানির ওপর ছিল। অতঃপর তিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করিলেন। এবং লাওহে মাহফুযে সব বস্তু সম্পর্কে লিখে রাখলেন। রাবী বলেন, এরপর আমার কাছে এক লোক এসে বলিল, হে ইমরান! তোমার উটনী পালিয়ে গিয়েছে, তার খবর লও। আমি উটনীর খোঁজে চললাম। দেখলাম, উটনী মরীচিকার আড়ালে আছে। আলি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি! আমার মন চাচ্ছিল উটনী চলে যাক তবুও আমি মজলিস ছেড়ে যেন না উঠি।(আঃপ্রঃ- ৬৯০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৩)
৭৪১৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর ডান হাত পূর্ণ, রাত দিনের খরচেও তা কমে না। তোমরা ভেবে দেখেছ কি? আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি কত খরচ করে যাচ্ছেন, তবুও তাহাঁর ডান হাতের কিছুই কমেনি। তাহাঁর আরশ পানির ওপর আছে। তাহাঁর অন্য হাতে আছে দেয়া আর নেয়া। তা তিনি উঠান ও নামান। (আঃপ্রঃ- ৬৯০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৪)
৭৪২০
আনাস (রা:) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যায়দ ইবনু হারিসা (রাদি.) অভিযোগ নিয়ে আসলেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলিতে লাগলেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছে রেখে দাও। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি কোন জিনিস গোপন করিতেন, তাহলে এ আয়াতটি অবশ্যই গোপন করিতেন। বর্ণনাকারী বলেন, (যাইনাব রাঃ) অপরাপর নাবী অন্যান্য কাছে এ বলে গর্ব করিতেন যে, তোমাদেরকে বিয়ে দিয়েছে তোমাদের পরিবার-পরিজন, আমার আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সাত আসমানের ওপরে বিয়ে দিয়েছেন।
বর্ণনাকারী সাবিত (রাদি.) বলেছেন, আল্লাহর বাণীঃ (হে নাবী) আপনি আপনার অন্তরে যা গোপন করিতেন আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিচ্ছেন, আপনি লোকদের ভয় করছিলেন। এ আয়াতটি যাইনাব ও যায়দ ইবনু হারিসাহ (রাদি.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল।[২১২](আঃপ্রঃ- ৬৯০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৫)
[২১২] অতি সম্ভ্রান্ত কোরাইশ কুল রমণী যয়নব বিনত্ জাহাসের সঙ্গে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় পালকপুত্র যায়েদ বিন হারেসা (রাদি.) -এর বিবাহ দেন। কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য দেখা দেয়। এ সময় আল্লাহ তাআলা নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ওয়াহী যোগে জানিয়ে দেন যে , যায়দ যয়নবকে তালাক দিয়ে দিবে এবং তুমি যয়নাবকে বিয়ে করিবে। আর রাসুল (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন যে, যয়নব তালাক প্রাপ্তা হলে তিনি তাকে বিয়ে করবেন। ওয়াহী যোগে এই একথা জানার পরেও নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দকে বুঝালেন যেন সে স্ত্রীকে তালাক না দেয়। কারণ তখনকার আরবে পালক পুত্রের তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করার রেওয়াজ ছিল না। আল্লাহর অভিপ্রায় জেনে নেয়ার পরেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দকে নাসীহাত করিলেন যা বিশ্ব নাবীর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।
৭৪২১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, যাইনাব বিন্ত জাহাশ (রাদি.) -কে উপলক্ষ করে পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়নাবের সঙ্গে তাহাঁর বিবাহ উপলক্ষে ওয়ালিমা হিসেবে সেদিন রুটি ও গোশ্ত খাইয়েছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের উপর যাইনাব (রাদি.) গর্ব করে বলিতেন, আল্লাহ তো আসমানে আমার বিয়ের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৯০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৬)
৭৪২২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ যখন সকল মাখলূক সৃষ্টি করার কাজ শেষ করিলেন, তখন তাহাঁর আরশের ওপর তাহাঁরই কাছে লিখে রাখলেন, “আমার রহমত আমার গযব থেকে এগিয়ে গেছে।”(আঃপ্রঃ- ৬৯০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৭)
৭৪২৩
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনে, সালাত কায়িম করে, রমযান মাসের সওম পালন করে, আল্লাহ তাহাঁর সম্পর্কে এ দায়িত্ব নিয়েছেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সে আল্লাহর রাস্তায় হিজরাত করুক কিংবা তাহাঁর জন্মভূমিতে অবস্থান করুক। সাহাবীগণ বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই বিষয়টি আমরা লোকদের জানিয়ে দেব না? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই, জান্নাতের একশটি (মর্যাদার) স্তর রয়েছে। এগুলো আল্লাহ তাহাঁর রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। প্রতি দুটি স্তরের মাঝে আসমান ও যমীনের দূরত্ব বিদ্যমান। কাজেই যখন তোমরা আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন ফিরদাওস জান্নাত চাইবে। কারণ, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে প্রশস্ত ও সবচেয়ে উচ্চ জান্নাত। আর দয়ালু (আল্লাহর) আরশটি এরই ওপর অবস্থিত। এই ফিরদাওস থেকেই জান্নাতের ঝর্ণাগুলো প্রবাহিত।[২১৩] (আঃপ্রঃ- ৬৯০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৮)
[২১৩] আল্লাহর একটি সিফাত علوه অর্থাৎ উর্দ্ধে বা উঁচুতে অবস্থান। তিনি তার স্বীয় সত্তায় আরশের উপরে রয়েছেন, কীভাবে রয়েছেন তা কেউ জানে না। তবে এতটুকুই যথেষ্ট যে, আরশের উপর যেমনভাবে তার জন্য মানানসই সেভাবেই রয়েছেন। আর আরশের অবস্থান আল্লাহর সকল মাখলূকাতের উর্দ্ধে, তার উপর আল্লাহ। আল্লাহর উপরে আর কোন কিছুই নেই। আর যেহেতু আল্লাহ স্বীয় সত্তায় আরশের উপরে সুতরাং আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান এ কথা ভ্রান্ত। সহীহ আক্বীদাহর পরিপন্থী। স্বীয় সত্তায় তিনি আরশের উপরে হলেও তার ইলম, সাহায্য, দর্শন ইত্যাদি সবজায়গায় পরিব্যাপ্ত। কোন কিছুই তার দৃষ্টির বাইরে নয়, এমনকি তিনি অন্তর্যামী عليم بذات الصدور।
আল্লাহ যে আরশের উপরে তার প্রমাণ অত্র হাদীস ছাড়াও আল্লাহ তাআলার বাণী :
{الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى} (৫) سورة طـه
৭৪২৪
আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মাসজিদে নাবাবীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সূর্য অস্ত গেল। তিনি বললেনঃ হে আবু যার! তোমার কি জানা আছে, এ সূর্য কোথায় যাচ্ছে? আবু যার (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই সবচেয়ে অধিক জানেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সূর্য যাচ্ছে এবং অনুমতি চাচ্ছে সাজদাহ করার জন্য। তারপর সাজদাহর জন্য তাকে অনুমতি দেয়া হয়। একদিন তাকে নির্দেশ দেওয়া হইবে, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও। তখন সে তার অস্তের জায়গা থেকে উদিত হইবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করিলেন, “এটিই তার থাকার জায়গা” আবদুল্লাহ (রাদি.) -এর কিরাআত অনুসারে। (আঃপ্রঃ- ৬৯০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১৯)
৭৪২৫
যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু বকর (রাদি.) আমার কাছে লোক পাঠালেন। তাই আমি কুরআনের বিভিন্ন অংশ খোঁজ করিতে লেগে গেলাম। শেষে সুরা তাওবার শেষের অংশ একমাত্র আবু খুযাইমাহ আন্সারী (রাদি.) ছাড়া আর কারো কাছে পেলাম না। (আর তা হচ্ছে) لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ থেকে সুরা বারাআতের শেষ পর্যন্ত। [২৮০৭] (আঃপ্রঃ- ৬৯০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২০)
ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে হাদীসটি এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন। আবু খুযায়মা আনসারীর কাছে এ আয়াত পাওয়া গেছে বলে তিনিও বলেছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৯০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২১)
৭৪২৬
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, দুঃখ কষ্টের সময় নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুআ করিতেন এ বলেঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। তিনি সর্বজ্ঞ ও ধৈর্যশীল। তিনি ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই, তিনি মহান আরশের রব। তিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তিনি আসমান-যমীনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব।(আঃপ্রঃ- ৬৯১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২২)
৭৪২৭
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। (আমার হুঁশ ফিরলে) তখন আমি মূসা (আঃ) -কে আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়ানো দেখিতে পাব।
৭৪২৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণনাকারী মাজিশুন আব্দুল্লাহ ইবনু ফাজল ও আবু সালামাহ্র মাধ্যমে আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, আমি সবচেয়ে আগে পুনরায় উঠব। তখন দেখব, মূসা (আঃ) আরশ ধরে আছেন। (আঃপ্রঃ- ৬৯১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৩)
৯৭/২৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ ফেরেশ্তা এবং রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়- (সুরা আন-নিসা ৪/৭০)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তাহাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে- (সুরা ইউনুস ১০/৩৫)।
وَقَالَ أَبُو جَمْرَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ بَلَغَ أَبَا ذَرٍّ مَبْعَثُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لِأَخِيهِ اعْلَمْ لِي عِلْمَ هَذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ يَأْتِيهِ الْخَبَرُ مِنْ السَّمَاءِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ الْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُ الْكَلِمَ الطَّيِّبَ يُقَالُ ذِي الْمَعَارِجِ الْمَلاَئِكَةُ تَعْرُجُ إِلَى اللهِ
আবু জামরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আববাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, নাবী সাঃআঃ-এর নবুয়ত পাওয়ার খবর শুনে আবু যার (রাদি.) তাহাঁর ভাইকে বলিলেন, আমার জন্য ঐ লোকের অবস্থা জেনে নাও, যিনি ধারণা করিয়াছেন যে, আসামান থেকে তাহাঁর কাছে খবর আসে। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, নেক কাজ পবিত্র কথাকে ঊর্ধ্বগামী করে। ذِي الْمَعَارِجِ -এর সম্পর্কে বলা হয় ঐ সব ফেরেশ্তা যারা আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়।
৭৪২৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রাত ও দিনে ফেরেশতারা পালাক্রমে আসে। আর তাঁরা একত্রিত হন আসর ও ফজরের সলাতে। তারপর যাঁরা তোমাদের মাঝে রাত কাটিয়েছেন তাঁরা উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন- অথচ তিনি তোমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত- কেমন অবস্থায় আমার বান্দাদেরকে তোমরা ছেড়ে এসেছ? তারা তখন উত্তর দেবে, আমরা ওদেরকে সালাত আদায়রত অবস্থায় রেখে এসেছি, প্রথম গিয়েও আমরা ওদেরকে সলাতে পেয়েছিলাম। (আঃপ্রঃ- ৬৯১২ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৪ প্রথমাংশ)
৭৪৩০
খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ….. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে লোক তার হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণও দান করে, আল্লাহ তা তাহাঁর ডান হাত দ্বারা কবূল করেন। আর পবিত্র ও হালাল বস্তু ব্যতীত আল্লাহর দিকে কোন কিছু আগে গিয়ে পৌঁছে না। তারপর এটি তার মালিকের জন্য লালন-পালন ও পরিচর্যা করিতে থাকে, তোমরা যেমন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করিতে থাক। অবশেষে তা পর্বতের মত বিরাট আকার ধারণ করে। [মুসলিম ১২/১৯, হাদীস ১০১৪, আহমাদ ১০৯৪৫] (আঃপ্রঃ- ৬৯১২ মধ্যমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১১ মধ্যমাংশ)
ওয়ারকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, আল্লাহ তাআলার দিকে পবিত্র জিনিস ব্যতীত কোন কিছুই গমন করিতে পারে না। (আঃপ্রঃ- ৬৯১২ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৪ শেষাংশ)
৭৪৩১
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণিত যে, দুঃখ-বেদনার সময় নাবী (সাঃআঃ) এ বলে দুআ করিতেনঃ মহান ও ধৈর্যশীল আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, মহান আরশের প্রতিপালক আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, আসমানসমূহের মালিক এবং মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। (আঃপ্রঃ- ৬৯১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৫)
৭৪৩২
আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট অল্প কিছু সোনা পাঠানো হলে তিনি চারজনকে ভাগ করে দেন।
ইসহাক ইবনু নাসর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ….. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আলী (রাদি.) ইয়ামানে অবস্থানকালে নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে কিছু মাটি মেশানো সোনা পাঠিয়েছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বনূ মুজাশি গোত্রের আক্রা ইবনু হাবিস হানযালী, উয়াইনাহ ইবনু হিসন ইবনু বাদ্র ফাযারী, আলক্বামাহ ইবনু উলাছা আমিরী ও বনূ কিলাবের একজন এবং বনু নাবহান গোত্রের যায়দ আল খায়ল তাঈর মধ্যে তা বেঁটে দেন। এ কারণে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হয়ে বলিল, নাবী (সাঃআঃ) নাজদবাসী সরদারদেরকে দিচ্ছেন। আর আমাদেরকে বঞ্চিত করছেন। এ প্রেক্ষিতে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তাদের অন্তর জয়ের চেষ্টা করছি। তখন কোটরাগত চোখ, উচ্চ কপাল, বেশি দাড়ি, উচ্চ চোয়াল ও মুণ্ডানো মাথা ওয়ালা এক লোক সামনে এসে বলিল, হে মুহাম্মদ ! আল্লাহ্কে ভয় কর। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমিই যদি তাহাঁর নাফরমানী করি, তবে তাহাঁর অনুগত হইবে আর কে? আর এজন্যই তিনি আমাকে পৃথিবীর লোকের উপর আমানতদার নির্দিষ্ট করিয়াছেন। অথচ তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। এমন সময় দলের মধ্য থেকে একটা লোক, সম্ভবত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.), ঐ লোকটিকে হত্যা করার জন্য নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে নিষেধ করিলেন। সে লোকটি চলে যাওয়ার পর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে, যারা কুরআন পড়বে, তবে কুরআন তাদের কন্ঠনালি অতিক্রম করিবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করিবে। যদি আমি তাদেরকে পাই, তাহলে আদ জাতিকে হত্যা করার মত তাদেরকে হত্যা করব। (আঃপ্রঃ- ৬৯১৪, ৬৯১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৬)
৭৪৩৩
عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنْ قَوْلِهِ وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا قَالَ مُسْتَقَرُّهَا تَحْتَ الْعَرْشِ
আবু যার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) কে জিজ্ঞেস করেছি, “আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে” আল্লাহর এ কথা সম্পর্কে। তিনি বলেছেনঃ সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য হল আরশের নিচে। (আঃপ্রঃ- ৬৯১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৭)
৯৭/২৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ কতক মুখ সেদিন উজ্জ্বল হইবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। (সুরা আল-ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)
৭৪৩৪
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, তোমরা শীঘ্রই তোমাদের রব্বকে দেখিতে পাবে, যেমনি তোমরা এ চাঁদটিকে দেখিতে পাচ্ছ। অথচ এটিকে দেখিতে তোমাদের কোন অসুবিধে হচ্ছে না। অতএব, তোমরা সক্ষম হলে সূর্য উঠার আগের সালাত ও সূর্য ডুবার পরের সালাত (যথাযথভাবে) আদায় করিতে তোমরা যেন পরাজিত না হও। তাহলে তাই কর। (আঃপ্রঃ- ৬৯১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৮)
৭৪৩৫
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ অবশ্যই তোমারা তোমাদের রব্বকে দিব্যচক্ষে দেখিতে পাবে। (আঃপ্রঃ- ৬৯১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৯)
৭৪৩৬
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা পূর্ণিমার রাতে নাবী (সাঃআঃ) আমাদের কাছে বের হয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ শীঘ্রই তোমরা তোমাদের রবকে ক্বিয়ামতের দিন দেখিতে পাবে, যেমন এ চাঁদটিকে তোমরা দেখছ এবং একে দেখিতে তোমাদের অসুবিধে হচ্ছে না।(আঃপ্রঃ- ৬৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩০)
৭৪৩৭
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা (সহাবাগণ) জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ক্বিয়ামাতের দিন আমরা কি আমাদের রব্বকে দেখিতে পাব? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদের কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখিতে অসুবিধা হয়? সবাই বলে উঠলেন, না, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি আবার বললেনঃ মেঘহীন আকাশে সূর্য দেখিতে তোমাদের কি অসুবিধা হয়? সবাই বলে উঠলেন, না, হে আল্লাহর রাসুল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা সেরকমই আল্লাহ্কে দেখিতে পাবে। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ লোকদের একত্রিত করে বলবেন, যে যার ইবাদাত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে। তারপর যারা সূর্যের ইবাদাত করত, সূর্যের অনুসরণ করিবে। যারা চন্দ্রের ইবাদাত করত, তারা চন্দ্রের অনুসরণ করিবে। আর যারা তাগুতের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করিবে। বাকী থাকবে এই উম্মাত। এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেন, মুনাফিকরাও থাকবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন। তারপর আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষন আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষণ আমরা এ স্থানেই থাকব। আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তারপর আল্লাহ এমন এক সুরতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে। তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই। তারা বলে উঠবে হাঁ, আপনিই আমাদের রব। তারপর তারা তাহাঁর অনুসরণ করিবে। এরপর জাহান্নামের উপর পুল কায়িম করা হইবে। যারা পুল পার হইবে, আমি এবং আমার উম্মাত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব। সেদিন একমাত্র রাসুলগণ ব্যতীত আর কেউই কথা বলিতে পারবে না। আর রাসুলগনেরও আবেদন হইবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখুন)। এবং জাহান্নামে সাদান-এর কাঁটার মত আঁকড়া থাকবে। তোমরা দেখেছ কি সাদান-এর কাঁটা? সহাবাগণ বলিলেন, জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ জাহান্নামের সে কাঁটাগুলো এ সাদান-এর কাঁটার মত। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হইবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ওসব কাঁটা মানুষকে তাদের আমলের অনুপাতে বিদ্ধ করিবে। কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমালের কারণে ধ্বংস হইবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হইবে, আর কাউকে প্রতিদান দেয়া হইবে। কিংবা সেরকমই কিছু রাবী বলেছেন। তারপর (আল্লাহ) প্রকাশিত হইবেন। তিনি বান্দাদের বিচার শেষ করে যখন আপন রহমতে কতক জাহান্নামবাসীকে বের করিতে চাইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শির্ক হইতে মুক্তদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফেরেশ্তাদেরকে আদেশ দেবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সাজদাহর চিহ্ন দ্বারা তাদেরকে ফেরেশ্তারা চিনতে পারবেন। সাজদাহর চিহ্নগুলো ছাড়া সে সব আদাম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভস্মীভূত করে দেবে। সাজদাহর চিহ্নগুলো জ্বালিয়ে দেয়া আল্লাহ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে। তাদের ওপর ঢালা হইবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নভাগ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনের পানিতে বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহ বান্দাদের বিচার কাজ শেষ করবেন। এদের মধ্য থেকে একজন বাকী থেকে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমার চেহারাটা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দাও। কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধযুক্ত) হাওয়া আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা মুতাবিক তাহাঁর কাছে প্রার্থনা করিবে। তারপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা প্রার্থিত বস্তু যদি তোমাকে দেয়া হয়, তবে অন্য কিছু চাইবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইয্যতের শপথ করে বলছি, তা ব্যতীত আমি আর কিছু চাইব না। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবেক তাঁকে বহু অঙ্গীকার ওয়াদা দেবে। ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দেবেন। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবেক যতক্ষণ চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দাও। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু ওয়াদা ও অঙ্গীকার দাওনি যে তোমাকে যা দেয়া হইবে, তা ব্যতীত আর কিছুই তুমি কখনো চাইবে না। সর্বনাশ তোমার, হে আদাম সন্তান! কতই না ওয়াদা ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব সে আল্লাহকে ডাকতে থাকবে। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা, এটি যদি তোমাকে দেয়া হয়, আর কিছু তো চাইবে না? সে বলবে, তোমার ইয্যতের কসম! সেটি ব্যতীত আমি আর কিছুই চাইব না। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী ওয়াদা ও অঙ্গীকার দেবে আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে দাঁড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসের প্রাচুর্য দেখিতে পাবে। তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী চুপ থেকে পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়ে দিন। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই ওয়াদা ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেয়া হইবে, সেটা ব্যতীত আর কিছুর প্রার্থনা করিবে না? সর্বনাশ তোমার! হে বানী আদাম! কতই না ওয়াদা ভঙ্গকারী তুমি। তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমার সৃষ্টিকুলের মধ্যে নিকৃষ্টতর হইতে চাই না। তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করিতে থাকবে। অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দেবেন। আল্লাহ তার অবস্থার জন্য হেসে তাকে নির্দেশ দেবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে বলবেনঃ এবার তুমি চাও। সে তখন রবের কাছে চাইবে এবং আকাঙ্ক্ষা জানাবে। সর্বশেষে আল্লাহ নিজে তাকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা, ওটা চাও। এতে তার আবেদন-আকাঙ্ক্ষা শেষ হলে আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সঙ্গে সঙ্গে সে পরিমান আরো দেয়া হল। (আঃপ্রঃ- ৬৯২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩১)
৭৪৩৮
আত্বা ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আত্বা ইবনু ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু হুরাইরা (রাদি.) যখন হাদীসটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) -ও তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিনি আবু হুরাইরা (রাদি.) -এর এ বর্ণিত হাদীসের কোথাও প্রতিবাদ করিলেন না। বর্ণনার শেষাংশে এসে আবু হুরাইরা (রাদি.) যখন বর্ণনা করিলেন, “আল্লাহ তাকে বলবেন, ওসব তোমাকে দেয়া হলো, আরো তার সমপরিমান তার সঙ্গে দেয়া হল” তখন আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) প্রতিবাদ করে বলিলেন, হে আবু হুরাইরা (রাদি.), রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তার সঙ্গে আরো দশগুন। তখন আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, আমি সংরক্ষন করেছি এভাবে- ওসব তোমাকে দেয়া হলো, আর এ সঙ্গে আরো এক গুন দেয়া হল। আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট হইতে এভাবে সংরক্ষন করেছি- ও সবই তোমাকে দেয়া হলো, এর সঙ্গে তোমাকে দেয়া হলো আরো দশ গুন। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, এই হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি।(আঃপ্রঃ- ৬৯২০ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩১)
৭৪৩৯
আবু সাঈদ খুদরি (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রব্বের দর্শন লাভ করব কি? তিনি বললেনঃ মেঘহীন আকাশে সূর্যকে দেখিতে তোমাদের অসুবিধা হয় কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেনঃ সেদিন তোমাদের রবকে দেখিতে তোমাদের কোন অসুবিধা হইবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক। সেদিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদাত করিতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর। এরপর যারা ক্রশপূজারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সঙ্গে। সকলেই তাদের উপাস্যের সঙ্গে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতকারীরা। নেক্কার ও বদ্কার সকলেই এবং আহলে কিতাবের কতক লোকও থাকবে। অতঃপর জাহান্নামকে আনা হইবে। সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত। ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমরা কিসের ইবাদাত করিতে? তারা উত্তর করিবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়র (আঃ) -এর ইবাদাত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হইবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। কারণ আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই এবং নেই তাহাঁর কোন সন্তান। এখন তোমরা কী চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হইবে, তোমরা পানি পান কর। এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হইতে থাকবে। তারপর নাসারাদেরকে বলা হইবে, তোমরা কিসের ইবাদাত করিতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহের ইবাদাত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হইবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না। এখন তোমরা কী চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করিতে দিন। তাদেরকে উত্তর দেয়া হইবে, তোমরা পান কর। তারপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হইতে থাকবে। অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগণ। তাদের নেক্কার ও বদকার সকলেই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হইবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা তো সেদিন তাদের থেকে আলাদা রয়েছি, যেদিন আজকের চেয়ে তাদের অধিক প্রয়োজন ছিল। আমরা একজন ঘোষণাকারীর এ ঘোষণা দিতে শুনিয়াছি যে, যারা যাদের ইবাদাত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সে সুরতে আসবেন না, যেভাবে তাঁকে প্রথমে ঈমানদারগণ দেখেছিলেন। এসে তিনি ঘোষণা দেবেন- আমি তোমাদের রব, সবাই তখন বলে উঠবে আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আর সেদিন নাবীগন ছাড়া তাহাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলিতে পারবে না। আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাহাঁর মাঝখানে পরিচয়ের জন্য কোন আলামত আছে কি? তারা বলবেন, পায়ের নলা। তখন পায়ের নলা খুলে দেয়া হইবে। এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সাজদায় পড়ে যাবে। বাকি থাকবে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানো সাজদাহ করছিল। তবে তারা সাজদাহর মনোভাব নিয়ে সাজদাহ করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরুদণ্ড একটি তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। এমন সময় জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হইবে। সাহাবীগণ বলিলেন, সে পুলটি কেমন হইবে হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেনঃ দুর্গম পিচ্ছিল স্থান। এর ওপর আংটা ও হুক থাকবে, শক্ত চওড়া উল্টো কাঁটা বিশিষ্ট হইবে, যা নাজ্দ দেশের সাদান বৃক্ষের কাঁটার মত হইবে। সে পুলের উপর দিয়ে ঈমানদারগণের কেউ পার হয়ে যাবে চোখের পলকের মতো, কেউ বিদ্যুতের মতো, কেউ বাতাসের মতো আবার কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও সাওয়ারের মতো। তবে মুক্তিপ্রাপ্তরা কেউ নিরাপদে চলে আসবেন, আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। একবারে শেষে অতিক্রম করিবে যে লোকটি, সে হেঁচড়িয়ে কোন ভাবে পার হয়ে আসবে। এখন তোমরা হকের বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক কঠোর নও, যতটুকু সেদিন ঈমানদারগণ আল্লাহর সম্মুখে হয়ে থাকবে, যা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। যখন ঈমানদারগণ এ দৃশ্যটি দেখবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করত, সওম পালন করত, নেক কাজ করত? তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমান ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আল্লাহ তাদের মুখমণ্ডল জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। এদের কেউ কেউ দুপা ও দুপায়ের নলার বেশী পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে থাকবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারে, তাদেরকে বের করিবে। তারপর এরা আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ আবার তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা গিয়ে তাদেরকেই বের করে নিয়ে আসবে, যাদেরকে তারা চিনতে পারবে। তারপর আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদ্রী (রাদি.) বলেন, তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না কর, তাহলে আল্লাহর এ বাণীটি পড়ঃ “আল্লাহ অণু পরিমাণও যুল্ম করেন না, আর কোন পুণ্য কাজ হলে তাকে তিনি দ্বিগুণ করেন”- (সুরা আন্-নিসা ৪/৪০)। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম), ফেরেশ্তা ও মুমিনগণ সুপারিশ করিবে। তখন মহা পরাক্রান্ত আল্লাহ বলবেন, এখন শুধু আমার শাফাআতই বাকী রয়েছে। তিনি জাহান্নাম থেকে একমুষ্টি ভরে এমন কতগুলো কওমকে বের করবেন যারা জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মখে অবস্থিত হায়াত নামের নহরে ঢালা হইবে। তারা সে নহরের দুপার্শ্বে এমনভাবে উদগত হইবে, যেমন পাথর এবং গাছের কিনারে বয়ে আনা আবর্জনায় বীজ থেকে তৃণ উদগত হয়। দেখিতে পাও তার মধ্যে সূর্যের আলোর অংশের গাছগুলো সাধারণত সবুজ হয়, ছায়ার অংশেরগুলো সাদা হয়। তারা সেখান থেকে মুক্তার দানার মত বের হইবে। তাদের গর্দানে মোহর লাগানো হইবে। জান্নাতে তারা যখন প্রবেশ করিবে, তখন অন্যান্য জান্নাতবাসীরা বলবেন, এরা হলেন রহমান কর্তৃক আযাতকৃত যাদেরকে আল্লাহ কোন নেক আমাল কিংবা কল্যাণকর কাজ ব্যতীতই জান্নাতে দাখিল করিয়াছেন। তখন তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা দেখেছ, সবই তো তোমাদের, এর সঙ্গে আরো সমপরিমান তোমাদেরকে দেয়া হলো। [২২; মুসলিম ১/৮১, হাদীস ১৮৩, আহমাদ ১১১২৭] (আঃপ্রঃ- ৬৯২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩২)
৭৪৪০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানদারদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হইবে। অবশেষে তারা অস্থির হয়ে যাবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের নিকট কারো দ্বারা শাফায়াত করাই যিনি আমাদের স্বস্তি দান করেন। তারপর তারা আদাম (আঃ) -এর কাছে এসে বলবে, আপনিই তো সে আদম, যিনি মনুষ্য জাতির পিতা, স্বয়ং আল্লাহ আপন হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। আপনাকে বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন তাহাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দিয়ে আপনাকে সাজদাহ করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের এ জায়গা থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন। তখন আদাম (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর তিনি নিষেধকৃত গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আঃ) -এর কাছে যাও, যিনি পৃথিবীবাসীদের জন্য প্ররিত নাবীগনের মধ্যে প্রথম নাবী। তারপর তারা নূহ (আঃ) -এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি না জেনে তাহাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা রাহমানের একনিষ্ট বন্ধু ইবরাহীমের কাছে যাও। নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর তারা ইবরাহীম (আঃ) -এর কাছে আসবে। তখন ইবরাহীম (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। আর তিনি এমন তিনটি কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো আসল ব্যাপারের উল্টো ছিল। পরে বলবেন, তোমরা বরং মূসা (আঃ) -এর কাছে যাও তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ তাওরাত দিয়েছিলেন, তাহাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং গোপন কথাবার্তার মাধ্যমে তাঁকে নৈকট্য দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সবাই তখন মূসা (আঃ) -এর কাছে আসবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। এবং তিনি হত্যার ভুলের কথা উল্লেখ করবেন। তিনি বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আঃ) -এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসুল এবং তাহাঁর রূহ ও বাণী। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারা সবাই তখন ঈসা (আঃ) -এর কাছে আসবে। ঈসা (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই। তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা যাঁর আগের ও পরের ভুল তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন আমার রবের কাছে তাহাঁর নিকট হাযির হবার অনুমতি চাইব। আমাকে তাহাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হইবে। তাহাঁর দর্শন লাভের সঙ্গে সঙ্গে আমি সিজদায় পড়ে যাবো। তিনি আমাকে সে হালতে যতক্ষণ চাইবেন রাখবেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হইবে, শাফাআত করুন, কবূল করা হইবে, চান, আপনাকে দেয়া হইবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো। তারপর আমি আমার প্রতিপালকের এমন স্তব ও স্তুতি করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। অতঃপর আমি সুপারিশ করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হইবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। বর্ণনাকারী ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে এ কথাও বলিতে শুনিয়াছি যে, আমি বের হবো এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবো এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর আমি ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের নিকট হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেয়া হইবে। আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ যতক্ষণ চাইবেন, আমাকে সে হালাতে রাখবেন। তারপর বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। বলুন, শোনা হইবে, শাফাআত করুন, কবূল করা হইবে, চান, দেয়া হইবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমি আমার মাথা উঠাবো। আমার রবের এমন স্তব ও স্তুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করা হইবে। আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি, নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তখন আমি বের হব এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর তৃতীয়বারের মত ফিরে আসব এবং আমার রবের নিকট প্রবেশ করার অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেয়া হইবে। আমি তাকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহ আমাকে সে হালাতে রাখবেন, যতক্ষণ চাইবেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা উঠান এবং বলুন, শোনা হইবে, সুপারিশ করুন, কবূল করা হইবে, চান, দেয়া হইবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি মাথা উঠিয়ে আমার রবের এমন স্তব ও স্তুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করা হইবে। তারপর আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আনাস (রাদি.) -কে বলিতে শুনিয়াছি, নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অবশেষে জাহান্নামে বাকী থাকবে কেবল তারা, কুরআন যাদেরকে আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের ওপর জাহান্নামের চিরবাস ওয়াজিব হয়ে পড়েছে। আনাস (রাদি.) বলেন, তিনি কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “শীঘ্রই তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করবেন”-(সুরা ইসরা ১৭/৭৯) এবং তিনি বলিলেন এটিই হচ্ছে, তোমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য প্রতিশ্রুত মাকামে মাহমূদ। (আঃপ্রঃ- ৬৯২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩২)
