আবু হুরাইরাহ আদ্-দুসী [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু হুরাইরাহ আদ্-দুসী [রাদি.]-এর ফযিলত

আবু হুরাইরাহ আদ্-দুসী [রাদি.]-এর ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩৫. অধ্যায়ঃ আবু হুরাইরাহ আদ্-দুসী [রাদি.]-এর ফযিলত

৬২৯০. আবু কাসীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, আমি আমার মাকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতাম, তখন তিনি মুশরিকা ছিলেন। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানালে তখন তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অনেক অপছন্দনীয় মহে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দাওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তারপর আমি তাকে আজ দাওয়াত দেয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি সর্বদাই অপছন্দ করি। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন তিনি আবু হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করেন। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ

 اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ

“হে আল্লাহ! আবু হুরাইরার মাকে হিদায়াত দান করো।” তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর দুআর কারণে আমি খুশী মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌঁছলাম তখন তার দরজা বন্ধ দেখিতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বলিলেন, আবু হুরায়রা্! একটু দাঁড়াও [থামো]। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি [আমার মা] গোসল করিলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ীর দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বলিলেন, “হে আবু হুরায়রা্! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তাহাঁর বান্দা ও রসূল।” তিনি বলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। তারপর তাহাঁর নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দুআ কবূল করিয়াছেন এবং আবু হুরাইরার মাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করিয়াছেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করিলেন ও তাহাঁর প্রশংসা করিলেন। আর বলিলেন, উত্তম।
তিনি বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]। আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মুমিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করেন এবং তাঁদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ

اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا – يَعْنِي أَبَا هُرَيْرَةَ وَأُمَّهُ – إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِينَ وَحَبِّبْ إِلَيْهِمُ الْمُؤْمِنِينَ

“হে আল্লাহ! তোমার এ বান্দা আবু হুরাইরাকে এবং তাহাঁর মাকে মুমিন বান্দাদের নিকট প্রিয়পাত্র করে দাও এবং তাঁদের নিকটও মুমিন বান্দাদের প্রিয়পাত্র করে দাও।” তারপর এমন কোন মুমিন বান্দা পয়দা হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে কিংবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালবাসেনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭১, ইসলামিক সেন্টার- ৬২১৫]

৬২৯১. আরাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি যে, তোমরা বলছ যে, আবু হুরায়রা্ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে অধিক হাদীস রিওয়ায়াত করছে। আর আল্লাহই হিসাব গ্রহণকারী। আমি ছিলাম একজন নিরীহ লোক। আমি সর্বদা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সেবায় থাকতাম [খেয়ে না খেয়ে তাহাঁর সাহচর্যে থাকতাম] যখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করিতেন এবং আনসারগণ তাদের ধন-সম্পদের সংরক্ষণ ও হিফাযাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতেন। একবার রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, যে লোক তার বস্ত্রের আঁচল বিছিয়ে দিবে সে আমার নিকট হইতে যা কিছু শুনবে তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদীস রিওয়ায়াত করিলেন। তারপর আমি সে বস্ত্রটা আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম। তখন হইতে আমি তাহাঁর কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি তার কিছুই ভুলে যাইনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭২, ইসলামিক সেন্টার- ৬২১৬]

৬২৯২. আরজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে আবু হুরাইরাহ [রাদি.]-এর সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

কিন্তু মালিক ইবনি আনাস আবু হুরায়রা্ [রাদি.]-এর উক্তি পর্যন্ত তাহাঁর হাদীসের রিওয়ায়াত শেষ করিয়াছেন এবং তিনি তাহাঁর হাদীসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে “যে তার বস্ত্র বিছাবে” হইতে বর্ণনার শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬২১৭]

৬২৯৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ


তিনি বলেন, [হে উরওয়াহ্!] তোমার নিকট কি বিস্ময়কর বলে মনে হয় না যে, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] আমার কক্ষে একদিকে বসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে হাদীস রিওয়ায়াত করছেন এবং তিনি তা আমাকে শুনাচ্ছেন? কিন্তু আমি সে সময় তাসবীহ পাঠে [নাফল সলাতে] মগ্ন ছিলাম। আর তিনি আমার তাসবীহ পাঠের ফারেগ হওয়ার আগেই উঠে চলে গেলেন। যদি আমি তখন তাঁকে পেতাম তাহলে তাকে প্রতিবাদ করতাম। কারণ, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এ রকম তাড়াতাড়ি করে কথাবার্তা বলিতেন না যেমন তোমরা বলছ। ইবনি শিহাব ও ইবনি মুসাইয়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন যে, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেছেন, লোকেরা বলাবলি করত যে, আবু হুরায়রা্ বেশি সংখ্যক হাদীস রিওয়ায়াত করেন এবং আল্লাহই [এর প্রামাণ্যতা সম্পর্কে] অধিক অবহিত। তিনি বলেন যে, ব্যক্তিরা এ মর্মে আরও নালিশ করত যে, মুহাজির ও আনসারগণ আবু হুরাইরার ন্যায় বেশি বেশি হাদীস রিওয়ায়াত করেননি কেন? এর প্রত্যুত্তরে আমি তোমাদের নিকট বলিতে চাই যে, আমার আনসার ভাইয়েরা তো ফসলাদির কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন। আর আমার মুহাজির ভাইয়েরা হাট-বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে মগ্ন থাকতেন। আর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সুহবত আমার জন্য আবশ্যকীয় করে নিতাম এবং খেয়ে না খেয়ে তাহাঁর সাহচর্যে থাকতাম। তাঁরা যখন উপস্থিত না থাকতেন তখন আমি উপস্থিত থাকতাম এবং তাঁরা ভুলে যেতেন আমি মুখস্থ করতাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] একদা বললেনঃতোমাদের মাঝে কে আছে, যে তার কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে দিবে আর আমার হাদীস গ্রহণ করিবে? এরপর তা আপন বক্ষে স্পর্শ করিবে তাহলে সে যা শুনবে কখনো ভূলবে না। আমি আমার চাদর পেতে দিলাম এবং তিনি তাহাঁর হাদীস বর্ণনার ইতি টানলেন। তারপর আমি চাদরখানি আমার বুকে জড়িয়ে নিলাম। সেদিন থেকে আমি কোন ব্যাপারেই ভুলে যাইনি যা তিনি বলেছেন। [সবটুকুই মনে রয়েছে]। আল্লাহ তাহাঁর কিতাবে দুটি আয়াত যদি অবতীর্ণ না করিতেন তাহলে আমি কখনো হাদীস রিওয়ায়াত করতাম না। আয়াত দুটি এই-

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى

“আমি যে স্পষ্ট নমুনা ও পথ নির্দেশ মানুষের জন্য নাযিল করেছি, কিতাবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার পরও যারা তা লুকিয়ে রাখে আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত দেন এবং অভিসম্পাতকারীরাও অভিশাপ দেয়; কিন্তু যারা তাওবাহ্ করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, এ সমস্ত ব্যক্তি তারাই যাদের প্রতি আমি ক্ষমা করে দিব। কেননা আমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু”- [সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২: ১৫৯-১৬০]
{দ্রষ্টব্য হাদীস ২৩৯৭}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬২০৯]

৬২৯৪.সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব ও আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ


আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলেছেন, তোমরা বলাবলি করছ যে, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হইতে বেশি সংখ্যক হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। হাদীসের অবশিষ্টাংশ তাঁদের বর্ণিত হাদীসের অবিকল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬২১৯]

Comments

One response to “আবু হুরাইরাহ আদ্-দুসী [রাদি.]-এর ফযিলত”

Leave a Reply