মিনা ও আরাফায় অবস্থান করা এবং অন্যান্য নিয়মাবলী

মিনা ও আরাফায় অবস্থান করা এবং অন্যান্য নিয়মাবলী

মিনা ও আরাফায় অবস্থান করা এবং অন্যান্য নিয়মাবলী >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ২৪ঃ হজ্জের বিধি-বিধানসমূহ (২৯৯৫-৩০৯৫)

১.পরিচ্ছেদঃ মিনা সম্বন্ধে আলোচনা
২.পরিচ্ছেদঃ তারবিয়ার দিন ঈমাম নামাজ কোথায় আদায় করিবে?
৩..পরিচ্ছেদঃ মিনা হইতে ভোরে আরাফার দিকে গমন করা
৪.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিকে যাওয়ার সময় তাকবীর পাঠ করা
৫.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিন সম্বন্ধে যা বলা হইয়াছে
৬.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিন রোজা রাখার নিষেধাজ্ঞা
৭.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিনে অপরাহ্ণে দ্রুত [উকুফের উদ্দেশ্যে] বের হওয়া
৮.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় তালবিয়া পাঠ করা
৯.পরিচ্ছেদঃ সালাতের পূর্বে আরাফায় খুতবা প্রদান
১০.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিনে উটের উপর থেকে [পিঠে বসে] খুতবা দেয়া
১১.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় খুতবা সংক্ষেপ করা
১২.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় জুহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করা
১৩.পরিচ্ছেদঃ আরাফার ময়দানে দুআয় দুই হাত উত্তোলন করা
১৪.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় অবস্থান করা ফরয
১৫.পরিচ্ছেদঃ আরাফা হইতে স্থিরতা সহকারে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
১৬..পরিচ্ছেদঃ আরাফা হইতে পথচলা কিরূপে হইবে?
১৭.পরিচ্ছেদঃ আরাফা থেকে প্রস্থানের পর [পথিমধ্যে] অবতরণ করা

১.পরিচ্ছেদঃ মিনা সম্বন্ধে আলোচনা

২৯৯৫. ইমরান আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] আমার কাছে আসলেন, তখন আমি মক্কার পথে একটি গাছের নীচে অবস্থানরত ছিলাম। তিনি আমাকে বলিলেন ঃ আপনাকে এ গাছের নীচে কিসে অবতরণ করালো? আমি বললাম ঃ এর ছায়া আমকে এখানে অবতরণ করিতে আকৃষ্ট করেছে। তখন আবদুল্লাহ বলিলেন ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ যখন তুমি মিনার দুটি পাহাড়ের মধ্যস্থলে থাকিবে এবং তিনি তাহাঁর হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করিলেন, তখন সেখানে একটি উপত্যকা দেখিতে পাবে। যাকে সুররাবাহ বলা হয় — হারিসের বর্ণনায় আছে একে সুরার বলা হয়, তাতে একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষ রয়েছে, যাহার নীচে সত্তরজন নাবীর নাভী কর্তন করা হইয়াছে [জন্মগ্রহন করিয়াছেন]।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস

২৯৯৬. মুহাম্মাদ ইবনি হাতিম ইবনি নুআয়ম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ ইবনি ইবরাহীম তায়মী তাহাদের মধ্য হইতে একজন লোকের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, যাহার নাম আবদুর রহমান ইবনি মুআয [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনায় আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। আল্লাহ আমাদের কান খুলে দিলেন এবং আমরা তিনি যা বলেছিলেন, তা শুনিয়াছিলাম অথচ আমরা ছিলাম আমাদের মনযিলে [তাঁবুতে]। নাবী [সাঃআঃ] তাহাদেরকে হজ্জের আহ্‌কাম শিক্ষা দিচ্ছিলেন। যখন তিনি কংকর নিক্ষেপ করার [আলোচনা] পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন বলিলেন ঃ খাযাফ [অর্থাৎ দু আঙ্গুলের ফাঁকে রেখে নিক্ষেপ করা হয় এমন] ছোট কংকর [নিক্ষেপ করিবে]। আর মুহাজিরদের মসজিদের সামনের অংশে অবস্থান নিতে আদেশ করিলেন এবং আনসারদের মসজিদের শেষভাগে অবস্থানের আদেশ করিলেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২.পরিচ্ছেদঃ তারবিয়ার দিন ঈমাম নামাজ কোথায় আদায় করিবে?

