আযান ও ইকামতের শব্দগুলো কতবার, ফাযীলাত, জবাব ও দুআ

আযান ও ইকামতের শব্দগুলো কতবার, ফাযীলাত, জবাব ও দুআ

আযান ও ইকামতের শব্দগুলো কতবার, ফাযীলাত, জবাব ও দুআ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (২৭-৪৬)=২০টি

২৭. অনুচ্ছেদঃ আযানের প্রবর্তন
২৮. অনুচ্ছেদঃ আযানের তারজী করা
২৯. অনুচ্ছেদঃ ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা সম্পর্কে
৩০. অনুচ্ছেদঃ ইকামাতের শব্দগুলো দুইবার বলা প্রসঙ্গে
৩১. অনুচ্ছেদঃ আযানের শব্দগুলো থেমে থেমে স্পষ্টভাবে বলা
৩২. অনুচ্ছেদঃ আযান দেওয়ার সময় কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢোকানো
৩৩. অনুচ্ছেদঃ ফযরের নামাযের ওয়াক্তে তাসবীব করা প্রসঙ্গে
৩৪. অনুচ্ছেদঃ যে আযান দিয়েছে সে ইক্বামাত দিবে
৩৫. অনুচ্ছেদঃ বিনা ওযূতে আযান দেয়া মাকরূহ
৩৬. অনুচ্ছেদঃ ঈমামই ইকামাত দেবার বেশি হকদার
৩৭. অনুচ্ছেদঃ রাত থাকতে [ফযরের] আযান দেওয়া সম্পর্কে
৩৮. অনুচ্ছেদঃ আযান হওয়ার পর মসজিদ হইতে চলে যওয়া মাকরূহ
৩৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে থাকাকালে আযান দেওয়া
৪০. অনুচ্ছেদঃ আযান দেওয়ার ফাযীলাত
৪১. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যিম্মাদার এবং মুয়াযযিন আমানাতদার
৪২. অনুচ্ছেদঃ আযান শুনে যা বলিতে হইবে
৪৩. অনুচ্ছেদঃ আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা মাকরূহ
৪৪. অনুচ্ছেদঃ মুয়াযযিনের আযান শুনে যে দুআ পাঠ করিতে হইবে
৪৫. অনুচ্ছেদঃ পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের পরিপূরক
৪৬. অনুচ্ছেদঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ব্যর্থ হইবে না

২৭. অনুচ্ছেদঃ আযানের প্রবর্তন

১৮৯. মুহাম্মাদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [যাইদ] বলেন, যখন সকাল হল, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলাম। তাঁকে [আমার] স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেনঃ “এটা নিশ্চয়ই বাস্তব [সত্য] স্বপ্ন। তুমি বিলালের সাথে যাও, কেননা তার কণ্ঠস্বর তোমার চেয়ে উঁচু এবং লম্বা। তাঁকে বলে দাও যা তোমাকে বলা হয়েছে এবং এগুলো দিয়ে সে আযান দেবে।” যাইদ [রাদি.] বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] যখন নামাযের জন্য বিলালের আযান শুনতে পেলেন, তখন তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি নিজের চাদর টানতে টানতে এবং এই বলিতে বলিতে আসলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সেই সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য সহযোগে পাঠিয়েছেন! বিলাল যেমন বলেছে আমি তেমনই স্বপ্নে দেখেছি। রাবী বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এটা আরো প্রবল হল।

হাসান। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭০৬]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। অপর এক সূত্রে এ হাদীসটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা হয়েছে এবং তাতে আযানের শব্দ দুই দুই বার এবং ইকামাতের শব্দ এক একবার উল্লেখ রয়েছে। এই হাদীসটি ছাড়া আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ ইবনি আবদি রাব [রাদি.] হইতে আর কোন সহীহ হাদীস বর্ণনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আব্বাদ ইবনি তামীমের চাচা আব্দুল্লাহ ইবনি যাইদ ইবনি আসিম হইতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

১৯০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুসলমানরা যখন হিজরাত করে মাদীনায় আসলেন, তখন তারা আন্দাজ করে নামাজের জন্য একটা সময় ঠিক করে নিতেন এবং সে অনুসারে সমবেত হইতেন। নামাযের জন্য কেউ আহ্বান করত না। একদিন তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করিলেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করিলেন, খৃষ্টানদের মত একটি ঘন্টা বাজানো হোক। আবার কতেকে বলিলেন, ইয়াহূদীদের মত শিংগা বাজানো হোক। রাবী বলেন, উমার [রাদি.] বলিলেন, নামাযের জন্য ডাকতে তোমরা কি একজন লোক পাঠাতে পার না?

রাবী বলেন, অতএব রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ হে বিলাল! ওঠো এবং নামাযের জন্য আহ্বান কর। সহীহ্‌-বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনি উমার হইতে গারীব। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮. অনুচ্ছেদঃ আযানের তারজী করা

১৯১. আবু মাহযুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে নিজের নিকট বসিয়ে আযানের প্রতিটি হরফ এক এক করে শিখিয়েছেন। [অধস্তন রাবী] ইবরাহীম বলেন, আমাদের আযানের মত। বিশর বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আমার সামনে পুনঃপাঠ করুন। তিনি তারজী সহকারে তা বলিলেন।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭০৮]। আবু ঈসা বলেনঃ আবু মাহযুরা [রাদি.]-এর আযান সম্পর্কিত হাদীসটি সহীহ। এ হাদীসটি তাহাঁর নিকট হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। মক্কার পবিত্র ভূমিতে এ নিয়মেই আযান দেওয়া হয়। ঈমাম শাফি এ মতের সমর্থক। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৯২. আবু মাহযুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] নিজে তাঁকে ঊনিশ বাক্যে আযান এবং সতের বাক্যে ইক্বামাত শিক্ষা দিয়েছেন।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭০৯]। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবু মাহযুরা এর নাম সামুরা ইবনি মিয়ার। কিছু মনীষী আযানের ব্যাপারে এ মত গ্রহণ করিয়াছেন। অপর এক বর্ণনায়, আবু মাহযুরা [রাদি.] ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলিতেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২৯. অনুচ্ছেদঃ ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা সম্পর্কে

১৯৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বিলাল [রাদি.]-কে আযানের শব্দগুলো দুইবার এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো এক একবার বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭২৯-৭৩০]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আনাস [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক সাহাবা, তাবিঈন, ঈমাম মালিক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এই মতের সমর্থক [ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলিতে হইবে]। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩০. অনুচ্ছেদঃ ইকামাতের শব্দগুলো দুইবার বলা প্রসঙ্গে

১৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আযান ও ইকামাতের বাক্যগুলো জোড়ায় জোড়ায় ছিল [দুই দুইবার বলা হত]।

সনদ দুর্বল।আবু ঈসা বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি যাইদের হাদীসটি ওয়াকী বর্ণনা করিয়াছেন আমাশ হইতে তিনি আমর ইবনি মুররাহ হইতে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা হইতে, তিনি বলেছেন ঃ মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]–এর সাহাবাগণ বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি যাইদ [রাঃ] আযান স্বপ্নে দেখেছেন। আর শুবা বর্ণনা করিয়াছেন আমর ইবনি মুররাহ হইতে তিনি আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা আব্দুল্লাহ ইবনি যায়িদ হইতে যে, তিনি আযান স্বপ্নে দেখেছেন। প্রথম বর্ণনাটির চেয়ে পরবর্তী বর্ণনাগুলো বেশী সহীহ। আব্দুর রহমান ইবনি আবী লাইলা আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদ হইতে হাদীস শুনেন নাই। কতক বিদ্বান বলেছেন, আযান ও ইকামাতের শব্দগুলো দুই দুইবার বলিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও কুফাবাসীগণ এইমতেরই সমর্থক। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আবী লাইলা হলেন মুহাম্মাদ ইবনি আব্দির রহমান ইবনি আবী লাইলা। তিনি কুফার কাজী ছিলেন। তিনি তার পিতার নিকট কোন হাদীস শুনেন নাই। তিনি এক লোকের বরাতে তার পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩১. অনুচ্ছেদঃ আযানের শব্দগুলো থেমে থেমে স্পষ্টভাবে বলা

১৯৫. জাবির ইবনি আব্দিল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিলাল [রাদি.]–কে বললেনঃ হে বিলাল! যখন তুমি আযান দিবে, ধীরস্থিরভাবে ও দীর্ঘ স্বরে আযান দিবে এবং যখন ইকামাত দিবে তাড়াতাড়ি ও অনুচ্চস্বরে ইকামাত দিবে। তোমার আযান ও ইকামাতের মাঝখানে এতটুকু সময় ফুরসত দিবে যেন খাবার গ্রহণকারী তার খাবার হইতে, পানকারী তার পান হইতে এবং পেশাব-পায়খানারত ব্যক্তি তার পায়খানা-পেশাব হইতে অবসর হইতে পারে। তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত নামাযে দাঁড়াবে না।

খুবই দুর্বল। ইরওয়া [২২৮], হাদীসের বর্ণিত, তোমরা দাঁড়িওনা অংশটুকু সহীহ। যাহা ৫১২ নং হাদীসেরও অংশ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

১৯৬. আবদ ইবনি হুমাইদ হইতে বর্ণীতঃ

আবদ ইবনি হুমাইদ বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি ইউনুস ইবনি মুহাম্মাদ হইতে তিনি আব্দুল মুনয়িম হইতে …… পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।

-দেখুন পূর্বের হাদীস।আবু ঈসা বলেনঃ জাবিরের এই হাদীসটি এই সূত্র ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে আমরা জানতে পারিনি। যা আব্দুল মুনয়িম কর্তৃক বর্ণিত। আর এই সনদ সূত্র অপরিচিত। আব্দুল মুনয়িম বাসরার অধিবাসী একজন রাবী। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৩২. অনুচ্ছেদঃ আযান দেওয়ার সময় কানের মধ্যে আঙ্গুল ঢোকানো

১৯৭. আওন ইবনি জুহাইফা [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আবু জুহাইফা] বলেন, আমি বিলাল [রাদি.]-কে আযান দিতে দেখলাম এবং তাঁকে এদিক সেদিক ঘুরতে ও মুখ ঘুরাতে দেখলাম। তাহাঁর [দুই হাতের] দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর রঙ্গীন তাঁবুর মধ্যে ছিলেন। [রাবী বলেন] আমার ধারণা, তিনি [আবু জুহাইফা] বলেছেন, এটা চামড়ার তাঁবু ছিল। বিলাল [রাদি.] ছোট একটা বর্শা নিয়ে সামনে আসলেন এবং তা বাতহার শিলাময় যমিনে গেড়ে দিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এটা সামনে রেখে নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর সামনে দিয়ে কুকুর এবং গাধা চলে যেত। তাহাঁর গায়ে লাল চাদর ছিল। আমি যেন তাহাঁর পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা দেখিতে পাচ্ছি। সুফিয়ান বলেন, আমার মনে হয় এটা ইয়ামানের তৈরী চাদর ছিল।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭১১]।আবু ঈসা বলেনঃ জুহাইফার হাদীসটি হাসান সহীহ। মণীষীগণ আযানের সময় মুয়াযযিনের কানে আঙ্গুল দেওয়া মুস্তাহাব বলেছেন। ঈমাম আওযাঈ ইক্বামাতের সময়ও কানে আঙ্গুল দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আবু জুহাইফা [রাদি.]-এর নাম ওয়াহব ইবনি আব্দুল্লাহ আস্‌-সুয়াঈ। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৩. অনুচ্ছেদঃ ফযরের নামাযের ওয়াক্তে তাসবীব করা প্রসঙ্গে

১৯৮. বিলাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছেনঃ ফযরের নামাজ ছাড়া অন্য কোন নামাযে তাসবীব করো না।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭১৫]। এ অনুচ্ছেদ আবু মাহযুরা [রাদি.] হইতে বর্ণনাকৃত হাদীসও আছে। আবু ঈসা বলেন, আমরা শুধু আবু ইসরাঈলের সূত্রে বিলাল [রাদি.]-এর হাদীসটি জানতে পেরেছি। অথচ আবু ইসরাঈল হাকামের নিকট এ হাদীসটি কখনও শুনেননি। বরং তিনি হাসান ইবনি উমারার মাধ্যমে হাকামের নিকট হইতে এ হাদীসটি সংগ্রহ করিয়াছেন। আবু ইসরাঈলের নাম ইসমাঈল ইবনি আবু ইসহাক। তিনি হাদীস বিশারদদের মতে নির্ভরযোগ্য রাবী নন।

তাসবীব শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মত পার্থক্য আছে। ইবনিল মুবারাক ও আহমাদের মতে, ফযরের আযানের আসসালাতু খাইরুম মিনান্‌ নাওম বাক্যটিকে তাসবীব বলা হয়। ইসহাকের মতে, আযানের পর যদি লোকেরা আসতে দেরি করে তবে আযান ও ইকামাতের মাঝখানে ক্বাদ কামাতিস্‌ সালাহ, হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ বলে লোকদের ডাকার নাম হল তাসবীব। রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর পর লোকেরা এটা নতুনভাবে চালু করেছে বিধায় ইসহাকের উল্লেখিত এ তাসবীবকে আলিমগণ মাকরূহ বলেছেন।

ইবনিল মুবারাক ও আহমাদ তাসবীবের [উপরের উল্লেখিত] যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটাই নির্ভুল এবং সহীহ। ফজরের আযানে এ তাসবীব করিতে হইবে। প্রকৃতপক্ষে একেই তাসবীব বলা হয়। আর আলিমগণ এ তাসবীবকেই পছন্দ করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি ভোরের নামাযের সময় আস্‌-সালাতু খাইরুম মিনান্‌ নাওম বলে [লোকদের] ডাকতেন। মুজাহিদ হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর সাথে কোন এক মাসজিদে গেলাম। সেখানে আগেই আযান হয়ে গেছে। আমরা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিলাম, এমন সময় মুয়াযযিন তাসবীব শুরু করে দিল। তা শুনা মাত্রই ইবনি উমার [রাদি.] এ বলিতে বলিতে মাসজিদ হইতে বের হয়ে আসলেনঃ “এ বিদআতীর কাছ থেকে চলে আস।” তিনি সেখানে নামাজ আদায় করিলেন না। পরবর্তী সময়ে লোকেরা যে তাসবীব আবিস্কার করেছে, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] এটাকে খুবই মন্দ জানতেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ যে আযান দিয়েছে সে ইক্বামাত দিবে

১৯৯. যিয়াদ ইবনি হারিস আস-সুদাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে ফজরের নামাযের আযান দিতে বলিলেন। আমি আযান দিলাম। বিলাল [রাদি.] ইকামাত দিতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] বললেনঃ “সুদাঈ আযান দিয়েছে, আর যে আযান দিবে ইকামাতও সে-ই দিবে”।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭১৭]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে, আবু ঈসা বলেনঃ যিয়াদের হাদীসটি আমরা ইফরিকীর হাদীসের মাধ্যমেই জানতে পারি। অথচ ইফরিকী হাদীস বিশারদদের মতে দুর্বল রাবী। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনি সাঈদ ও অন্যরা তাঁকে দুর্বল মনে করিয়াছেন। আহমাদ বলেছেন, আমি ইফরিকীর হাদীস লিখি না। আবু ঈসা বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈলকে দেখেছি তিনি তাঁকে মজবুত রাবী বলে সমর্থন করিয়াছেন এবং তিনি বলেছেন, ইফরিকী একজন প্রিয়ভাজন রাবী। বেশিরভাগ আলিমদের মত হল, যে আযান দিবে সে-ই ইকামাত দিবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ বিনা ওযূতে আযান দেয়া মাকরূহ

২০০. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ বিনা ওযূতে কেউ যেন আযান না দেয়।

যঈফ, ইরওয়া [২২২] এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২০১. ইবনি শিহাব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেছেন, বিনা ওযূতে কেউ যেন নামাযের আযান না দেয়।

যঈফ, প্রাগুক্ত। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি পূর্বের হাদীস হইতে বেশী সহীহ। ইবনি ওয়াহব্- আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর হাদীসটি মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেন নি। এটা ওয়ালীদ ইবনি মুসলিমের হাদীসের চেয়ে বেশি সহীহ। যুহরী কখনও আবু হুরাইরার নিকট হাদীস শুনেননি। বিনা ওযূতে আযান দেওয়া উচিত কি-না সে সম্পর্কে আলিমদের মাঝে মতের অমিল আছে। ঈমাম শাফি এবং ইসহাক এটাকে মাকরূহ বলেছেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারাক ও আহমদ বিনা ওযূতে আযান দেবার অনুমতি দিয়েছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ ঈমামই ইকামাত দেবার বেশি হকদার

২০২. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুয়াযযিন [তাহাঁর জন্য] প্রতীক্ষা করিতে থাকতেন এবং ইক্বামাত দিতেন না। যখন তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [তাহাঁর ঘর হইতে] বেরিয়ে আসতে দেখিতেন তখনই নামাযের ইক্বামাত দিতেন।

হাসান। সহীহ্‌ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৫৪৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ জাবির ইবনি সামুরার এ হাদীসটি হাসান সহিহ। এই সনদ ব্যতীত সিমাক হইতে ইসরাঈলের কোন হাদীস জানা নেই। বিভিন্ন বিদ্বান এরূপই বলেছেন যে, মুয়াযযিন আযানের অধিকারী এবং ঈমাম ইক্বামাতের অধিকারী [ অর্থাৎ আযান মুয়াযযিনের ইচ্ছায় এবং ইমামের ইচ্ছায় ইক্বামাত দেয়া হইবে] । এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ রাত থাকতে [ফযরের] আযান দেওয়া সম্পর্কে

২০৩. সালিম [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়। অতএব তোমরা ইবনি উম্মু মাকতূমের আযান না শুনা পর্যন্ত পানাহার কর।

সহিহ। ইরওয়া হাদীস নং-[২১৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে ইবনি মাসউদ, আইশা, উনাইসা, আনাস, আবু যার ও সামুরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.]-এর বর্ণনাকৃত হাদীসটি হাসান সহীহ।রাত থাকতে আযান দেওয়ার ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। তাহাদের কেউ কেউ বলেছেন, মুয়াযযিন রাতে সুবহি সাদিকের আগে আযান দিলে তা জায়িয এবং এটা পুনর্বার দেওয়ার দরকার নেই। ঈমাম মালিক, শাফিঈ, ইবনিল মুবারাক, আহমাদ ও ইসহাকের এটাই মত। অন্য দল বলেছেন, রাত থাকতে আযান দিলে পুনরায় আযান দিতে হইবে। সুফিয়ান সাওরী এই মত প্রকাশ করিয়াছেন। হাম্মাদ আইউবের সূত্রে, তিনি নাফির সূত্রে, তিনি ইবনি উমারের নিকট হইতে বর্ণনা করেছেনঃ “একদা বিলাল [রাদি.] রাত থাকতে আযান দিলেন। রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] তাঁকে আবার আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। [তিনি বলিলেন] লোকেরা ঘুমিয়ে পড়েছে ।” আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] ও অন্যরা নাফির মাধ্যমে ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট হইতে রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ]-এর যে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন সেটাই সহীহ। বর্ণনাটি নিম্নরূপঃ রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বলেনঃ “বিলাল রাত থাকতে আযান দেয়। অতএব তোমরা [আবদুল্লাহ] ইবনি উম্মি মাকতূমের আযান না শুনা পর্যন্ত পানাহার করিতে থাক ।” আবদুল আযীয ইবনি আবু রাওয়াদ নাফির সূত্রে বর্ণনা করেছেনঃ “উমার [রাদি.]-এর মুয়াযযিন রাত থাকতেই আযান দিলেন। উমার [রাদি.] তাকে আবার আযান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন ।” এই বর্ণনাটিও সহীহ নয় কেননা নাফি এবং উমারের মাঝখানের একজন রাবী ছুটে গেছে। সম্ভবতঃ হাম্মাদ ইবনি সালামা এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমারের বর্ণনাটিই সহীহ। একাধিক রাবী নাফির সূত্রে ইবনি উমারের এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। যুহরী সালিমের সূত্রে, তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় ।” আবু ঈসা বলেনঃ হাম্মাদ হইতে বর্ণিত হাদীসটি যদি সহীহ হয় তাহলে এই হাদীসের কোন অর্থ হয় না যে, রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় ।” বিলাল [রাদি.] যখনি ফযর উদয় হওয়ার পূর্বে আযান দিলেন এবং রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] যদি তাঁকে আবার আযান দেয়ার নির্দেশ দিতেন তাহলে তিনি কখনো এ কথা বলিতেন না যে, “বিলাল রাত থাকতে আযান দেয় ।” আলী ইবনিল মাদানী বলেন, হাম্মাদ ইবনি সালামা হইতে, তিনি আইউব হইতে, তিনি নাফি হইতে, তিনি ইবনি উমার হইতে, তিনি রাসূলুল্লাহু [সাঃআঃ] হইতে- বর্ণনাকৃত হাদীসটি সুরক্ষিত নয়। হাম্মাদ ইবনি সালামা তা বর্ণনা করিতে গিয়ে গোলমাল করিয়াছেন। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ আযান হওয়ার পর মসজিদ হইতে চলে যওয়া মাকরূহ

২০৪. আবু শাসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আসরের নামাযের আযান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ হইতে বেরিয়ে চলে গেল। আবু হুরাইরা [রাদি.] বলেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ অমান্য করিল।

হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭৩৩], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণনাকৃত হাদীসও রয়েছে। আবু হুরাইরার হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবা ও তাহাদের পরবর্তীদের মতে আযান হয়ে যাওয়ার পর কোন ব্যক্তির মসজিদ হইতে বেরিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। হ্যাঁ, যদি ওযূ না থাকে কিংবা খুব দরকারী কাজ থাকে তবে ভিন্ন কথা। ইবরাহীম নাখঈ বলেন, মুয়াযযিনের ইক্বামাতের আগ পর্যন্ত বের হওয়া জায়িজ। আবু ঈসা বলেনঃ আমাদের মতে, যার প্রয়োজন রয়েছে শুধু সে বের হইতে পারে। আবু শাসার নাম সুলাইমান ইবনি আসওয়াদ। আর তিনি আশআস ইবনি আবী শাসার পিতা। এই হাদীস আশআস ও তার পিতা আবু শাসা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

৩৯. অনুচ্ছেদঃ সফরে থাকাকালে আযান দেওয়া

২০৫. মালিক ইবনি হুওয়াইরিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার এক চাচাত ভাই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে আসলাম। তিনি আমাদের বললেনঃ “যখন তোমরা উভয়ে সফর করিবে তখন আযান দেবে, ইক্বামাত বলবে, অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বড় সে তোমাদের ঈমামতি করিবে”।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯৭৯], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। বেশীরভাগ আলিম এ হাদীসটি অনুযায়ী সফর অবস্থায় আযান দেওয়ার কথা বলেছেন এবং এটা পছন্দনীয় মনে করিয়াছেন। কিছু সংখ্যক আলিম বলেছেন, শুধু ইক্বামাতই যথেষ্ট। আযান তো সে ব্যক্তিই দেবে যে মানুষকে সমবেত করিতে চায়। প্রথম মতটিই বেশি সহীহ। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক এ মতেরই প্রবক্তা। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪০. অনুচ্ছেদঃ আযান দেওয়ার ফাযীলাত

২০৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি নেকীর আকাঙ্খায় একাধারে সাত বছর আযান দেবে তার জন্য জাহান্নামের আগুন হইতে নাজাত নির্ধারিত আছে।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭২৭]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি মাহঊদ, সাওবান, মুআবিয়া, আনাস, আবু হুরাইরা ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি আব্বাসের হাদীসটি গারীব। আবু তুমাইলা এর নাম ইয়াহইয়া ইবনি ওয়াযিহ, আবু হামযার নাম মুহাম্মাদ ইবনি মাইমূন। হাদীসের একজন রাবী জাবির ইবনি ইয়াযীদকে মুহাদ্দিসগণ হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ ও আবদুর রহমান ইবনি মাহদী তাকে পরিত্যাগ করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, আমি জারূদের সূত্রে এবং তিনি ওয়াকীর সূত্রে শুনেছেন, যদি জাবির আল-জুফী না হত তাহলে কূফাবাসীরা [আবু হানীফা ও তাহাঁর মতানুসারীগণ] হাদীসবিহীন অবস্থায় এবং যদি হাম্মাদ না হইতেন তাহলে ফিক্‌হবিহীন অবস্থায় থাকতেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৪১. অনুচ্ছেদঃ ঈমাম যিম্মাদার এবং মুয়াযযিন আমানাতদার

২০৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ঈমাম হলো [নামাযের] যামিন এবং মুয়াযযিন হল আমানাতদার। হে আল্লাহ! ঈমামকে সৎপথ দেখাও এবং মুয়াযযিনকে মাফ কর।

সহিহ। মিশকাত-হাদীস নং-[৬৬৩], ইরওয়া হাদীস নং-[২১৭], সহীহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৫৩০]। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আয়িশাহ্‌ সাহল ইবনি সাদ ও উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরার হাদীসটি আমাশের সূত্রে একাধিক রাবী বর্ণনা করিয়াছেন। এটা আবু সালিহ হইতে আয়িশাহ্‌ [রাদি.]-এর সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আবু ঈসা বলেনঃ আমি আবু যুরআকে বলিতে শুনিয়াছি, আবু হুরাইরার নিকট হইতে বর্ণিত হাদীসটি বেশী সহীহ। কিন্তু ঈমাম বুখারী আয়িশাহ্‌ নিকট হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে বেশি সহীহ বলেছেন। কিন্তু আলী ইবনিল মাদীনী এর কোনটিকেই শক্তিশালী মনে করেন না। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪২. অনুচ্ছেদঃ আযান শুনে যা বলিতে হইবে

২০৮. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমরা আযান শুনতে পাবে, তখন মুয়াযযিন যা বলে তোমরাও তাই বল।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭২০], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আবু রাফি, আবু হুরাইরা, উম্মু হাবীবা, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবদুল্লাহ ইবনি রাবীআহ্, আয়েশা, মুআয ইবনি আনাস ও মুআবিয়া [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু সাঈদের হাদীসটি হাসান সহীহ। আরো কয়েকটি সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে মালিকের বর্ণনাটিই বেশি সহীহ। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৩. অনুচ্ছেদঃ আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা মাকরূহ

২০৯. উসমান ইবনি আবুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট হইতে সর্বশেষ যে ওয়াদা নিয়েছিলেন তা ছিলঃ আমি একজন মুয়াযযিন রাখব যে আযানের বিনিময়ে মাহিনা নেবে না।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭১৪]। আবু ঈসা বলেনঃ উসমানের হাদীসটি হাসান সহিহ। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ আযান দিয়ে মাহিনা গ্রহণ করা মাকরূহ বলেছেন। তাঁরা এটাই পছন্দ করিয়াছেন যে, মুয়াযযিন আযানের বিনিময়ে নেকীর প্রত্যাশী হইবেন। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ মুয়াযযিনের আযান শুনে যে দুআ পাঠ করিতে হইবে

২১০ সাদ ইবনি আবু ওয়াককাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে,

وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً

“ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি-মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ্ তাআলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭২১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান, সহীহ গারীব। উপরিউক্ত সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৫. অনুচ্ছেদঃ পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের পরিপূরক

২১১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে,

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

“হে আল্লাহ্! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের তুমিই প্রভু! তুমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে নৈকট্য ও মর্যাদা দান কর এবং তাঁকে তোমার ওয়াদাকৃত প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও” তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত ওয়াজিব হইবে।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৭২২], বুখারী। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ এবং [মুনকাদিরের বর্ণনায়] গারীব। মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদিরের নিকট হইতে শুয়াইব ইবনি আবী হামযাহ ব্যাতীত অন্য কেউ বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবু হামযাহ এর নাম দীনার। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪৬. অনুচ্ছেদঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ব্যর্থ হইবে না

২১২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফেরত দেয়া হয় না।

সহীহ, মিশকাত-হাদীস নং-[৬৭১], ইরওয়া হাদীস নং-[২৪৪], সহীহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৫৩৪]। আবু ঈসা বলেনঃ আনাসের হাদীসটি হাসান সহিহ। ইবনি ইসহাকও তাহাঁর সনদ পরম্পরায় আনাস [রাদি.] হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আযান ও ইকামতের শব্দগুলো -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


by

Comments

Leave a Reply