৭৪৪১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের কাছে (লোক) পাঠালেন। তাদেরকে একটা তাঁবুর মধ্যে সমবেত করিলেন এবং তাদের বললেনঃ তোমরা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাত পর্যন্ত ধৈর্য ধরবে। কারণ আমি হাওযের (কাউসারের) নিকটেই থাকব। (আঃপ্রঃ- ৬৯২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৩)
৭৪৪২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করিতেন, তখন বলিতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! সব প্রশংসা একমাত্র আপনারই, আসমান ও যমীনের পরিচালক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব স্তুতি। আসমান ও যমীন এবং এসবের মাঝের সবকিছুর প্রতিপালক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব প্রশংসা। আসমান যমীন ও এগুলোর মধ্যকার সব কিছুর নূর আপনিই। আপনি সত্য, আপনার বাণী সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য এবং ক্বিয়ামাত সত্য। হে আল্লাহ! আপনারই জন্য আমি ইসলাম কবূল করেছি এবং আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি, আপনারই ওপর ভরসা করেছি, আপনারই কাছে মোকদ্দমা সোপর্দ করেছি, আপনারই কাছে ফায়সালা চেয়েছি। তাই আপনি আমার আগের ও পিছের গোপন, প্রকাশ্য এবং যা আপনি আমার চেয়ে অধিক জানেন তা সবই ক্ষমা করে দিন। আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।
বর্ণনাকারী তাঊস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে কায়স ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং আবু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) قَيّمُ -এর স্থলে قَيَّامُ বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী মুজাহিদ বলেন قَيّومُ সবকিছুর পরিচালককে বলা হয়ে থাকে। উমার (রাদি.) قَيَّامُ পড়েছেন। মূলত শব্দ দুটিই প্রশংসার জন্য ব্যবহৃত হয়। [১১২০] (আঃপ্রঃ- ৬৯২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৪)
৭৪৪৩
আদী ইবনু হাতিম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে শীঘ্রই তার প্রতিপালক কথা বলবেন, তখন প্রতিপালক ও তার মাঝে কোন অনুবাদক ও আড়াল করে এমন পর্দা থাকবে না।(আঃপ্রঃ- ৬৯২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৫)
৭৪৪৪
কায়স (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দুটি জান্নাত এমন হইবে, সেগুলোর পানপাত্র ও তার ভিতরের সব কিছুই হইবে রূপার। আর দুটি জান্নাত এমন হইবে, সেগুলোর পানপাত্র ও তার ভিতরের সবকিছুই হইবে সোনার। জান্নাতে আদনে তাদের ও তাদের রব্বের দর্শনের মাঝে তাহাঁর চেহারার উপর অহংকারের চাদর ব্যতীত আর কোন কিছু আড়াল থাকবে না।(আঃপ্রঃ- ৬৯২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৬)
৭৪৪৫
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে লোক মিথ্যা শপথ করে কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করিবে, সে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হইবে এমন অবস্থায় যে, তিনি তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আবদুল্লাহ (রাদি.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর কথার সত্যায়নে আল্লাহর কিতাবের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের নিআমাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না…..” (সুরা আলু ইমরান ৩/৭৭)। [২৩৫৬] (আঃপ্রঃ- ৬৯২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৭)
৭৪৪৬
আবু হুরাইরাই (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তিন রকমের মানুষ, যাদের সঙ্গে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না। যে লোক তার মালের উপর এ মিথ্যা কসম করে যে, একে এখন যে মূল্যে বিক্রি করা হলো এর চেয়ে অধিক মূল্যে তা বিক্রয় করা যাচ্ছিল। (২) যে লোক কোন মুসলিমের মাল আত্মসাৎ করার জন্য আসরের সলাতের পর মিথ্যা শপথ করে। (৩) এক লোক সে, যে প্রয়োজনের বেশি পানি আটকিয়ে রাখে। আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে ক্বিয়ামাতের দিন বলবেন, আজ আমি আমার অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেমনি তুমি সেই অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করিতে যা তোমার হাতে অর্জিত নয়। (আঃপ্রঃ- ৬৯২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৮)
৭৪৪৭
আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু বাকরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ আসমান ও যমীনকে যেদিন সৃষ্টি করেছিলেন, সেদিনের অবস্থায় যামানা আবার ফিরে এসেছে। বার মাসে এক বছর হয়। তার মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাসম্পন্ন। যুলকাদা, যুলহাজ্জা ও মুহাররম- এ তিন মাস এক নাগাড়ে আসে। আর মুযার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এটি কোন্ মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই ভালো জানেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ) চুপ থাকলেন যার জন্য আমরা ভেবেছিলাম, তিনি এই নামটি পাল্টিয়ে অন্য কোন নাম রাখবেন। তিনি বলিলেন, এটি কি যুলহাজ্জা নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যাঁ, এটি যুলহাজ্জার মাস। তিনি বললেনঃ এটি কোন্ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই অধিক জানেন। তিনি নীরব রইলেনঃ আমরা ভেবেছিলাম, তিনি হয়ত শহরটির নাম বদলিয়ে অন্য নাম রাখবেন। তিনি বললেনঃ এটি কি সেই শহরটি নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, আজকের এ দিনটি কোন্ দিন? আমরা উত্তর করলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই অধিক জানেন। তিনি চুপ থাকলেন, যার জন্য আমরা ভাবলাম তিনি সম্ভবত এর নামটা বদলে দেবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। নাবী (সাঃআঃ) তখন বললেনঃ তোমাদের রক্ত এবং সম্পদ বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমার ধারণা হচ্ছে, আবু বকরা (রাদি.) তোমাদের ইয্যত কথাটিও বর্ণনা করেছিলেন, অর্থাৎ ওসব এ পবিত্র দিনে, এ পবিত্র শহরে, এ পবিত্র মাসটির মত পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন। শীঘ্রই তোমরা তোমাদের রব্বের সাক্ষাত লাভ করিবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। সাবধান, আমার মৃত্যুর পর তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অপরকে হত্যা করো না। সাবধান! উপস্থিতগণ অনুপস্থিত লোকদের কাছে (কথাগুলো) পৌছে দেবে। কেননা, হয়ত যার কাছে পৌছে দেয়া হইবে, তাদের মাঝে এমন ব্যক্তিও থাকবে, যারা শ্রবণকারীর চেয়ে অধিক সংরক্ষণকারী হইবে। মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করিতেন, তখন বলিতেন, নাবী (সাঃআঃ) সত্যিই বলেছিলেন। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ জেনে রেখো, আমি পৌছিয়ে দিয়েছি কি? জেনে রেখো পৌছিয়ে দিয়েছি কি?(আঃপ্রঃ- ৬৯২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩৯)
