আত্মহত্যা, জ্বর, চোখের দৃষ্টি হারানো ও হত্যা
আত্মহত্যা, জ্বর, চোখের দৃষ্টি হারানো ও হত্যা >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন
আত্মহত্যা, জ্বর, চোখের দৃষ্টি হারানো ও হত্যা
জ্বর ও রোগ ব্যাধি কাফ্ফারা
বান্দা অসুস্থ হলে তার জন্য সেরূপ আমল লেখা হয় যেরূপ সে সুস্থ অবস্থায় করত
চোখের দৃষ্টি হারানোর পর ধৈর্যধারণকারী ও সাওয়াবের আশা পোষণকারীর জন্য জান্নাত
অভাবের ফযীলত
আত্মহত্যা থেকে হুশিয়ারি
অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর পাপ
পিপড়া হত্যার নিষেধাজ্ঞা
৮৮. অনুচ্ছেদঃ জ্বর ও রোগ-ব্যাধি কাফফারা
হাদীসঃ ১৪৫ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সম্পর্কে বলেনঃ তিনি এক রোগীকে দেখিতে যান, যে জ্বরের কারণে অসুস্থ ছিল, -আবু হুরাইরা ছিলেন তার সাথে- রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে বলেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, আল্লাহ বলেনঃ আমার আগুন দুনিয়াতে আমি আমার মুমিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখেরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়”। (মুসনাদে আহমদ,ইবনু মাজাহ ও সুনান তিরমিযি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস
৮৯. অনুচ্ছেদঃ বান্দা অসুস্থ হলে তার জন্য সেরূপ আমল লেখা হয় যেরূপ সে সুস্থ অবস্থায় করত
হাদীসঃ ১৪৬ – উকবা ইব্ন আমের (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ দিনের এমন আমল নেই যার ওপর মোহর এঁটে দেয়া হয় না, বান্দা যখন অসুস্থ হয় ফেরেশতারা বলেঃ হে আমাদের রব, আপনার অমুক বান্দাকে আপনি অসুস্থ করে দিয়েছেন, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তার জন্য তার অনুরূপ আমল লিখতে থাক, যতক্ষণ না সে ভাল হয় অথবা মারা যায়”। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ১৪৭ – আবুল আশআস সানআনি থেকে বর্ণিতঃ তিনি দামেস্কের মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রাওয়াহ’ নামক স্থানে দুপুরে অবস্থান করেন, সেখানে তিনি সাদ্দাদ ইব্ন আউসের সাথে সাক্ষাত করেন, (তার সাথী) সুনাবিহি’ তার সাথেই ছিল। আমি বললামঃ কোথায় যাচ্ছেন, আল্লাহ আপনাদের ওপর রহম করুন, তারা বলিলঃ এখানে আমাদের এক অসুস্থ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করছি, আমরা তাকে দেখিতে যাব। আমি তাহাদের সাথে চললাম, অবশেষে তারা ঐ ব্যক্তির নিকট গেল। তারা তাকে বলিলঃ কিরূপ সকাল করিলেন? সে বলিলঃ আল্লাহর নিয়ামতসহ। সাদ্দাদ তাকে বলিলঃ গুনাহের কাফফারা ও পাপ মোচনের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আমি যখন আমার কোন মুমিন বান্দাকে পরীক্ষা করি, অতঃপর সে আমার মুসিবতের ওপর আমার প্রশংসা করে, নিশ্চয় সে ঐ বিছানা থেকে উঠে সে দিনের মত যে দিন তার মা তাকে বেগুনা জন্ম দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে আটকে রেখেছি, আমি তাকে মুসিবত দিয়েছি, অতএব তোমরা তার জন্য সওয়াব লিখতে থাক, যেমন তার সওয়াব লিখতে তার সুস্থ অবস্থায়”। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান লিগাইরিহি
৯০. অনুচ্ছেদঃ চোখের দৃষ্টি হারানোর পর ধৈর্যধারণকারী ও সওয়াবের আশা পোষণকারীর জন্য জান্নাত
হাদীসঃ ১৪৮ – আনাস ইব্ন মালিক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার বান্দাকে যখন তার দু’টি প্রিয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করি, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করে, আমি তার বিনিময়ে তাকে জান্নাত দান করি”। (সহিহ বুখারি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসে কুদসী ১৪৯ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি যার দু’টি প্রিয় বস্তু নিয়ে নেই, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করে ও সওয়াবের আশা করে, আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট হই না”। (সুনান তিরমিযি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ১৫০ – ইব্ন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি যখন আমার বান্দার প্রিয় দু’টি বস্তু গ্রহণ করি, অতঃপর সে সবর করে ও ধৈর্যধারণ করে, আমি তার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন সওয়াবে সন্তুষ্ট হব না”। (ইব্ন হিব্বান)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
৯১. অনুচ্ছেদঃ অভাবের ফযিলত
হাদীসঃ ১৫১ – আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তোমরা কি জান আল্লাহর মখলুকের মধ্যে কে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে? তারা বলিলঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর মখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করিবে অভাবী ও মুহাজির, যাদের দ্বারা সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পূর্ণ করা হয় ও যাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহাদের কেউ মারা যায় কিন্তু তার ইচ্ছা তার অন্তরেই থাকে পূর্ণ করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তার ফেরেশতাহাদের থেকে যাকে ইচ্ছা বলবেনঃ তাহাদের কাছে যাও, তাহাদেরকে সালাম কর, অতঃপর ফেরেশতারা বলেঃ আমরা আপনার আসমানের অধিবাসী, আপনার সর্বোত্তম মখলুক, আপনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাহাদের কাছ যাব এবং তাহাদেরকে সালাম করব?! তিনি বলেনঃ তারা এমন বান্দা যারা আমার ইবাদত করত আমার সাথে কাউকে শরীক করত না। তাহাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রাখা হত, তাহাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত, তাহাদের কেউ মারা যেত কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকত সে তা পূর্ণ করতে পারত না। তিনি বলেনঃ অতঃপর তখন তাহাদের নিকট ফেরেশতাগণ আসেন, প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাহাদের নিকট প্রবেশ করেনঃ তোমাদের ওপর সালাম, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছে, আখেরাতের প্রতিদান খুবই সুন্দর!”। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান লিগাইরিহি
৯২. অনুচ্ছেদঃ আত্মহত্যা থেকে হুশিয়ারি
হাদীসে কুদসী ১৫২ – জুনদুব ইব্ন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যার হাতে ছিল জখম, সে অস্থির হয়ে ছুরি নেয় ও তা দ্বারা হাত কেটে ফেলে, অতঃপর রক্ত বন্ধ হয়নি ফলে সে মারা যায়”। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দা তার নিজের ব্যাপারে জলদি করেছে, আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
৯৩. অনুচ্ছেদঃ অন্যায়ভাবে হত্যাকারীর পাপ
হাদীসে কুদসী ১৫৩ – আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হইবে এবং বলবেঃ হে আমার রবঃ এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ বললেনঃ কেন তাকে হত্যা করেছ? সে বলবেঃ আমি তাকে এ জন্য হত্যা করেছি যেন আপনার সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ হ্যাঁ তা আমার জন্য। অপর ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হইবে এবং বলবেঃ এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাকে বলবেন কেন হত্যা করেছ? সে বলবেঃ যেন অমুকের সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেনঃ তার জন্য সম্মান নয়, ফলে সে তার পাপ বহন করিবে”। (নাসায়ি) পরবর্তী হাদিসের বিবেচনায় সহিহ।
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসে কুদসী ১৫৪ – ইমরান আল-জাওনি থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি জুনদুবকে বললামঃ আমি তাহাদের নিকট বায়আত হয়েছি, অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইব্ন জুবায়ের এর হাতে, তারা চায় আমি তাহাদের সাথে শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, তিনি বললেনঃ বিরত থাক। আমি বললামঃ তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে। তিনি বললেনঃ তোমার সম্পদ দিয়ে বিরত থাক। তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ আমি তাহাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধ করব এ ছাড়া কিছুতেই তারা রাজি হয় না। অতঃপর জুনদুব বললেনঃ অমুকে আমার নিকট বলেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে নিয়ে উপস্থিত হইবে, অতঃপর সে বলবেঃ তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন আমাকে হত্যা করেছে”। শুবা বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি বলেছেনঃ “সে বলবেঃ কিসের ওপর আমাকে হত্যা করেছে? সে বলবেঃ অমুকের নেতৃত্বে আমি তাকে হত্যা করেছি”। তিনি বলেনঃ অতঃপর জুনদুব বলিলঃ সুতরাং তুমি বিরত থাক। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
৯৪. অনুচ্ছেদঃ পিপড়া হত্যার নিষেধাজ্ঞা
হাদীসে কুদসী ১৫৫ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “একটি পিপড়া কোন এক নবীকে কামড় দেয়, তিনি পিপড়ার গ্রামের নির্দেশ দিলেন ফলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হল, আল্লাহ তাকে ওহি করলেনঃ একটি পিপড়া তোমাকে কামড় দিয়েছে, আর তুমি একটি জাতি জ্বালিয়ে দিলে যারা আল্লাহর প্রশংসা করত”! (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ি ওইবনু মাজাহ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
Leave a Reply