আল্লাহর পথে নিহত বা আহত জিহাদ মৃত্যু ও শহিদ

আল্লাহর পথে নিহত বা আহত জিহাদ মৃত্যু ও শহিদ

আল্লাহর পথে নিহত বা আহত জিহাদ মৃত্যু ও শহিদ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (১-২০)=২১টি

৫৬/১. অধ্যায়ঃ জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত।
৫৬/২. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে সেই মুমিন মুজাহিদই উত্তম, যে নিজের জান দিয়ে ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।
৫৬/৩. অধ্যায়ঃ পুরুষ এবং নারীর জন্য জিহাদ করার ও শাহাদাত লাভের দুআ।
৫৬/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথের মুজাহিদদের মর্যাদা।
৫৬/৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করা। জান্নাতে তোমাদের কারো এক ধনুক পরিমিত স্থান।
৫৬/৬. অধ্যায়ঃ ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা হুর ও তাদের গুনাবলী।
৫৬/৭. অধ্যায়ঃ শাহাদাত কামনা।
৫৬/৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী থেকে পতিত হয়ে কারো মৃত্যু ঘটলে, সে জিহাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৫৬/৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আহত হল কিংবা বর্শা দ্বারা বিদ্ধ হল।
৫৬/১০. অধ্যায়ঃ যে মহান আল্লাহর পথে আহত হয়।
৫৬/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য প্রতীক্ষা করছ দুটি মঙ্গলের মধ্যে একটির।” (আত-তওবা ৫২)
৫৬/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।” (আল আহযাব ২৩)
৫৬/১৩. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের আগে নেক আমল।
৫৬/১৪. অধ্যায়ঃ অজ্ঞাত তীর এসে যাকে হত্যা করে
৫৬/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে।
৫৬/১৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে যার দুটি পা ধূলি-মলিন হয়।
৫৬/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় মাথায় ধূলা লাগলে তা মুছে ফেলা।
৫৬/১৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের এবং ধূলাবালি লাগার পর গোসল করা।
৫৬/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার এ বাণী যাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না। বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত। তারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করিয়াছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হইবে না। তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ামাত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মুমিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আল ইমরান ১৬৯-১৭১)
৫৬/২০. অধ্যায়ঃ শহীদের উপর ফেরেশতাদের ছায়া বিস্তার।

৫৬/১. অধ্যায়ঃ জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ নিশ্চয় আল্লাহ খরিদ করে নিয়েছেন মুমিনদের থেকে তাদের জান ও তাদের মাল এর বিনিময়ে যে, অবশ্যই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে, কখনও হত্যা করে এবং কখনও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আল্লাহর চাইতে নিজের ওয়াদা অধিক পালনকারী আর কে আছে? সুতরাং তোমরা আনন্দ কর তোমাদের সে সওদার জন্য যা তোমরা তাহাঁর সাথে করেছ। আর তা হল বিরাট সাফল্য। তারা তওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকুকারী, সিজদাকারী, ভাল কাজের আদেশদাতা, মন্দ কাজে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হিফাযতকারী; (এসব গুণে গুণান্বিত) মুমিনদেরকে আপনি খোশখবর শুনিয়ে দিন। (আত-তওবা ১১১-১২) ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, —- অর্থ (আল্লাহর) আনুগত্য।

২৭৮২. আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বলিলেন, সময় মত সালাত আদায় করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেন, অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বলিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আমি চুপ রইলাম। আমি যদি আরো বলতাম, তবে তিনি আরও অধিক বলিতেন।

২৭৮৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, (মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও নিয়ত। যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হয়, তখন বেরিয়ে পড়।

২৭৮৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হচ্ছে মকবুল হজ্জ।

২৭৮৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বলিলেন,) তুমি কি এতে সক্ষম হইবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করিবে এবং দাঁড়িয়ে ইবাদত করিবে এবং আলস্য করিবে না, আর সিয়াম পালন করিতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। ব্যক্তিটি বলিল, এটা কে পারবে? আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, মুজাহিদের ঘোড়া রশির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকী লেখা হয়।

৫৬/২. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে সেই মুমিন মুজাহিদই উত্তম, যে নিজের জান দিয়ে ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ওহে যারা ঈমান এনেছ? আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব, যা তোমাদেরকে রক্ষা করিবে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাহাঁর রসূলের প্রতি এবং জিহাদ করিবে আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন তোমাদের গুনাহসমূহ এবং দাখিল করবেন জান্নাতে, প্রবাহিত হইতে থাকবে যার নিম্নদেশে নহরসমূহ এবং এমন মনোরম গৃহ যা রয়েছে অনন্তকাল বাসের জন্য। এটাই মহা সাফল্য।” (আস্ সফ ১০-১২)

২৭৮৬. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে কে উত্তম? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, সেই মুমিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বলিলেন, অতঃপর কে? তিনি বলিলেন, সেই মুমিন আল্লাহর ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে।

২৭৮৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, অবশ্য আল্লাহই অধিক জ্ঞাত কে তাহাঁর পথে জিহাদ করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও সালাত আদায়কারীর মত। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর পথে জিহাদকারীর জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা পুরস্কার বা গনীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।

৫৬/৩. অধ্যায়ঃ পুরুষ এবং নারীর জন্য জিহাদ করার ও শাহাদাত লাভের দুআ।

উমর (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহ! আপনার রসূলের শহরে আমাকে শাহাদাত দান করুন।

২৭৮৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাদি.)-এর নিকট যাতায়াত করিতেন এবং তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–কে খেতে দিতেন। উম্মু হারাম (রাদি.) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাদি.)-এর স্ত্রী। একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাহাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম হইতে জাগলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! হাসির কারণ কী? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের কিছু ব্যাক্তিকে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত তখ্‌তে উপবিষ্ট। এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সন্দেহ করিয়াছেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু ব্যক্তিকে আমার সামনে পেশ করা হয়। পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। অতঃপর মুআবিয়া ইবনু আবু সুফিয়ান (রাদি.)-এর সময় উম্মু হারাম (রাদি.) জিহাদের উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন বের হন তখন তিনি তাহাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি শাহাদাত লাভ করেন।

২৭৮৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাদি.)-এর নিকট যাতায়াত করিতেন এবং তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–কে খেতে দিতেন। উম্মু হারাম (রাদি.) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাদি.)-এর স্ত্রী। একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাহাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম হইতে জাগলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! হাসির কারণ কী? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের কিছু ব্যাক্তিকে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত তখ্‌তে উপবিষ্ট। এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সন্দেহ করিয়াছেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু ব্যক্তিকে আমার সামনে পেশ করা হয়। পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মু হারাম (রাদি.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। অতঃপর মুআবিয়া ইবনু আবু সুফিয়ান (রাদি.)-এর সময় উম্মু হারাম (রাদি.) জিহাদের উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন বের হন তখন তিনি তাহাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি শাহাদাত লাভ করেন।

৫৬/৪. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথের মুজাহিদদের মর্যাদা।

বলা হয়ে থাকে —– স্ত্রীলিঙ্গ ও —— পুংলিঙ্গ অর্থাৎ উভয়ই ব্যবহার হয়, আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন —– এর একবচন হল — এবং ——- এর অর্থ —– অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদা

২৭৯০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করিল ও রমযানের সিয়াম পালন করিল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহ‌র রাসুল! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দুটি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের মত। তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান। আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনু ফুলাইহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান।

২৭৯১. সামুরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে) দেখিতে পেলাম যে, দুব্যক্তি আমার নিকট এল এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। অতঃপর আমাকে এমন উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিল এর আগে আমি কখনো এর চেয়ে সুন্দর ঘর দেখিনি। সে দুব্যক্তি আমাকে বলিল, এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।

৫৬/৫. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করা। জান্নাতে তোমাদের কারো এক ধনুক পরিমিত স্থান।

২৭৯২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম।

২৭৯৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান, তা থেকে উত্তম যার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আরো বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা তা থেকে উত্তম যেখানে সূর্যের উদয়াস্ত হয়।

২৭৯৪. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার ভিতরের সকল কিছু থেকে উত্তম।

৫৬/৬. অধ্যায়ঃ ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা হুর ও তাদের গুনাবলী।

