আত তারগীব ওয়াত তারহীব – রিয়া থেকে সতর্কী করন

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -রিয়া থেকে সতর্কী

<< সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব হাদীস বই এর মুল সুচিপত্র << আত তারগীব ওয়াত তারহীব -রিয়া থেকে সতর্কী

পরিচ্ছেদঃ রিয়া থেকে সতর্কী

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -২২ঃ আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]কে একথা বলিতে  শুনেছিঃ “কিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যার বিচার করা হইবে, সে এমন ব্যক্তি যে শাহাদত বরণ করেছে। তাকে সামনে নিয়ে আসা হইবে। তখন [আল্লাহ] তাকে প্রদত্ত নেয়ামতরাজীর পরিচয় করবেন। সে উহা চিনতে পারবে। বলবেন, কি কাজ করেছ তা দ্বারা? সে বলবে, তোমার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে গেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি যুদ্ধ করেছ, এই উদ্দেশ্যে যে, তোমাকে বলা হইবে উমুক ব্যক্তি বীর যোদ্ধা। আর তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হইবে, তখন তাকে মুখের ভরে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।
এবং [সর্বপ্রথম বিচার করা হইবে] সেই ব্যক্তির যে জ্ঞানার্জন করেছিল ও মানুষকে তা শিক্ষাদান করেছিল এবং কুরআন পাঠ করেছিল। তাকে নিয়ে আসা হইবে। অতঃপর [আল্লাহ] তাকে প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের পরিচয় করাবেন। সে উহা চিনতে পারবে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, কি আমল করেছ এই নেয়ামত দ্বারা। সে বলবে, জ্ঞানার্জন করেছি এবং মানুষকে তা শিখিয়েছি। আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন পাঠ করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি জ্ঞানার্জন করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, [তোমাকে] বলা হইবে আলেম বা জ্ঞানী। কুরআন পাঠ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, [তোমাকে] বলা হইবে ক্বারী বা পাঠক। আর তা তো বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হইবে, তখন তাকে মুখের ভরে টেনে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।
এবং [সর্ব প্রথম বিচার করা হইবে] সেই ব্যক্তির, আল্লাহ যাকে প্রাচুর্য দান করেছিলেন, দান করেছিলেন বিভিন্ন ধরণের সম্পদ। তাকে নিয়ে আসা হইবে। অতঃপর [আল্লাহ তা`আলা] তাকে প্রদত্ত নেয়ামত রাজীর পরিচয় করবেন। সে উহা চিনতে পারবে। তখন তিনি প্রশ্ন করবেন, কি কাজ করেছ এই নেয়ামত সমূহ দ্বারা? সে জবাব দিবে, যে পথে অর্থ ব্যয় করলে আপনি খুশি হইবেন। এ ধরনের সকল পথে আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অর্থ সম্পদ ব্যয় করেছি। তিনি বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এরূপ করেছ এই উদ্দেশ্যে যে, [তোমাকে] বলা হইবে, সে দানবীর। আর তা তো বলাই হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হইবে। তখন তাকে মুখের ভরে ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হইবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।”

