আদাবুল মুফরাদ – আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা বাধ্যতামূলক

আদাবুল মুফরাদ – আত্মীয়তার বন্ধন

আদাবুল মুফরাদ , এই অধ্যায়ে মোট = ২৯ টি হাদীস (৪৭ – ৭৫) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ২ আত্মীয়তার বন্ধন

২৫. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা বাধ্যতামূলক।
২৬. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন।
২৭. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক অটুট রাখার ফযীলাত।
২৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-সম্পর্ক বজায় রাখলে হায়াত বাড়ে।
২৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।
৩০. অনুচ্ছেদ ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুসারে ঘনিষ্ঠতর আচরণ।
৩১. অনুচ্ছেদঃ যাদের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকে তাহাদের উপর রহমাত নাযিল হয় না।
৩২. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর পাপ।
৩৩. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর পার্থিব শাস্তি।
৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী স্বার্থপর।
৩৫. অনুচ্ছেদঃ বিবেক বর্জিত আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারীর ফযীলাত।
৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইসলাম-পূর্ব যুগে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করেছে।
৩৭. অনুচ্ছেদঃ মুশরিক আত্মীয়ের সাথে রক্তের বন্ধন ও পরস্পর উপহারাদি বিনিময়।
৩৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষার্থে তোমাদের বংশ পরিচিতি জেনে রাখো।
৩৯. অনুচ্ছেদঃ মুক্তদাস কি বলবে, আমি অমুকের সাথে সম্পৃক্ত?
৪০. অনুচ্ছেদঃ কোন গোষ্ঠীর মুক্তদাস তাহাদের অন্তর্ভুক্ত।

২৫. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা বাধ্যতামূলক।

৪৭. কুলাইব ইবনি মানফায়া [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমার দাদা বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! সদাচরণ প্রাপ্তির ব্যাপারে কে অগ্রগণ্য? তিনি বলেনঃ তোমার পিতা-মাতা, তোমার ভাইবোন এবং এতদসংশ্লিষ্ট তোমার গোলাম, এদের অধিকার পূর্ণ করা ওয়াজিব এবং আত্মীয়-সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে

[মুসলিম, দারেমী, তিরমিজী]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যখন এই আয়াত নাযিল হলোঃ

وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ [الشعراء: 214]

“তোমার নিকটতম আত্মীয়দের সতর্ক করো”[২৬ : ২১৪], তখন নাবী [সাঃআঃ] দাঁড়ালেন এবং ডেকে বলেনঃ হে বনু কাব ইবনি লুয়াই! নিজেদেরকে আগুন [দোযখ] থেকে রক্ষা করো। হে বনু আবদে মানাফ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে হাশেম বংশীয়গণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। হে মুহাম্মদ কন্যা ফাতেমা! নিজেদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করো। অন্যথায় তোমাকে আল্লাহর বিচার থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য আমার নাই। কেবল আমার সাথে তোমাদের রক্তের বন্ধন, তা আমি সজীব রাখবো

[বোখারী, মুনাসায়ী, তিরমিজী, দারেমী, হিব্বান]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৬. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন।

৪৯. আবু আইউব আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক বেদুইন নাবী [সাঃআঃ]-এর এক সফরে তার সাথে সাক্ষাত করে বললো, যা আমাকে বেহেশতের নিকটবর্তী এবং দোযখের দূরবর্তী করিবে তা আমাকে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদত করো, তার সাথে কিছু শরীক করো না, নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুন্ন রাখো।

[বোখারী, মুসলিম, নাসায়ী]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন মহামহিম আল্লাহ যাবতীয় মাখলুকের সৃষ্টি সম্পন্ন করিলেন তখন “রেহেম” [আত্মীয়তার বন্ধন] উঠে দাড়ালো। তিনি বলেন, কি ব্যাপার! সে বললো, এ হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে যুক্ত রাখবো এবং যে তোমাকে ছিন্ন করিবে আমিও তাকে ছিন্ন করবো? রেহেম বললো, হে প্ৰভু! তিনি বলেন, এটাই তোমার প্রাপ্য। অতঃপর আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বলেন, তোমরা চাইলে পড়তে পারোঃ

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ [محمد: 22]

“তোমরা আধিপত্য লাভ করলে হয়তো পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করিবে” [৪৭ : ২২]।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫১. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আল্লাহর বাণীঃ

আর-বি. “আত্মীয়-স্বজনকে তাহাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও” [১৭ : ২৬]। যদি কারো কিছু অর্থ-সম্পদ থাকে, তবে প্রথমেই তার সর্বোত্তম কর্তব্য কি তা আল্লাহ বলে দিলেন। “নিকটাত্মীয়দেরকে তাহাদের প্রাপ্য প্রদান করে এবং দরিদ্র ও পথিকজনকেও” [১৭ : ২৬]। যদি তার কাছে কিছু না থাকে তবে সে কি করিবে তা তিনি এভাবে শিক্ষা দিলেনঃ “তুমি তোমার প্রভুর কাঙ্খিত রহমাতের আশায় থাকাকালে তাহাদেরকে বঞ্চিত করিতে হলে, তখন তাহাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো” [১৭ : ২৮]। অর্থাৎ উত্তম প্রতিশ্রুতি দাও, যেন তা নিশ্চিত এবং আল্লাহর মর্জি তা অচিরেই হয়ে যাবে। “এবং তুমি ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না” [১৭ : ২৯] অর্থাৎ দান করা থেকে তুমি একেবারে বিরত থেকো না। “এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না”[১৭ : ২৯] অর্থাৎ যা আছে তা সবই দান করো না, “তাহলে তুমি তিরস্কৃত হইবে” [১৭ : ২৯] অর্থাৎ পরে যারা আসবে তারা যেন তোমাদেরকে মুক্তহস্ত দেখে তিরস্কার না করে। এবং “মুক্তহস্ত”[১৭ : ২৯] অর্থাৎ যা দান করেছো তার জন্য পরে যেন আক্ষেপ করিতে না হয় [তারীখুল কাবীর]।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

২৭. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক অটুট রাখার ফযীলাত।

৫২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আছে। আমি তাহাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখি, কিন্তু তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাহাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে, কিন্তু আমি তা সহ্য করি। তিনি বলেনঃ যদি তোমার বক্তব্য সঠিক হয়, তবে তুমি যেন তাহাদের মুখে উত্তপ্ত ছাই পুরে দিচ্ছো। তোমার কারণে তাহাদের দুর্ভোগ আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এরূপ করিতে থাকিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী তাহাদের মোকাবিলায় তোমার সাথে থাকিবেন

[মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনি হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়া নাসায়ী]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৩. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ বলেন, আমার নাম রহমান, দয়াময়। আমি রেহেম [জরায়ু, আত্মীয় সম্পর্ক]-কে সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে তার নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে তাকে যুক্ত রাখবে আমিও তাকে আমার সাথে যুক্ত রাখবো এবং যে তাকে ছিন্ন করিবে আমিও তাকে আমার থেকে ছিন্ন করবো

[দারিমি, তিরমিজী, আবু দাউদ, হাকিম]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৪. আবুল আনবাস [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ]-র সাথে তায়েফে তার খামার বাড়ি ওয়াহত-এ গেলাম। তখন তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর আঙ্গুলসমূহ একত্র করিলেন এবং বললেনঃ রেহেম হলো রহমানের অংশ। যে তাকে যুক্ত রাখবে, আল্লাহও তাকে যুক্ত রাখবেন এবং যে তাকে ছিন্ন করিবে, আল্লাহও তাকে ছিন্ন করবেন। কিয়ামতের দিন তা সাবলীল বাগ্মীভাষী হইবে

[তিরমিজী, হাকিম]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৫. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রেহেম হলো আল্লাহর একটি শাখা। যে তাকে যুক্ত রাখবে, আল্লাহও তাকে যুক্ত রাখবেন এবং যে তাকে ছিন্ন করিবে, আল্লাহও তাকে ছিন্ন করবেন

[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-সম্পর্ক বজায় রাখলে হায়াত বাড়ে।

৫৬. আনাস ইবনি মালেক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে, তার জীবিকা প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৫৭. আবু হুরাইরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তার জীবিকা প্রশস্ত এবং আয়ু বৃদ্ধি হওয়ার দ্বারা আনন্দিত হইতে চায়, সে যেন তার আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

২৯. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন।

৫৮. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যে ব্যক্তি নিজ প্রভুকে ভয় করে এবং আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখে, তার মৃত্যু পিছিয়ে দেয়া হয়, তার সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালোবাসে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৫৯. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

যে ব্যক্তি নিজ প্রভুকে ভয় করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে, তার আয়ু ও ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করা হয় এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে ভালোবাসে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩০. অনুচ্ছেদ ঘনিষ্ঠতার পর্যায়ক্রম অনুসারে ঘনিষ্ঠতর আচরণ।

৬০. মিকদাম ইবনি মাদীকারিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, তোমাদের মায়েদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর তোমাদের পিতাহাদের সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, অতঃপর নৈকট্যের ক্রমানুসারে নিকটাত্মীয় সম্পর্কে তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬১. আবু আইউব সুলায়মান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা জুমআর রাতে আমাদের এখানে এলেন এবং বলিলেন, আমি প্রত্যেক আত্মীয়তা ছিন্নকারীকে ভালোবাসি না। আমাদের এখানে এরূপ কেউ থাকলে সে যেন উঠে যায়। কিন্তু কেউ মজলিস থেকে উঠেনি। তিনি তিনবার একথা বলিলেন। এক যুবক তার ফুফুর কাছে এলো। সে তার সাথে দুই বছর যাবত সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিল। সে তার নিকট প্রবেশ করলে সে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি কেন এসেছে? যুবক বললো, আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে এরূপ এরূপ বলিতে শুনিয়াছি। সে বললো, তুমি তার কাছে ফিরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করো, তিনি কেন এরূপ বলেন? তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আদম সন্তানের আমলসমূহ আল্লাহর কাছে প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর আমল কবুল হয় না।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৬২. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

কোন ব্যক্তি তার নিজের জন্য এবং নিজ পরিবারের জন্য সওয়াবের আশায় যা ব্যয় করে, তার প্রতিটির জন্য আল্লাহ তাকে প্রতিদান দেন। তোমার পোষ্যদের থেকে ব্যয় করা শুরু করো এবং তারপর অবশিষ্ট থাকলে পরবর্তী ঘনিষ্ঠজনকে দান করো, তারপর অবশিষ্ট থাকলে হস্ত আরো সম্প্রসারিত করো।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩১. অনুচ্ছেদঃ যাদের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকে তাহাদের উপর রহমাত নাযিল হয় না।

৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী থাকলে তাহাদের উপর আল্লাহর রহমাত নাযিল হয় না।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৩২. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারীর পাপ।

৬৪. জুবাইর ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী বেহেশতে প্রবেশ করিতে পারবে না।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৬৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রেহেম [রক্তের বাঁধন] রহমানের অংশবিশেষ। সে বলবে, “হে প্ৰভু! আমি মযলুম, হে প্ৰভু! আমি ছিন্নকৃত, হে প্ৰভু! আমি আমি…। তখন আল্লাহ তাকে জবাব দিবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে ছিন্ন করিবে, আমিও তাকে ছিন্ন করবো এবং যে তোমাকে সংযুক্ত রাখবে, আমিও তাকে সংযুক্ত রাখবো?

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৬৬. সাঈদ ইবনি সামআন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আমি আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে বালকের ও নির্বোধের নেতৃত্ব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিতে শুনিয়াছি। সাঈদ ইবনি সামআন [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইবনি হাসান আল-জুহানী [রাহিমাহুল্লাহ] আবু হুরাইরা [রাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তার নিদর্শন কি? তিনি বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হইবে, বিভ্রান্তকারীর আনুগত্য করা হইবে এবং সৎপথ প্রদর্শনকারীর অবাধ্যাচরণ করা হইবে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৩. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর পার্থিব শাস্তি।

৬৭. আবু বাকরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহু যেসব পাপীকে পার্থিব জগতেই তার পাপের ত্বরিৎ শাস্তি দেন, তা হলো আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী ও বিদ্রোহীর পাপ এবং আখেরাতেও তার জন্য শাস্তি জমা রাখেন।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী স্বার্থপর।

৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সা] বলেনঃ প্রতিদানের বিনিময়ে আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষাকারী প্রকৃত আত্মীয় রক্ষাকারী নয়। বরং আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে যে ব্যক্তি তা যুক্ত করে সে হলো আত্মীয় সম্পর্ক রক্ষাকারী।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ বিবেক বর্জিত আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারীর ফযীলাত।

৬৯. বারাআ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

এক বেদুইন এসে বললো, হে আল্লাহর নাবী! আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন, তোমার সংক্ষিপ্ত ভাষণ যদি এই হয়ে থাকে তাহলে তুমি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছো। গোলাম আযাদ করো এবং গর্দান মুক্ত করো। সে বললো, দুইটা একই বস্তু নয় কি? তিনি বলেনঃ নাসায়ী, গোলাম আযাদ করা তো কোন গোলামকে আযাদ করাই এবং গর্দান মুক্ত করা মানে আত্মীয়-স্বজনদের মুক্ত করা। যদি তা না পারো, তবে সৎকাজের আদেশ করিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করিবে। যদি তার সামথ্যও না হয়, তবে সদবাক্য বলা ছাড়া মুখ বন্ধ রাখবে।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি ইসলাম-পূর্ব যুগে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করেছে।

৭০. হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

হাকীম ইবনি হিযাম [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-কে বলেন, আমি জাহিলী যুগে যেসব কাজ করেছি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার, দাসমুক্তি এবং দান-খয়রাত ইত্যাদি, তার কোন প্রতিদান আমি পাবো কি? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার পূর্ববর্তী পুণ্যসমূহসহ তুমি মুসলমান হয়েছো।

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ মুশরিক আত্মীয়ের সাথে রক্তের বন্ধন ও পরস্পর উপহারাদি বিনিময়।

৭১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

উমার [রাঃআঃ] একটি লাল বর্ণের রেশমী চাদর দেখে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি যদি তা খরিদ করিতেন তবে জুমুআর দিন এবং আপনার নিকট বাইরের প্রতিনিধি দল এলে তা পরতেন। তিনি বলেনঃ হে উমার! যার পরকাল বলিতে কিছু নেই সে এটা পরবে। পরে অনুরূপ কিছু লাল বর্ণের রেশমী চাদর নাবী [সাঃআঃ]-কে উপঢৌকন দেয়া হয়। তিনি তা থেকে একটা চাদর উমার [রাঃআঃ]-কে উপহার পাঠান। উমার [রাঃআঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে এটা পাঠিয়েছেন, অথচ আপনি ইতিপূর্বে এ সম্পর্কে যা বলেছেন তা আমি শুনিয়াছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমার পরিধানের জন্য এটা আমি তোমাকে দেইনি। অবশ্য আমি এজন্য তোমাকে এটা দিয়েছি যে, তা বিক্রয় করিবে অথবা কাউকে পরতে

দিবে। অতএব উমার [রাঃআঃ] তার এক বৈপিত্রেয় মুশরিক ভাইকে তা উপহার দেন

[বোখারী, মুসলিম, দারিমি, নাসায়ী]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষার্থে তোমাদের বংশ পরিচিতি জেনে রাখো।

৭২. জুবাইর ইবনি মুতইম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব [রাঃআঃ]-কে মিম্বারের উপর বলিতে শুনেছেন, তোমাদের বংশ পরিচিতি [নসবনামা] জেনে রাখো, অতঃপর আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। আল্লাহর শপথ! ঘটনাক্রমে কোন ব্যক্তি ও তার ভাইয়ের মধ্যে কিছু ঘটে যায়। যদি সে জানতে পারতো যে, তার এবং অপরজনের মধ্যে রক্তের বন্ধন রহিয়াছে তাহলে তা তাকে তার ভাইকে অপদস্থ করা থেকে বিরত রাখতো

[তিরমিজী, তাবারানি]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৭৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তোমরা তোমাদের নসবনামা জেনে রাখো, তোমাদের আত্মীয় সম্পর্ক বজায় রাখো। কেননা দূরাত্মীয়ও সম্পর্কের কারণে নিকটতর হয়ে যায় এবং নিকটাত্মীয়ও সম্পর্কের অভাবে দূরে চলে যায়। প্রতিটি রক্তের বন্ধন কিয়ামতের দিন তার সংশ্লিষ্ট জনের সামনে আসবে এবং সে যদি তাকে দুনিয়ায় যুক্ত রাখে, তবে সে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। কিন্তু সে যদি তাকে দুনিয়ায় ছিন্ন করে থাকে, তবে সে তার বিরুদ্ধে সম্পর্ক ছিন্নের সাক্ষ্য দিবে

[হাকিম]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৩৯. অনুচ্ছেদঃ মুক্তদাস কি বলবে, আমি অমুকের সাথে সম্পৃক্ত?

৭৪. আবদুর রহমান ইবনি আবু হাবীব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত

আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, তুমি কোন বংশের লোক? আমি বললাম, আমি তায়েম তামীম গোত্রের। তিনি বলেন, তুমি কি সে বংশভুক্ত অথবা তাহাদের মুক্তদাস? আমি বললাম, আমি তাহাদের মুক্তদাস। তিনি বলন, তাহলে তুমি বললে না কেন যে, তুমি তাহাদের মুক্তদাস?

আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৪০. অনুচ্ছেদঃ কোন গোষ্ঠীর মুক্তদাস তাহাদের অন্তর্ভুক্ত।

৭৫. রিফায়া ইবনি রাফে [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

নাবী [সাঃআঃ] উমার [রাঃআঃ]-কে বলেনঃ তোমার গোষ্ঠীর লোকজনকে আমার কাছে সমবেত করো। অতএব তিনি তাহাদেরকে সমবেত করিলেন। তারা নাবী [সাঃআঃ]-এর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলে উমার [রাঃআঃ] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট প্রবেশ করে বলেন, আমার গোষ্ঠীর লোকজনকে আপনার কাছে সমবেত করেছি। আনসারগণ তা শুনতে পেয়ে [মনে মনে] বলেন, নিশ্চয় কুরাইশদের সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়েছে। অতএব তাহাদেরকে কি বলা হয় তা

শোনার জন্য দর্শক ও শ্রোতা এসে হাযির হলো। নাবী [সাঃআঃ] বাইরে এসে তাহাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমাদের মধ্যে তোমাদের ছাড়া অন্য কেউ আছে কি? তারা বলেন, হাঁ, আমাদের মধ্যে আমাদের বন্ধুগোত্র, আমাদের বোনপুত এবং আমাদের মুক্তদাসগণও আমাদের অন্তর্ভুক্ত রহিয়াছে। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাদের বন্ধুগোত্র আমাদের অন্তর্ভুক্ত, আমাদের বোনপুত্ররা আমাদের অন্তর্ভুক্ত এবং আমাদের মুক্তদাসগণও আমাদের অন্তর্ভুক্ত। তোমরা শোনো! তোমাদের মধ্যকার আল্লাহভীরু ব্যক্তিগণই আমার বন্ধু। তোমরা যদি তাই হও তবে তো তাই। অন্যথায় লক্ষ্য করো কিয়ামতের দিন যেন এমন না হয় যে, লোকজন তো তাহাদের সৎকর্মসমূহ নিয়ে আসবে, আর তোমরা আসবে তোমাদের পাপের বোঝাসমূহ নিয়ে এবং তা তোমাদের পক্ষ থেকে পেশ করা হইবে। অতঃপর তিনি তাহাঁর দুই হাত উচু করে তা কুরাইশদের মাথার উপর রেখে ডাক দিয়ে বলেনঃ হে লোকসকল! কুরাইশগণ আমানতদার। যে তাহাদের বিরুদ্ধাচরণ করিবে সে সমূহ বিপদ ডেকে আনবে। আল্লাহ তাকে অধঃমুখে উপুড় করে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। তিনি এ কথা তিনবার বলেন

[আবু দাউদ, হাকিম]। আদাবুল মুফরাদ হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

Comments

One response to “আদাবুল মুফরাদ – আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা বাধ্যতামূলক”

Leave a Reply