তাদের দর্শনে দৃষ্টি সুস্থির থাকে না এবং তাদের চক্ষুর কৃষ্ণাংশ অতীব কৃষ্ণ ও চক্ষুর শুভ্রাংশ অতীব শুভ্র। (এ জন্যই তাদের হুরেঈন বলা হয়)। —— অর্থাৎ ——“জান্নাতীদের আমি হুরেঈনের সঙ্গে বিয়ে করিয়ে দিব।”

২৭৯৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সওয়াব রয়েছে তাকে দুনিয়ার সব কিছু দিলেও দুনিয়ায় ফিরে আসতে আগ্রহী হইবেনা। একমাত্র শহীদ ব্যাতীত। সে শাহাদাতের ফযীলত দেখার কারণে আবার দুনিয়ায় ফিরে এসে আল্লাহর পথে শহীদ হবার প্রতি আগ্রহী হইবে।

২৭৯৬. হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)–কে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট হইতে এ কথাও বর্ণনা করিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু হইতে উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুকের কিংবা চাবুক রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতী কোন মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সবকিছু চেয়ে উত্তম।

৫৬/৭. অধ্যায়ঃ শাহাদাত কামনা।

২৭৯৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)–কে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং যাদের সকলকে সওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তা হলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া হইতে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, অতঃপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, আবার শহীদ করা হয়।

২৭৯৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, (মুতায় সৈন্য প্রেরণের পর) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) খুতবা দিতে গিয়ে বলিলেন, যায়দ (রাদি.) পতাকা ধারন করিল এবং শহীদ হল, অতঃপর জাফর (রাদি.) পতাকা ধরল সেও শহীদ হল। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) পতাকা ধরল এবং সেও শহীদ হল। অতঃপর খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাদি.) বিনা নির্দেশেই পতাকা ধরল এবং সে বিজয় লাভ করিল। তিনি আরো বলেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা আমাদের নিকট আনন্দদায়ক নয়।

আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অথবা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা তাদের নিকট মোটেই আনন্দদায়ক নয়, এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চোখ হইতে অশ্রু ঝরছিল।

৫৬/৮. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী থেকে পতিত হয়ে কারো মৃত্যু ঘটলে, সে জিহাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তাআলার বানীঃ “যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে বের হইবে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হিজরত করার জন্য, তারপর সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তার প্রতিদান অবধারিত হয়ে আছে আল্লাহর কাছে।” (আন-নিসা : ১০০)

২৭৯৯. উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার নিকটবর্তী এক স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করিলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) আগের মতই বলিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মুআবিয়া (রাদি.)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাহাঁর স্বামী উবাদা ইবনু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।

২৮০০. উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার নিকটবর্তী এক স্থানে শুয়েছিলেন, অতঃপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম আপনি হাসলেন কেন? তিনি বলিলেন, আমার উম্মাতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হলো যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করছে, যেমন বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে। উম্মু হারাম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই করিলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) আগের মতই বলিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর নিকট দুআ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মুআবিয়া (রাদি.)-এর সঙ্গে মুসলিমরা যখন প্রথম সমুদ্র পথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাহাঁর স্বামী উবাদা ইবনু সামিতের সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় যাত্রা বিরতি করে। আরোহণের জন্য উম্মু হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হলো, তিনি সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।

৫৬/৯. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আহত হল কিংবা বর্শা দ্বারা বিদ্ধ হল।

২৮০১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বনূ সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বনূ আমিরের নিকট পাঠান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা (হারাম ইবনু মিলহান) তাদেরকে বলিলেন, আমি সর্বাগ্রে বনূ আমিরের নিকট যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের নিকট আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বাণী পৌছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বাণী শুনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলো। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বলিলেন আল্লাহু আকবার, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। অতঃপর কাফিররা তার অন্যান্য সংগীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করিল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সঙ্গে অন্য একজন ছিলেন। অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) নাবী (সাঃআঃ)-কে খবর দিলেন যে, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করিয়াছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কাওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করিয়াছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ক্রমাগত চল্লিশ দিন রিল, যাকওয়ান, বনূ লিহয়ান ও বনূ উসাইয়্যার বিরুদ্ধে দুআ করেন।

২৮০২. জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

কোন এক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি বলেছিলেনঃ

তুমি একটি আঙ্গুল ছাড়া কিছু নও; তুমি রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহরই পথে।

