আবুল হাসান আলী ইবনু তালিব কুরাইশী হাশিমী (রা) এর মর্যাদা

আবুল হাসান আলী ইবনু তালিব কুরাইশী হাশিমী (রা) এর মর্যাদা

আবুল হাসান আলী ইবনু তালিব কুরাইশী হাশিমী (রা) এর মর্যাদা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬২, সাহাবিগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ ৯=১টি

৬২/৯. অধ্যায়ঃ আবুল হাসান আলী ইবনু তালিব কুরাইশী হাশিমী (রাদি.)-এর মর্যাদা।

নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.) –কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমার (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ওফাত পর্যন্ত তাহাঁর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন।

৩৭০১

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করিলেন যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হইবে। যখন ভোর হল তখন সকলেই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তাদেরর প্রত্যেকেই এ আশা করছিলেন যে পতাকা তাকে দেয়া হইবে। অতঃপর তিনি বলিলেন, আলী ইবনু আবু তালিব কোথায়? তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বলিলেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার নিকট নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর দুচোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাহাঁর জন্য দুআও করিলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাহাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না। রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বলিলেন, তুমি সোজা এগিয়ে যেতে থাক এবং তাদের আঙ্গিণায় পৌঁছে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমার দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়াত লাভ করে, তা হইবে তোমার জন্য লাল রং এর উট পাওয়ার চেয়েও উত্তম।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৬, ইঃফাঃ ৩৪৩৩)

৩৭০২

সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) –এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাহাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি বলিলেন, আমি কি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যাব না? অতঃপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করিলেন, তার আগের রাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আগামীকাল ভোরে আমি এমন এক লোককে পতাকা দিব, অথবা বলেছিলেন যে, এমন এক লোক ঝান্ডা ধারণ করিবে যাঁকে আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলকে ভালবাসে। তাহাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করবেন। অতঃপর আমরা দেখিতে পেলাম তিনি হলেন আলী (রাদি.), অথচ আমরা তাহাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করিনি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী (রাদি.)। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকেই দিলেন এবং তাহাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৭, ইঃফাঃ ৩৪৩৪)

৩৭০৩

আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক সাহল ইবনু সাদ (রাদি.)-এর নিকট হাযির হয়ে বলিলেন, মদীনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকটে বসে আলী (রাদি.) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বলিলেন, সে কী বলছে? সে বলিল, সে তাকে আবু তুরাব (রাদি.) বলে উল্লেখ করছে। সাহল (রাদি.) হেসে দিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম, তাহাঁর এ নাম নাবী (সাঃআঃ) রেখেছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাহাঁর নিকট বেশি প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি ঘটনাটি জানার জন্য সাহল (রাদি.) –এর নিকট ইচ্ছে প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবু আব্বাস! এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বলিলেন, আলী (রাদি.) ফাতিমা (রাদি.) –এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে মাসজিদে শুয়ে রইলেন। নাবী (সাঃআঃ) এসে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বলিলেন, মাসজিদে। রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাহাঁর চাদর পিঠ হইতে সরে গিয়েছে। তাহাঁর পিঠে ধূলা-বালি লেগে গেছে। রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর পিঠ হইতে ধূলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলিলেন, উঠে বস হে আবু তুরাব! কথাটি দুবার বলেছিলেন।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৮, ইঃফাঃ ৩৪৩৫)

৩৭০৪

সাদ ইবনু উবাইদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক ইবনু উমার (রাদি.) –এর কাছে এস ওসমান (রাদি.) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করিল। তিনি ওসমান (রাদি.) –এর কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করিলেন। ইবনু উমার (রাদি.) ঐ লোককে বলিলেন, মনে হয় এটা তোমার নিকট খারাপ লাগছে। সে বলিল, হাঁ। ইবনু উমার (রাদি.) ঐ লোককে বলিলেন, আল্লাহ (তোমাকে) অপমানিত করুন। অতঃপর সে ব্যক্তি আলী (রাদি.) এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। তিনি তাহাঁরও কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, ঐ দেখ! তাহাঁর ঘরটি নাবী (সাঃআঃ) –এর ঘরগুলির মধ্যে অবস্থিত। অতঃপর তিনি বলিলেন, মনে হয় এ সব কথা শুনতে তোমার খারাপ লাগছে। সে বলিল, হাঁ। ইবনু উমার (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। যাও আমার বিরুদ্ধে যত পার কর।

(আঃপ্রঃ ৩৪২৯, ইঃফাঃ ৩৪৩৬)

৩৭০৫

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

ফাতিমা (রাদি.) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদা অভিযোগ প্রকাশ করিলেন। এরপর নাবী (সাঃআঃ) –এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে আয়েশা (রাদি.) –এর নিকট তাহাঁর কথা বলে আসলেন। নাবী (সাঃআঃ) যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমা (রাদি.) এর আগমন ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে আয়েশা (রাদি.) তাঁকে জানালেন। (আলী (রাদি.) বলেন) নাবী (সাঃআঃ) আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বলিলেন, তোমারা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাহাঁর দুই পায়ের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা যা চেয়েছিলে আমি কি তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিব না? তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার “আল্লাহ আকবার” তেত্রিশবার “সুবহানাল্লাহ” তেত্রিশবার “আলহামদুলিল্লাহ” পড়ে নিবে। এটা খাদিম অপেক্ষা অনেক উত্তম।

(আঃপ্রঃ ৩৪৩০, ইঃফাঃ ৩৪৩৭)

৩৭০৬

সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.)-কে বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন (আঃ) মূসা (আঃ) –এর নিকট হইতে মর্যাদা লাভ করেছিলেন তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর।

(আঃপ্রঃ ৩৪৩১, ইঃফাঃ ৩৪৩৮)

৩৭০৭

আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা আগে হইতে যেভাবে ফয়সালা করে আসছ সেভাবেই কর কেননা পারস্পরিক বিবাদ আমি অপছন্দ করি। যেন সকল লোক এক দল ভুক্ত হয়ে থাকে। অথবা আমি এমন অবস্থায় দুনিয়া হইতে বিদায় হই যেভাবে আমার সাথীগণ দুনিয়া হইতে বিদায় নিয়েছেন। (মুহাম্মদ) ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ ধারণা পোষণ করিতেন যে, আলী (রাদি.) এর (১ম খলীফা হওয়া সম্পর্কে) যে সব কথা তার হইতে (রাফিযী সম্প্রদায় কর্তৃক) বর্ণিত তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন।

(আঃপ্রঃ ৩৪৩২, ইঃফাঃ ৩৪৩৯)

Comments

Leave a Reply