আবু বকর (রা) এর মর্যাদা এবং তার বিষয়ে নাবী (সাঃ) এর উক্তি

আবু বকর (রা) এর মর্যাদা এবং তার বিষয়ে নাবী (সাঃ) এর উক্তি

আবু বকর (রা) এর মর্যাদা এবং তার বিষয়ে নাবী (সাঃ) এর উক্তি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬২, সাহাবিগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (৩-৬)=৩১টি

৬২/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আবু বাক্‌র (রাদি.) এর দরজা বাদ দিয়ে সব দরজা বন্ধ করে দাও।
৬২/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর পরেই আবু বকরের মর্যাদা।
৬২/৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম।
৬২/৬. অধ্যায়ঃ

৬২/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আবু বকর (রাদি.) এর দরজা বাদ দিয়ে সব দরজা বন্ধ করে দাও।

এ বিষয়ে ইবনু আব্বাস (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

৩৬৫৪. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একদা সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুৎবার কালে বলিলেন, আল্লাহ তাহাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাহাঁর নিকট রক্ষিত নিমাতসমূহ এ দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দান করিয়াছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ বেছে নিয়েছে। রাবী বলেন তখন আবু বকর (রাদি.) কাঁদতে লাগলেন। তাহাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। নাবী (সাঃআঃ) এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে (তাতে কান্নার কী কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ছিলেন এবং আবু বকর (রাদি.) আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ দিয়ে, তার সঙ্গ দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যক্তি হল আবু বকর (রাদি.)। আমি যদি আমার রব ছাড়া অন্য কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে অবশ্যই আবু বকরকে করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক ভালোবাসা আছে। মাসজিদের দিকে আবু বাকরের দরজা ছাড়া অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮২, ইঃফাঃ ৩৩৮৯)

৬২/৪. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর পরেই আবু বকরের মর্যাদা।

৩৬৫৫. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যুগে সাহাবীগণের পারস্পরিক মর্যাদা নির্ণয় করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবু বকর (রাদি.)-কে তাহাঁরপর উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)-কে, অতঃপর উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাদি.)-কে।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৩, ইঃফাঃ ৩৩৯০)

৬২/৫. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম।

আবু সাঈদ (রাদি.) এটা বর্ণনা করিয়াছেন।

৩৬৫৬. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমি আমার উম্মাতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার ভাই ও আমার সাহাবী।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৪, ইঃফাঃ ৩৩৯১)

৩৬৫৭. আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলূল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, আমি কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে তাকেই আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই শ্রেয়তম। কুতায়বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে ঐরূপ বর্ণনা করেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৫, ইঃফাঃ ৩৩৯২)

৩৬৫৮. আবদুল্লাহ ইবনু আবু মুলায়কা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কুফাবাসীগণ দাদার (অংশ) সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইবনু যুবায়রের নিকট পত্র পাঠালেন, তিনি বলিলেন, ঐ মহান ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এ উম্মাতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে তাকেই করতাম, [অর্থাৎ আবু বকর (রাদি.)] তিনি দাদাকে মিরাসের ক্ষেত্রে পিতার সম মর্যাদা দিয়েছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৬, ইঃফাঃ ৩৩৯৩)

৬২/৬. অধ্যায়ঃ

৩৬৫৯. জুবায়ের ইবনু মুতঈম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল। তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বলিলেন। স্ত্রীলোকটি বলিল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কী করব? এ কথা দ্বারা স্ত্রীলোকটি নাবী (সাঃআঃ)-এর মৃত্যুর প্রতি ইশারা করেছিল। তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি আমাকে না পাও তাহলে আবু বাক্‌রের নিকট আসবে।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৭, ইঃফাঃ ৩৩৯৪)

৩৬৬০. আম্মার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে এমন অবস্থায় দেখেছি যে তাহাঁর সঙ্গে মাত্র পাঁচজন গোলাম, দুজন মহিলা এবং আবু বকর (রাদি.) ছাড়া অন্য কেউ ছিল না।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৮, ইঃফাঃ ৩৩৯৫)

৩৬৬১. আবু দারদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় আবু বকর (রাদি.) পরনের কাপড়ের একপাশ এমনভাবে ধরে আসলেন যে তার দু হাঁটু বেরিয়ে পড়ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের এ সাথী এই মাত্র কারো সঙ্গে ঝগড়া করে আসছে। তিনি সালাম করিলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার এবং উমার ইবনু খাত্তাবের মাঝে একটি বিষয়ে কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে। আমিই প্রথমে কটু কথা বলেছি। অতঃপর আমি লজ্জিত হয়ে তার কাছে মাফ চেয়েছি। কিন্তু তিনি মাফ করিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন আমি আপনার নিকট হাযির হয়েছি। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তোমাকে মাফ করবেন, হে আবু বকর (রাদি.)! এ কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন। অতঃপর উমার (রাদি.) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আবু বকর (রাদি.)-এর বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করিলেন, আবু বকর কি বাড়িতে আছেন? তারা বলিল, না। তখন উমার (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট চলে আসলেন। (তাকে দেখে) নাবী (সাঃআঃ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আবু বকর (রাদি.) ভীত হয়ে নতজানু হয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমিই প্রথমে অন্যায় করেছি। এ কথাটি তিনি দুবার বলিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রাসুলরূপে প্রেরণ করিয়াছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবু বকর বলেছে, আপনি সত্য বলছেন। তাহাঁর জান মাল সবকিছু দিয়ে আমার সহানুভূতি দেখিয়েছে। তোমরা কি আমার সম্মানে আমার সাথীকে অব্যাহতি দিবে? এ কথাটি তিনি দুবার বলিলেন। অতঃপর আবু বকর (রাদি.)-কে আর কখনও কষ্ট দেয়া হয়নি।

(আঃপ্রঃ ৩৩৮৯, ইঃফাঃ ৩৩৯৬)

৩৬৬২. আমর ইবনু আস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলিলেন, আয়েশাহ! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বলিলেন, তাহাঁর পিতা (আবু বকর)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বলিলেন, উমার ইবনু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯০, ইঃফাঃ ৩৩৯৭)

৩৬৬৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি; এক সময় এক রাখাল তার বকরীর পালের নিকট ছিল। এমন সময় একটি নেকড়ে বাঘ আক্রমণ করে পাল হইতে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল নেকড়ে বাঘের পিছু ধাওয়া করে বকরীটি ছিনিয়ে আনল। তখন বাঘটি তাকে উদ্দেশ্য করে বলিল, তুমি বকরীটি ছিনিয়ে নিলে? হিংস্র জন্তুর আক্রমণের দিন কে তাকে রক্ষা করিবে, যেদিন তার জন্য আমি ছাড়া কোন রাখাল থাকবে না। এক সময় এক লোক একটি গাভীর পিঠে আরোহণ করে সেটিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তাকে লক্ষ্য করে বলিল, আমি এ কাজের জন্য সৃষ্ট হয়নি। বরং আমি কৃষি কাজের জন্য সৃষ্ট হয়েছি। একথা শুনে সকলেই বিস্ময়ের সঙ্গে বলিতে লাগল, “সুবহানাল্লাহ”! নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন আমি, আবু বকর এবং উমার ইবনু খাত্তাব এ কথা বিশ্বাস করি।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯১, ইঃফাঃ ৩৩৯৮)

৩৬৬৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখিতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে আমি কূপ হইতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ ইচ্ছা করিলেন। অতঃপর বালতিটি ইবনু আবু কুহাফা নিলেন এবং এক বা দুবালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর উমার ইবনু খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল। [১]

(আঃপ্রঃ ৩৩৯২, ইঃফাঃ ৩৩৯৯)

[১] অত্র হাদীসে নাবী (সাঃআঃ)-এর পর শাসকের ধারাবাহিকতা বর্ণিত হয়েছে এবং উমার (রাদি.) শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদী শাসক হইবেন তার প্রমাণ রয়েছে।

৩৬৬৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সঙ্গে পরনের কাপড় টাখনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। এ শুনে আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমার অজ্ঞাতে কাপড়ের একপাশ কোন কোন সময় নীচে নেমে যায়। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তো ফখরের সঙ্গে তা করছ না। মূসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, আবদুল্লাহ (রাদি.) কি যে ব্যক্তি তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলল বলেছেন? সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করিতে শুনিয়াছি।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৩, ইঃফাঃ ৩৪০০)

৩৬৬৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি কোন জিনিসের জোড়া জোড়া আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করিবে তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল দরজা হইতে আহবান করা হইবে। বলা হইবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাই উত্তম। যে ব্যক্তি সলাত সম্পাদনকারী হইবে তাঁকে সলাতের দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য ডাকা হইবে। যে ব্যক্তি জিহাদকারী হইবে তাকে জিহাদের দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে ব্যক্তি সদাকাহকারী হইবে, তাকে সদাকাহর দরজা দিয়ে ডাকা হইবে। যে ব্যক্তি সওম পালনকারী হইবে তাকে সওমের দরজা বাবুররাইয়ান হইতে ডাকা হইবে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, কোন ব্যক্তিকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হইবে এমন তো অবশ্য জরুরী নয়, তবে কি এরূপ কাউকে ডাকা হইবে? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হাঁ, হইবে। আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হইবে, হে আবু বকর।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৪, ইঃফাঃ ৩৪০১)

৩৬৬৭. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যখন মৃত্যু হয়, তখন আবু বকর (রাদি.) সুনহ-এ ছিলেন। ইসমাঈল (রাবী) বলেন, সুনহ মাদীনাহর উঁচু এলাকার একটি স্থানের নাম। উমার (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মৃত্যু হয়নি। আয়েশা (রাদি.) বলেন, উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহর কসম, তখন আমার অন্তরে এ বিশ্বাসই ছিল আল্লাহ অবশ্যই তাঁকে পুনরায় জীবিত করবেন এবং তিনি কিছু সংখ্যক লোকের হাত-পা কেটে ফেলবেন। অতঃপর আবু বকর (রাদি.) এলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর চেহারা হইতে আবরণ সরিয়ে তাহাঁর কপালে চুম্বন করিলেন এবং বলিলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান। আপনি জীবনে মরণে পবিত্র। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ আপনাকে কখনও দুবার মৃত্যু [১] আস্বাদন করাবেন না। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং বলিলেন, হে হলফকারী! ধৈর্য অবলম্বন কর। আবু বকর (রাদি.) যখন কথা বলিতে লাগলেন, তখন উমার (রাদি.) বসে পড়লেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৫ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৪০২ প্রথমাংশ) [১] মৃত্যুর স্বাদ দুবার আস্বাদন না করার অর্থ হচ্ছে মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর জীবিত হইবে না।

৩৬৬৮. নাবী (সাঃআঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু বকর (রাদি.) আল্লাহ তাআলার হামদ ও সানা বর্ণনা করে বলিলেন, যারা মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর ইবাদাতকারী ছিলে তারা জেনে রাখ, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদাত করিতে তারা নিশ্চিত জেনে রাখ আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি অমর। অতঃপর আবু বকর (রাদি.) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “নিশ্চয়ই আপনি মরণশীল আর তারা সকলেই মরণশীল”- (আয যুমার ৩০)। আরো তিলাওয়াত করলেনঃ মুহাম্মাদ তো একজন রাসুল ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। তার পূর্বেও অনেক রাসুল চলে গেছে। অতএব যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয় তাহলে কি তোমরা ইসলাম ত্যাগ করিবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনও আল্লাহর বিন্দুমাত্র ক্ষতি করিতে পারবে না –(আল ইমরান ১৪৪)। আল্লাহ তাহাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। রাবী বলেন, আবু বকর (রাদি.)-এর এ কথাগুলি শুনে সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাবী বলেন, আনসারগণ সাকীফা বনূ সায়িদায়ে সাদ ইবনু উবাইদাহ (রাদি.)-এর নিকট সমবেত হলেন এবং বলিতে লাগলেন, আমাদের মধ্য হইতে একজন আমীর হইবেন এবং তোমাদের মধ্য হইতে একজন আমীর হইবেন। আবু বকর (রাদি.), উমার ইবনু খাত্তাব, আবু উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাদি.) এ তিনজন আনসারদের নিকট গমন করিলেন। উমার (রাদি.) কথা বলিতে চাইলে, আবু বকর (রাদি.) তাকে থামিয়ে দিলেন। উমার (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম আমি বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলাম এই জন্য যে, আমি আনসারদের মাহফিলে বলার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে এমন কিছু যুক্তিযুক্ত কথা প্রস্তুত করেছিলাম যার প্রেক্ষিতে আমার ধারণা ছিল হয়ত আবু বকর (রাদি.) এর চিন্তা চেতনা এতটা গভীরে নাও যেতে পারে। কিন্তু আবু বকর (রাদি.) অত্যন্ত জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণ রাখলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলিলেন, আমীর আমাদের মধ্য হইতে একজন হইবেন এবং তোমাদের মধ্য হইতে হইবেন উযীর। তখন হুবাব ইবনু মুনযির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা এমন করব না বরং আমাদের মধ্যে একজন ও আপনাদের মধ্যে একজন আমীর হইবেন। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, না, তা হয় না। আমাদের মধ্য হইতে খলীফা এবং তোমাদের মধ্য হইতে উযীর হইবেন। কেননা কুরাইশ গোত্র অবস্থানের দিক দিয়ে যেমন আরবের মধ্যস্থানে, বংশ ও রক্তের দিকে থেকেও তারা তেমনি শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতায় সবার শীর্ষে। “তোমরা উমার (রাদি.) অথবা আবু উবাইদাহ ইবনু জাররাহ (রাদি.) এর হাতে বায়আত করে নাও। উমার (রাদি.) বলিলেন, আমরা কিন্তু আপনার হাতেই বায়আত করব। আপনি আমাদের নেতা। আপনিই আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের মাঝে আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর প্রিয়তম ব্যক্তি। এই বলে উমার (রাদি.) তাহাঁর হাত ধরে বায়আত করে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলেই বায়আত করিলেন। তখন জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলেন, আপনারা সাদ ইবনু উবাইদাহ (রাদি.) কে মেরে ফেললেন? উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেছেন।

(আ. প্র. ৩৩৯৫ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৩৪০২ প্রথমাংশ)

৩৬৬৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

মৃত্যুর সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর চোখ দুটি বার বার উপর দিকে উঠছিল এবং তিনি বার বার বলছিলেন, সর্বোচ্চ বন্ধুর সাক্ষাতের আমি আগ্রহী। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আবু বকর ও উমার (রাদি.) –এর খুতবা দ্বারা আল্লাহ তাআলা এ চরম মুহূর্তে উম্মাতকে রক্ষা করিয়াছেন। উমার (রাদি.) জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অন্তরে কপটতা আছে আল্লাহ তাদের ফাঁদ হইতে উম্মাতকে রক্ষা করিয়াছেন।

(আ. ঈ. ৩৩৯৫ মধ্যমাংশ, ইঃফাঃ ৩৪০২ মধ্যমাংশ)

৩৬৭০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এবং আবু বকর (রাদি.) লোকদেরকে সত্য সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। হক ও ন্যায়ের পথ নির্দেশ করিয়াছেন, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর সাহাবাগন এ আয়াত পড়তে পড়তে চলে গেলেনঃ “মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) একজন রাসুল মাত্র। তাহাঁর পূর্বে বহু রাসুল গত হয়েছেন… কৃতজ্ঞ বান্দাদের”। (আলি ইমরানঃ ১৪৪)

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৫ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৩৪০২ শেষাংশ)

৩৬৭১. মুহাম্মাদ ইবনু হানাফীয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি আমার পিতা আলী (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বলিলেন, আবু বকর (রাদি.)। আমি বললাম, অতঃপর কে? তিনি বলিলেন, উমার (রাদি.)। আমার আশংকা হল যে, অতঃপর তিনি উসমান (রাদি.) এর নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, অতঃপর আপনি? তিনি বলিলেন, না, আমি তো মুসলিমদের একজন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৬, ইঃফাঃ ৩৪০৩)

৩৬৭২. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধ সফরে গিয়েছিলাম; তখন আমার হারটি গলা হইতে ছিঁড়ে পড়ে যায়। হারটি খোঁজার জন্য নাবী (সাঃআঃ) সেখানে অবস্থান করেন। এজন্য সাহাবীগণও তাহাঁর সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। সেখানে পানি ছিল না এবং তাঁদের সঙ্গেও পানি ছিল না। তাই সাহাবীগণ আবু বকর (রাদি.) এর নিকট এসে বলিলেন, আপনি কি দেখছেন না, আয়েশা (রাদি.) কি করিলেন? তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এবং তার সঙ্গে সাহাবীগণকে এমন স্থানে অবস্থান করালেন যেখানে পানি নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। তখন আবু বকর (রাদি.) আমার নিকট আসলেন। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে বলিতে লাগলেন, তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে এবং সাহাবীগণকে এমন এক স্থানে আটকিয়ে রেখেছ, যেখানে পানি নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। আয়েশা (রাদি.) বলেন, তিনি আমাকে অনেক বকাবকি করিলেন। এমনকি তিনি হাত দ্বারা আমার কোমরে খোঁচা মারতে লাগলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার কারণে আমি নড়াচড়াও করিতে পারছিলাম না। এমনি পানি না থাকা অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সকাল পর্যন্ত ঘুমন্ত থাকলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করিলেন এবং সকলেই তায়াম্মুম করিলেন। উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাদি.) বলেন, হে আবু বকর (রাদি.) এর পরিবারবর্গ, এটা আপনাদের প্রথম বরকত নয়। আয়েশা (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমরা সে উটটিকে উঠালাম যে উটের উপর আমি সাওয়ার ছিলাম। আমরা হারটি তার নীচে পেয়ে গেলাম।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৭, ইঃফাঃ ৩৪০৪)

৩৬৭৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বত পরিমান সোনা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের এক মুদ বা অর্ধ মুদ-এর সমপরিমাণ সওয়াব হইবে না। জারীর আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ, আবু মুআবিয়াহ ও মুহাযির (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৮, ইঃফাঃ ৩৪০৫)

৩৬৭৪. আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একদা ঘরে উযূ করে বের হলেন এবং আমি আজ সারাদিন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে কাটাব, তার হইতে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে গিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর খবর নিলেন, সাহাবীগন বলিলেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন, আমিও ঐ পথ ধরে তাহাঁর অনুসরণ করলাম। তাহাঁর খোঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌছলেন। আমি কূপের দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুর শাখা দিয়ে তৈরি ছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন তার প্রয়োজন সেরে উযূ করিলেন। তখন আমি তাহাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখিতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দুটি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে আজ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবু বকর (রাদি.) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলিলেন, আবু বকর! আমি বললাম থামুন, আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আবু বকর (রাদি.) ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবু বকর (রাদি.) কে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবু বকর (রাদি.) ভিতরে আসলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর ডানপাশে কূপের ধারে বসে দুপায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর মত কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে উযূ রত অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সঙ্গে মিলিত হবার কথা ছিল। তাই আমি বলিতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার কল্যাণ চান তবে তাকে নিয়ে আসুন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বলিলেন, আমি উমার ইবনু খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট সালাম পেশ করে আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! উমার ইবনু খাত্তাব অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, তাঁকে ভিতরে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। আমি এসে তাঁকে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করিলেন এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর বামপাশে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতর পা ঝুলিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলিতে থাকলাম আল্লাহ যদি তার কল্যাণ চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বলিলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান। আমি বললাম, থামুন। নাবী (সাঃআঃ)-এর খেদমতে গিয়ে জানালাম। তিনি বলিলেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। তবে কঠিন পরীক্ষা হইবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন, তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের ধারে খালি জায়গা নাই। তাই তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। শরীফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আমি এর দ্বারা তাদের কবর এরূপ হইবে এই অর্থ করেছি। [১]

(আঃপ্রঃ ৩৩৯৯, ইঃফাঃ ৩৪০৬)

[১] অত্র হাদীসে খালীফাহ হওয়ার ধারাবাহিকতা রয়েছে। উসমান (রাদি.) কঠিন বিপদের সম্মুখীন হইবেন তা বলা হয়েছে।

৩৬৭৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

(একবার) নাবী (সাঃআঃ), আবু বকর, উমার, উসমান (রাদি.) উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি নড়ে উঠল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে উহুদ! থামো তোমার উপর একজন নাবী, একজন সিদ্দীক ও দুজন শহীদ রয়েছেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪০০, ইঃফাঃ ৩৪০৭)

৩৬৭৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, একদা আমি একটি কূপ হইতে পানি টেনে তুলছি। তখন আবু বকর ও উমার (রাদি.) আসলেন। আবু বকর (রাদি.) আমার হাত হইতে বালতি তার হাতে নিয়ে এক বালতি কি দুবালতি পানি টেনে তুললেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর ইবনু খাত্তাব (রাদি.) বালতিটি আবু বাকরের হাত হইতে নিলেন, তার হাতে নিলেন, তার হাতে যাবার সঙ্গে সঙ্গে বালতির আকার বড় হয়ে গেল। কোন শক্তিশালী জোরওয়ালাকে তার মত পানি আমি উঠাতে দেখিনি। লোকজন তাদের উটগুলিকে পরিতৃপ্ত করে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। ওয়াহাব (রাবী) বলেন, (আরবী) অর্থ উটশালা। এমনকি উটগুলি পানি পান করে তৃপ্ত হয়ে বসে গেল।

(আঃপ্রঃ ৩৪০১, ইঃফাঃ ৩৪০৮)

৩৬৭৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমিও ঐ দলের সঙ্গে দুআয় রত ছিলাম, যারা উমার ইবনু খাত্তাবের জন্য দুআ করেছিল। তখন তাহাঁর লাশটি খাটের উপর রাখা ছিল। এমন সময় এক লোক হঠাৎ আমার পিছন দিক হইতে তার কনুই আমার কাঁধের উপর রেখে উমার (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে বলিল, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি অবশ্য এ আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ আপনাকে আপনার উভয় সঙ্গীর সঙ্গেই রাখবেন। কেননা, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে অনেক বার বলিতে শুনিয়াছি, আমি, আবু বকর ও উমার এক সঙ্গে ছিলাম, আমি, আবু বকর ও উমার এ কাজ করেছি। আমি, আবু বকর ও উমার চলেছি। আমি এ আশাই পোষণ করি যে, আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাদের দুজনের সাথেই রাখবেন। আমি পেছনে চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী ইবনু আবু তালিব (রাদি.)।

(আঃপ্রঃ ৩৪০২, ইঃফাঃ ৩৪০৯)

৩৬৭৮. উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সবচেয়ে কঠিন আচরণ কী করেছিল? তিনি বলিলেন, আমি উকবাহ ইবনু আবু মুআইতকে দেখেছি; সে নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসল যখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। সে নিজের চাদর দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর গলায় জড়িয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। আবু বকর (রাদি.) এসে উকবাহকে সরিয়ে দিলেন এবং বলিলেন, “তোমরা কি এমন লোককে মেরে ফেলতে চাও, যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহই আমার রব। যিনি তাহাঁর দাবীর স্বপক্ষে তোমাদের রবের কাছ হইতে স্পষ্ট প্রমাণ সঙ্গে নিয়ে এসেছেন?” (আল-মুমিন/ গাফির : ২৮)

(আঃপ্রঃ ৩৪০৩, ইঃফাঃ ৩৪১০)

৩৬৭৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি। হঠাৎ আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর স্ত্রী রুমায়সাকে দেখিতে পেলাম এবং আমি পদচারণার শব্দও শুনতে পেলাম। তখন আমি বললাম, এই ব্যক্তি কে? এক ব্যক্তি বলিল, তিনি বিলাল (রাদি.)। আমি একটি প্রাসাদও দেখিতে পেলাম যার উঠানে এক মহিলা আছে। আমি বললাম, ঐ প্রাসাদটি কার? এক ব্যক্তি বলিল, প্রাসাদটি উমার ইবনু খাত্তাবের (রাদি.)। আমি প্রাসাদটিতে প্রবেশ করে দেখার ইচ্ছা করলাম। তখন তোমার [উমার (রাদি.)] সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। উমার (রাদি.) বলিলেন, আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবান, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কাছেও কি মর্যাদাবোধ দেখাতে পারি?

(আঃপ্রঃ ৩৪০৪, ইঃফাঃ ৩৪১১)

৩৬৮০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকটে ছিলাম। তখন তিনি বলিলেন, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে আমি নিজেকে জান্নাতে দেখিতে পেলাম। আমি দেখলাম, এক নারী একটি প্রাসাদের উঠানে উযূ করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ প্রাসাদটি কার? ফেরেশতামণ্ডলী বলিলেন, তা উমার (রাদি.) এর। আমি উমার (রাদি.) এর সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধের কথা মনে করে ফিরে এলাম। উমার (রাদি.) (শুনে) কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, আপনার নিকটও কি মর্যাদাবোধ দেখাব হে আল্লাহর রাসুল?

(আঃপ্রঃ ৩৪০৫, ইঃফাঃ ৩৪১২)

৩৬৮১. হামযাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। (স্বপ্নে) দুধ পান করিতে দেখলাম যে তৃপ্তির নিদর্শন যেন আমার নখগুলির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। অতঃপর দুধ উমার (রাদি.)-কে দিলাম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, আপনি কী ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? তিনি বলিলেন, ইলম। (আঃপ্রঃ ৩৪০৬, ইঃফাঃ ৩৪১৩)

৩৬৮২. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী সাঃআঃ বলেন, আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম, একটি কূপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবু বাকর (রাদি.) এসে এক বালতি বা দুবালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাহাঁর দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) এলেন। বালতিটি তাহাঁর হাতে গিয়ে বড় আকার ধারণ করিল। তাহাঁর মত এমন দৃঢ়ভাবে পানি উঠাতে আমি কোন তাকৎওয়ালাকেও দেখেনি। এমনকি লোকেরা তৃপ্তির সাথে পানি পান করে গৃহে বিশ্রাম নিল। ইবনু জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, الْعَبْقَرِيُّ হল উন্নত মানের সুন্দর বিছানা। ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, الزَّرَابِيِّ হল মখমলের সূক্ষ্ম সূতার তৈরি বিছানা। مَبْثُوْثَةٌ অর্থ বিস্তারিত। আর الْعَبْقَرِيَّ হল গোত্রপতি। (৩৬৩৩)

(আঃপ্রঃ ৩৪০৭, ইঃফাঃ ৩৪১৪)

৩৬৮৩. সাদ ইবনু আবু ওয়াককাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে কুরাইশের কয়েকজন নারী কথা বলছিলেন এবং তাঁরা অধিক পরিমাণ দাবী দাওয়া করিতে গিয়ে তাহাঁর আওয়াজের চেয়ে তাদের আওয়াজ উচ্চ ছিল। যখন উমার ইবনু খাত্তাব প্রবেশের অনুমতি চাইলেন তখন তাঁরা উঠে দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে অনুমতি দিলেন। আর উমার (রাদি.) ঘরে প্রবেশ করিলেন, রাসুল (সাঃআঃ) হাসছিলেন। উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আপনাকে সদা হাস্য রাখুন হে আল্লাহর রাসুল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, নারীদের ব্যাপার দেখে আমি অবাক হচ্ছি, তাঁরা আমার নিকট ছিল, অথচ তোমার আওয়াজ শুনা মাত্র তারা সব দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমার (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেই-তো অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর উমার (রাদি.) ঐ মহিলাগণকে লক্ষ্য করে বলিলেন, ওহে নিজের ক্ষতিকারী নারীরা! তোমরা আমাকে ভয় কর, অথচ আল্লাহর রাসুলকে ভয় কর না? তারা উত্তরে বলিলেন, হাঁ ঠিকই হে ইবনু খাত্তাব! যে সত্তার হাতে আমার জান, তাহাঁর কসম, শয়তান যখনই কোন রাস্তায় তোমাকে দেখিতে পায় সে তখনই তোমার ভয়ে এ রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা ধরে।

(আঃপ্রঃ ৩৪০৮, ইঃফাঃ ৩৪১৫)

৩৬৮৪. আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যেদিন উমার (রাদি.) ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন হইতে আমরা অত্যন্ত মর্যাদাশীল হয়ে আসছি।

(আঃপ্রঃ ৩৪০৯, ইঃফাঃ ৩৪১৬)

৩৬৮৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার (রাদি.)-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তুলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দুআ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী (রাদি.)। তিনি উমার (রাদি.)-এর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতের দুআ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহর কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি, আবু বকর ও উমার গেলাম। আমি, আবু বকর ও উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবু বকর ও উমার বাহির হলাম ইত্যাদি।

(আঃপ্রঃ ৩৪১০, ইঃফাঃ ৩৪১৭)

৩৬৮৬. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) উহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন আবু বকর, উমার ও উসমান (রাদি.)। তাদেরকে নিয়ে পাহাড়টি দুলে উঠল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পাহাড়কে পায়ে আঘাত করে বলিলেন, হে উহুদ, থামো। তোমার উপর নাবী, সিদ্দীক ও শহীদ ছাড়া অন্য কেউ নেই।

(আঃপ্রঃ ৩৪১১, ইঃফাঃ ৩৪১৮)

৩৬৮৭. আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু উমার (রাদি.) আমাকে উমার (রাদি.) –এর গুণাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আমি তাকে সে সম্পর্কে জ্ঞাত করলাম। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর মৃত্যুর পর কাউকে (এ সব গুণের অধিকারী) আমি দেখিনি। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়চেতা দানাবীর ছিলেন। এ সকল গুণাগুণ যেন উমার (রাদি.) পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে।

(আঃপ্রঃ ৩৪১২, ইঃফাঃ ৩৪১৯)

৩৬৮৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) –কে জিজ্ঞেস করিল, কিয়ামত কখন হইবে? তিনি বলিলেন, তুমি কিয়ামাতের জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বলিল, কোন কিছু জোগাড় করিতে পরিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসি। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) –এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) –কে ভালবাসি এবং আবু বকর ও উমার (রাদি.)-কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার ভালবাসার কারণে তাদের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করিতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল আমি করিতে পারিনি।

(আঃপ্রঃ ৩৪১৩, ইঃফাঃ ৩৪২০)

৩৬৮৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের আগের উম্মাতগণের মধ্যে অনেক মুহাদ্দাস (যার ক্বলবে সত্য কথা অবতীর্ণ হয়) ব্যক্তি ছিলেন। আমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস হন তবে সে ব্যক্তি উমর। যাকারিয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে অধিক বর্ণিত আছে যে, নাবী সাঃআঃ বলেছেন, তোমাদের আগের বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন কতক লোক ছিলেন, যাঁরা নাবী ছিলেন না বটে, তবে ফেরেশতামন্ডলী তাঁদের সঙ্গে কথা বলিতেন। আমার উম্মাতে এমন কোন লোক হলে সে হইবে উমার (রাদি.)। ইবনু আববাস (রাদি.) (কুরআনের আয়াতে) وَلَا مُحَدَّثٍ অতিরিক্ত বলেছেন। (৩৪৬৯)

(আঃপ্রঃ ৩৪১৪, ইঃফাঃ ৩৪২১)

৩৬৯০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, একদা এক রাখাল তার বকরীর পালের সঙ্গে ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ পাল আক্রমণ করে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছে দৌড়ে বকরীকে উদ্ধার করে আনল। তখন বাঘ রাখালকে বলিল, যখন আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না তখন হিংস্র জন্তুদের আক্রমণ হইতে তাদের কে রক্ষা করিবে? সাহাবীগণ বলিলেন, সুবহানাল্লাহ। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এটা বিশ্বাস করি এবং আবু বকর ও উমরও বিশ্বাস করে। অথচ আবু বকর ও উমার (রাদি.) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

(আঃপ্রঃ ৩৪১৫, ইঃফাঃ ৩৪২২)

৩৬৯১. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –কে বলিতে শুনিয়াছি যে, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখিতে পেলাম, অনেক লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হল। তাদের গায়ে জামা ছিল। কারো কারো জামা এত ছোট ছিল যে, কোন ভাবে বুক পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর কারো জামা এত্থেকেও ছোট ছিল। আর উমার (রাদি.) –কেও আমার সামনে পেশ করা হলো। তাহাঁর শরীরে এত লম্বা জামা ছিল যে, সে জামাটি হেচঁড়িয়ে চলছিল। সাহাবায়ে কেরাম বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ স্বপ্নের কি তাবীর করিলেন। তিনি বলিলেন, দীনদারী।

(আঃপ্রঃ ৩৪১৬, ইঃফাঃ ৩৪২৩)

৩৬৯২. মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন উমার (রাদি.) আহত হলেন, তখন তিনি বেদনা অনুভব করছিলেন। তখন তাঁকে সান্ত্বনা দেয়ার উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতে লাগলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ আঘাত জনিত কারণে যদি আপনার কিছু হয় দুঃখের কোন কারণ নেই। আপনি তো আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর সাহচর্য পেয়েছেন এবং তাহাঁর সাহচর্যের হক ভালভাবে আদায় করিয়াছেন। অতঃপর আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর আপনি আবু বকর (রাদি.) –এর সঙ্গ লাভ করেন এবং এর হকও আপনি পূর্ণরূপে আদায় করেন। অতঃপর আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন যে, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর আপনি সাহাবাগণের সাহচর্য পেয়েছেন এবং তাদের হকও সঠিকভাবে আদায় করিয়াছেন। যদি আপনি তাদের হইতে আলাদা হয়ে পড়েন তবে আপনি অবশ্যই তাদের হইতে এমন অবস্থায় আলাদা হইবেন যে তাঁরাও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। উমার (রাদি.) বলিলেন, তুমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর সঙ্গ ও সন্তুষ্টির ব্যাপারে যা বলেছ, তাতো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা তিনি আমার প্রতি করিয়াছেন। এবং আবু বকর (রাদি.) এর সঙ্গ ও সন্তুষ্টির ব্যাপারে যা তুমি বলেছ তাও একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি আমার উপর করিয়াছেন। আর আমার যে অস্থিরতা তুমি দেখছ তা তোমার এবং তোমার সাথীদের কারণেই। আল্লাহর কসম, আমার নিকট যদি দুনিয়া ভরা সোনা থাকত তবে আল্লাহর আযাব দেখার আগেই তা হইতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিদয়া হিসাবে বিলিয়ে দিতাম। হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …..ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার (রাদি.) –এর নিকট প্রবেশ করলাম …..।

(আঃপ্রঃ ৩৪১৭, ইঃফাঃ ৩৪২৪)

৩৬৯৩. আবু মুসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মদিনার এক বাগানের ভিতর আমি নাবী সাঃআঃ-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলিল। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবু বাকর (রাদি.)। তাঁকে আমি আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ-এর দেয়া সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বলিল। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম, তিনি উমার (রাদি.)। তাঁকে আমি নাবী সাঃআঃ-এর সুসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন। অতঃপর আর একজন দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলিলেন। নাবী সাঃআঃ বলিলেন, দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। কিন্তু তার উপর ভয়ানক বিপদ আসবে। দেখলাম যে, তিনি উসমান (রাদি.)। আল্লাহর রাসুল সাঃআঃ যা বলেছেন, আমি তাকে বললাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করিলেন আর বলিলেন, اللهُ الْمُسْتَعَانُ আল্লাহই সাহায্যকারী। (৩৬৭৪)

(আঃপ্রঃ ৩৪১৮, ইঃফাঃ ৩৪২৫)

৩৬৯৪. আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) –এর হস্তধারণকৃত অবস্থায় ছিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪১৯, ইঃফাঃ ৩৪২৬)

Comments

Leave a Reply