৫৬/১০. অধ্যায়ঃ যে মহান আল্লাহর পথে আহত হয়।

২৮০৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তাহাঁর পথে আহত হইবে কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্ত বর্ণে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশ্‌কের সুগন্ধি ছড়াবে।

৫৬/১১. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য প্রতীক্ষা করছ দুটি মঙ্গলের মধ্যে একটির।” (আত-তওবা ৫২)

যুদ্ধ হচ্ছে বড় পানি পাত্রের মত।

২৮০৪. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু সুফিয়ান ইবনু হারব (রাদি.) তাঁকে জানিয়েছেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি, তাহাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত। রাসুলগণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। অতঃপর ভাল পরিণতি তাঁদেরই হয়।

৫৬/১২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।” (আল আহযাব ২৩)

২৮০৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইবনু নাযার (রাদি.) বদরের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করিয়াছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখিতে পাবেন যে, আমি কী করি। অতঃপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনু নাযার (রাদি.) বলেছিলেন, আল্লাহ! এঁরা অর্থাৎ তাহাঁর সাহাবীরা যা করিয়াছেন, তার সন্বন্ধে আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সাদ ইবনু মুআযের সঙ্গে তাহাঁর সাক্ষাৎ হলো। তিনি বলিলেন, হে সাদ ইবনু মুআয, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি। সাদ (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি যা করিয়াছেন, আমি তা করিতে পারিনি। আনাস (রাদি.) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে দিয়েছিল। তার বোন ব্যতীত কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রাদি.) বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের এই আয়াতটি তাহাঁর এবং তাহাঁর মত মুনিনদের সম্মর্কে নাযিল হয়েছে। “মুমিনদের মধ্যে হইতে কিছু সংখ্যাক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (আল-আহযাবঃ ২৩)

২৮০৬. Read previous Hadith আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আনাস (রাদি.) আরো বলেন, রুবায়্যি নামক তার এক বোন কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার কিসাসের নির্দেশ দিলেন, আনাস (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা হইবেনা। পরবর্তীতে তার বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ নিতে রাজী হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে যে আল্লাহর নামে শপথ করলে তিনি তার শপথ রক্ষা করেন [সে কারণে তাকে আর সে শপথ (কসম) ভঙ্গ করিতে হয়না]

২৮০৭. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত করে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত আমি পেলাম না যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে পড়তে শুনিয়াছি। একমাত্র খুযাইমাহ বিন সাবিত আনসারী (রাদি.)-এর নিকট পেলাম। যার সাক্ষ্যকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুব্যক্তির সাক্ষের সমান গণ্য করেছিলেন। সে আয়াতটি হলোঃ “মুমিনদের মধ্য হইতে কিছু সংখ্যক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (আল-আহযাবঃ ২৩)।

৫৬/১৩. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের আগে নেক আমল।

আবুদ দারদা (রাদি.) বলেন, আমল অনুসারে তোমরা জিহাদ করে থাকো। আল্লাহ তাআলার বাণীঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা কেন বল? তোমরা যা করনা তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক। যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে সারিবদ্ধভাবে সীসা গলানো সুদৃঢ় প্রাচীরের মত, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। (আস্‌ সফ ২-৩)

২৮০৮. বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লৌহ বর্মে আবৃত এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যুদ্ধে শরীক হবো, না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বলিলেন, ইসলাম গ্রহন কর, অতঃপর যুদ্ধে যাও। অতঃপর সে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহন করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত লাভ করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সে কম আমল করে অধিক পুরস্কার পেল।

৫৬/১৪. অধ্যায়ঃ অজ্ঞাত তীর এসে যাকে হত্যা করে

২৮০৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

উম্মু রুবায়্যি বিনতে বারা, যিনি হারিস ইবনু সুরাকার মা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনি হারিসাহ (রাদি.) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা (রাদি.) বদরের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত লাভ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আমি তার জন্য অবিরাম কাঁদতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদাউস পেয়ে গেছে।

৫৬/১৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে।

২৮১০. আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখানোর জন্য জিহাদে শরীক হলো। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করিল? তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করিল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করিল।

৫৬/১৬. অধ্যায়ঃ আল্লাহর পথে যার দুটি পা ধূলি-মলিন হয়।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের পক্ষে সমীচীন নয় আল্লাহর রসূলের সঙ্গ ত্যাগ করে পেছনে থেকে যাওয়া, রসূলের জীবনের চেয়ে নিজেদের জীবনকে প্রিয় মনে করা। এ কারণে যে, আল্লাহর পথে তাদের যে পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা ক্লিষ্ট করে এবং তাদের এমন পদক্ষেপ যা কাফিরদের ক্রোধের উদ্রেক করে, আর শত্রু পক্ষ থেকে যা কিছু তারা প্রাপ্ত হয়, তার প্রতিটির বিনিময়ে তাদের জন্য একটি নেক আমল লিখিত হয়। নিশ্চয় আল্লাহ নেককারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আত-তওবা ১২০)

২৮১১. আবদুর রাহমান ইবনু জাবর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে যে বান্দার দুপা ধূলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করিবে এমন হয় না।

৫৬/১৭. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় মাথায় ধূলা লাগলে তা মুছে ফেলা।

২৮১২. ইকরিমা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু আব্বাস (রাদি.) তাকে ও আলী ইবনু আবদুল্লাহকে বলেছিলেন যে, তোমরা আবু সাঈদ (রাদি.)-এর নিকট যাও এবং তার কিছু বর্ণনা শোন। অতঃপর আমরা তার নিকট গেলাম। সে সময় তিনি ও তার ভাই বাগানে পানি সেচের কাজে ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি আসলেন এবং দু হাঁটু বুকের সঙ্গে লাগিয়ে বসে বলিলেন, মসজিদে নববীর জন্য আমরা এক একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার (রাদি.) দু দুটি করে বহন করছিল। সে সময় নাবী (সাঃআঃ) তার পাশ দিয়ে গেলেন এবং তার মাথা থেকে ধূলাবালি মুছলেন এবং বলিলেন, আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করিবে। সে (আম্মার) (রাদি.) তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকবে এবং তারা আম্মারকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে।

৫৬/১৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধের এবং ধূলাবালি লাগার পর গোসল করা।

২৮১৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করিলেন, তখন জিবরীল (আঃ) তাহাঁর নিকট এলেন, আর তাহাঁর মাথায় পট্টির মত ধূলি জমেছিল। তিনি বলিলেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন, অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, কোথায় যেতে হইবে? তিনি বনূ কুরায়যার প্রতি ইশারা করে বলিলেন, এদিকে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের দিকে বেরিয়ে পড়লেন।

৫৬/১৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার এ বাণী যাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তোমরা কখনও তাদের মৃত ধারণা কর না। বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত। তারা পরিতুষ্ট তাতে যা আল্লাহ তাদের দান করিয়াছেন নিজ অনুগ্রহে এবং তারা আনন্দ প্রকাশ করছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি, তাদের পেছনে রয়ে গেছে। কারণ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হইবে না। তারা আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর তরফ থেকে নিয়ামাত ও অনুগ্রহ লাভের জন্য। আর আল্লাহ তো মুমিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। (আল ইমরান ১৬৯-১৭১)

২৮১৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যারা বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদেরকে শহীদ করেছিল, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেই রিল ও যাক্ওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরে দুআ করেছিলেন এবং উসাইয়্যাহ গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আনাস (রাদি.) বলেন, বীরে মাউনার নিকট শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা মানসুখ হয়ে যায়। (আয়াতটি হলো (আরবি) “তোমরা আমাদের কাওমের নিকট এ খবর পৌছে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তাহাঁর প্রতি সন্তুষ্ট।”

২৮১৫. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলায় শরাব পান করেন [১], অতঃপর যুদ্ধে তারা শাহাদাত লাভ করেন। সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে প্রশ্ন করা হলঃ সেই দিনের শেষ প্রহরে? তিনি বলিলেন, এ কথাটি তাতে নেই।

[১] এটা মদ পান হারাম হবার পূর্বের ঘটনা। সে সময় পর্যন্ত মদ পানের অবৈধতা ঘোষিত হয়নি।

৫৬/২০. অধ্যায়ঃ শহীদের উপর ফেরেশতাদের ছায়া বিস্তার।

২৮১৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাহাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাহাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করিল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হলো, সে আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতামণ্ডলী তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। আমি [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] সাদাকা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত? তিনি বলিলেন, জাবির (রাদি.) কখনো সেটাও বলছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply