আনসারগণের ফজিলত মর্যাদা এবং তাদের ব্যাপারে নবী সাঃ এর উক্তি
আনসারগণের ফজিলত মর্যাদা এবং তাদের ব্যাপারে নবী সাঃ এর উক্তি >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৩, আনসারগণের মর্যাদা, অধ্যায়ঃ (১-১১)=১২টি
৬৩/১. অধ্যায়ঃ আনসারগণের মর্যাদা।
৬৩/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ যদি হিজরত না হত তাহলে আমি আনসারদেরই একজন হতাম।
৬৩/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন।
৬৩/৪. অধ্যায়ঃ আনসারগণকে ভালবাসা।
৬৩/৫. অধ্যায়ঃ আনসারদের লক্ষ্য করে নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ মানুষের মাঝে তোমরা আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয়।
৬৩/৬. অধ্যায়ঃ আনসারগণের অনুসারীরা।
৬৩/৭. অধ্যায়ঃ আনসার গোত্র সমূহের মর্যাদা।
৬৩/৮. অধ্যায়ঃ আনসারগণের ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করিবে যে পর্যন্ত না তোমরা হাওয কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর।
৬৩/৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর দুআ- হে আল্লাহ! আনসার ও মুহাজিরগণের কল্যান কর।
৬৩/১০. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আর তারা (আনসারগণ) নিজেরা অসচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। (আল-হাশর ৯)
৬৩/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ তাদের (আনসারদের) সৎকর্মশীলদের পক্ষ হইতে (সৎ কার্য) কবূল কর, এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তিকারীদের ক্ষমা করে দাও।
৬৩/১. অধ্যায়ঃ আনসারগণের মর্যাদা।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর যারা মুহাজিরগণের আগমনের পূর্ব হইতেই এ নগরীতে (মদীনাতে) বসবাস করেছে ও ঈমান এনেছে এবং মুহাজিরগণকে ভালবাসে আর মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। (আল-হাশর ৯)
৩৭৭৬
গাইলান ইবনু জারীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.) – কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের আনসার নামকরণ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী? এ নাম কি আপনারা করিয়াছেন, না আল্লাহ আপনাদের এ নামকরণ করিয়াছেন? আনাস (রাদি.) বলিলেন, বরং আল্লাহ তাআলা আমাদের এ নামকরণ করিয়াছেন। [গাইলান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] আমরা যখন আনাস (রাদি.) – এর নিকট যেতাম, তখন তিনি আমাদেরকে আনসারদের গুণাবলী ও কার্যাবলী বর্ণনা করে শুনাতেন। তিনি আমাকে অথবা আয্দ গোত্রের এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলিতেন, তোমার গোত্র অমুক দিন অমুক কাজ করিয়াছেন, অমুক দিন অমুক কাজ করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৪, ইঃফাঃ ৩৫০২)
৩৭৭৭
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বুআস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল, যা আল্লাহ তাআলা তাহাঁর মদীনা আগমনের পূর্বেই ঘটিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন মদীনায় আগমন করিলেন তখন সেখানকার গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ এ যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। তাদের ইসলাম গ্রহণকে আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) – এর জন্য অনুকূল করে দিয়েছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৫, ইঃফাঃ ৩৫০৩)
৩৭৭৮
আবু তাইয়্যাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস (রাদি.) – কে বলিতে শুনিয়াছি, মক্কাহ বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কুরাইশদেরকে মালে গনীমত দিলে কিছু সংখ্যক আনসার বলেছিলেন যে, এ বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি কুরাইশদের মাল দিলেন অথচ আমাদের তলোয়ার হইতে তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট এ কথা পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে বলিলেন, আমি তোমাদের হইতে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কী? যেহেতু তাঁরা মিথ্যা কথা বলিতেন না, সেহেতু তাঁরা বলিলেন, আপনার নিকট যা পৌঁছেছে তা সত্যই। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরবে। যদি আনসারগণ উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৬, ইঃফাঃ ৩৫০৪)
৬৩/২. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ যদি হিজরত না হত তাহলে আমি আনসারদেরই একজন হতাম।
আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে একথা বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৭৭৯
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) অথবা তিনি বলেছেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেন, আনসারগণ যদি কোন উপত্যকা বা গিরিপথে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব। যদি হিজরত না হত, তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এ কথায় কোন অত্যুক্তি করেননি। আমার মাতা-পিতা তাহাঁর উপর কুরবান হোক তারা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন, সর্বতোভাবে সাহায্য করিয়াছেন। কিংবা এমন কিছু বলেছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৭, ইঃফাঃ ৩৫০৫)
৬৩/৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) কর্তৃক মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন।
৩৭৮০
আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন মুহাজিরগণ মদীনায় আগমন করিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আউফ ও সাদ ইবনু রাবী (রাদি.) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। তখন তিনি [সাদ (রাদি.)] আবদুর রাহমান (রাদি.) কে বলিলেন, আনসারদের মধ্যে আমিই সব থেকে বেশি সম্পদের অধিকারী। আপনি আমার সম্পদকে দুভাগ করে নিন। আমার দুজন স্ত্রী রয়েছে, আপনার যাকে পছন্দ হয় বলুন, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত শেষে আপনি তাকে বিয়ে করে নিবেন। আবদুর রহমান (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আপনার পরিবারে এবং সম্পদে বরকত দান করুন। আপনাদের বাজার কোথায়? তারা তাঁকে বনূ কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দিলেন। যখন ঘরে ফিরলেন তখন কিছু পনির ও কিছু ঘি সাথে নিয়ে ফিরলেন। এরপর প্রতিদিন সকাল বেলা বাজার যেতে লাগলেন। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর কাছে এমন অবস্থায় আসলেন যে, তাহাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রং এর চিহ্ন ছিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ব্যাপার কী! তিনি (রাদি.) বলিলেন, আমি বিয়ে করেছি। নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তাকে কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? তিনি বলিলেন, খেজুরের এক আঁটির পরিমাণ অথবা খেজুরের এক আঁটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৮, ইঃফাঃ ৩৫০৬)
৩৭৮১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাদি.) হিজরত করে আমাদের কাছে এলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর ও সাদ ইবনু রাবী (রাদি.) – এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জুড়ে দিলেন। সাদ (রাদি.) ছিলেন অনেক সম্পদশালী। সাদ (রাদি.) বলিলেন, সকল আনসারগণ জানেন যে আমি তাঁদের মধ্যে অধিক সম্পদশালী। আমি শীঘ্রই আমার ও তোমার মাঝে আমার সম্পদ ভাগাভাগি করে দিব দুই ভাগে। আমার দুজন স্ত্রী রয়েছে; তোমার যাকে পছন্দ হয় বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত শেষে তুমি তাকে বিয়ে করে নিবে। আবদুর রাহমান (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহ আপনার পরিবার পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। ব্যবসা আরম্ভ করে বাজার হইতে মুনাফা স্বরূপ ঘি ও পনির সাথে নিয়ে ফিরলেন। অল্প কয়েকদিন পর তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট হাযির হলেন। তখন তাহাঁর শরীরে ও কাপড়ে হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, ব্যাপার কী? তিনি বলিলেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তাঁকে কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? তিনি বলিলেন, খেজুরের এক আঁটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি অথবা একটি আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।
(আঃপ্রঃ ৩৪৯৯, ইঃফাঃ ৩৫০৭)
৩৭৮২
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসারগণ বলিলেন, আমাদের খেজুরের বাগানগুলি আমাদের এবং তাদের (মুহাজিরদের) মাঝে বন্টন করে দিন। তিনি [নাবী (সাঃআঃ)] বলিলেন, না, তখন আনসারগণ বলিলেন, আপনারা বাগানগুলির রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সাহায্য করুন এবং ফসলের অংশীদার হয়ে যান। মুহাজিরগণ বলিলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।
(আঃপ্রঃ ৩৫০০, ইঃফাঃ ৩৫০৮)
৬৩/৪. অধ্যায়ঃ আনসারগণকে ভালবাসা।
৩৭৮৩
বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি, মুমিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ তাআলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করিবে আল্লাহ তাআলা তাকে ঘৃণা করবেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০১, ইঃফাঃ ৩৫০৯)
৩৭৮৪
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আনসারদের প্রতি ভালবাসা ঈমানেরই নিদর্শন এবং তাঁদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকীর নিদর্শন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০২, ইঃফাঃ ৩৫১০)
৬৩/৫. অধ্যায়ঃ আনসারদের লক্ষ্য করে নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ মানুষের মাঝে তোমরা আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয়।
৩৭৮৫
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (আনসারের) কতিপয় বালক-বালিকা ও নারীকে রাবী (বর্ণনাকারী) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, কোন বিবাহ অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখে নাবী (সাঃআঃ) তাঁদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ জানেন, তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৩, ইঃফাঃ ৩৫১১)
৩৭৮৬
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট হাযির হলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার সঙ্গে কথা বলিলেন এবং বলিলেন, ঐ আল্লাহর কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি দুবার বলিলেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৪, ইঃফাঃ ৩৫১২)
৬৩/৬. অধ্যায়ঃ আনসারগণের অনুসারীরা।
৩৭৮৭
যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসারগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! প্রত্যেক নাবীরই অনুসারী ছিলেন। আমরাও আপনার অনুসারী। আপনি আমাদের উত্তরসুরীদের জন্য দুআ করুন যেন তারা আপনার অনুসারী হয়। তিনি দুআ করিলেন। (রাবী বলেন) আমি এই হাদীসটি ইবনু আবু লায়লার নিকট বর্ণনা করলাম, তিনি বলিলেন, যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.) এভাবেই হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৫, ইঃফাঃ ৩৫১৩)
৩৭৮৮
আবু হামযাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হামযাহ (রাদি.) নামক একজন আনসারী হইতে বর্ণিত, কতিপয় আনসার বলিলেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যে অনুসরণকারী একটি দল থাকে। হে আল্লাহর রাসুল! আমরাও আপনার অনুসরণ করেছি। আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন আমাদের উত্তরসুরিরা আমাদের অনুসারী হয়। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহ তাঁদের উত্তরসুরীদেরকে তাদের মত করে দাও। আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি হাদীসটি আবদুর রাহমান ইবনু আবু লায়লা (রাদি.) – কে বললাম। তিনি বলিলেন, যায়দও এইভাবে হাদীসটি বলেছেন। শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার ধারণা, ইনি যায়দ ইবনু আরকাম (রাদি.)-ই হইবেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৬, ইঃফাঃ ৩৫১৪)
৬৩/৭. অধ্যায়ঃ আনসার গোত্রসমূহের মর্যাদা।
৩৭৮৯
আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল তারপর বানূ হারিস ইবনু খাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা এবং আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ শুনে সাদ (রাদি.) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) কি অন্যদেরকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন? তখন তাকে বলা হল, তোমাদেরকে তো অনেক গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন। আবদুল ওয়ারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… আবু উসাউদ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ রকমই বর্ণিত আছে। আর সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) বলেছেন।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৭, ইঃফাঃ ৩৫১৫)
৩৭৯০
আবু উসায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ) – কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, আনসারদের মধ্যে বা আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, বানূ আবদুল আশহাল, বানূ হারিস ও বানূ সায়িদা।
(আঃপ্রঃ ৩৫০৮, ইঃফাঃ ৩৫১৬)
৩৭৯১
আবু হুমায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুমায়দ (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল, তারপর বানূ হারিস এরপর বানূ সায়িদা। আনসারদের সকল গোত্রে রয়েছে কল্যাণ। (আবু হুমায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন,) আমরা সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) – এর নিকট গেলাম। তখন আবু উসায়দ (রাদি.) বলিলেন, আপনি কি শোনেননি যে নাবী (সাঃআঃ) আনসারদের পরস্পরের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করিতে গিয়ে আমাদের সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন? তা শুনে সাদ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) – এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আনসার গোত্রগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সকলের শেষ স্তরে স্থান দেয়া হয়েছে। তিনি বলিলেন, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমরাও শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছ?
(মুসলিম, ৪৩/৩ হাদীস নং ১৩৯২) (আঃপ্রঃ ৩৫০৯, ইঃফাঃ ৩৫১৭)
৬৩/৮. অধ্যায়ঃ আনসারগণের ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করিবে যে পর্যন্ত না তোমরা হাওয কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর।
হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
৩৭৯২
উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একজন আনসারী বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না? তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখিতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্য ধারণ করিবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত করিবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাত স্থান হল হাউয।
(আঃপ্রঃ ৩৫১০/৩৫১১, ইঃফাঃ ৩৫১৮)
৩৭৯৩
আনাস বিন মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আনসারদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা অচিরেই আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবে। অতএব তোমরা আমার সাথে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ কর প্রতিশ্রুত হাউযের নিকট গমন পর্যন্ত।
(আঃপ্রঃ নাই, ইঃফাঃ নাই)
৩৭৯৪
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি যখন আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-এর সঙ্গে ওয়ালিদ (ইবনু আবদুল মালিক)-এর নিকট সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বাসরা হইতে দামেস্কে সফর করিতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি আনাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনেছেন, নাবী (সাঃআঃ) বাহরাইনের জমি তাদের জন্য বরাদ্দ করার জন্য আনসারদেরকে ডাকলে তারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মুহাজির ভাইদের জন্য এরূপ জায়গার বরাদ্দ না করা পর্যন্ত আমরা তা গ্রহণ করব না। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা যদি তা গ্রহণ করিতে না চাও, তবে (ক্বিয়ামতের ময়দানে) হাউযের নিকটে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য অবলম্বন কর। কেননা শীঘ্রই তোমরা দেখিতে পাবে, আমার পরে তোমাদের উপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
(আঃপ্রঃ ৩৫১২, ইঃফাঃ ৩৫১৯)
৬৩/৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর দুআ- হে আল্লাহ! আনসার ও মুহাজিরগণের কল্যান কর।
৩৭৯৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ! আনসার ও মুহাজিরগণের কল্যান করুন। (২৮৩৪)
কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে এ রকম বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ! আনসারকে মাফ করে দিন।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৩, ইঃফাঃ ৩৫২০)
৩৭৯৬
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দক যুদ্ধের পরিখা খননের সময় বলেছিলেন, আমরা হলাম ঐ সমস্ত লোক যারা মুহাম্মদ (সাঃআঃ) – এর হাতে জিহাদের জন্য বায়আত করেছি যত দিন আমরা বেঁচে থাকব। এর উত্তরে নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। (হে আল্লাহ) আনসার ও মুহাজিরদের সম্মান বাড়িয়ে দাও।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৪, ইঃফাঃ ৩৫২১)
৩৭৯৭
সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন পরিখা খনন করে আমাদের স্কন্ধে করে মাটি বহন করছিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। মুহাজির ও আনসারদের আপনি মাফ করে দিন।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৫, ইঃফাঃ ৩৫২২)
৬৩/১০. অধ্যায়ঃ (আল্লাহর বাণী): আর তারা (আনসারগণ) নিজেরা অসচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। (আল-হাশর ৯)
৩৭৯৮
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক লোক নাবী (সাঃআঃ) – এর খেদমতে এল। তিনি (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের নিকট পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারী সাহাবী [আবু ত্বলহা (রাদি.)] বলিলেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বলিলেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বলিলেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল তা উপস্থিত করিল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করিতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর নিকট গেলেন, তখন তিনি (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কান্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করিয়াছেন। “তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হইতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত।”
(আঃপ্রঃ ৩৫১৬, ইঃফাঃ ৩৫২৩)
৬৩/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) – এর উক্তিঃ তাদের (আনসারদের) সৎকর্মশীলদের পক্ষ হইতে (সৎ কার্য) কবূল কর, এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তিকারীদের ক্ষমা করে দাও।
৩৭৯৯
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত তখন আবু বক্র ও আব্বাস (রাদি.) আনসারদের কোন একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার কালে দেখিতে পেলেন যে, তারা কাঁদছেন। তাঁদের একজন জিজ্ঞেস করিলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? তাঁরা বলিলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)- এর সাথে মজলিস স্মরণ করে কাঁদছি। তারা নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট এসে আনসারদের অবস্থা বলিলেন, রাবী (বর্ণনাকারী) বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) চাদরের কোণা দিয়ে মাথা বেঁধে বেরিয়ে আসলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। এ দিনের পর আর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেননি। তারপর হামদ ও সানা পাঠ করে সমবেত সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলিলেন, আমি আনসারগণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি; কেননা তাঁরাই আমার অতি আপন জন, তাঁরাই আমার বিশ্বস্ত লোক। তারা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে। তাঁদের যা প্রাপ্য তা তাঁরা এখনও পায়নি। তাঁদের নেক লোকদের নেক আমালগুলো গ্রহণ করিবে এবং তাঁদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দিবে।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৭, ইঃফাঃ ৩৫২৪)
৩৮০০
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি চাদর গায়ে জড়িয়ে, চাদরের দু-প্রান্ত দুকাধে পেঁচিয়ে এবং মাথায় একটি কাল রঙের পাগড়ী বেঁধে বের হলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। হামদ ও সানার পর বলিলেন, হে লোক সকল, জনসংখ্যা ক্রমশঃ বাড়তে থাকবে আর আনসারগণের সংখ্যা ক্রমশঃ কমতে থাকবে! এমনকি তারা খাবারে লবণের পরিমাণের মত হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করে যে ইচ্ছা করলে কারো উপকার বা অপকার করিতে পারে, তখন সে যেন নেক্কার আনসারদের নেক্ আমালগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দেয়।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৮, ইঃফাঃ ৩৫২৫)
৩৮০১
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আনসারগণ আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। লোকসংখ্যা বাড়তে থাকবে আর তাদের সংখ্যা কমতে থাকবে। তাই তাদের নেক্কারদের নেক আমালগুলো কবূল কর এবং তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দাও।
(আঃপ্রঃ ৩৫১৯, ইঃফাঃ ৩৫২৬)
Leave a Reply