২৯৯৭. আবদুর রহমান ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি সাল্লাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] -কে বললাম ঃ আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে যা কিছু বুঝেছেন [ও স্মরণ রেখেছেন] তা থেকে আমাকে বলুন, তিনি তারবিয়ার দিন জুহরের নামাজ কোথায় আদায় করেন? তিনি বলিলেন ঃ মিনায়। আমি বললাম ঃ নফর [মিনা হইতে প্রত্যাবর্তনের] প্রস্থানের দিন আসর কোথায় আদায় করেন? তিনি বলিলেন ঃ আবতাহে [অর্থাৎ মুহাস্‌সাবে]।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩.পরিচ্ছেদঃ মিনা হইতে ভোরে আরাফার দিকে গমন করা

২৯৯৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ভোরে মিনা হইতে আরাফার দিকে গমন করলাম, আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তালবিয়া পড়ছিল; আর কেউ কেউ তাকবীর [তাশরীফ] বলছিল১।

{১} অর্থাৎ যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে পঠনীয় [আরবি] যাকে তাকবীরে তাশরীফ বলা হয়।হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৯৯৯. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন ঃ আমরা সকাল বেলা মিনা হইতে আরাফার দিকে গমন করলাম। আমাদের কেউ কেউ ছিল তালবিয়া পাঠকারী, আর কেউ কেউ ছিল তাকবীর পাঠকারী।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিকে যাওয়ার সময় তাকবীর পাঠ করা

৩০০০. ইসহাক ইবনি ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

মুহাম্মাদ ইবনি আবু বকর আস-সাকাফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন ঃ আমরা আনাস [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে সকাল বেলা মিনার দিকে যাওয়ার সময় আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ আপনারা এই দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে তালবিয়ায় কি করিতেন? তিনি বলিলেন ঃ যে তালবিয়া পড়তো, সে তালবিয়া পড়তো; তাকে কেউ বাধা দিত না; আর যে তাকবীর বলতো; সে তাকবীর বলতো, তাকেও কেউ বাধা দিত না।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস ।পরিচ্ছেদঃ সে [আরাফার] দিন তালবিয়া পাঠ করা

৩০০১। মুহাম্মাদ ইবনি আবু বকর আস-সাকাফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আরাফার [দিনের] ভোরে আনাস [রাঃআঃ] -কে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ এই দিনে তালবিয়া সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? তিনি বলিলেন ঃ এ সফরে আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এবং তাহাঁর সাহাবীদের সঙ্গে সফর করি, তাঁদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করিতেন, আর কেউ তাকবীর বলিতেন। তাঁদের মধ্যে কেউ তার সাথীর [প্রতিপক্ষের] কাজে আপত্তি করত না।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিন সম্বন্ধে যা বলা হইয়াছে

৩০০২. তারিক ইবনি শিহাব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী উমার [রাঃআঃ] -কে বলিলেন ঃ যদি [আরবী] [আজ তোমাদেরকে দীনকে পরিপূর্ণতা দান করলাম . . . .] আয়াতটি আমাদের উপর নাযিল হতো, তাহলে আমরা ঐ দিনকে ঈদের [জাতীয় উৎসবের] দিন হিসেবে পালন করতাম। উমার [রাঃআঃ] বলেন ঃ আমি জানি যেদিনটিতে ঐ আয়াতটি নাযিল হইয়াছে, আর যে রাতে তা অবতীর্ণ হইয়াছে। তা ছিল জুমুআর রাত, আর তখন আমরা ছিলাম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আরাফাতে।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০০৩. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করেন ঃ এমন কোন দিন নেই, যে দিন আরাফার দিন হইতে অধিক বান্দা অথবা বান্দীকে মহান মহিয়ান আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তিনি সেদিন [বান্দার] নিকটবর্তী হন এবং তাহাদের নিয়ে ফেরেশতাহাদের কাছে তাহাদের [মর্যাদার] ব্যাপারে গর্ব করে বলেন ঃ এরা কী কামনা করে? আবু আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন ঃ এই হাদিসের রাবী [ইউনুস] সম্ভবত ঃ ইউনুস ইবনি ইউসুফ, যাহার কাছ থেকে ঈমাম মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিন রোজা রাখার নিষেধাজ্ঞা

৩০০৪. উকবা ইবনি আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ আরাফার দিন, কুরবানীর দিন, এবং আইয়্যামে তাশরীক মুসলিমদের ঈদের দিন; এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিনে অপরাহ্ণে দ্রুত [উকুফের উদ্দেশ্যে] বের হওয়া

৩০০৫. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবদুল মালিক ইবনি মারওয়ান হাজ্জাজ ইবনি ইউসুফকে লিখিত আদেশ পাঠালেন, তিনি যেন হজ্জের ব্যাপারে ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর বিরোধিতা না করেন। তারপর যখন আরাফার দিন আসলো, ইবনি উমার [রাঃআঃ] সূর্য ঢলে পড়ার পর তার কাছে আগমন করিলেন এবং আমিও তাহাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাহাঁর তাঁবুর পর্দার নিকট এসে আওয়াজ করে বললেনঃ এ ব্যক্তি কোথায়? তখন হাজ্জাজ তাহাঁর কাছে বের হইয়া আসলেন। তখন তাহাঁর গায়ে কুসুম রংয়ের একটি চাদর ছিল। তিনি বললেনঃ হে আবু আবদুর রহমান! কী ব্যাপার? তিনি বললেনঃ যদি সুন্নত পালনের ইচ্ছা রাখেন, তা হলে এই অপরাহ্নেই বের হইতে হয়। হাজ্জাজ বললেনঃ এ মুহূর্তেই? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। হাজ্জাজ বললেনঃ আমি গায়ে একটু পানি ঢেলেই আপনার নিকট আসছি। এরপর তিনি অপেক্ষা করলে হাজ্জাজ বের হলেন। তারপর আমার এবং আমার পিতার মাঝে চলতে লাগলেন। আমি বললামঃ আপনি যদি সুন্নত মত আমল করার ইচ্ছা রাখেন, তা হলে খুতবাকে সংক্ষেপ করবেন এবং আরাফার উকুফ [অবস্থান] তাড়াতাড়ি করবেন। তিনি আমার কথা শুনে ইবনি উমার [রাঃআঃ]-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, যেন একথা তিনি তার থেকেও শুনতে পান। যখন ইবনি উমার [রাঃআঃ] তা দেখিতে পেলেন তখন তিনি বললেনঃ সে [সালিম] ঠিকই বলেছেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় তালবিয়া পাঠ করা

৩০০৬. আহমাদ ইবনি উসমান ইবনি হাকীম আউদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি হইতে বর্ণিতঃ

সাঈদ ইবনি জুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ]-এর সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেনঃ কী হলো লোকদেরকে তো তালবিয়া পাঠ করিতে শুনছি না? আমি বললামঃ মুআবিয়া [রাঃআঃ]-এর ভয়ে। এরপর ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] তাহাঁর তাঁবু হইতে বের হলেন এবং বললেনঃ

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ

তারা তো আলী [রাঃআঃ]-এর প্রতি বিদ্বেষবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে।হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯.পরিচ্ছেদঃ সালাতের পূর্বে আরাফায় খুতবা প্রদান

৩০০৭. সালামা ইবনি নুবায়ত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আরাফায় সালাতের পূর্বে লাল বর্ণের উটের উপর থেকে খুতবা দিতে দেখেছি।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০.পরিচ্ছেদঃ আরাফার দিনে উটের উপর থেকে [পিঠে বসে] খুতবা দেয়া

৩০০৮. সালামা ইবনি নুবায়ত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ আমি আরাফার দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে লাল বর্ণের উটের উপর বসে খুতবা দিতে দেখেছি।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় খুতবা সংক্ষেপ করা

৩০০৯. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আরাফার দিন আবদুল্রাহ্ ইবনি উমার [রাঃআঃ] হাজ্জাজ ইবনি ইউসুফের নিকট আসলেন, তখন সূর্য ঢলে পড়েছিল, আর আমি তাহাঁর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ যদি আপনি সুন্নত তরীকা মত আমল করিতে চান, তা হলে এই অপরাহ্নে বেরিয়ে পড়ুন। তিনি বললেনঃ এখনই? আবদুল্রাহ্ বললেনঃ হ্যাঁ। সালিম বললেনঃ আমি হাজ্জাজকে বললামঃ যদি আপনি আজ সুন্নত মুতাবিক আমল করিতে চান, তাহলে খুতবা সংক্ষেপ করুন এবং নামাজ তাড়াতাড়ি আদায় করুন। তখন আবদুল্রাহ্ ইবনি উমার [রাঃআঃ] বললেনঃ সে ঠিকই বলেছে।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১২.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় জুহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করা

৩০১০. আবদুল্রাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকল নামাজই যথা সময় আদায় করিতেন, তবে আরাফায় ও মুযদালিফায় এর ব্যতিক্রম করিতেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৩.পরিচ্ছেদঃ আরাফার ময়দানে দুআয় দুই হাত উত্তোলন করা

৩০১১. আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি আরাফায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে একই বাহনে [সাওয়ার] ছিলাম। তিনি দুআয় দুই হাত উত্তোলন করিলেন। এমন সময় তাহাঁর উট তাঁকে নিয়ে একদিকে হেলে গেল, ফলে তার নাকের রশি পড়ে যেতে লাগলো, তিনি তাহাঁর এক হাতে তা ধরে ফেললেন, এ সময় তাহাঁর অন্য হাত উঠানোই ছিল।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১২. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ [হজ্জে] কুরায়শরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো [আরাফায় যেত না] এবং তাহাদেরকে বলা হতো হুমছ। আর আরবের অন্যান্য লোকেরা আরাফায় অবস্থান করতো। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তআলা তাহাঁর নাবীকে আরাফায় অবস্থান করিতে এরপর সেখান হইতে রওনা হইতে আদেশ করিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করলেনঃ

ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ} [البقرة: 199]

অর্থঃ তোমরা সেখান [আরাফা] থেকে প্রত্যাবর্তন করিবে, যেখান থেকে লোকেরা ফিরে যায়।]

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১৩. জুবায়র ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আমার একটি উট হারিয়ে ফেলি। আমি আরাফার দিন আরাফায় তা তালাশ করিতে বের হলাম এবং নাবী [সাঃআঃ] -কে দেখলাম, সেখানে দাঁড়ানো। আমি বললামঃ তাহাঁর অবস্থা কি? ইনিও তো কুরায়শদের একজন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১৪. ইযায়ীদ ইবনি শায়বান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমরা আরাফায় [মূল] অবস্থান ক্ষেত্র হইতে দূরে একস্থানে অবস্থানরত ছিলাম। এমন সময় ইবনি মিরবা আনসারী [রাঃআঃ] আমাদের কাছে এসে বললেনঃ আমি তোমাদের কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রেরিত। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মাশাইরে১ অবস্থান কর, কেননা তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীম [আঃ]-এর উত্তরাধিকারের উপর রয়েছ।

{১} মাশাইর-হজ্জের আহ্কাম ও ইবাদত আদায়ের স্থানসমূহ। -অনুবাদক

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১৫. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমার পিতা বলেছেন, আমরা জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-এর নিকট গিয়ে তাঁকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের হাদীস শোনালেন যে, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আরাফার সবটাই মাওফিক বা অবস্থানের স্থান।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৪.পরিচ্ছেদঃ আরাফায় অবস্থান করা ফরয

৩০১৬. আবদুর রহমান ইবনি ইয়ামুর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর কাছে কয়েকজন লোক এসে তাঁকে হজ্জ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হজ্জ হলো আরাফা [য়ে অবস্থান] -ই। অতএব যে ব্যক্তি আরাফার পরবর্তী রাত পেয়েছে মুযদালিফার রাতের [দিনের] ফজর উদয়ের পূর্বে, তার হজ্জ পূর্ণ হইয়াছে।১

{১} অর্থাৎ তাঁকে হজ্জ কাযা করিতে হইবে না, তবে তার ফরয তাওয়াফ অবশিষ্ট রয়েছে। তা অবশ্যই আদায় করিতে হইবে। নাসাঈ শরীফের পাদটীকা। -অনুবাদক

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১৭. ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফা থেকে প্রত্যাবর্তন করিলেন তখন উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] তাহাঁর পেছনে সওয়ার ছিলেন, তাঁকে নিয়ে উটনী পা তুলে চলতে লাগলো। তখন তিনি তাহাঁর দুইহাত এতটুকু উত্তোলন করেছিলেন যে, তা তাহাঁর মাথার উপরে উঠেনি। এ অবস্থায় তিনি শান্তভাবে চলতে থাকলেন মুযদালিফায় পৌঁছা পর্যন্ত।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০১৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফা হইতে প্রস্থান করিলেন, তখন আমি তাহাঁর পেছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি তাহাঁর সওয়ারীর লাগাম এমনভাবে টেনে ধরলেন যাতে তার দুই কান হাওদার সম্মুখভাগে লাগার উপক্রম হলো। আর তখন তিনি বলছিলেনঃ হে লোক সকল! শান্ত এবং ধীর গতিতে চলো। কেননা, উটকে দ্রুত চালনা করে [তাকে কষ্ট দেয়ার] মধ্যে কোন পুণ্য নেই।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫.পরিচ্ছেদঃ আরাফা হইতে স্থিরতা সহকারে প্রত্যাবর্তনের আদেশ

৩০১৯. ইসমাঈল ইবনি উমাইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছেন যে, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফা হইতে মুযদালিফার দিকে চললেন, তিনি তাহাঁর উটের লাগাম টেনে ধরলেন, তাহাঁর মাথা হাওদার পালানের মধ্যবর্তী অংশকে ষ্পর্শ করছিল। আর তিনি আরাফার সন্ধ্যায় বলছিলেনঃ [তোমরা] স্থিরতা ও প্রশান্তিসহকারে চলবে।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০২০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] সূত্রে ফযল ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যিনি [হজ্জের সময়] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পেছনে একই বাহনে সওয়ার ছিলেন, তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফায় সন্ধ্যায় এবং মুযদালিফায় সকালে লোকদেরকে বললেনঃ যখন তারা [আরাফা ও মুযদালিফা হইতে] প্রস্থান করে শান্তভাবে চলো। তিনি তাহাঁর উটনীর লাগাম টেনে রাখছিলেন। যখন তিনি মুহাস্সিরে -যা মিনার একটি অংশ প্রবেশ করিলেন, তখন বললেনঃ তোমরা আংগুলে ছুঁড়ে মারার মত কংকর [পাথরের ছোট ছোট টুকরা] সংগ্রহ কর। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তালবিয়া পড়তে থাকলেন, জামরাতুল আকাবায় কংকর মারা করা পর্যন্ত।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০২১. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফা পরিত্যাগের সময় ধীর শান্তভাবে চলছিলেন। তিনি লোকদেরকেও শান্তভাবে চলতে আদেশ করিলেন। আর তিনি মুহাসসির১ উপত্যকা দ্রুত অতিক্রম করিলেন, আর লোকদেরকে জামরায় আংগুলে ছুঁড়ে মারার মত [ছোট ছোট] কংকর মারার আদেশ করিলেন।

{১} মুহাসসির -এস্থানে হস্তিবাহিনীর হাতি থমকে গিয়েছিল।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০২২. জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] আরাফা হইতে রওনা হলেন, তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা শান্তভাবে চল। তিনি হাত দ্বারা এভাবে ইঙ্গিত করছিলেন। আর রাবী আইয়ুব তাহাঁর হাতের তালু দ্বারা আকাশের দিকে ইঙ্গিত করিলেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি

১৬.পরিচ্ছেদঃ আরাফা হইতে পথচলা কিরূপে হইবে?

৩০২৩. উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

বিদায় হজ্জে নাবী [সাঃআঃ]-এর পথচলা সম্বন্ধে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেনঃ তিনি আনাক [মাধ্যম ধরনের চাল] অবলম্বন করিতেন। যখন তিনি [পথের] উন্মুক্ততা দেখিতে পেতেন, তখন তিনি নস পদ্ধতিতে [দ্রুত] চলতেন। নস বলা হয় আনাক-এর তুলানায় দ্রুত চলাকে।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৭.পরিচ্ছেদঃ আরাফা থেকে প্রস্থানের পর [পথিমধ্যে] অবতরণ করা

৩০২৪. উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী [সাঃআঃ] যখন আরাফা হইতে প্রত্যাবর্তন করিলেন, তখন তিনি পাহাড়ের মোড়ের দিকে গেলেন। উসামা [রাঃআঃ] বলেনঃ আমি তাঁকে বললামঃ আপনি কি মাগরিবের নামাজ আদায় করবেন? তিনি বললেনঃ নামাজ আদায় করার স্থান [ও সময়] তোমার সামনে।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০২৫. উসামা ইবনি যায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্রাহ্ [সাঃআঃ] সে পাহাড়ের মোড়ে [ঢালু স্থানে] অবতরণ করেন, যে স্থানে [বনূ উমাইয়ার] আমীরগণ অবতরণ করেন। তিনি সেখানে পেশাব করে হালকাভাবে উযু করেন [একবার একবার অঙ্গ ধৌত করেন অথবা পানি স্বল্প ব্যয় করেন।] আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! নামাজ। তিনি বললেনঃ [এরাতে যে সময় নামাজ আদায় করিতে হয়, সে] নামাজ [ও তার সময়] তোমাদের সামনে। যখন আমরা মুযদালিফায় আসলাম, তখন শেষ ব্যক্তিটিও তার উটের পিঠ হইতে নামার পূর্বে তিনি নামাজ আদায় করিলেন।

হজ্জের বিধান হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply