আল্লাহর উপর ভরসা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করা

আল্লাহর উপর ভরসা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করা

আল্লাহর উপর ভরসা এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৩৪, অনুচ্ছেদঃ (৪৫-৬৪)=২০টি

৪৫. অনুচ্ছেদঃ ভেবে-চিন্তে বন্ধু নির্বাচন করিবে
৪৬. অনুচ্ছেদঃ আদম সন্তান ও তার পরিবার পরিজন, সম্পদ ও কর্মের উদাহরন
৪৭. অনুচ্ছেদঃ অতি ভোজন নিন্দনীয়
৪৮. অনুচ্ছেদঃ প্রদর্শনেচ্ছা ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা
৪৯. অনুচ্ছেদঃ একান্ত গোপনে আমল করা
৫০. অনুচ্ছেদঃ যে যাকে ভালোবাসে [কিয়ামাত দিবসে] সে তার সাথী হইবে
৫১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ
৫২. অনুচ্ছেদঃ গুনাহ ও সাওয়াবের কাজ প্রসঙ্গে
৫৩. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার জন্যই ভালোবাসা
৫৩/২. অনুচ্ছেদঃ ভালোবাসার কথা অবহিত করা
৫৪. অনুচ্ছেদঃ চাটুকারিতা ও চাটুকার নিন্দনীয়
৫৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমানদার লোকের সংসর্গে থাকা
৫৬. অনুচ্ছেদঃ বিপদে ধৈর্যধারণ
৫৭ . অনুচ্ছেদঃ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা
৫৮. অনুচ্ছেদঃ বিপদে ধৈর্য ধারণের সাওয়াব প্রসঙ্গে
৫৯. অনুচ্ছেদঃ একদল লোক পার্থিব স্বার্থে ধর্মকে প্রতারণার উপায় বানাবে। এদের মুখে মিষ্টি বুলি অন্তরে বিষ
৬০. অনুচ্ছেদঃ রসনা সংযত রাখা বা সংযতবাক হওয়া
৬১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র যিকিরশুন্য কথায় অন্তর কঠিন হয়ে যায়
৬২. অনুচ্ছেদঃ উপকারী কথাই লাভজনক
৬৩. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক দাবিদারের দাবি পূরণ করিতে হইবে
৬৪. অনুচ্ছেদঃ আইশা ও মুআবিয়া [রাদি.]-এর পত্রালাপ

৪৫. অনুচ্ছেদঃ ভেবে-চিন্তে বন্ধু নির্বাচন করিবে

২৩৭৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং তোমাদের সকলেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।

হাসান , সহীহাহ্ [৯২৭], মিশকাত [৫০১৯]। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৪৬. অনুচ্ছেদঃ আদম সন্তান ও তার পরিবার পরিজন, সম্পদ ও কর্মের উদাহরন

২৩৭৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনটি জিনিস মৃতের অনুসরণ করে, তারপর দুটি চলে আসে এবং একটি [তার সাথে] রয়ে যায়। তার সাথে যায় তার পরিবার-পরিজন, সম্পদ ও কৃতকর্ম। তারপর তার পরিজন ও সম্পদ ফিরে আসে এবং তার কৃতকর্ম [তার সাথে] থেকে যায়।

সহীহ্‌ , বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৭. অনুচ্ছেদঃ অতি ভোজন নিন্দনীয়

২৩৮০. মিকদাম ইবনি মাদীকারিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ মানুষ পেট হইতে অধিক নিকৃষ্ট কোন পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদন্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।

সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [৩৩৪৯]।

উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস আল-হাসান ইবনি আরাফা-ইসমাঈল ইবনি আইয়্যাশ [রাহঃ]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এই সনদে মিকদাম ইবনি মাদীকারিব [রাদি.] হইতে “আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি” স্থলে “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন” উল্লেখ আছে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৮. অনুচ্ছেদঃ প্রদর্শনেচ্ছা ও খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা

২৩৮১. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করিবে, আল্লাহ্‌ তাআলাও তাকে তা-ই দেখাবেন [অর্থাৎ সে প্রদর্শনীমূলক আমল করলে তা প্রচার করে দেখানো হইবে] এবং সুনাম-সুখ্যাতির অন্বেষণের উদ্দেশ্যে যে লোক আমল করিবে, আল্লাহ্‌ তাআলাও তার আমল [দোষ-ক্রুটিগুলো] প্রচার করে দেবেন।

সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [৪২০৬]।বর্ণনাকারী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরো বলেছেনঃ মানুষকে যে ব্যক্তি দয়া করে না, আল্লাহ্‌ও তাকে দয়া করেন না।সহীহ্‌ , তাখরীজুল মুশকিলাহ [১০৮], সহীহাহ্‌ [৪৮৩], বুখারী, মুসলিম অনুরুপ।জুনদাব ও আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতেও এ অনু্চ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ, তবে উপরোক্ত সূত্রে গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৮২. শুফাই আল-আসবাহী [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

কোন একদিন তিনি মাদীনায় পৌঁছে দেখিতে পেলেন যে, একজন লোককে ঘিরে জনতার ভিড় লেগে আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ইনি কে? উপস্থিত লোকেরা তাকে বলিল, ইনি আবু হুরাইরা [রাদি.]। [শুফাই বলেন], আমি কাছে গিয়ে তার সামনে বসলাম। তখন লোকদের তিনি হাদীস শুনাচ্ছিলেন। তারপর তিনি যখন নীরব ও একাকী হলেন, আমি তাকে বললাম, আমি সত্যিকারভাবে আপনার নিকট এই আবেদন করছি যে, আপনি আমাকে এমন একটি হাদীস শুনাবেন, যা আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুনেছেন, ভালোভাবে বুঝেছেন এবং জেনেছেন।

আবু হুরাইরা [রাদি.] বলিলেন, আমি তাই করব, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন এবং আমি তা বুঝেছি ও জেনেছি। আবু হুরাইরা [রাদি.] একথা বলার পর কেমন যেন তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। অল্প সময় এভাবে থাকলেন। তারপর তন্ময়ভাব চলে গেলে তিনি বলিলেন, আমি এমন একটি হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করব যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এই ঘরের মধ্যে আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। তখন আমি ও তিনি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবু হুরাইরা [রাদি.] পুনরায় আরো গভীরভাবে তন্ময়গ্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে মুখমন্ডল মুছলেন, তারপর বলিলেন, আমি তোমার নিকট অবশ্যই এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। তখন এই ঘরে তিনি ও আমি ব্যতীত আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। আবু হুরাইরা আবার বেহুশ হয়ে গেলেন; তিনি পুনরায় হুশে ফিরে এসে তার মুখমন্ডল মুছলেন এবং বলিলেন, আমি তা করব। আমি অবশ্যই তোমার নিকট এরূপ হাদীস বর্ণনা করব যাহা তিনি আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন। আমি তখন তার সাথে এই ঘরে ছিলাম। আমি আর তিনি ব্যতীত তখন আর কেউ ছিলনা। আবু হুরাইরা [রাদি.] পুনরায় আরো গভীরভাবে তন্ময়াভিভূত হয়ে পড়েন এবং বেহুশ হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি অনেকক্ষণ তাকে ঠেস দিযে রাখলাম। তারপর হুঁশ ফিরে এলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য কিয়ামাত দিবসে তাহাদের সামনে হাযির হইবেন। সকল উম্মাতই তখন নতজানু অবস্থায় থাকিবে। তারপর হিসাব-নিকাশের জন্য সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিদের ডাকা হইবে তারা হলো কুরআনের হাফিয, আল্লাহ্‌ তাআলার পথের শহীদ এবং প্রচুর ধনৈশ্বর্যের মালিক। সেই ক্বারী [কুরআন পাঠক]-কে আল্লাহ্‌ তাআলা প্রশ্ন করবেন, আমি আমার রাসূলের নিকট যা প্রেরণ করেছি তা কি তোমাকে শিখাইনি? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, শিখিয়েছেন। তিনি বলবেন, তুমি যা শিখেছ সে অনুযায়ী কোন কোন আমল করেছ? সে বলবে, আমি রাত-দিন তা তিলাওয়াত করেছি। তখন আল্লাহ্‌ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে আরো বলবেন, বরং তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, তোমাকে বড় ক্বারী [হাফিয] ডাকা হোক। আর তা তো ডাকা হয়েছে। তারপর সম্পদওয়ালা ব্যক্তিকে হাযির করা হইবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদশালী বানাইনি? এমনকি তুমি কারো মুখাপেক্ষী ছিলেনা? সে বলবে, হে রব! হ্যাঁ, তা বানিয়েছেন। তিনি বলবেন, আমার দেয়া সম্পদ হইতে তুমি কোন কোন [সৎ] আমল করেছ? সে বলবে, আমি এর দ্বারা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রেখেছি এবং দান-খাইরাত করেছি। আল্লাহ্‌ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, ফেরেশতারাও বলবে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে যে, মানুষের নিকট তোমার দানশীল-দানাবীর নামের প্রসার হোক। আর এরূপ তো হয়েছেই। তারপর যে লোক আল্লাহ্‌ তাআলার রাস্তায় শাহাদাৎ বরণ করেছে তাকে হাযির করা হইবে। আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তুমি কিভাবে নিহত হয়েছ? সে বলবে, আমি তো আপনার পথে জিহাদ করিতে আদিষ্ট ছিলাম। কাজেই আমি জিহাদ করিতে করিতে শাহাদাৎ বরণ করেছি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, আর ফেরেশতারাও তাকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলবেন, তুমি ইচ্ছাপোষণ করেছিলে লোকমুখে একথা প্রচার হোক যে, অমুক ব্যক্তি খুব সাহসী বীর। আর তাতো বলাই হয়েছে। তারপর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার হাঁটুতে হাত মেরে বললেনঃ হে আবু হুরাইরা! কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টির মধ্য হইতে এ তিনজন দ্বারাই প্রথমে জাহান্নামের আগুন প্রজ্বলিত করা হইবে।

ওয়ালীদ অর্থাৎ আবু উসমান আল-মাদাইনী বলেন, উকবা ইবনি আমাকে বলেছেন যে, উক্ত শুফাই [শাফী] এ হাদীসটি মুআবিয়া [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে বর্ণনা করেন। আবু উসমান আরো বরেন, আলা ইবনি আবু হাকীম আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, সে [শাফী] ছিল মুআবিয়া [রাদি.]-এর তলোয়ারবাহক। সে বলেছে যে, জনৈক ব্যক্তি মুআবিয়া [রাদি.]-এর নিকট এসে উক্ত হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করেন। তখন মুআবিয়া [রাদি.] বলেন, যদি তাহাদের সাথে এমনটি করা হয় তাহলে অন্যসব লোকের কি অবস্থা হইবে? তারপর মুআবিয়া [রাদি.] খুব বেশি কাঁন্না করিলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি কাঁদতে কাঁদতে মারা যাবেন। আমরা বলাবলি করিতে লাগলাম, এই লোকটিই আমাদের এখানে অনিষ্ট নিয়ে এসেছে [অর্থাৎ সে এই হাদীসটি বর্ণনা না করলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না]। ইতিমধ্যে মুআবিয়া [রাদি.] হুঁশ ফিরে পেলেন এবং তার চেহারা মুছলেন, তারপর বলিলেন, আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ] সত্যই বলেছেন। [এই বলে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন] ঃ

“যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর সৌন্দর্য কামনা করে, আমি দুনিয়াতে তাহাদের কর্মের পূর্ণ ফল প্রদান করে থাকি এবং সেখানে তাহাদেরকে কর্ম প্রদান করা হইবে না। তাহাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছু নেই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হইবে এবং তারা যা করে থাকে তা বিফলে যাবে” [সূরা ঃ হূদ-১৫,১৬]।

সহীহ্‌ , তালীকুর রাগীব [১/২৯-৩০], তালীক আলা ইবনে খুযাইমাহ [২৪৮২]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৮৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা জুব্বুল হুযন হইতে আল্লাহ্‌ তাআলার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারা প্রশ্ন করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জুব্বুল হুযন কি? তিনি বললেনঃ তা জাহান্নামের মধ্যকার একটি উপত্যকা, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তাতে কে প্রবেশ করিবে? তিনি বললেনঃ যেসব কুরআন পাঠক লোক দেখানো আমল করে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[২৫৬]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪৯. অনুচ্ছেদঃ একান্ত গোপনে আমল করা

২৩৮৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন লোক খুবই গোপনে কোন আমল করে কিন্তু অন্যরা তা জেনে ফেললে তাতেও তার আনন্দ লাগে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব, একটি গোপনে আমল করার জন্য এবং অপরটি প্রকাশ হয়ে পড়ার জন্য।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪২২৬]আবু ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান গারীব। আমাশ প্রমুখ হাবীব ইবনি আবী ছাবিত হইতে তিনি আবু সালিহ হইতে তিনি রাসূল [সাঃআঃ] হইতে মুর্সালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন। আমাশের সাথীগণ আবু হুরাইরার উল্লেখ করেন নাই।আবু ঈসা বলেনঃ অন্যরা জেনে ফেললে তাতেও তার আনন্দ লাগে এর ব্যাখ্যায় কতক মনিষী বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে ভাল কাজের জন্য প্রশংসা করায় সে আনন্দ লাভ করে, এই জন্য যে, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরাই পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী তবে তার আনন্দের কারণ যদি এটা হয় যে, মানুষ তাকে ভাল মনে করে তাকে সম্মান করিবে তা হলে এটা লোক দেখানোর পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে। কিছু মনিষী বলেছেনঃ তার আনন্দ হওয়ার কারণ হল, অন্যরাও তার অনুকরণে আমল করলে তাতে সে সাওয়াব পাবে।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫০. অনুচ্ছেদঃ যে যাকে ভালোবাসে [কিয়ামাত দিবসে] সে তার সাথী হইবে

২৩৮৫. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট একজন লোক এসে প্রশ্ন করিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! কিয়ামাত কখন সংঘটিত হইবে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাযে দাঁড়িযে গেলেন। নামাজ সমাপ্তির পর তিনি প্রশ্ন করেন ঃ কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! এই যে আমি। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন ঃ তুমি কিয়ামাতের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমি অবশ্য তেমন লম্বা [নাফল] নামাজও পড়িনি, রোযাও [নাফল] রাখিনি, তবে আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ও তাহাঁর রাসূলকে ভালোবাসি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে লোক যাকে ভালোবাসে, কিয়ামাত দিবসে সে তার সাথেই অবস্থান করিবে। তুমিও যাকে ভালোবাস তার সাথেই অবস্থান করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, তারা এ কথায় এতই সন্তুষ্ট হলেন যে, ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের আর কোন বিষয়ে এত খুশি হইতে দেখিনি।

সহীহ্‌ , রাওযুন নাযীর [১০৪], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৮৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে লোক যাকে ভালোবাসে, [কিয়ামাত দিবসে] সে তার সাথেই অবস্থান করিবে এবং সে যা অর্জন করেছে তা-ই পাবে। তুমি যাকে ভালবাস তার সাথেই থাকিবে, তুমি যা নিয়্যাত করেছ তাই পাবে এই অর্থে হাদীসটি সহিহ।