৯৭/২৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহর রাহমাত নেক্কারদের নিকটবর্তী। (সুরা আল-আরাফ ৭/৫৬)
৭৪৪৮
উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) -এর কোন এক কন্যার এক ছেলের মৃত্যু উপস্থিত হলে তাহাঁর কন্যা নাবী (সাঃআঃ) -কে যাওয়ার জন্য একজন লোক পাঠালেন। উত্তরে নাবী (সাঃআঃ) লোক পাঠিয়ে জানালেনঃ আল্লাহ যা নিয়ে নেন আর যা দেন সবই তাহাঁরই জন্য। আর প্রতিটির বস্তুর জন্য একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধরে এবং অবশ্যই সওয়াবের আশা করে। তারপর নাবী-কন্যা নাবী (সাঃআঃ) -কে যাওয়ার জন্য কসম দিয়ে আবার লোক পাঠালেন। তিনি যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ালেন। বর্ণনাকারী উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) বলেন, আমি, মুআয ইবনু জাবাল, উবাই ইবন কাব, উবাদাহ ইবনু সামিতও তাহাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমরা সেখানে গিয়ে প্রবেশ করলে তখন তারা শিশুটিকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে দিলেন। আর তখন বাচ্চার বুকের মধ্যে এক অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা নাবী (সাঃআঃ) তখন বলেছিলেনঃ এ তো যেন মশকের মত। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কাঁদলেন। তা দেখে সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বলিলেন, আপনি কাঁদছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাহাঁর দয়ালু বান্দাদের উপরই দয়া করেন।(আঃপ্রঃ- ৬৯৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪০)
৭৪৪৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়েই স্বীয় রবের নিকট অভিযোগ করিল। জান্নাত বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যপারটি কী যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শেণীর লোকেরাই প্রবেশ করিবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করিল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বলিলেন, তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌঁছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হইবে। তবে আল্লাহ তাহাঁর সৃষ্টির কারো উপর যুলুম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি সৃষ্টি করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হইবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। অবশেষে আল্লাহ তাহাঁর পা জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ অন্য অংশকে এ উত্তর করিবে- আর নয়, আর নয়, আর নয়। (আঃপ্রঃ- ৬৯৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪১)
৭৪৫০
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কতকগুলো সম্প্রদায় তাদের গুনাহের কারণে শাস্তি হিসেবে জাহান্নামের আগুনে পৌছবে। অতঃপর আল্লাহ নিজ রাহমাতে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন। তাদেরকে জাহান্নামী বলা হইবে।
হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৬৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪২)
৯৭/২৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহই আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন যাতে ও দুটো টলে না যায়। (সুরা ফাতির ৩৫/৪১)
৭৪৫১
আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী বিদ্বান রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর নিকট এসে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আসমানকে এক আঙ্গুলের ওপর, পৃথিবীকে এক আঙ্গুলের ওপর, পর্বতরাজিকে এক আঙ্গুলের ওপর, বৃক্ষলতা ও নদীনালাকে এক আঙ্গুলের ওপর এবং সকল সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলের ওপর রেখে দেবেন। এবং নিজ হাতে ইশারা দিয়ে বলবেন, সম্রাট একমাত্র আমিই। এতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হাসলেন এবং বললেনঃ তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা উপলব্ধি করেনি- (সুরা আনআম ৬/৯১)। (আঃপ্রঃ- ৬৯৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৩)
৯৭/২৭. অধ্যায়ঃ আসমান, যমীন ইত্যাদির সৃষ্টি সম্পর্কে; এটি রব্বের কাজ ও নির্দেশ।
অতএব রব্ব তাহাঁর গুণাবলী, কাজ, আদেশ ও কালামসহ তিনি স্রষ্টা ও অস্তিত্বদানকারী। তিনি সৃষ্ট নন। তাহাঁর কাজ, আদেশ ও সৃষ্টি এবং অস্তিত্ব দানে যা হয়, তা হলো কর্ম, সৃষ্ট ও অস্তিত্ব লাভকারী বস্তু।
৭৪৫২
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার মাইমূনাহ (রাদি.) -এর ঘরে রাত কাটালাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কাছে ছিলেন। রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর সালাত কেমন হয় তা দেখার জন্য। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কথা বলিলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ কিংবা শেষের কিছু অংশ বাকী থাকল, তিনি উঠে বসলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে….বোধশক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্য- (সুরা আল্ ইমরান ৩/১৯০)। তারপর তিনি উঠে গিয়ে ওযূ ও মিস্ওয়াক করিলেন। অতঃপর এগার রাকআত সালাত আদায় করিলেন। বিলাল (রাদি.) (ফজরের) সলাতের আযান দিলে তিনি দুরাকআত সালাত পড়ে নিলেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বের হয়ে সহাবাদেরকে ফজরের (দুরাকআত) সালাত পড়িয়ে দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৬৯৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৪)
Leave a Reply