সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর ফযিলত

সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর ফযিলত

সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৫. অধ্যায়ঃ সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর ফযিলত

৬১২৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক রাত্রে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] জেগে রইলেন আর তিনি বলিলেন, আমার কোন সৎকর্মশীল সাহাবী যদি এ রাতটিতে আমাকে পাহারা দিতো! এমন সময় আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পেলাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইনি কে? উত্তর এলো, আমি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস। আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি, হে আল্লাহর রসূল! আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন। এমতাবস্থায় আমি তাহাঁর নাক ডাকার আওয়াজও শুনতে পেলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১২, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫০]

৬১২৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাদীনাহ্ আগমনের প্রথম দিকে এক রাত্রে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] জেগে রইলেন। আর তিনি বললেনঃআমার সাহাবীদের মধ্য হইতে কোন নেক লোক আমাকে এ রাত্রের পাহারা দিলে কতই না ভাল হতো। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন যে, এমতাবস্থায়ই আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পেলাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃইনি কে? বলিলেন, সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃকেন এসেছ? সাদ [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সম্পর্কে আমার অন্তরে আশঙ্কা জেগেছে, তাই তাঁকে পাহারা দিতে আসলাম। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর জন্যে দুআ করিলেন, এরপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ইবনি রুম্হের বর্ণনায় রয়েছে, আমরা বললাম, ইনি কে?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫১]

৬১২৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক রাত্রে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] জেগে থাকলেন। [অবশিষ্টাংশ] সুলাইমান ইবনি বিলালের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত রয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫২]

৬১২৭.আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনি মালিক [রাদি.] ব্যতীত আর কারো জন্য রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজের মাতা-পিতা দুজনের উৎসর্গের কথা একত্রে বর্ণনা করেননি। উহুদ যুদ্ধের দিবসে তিনি সাদকে বলেছিলেন, তীর মারো, সাদ! আমার পিতা-মাতা তোমার উপর উৎসর্গ হোন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৩]

৬১২৮.মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না, ইবনি বাশ্শার, আবু বকর ইবনি আবু শাইবাহ্, আবু কুরায়ব, ইসহাক্ হান্যালী ও ইবনি আবু উমর [রাদি.] আলী [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] হইতে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৪]

৬১২৯.সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার জন্য রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর পিতা ও মাতাকে একসাথে উৎসর্গ করিয়াছেন উহুদ যুদ্ধের দিনে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৫]

৬১৩০. ইয়াহিইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদেই রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৬]

৬১৩১. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] উহুদ যুদ্ধের দিবসে তাহাঁর জন্য নিজের পিতা ও মাতাকে একসাথে উৎসর্গ করেছিলেন। সাদ [রাদি.] বলেন, মুশরিকদের এক ব্যক্তি মুসলিমদের উপর অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছিল। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃহে সাদ! তীর নিক্ষেপ করো। আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি তাকে কেন্দ্র করে একটা তীর বের করলাম, যাতে ধারালো অংশটি ছিল না। ওটা তাহাঁর পাঁজরে লাগতেই সে পড়ে গেল, এতে তার গুপ্তাঙ্গ উম্মোচিত হয়ে গেল। ফলে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] হাসলেন: আমি তাহাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখিতে পেলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৭]

৬১৩২. মুসআব ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর সম্বন্ধে কুরআনের কতক আয়াত নাযিল হলো। তাহাঁর মা কসম করে ফেলেছে যে, তিনি ইসলামকে যতক্ষণ অস্বীকার না করবেন ততক্ষণ তাহাঁর সঙ্গে কথা বলবে না, খাবেও না, পানও করিবে না। সে বলিল, আল্লাহ তাআলা তোকে নির্দেশ করিয়াছেন, পিতা-মাতার কথা মেনে চলতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কোন খাদ্য গ্রহণ করিল না। যাতনায় সে অজ্ঞান হয়ে গেলে উমারাহ্ নামক তার এক পুত্র তাকে পানি পান করাল। মা সাদের উপর বদ্দুআ করিতে লাগল। তখন আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এ আয়াত নাযিল করিলেন:

আমি মানুষকে আদেশ করেছি তার পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করিতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর শক্তি প্রয়োগ করে আমার আমার সঙ্গে এমন কিছু শারীক করিতে যার সম্বন্ধে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের আনুগত্য করো না- [সুরাহ্ আল আনকাবুত ২৯:৮]। আর পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করিবে- [সূরাহ্ আল লুকমান ৩১:১৫] arbi ।

সাদ বলনে, একবার রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর হাতে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আসলো। এতে একটি তরবারিও ছিল। আমি সেটা নিয়ে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললাম, এ তরবারিটি আমাকে দিন। আর আমার অবস্থা কি তা আপনি জানেনই। তিনি বলিলেন, এটা যেখান থেকে নিয়েছো সেখানেই রেখে দাও। আমি গেলাম এবং ইচ্ছে করলাম যে, এটাকে ভাণ্ডারে রেখে দেই; কিন্তু আমার মন আমাকে বঞ্চনা করিল। অমনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফিরে আসলাম। বললাম, আমায় এটা দান করুন। তিনি উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, এটা যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন: তারা আপনাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে-[সূরাহ্ আল আনফাল ৮:১]।

তিনি বলেন, আমি অসুস্থতা বিধায় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে আসতে বললাম, তিনি আসলেন। আমি বললাম আমাকে অনুমতি দান করুন, আমি যাকে ইচ্ছা তাকে আমার ধন-সম্পদ ভাগ করে দিয়ে দেই। তিনি অস্বীকার করিলেন। আমি বললাম, তবে অর্ধেক ধন-সম্পদ দিয়ে দেই। তিনি তাও স্বীকৃতি দিলেন না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ সম্পদই দিয়ে দেই। তিনি চুপ হয়ে রইলেন। পরবর্তীতে এক তৃতীয়াংশ ধন-সম্পদ দান করাই অনুমোদিত হলো। সাদ বলেন, একবার আমি আনসার ও মুহাজিদের কতিপয় ব্যক্তির নিকট গেলাম।

তারা আমাকে বলিল, এসো তোমায় আমরা আহার করাব এবং মদ পান করাব, এ ঘটনা মদ হারাম হওয়ার পূর্বের। আমি তাদের নিকট একটি বাগিচায় গেলাম। সেখানো উটের মাথার গোশত ভুনা হয়েছিল আর মদের একটা মশ্ক ছিল। আমি তাদের সাথে গোশ্ত খেলাম এবং মদ পান করলাম। সেখানে মুহাজির ও আনসারদের আলোচনাকালে আমি বললাম, মুহাজিররা আনসারদের তুলনায় উত্তম। এক ব্যক্তি মাথার এ্কটি হাড় দিয়ে আমাকে আঘাত করিল। আমার নাকে যখম হয়ে গেল। আমি রসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট তা উল্লেখ করলাম। তখন আল্লাহ তাআলা আমার সম্বন্ধে আয়াত অবর্তীণ করিলেন: মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু যা শাইতানের কাজ- [সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫:৯০]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২০, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৮]

৬১৩৩. মুসআব ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার সম্পর্কে চারটি আয়াত নাযিল হয়েছে। অতঃপর পূর্বোল্লিখিত হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করিলেন। শুবাহ্ কেবল এটুকু কথা অতিরিক্ত বলেছেন- সাদ [রাদি.] বলেন, মানুষেরা আমার মাকে খাবার খাওয়ানোর সময় একটি কাঠি দিয়ে তার মুখ খুলত, পরে তার মুখে খাদ্য দিত। এ বর্ণনায় এরূপ রয়েছে, সাদের নাকে আঘাত হানল তাতে তাহাঁর নাক ভেঙ্গে গেল। আর সাদের নাক ভাঙ্গাই ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২১, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৫৯]

৬১৩৪.সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

 وَلاَ تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ

যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাহাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আহ্বান করে তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না- [সূরা আল আনআম ৬:৫২]। এ আয়াতটি ছয়জন লোক সম্বন্ধে নাযিল হয়। তন্মধ্যে আমিও একজন ছিলাম এবং আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদও ছিলেন। মুশরিকরা বলত, এ ধরণের লোককে আপনি সঙ্গে রাখবেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২২, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৬০]

৬১৩৫. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা ছয় লোক রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। মুশরিকরা বলিল, আপনি এসব লোকদেরকে আপনার নিকট হইতে বিতাড়িত করুন। যাতে তারা আমাদের মাঝে আগমনের সাহস না পায়।

সাদ [রাদি.] বলেন, তন্মধ্যে আমি, ইবনি মাসঊদ, বানূ হুযায়লের এক লোক, বিলাল এবং আরও দুজন লোক ছিলাম, যাদের নাম আমি নিচ্ছি না। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর মনে আল্লাহ যা চাইলেন তা জাগল। তিনি মনে মনেই কথা বলিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন:

 وَلاَ تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ‏

যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাহাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আহ্বান করে তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না- [সূরাহ্ আল আনআম ৬:৫২]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬০৬১]

Comments

One response to “সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.]-এর ফযিলত”

Leave a Reply