আত্মীয়তার সম্পর্ক সদাচরণ ও শিষ্টাচার
আত্মীয়তার সম্পর্ক সদাচরণ ও শিষ্টাচার , এই পর্বের হাদীস =৪৩ টি (১৬৫২-১৬৯৪) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-৪৫ঃ সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ও শিষ্টাচার
৪৫/১. মাতাপিতার প্রতি সদাচরণ এবং তাঁরা দুজনই এর বেশি হকদার।
৪৫/২. নফল সলাত বা এ জাতীয় ইবাদাতের উপর মাতাপিতার প্রতি সদাচরণকে অগ্রাধিকার দেয়া।
৪৫/৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ও তা বিচ্ছিন্ন করা হারাম।
৪৫/৭. হিংসা, ঘৃণা ও কথা বলা নিষেধ।
৪৫/৮. শারয়ী ওযর ব্যতীত কারো সাথে তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা হারাম।
৪৫/৯. কারো প্রতি খারাপ ধারণা করা, গোয়েন্দাগিরি করা, দোষ-ত্রুটি অনে¦ষণ করা ও দালালি করা।
৪৫/১৪. মুমিন ব্যক্তি কোন অসুখে পড়লে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে অথবা এ জাতীয় কোন বিপদে পড়লে এমনকি যদি তার কাঁটাও ফুটে তাহলে এর বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেয়া হইবে।
৪৫/১৫. যুল্ম করা হারাম।
৪৫/১৬. ভাইকে সাহায্য কর সে যালিম হোক অথবা মাযলুম হোক।
৪৫/১৭. মুমিনদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি দয়া, সহযোগিতা ও সহানুভূতি করা।
৪৫/২২. অশ্লীলতা থেকে বাঁচার জন্য নম্রতা অবলম্বন করা।
৪৫/২৫. প্রকৃতপক্ষে দোষী এমন কোন ব্যক্তিকে যদি নাবী [সাঃআঃ] লানাত করেন অথবা গালি দেন অথবা তার উপর বদদুআ করেন তাহলে সেটা তার জন্য পবিত্রতা, প্রতিদান ও দয়ায় পরিগণিত হইবে।
৪৫/২৭. মিথ্যা বলা হারাম তবে তা কোন্ ক্ষেত্রে বৈধ তার বর্ণনা।
৪৫/২৯. মিথ্যার অপকারিতা, সত্যের সৌন্দর্য ও তার মর্যাদার বর্ণনা।
৪৫/৩০. রাগের সময় যে নিজেকে সংবরণ করিতে পারবে তার মর্যাদা এবং কিসে রাগ দূরীভূত হয়।
৪৫/৩২. মুখমণ্ডল বা চেহারায় মারা নিষেধ।
৪৫/৩৪. মাসজিদে, বাজারে বা যেখানে লোকজন একত্রিত তার মধ্য দিয়ে অস্ত্র নিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তির প্রতি অস্ত্রের ধারালো দিক ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ।
৪৫/৩৫. কোন মুসলিমের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা নিষেধ।
৪৫/৩৬. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানোর ফাযীলাত।
৪৫/৩৭. বিড়াল জাতীয় যে প্রাণী ক্ষতি করে না তাকে শাস্তি দেয়া হারাম।
৪৫/৪২. প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান করার বিশেষ উপদেশ।
৪৫/৪৪. হারাম নয় এমন বিষয়ে সুপারিশ করা মুস্তাহাব।
৪৫/৪৫. সৎলোকদের সাথে বসা এবং খারাপ লোক থেকে দূরে থাকা মুস্তাহাব।
৪৫/৪৬. কন্যাদের প্রতি ইহসান করার মর্যাদা।
৪৫/৪৭. সন্তানের মৃত্যুতে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।
৪৫/৪৮. আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তাকে অন্য বান্দাদের নিকটেও প্রিয় বানিয়ে দেন।
৪৫/৫০. মানুষ তার সাথে যাকে সে ভালবাসে।
৪৫/১. মাতাপিতার প্রতি সদাচরণ এবং তাঁরা দুজনই এর বেশি হকদার।
১৬৫২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক লোক রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্র রসূল ! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ তারপর কে? নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বলিলেন, তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার আব্বা।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৯৭১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১, হাঃ ২৫৪৮] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৫৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করিল। তখন তিনি বলিলেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলিল, হ্যাঁ। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তবে তাঁদের খিদমতের চেষ্টা কর।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৩৮ হাদীস নং ৩০০৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১ হাঃ ২৫৪৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/২. নফল সলাত বা এ জাতীয় ইবাদাতের উপর মাতাপিতার প্রতি সদাচরণকে অগ্রাধিকার দেয়া।
১৬৫৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তিনজন শিশু ছাড়া আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে জুরাইজ নামে ডাকা হতো। একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না সলাত আদায় করিতে থাকব। তার মা বলিল, হে আল্লাহ্! ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরাইজ তার ইবাদাত খানায় থাকত। একবার তার নিকট একটি নারী আসল। তার সঙ্গে কথা বলিল। কিন্তু জুরাইজ তা অস্বীকার করিল। অতঃপর নারীটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করিল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো। এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলিল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার নিকট আসল এবং তার ইবাদাতখানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করিল। তখন জুরাইজ উযূ সেরে ইবাদাত করিল। অতঃপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করিল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা বলিল, আমরা আপনার ইবাদাতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বলিল, না। তবে মাটি দিয়ে।
বনী ইসরাঈলের একজন নারী তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। নারীটি দুআ করিল, হে আল্লাহ্! আমার ছেলেটি তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলিল, হে আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর না। অতঃপর মুখ ফিরিয়ে স্তন্য পান করিতে লাগল।
আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখিতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন।
অতঃপর সেই নারীটির পার্শ্ব দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। নারীটি বলিল, হে আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো না। শিশুটি তাৎক্ষণিক তার মায়ের স্তন্য ছেড়ে দিল। আর বলিল, হে আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর। তার মা বলিল, তা কেন? শিশুটি বলিল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন। আর এ দাসীটির ব্যাপারে লোকে বলেছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে [দাসীটি] কিছুই করেনি।
[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৩৬; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ২ হাঃ ২৫৫০] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক ও তা বিচ্ছিন্ন করা হারাম।
১৬৫৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ্ তাআলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে রাহিম [রক্ত সম্পর্কে] দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বলিলেন, থামো। সে বলিল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বলিলেন, যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলিল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বলিলেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল।
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] বলেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করিবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করিবে।”
[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৪৮৩০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৫৬. যুবায়র ইবনি মুতইম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করিবে না।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৯৮৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৬] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৫৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাহাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।
[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ২০৬৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৭] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৭. হিংসা, ঘৃণা ও কথা বলা নিষেধ।
১৬৫৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করো না। তোমরা সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো। কোন মুসলিমের জন্য তিন দিনের অধিক তার ভাইকে পরিত্যাগ করে থাকা জায়িয নয়।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৫৭ হাদীস নং ৬০৬৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৫৫৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৮. শারয়ী ওযর ব্যতীত কারো সাথে তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা হারাম।
১৬৫৯. আবু আইউব আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে, সে তার ভাই-এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দুজনে সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে আর অপরজন সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাহাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম সালামের সূচনা করিবে, সেই উত্তম ব্যক্তি।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৬২ হাদীস নং ৬০৭৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৮, হাঃ ২৫৬০] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৯. কারো প্রতি খারাপ ধারণা করা, গোয়েন্দাগিরি করা, দোষ-ত্রুটি অনে¦ষণ করা ও দালালি করা।
১৬৬০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে থেকো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ অনুসন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, একে অন্যকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮৫ হাদীস নং ৬০৬৬; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ৯ হাঃ ২৫৬৩] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/১৪. মুমিন ব্যক্তি কোন অসুখে পড়লে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে অথবা এ জাতীয় কোন বিপদে পড়লে এমনকি যদি তার কাঁটাও ফুটে তাহলে এর বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেয়া হইবে।
১৬৬১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর চেয়ে অধিক রোগ যাতনা ভোগকারী অন্য কাউকে দেখিনি।
[বোখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৬৪৬; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭০] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রসূল ! আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমাদের দুব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললামঃ এটি এজন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ ব্যাপারটি এমনই। কেননা যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তা একটা কাঁটা হোক কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।
[বোখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৬৪৮; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪ হাঃ ২৫৭১] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদ-আপদ আপতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও।
[বোখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭২] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৪. আবু সাঈদ খুদরী ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।
[বোখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪১-৫৬৪২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭৩] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৫. আত্বা ইবনি আবু রাবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কৃষ্ণ বর্ণের মহিলাটি, সে নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বললঃ আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার ছতর খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহ্র কাছে দুআ করুন। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি যদি চাও, ধৈর্য ধারণ করিতে পার। তোমার জন্য থাকিবে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহ্র কাছে দুআ করি, যেন তোমাকে নিরাময় করেন। মহিলা বললঃ আমি ধৈর্য ধারণ করব। সে বললঃ তবে যে সে অবস্থায় ছতর খুলে যায়। কাজেই আল্লাহ্র নিকট দুআ করুন যেন আমার ছতর খুলে না যায়। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর জন্য দুআ করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৫৬৫২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭৬] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/১৫. যুল্ম করা হারাম।
১৬৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যুল্ম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করিবে।
[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ২৪৪৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৫ হাঃ ২৫৭৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুল্ম করিবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করিবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করিবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।
[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৪৪২; মুসলিম পর্ব ৪৫, অধ্যায় ১৫, হাঃ ২৫৮০] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৬৮. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যালিমদের ঢিল দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না। [বর্ণনাকারী বলেন] এরপর তিনি নাবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম] এ আয়াত পাঠ করেন
وَكَطالِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ القُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
“আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাহাদের যুলুমের দরুন। নিঃসন্দেহে তাহাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন” [সূরাহ হূদ ১১/১০২]।
[বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [১১] হূদ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৪৬৮৬; মুসলিম, পর্ব ৪৫, অধ্যায় ১৫, হাঃ ২৫৮৩] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/১৬. ভাইকে সাহায্য কর সে যালিম হোক অথবা মাযলুম হোক।
১৬৬৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করিলেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করিলেন এবং মুহাজির সাহাবী, ওহে মুহাজির ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। রসূল [সাঃআঃ] তা শুনে বলিলেন, কী খবর, জাহিলী যুগের মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা বলিলেন, এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। তিনি বলিলেন, এমন ডাকাডাকি পরিত্যাগ কর। এটা অত্যন্ত গন্ধময় কথা। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ্ ইবনি উবায়র কানে পৌঁছল, সে বলিল, আচ্ছা, মুহাজিররা এমন কাজ করেছে? “আল্লাহ্র কসম! আমরা মাদীনায় ফিরলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকেদেরকে অবশ্যই বের করে দিবে।”
এ কথা নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে পৌঁছল। তখন উমার [রাদি.] উঠে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এক্ষুণি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিচ্ছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ কথা বলিতে না পারে যে, মুহাম্মাদ তাহাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে হত্যা করেন।
{বোখারী পর্ব ৬৫, অধ্যায় ৫, হাদীস নং ৪৯০৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৬ হাঃ ২৫৮৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/১৭. মুমিনদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি দয়া, সহযোগিতা ও সহানুভূতি করা।
১৬৭০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্যে ইমারতস্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি তার হাতের আঙুলগুলো একটার মধ্যে আর একটা প্রবেশ করালেন।
[বোখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৮৮ হাদীস নং ৪৮১; মুসলিম ৫৪ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৫৮৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৭১. নুমান ইবনি বাশীর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পারস্পারিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভুতি প্রদর্শনে তুমি মুমিন্দের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬০১১; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৫৮৬] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/২২. অশ্লীলতা থেকে বাঁচার জন্য নম্রতা অবলম্বন করা।
১৬৭২. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট আসার অনুমতি চাইলে তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বললেনঃ সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভিতরে আসলে তিনি তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বলিলেন। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রসূল ! আপনি এ ব্যক্তি সম্পর্কে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সাথে নম্রতার সাথে কথাবার্তা বলিলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে-ই যার অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংশ্রব ত্যাগ করে।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৬০৫৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২২ হাঃ ২৫৯১] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/২৫. প্রকৃতপক্ষে দোষী এমন কোন ব্যক্তিকে যদি নাবী [সাঃআঃ] লানাত করেন অথবা গালি দেন অথবা তার উপর বদদুআ করেন তাহলে সেটা তার জন্য পবিত্রতা, প্রতিদান ও দয়ায় পরিগণিত হইবে।
১৬৭৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে এ দুআ করিতে শুনেছেনঃ
اللهُمَّ! فَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ سَبَبْتُهُ، فَاجْعَلْ ذَلِكَ لَهُ قُرْبَةً إِلَيْكَ، يَوْمَ القِيَامَةِ
হে আল্লাহ! যদি আমি কোন মুমিন ব্যক্তিকে মন্দ বলে থাকি, তবে আপনি সেটাকে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আপনার নৈকট্য অর্জনের উপায় বানিয়ে দিন।
[বোখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ৬৩৬১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৫, হাঃ ২৬০১] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/২৭. মিথ্যা বলা হারাম তবে তা কোন্ ক্ষেত্রে বৈধ তার বর্ণনা।
১৬৭৪. উম্মু কুলসুম বিনতে উকবাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে।
[বোখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২৬৯২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৭ হাঃ ২৬০৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/২৯. মিথ্যার অপকারিতা, সত্যের সৌন্দর্য ও তার মর্যাদার বর্ণনা।
১৬৭৫. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতের দিকে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অবশেষে সিদ্দীক-এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলিতে বলিতে অবশেষে আল্লাহ্র কাছে মহামিথ্যাচারী রূপে সাব্যস্ত হয়ে যায়।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৬৯ হাদীস নং ৬০৯৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৯ হাঃ ২৬০৬] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩০. রাগের সময় যে নিজেকে সংবরণ করিতে পারবে তার মর্যাদা এবং কিসে রাগ দূরীভূত হয়।
১৬৭৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিতে সক্ষম।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ৬১১৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩০, হাঃ ২৬০৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৭৭. সুলাইমান ইবনি সুরাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনেই দুব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাহাঁর কাছেই বসা ছিলাম, তাহাদের একজন অপর জনকে এত রাগান্বিত হয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তা হলে তার ক্রোধ চলে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি
أَعُوذ بِالله مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم
আউযু বিল্লাহি মিনাশ্শাইত্বনির রাজীম পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলিল, নাবী [সাঃআঃ] কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বললঃ আমি নিশ্চয়ই পাগল নই।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ৬১১৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩০ হাঃ ২৬১০] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩২. মুখমণ্ডল বা চেহারায় মারা নিষেধ।
১৬৭৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করিবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা হইতে বিরত থাকে।
[বোখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ২৫৫৯; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩২ হাঃ ২৬১২] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩৪. মাসজিদে, বাজারে বা যেখানে লোকজন একত্রিত তার মধ্য দিয়ে অস্ত্র নিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তির প্রতি অস্ত্রের ধারালো দিক ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ।
১৬৭৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তীর সাথে করে মাসজিদে নববী অতিক্রম করছিল। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ এর ফলাগুলো হাত দিয়ে ধরে রাখ।
[বোখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৪৫১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২৬১৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৮০. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মাসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলিমের গায়ে লেগে না যায়।
[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৭০৭৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২৬১৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩৫. কোন মুসলিমের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা নিষেধ।
১৬৮১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার অপর কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করে ইশারা না করে। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে [এক মুসলিমকে হত্যার অপরাধে] সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হইবে।
[বোখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৭০৭২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৫, হাঃ ২৬১৭] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩৬. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানোর ফাযীলাত।
১৬৮২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখিতে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন।
[বোখারী পর্ব ১০ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৬৫২; মুসলিম পর্ব ৪৫, হাঃ ১৯১৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৩৭. বিড়াল জাতীয় যে প্রাণী ক্ষতি করে না তাকে শাস্তি দেয়া হারাম।
১৬৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেন, এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করাইনি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত
। [বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৮২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৭, হাঃ ২২৪২] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪২. প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান করার বিশেষ উপদেশ।
১৬৮৪. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে জিব্রীল [আঃ] সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। আমার মনে হতো যেন, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬০১৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪২, হাঃ ২৬২৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৮৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জিব্রীল [আঃ] বরাবরই আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হয় যে, অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬০১৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪২, হাঃ ২৬২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪৪. হারাম নয় এমন বিষয়ে সুপারিশ করা মুস্তাহাব।
১৬৮৬. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলিতেনঃ তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব প্রাপ্ত হইবে, আল্লাহ তাহাঁর ইচ্ছে তাহাঁর নাবীর মুখে চূড়ান্ত করেন।
[বোখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬০২৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৪, হাঃ ২৫৮৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪৫. সৎলোকদের সাথে বসা এবং খারাপ লোক থেকে দূরে থাকা মুস্তাহাব।
১৬৮৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হল, কস্তুরী বহনকারী ও কামারের হাপরের ন্যায়। মৃগ-কস্তুরী বহনকারী হয়ত তোমাকে কিছু দান করিবে কিংবা তার নিকট হইতে তুমি কিছু ক্রয় করিবে কিংবা তার নিকট হইতে তুমি লাভ করিবে সুবাস। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার নিকট হইতে পাবে দুর্গন্ধ।
[বোখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩১ হাদীস নং ৫৫৩৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৫, হাঃ ২৬২৮] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪৬. কন্যাদের প্রতি ইহসান করার মর্যাদা।
১৬৮৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা দুটি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইলো। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দুভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিল। এরপর মহিলাটি বেরিয়ে চলে গেলে নাবী [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসলেন। তাহাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেনঃ যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হইতে আড় হয়ে দাঁড়াবে।
[বোখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ১৪১৮; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৬, হাঃ ২৬২৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪৭. সন্তানের মৃত্যুতে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।
১৬৮৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি [নাবালিগ] সন্তান মারা গেল, তবুও সে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে, এমন হইবে না। তবে কেবল কসম পূর্ণ হওয়ার পরিমাণ পর্যন্ত।
[বোখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ১২৫১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩২] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! আপনার হাদীস তো কেবলমাত্র পুরুষ শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার নিকট আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হইবে। তারপর [নির্দিষ্ট দিনে] তাঁরা সমবেত হলেন এবং নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের কাছে এলেন এবং অল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তাহাদের শিক্ষা দিলেন। এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় [মৃত্যুবরণ করে] তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের পথে অন্তরায় হয়ে যাবে। তাহাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহ্র রসূল ! যদি দুজন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি পরপর দুবার জিজ্ঞেস করিলেন। তারপর নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ দুজন হলেও, দুজন হলেও, দুজন হলেও।
[বোখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৭৩১০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩৩] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯১. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান আল-আসবাহানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি].আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এমন তিনজন, যারা সাবালক হয়নি।
[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ১০২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩৪] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৪৮. আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তাকে অন্য বান্দাদের নিকটেও প্রিয় বানিয়ে দেন।
১৬৯২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ্ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিব্রীল [আঃ] কে ডেকে বলেন, আল্লাহ্ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তাই তুমিও তাকে ভালবাস। সুতরাং জিব্রীল [আঃ] তাকে ভালবাসেন। তারপর জিব্রীল [আ.] আসমানে এ ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ্ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তোমরাও তাকে ভালবাস। তখন তাকে আসমানবাসীরা ভালবাসে এবং যমীনবাসীদের মাঝেও তাকে মাকবূল করা হয়।
[বোখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৭৪৮৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৮, হাঃ ২৬৩৭] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৪৫/৫০. মানুষ তার সাথে যাকে সে ভালবাসে।
১৬৯৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্র রসূল ! ক্বিয়ামাত কবে হইবে? তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি এর জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বললঃ আমি এর জন্য তো অধিক কিছু সলাত, সওম এবং সদাকাহ আদায় করিতে পারিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল কে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস তারই সঙ্গী হইবে।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৯৬ হাদীস নং ৬১৭১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৫০, হাঃ ২৬৩৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬৯৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ এক ব্যক্তি একদলকে ভালবাসে, কিন্তু [আমালে] তাহাদের সমকক্ষ হইতে পারেনি। তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সঙ্গী হইবে।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৯৬ হাদীস নং ৬১৭০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৫০, হাঃ ২৬৪১] আত্মীয়তার সম্পর্ক – এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply