আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে

আরাফায় অবস্থান প্রসঙ্গে >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ৪

অধ্যায়ঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ

২৫৯২. মুহাম্মাদ ইবনি আবু বাকর আস্ সাক্বাফী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একবার আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তখন তারা উভয়ে মিনা হইতে সকালে আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলেন। আপনারা এ আরাফার দিনে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে কি করিতেন? তখন তিনি বললেন, আমাদের মধ্যে যারা তালবিয়াহ্ পাঠ করার পাঠ করতো, এজন্যে তাদের তা হইতে নিষেধ করা হতো না এবং যারা তাকবীর ধ্বনি দিতো এতেও নিষেধ করা হতো না।

{১} সহীহ : বোখারী ১৬৫৯, মুসলিম ১২৮৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১২১৪, আহমাদ ১৩৫২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬২৭১, ইবনি হিব্বান ৩৮৪৭। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৫৯৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি, মিনা সম্পূর্ণটাই কুরবানীর স্থান। তাই তোমরা তোমাদের বাসায় কুরবানী কর। আমি এ স্থানে [আরাফায়] অবস্থান করেছি, আর আরাফাহ্ সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান এবং আমি এ জায়গায় অবস্থান করেছি, আর মুযদালিফা সম্পূর্ণটাই অবস্থানের স্থান।{১}

{১} সহীহ : মুসলিম ১৩৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২০১৩৮। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৫৯৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা তাহাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে মালায়িকার [ফেরেশতাগণের] কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কি চায়? [অর্থাৎ- যা চায় আমি তাদেরকে তাই দেবো]। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ১৩৪৮, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ১৭০৫, ইবনি মাজাহ ৩০১৪, সহীহাহ্ ২৫৫১, সহীহ আল জামি ৫৭৯৬। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৫৯৫. আমর ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি সফ্ওয়ান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

যাকে ইয়াযীদ ইবনি শায়বান বলা হতো। ইয়াযীদ [রাদি.] বলেন, আমরা আরাফাতে আমাদের [পূর্ব পুরুষদের] নির্দিষ্ট স্থানে ছিলাম। আমর বলেন, এ স্থানটি ছিল ইমামের [রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর] স্থান হইতে অনেক দূরে। ইয়াযীদ [রাদি.] বলেন, এমন সময় আমাদের কাছে ইবনি মিরবা আল আনসারী এসে বললেন, আমি তোমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর পক্ষ হইতে প্রেরিত প্রতিনিধি। তিনি [সাঃআঃ] তোমাদেরকে তোমাদের অবস্থানেই [ইবাদাতগাহেই] থাকার জন্য বলেছেন। কারণ তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের সুন্নাতের উপরেই রয়েছ{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯১৯, তিরমিজি ৮৮৩, নাসায়ী ৩০১৪, ইবনি মাজাহ ৩০১১, সহীহ আল জামি ৪৩৯৪। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৫৯৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আরাফার সম্পূর্ণ স্থানই অবস্থানস্থল এবং মিনার সম্পূর্ণ স্থানই কুরবানীর স্থান, মুযদালিফার সম্পূর্ণটাই অবস্থানস্থল এবং মক্কার সকল পথই রাস্তা ও কুরবানীর স্থান।{১}

{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ১৯৩৭, দারিমী ১৯২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৬০৩, সহীহ আল জামি ৪৫৩৬। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ

২৫৯৭. খালিদ ইবনি হাওযাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী সাঃআঃ-কে উটের উপর চড়ে আরাফার দিনে দু পাদানীতে পা রেখে সওয়ার অবস্থায় ভাষণ দিতে দেখেছি।{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯১৭, আহমাদ ২০৩৩৫। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৫৯৮. আমর ইবনি শুআয়ব হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর পিতা শুআয়ব হইতে, তিনি তাহাঁর দাদা {আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ সকল দুআর শ্রেষ্ঠ দুআ হলো আরাফার দিনের দুআ আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ্ [যিকির] যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করিয়াছেন তা হলো, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর [অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাহাঁর কোন শারীক নেই। তাহাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সকল শক্তির আঁধার।]। ]{১}

{১} হাসান লিগয়রিহী : তিরমিজি ৩৫৮৫, সহীহ আত তারগীব ১৫৩৬, সহীহ আল জামি ৩২৭৪, সহীহাহ্ ১৫০৩। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি

২৫৯৯. ঈমাম মালিক হইতে বর্ণীতঃ

ইবনি উবায়দুল্লাহ হইতে লা- শারীকা লাহূ বাক্য পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।]{১}

{১} জইফ : মুয়াত্ত্বা মালিক। কারণ এর সানাদটি মুরসাল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৬০০. তলহা ইবনি উবায়দুল্লাহ ইবনি কারীয [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ শয়তানকে আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন এত অপমানিত, এত লাঞ্ছিত, এত বেশি ঘৃণিত ও এত বেশী রাগান্বিত হইতে দেখা যায় না। কেননা শয়তান এদিন দেখিতে থাকে বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমাত নাযিল হচ্ছে, তাদের বড় বড় গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। তবে এটা বাদরের দিন দেখে গিয়েছিল। কেউ জিজ্ঞেস করলো, বাদরের দিন কি দেখা গিয়েছিল [হে আল্লাহ রসূল!]। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, সেদিন সে নিশ্চিতভাবে শয়তান দেখেছিল, জিবরীল [আঃ] মালায়িকাকে [ফেরেশতাগণকে] কাতারবন্দী করিতে দেখেছিল।{১}

{১} জইফ : মুয়াত্ত্বা মালিক ৯৬২, শুআবুল ঈমান ৩৭৭৫, শারহুস্ সুন্নাহ ১৯৩০, জইফ আত তারগীব ৭৩৯। কারণ এর সানাদটি মুরসাল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৬০১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং হাজীদের ব্যাপারে মালায়িকাহ্র [ফেরেশতাদের] সম্মুখে গর্ববোধ করেন এবং বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা আমার কাছে আসছে এলোমেলো চুলে, ধূলাবালি গায়ে, আহাজারী করিতে করিতে দূর-দূরান্ত হইতে উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম। তখন মালায়িকাহ্ বলেন, হে রব! অমুক বান্দাকে তো বড় গুনাহগার বলে অভিহিত করা হয় এবং অমুক পুরুষ ও নারীকেও। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাদেরকেও ক্ষমা করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, আরাফার দিনের চেয়ে এত বেশি জাহান্নাম হইতে মুক্তি দেবার মতো আর কোন দিন নেই।{১}

1] জইফ : শারহুস্ সুন্নাহ ১৯৩১, শুআবুল ঈমান ৪০৬৮, যঈফাহ্ ৬৭৯। কারণ এর সনদে আবুয্ যুবায়র একজন মুদাল্লিস রাবী।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৬০২. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা [আরাফার দিন] মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং নিজেদেরকে তারা বাহাদুর ও অভিজাত বলে অভিহিত করতো। আর সমস্ত আরব গোত্র আরাফার ময়দানে অবস্থান গ্রহণ করতো। অতঃপর ইসলাম আসার পর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর নবী সাঃআঃ-কে আদেশ করিলেন, আরাফার ময়দানে গিয়ে সাধারণ মানুষদের সাথে অবস্থান নিতে, তারপর সেখান থেকে ফিরে আসতে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ ব্যাপারটিকে এভাবেই বলেছেন, সুম্মা আফীযূ মিন হায়সু আফা-যান্না-সু [অর্থাৎ- অতঃপর তোমরা ফিরে আসো, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ ফিরে আসে।]। {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৪৫২০, মুসলিম ১২১৯, আবু দাউদ ১৯১০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৫০। আরাফায় অবস্থান -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৩. আব্বাস ইবনি মিরদাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ আরাফার দিন বিকালে নিজের উম্মাতের [হাজীদের] জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেন। উত্তর দেয়া হলো, অত্যাচারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দিলাম। কেননা আমি মাযলূমের পক্ষ হয়ে যালিমকে পাকড়াও করে হাক্ব আদায় করব। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, হে আমার রব! আপনি ইচ্ছা করলে মাযলূমকে জান্নাত দিতে পারেন এবং যালিমকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু সেদিন বিকালে তাহাঁর দুআ কবূল হলো না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি [সাঃআঃ] যখন মুযদালিফায় ভোরে উঠলেন, তখন আবার সেই দুআ করিলেন। তখন তিনি [সাঃআঃ] যা চেয়েছিলেন তা তাঁকে দেয়া হলো। রাবী আব্বাস বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হেসে ফেললেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি [সাঃআঃ] মুচকী হাসলেন। এ সময় আবু বাকর ও উমার [রাদি.] বললেন, আমাদের পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এটা তো এমন একটা সময় যে, আপনি কোন সময়ই হাসতেন না। কিসে আপনাকে হাসালো? আল্লাহ তাআলা আপনাকে আরও হাসিখুশি রাখুন। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহর শত্রু ইবলীস যখন জানতে পারলো যে, আল্লাহ আমার দুআ কবূল করিয়াছেন এবং উম্মাত [হাজীদেরকে] ক্ষমা করে দিয়েছেন তখন সে মাটি উঠিয়ে নিজের মাথায় ছিটাতে লাগলো আর বলিতে লাগলো, হায় আমার কপাল! হায় আমার দুর্ভাগ্য! ইবলীসের এ অস্থিরতা দেখেই আমায় হাসি এসেছে।{১}

{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ৩০১৩, জইফ আত তারগীব ৭৪২। কারণ এর সনদে আব্দুল্লাহ ও তার পিতা কিনানাহ্ দুজনই মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply