আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত। মুশরিকের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত। মুশরিকের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত। মুশরিকের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

৭৮/৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক ভাইয়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।
৭৮/১০. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার ফাযীলাত।
৭৮/১১. অধ্যায়ঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ।
৭৮/১২. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক রক্ষা করলে রিয্‌ক বৃদ্ধি হয়।
৭৮/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করিবে, আল্লাহ তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন।
৭৮/১৪. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক প্রাণবন্ত হয়, যদি সুসম্পর্কের মাধ্যমে তাতে পানি সিঞ্চন করা হয়।
৭৮/১৫. অধ্যায়ঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক আদায়কারী নয়।
৭৮/১৬. অধ্যায়ঃ যে লোক মুশরিক হয়েও আত্মীয়তা বজায় রাখে, তারপর ইসলাম গ্রহণ করে।

৭৮/৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক ভাইয়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।

৫৯৮১

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা উমার (রাদি.) এক জোড়া রেশমী ডোরাদার কাপড় বিক্রি হইতে দেখেন। এরপর তিনি (নাবী (সাঃআঃ) -কে) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটা ক্রয় করুন, জুমুআর দিনে, আর আপনার কাছে যখন প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরবেন। তিনি বললেনঃ এটা সে-ই পরতে পারে, যার জন্য কল্যাণের কোন হিস্যা নেই। এরপর নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এ জাতীয় কারুকার্য খচিত কিছু কাপড় আসে। তিনি তা থেকে এক জোড়া কাপড় (হুল্লা) উমার (রাদি.) -এর নিকট পাঠিয়ে দেন। তিনি (এসে) বললেনঃ আমি কীভাবে এটা পরবো? অথচ এ সম্পর্কে আপনি যা বলার তা বলেছেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি পরার জন্য দেইনি, বরং এ জন্যেই দিয়েছি যে, তুমি ওটা বিক্রি করে দেবে অথবা অন্যকে পরতে দেবে। তখন উমার (রাদি.) তা মক্কায় তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন, যে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪২)

৭৮/১০. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার ফাযীলাত।

৫৯৮২

আবু আইউব আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, এক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৩)

৫৯৮৩

আবু আইউব আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যে, এক ব্যক্তি বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন একটি আমাল শিক্ষা দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। উপস্থিত লোকজন বললঃ তার কী হয়েছে? তার কী হয়েছে? রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি আল্লাহর ইবাদাত করিবে, তাহাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার গণ্য করিবে না, সলাত কায়িম করিবে, যাকাত আদায় করিবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করিবে। একে (অর্থাৎ সওয়ারীকে) ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি ঐ সময় তার সাওয়ারীর উপর ছিলেন। [১৩৯৬; মুসলিম ১/৪, হাদীস ১৩, আহমাদ ২৩৫৯৭] আঃপ্রঃ- ৫৪৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৪)

৭৮/১১. অধ্যায়ঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার গুনাহ।

৫৯৮৪

যুবায়র ইবনু মুতইম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করিবে না। [মুসলিম ৪৫/৬, হাদীস ২৫৫৬, আহমাদ ১৬৭৩২] আঃপ্রঃ- ৫৫৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৫)

৭৮/১২. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক রক্ষা করলে রিয্‌ক বৃদ্ধি হয়।

৫৯৮৫

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনেছিঃ যে লোক তার জীবিকা প্রশস্ত করিতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করিতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৬)

৫৯৮৬

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিয্‌ক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, যে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ন রাখে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৭)

৭৮/১৩. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করিবে, আল্লাহ তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবেন।

৫৯৮৭

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহ যাবতীয় সৃষ্টিকে পয়দা করিলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ সমাধা করিলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠলোঃ সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার আশ্রয় লাভকারীদের এটাই যথাযোগ্য স্থান। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ হাঁ তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো। আর যে তোমা হইতে সম্পর্ক ছিন্ন করিবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। সে (রক্ত সম্পর্ক) বললঃ হাঁ আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব! আল্লাহ বললেনঃ তা হলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ইচ্ছে করলে (এ আয়াতটি) পড়োঃ “ক্ষমতা পেলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করিবে।” সুরা মুহাম্মাদ ৪৭/২২) [৪৮৩০] আঃপ্রঃ- ৫৫৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৮)

৫৯৮৮

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ রক্ত সম্পর্কে মূল হল রাহমান। আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যে তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, আমি তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার হইতে সম্পর্ক ছিন্ন করিবে, আমিও সে লোক হইতে সম্পর্ক ছিন্ন করব। (আঃপ্রঃ- ৫৫৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৪৯)

৫৯৮৯

আয়েশা (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আত্মীয়তার হক রহমানের মূল। যে তা সংরক্ষণ করিবে, আমি তাকে সংরক্ষণ করব। আর যে তা ছিন্ন করিবে, আমি তাকে (আমার হইতে) ছিন্ন করবো।

(আঃপ্রঃ- ৫৫৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫০)

৭৮/১৪. অধ্যায়ঃ রক্ত সম্পর্ক প্রাণবন্ত হয়, যদি সুসম্পর্কের মাধ্যমে তাতে পানি সিঞ্চন করা হয়।

৫৯৯০

আমর ইবনু আস (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) কে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে শুনিয়াছি, আস্তে নয়। তিনি বলেছেনঃ অমুকের বংশ আমার বন্ধু নয়। আমর বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু জাফরের কিতাবে বংশের পরে জায়গা খালি রয়েছে। (কোন বংশের নাম নাই)। বরং আমার বন্ধু আল্লাহ ও নেককার মুমিনগণ।

আনবাসা অন্য সূত্রে আমর ইবনু আস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) থেকে আমি শুনেছিঃ বরং তাদের সাথে (আমার) আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে, আমি সুসম্পর্কের রস দিয়ে তা প্রাণবন্ত রাখি। [মুসলিম ১/৯৩, হাদীস ২১৫] আঃপ্রঃ- ৫৫৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫১)

৭৮/১৫. অধ্যায়ঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক আদায়কারী নয়।

৫৯৯১

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাবী সুফ্‌ইয়ান বলেন, আমাশ এ হাদীস মারফূরূপে বর্ণনা করেননি। অবশ্য হাসান (ইবনু আমর) ও ফিতর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একে নাবী (সাঃআঃ) থেকে মারফূ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে।(আঃপ্রঃ- ৫৫৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫২)

৭৮/১৬. অধ্যায়ঃ যে লোক মুশরিক হয়েও আত্মীয়তা বজায় রাখে, তারপর ইসলাম গ্রহণ করে।

৫৯৯২

হাকিম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার আরয করলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি জাহিলী হালাতে অনেক সাওয়াবের কাজ করেছি। যেমন, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, গোলাম আযাদ করা এবং দান-খয়রাত করা, এসব কাজে কি আমি কোন সাওয়াব পাব? হাকীম (রাদি.) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ পূর্বকৃত নেকীর বদৌলতে তুমি ইসলাম গ্রহণ করিতে পেরেছ।(আঃপ্রঃ- ৫৫৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৫৩)

ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অন্যত্র আবুল ইয়ামান সূত্রে (আত্বান্নাসুর স্থলে) আত্বাহান্নাতু বর্ণনা করিয়াছেন। (উভয় শব্দের অর্থ একই) মামার, সালিহ ও ইবনু মুসাফিরও আত্বাহান্নাসু বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তাহান্নুস মানে সৎ কাজ করা। ইবনু শিহাব তাহাঁর পিতা সূত্রে এ রকমই বর্ণনা করিয়াছেন।

Comments

Leave a Reply