[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন ইমাম মুসলিম ও নাসাঈ]
হাদীছটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে তাকে হাসান বলেন এবং ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, উভয়ের বাক্যরূপ একইঃ
ওয়ালীদ বিন আবুল ওয়ালীদ আবু উছমান আল মাদীনী হতে বৰ্ণিত। উক্ববা বিন মুসলিম তাহাঁর কাছে হাদীছ বর্ণনা করেন যে, শুফাইয়া আল আসবাহী বর্ণনা করেন, তিনি [শুফাইয়া] একদা মদীনায় প্রবেশ করিলেন, এসময় তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, মানুষ তার নিকট একত্রিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করিলেন, কে এই লোক? তারা বললঃ আবু হুরায়রা। তিনি বলেনঃ একথা শুনে আমি তাহাঁর নিকটবর্তী হলাম, এমনকি তাহাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। সে সময় মানুষকে তিনি হাদীছ শুনাচ্ছিলেন। যখন তিনি থামলেন এবং নির্জন হলেন, আমি তাঁকে বললাম, দয়া করে আপনি আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করুন, যা আপনি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]এর নিকট থেকে শুনে বুঝেছেন ও জেনেছেন। আবু হুরায়রা বললেনঃ তা করব, আমি অবশ্যই তোমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করব যা আমার নিকট রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বৰ্ণনা করিয়াছেন। আমি তা বুঝেছি এবং জেনেছি। অতঃপর আবু হুরায়রা চিৎকার দিয়ে উঠলেন [একনকি ভয়ে প্রায় বেহুশ হয়ে গেলেন]। আমরা কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। অতঃপর বললেনঃ আমি অবশ্যই তোমার নিকট একটি হাদীছ বৰ্ণনা করব, যা রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। আমি এবং তিনি এই ঘরেই ছিলাম। আমাদের সাথে আমি এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। অতঃপর আবার আবু হুরায়রা চিৎকার দিয়ে উঠলেন। অতঃপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। এবং মুখমন্ডলে হাত বুলালেন। বলিলেন, তা করব, আমি অবশ্যই তোমার নিকট একটি হাদীছ বর্ণনা করব, যা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন। আমি এবং তিনি এই ঘরেই ছিলাম। আমাদের সাথে আমি এবং তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা। অতঃপর আবার আবু হুরায়রা ভীষণ ভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলেন এবং মুখের ভরে পড়ে যেতে লাগলেন। আমি তাঁকে দীর্ঘ সময় সোজা করে ধরে রাখলাম। অতঃপর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট বর্ণনা করেছেনঃ
“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাবারকা ওয়া তা`আলা বান্দাদের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার জন্য অবতরন করবেন। প্রত্যেক জাতি হাঁটুর উপর ভর করে নতজানু অবস্থায় থাকিবে। সর্বপ্রথম যাকে ডাকা হইবে সে এক ব্যক্তি যে কুরআনের প্রচুর জ্ঞানার্জন করেছিল, আর এক ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে নিহত হয়েছিল এবং এক ব্যক্তি যে অঢেল সম্পদের অধিকারী ছিল। সম্মানিত মহান আল্লাহ কুরআনের ক্বারীকে বলবেন, আমার রাসূলের উপর আমি যা নাযিল করেছিলাম তার জ্ঞান কি তোমাকে দান করি নি? সে বলবে, হাঁ হে আমার প্রতিপালক। তিনি বলবেন, যে জ্ঞান অর্জন করেছ সে অনুযায়ী কি আমল করেছ? বলবে আমি রাত-দিন তা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি তার হক আদায় করেছি। সম্মানিত মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। আর মহান আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো ইচ্ছে করেছিলে যে, [তোমাকে] বলা হইবে উমুক ব্যক্তি ক্বারী। আর তা তো বলাই হয়েছে।
সম্পদশালী ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হইবে। সম্মানিত মহান আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমি কি তোমাকে সম্পদের প্রাচুর্য দান করিনি? এমনকি কারো মুখাপেক্ষী করে তোমাকে রাখিনি? সে বলবে, হ্যাঁ, হে আমার বর। তিনি বলবেনঃ তোমাকে যা দান করেছিলাম তা কোন কাজে ব্যবহার করেছ? সে বলবেঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতাম এবং দান-সাদকা করতাম। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। সুমহান আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো হচ্ছে করেছিলে যে, তোমাকে বলা হইবে উমুক ব্যক্তি দানশীল। আর তা তো অবশ্যই বলা হয়েছে।
আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হইবে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ কি কারনে নিহত হয়েছ? সে বলবে, হে প্ৰভু! আপনার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য আপনি আদেশ করেছিলেন, তাই লড়াই করে নিহত হয়েছি। আল্লাহ তা`আলা তাকে বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। ফেরেশতারাও বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহ বলবেনঃ বরং তুমি তো ইচ্ছে করেছিলে যে, [তোমাকে] বলা হইবে উমুক ব্যক্তি বীর যোদ্ধা। আর তা তো অবশ্যই বলা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার হাঁটুর উপর আঘাত করে বললেনঃ “হে আবু হুরায়রা! আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এরা হল তিন ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে যাদেরকে সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুনে প্রজ্জলিত করা হইবে।”
আল ওয়ালীদ আবু উছামান আল মাদীনী বলেনঃ উক্ববা আমাকে সংবাদ দেন যে, শুফাইয়াই আবার মুআবিয়ার নিকট গিয়ে এই হাদীছ বর্ণনা করেন। আবু উছমান বলেন, আর আলা বিন আবু হাকীম আমাকে বলেন যে, তিনি [শুফাইয়া] ছিলেন মুআবিয়ার জন্য তরবারী স্বরূপ। তিনি [আবু উছমান] বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট গিয়ে আবু হুরায়রার বরাত দিয়ে এ হাদীছ বর্ণনা করেন। হাদীছ শুনে মুআবিয়া বলেনঃ এ ধরণের ব্যক্তিদের সাথে এরকম ব্যবহার হইবে, তাহলে বাকী মানুষের অবস্থা কি হইবে? অতঃপর মুআবিয়া খুব কাঁদতে লাগলেন। তার ক্ৰন্দনের আধিক্যতা দেখে আমরা মনে করলাম তিনি হয়ত মারাই যাবেন। বললামঃ এ লোকটি আমাদের জন্য অমঙ্গল নিয়ে এসেছে। মুআবিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসে মুখমন্ডল মুছলেন এবং বললেনঃ আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূল সত্যই বলেছেনঃ [مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآَخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ[
“যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন এবং তার চাকচিক্য কামনা করিবে, আমি তাহাদের কর্মের প্রতিদান দুনিয়াতেই পুরাপুরি দান করব। এবং তাহাদের কোন প্রকার কমতি করা হইবে না। এদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। দুনিয়াতে তারা যা করেছে তা ধ্বংস হয়ে গেছে আর যা সম্পাদন করেছে তা বিনষ্ট হয়েছে।”[সূরা হূদঃ১৫-১৬]
হাদীছটি ইবনু খাযায়মা স্বীয় [ছহীহ] গ্রন্থে এরূপই বর্ণনা করেন। দুয়েকটি শব্দ ছাড়া তেমন কোথাও তেমন বৈপরিত্য নেই। হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -২৩ঃউবাই বিন কাব [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ “এই উম্মত [মুহাম্মদী]-কে দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্মান ও মর্যাদার সুসংবাদ দাও। আর সুসংবাদ দাও পৃথিবীতে আধিপত্য লাভের। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের কাজ করিবে, পরকালে তার জন্য কোনই অংশ থাকিবে না।”

[আহমাদ, ইবনে হিব্বান সহীহ গ্রন্থে, হাকেম ও বাইহাকী হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন]

বাইহাকীর অপর বর্ণনায় রহিয়াছে, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ
“এই উম্মতকে সুসংবাদ দাও- সহজতা ও দ্বীনের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের। আরো [সুসংবাদ দাও] রাজ্যসমূহে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ও বিজয় লাভের। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে আখেরাতের আমল করিবে, তার জন্য পরকালে কোনই অংশ থাকিবে না।” হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -২৪ঃআবু হিন্দ আদদারী [রাঃআঃ] হতে বর্ণিত-

তিনি শুনেছেন নবী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “যে ব্যক্তি রিয়া এবং শ্রুতির উদ্দেশ্যে কোন আমল করিবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার গুপ্ত অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন এবং সকলের সম্মুখে তাকে লাঞ্ছিত করবেন।”

[হাদীছটি ইমাম আহমাদ উত্তম সনদে ও বায়হাকী বর্ণনা করেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -২৫-আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি শুনিয়াছি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “যে ব্যক্তি মানুষের সামনে নিজের আমলের কথা শুনিয়ে বেড়াবে, আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সামনে তার কথা শুনিয়ে দিবেন এবং তাকে ক্ষুদ্র করে দিবেন এবং লাঞ্ছিত করবেন।”

[হাদীছটি ত্বাবরানী [কবীর] গ্রন্থে কয়েকটি সনদে বর্ণনা করেন। সেগুলোর একটি বিশুদ্ধ এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেন। শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি ইমাম আহমদও বর্ণনা করেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব – ২৬ -জুনদুব বিন আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “যে ব্যক্তি প্ৰশংসা শোনার জন্য নিজের আমল মানুষের সামনে প্রকাশ করিবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার খারাপ নিয়ত প্ৰকাশ করে দিবেন। যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করিবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার আমল মানুষকে দেখিয়ে দিবেন এবং তাকে সকলের সামনে লাঞ্ছিত করবেন।”

[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন বুখারী ও মুসলিম] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব – ২৭ -আউফ বিন মালেক আল আশজাঈ [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেনঃ “যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন আমল সম্পাদন করিবে আল্লাহ তার উক্ত আমল দেখিয়ে দিবেন। যে ব্যক্তি মানুষের প্রশংসা শোনার উদ্দেশ্যে কোন আমল সম্পাদন করিবে আল্লাহ তার কথা সৃষ্টিকুলকে শুনিয়ে দিবেন এবং তাকে অপমানিত করবেন।”

[হাসান সনদে তাবরানী হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ লিগাইরিহি

আত তারগীব ওয়াত তারহীব – ২৮ -মুআয বিন জাবাল [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ “যে বান্দা পৃথিবীতে শ্রুতি এবং প্রদর্শনের জন্য কোন আমল করিবে, আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে সমস্ত সৃষ্টির সামনে তার অসৎ নিয়তের কথা মানুষকে শুনিয়ে দিবেন।”

[হাসান সনদে তাবরানী হাদীছটি বর্ণনা করেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ লিগাইরিহি

আত তারগীব ওয়াত তারহীব – ২৯-ইবনে আব্বাস [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন আমল মানুষকে দেখানোর জন্যে সম্পাদন করেছে। উহা ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কাছে সোপর্দ করবেন এবং বলবেনঃ দেখো তো উহা কি তোমার কোন উপকারে আসবে?

[বায়হাক্বী মাওকুফ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ মাওকুফ

আত তারগীব ওয়াত তারহীব – ৩০ -রুবাইহ বিন আবদুর রহমান বিন আবু সাঈদ খুদরী তাহাঁর পিতা [আবদুর রহমান] হতে বর্ণিতঃ

তিনি [আবদুর রহমান] তাহাঁর [রুবাইহ] দাদা আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি [আবু সাঈদ খুদরী] বলেনঃ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদা আমাদের নিকট বের হয়ে এলেন। সে সময় আমরা মাসীহ দাজ্জালেন কথা আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ “তোমাদের জন্য দাজ্জালের চেয়ে ভয়ানক বিষয়ের সংবাদ দিব না কি? আমরা বললামঃ হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ তা হল গোপন শির্ক। উহা এইরূপ যে, কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করিতে দন্ডায়মান হইবে। অতঃপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তার সালাতকে সুসজ্জিত করিবে।”

[ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন।] হাদিসের তাহকিকঃহাসান হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩১- মাহমুদ বিন লাবীদ [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বের হয়ে এসে বললেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা গোপন শির্ক থেকে সাবধান!” তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! গোপন শির্ক কি? তিনি বললেনঃ “এক ব্যক্তি সালাতে দন্ডায়মান হইবে অতঃপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে তার সালাতকে সুন্দর করিবে। আর এটাই হল গোপন শির্ক।”

[ইবনু খুযায়মা [সহীহ] গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩২ -মাহমূদ বিন লাবীদ [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “তোমাদের উপর সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়ের আমি আশংকা করছি তা হল শির্ক আসগার [ছোট শির্ক]।” তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “রিয়া। সম্মানিত আল্লাহ যখন মানুষকে তাহাদের কর্মফল দান করবেন তখন বলবেনঃ দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করিতে তাহাদের কাছে যাও। দেখ, তাহাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না?”

[উত্তম সনদে হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন আহমাদ, আরো বর্ণনা করেন বায়হাকী ও ইবনু আবীদ দুনিয়া] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩৩ -আবু সাঈদ বিন আবু ফুযালা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

আবু সাঈদ বিন আবু ফুযালা [রাঃআঃ] তিনি সাহাবী ছিলেন, তাহাঁর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ “আল্লাহ তা`আলা যখন কিয়ামত দিবসে —যে দিবসের ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই- সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করিবে, যে ব্যক্তি স্বীয় আমল আল্লাহর সাথে অন্যকে অংশীদার করেছে, সে যেন তার নিকটেই স্বীয় আমলের প্রতিদান তলব করে। কেননা আল্লাহ তা`আলা অংশীদারদের অংশীস্থাপন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।”

[তিরমিয়ী, ইবনু মাজাহ, ইবনে হিব্বান ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন] হাদিসের তাহকিকঃহাসান হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩৪ -আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ
সম্মানিত আল্লাহ এরশাদ করেনঃ “আমি অংশীদারদের অংশীস্থাপন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার উদ্দেশ্যে কোন আমল করে তাতে আমার সাথে অন্যকে অংশীদার করে, তবে উক্ত আমল থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। আমলটি তার সেই অংশীদারের জন্যই নির্দিষ্ট [অর্থাৎ তা সম্পূর্ণ বাতিল]।

[ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মা ও বায়হাকী হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন, তবে হাদীছটির বাক্য ইবনু মাজাহ থেকে গৃহীত।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩৫ -ইমাম বায়হাকী ইয়ালা বিন শাদ্দাদ হতে বর্ণিতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা শাদ্দাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি [শাদ্দাদ] বলেনঃ আমরা নবী [সাঃআঃ] এর যুগে রিয়াকে ছোট শির্ক হিসেবে গণ্য করতাম।

[হাদীছটি হাকেমও বর্ণনা করেন।] হাদিসের তাহকিকঃসহীহ হাদীস

আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৩৬ -আবু আলী হতে বর্ণিতঃ

তিনি বনূ কাহেলের জনৈক ব্যক্তি। তিনি বলেনঃ আবু মূসা আশআরী [রাঃআঃ] একদা আমাদের সম্মুখে বক্তৃতা করিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সমাজ! তোমরা এই শির্ককে ভয় কর। কেননা উহা পিপিলিকার চলার শব্দ থেকেও গোপন ও সুক্ষ্ম। একথা শুনে আবদুল্লাহ বিন হাসান ও কায়স বিন মুযারেব তাহাঁর কাছে উঠে গিয়ে বললেনঃ আপনি যা বলেছেন অবশ্যই তার সূত্র আমাদেরকে বলবেন। অন্যথা আমরা ওমার বিন খাত্তাব [রাঃআঃ]এর কাছে যাব, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন বা না দিবেন। তিনি বললেনঃ বরং আমি যা বলেছি তার সূত্র বলছি। একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ “হে মানব মন্ডলি! তোমরা শির্ককে ভয় কর [তা থেকে বেঁচে থাক]। কেননা উহা পিপিলিকার চলার শব্দ থেকেও গোপন বা সুক্ষ্ম।” তখন আল্লাহ যাকে চাইলেন এমন এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমরা তা থেকে বেঁচে থাকব, অথচ উহা পিপিলিকার চলার শব্দের চেয়েও গোপন? তিনি বললেনঃ তোমরা এই দুআ বলবেঃ
[আরবি] [আল্লাহুম্মা ইন্না নাউযুবিকা মিন আন নুশরেকা বেকা শাইআন তা`লামুহু ওয়া নাসতাগাফেরুকা লিমা লা না`লামুহু] হে আল্লাহ জেনে শুনে কোন কিছুকে তোমার সাথে শরীক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং না জেনে শির্ক হয়ে গেলে তা থেকে তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

[হাদীছটি বর্ণনা করিয়াছেন আহমদ ও ত্বাবরানী]

Comments

2 responses to “আত তারগীব ওয়াত তারহীব – রিয়া থেকে সতর্কী করন”

Leave a Reply