আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর ফযিলত

আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর ফযিলত

আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর ফযিলত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩৩. অধ্যায়ঃ আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]-এর ফযিলত

৬২৭৪. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] ব্যতিরেকে ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থানকারী কোন জীবিত লোকের ব্যাপারে বলিতে শুনিনি যে, সে জান্নাতে বিচরণ করছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৬, ইসলামিক সেন্টার-৬১৯৯]

৬২৭৫. কায়স ইবনি আব্বাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাতে এমন ব্যক্তিদের মাঝে ছিলাম, যাঁদের মধ্যে নবী [সাঃআঃ]-এর কতক সহাবী বিদ্যমান ছিলেন। ইত্যবসরে এক লোক এলো, যার মুখমণ্ডলে ভয়-ভীতির চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। তখন লোকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলিলেন, এ লোক জান্নাতীদের একজন, এ লোক জান্নাতীদের একজন। তিনি সেখানে দু রাকাআত নামাজ আদায় করিলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন। আমি তাঁকে অনুকরণ করলাম। তিনি তাহাঁর গৃহে ঢুকলেন। আমিও ঢুকলাম। এরপর আমরা আলাপচারিতায় ছিলাম। উভয়ের মধ্যে যখন অন্তরঙ্গতা তৈরি হলো তখন তাকে আমি বললাম, আপনি যখন একটু আগে [মাসজিদে] প্রবেশ করেছিলেন, তখন জনৈক লোক এরূপ এরূপ বলেছিল [এ লোক জান্নাতীদের একজন]। তিনি বলিলেন, সুবাহানাল্লাহ! কারো পক্ষে এমন কোন কথা বলা ঠিন নয়, যা সে অজ্ঞাত। তিনি বলিলেন, আমি তোমার সাথে আলাপ করব, কেন এমন হয়? [অর্থাৎ লোকেরা কেন এ কথা বলে] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর যুগে একদা আমি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি সে স্বপ্নের কথা তাহাঁর নিকট প্রকাশ করেছিলাম। আমি নিজেকে একটি বাগিচায় দেখিতে পাই। এ বাগানের ব্যাপকতা, উৎপন্ন ফসলাদি ও সৌন্দর্যের কথাও তিনি ব্যক্ত করেন। এ বাগানের মাঝখানে একটি লৌহস্তম্ভ ছিল যার নিম্নভাগ ছিল মাটির মাঝে এবং উপরিভাগ ছিল আকাশে। এর উপরিভাগে ছিল একটি রশি। তখন আমাকে বলা হলো, তুমি এত সওয়ার হও। আমি বললাম, আমি সওয়ার হইতে পারব না। তারপর একজন মিনসাফ আসলো। তিনি বলেন, ইবনি আওন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর মতে মিনসাফ অর্থ খাদিম। তিনি বলেন, তিনি পশ্চাৎদিক থেকে আমার বস্ত্র ধরলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, সে [খাদিম] তার হাত দিয়ে তাহাঁর পেছন হইতে তাঁকে তুলে দিল। আমি সওয়ার হলাম, এমনকি খুঁটি বেয়ে উঠলাম, তারপর রজ্জুটি ধরলাম। অতঃপর আমাকে বলা হলো একে আঁকড়িয়ে ধরো।

আমি যখন জেগে গেলাম, তখনও ঐ রজ্জুটি আমার হাতেই ছিল। আমি নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বলিলেন, সে বাগানটি হলো ইসলাম। আর সে খুঁটিটি হলো ইসলামের খুঁটি এবং সে রজ্জুটি হলো সুদৃঢ় রজ্জু। তুমি আমৃত্যু শক্তভাবে ইসলামের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকিবে।

বর্ণনাকারী বলেন, আর সে লোকই আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৭, ইসলামিক সেন্টার-৬২০০]

৬২৭৬. কায়স ইবনি আব্বাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এক মাজলিসে ছিলাম, যেখানে সাদ ইবনি মালিক [রাদি.] ও উবনু উমর [রাদি.] উপস্থিত ছিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] যাচ্ছিলেন। তাঁরা বলিলেন, এ ব্যক্তিটি জান্নাতীদের একজন। আমি দণ্ডায়মান হলাম এবং তাঁকে বললাম, তাঁরা আপনাকে এমন এমন বলেছেন। তিনি বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! তাঁদের এমন কোন কথা ব্যক্ত করা ঠিক নয়, যে ব্যাপারে তাঁদের ইল্‌ম নেই। একবার [স্বপ্নে] আমি দেখিতে পেলাম, যেন একটি খুঁটি রাখা হয়েছে একটি সবুজ শ্যামল বাগানের মধ্যস্থলে, এর চূড়ায় একটি রজ্জু ছিল। এর নিম্নে একটি ছোট্ট মিনসাফ [দণ্ডায়মান] ছিল। মিন্সাফ অর্থ খাদিম। তখন আমাকে বলা হলো, এতে সওয়ার হও। আমি তাতে সওয়ার হলাম। শেষ অবধি রজ্জুটি সুদৃঢ়ভাবে ধরলাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে তা ব্যক্ত করলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃমজবুত রজ্জুটি আঁকড়ে ধরা অবস্থায় আবদুল্লাহ [রাদি.] মৃত্যুরবণ করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬২০১]

৬২৭৭. খারাশাহ ইবনি হুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনার মাসজিদে একটি সমাবেশে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলেন, সে মাজলিসে বসা ছিলেন সুন্দর চেহারার অধিকারী একজন বৃদ্ধ লোক। তিনিই ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.]। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, তিনি তাঁদের সম্মুখে ভাল ভাল কথা বলছিলেন। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন, যখন তিনি সমাবেশ হইতে উঠছিলেন সে সময় ব্যক্তিরা বলিল, কোন লোক যদি জান্নাতীকে দেখে আনন্দিত হইতে চায় তবে যেন সে ঐ লোকটির দিকে দৃষ্টিপাত করে। তিনি {খারাশাহ [রাদি.]} বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমি তাহাঁর অনুসরণ করব, যাতে আমি তাহাঁর আবাসস্থল জানতে পারি। তিনি [বর্ণনাকারী] বলিলেন, এরপর আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। তিনি রওনা হলেন এবং মাদীনাহ্ শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সন্নিকটবর্তী জায়গায় পৌঁছে নিজ ঘরে ঢুকলেন। তিনি [বর্ণনাকারী] বলেন আমিও তাহাঁর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর বলিলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি কি চাও? রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি যখন সমাবেশ থেকে উঠে আসছিলেন তখন আমি আপনার ব্যাপারে ব্যক্তিদের বলিতে শুনেছি, যে লোক একজন জান্নাতীকে দেখে আনন্দ পেতে চায়, সে যেন এ লোকের দিকে তাকায়। তখন আমার মনে আপনার সঙ্গ লাভের আগ্রহ জাগে। তিনি বলিলেন, জান্নাতীদের ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। কিন্তু ব্যক্তিদের এ কথা বলার কারণ আমি তোমার নিকট উল্লেখ করছি। একবার আমি ঘুমে অচেতন ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম যে, জনৈক লোক আমার নিকট এসেছে। সে আমাকে বলিল, দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর সে আমার হাত আঁকড়ে ধরল। আমি তার সাথে রওনা করলাম। আমি আমার বামপাশে কয়েকটি পথ দেখিতে পেলাম এবং আমি সে পথ ঘরে চলতে চাইলাম। সে আমাকে বলিল, এদিকে যেয়ো না। কারণ, এটা হলো বামপন্থীদের [কাফিরদের] পথ। তিনি বলেন, এরপর আমি আমার ডানপাশে কয়েকটি আলোক সরল পথ দেখিতে পেলাম। এরপর সে বলিল, এ রাস্তায় চলো। তিনি বলেন, অতঃপর সে আমাকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে আসলো। অতঃপর আমাকে পাহাড়ে উঠতে বলিল। আমি পাহাড়ে উঠতে চেষ্টারত ছিলাম। কিন্তু পাছায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকবার এরূপ চেষ্টা করিতে লাগলাম। তিনি বলেন, এরপর সে আমাকে নিয়ে রওনা হলো এবং একটি খুঁটির নিকট পৌঁছল, যার মাথা ছিল আকাশে এবং তার নিম্নভাগ ভূ-পৃষ্ঠের নীচে ছিল। খূঁটির চূড়ায় একটি কড়া ছিল। সে বলিল, এর উপরে উঠো। তিনি বলেন, আমি বললাম, এতে কিভাবে চড়ব? এর মাথা তো আকাশের উপরিভাগে। তিনি বলেন, এরপর সে আমার হাত ধরল এবং আমাকে উপরে ঠেলে দিল। অকস্মাৎ আমি দেখলাম যে, আমি কড়ার সাথে ঝুলে আছি। তিনি বলেন, এরপর সে খুঁটির উপর করাঘাত করিল এবং তা পড়ে গেল। তিনি বলেন, আর আমি কড়ার সাথে ঝুলে গেলাম। এভাবে আমার সকাল হলো। তিনি বলেন, এরপর আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে স্বপ্নের কথা সবিস্তারে বিবরণ দিলাম। তিনি বললেনঃতুমি তোমার বামপাশে যে পথগুলো দেখেছ, তা হচ্ছে বামপন্থীদের রাস্তা এবং তোমার ডানপাশে যেসব রাস্তা দেখেছ, তা হচ্ছে আসহাবুল ইয়ামীন বা জান্নাতীগণের রাস্তা। তুমি যে পাহাড়টি দেখেছিলে তা হচ্ছে শাহীদগণের আবাসস্থল আর তা তুমি পাবে না। তুমি যে খুঁটিটি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের খুঁটি। যে কড়াটি তুমি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের কড়া। আর তুমি আমৃত্যু ইসলামের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬২০২]

Comments

Leave a Reply