সহীহাহ্ [৩২৫৩]।আলী, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, সাফওয়ান ইবনি আসসাল, আবু হুরাইরা ও আবু মূসা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং হাসান বাসরী-আনাস [রাদি.] হইতে, তিনি রাসূলুল্রাহ [সাঃআঃ] সূত্রে গারীব। হাদীসটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৮৭.সাফওয়ান ইবনি আসসাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উচ্চ আওয়াজধারী জনৈক বেদুঈন এসে বলিল, হে মুহাম্মদ [সাঃআঃ]! কোন একজন ব্যক্তি একটি সম্প্রদায়কে ভালোবাসে; কিন্তু সে তাহাদের সাথে গিয়ে মিলিত হইতে পারেনি [অর্থাৎ তাহাদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি]। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে [কিয়ামাত দিবসে] সে তার সাথেই অবস্থান করিবে।

হাসান , আর রাওয [৩৬০]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আহমাদ ইবনি আবদা আয-যাব্বী-হাম্মাদ ইবনি যাইদ হইতে, তিনি আসিম হইতে, তিনি যির ইবনি হুবাইশ হইতে, তিনি সাফওয়ান ইবনি আসসাল [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে মাহমূদ বর্ণিত হাদীসের মতোই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ

২৩৮৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ বান্দাহ আমার সম্বন্ধে যেরকম ধারণা পোষণ করে আমি তার সাথে সে অনুযায়ী আচরণ করি। সে আমাকে ডাকলে আমি তার সাথেই থাকি।

সহীহ্‌ , মুসলিম [৮/৬৬], বুখারী [৭৪০৫], আমাকে স্বরণ করলে এই অর্থে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫২. অনুচ্ছেদঃ গুনাহ ও সাওয়াবের কাজ প্রসঙ্গে

২৩৮৯. নাওয়াস ইবনি সামআন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে একজন লোক গুনাহের কাজ ও সাওয়াবের কাজ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সৎকাজ বা সাওয়াবের কাজ হলো সদাচার এবং গুনাহের কাজ হলো যা তোমার অন্তরে সংশয় সৃষ্টি করে, আর সেটা মানুষ জানতে পারুক তা তুমি অপছন্দ কর।

সহীহ্‌ , মুসলিম [৮/৭]।উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার-আবদুর রাহমান ইবনি মাহ্‌দী হইতে, তিনি মুআবিয়া ইবনি সালিহ [রাহঃ] হইতেও বর্ণিত আছে। তবে এই সূত্রে “এক ব্যক্তি প্রশ্ন করিল” -এর স্থলে “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করলাম” উল্লেখ আছে।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তাআলার জন্যই ভালোবাসা

২৩৯০. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাহাদের জন্য রয়েছে আলোর মিম্বার [মঞ্চ]। নাবী ও শাহীদগণ পর্যন্ত তাহাদের সাথে [মর্যাদা দর্শনে] ঈর্ষা করিবে।

সহীহ্‌ , মিশকাত, তাহকীক ছানী [৫০১১], তালীকুর রাগীব [৪/৪৭]।আবুদ দারদা, ইবনি মাসউদ, উবাদা ইবনিস সামিত, আবু হুরাইরা ও আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু মুসলিম আল-খাওলানীর নাম আবদুল্লাহ, পিতা সাওব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৯১. আবু হুরাইরা [রাদি.] অথবা আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা [কিয়ামাত দিবসে] সাত প্রকারের লোককে তাহাঁর [আরশের] ছায়াতলে আশ্রয় প্রদান করবেন, যেদিন তাহাঁর [আরশের] ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়াই [আশ্রয়] অবশিষ্ট থাকিবে না। [তারা হলো]ঃ [১] ন্যায়পরায়ণ শাসক, [২] যে যুবক আল্লাহ্‌ তাআলার ইবাদাতের মধ্যে বড় হয়েছে, [৩] যে ব্যক্তি মাসজিদ হইতে বেরিয়ে গেলেও তার অন্তর এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে, যে পর্যন্ত না সে আবার সেখানে ফিরে আসে, [৪] এমন দুব্যক্তি যারা আল্লাহ্‌ তাআলার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করেছে, এই সম্পর্কেই একত্র থাকে এবং বিচ্ছিন্ন হয়, [৫] যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহ্‌ তাআলাকে স্মরণ করেছে এবং তার দুচোখ বেয়ে পানি পড়েছে, [৬] এমন ব্যক্তি যাকে কোন অভিজাত পরিবারের সুন্দরী রূপসী নারী [অশ্লীল কাজে] আহ্ববান করেছে কিন্তু সে তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ঃ আমি আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় করি এবং [৭] এমন ব্যক্তি যে এত গোপনে দান-খাইরাত করেছে যে, তার বাম হাতও জানতে পারেনি যে, তার ডান হাত কি দান করেছে।

সহীহ্‌ , ইরওয়া [৮৮৭], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীসটি অনুরূপভাবে মালিক ইবনি আনাস [রাহঃ]-এর বরাতে ভিন্ন সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সন্দেহবশতঃ আবু হুরাইরা [রাদি.] অথবা আবু সাঈদ [রাদি.] বলা হয়েছে। কিন্তু এই হাদীসটি খুবাইব [হাবীব] ইবনি আবদুর রাহমানের সূত্রে সন্দেহমুক্তভাবে আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার বর্ণনা করিয়াছেন। মালিক ইবনি আনাসের বর্ণিত হাদীসের একইরকম হাদীস সাওয়ার ইবনি আবদুল্লাহ আল-আনসারী ও মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না-ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে, তিনি খুবাইব [রাহাবীব] ইবনি আবদুর রাহমান হইতে, তিনি হাফ্‌স ইবনি আসিম হইতে, তিনি আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে এই সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে তাতে আছে ঃ “কানা কালবুহু মুআল্লাকান বিল-মাসাজিদ” [যার অন্তর মাসজিদসমূহের সাথে সংযুক্ত] এবং “যাতু হাসাবিন” [উচ্চবংশীয়া] এর স্থলে “যাতু মানসাবিন ওয়া জামালিন” [মর্যাদাসম্পন্ন ও সুন্দরী] বাক্যাংশের উল্লখ আছে। এ বর্ণনাটিও হাসান সহিহ। সহীহ্‌ , দেখুন র্পূবের হাদীস।

৫৩/২. অনুচ্ছেদঃ  ভালোবাসার কথা অবহিত করা

২৩৯১/২। মিকদাম ইবনি মাদীকারিব [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে,

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ তার কোন [মুসলিম] ভাইকে ভালোবাসলে সে যেন অবশ্যই তাকে তা অবহিত করে।

সহীহ্‌ , সহীহাহ্ [৪১৭, ২৫১৫]।আবু ঈসা বলেন, মিকদাম [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহিহ গারীব। আবু যার ও আনাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মিকদামের উপনাম আবু কারীমাহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৯২. ইয়াযীদ ইবনি নুআমা আয–যাব্বী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি কারো সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করিতে চাইলে সে যেন তার নাম, পিতার নাম ও গোত্র বা বংশের নাম জিজ্ঞেস করে নেয়। কেননা তা ভালোবাসার সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য খুব বেশী কার্যকরী হয়।

যঈফ, যঈফা [১৭২৬]আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই হাদীসটি জেনেছি। ইয়াযীদ ইবনি নুআমা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু শুনেছেন মনে আমাদের জানা নেই। ইবনি উমার [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূত্রে এই হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস বর্ণিত আছে। কিন্তু এটির সনদসূত্রও তেমন সহীহ নয়।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ চাটুকারিতা ও চাটুকার নিন্দনীয়

২৩৯৩. আবু মামার [রাহঃ] হইতে বর্ণীতঃ

কোন একদিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোন এক প্রশাসকের সামনেই তার প্রশংসা করিতে শুরু করে। এতে মিকদাদ ইবনিল আসওয়াদ [রাদি.] তার মুখমন্ডলে ধুলাবালি নিক্ষেপ করিতে থাকেন এবং বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন চাটুকারের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করি।

সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [৩৭৪২], মুসলিম।আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীসটি ইয়াযীদ ইবনি আবু যিয়াদ-মুজাহিদ হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে এই সূত্রে যাইদা [রাহঃ] বর্ণনা করেছন। মুজাহিদ-আবু মামার হইতে এই সনদসূত্রটি অনেক বেশি সহিহ। আবু মামারের নাম আবদুল্লাহ, পিতা সাখবারাহ। আর মিকদাদ ইবনিল আসওয়াদ [রাহঃ] হলেন মিকদাদ ইবনি আমর আল-কিন্দী, তার উপনাম আবু মাবাদ। আসওয়াদ ইবনি আবদি ইয়াগূস তাকে শৈশব অবস্থায় পালকপুত্ররূপে গ্রহণ করেন বলে তাকে আসওয়াদের সাথে সম্পর্কিত করে মিকদাদ ইবনিল আসওয়াদ বলা হয়।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৯৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, চাটুকারদের মুখে ধুলাবালি নিক্ষেপ করার জন্য রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সহীহ্‌ , দেখুন পূর্বের হাদীস।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ ঈমানদার লোকের সংসর্গে থাকা

২৩৯৫. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন ঃ তুমি ঈমানদার লোক ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং আল্লাহ্‌ভীরু মুত্তাক্বী লোক ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়।

হাসান , মিশকাত [৫০১৮]।আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান। আমরা হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই জেনেছি।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ বিপদে ধৈর্যধারণ

২৩৯৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা যখন তাহাঁর কোন বান্দার কল্যাণ সাধন করিতে চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে বিপদে নিক্ষেপ করেন। আর যখন তিনি তাহাঁর কোন বান্দার অকল্যাণ সাধন করিতে চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হইতে বিরত থাকেন। তারপর কিয়ামাতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন।

সহীহ্‌ , সহীহাহ্ [১২২০], মিশকাত [১৫৬৫]।এ সনদেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ বিপদ যত মারাত্মক হইবে, প্রতিদানও তত মহান হইবে। আল্লাহ্‌ তাআলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাহাদেরকে [বিপদে ফেলে] পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে [বিপদে] সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য [আল্লাহ্ তাআলার] সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য [আ্ল্লাহ তাআলার] অসন্তুষ্টি বিদ্যমান।হাসান , ইবনি মা-জাহ [৪০৩১]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

২৩৯৭. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অসুস্থতাজনিত কষ্টের তুলনায় বেশি কষ্ট আমি আর কোন ব্যক্তির হইতে দেখিনি।

সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [১৬২২], বুখারী, মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহীহ্‌ হাদীস।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৩৯৮. মুসআব ইবনি সাদ [রাহঃ] হইতে তার বাবার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [সাদ] বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেনঃ নাবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাহাদের, এরপর যারা নেককার তাহাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবিক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে যমীনে চলাফেরা করে অথচ তার কোন গুনাহ্‌ই থাকে না।

হাসান, সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [৪০২৩]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আবু হুরাইরা ও হুযাইফা ইবনিল ইয়ামান [রাদি.]-এর বোন থেকেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে, নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞাসা করা হল ঃ কোন ব্যক্তি সবচাইতে বেশি বিপদগ্রস্ত হয়? তিনি বলিলেন ঃ নাবীগণ, তার পর যারা নেককার তাহাদের।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৩৯৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্‌ তাআলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।

হাসান সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ [২২৮০]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৫৭ . অনুচ্ছেদঃ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা

২৪০০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ

 إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ إِذَا أَخَذْتُ كَرِيمَتَىْ عَبْدِي فِي الدُّنْيَا لَمْ يَكُنْ لَهُ جَزَاءٌ عِنْدِي إِلاَّ الْجَنَّةَ 

আমি দুনিয়াতে যখন কোন বান্দার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই, তখন তার জন্য একমাত্র জান্নাত ব্যতীত আমার নিকট আর কোন প্রতিদান থাকে না।

সহিহ , তালীকুর রাগীব [৪/১৫৫, ১৫৬], বুখারী অনুরূপ।আবু হুরাইরা ও যাইদ ইবনি আকরাম [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ্‌ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আবু যিলালের নাম হিলাল।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪০১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মহামহিম আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেনঃ আমি যে ব্যক্তির দুটি প্রিয় চোখ কেড়ে নিয়েছি; অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করেছে এটা আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে হয়েছে বলে মনে করে এবং সাওয়াবের আশা করে, আমি তাকে জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন কিছু প্রতিদান দিয়ে সন্তুষ্ট হব না।

সহীহ্‌ , তালীকুর রাগীব [৪/১৫৬]।ইরবায ইবনি সারিয়া [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ বিপদে ধৈর্য ধারণের সাওয়াব প্রসঙ্গে

২৪০২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে বিপদে পতিত [ধৈর্যধারী] মানুষদের যখন প্রতিদান দেয়া হইবে, তখন [পৃথিবীতে] বিপদমুক্ত মানুষেরা আকাঙ্ক্ষা [পরিতাপ] করিবে, হায়! দুনিয়াতে যদি কাঁচি দ্বারা তাহাদের শরীরের চামড়া কেটে টুকরা টুকরা করে দেয়া হতো।

হাসান , সহীহাহ্‌ [২২০৬], তারীকুর রাগীব [৪/১৪৬], মিশকাত [১৫৭০]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা এই সনদে উক্তভাবে রিওয়ায়াত ব্যতীত আর কিছুই জানি না। এ হাদীসটি আমাশ-তালহা ইবনি মুসাররিফ হইতে, তিনি মাসরূক [রাহঃ] হইতে তার বক্তব্য হিসাবে কোন কোন বর্ণনাকারী এর কিছু বর্ণনা করিয়াছেন।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৪০৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর অনুতপ্ত হইবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কিসের জন্য অনুতপ্ত হইবে? তিনি বললেনঃ মৃত লোকটি সৎকর্মশীল হলে সে এই বলে অনুতপ্ত হইবে যে, সে আরও বেশী [আমল] করিল না কেন। আর সে অন্যায়কারী [পাপী] হলে এই বলে অনুতপ্ত হইবে যে, সে কেন অন্যায় থেকে বিরত থাকলো না।

খুবই দুর্বল, মিশকাত [৫৫৪৫]আবু ঈসা বলেন, এ সূত্রেই আমরা হাদীসটি জেনেছি। শুবা [রঃ] এই হাদীসের রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবনি উবায়দুল্লাহ্ ইবনি মাওহাবের সমালোচনা করিয়াছেন। তিনি মদীনাবাসী।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৫৯. অনুচ্ছেদঃ একদল লোক পার্থিব স্বার্থে ধর্মকে প্রতারণার উপায় বানাবে। এদের মুখে মিষ্টি বুলি অন্তরে বিষ

২৪০৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শেষ জামানায় কিছু লোকের উদ্ভব হইবে যারা পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ধর্মকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করিবে। তারা জনগণের সামনে ভেড়ার চামড়ার মত কোমল পোশাক পরবে। তাহাদের মুখের ভাষা হইবে চিনির চেয়ে মিষ্টি; কিন্তু তাহাদের হৃদয় হইবে নেকড়ে বাঘের মত হিংস্র। আল্লাহ্‌ তাআলা তাহাদের বলবেনঃ তোমরা কি আমার বিষয়ে ধোঁকায় পড়ে আছ, নাকি আমার প্রতি ধৃষ্টতা দেখাচ্ছ? আমার শপথ! আমি তাহাদের উপর তাহাদের মধ্য হইতেই এমন বিপর্যয় আপতিত করব, যা তাহাদের খুবই সহনশীল ব্যক্তিদের পর্যন্ত হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ছাড়বে।

খুবই দুর্বল, তালীকুর রাগীব [১/৩২]আবু ঈসা বলেন, এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

২৪০৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ لَقَدْ خَلَقْتُ خَلْقًا أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ وَقُلُوبُهُمْ أَمَرُّ مِنَ الصَّبِرِ فَبِي حَلَفْتُ لأُتِيحَنَّهُمْ فِتْنَةً تَدَعُ الْحَلِيمَ مِنْهُمْ حَيْرَانًا فَبِي يَغْتَرُّونَ أَمْ عَلَىَّ يَجْتَرِءُونَ

“আমি এমন মাখলুকও সৃষ্টি করেছি, যাদের মুখের ভাষা মধুর চাইতে মিষ্টি; কিন্তু তাহাদের হৃদয় তেতো ফলের চাইতেও তিক্ত। আমার সত্তার শপথ! আমি তাহাদেরকে এমন এক মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে ছেড়ে দেব যে, তা তাহাদের অধিক সহনশীল ব্যক্তিকেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে ছাড়বে। তারা কি আমার সাথে প্রতারণা করছে নাকি আমার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে?

যঈফ, প্রাগুক্তআবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান এবং ইবনি উমার [রাদি.]–এর রিওয়ায়াত হিসাবে গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬০. অনুচ্ছেদঃ রসনা সংযত রাখা বা সংযতবাক হওয়া

২৪০৬. উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! মুক্তির উপায় কি? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাসস্থান যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয় [অর্থাৎ তুমি তোমার বাড়ীতে অবস্থান কর] এবং তোমার গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর।

সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ [৮৮৮]।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪০৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষ সকালে ঘুম হইতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহবাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলাকে ভয় কর। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য।

হাসান , মিশকাত, তাহকীক ছানী [৪৮৩৮]।হান্নাদ-আবু উসামা হইতে, তিনি হাম্মাদ ইবনি যাইদের সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের একই রকমভাবে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এই সূত্রটি মারফূভাবে বর্ণিত হয়নি। এটি মুহাম্মাদ ইবনি মূসার রিওয়ায়াতের চাইতে অনেক বেশি সহিহ। আবু ঈসা বলেন, আমরা এই হাদীসটি শুধুমাত্র হাম্মাদ ইবনি যাইদের সূত্রেই জেনেছি। এই হাদীসটি একাধিক বর্ণনাকারী ইবনি যাইদের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু মারফূভাবে নয়। সালিহ ইবনি আবদুল্লাহ-হাম্মাদ ইবনি যাইদ হইতে, তিনি আবুস সাহবা হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে, তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সূত্রে উক্ত হাদীসের মতোই উল্লেখ করিয়াছেন।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৪০৮. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার দুই ঠোঁটের মাঝখানের বস্তু [জিহ্বা] ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর [লজ্জাস্থানের] যামিন হইতে পারে [অপব্যবহার হইতে সংযত রাখবে], আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো।

সহীহ্‌ , তালীকুর রাগীব [৩/১৯৭], যঈফা [২৩০২], বুখারী অনুরূপ।আবু হুরাইরা ও ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, সাহ্‌ল [রাদি.] বর্ণিত এ হাদীসটি হাসান সহিহ এবং এই সূত্রে গারীব।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৪০৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা যে ব্যক্তিকে তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের অকল্যাণ হইতে মুক্ত করিয়াছেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

হাসান, সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ [৫১০]।আবু ঈসা বলেন, যে আৰূ হাযিম আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন তার নাম সালমান, আযযা আল-আশজাইয়্যার মুক্তদাস এবং কূফার অধিবাসী। আর যে আবু হাযিম সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন তিনি হলেন আবু হাযিম আয-যাহিদ, মাদীনার অধিবাসী এবং তার নাম সালামা ইবনি দীনার। এ হাদীসটি হাসান সহিহ।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৪১০. সুফিয়ান ইবনি আবদুল্লাহ আস-সাকাফী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আমাকে এমন একটি কথা বলুন, যা আমি ধারণ করিতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি বল, আল্লাহ্‌ই আমার রব [প্রভু] তারপর এতে সুদৃঢ় থাকো। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, আমি আবার বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল [সাঃআঃ]! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সর্বাধিক আশংকাজনক বস্তু কোনটি? তিনি স্বীয় জিহবা ধরে বললেনঃ এই যে, এটি।

সহীহ্‌ , ইবনি মা-জাহ [৩৯৭২], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এই হাদীসটি সুফিয়ান ইবনি আব্দুল্লাহ আস-সাকাফী [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র যিকিরশুন্য কথায় অন্তর কঠিন হয়ে যায়

২৪১১. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বলো না। কেননা, আল্লাহ্‌ তাআলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বললে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর নিঃসন্দেহে কঠিন অন্তরের লোকই আল্লাহ্‌ তাআলা থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে থাকে।

যঈফ, যঈফা [৯২০], মিশকাত, তাহকীক ছানী [২২৭৬]আবু বাকর ইবনি আবুন নাযর–আবুন নাযর হইতে তিনি ইবরাহীম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হাতিব হইতে তিনি আবদুল্লাহ ইবনি দীনার হইতে তিনি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে উপরোক্ত হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইবরাহীম ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি হাতিবের সূত্রেই শুধুমাত্র আমরা এ হাদীস জেনেছি।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬২. অনুচ্ছেদঃ উপকারী কথাই লাভজনক

২৪১২. রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ মানুষের প্রতিটি কথা তার জন্য অপকারী, উপকারী নয়। তবে সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজের নিষেধ এবং আল্লাহ্‌ তাআলার যিকিরই তার জন্য লাভজনক।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩৯৭৪]আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াযীদ ইবনি খুনাইসের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদীসটি জেনেছি।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক দাবিদারের দাবি পূরণ করিতে হইবে

২৪১৩. আবু জুহাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালমান [ফারসী] ও আবুদ দারদা [রাদি.]-এর মধ্যে ভাইয়ের সম্পর্ক তৈরী করে দেন। কোন একদিন আবুদ দারদা [রাদি.]-এর সাথে সালমান [রাদি.] দেখা করিতে আসেন। তখন তিনি তার স্ত্রী উম্মুদ দারদাকে খুবই সাধারণ জামা-কাপড় পরে থাকাবস্থায় দেখিতে পেয়ে প্রশ্ন করেন, আপনি এরূপ সাধারণ পোশাকে কেন? তিনি বলিলেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার তো দুনিয়ার কিছু প্রয়োজন নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আবুদ দারদা [রাদি.] এরই মধ্যে বাড়ী ফিরে আসলেন এবং তার [মেহমানের] সামনে খাবার পরিবেশন করে বলিলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি রোযা রেখেছি। তিনি বলিলেন, আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমি খাব না। তারপর তিনি খাবার খেলেন। রাত গভীর হলে আবুদ দারদা [রাদি.] নামাজ আদায় করার জন্য উঠেন। সালমান [রাদি.] তাকে বলিলেন, এখন ঘুমান। সুতরাং তিনি ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি পুনরায় নামাজ আদায় করিতে উঠলে এবারো তিনি বলিলেন, ঘুমিয়ে থাকুন [রাত অনেক বাকী]। কাজেই তিনি ঘুমিয়ে গেলেন। তারপর ফজরের সময় ঘনিয়ে এলে সালমান [রাদি.] তাকে বলিলেন, এখন উঠুন। তারপর দুজনেই উঠে [তাহাজ্জুদ] নামাজ আদায় করিলেন। তারপর তিনি বলিলেন, আপনার উপর আপনার দেহের প্রাপ্য [অধিকার] আছে এবং আপনার রবের প্রাপ্য [অধিকার] আছে, মেহমানের প্রাপ্য [অধিকার] আছে এবং আপনার পরিবারের [অধিকার] আছে। অতএব, প্রত্যেক হাকদারকে তার প্রাপ্য [অধিকার] প্রদান করুন। তারপর তারা এ ঘটনাটি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন। তিনি বললেনঃ সালমান ঠিকই বলেছে।

সহীহ্‌ , মুখতাসার বুখারী [৯৬৫], মুসলিম।আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহিহ। আবুল উমাইস-এর নাম উতবা ইবনি আবদুল্লাহ। তিনি আবদুর রাহমান ইবনি আবদুল্লাহ আল-মাসঊদীর ভাই।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ আইশা ও মুআবিয়া [রাদি.]-এর পত্রালাপ

২৪১৪. জনৈক মাদীনাবাসী হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সময় উম্মুল মুমিনীন আইশা [রাদি.]-কে মুআবিয়া [রাদি.] লিখে পাঠান ঃ আমাকে লিখিতভাবে কিছু উপদেশ দিন, তবে তা যেন দীর্ঘ না হয়। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, আইশা [রাদি.] মুআবিয়া [রাদি.]-কে লিখলেন ঃ আপনাকে সালাম। তারপর এই যে, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ তাআলার সন্তুষ্টি আকাঙ্খা করে তা মানুষের অসন্তুষ্টি হলেও, মানুষের দুঃখ-কষ্ট হইতে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ্‌ তাআলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি আশা করে আল্লাহ্ তাআলাকে অসন্তুষ্ট করে হলেও, আল্লাহ্‌ তাআলা তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন। আপনাকে আবারো সালাম।

সহীহ্‌ , সহীহাহ্‌ [২৩১১], তাখরীজ তাহাভীয়া [২৭৮]।মুহাম্মাদ ইবনি ইয়াহ্‌ইয়া-মুহাম্মাদ ইবনি ইউসুফ হইতে, তিনি সুফিয়ান সাওরী হইতে, তিনি হিশাম ইবনি উরওয়া হইতে, তিনি উরওয়া হইতে, তিনি আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি মুআবিয়াকে চিঠি লিখলেন.. উপরোক্ত হাদীসের মতোই, তবে তা মারফূ হিসাবে নয়।দুনিয়াবী ভোগবিলাস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply